কল্যাণ বললেন, “না গেলেই ভালো হত। বারবার বারণ করেছিলাম। মেয়েটাও অদ্ভুত। অনেকদিন পর মামাবাড়ির পুজো দেখার সাধ হয়েছে। একটা সময়ের পরে যে জীবনের কোনও কোনও জানলা বন্ধ করতে হয় সেটা বোঝে না।”
সোমা চায়ের কাপ রেখে বললেন, “ভালোয় ভালোয় সব মিটে গেলে বাঁচি।”
ফোন বাজছিল। সোমা বললেন, “দ্যাখো তো কে।”
কল্যাণ দেখলেন, বললেন, “তুমি ধরো, তোমার ভাই। আমার পোষায় না।”
সোমা রেগেমেগে ফোনটা তুললেন। কয়েক সেকেন্ড পরে ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেল।
৪
গায়ে রক্ত লেগে ছিল অনেকখানি। শম্ভু পুকুরে নেমেছিল। দায়ের কোপ দেওয়ার সময় ছেলেটার যন্ত্রণায় কাতর অবাক মুখটা চোখে ভাসছিল তার। অনেকক্ষণ ধরে স্নান করল সে।
বাকিরা লাশ আর গাড়ির একটা ব্যবস্থা করে পুলিশকে খবর দিয়েছে। পুলিশ আসতে কিছুক্ষণ লাগবে। তাকে বাবু ছেড়ে দিয়েছেন আগেই। আসল কাজ তার যেহেতু।
শম্ভু স্নান সেরে যখন বাড়িতে এল তখন রম্পার রান্না হয়ে গেছিল। অনেকক্ষণ ধরে রক্ত ধুতে হয়। পুকুরের একদিকটা লাল হয়ে গেছে। শম্ভু ঠিক করল খেয়ে ঘুম দেবে একটা বিকেলে।
গরম ভাত আর মাংসের ঝোল। সকালে মাংস এনে রেখেছিল শম্ভু। জানত আজ মাংসের দরকার পড়বে।
রম্পা খেতে দিতে দিতে ঠান্ডা গলায় বলল, “আমার শাড়িটা বাজে লেগেছে।”
শম্ভু বলল, “আর-একটা কিনে আনিস। টাকা দিয়ে দেব।”
রম্পা অবাক গলায় শম্ভুর দিকে তাকিয়ে বলল, “টাকা পেলি কোত্থেকে?”
শম্ভু হাসল, “পুজো বোনাস।”
রম্পার চোখে মুখে খুশি ফুটে উঠল, “কত টাকা?”
শম্ভু চোখ নাচাল, “বলব কেন?”
রম্পা মুখ ব্যাজার করল, “বুঝেছি। তারপর মদ খাবি। খেয়ে এসে আমাকে পিটবি।”
শম্ভু বলল, “তোর গরম কমে যাচ্ছে। মাংস খা। দুদিন পর পর মাথাব্যথা বললে সব বর পিটবে।”
রম্পা বলল, “মেয়েমানুষ তো। রোগ হবেই। রক্ত পড়ার দিনেও তোর করার ইচ্ছে জাগে। যা না খারাপ পাড়ায়। আমি কি বাধা দিয়েছি?”
শম্ভুর রাগ হওয়া উচিত ছিল। হল না। কাজগুলোর পর মাথা গরম হয় না। বলল, “যাব তো। যেখানে ইচ্ছা যাব। মাংস দে।”
রম্পা মাংসের হাঁড়ির সব মাংস শম্ভুর থালায় দিয়ে দিল।
শম্ভু রেগে বলল, “তুই খাবি না?”
রম্পা বলল, “খা তুই। তোর টাকা তুই খা।”
শম্ভু মাংস ভাতে মেখে এক গ্রাস রম্পার মুখে ধরল। রম্পা মুখ সরিয়ে নিল।
শম্ভু বলল, “খা বলছি।”
রম্পা ভাতটা খেল। বলল, “নুন কম হয়েছে তো। খাচ্ছিস কী করে?”
শম্ভু বলল, “তোর সব কিছুতে নুন বেশি খাওয়ার অভ্যাস।”
রম্পা মুখ ব্যাজার করে বলল, “আমার অনেক কিছু কেনার আছে।”
শম্ভু বলল, “বল।”
রম্পা বলল, “আমায় বলেছিলি একটা সোনার চুড়ি দিবি। দিসনি।”
শম্ভু বলল, “ওরে বাবা, সে তো অনেক টাকা।”
রম্পা বলল, “বেশি না। তুই তো টাকা পেয়েছিস।”
শম্ভু বলল, “সোনার দাম জানিস?”
রম্পা বলল, “বনার বর কি তোর থেকেও গরিব? ওকে রমেন কিনে দিল কী করে?”
শম্ভু হাসতে হাসতে বলল, “ওরে মাগি! ওটা ঝুটো সোনা। ঝুটো সোনা বুঝিস না?”
রম্পা মুখ বেঁকিয়ে বলল, “খুব বুঝি। বনার দেমাকে মাটিতে পা পড়ে না। আমি তো বিকেলে বাড়ির বাইরে যাওয়াই ছেড়ে দিলাম বনার জন্য।”
শম্ভু রেগে বলল, “যাবি না। যাওয়ার দরকার নেই। তুই যাবি, আর দুদিন পর পর নতুন নতুন বায়না করবি। রমেন সোনার দোকানে কাজ করে। নিশ্চয়ই সোনা চুরি করে কিনে দিয়েছে।”
রম্পা বলল, “আমি কী করে জানব? যা হোক করে কিনে দিক। চুরি করুক, ডাকাতি করুক, খুন করুক।”
শম্ভু শেষ কথাটা শুনে খাওয়া ছেড়ে উঠে পড়ল। বলল, “খাবই না। খানকি মাগির জন্য আমার খাওয়া হবে না। সারাক্ষণ শুধু মাগির এটা চাই এটা চাই এটা চাই। আর যখন আমার চাই তখন মাথা ব্যথা, গুদে ব্যথা। বাল তুই মরিস না কেন?”
রম্পা ছাড়ার পাত্রী না, সেও চ্যাঁচ্যাতে শুরু করল, “তুই খানকি, তোর মা খানকি। কিছু দেবার বেলায় নেই, শুধু মারবে আর মদ গিলবে। তুই মর, তোর মা মর, তোর বাপ মর।”
শম্ভুর মাথায় রক্ত উঠে গেল। সে রম্পাকে একটা জোরে চড় মারল। রম্পা ছিটকে পড়ল ঘরের কোনায়।
সে আরও আক্রমণাত্মকভাবে রম্পার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, এমন সময় বাইরের দরজায় কে জোরে ডাকাডাকি করতে লাগল, “শম্ভু দাস, বাইরে আয়।”
শম্ভু অবাক হয়ে বাইরে গিয়ে দেখল পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।
ও বাড়ির বাবুও আছেন সঙ্গে।
সকালেই আজ থানার বড়োবাবুর সঙ্গে ও বাড়িতে দেখা হয়েছিল।
“শম্ভু থানায় চ।”
শম্ভু অবাক হয়ে ও বাড়ির বাবুর দিকে তাকাল।
ও বাড়ির বাবু এগিয়ে এসে তার কানে কানে বললেন, “বেশি কিছু না। তোর নামটা কেসে রাখতে হয়েছে, নয়তো ঝামেলা হত একটু। তুই আপাতত যা। জেলে ভালোই খাওয়াদাওয়া হয়। তিন-চার মাস থাকতে হবে। তারপর জামিন হবে। তোর বউকে নিয়ে চিন্তা করিস না। আপাতত আমার গিন্নির দেখভাল করুক। খাওয়া পরার চিন্তা করতে হবে না।”
শম্ভু মাথা নাড়ল। বাবু তার ঈশ্বর। যা বলেন সেটা শোনাই তার অভ্যাস।
গাড়িতে গিয়ে উঠল সে।
রম্পা নিজেকে সামলে বেরিয়ে এসে দেখল গাড়িটা মিলিয়ে গেছে।
সে অবাক চোখে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকল।
৫
জীবেন সান্যাল ঠাকুরঘরে ছিলেন। প্রতিমা এবার বড়ো সুন্দর হয়েছে। মুগ্ধ হয়ে মাকে দেখছিলেন।