সুশোভন বললেন, “চেনা শহরটা কেমন বদলে গেল চোখের সামনে।”
আদিত্য বলল, “ইজাজ মল্লিকের পর এখন কে যাবে ওর জায়গায়?”
সুশোভন বললেন, “রশিদ।”
আদিত্য বলল, “দেখাটা করেই আসি চল।”
সুশোভন বললেন, “সিগারেটটা শেষ করে নি।”
#
জেলের প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সেরে আদিত্যকে নিয়ে সুশোভন জেলের ভিতরে ঢুকল।
ভিজিটরস চেম্বারে আলাদা করে ডাকা হয়েছে রিন্টুকে।
আদিত্য দেখল রিন্টুর চোখের তলা কালো, আধাখ্যাঁচড়া দাড়ি, বিক্ষিপ্ত চুল। তাদের দেখে খানিকটা সিঁটিয়ে গেল রিন্টু।
সুশোভন বললেন, “কী খবর রিন্টুবাবু? জেল ঠিক লাগছে?”
রিন্টু ম্লান হাসল।
সুশোভন বললেন, “এত বড়ো কাজটা করে ফেললে?”
রিন্টু অন্য দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি ভুল করেছিলাম আগে। পরে সেটাকে ঠিক করার চেষ্টা করলাম বলতে পারেন।”
সুশোভন বললেন, “নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়াটাও ভুল। একটা ভুল দিয়ে আর-একটা ভুলকে কি ঠিক করা যায়?”
রিন্টু আদিত্যর দিকে সরাসরি তাকাল, “ওর কোনও খোঁজ পেলেন?”
আদিত্য বলল, “ও আমার বাড়িতেই ছিল এতদিন।”
রিন্টু হাসল, “আমার মনে হয়েছিল কয়েকবার। তারপর? এখন নিশ্চয়ই ও খুব খুশি? পথের কাঁটা সরে গেল?”
আদিত্য বলল, “সেসব আর জেনে তুমি কী করবে?”
রিন্টু বলল, “হ্যাঁ। সব নিজের হাতে শেষ করলাম। একদম প্রথমেই আমার পরিচয় দিলে হয়তো এত কিছু হত না বলুন?”
আদিত্য সুশোভনের দিকে তাকাল।
সুশোভন বললেন, “ভালো থেকো রিন্টু।”
রিন্টু বলল, “শুনুন না। ও যেন ভালো থাকে, আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি। যেন খুব ভালো থাকে। আমার কথা যেন আর কোনও দিন ওর মনে না আসে, প্লিজ দেখবেন।”
সুশোভন হাসলেন, “ঠিক আছে। দেখব। আসি, কেমন?”
রিন্টু নীরবে কাঁদতে থাকল।
আদিত্যকে নিয়ে সুশোভন বেরিয়ে এসে বললেন, “ভালোবাসায় যখন মিথ্যা আর ধর্মের কুসংস্কার যুক্ত হয় তখন কী হয়, এই কেসটা তার সবথেকে বাজে নিদর্শন হয়ে থাকল। কোনও মানে হয়, একজোড়া যুবক যুবতি ভালোবাসবে আর তাদের মনের ভিতরে ক্রমাগত একে অপরকে ঘিরে অবিশ্বাস পাক খাবে?”
আদিত্য বলল, “বাদ দে। আমি যাই, বুঝলি? আমারও আর কিছু ভালো লাগছে না। ঝুমকির কোনও খবর পেলে দেখিস।”
সুশোভন আদিত্যর কাঁধে হাত রেখে বললেন, “রিন্টু জানল ঝুমকি ভালো আছে। জানল না, ঝুমকিও হারিয়ে গেছে সেই সমাজেরই রক্তচক্ষু থেকে বাঁচতে। এটাই ভালো হল, বল?”
আদিত্য আর কিছু বলল না।
বলার মতো কিছু খুঁজে পেল না আর…