রিন্টু উত্তর না দিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসল।
ইজাজ মল্লিকের একজন পারিষদ রশিদ। সে রেগে গেল, “কি রে রিন্টু, তোকে মল্লিকচাচা কী জিজ্ঞেস করছে উত্তর দিচ্ছিস না কেন?”
রিন্টু রশিদের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোকে জিজ্ঞেস করেছেন? কুকুরের মতো ভৌ ভৌ করছিস কেন?”
রশিদ রিন্টুর দিকে তেড়ে যেতে গেল। ইজাজ হাত দিয়ে তাকে আটকাল, “এই রশিদ। তোরা দূরে যা। রিন্টুর সঙ্গে ঝামেলায় যাচ্ছিস কেন? ওর মনখারাপ।”
রিন্টু ইজাজের দিকে তাকিয়ে রাগি গলায় বলল, “সব আপনার জন্য হয়েছে। আপনি শুরু থেকে আমাকে মিসলিড করলেন। এখন পালটি খাচ্ছেন নিজের স্বার্থে। টাকা খেয়েছেন?”
এবারেও সবাই রিন্টুর দিকে তেড়ে গেল।
ইজাজ মল্লিক হাতের ইশারায় সবাইকে থামিয়ে বলল, “দেখ রুবেল, তুই কিন্তু বাড়াবাড়ি করছিস। তুই যেটা করেছিস সেটাও তো ঠিক করিসনি! মেয়েটাকে রেপ করার কী দরকার ছিল?”
রিন্টু বলল, “আপনি তাহলে আগে বলেছিলেন কেন, যা করেছিস বেশ করেছিস? এখন কেন আবার এসব বলছেন?”
ইজাজ বলল, “শোন বেটা, শোন। মাথা গরম করিস না। সব কিছু বুঝে শুনে চলতে হয় তো। গোটা শহর জুড়ে কেসটা বেকায়দায় চলে গেছে। তোর ওই মেয়েটা, কী যেন নাম, যাই নাম হোক, সে সবাইকে বলে বেরিয়েছে তুই ওকে রেপ করেছিস। আমাদের গোটা কমিউনিটিরই বদনাম হচ্ছে। এমনিতেই সবাই বলে আমাদের নাকি তোষণ করা হয়, তার উপরে সামনে ভোট আসছে। এখন যদি এই ব্যাপারটা নিয়ে আমরা ঝামেলা চালিয়ে যেতাম তাহলে কি সমস্যা কমত? শোন বেটা, মাথা ঠান্ডা কর। কদিন পর দেখছি, আমিই এনে দেব ওই মেয়েছেলেকে তোর কাছে।”
রিন্টু চেয়ার থেকে উঠে চেয়ারটা টান মেরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলল, “কাউকে কিছু দেখতে হবে না। সবাই নিজের ধান্দা দেখুন। দেখতে হবে না কিছু।”
বাকিরা আবার রিন্টুর দিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে যাচ্ছিল, ইজাজ মল্লিক আবার আটকাল। রিন্টু বেরিয়ে চলে গেল।
রশিদ বলল, “ফালতু ছেলে চাচা এই রিন্টু। আমরা শুধু শুধু এর জন্য ফাইট দিচ্ছিলাম। সম্মান করতেই শেখেনি দেখলেন?”
ইজাজ বলল, “ঠিক আছে, ও সব ঠিক হয়ে যাবে। দুদিন ছেলে এদিক সেদিক ঘুরবে, মদ মারবে। তারপর আবার কোনও একটা মেয়ের পাল্লায় পড়ে যাবে। দাঁড়া, আমি ওর মাকে বলে ওর ভালো ঘর দেখে নিকাহর ব্যবস্থা করছি। বয়স বুঝিস না, এই বয়সে শরীর গরম থাকে। আমার এত বয়সেও গরম কমল না, আর শেখের তো কচি বয়স।”
রশিদ বলল, “যাই বলুন চাচা, দু ঘা দেওয়ার দরকার ছিল। আপনি না থাকলে ও খেয়েও যেত। এত বড়ো সাহস হয় কী করে এখানে এসে ঝামেলা করার?”
ইজাজ বলল, “ঠিক আছে। ও দেখে নেওয়া যাবে। এখন বল তোদের ক্লাবের জন্য যে টাকা দেব, সেটা কোন খাতে দেখাবি?”
রশিদ মাথা চুলকে একটু ভেবে হাসিমুখে বলল, “নাইটে একটা ফুটবল টুর্নামেন্ট লাগিয়ে দি।”
ইজাজ বলল, “ঠিক আছে। বাকি সব পকেটে ভরবি, নাকি রে?”
রশিদ অভিমানী গলায় বলল, “কী যে বলেন চাচা, সব কি আমি একা খাই নাকি? ক্লাবের মুরুব্বিরা আছে না?”
ইজাজ বলল, “তাও ঠিক। তোরা তো খুব সৎ, তাই না রশিদ? কি রে, আব্বাস, তুই চুপ করে আছিস কেন?”
আব্বাস কিছু বলার আগেই ঘরটায় রিন্টু একছুটে উদ্যত রিভলভার হাতে ঢুকে একদম সামনে থেকে ইজাজ মল্লিককে পরপর গুলি করতে লাগল। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইজাজ মল্লিকের রক্তাক্ত শরীরটা চেয়ার থেকে মেঝেতে পড়ে গেল।
রশিদ রিন্টুকে ধরতে এল। রিন্টু রশিদকেও গুলি করল। গুলি কাঁধের কোনায় লাগল। রশিদ পড়ে গেল। সবাই এবার ভয় পেয়ে অফিস থেকে বেরোতে এলোপাতাড়ি দৌড় শুরু করল।
রিন্টু রিভলভারটা ইজাজ মল্লিকের মৃতদেহে ছুড়ে মেরে তার মাথায় একটা লাথি মেরে বলল, “শালা, শুয়োরের বাচ্চা।”
৫৬
আদিত্য, রুমকি আর ঝুমকি খেতে বসেছিল।
ঝুমকি ভাত নিচ্ছিল না। আদিত্য বলল, “কি রে, তুই কি ডায়েট করছিস নাকি? ভাত নিচ্ছিস না কেন?”
ঝুমকি বলল, “দিদি আর আমি বিকেলে একগাদা চিপস খেয়েছি। পেট ভর্তি।”
রুমকি বলল, “ফুচকাও এনেছিলাম। অনেকদিন পর দুই বোন মিলে খেলাম।”
আদিত্য বলল, “ভালো করেছ।”
রুমকি বলল, “শোো না, বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে। বাবার কয়েকজন বন্ধু আছে। ওরা ওই সভা-টভা করে। ওরা বলেছে ঝুমকির প্রায়শ্চিত্তটা করিয়ে দেবে।”
আদিত্য খেতে খেতে ঝুমকির দিকে তাকাল। ঝুমকি ভাবলেশহীন মুখে খেয়ে যাচ্ছিল।
সে বলল, “করাবে। তোমাদের বাড়ির ব্যাপার, যা যা করতে হবে করাবে।”
রুমকি বলল, “মানে তুমি এই অনুষ্ঠানগুলোতে থাকবে তো? বাবা জিজ্ঞেস করছিল আর কি! না থাকলে বাজে দেখাবে।”
আদিত্য বলল, “দ্যাখো, আমি তো অফিস যাইনি কদিন, অনেক কাজ পড়ে আছে। এই মুহূর্তে আমাকে রবিবারেও অফিসে যেতে হবে। তাই ধরেই নিতে বলো আমি থাকব না।”
রুমকি বলল, “চেষ্টা করো।”
আদিত্য খাওয়া থামাল, “যদি যাওয়া সম্ভব হত, তাও যেতাম না। তুমি খুব ভালো করে জানো। ঘরের মেয়েকে ঘরে ফিরতে হলে তাকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে এই কনসেপ্টটাই আমি মানতে পারছি না।”
রুমকি বলল, “এরকম বলছ কেন? স্বয়ং সীতাকেও অগ্নীপরীক্ষা দিতে হয়নি?”
আদিত্য বলল, “সেটা কি সীতা মেনে নিয়েছিলেন? পাতালপ্রবেশ করেননি? কি রে ঝুমকি, তোর প্রায়শ্চিত্ত করালে তুই সেটা মেনে নিবি?”