আদিত্য সিগারেট ধরাল। বলল, “ঠিক আছে, ঝুমকি যদি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমি জানাব।”
রিন্টু বলল, “আপনি বলুন, আমি ওর বাবার পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে আসব।”
আদিত্য বলল, “শোনো, আমার অফিসে কাজ থাকে বুঝলে? এরকম বাইরে তো বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব না।”
রিন্টু বলল, “তাহলে রাতে আপনার বাড়ি আসি?”
আদিত্য বলল, “না। বাড়িতেও কাজ থাকে। তুমি এক কাজ করো, আমার বন্ধু সুশোভনের সঙ্গে তুমি এসব ব্যাপারে আলোচনা করো। তোমার জন্য ওর সন্দেশখালি ট্রান্সফার হয়ে গেছে, জানো তো?”
রিন্টু বলল, “উনি তো আপনাদের ফ্যামিলির কেউ না।”
আদিত্য বলল, “আমাকে এসব কথা বলে কোনও লাভ নেই। বললাম তো, তুমি এসো এখন।”
আদিত্য আর দাঁড়াল না, রিন্টুকে দাঁড় করিয়ে অফিসের ভিতর ঢুকে গেল।
৫৪
অফিসে ঢুকে আদিত্য চুপ করে বসল। কিছুক্ষণ চুপ করে বসে সুশোভনকে ফোন করল। সুশোভন ফোন ধরেই বললেন, “কী বলল ছেলেটা?”
আদিত্য বলল সবটা।
সুশোভন চুপ করে থেকে বললেন, “নাটক করছে না সিরিয়াসলি বলছে? কিছু বুঝলি?”
আদিত্য বলল, “কী যে করছে আমি জানি না। আমার অসহ্য লাগছে ভাই এসব।”
সুশোভন বললেন, “দেখ যদি তোর মনে হয় ছেলেটা সিরিয়াস, সেক্ষেত্রে তোর শালির সঙ্গে ওকে একবার বসানো যেতে পারে। তোর শালি যদি ওকে ভালোবেসে থাকে…”
আদিত্য তেতো গলায় বলল, “আমার মনে হয় না ঝুমকির ওর প্রতি কোনও ভালোবাসা আছে। বরং আমার মনে হয় এটা ওর কাছে চেপে যাওয়াই ভালো। ওকে বললে ও আবার দ্বিধায় পড়ে যেতে পারে।”
সুশোভন বলল, “দ্বিধায় পড়লেও জানা। জানানোটা দরকার। ও একজন অ্যাডাল্ট। ওকে নিজের ডিসিশন নিজেকে নিতে দে।”
আদিত্য বলল, “তারপর আর-একটা ক্যাচাল লাগুক? তুই আমার শ্বশুরমশাইকে চিনিস? বুঝিসনি কীরকম গোঁড়া লোক? সবে একটা ক্যাচাল মিটল। এখন আবার ঝামেলা লেগে যাবে এসব নিয়ে আলোচনা করলে।”
সুশোভন বললেন, “দেখ ভাই, একটা কথা বলি। কাদায় অলরেডি নেমে গেছিস। এখনও যদি বলিস পাঁক ঘাটব না, তাহলে কী করে হয়?”
আদিত্য বলল, “আমার এই ছেলেটাকে পোষায়নি একবারেই। এই দুদিন আগেও হুমকি দিচ্ছিল। ওদের বাড়ির ওখানে ঝামেলা করেছে, পাড়ায় হাঙ্গামা করেছে। আমি এইসব থেকে দূরে থাকতে চাই। বোঝার চেষ্টা কর ভাই।”
সুশোভন বললেন, “ঠিক আছে। তাহলে ব্যাপারটা নিয়ে আর এগোস না। তবে ছেলেটা যদি এরপরেও তোকে জ্বালাতন করে, সেক্ষেত্রে আমাকে বলিস। আমি সেক্ষেত্রে জামান সাহেবকে দিয়ে ইজাজ মল্লিককে ফোন করাব।”
আদিত্য বলল, “সে করাবি। এই ঝামেলাটাও প্রায় মিটল, তুই কি ওইখানেই থাকবি? ট্রান্সফারের জন্য আবেদন করবি না?”
সুশোভন বললেন, “নাহ। চাকরি করাটাই আসল। যেখানে ইচ্ছা দিক না। কলকাতার থেকে এইসব দিকে পলিউশন অনেক কম। ভালোই লাগছে। ক্রাইম যদিও কম নয়, তবু ঠিকঠাক। কদিন কলকাতা থেকে দূরে থেকে শাপে বর হচ্ছে একদিকে।”
আদিত্য বলল, “দেখ যা ভালো মনে করিস। ফোন করব আবার দরকারে।”
সুশোভন হাসলেন, “একশো বার।”
ফোন রেখে আদিত্য ডেস্কে বসে কাজে মন দিল। প্রচুর কাজ জমে ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। দিনটা যে কী করে কেটে গেল বোঝা গেল না। অফিস থেকে বেরোতে বেরোতে সাতটা বাজল।
গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে দেখল রাস্তায় রিন্টু দাঁড়িয়ে আছে। সে গাড়িটা রাস্তার বাঁদিকে রেখে গাড়ি থেকে নামল, “তুমি এখনও বাড়ি যাওনি?”
রিন্টু তার দিকে তাকিয়ে বলল, “না। আমি আসলে এই এলাকাতেই ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। আমার না আসলে ভীষণ অপরাধবোধ হচ্ছে, বলে বোঝাতে পারব না। আমার উচিত হয়নি, এই ঝামেলাগুলো ইজাজ চাচার কাছে বলাটা। আপনাদের সঙ্গেও যা করেছি, ঠিক করিনি। দেখুন না, ইজাজ চাচা ঠিক টাইমে পলিটিক্স বুঝে সরে পড়ল। সবাইকে বলে দিয়েছে আমার সঙ্গে বেশি মেলামেশা না করতে।”
আদিত্য কয়েক সেকেন্ড রিন্টুর দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি বাড়ি যাও। গিয়ে বিশ্রাম করো। যা হয়ে গেছে, সেসব তো আর পিছনে গিয়ে রেক্টিফাই করা যাবে না।”
রিন্টু বলল, “দাদা আমি সংসারটা করতে চাই। সিরিয়াসলি করতে চাই। দেখুন না কিছু করা যায় নাকি। আপনার চাইলে আমি হিন্দু হয়ে যাব। বিশ্বাস করুন। অন্য কোথাও গিয়ে সংসার করব নাহয়।”
আদিত্য কপালে হাত দিল, “আমি না তোমাদের এই হিন্দু মুসলমানের জ্বালায় পাগল হয়ে যাব। হিন্দু হয়ে গেলেই ঝামেলা মিটে যাবে? রিডিকিউলাস রিন্টু! প্লিজ আমায় জ্বালিয়ো না। যদি ঝুমকির সঙ্গে দেখা হয়, আমি তোমার কথা জানাব। ও যা ডিসিশন নেবে, সেটাই ফাইনাল হবে। ঠিক আছে?”
রিন্টু অন্যমনস্ক ভাবে অন্য দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি খুব বাজে করেছি। ইজাজ চাচা লোক দিত, তাদের দিয়ে আমি ভাবতাম আমি বিরাট কোনও ডন হয়ে গেছি। আপনাকে কী না কী বলেছি। এখন বুঝতে পারছি, সব রাজনীতির খেলা।”
আদিত্য রিন্টুর পিঠে হাত দিয়ে বলল, “তুমি বাড়ি যাও। আমিও বাড়ি যাই। সময় দাও সবাইকে। যাও।”
রিন্টু হঠাৎ করে কেঁদে ফেলল।
আদিত্য রাস্তার মধ্যে অপ্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
৫৫
রাত সাড়ে নটা বাজে।
লোকাল অফিসে ইজাজ মল্লিক পারিষদ পরিবৃত হয়ে বসে ছিল। এলাকার কোন ক্লাবে অনুদান দেওয়া হবে সেসব নিয়ে কথা হচ্ছিল।
রিন্টু ঢুকল থমথমে মুখে। চোখ লাল। ইজাজ মল্লিক আড়চোখে রিন্টুর দিকে একবার তাকিয়ে বলল, “কী ব্যাপার শেখ? এরকম গম্ভীর হয়ে আছিস কেন?”