রুমকি বলল, “তুই করে আসতে পারলে আমি বলতে পারব না কেন? কেন করেছিস?”
ঝুমকিকে ক্রমাগত চড় মারতে মারতে কান্নায় ভেঙে পড়ল রুমকি, “আমাদের বাড়ির মান সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিলি তুই। আমি ভাবতেও পারছি না একটা মুসলমানের সঙ্গে গিয়ে… ছি ছি ছিছি… ইশ!!! আমি লোকের সামনে মুখ দেখাব কী করে বল তো?”
ঝুমকি বলল, “তুই কী চাস দিদি? আমি সুইসাইড করি?”
রুমকি ঝুমকিকে আবার চড় মারল, “সুইসাইড করলে নামটা আরও বাড়বে তাই না? এক কাজ করা যাক, আমি, বাবা, মা সবাই মিলে সুইসাইড করি। এই নষ্ট মেয়েছেলে, ছেলেটা তোর ভিতরে ফেলেছিল না?”
ঝুমকি বুঝতে পারল না, বলল, “কী?”
রুমকি বলল, “যখন সেক্স করেছিল, তখন তোর ভিতরে ফেলেছিল, তাই তো? ওরা তো প্রোটেকশন ইউজ করবে না। অশিক্ষিতের বাচ্চা ওরা। ভিতরে ফেলেছিল কি না বল।”
ঝুমকি চোখ মুখ শক্ত করে বলল, “আমি মনে করতে পারছি না। ওই সময় আমার তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছিল। এত কষ্ট হচ্ছিল বলে বোঝাতে পারব না।”
রুমকি বলল, “তা তো হবেই। মজা করতে গেছিলি। দেখ কেমন মজা লাগে। এই তোর ডেট কবে?”
ঝুমকি বলল, “সামনেই। কুড়ি তারিখ।”
রুমকি বলল, “বেঁধে গেলে ওই কাটার বাচ্চা নিয়ে ঘুরবি?”
ঝুমকি বলল, “না। বাচ্চা নষ্ট করব।”
রুমকি বলল, “সব ভেবেই রেখেছিস। জানোয়ার মেয়ে। যা, স্নান কর যা। আমার গা ঘিনঘিন করছে তোকে দেখে। অসভ্য, জানোয়ার, নোংরা মেয়ে কোথাকার।”
ঝুমকি কিছুক্ষণ পাথরের মতো বসে থেকে স্নানে গেল।
৫০
আদিত্য অফিসে কাজ করছিল। ফোন বাজল। দেখল সুশোভন ফোন করছেন। ধরল, “হ্যাঁ, বল।”
সুশোভন বললেন, “ইজাজ মল্লিকের সঙ্গে বসা হল বুঝলি।”
আদিত্য নড়েচড়ে বসল, “দেন?”
সুশোভন বললেন, “এক্সপেক্ট করছি, ঝামেলাটা মিটবে। সম্ভবত ওরা মেয়েটাকে চেজ করা বন্ধ করবে।”
আদিত্য বলল, “তাহলে এখন কর্তব্য? ঝুমকিকে ওদের বাড়ি নিয়ে যাব?”
সুশোভন বললেন, “খেপেছিস? এসব ভুলেও ভাবিস না। জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ।”
আদিত্য বলল, “ওকে।”
সুশোভন বললেন, “চল কাজ কর। আর কোনও আপডেট এলে তোকে জানিয়ে দেব।”
আদিত্য বলল, “ঠিক আছে।”
সুশোভন ফোন রাখলেন।
আদিত্য রুমকিকে ফোন করল। রুমকি ধরল, “বলো।”
আদিত্য বলল, “সুশোভন ফোন করেছিল।”
রুমকি বলল, “কী বলল?”
আদিত্য বলল, “আশা করা যায় মিটে যাবে।”
রুমকি বলল, “শোনো। আমার কিছু কথা আছে।”
আদিত্য বলল, “বলো।”
রুমকি বলল, “দ্যাখো, তুমি মাথা গরম কোরো না। কিন্তু কথাটা তো সত্যি যে ঝুমকির সঙ্গে ওই ছেলেটার কিছু হয়েছে। এবার ওর ডেট কুড়ি তারিখ। যদি পিরিয়ড মিস হয়, তখন বাচ্চাটা নষ্ট করতে হবে। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় এখনই কোনও ডাক্তার কনসাল্ট করে নেওয়া ভালো।”
আদিত্য একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “সারাক্ষণ একই চিন্তা করতে তোমার ভালো লাগে? অন্য কিছু নিয়ে ভাবতে পারো তো। আমি নাহয় নাস্তিক মানুষ, তুমি তো ঠাকুর দেবতায় বিশ্বাস করো। স্পিরিচুয়াল কিছুতে মন দাও। ঝুমকি একটা মারাত্মক স্ট্রেসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তুমি ওকে আরও স্ট্রেস দিচ্ছ সেটা বুঝছ?”
রুমকি একটু থমকে গিয়ে বলল, “কী করব বলো? আমার মাথা কাজ করে না। সারাক্ষণ মনে হয় এই মেয়েটা ছোটোবেলায় আমার জামা ধরে ঘুরে বেড়াত। কেউ ওকে আমার থেকে নিতে গেলে কেঁদেকেটে বাড়ি মাথায় তুলত। আমার যখনই মনে পড়ছে ও আমাকে না জানিয়ে সব করেছে, আমি রাগটা সামলাতে পারছি না।”
আদিত্য নিজের টেবিলের চারপাশে তাকিয়ে টেবিল থেকে উঠে অফিসের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, “দ্যাখো রুমকি, এই মুহূর্তে তোমার ওপরেই চাপটা সব থেকে বেশি। তোমাকে তোমার বাবাকে সামলাতে হবে। ঝুমকিকেও সামলাতে হবে। দয়া করে সব কিছু ভেস্তে দিয়ো না। তোমার কথা-টথা শুনে ও যদি সুইসাইড অ্যাটেম্পট করে তখন কী হবে?”
রুমকি ভয় পেয়ে বলল, “কী সব বলছ? এরকম হতে পারে নাকি?”
আদিত্য বলল, “হতে পারে না? সেন্টিমেন্টাল লোকজন কখন কী করে বসে কে দেখতে যাচ্ছে? অনেক সাহস জোগাড় করে ও ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছিল। সে সাহসটা এখন ওর মধ্যে ফিরিয়ে আনো। আমরা একটা মিউচুয়াল করতে যাচ্ছি। এই সময় হয়তো সবার সামনে দাঁড়িয়ে ওকে জিজ্ঞেস করা হবে ও রিন্টুর কাছে ফিরে যেতে চায় নাকি। এমন কোনও পরিবেশ তৈরি কোরো না, যাতে ও বাড়িতে থেকে এতটাই অতিষ্ঠ হয়ে যায় যে শেষমেশ রিন্টুর কাছেই ফিরে যেতে চাইবে। তুমি কি চাও এরকম কোনও সিচুয়েশন আসুক?”
রুমকি বলল, “না না, সে কী? এসব কেন চাইব?”
আদিত্য বলল, “তাহলে দয়া করে বিহেভ প্রপারলি।”
রুমকি বলল, “আচ্ছা। চেষ্টা করব। সমস্যা হল ওকে দেখলেই কেন যে রাগ হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারছি না। নিজের বোন তো। শাসন করার অধিকারটুকু তো আছে বলো?”
আদিত্য বলল, “অবশ্যই আছে। কিন্তু এই মুহূর্তে শাসনের থেকেও ওর কেয়ারটা অনেক বেশি দরকার।”
রুমকি বলল, “আমি যখনই ভাবছি ওর পেটে ওই সমাজবিরোধীটার বাচ্চা আসতে পারে আমি শিউরে উঠছি। নিতে পারছি না। আমার গা গুলিয়ে উঠছে।”
আদিত্য বলল, “যা হয়ে গেছে কিছু তো করার নেই আর। বাচ্চা যদি নষ্ট করতে হয় করতে হবে। কী করার আছে?”
রুমকি বলল, “তুমি সাবধানে থেকো। আর আমায় ক্ষমা কোরো।”