রাধার দু চোখ বেয়ে জলের ধারা নামল।
বাদশাহ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে উঠে রাধার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, “আল্লাহ তোমায় ভালো রাখুন। আমি এলাম।”
বাদশাহ হুমায়ুন রাধার ঘর থেকে বেরিয়ে আর কারও ঘরে গেলেন না। হারেম ছেড়েই বেরিয়ে গেলেন। রুকসানা এসে রাধার ঘরে ঢুকে বলল, “কি রে, বাদশাহ এত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেলেন কেন?”
রাধা মুখ গুঁজে কাঁদছিল। কিছু বলল না।
রুকসানা বলল, “মেহজাবিনের জন্য আমরা সবসময় ভয়ে থাকি। এই বুঝি বাদশাহের সেপাইরা এসে আমাদের নিয়ে গিয়ে চোখ উপড়ে নেয়। ওর সঙ্গে তো আমাদেরই সবথেকে বেশি কথা হত। এখন আবার তুই এই নৌটংকি শুরু করেছিস। কী হয়েছে বলবি?”
রাধা বলল, “আমি বাবার কাছে যাব।”
রুকসানা রাধার খাটের ওপর বসে পড়ে বলল, “আব্বার কাছে যাবি? আম্মির কাছে যাবি? আমাদের সে পথ বন্ধ হয়ে গেছে। চাইলেও আর যেতে পারবি না।”
রাধা নিঃশব্দে কাঁদতে লাগল।
একজন মেয়ে এসে রুকসানাকে ডাকল, “আপনাকে বাদশাহ ডেকেছেন।”
রুকসানা একটু শিউরে উঠে সামলে নিয়ে বলল, “আসছি।”
বাদশাহ হারেম ছেড়ে চলে গেছিলেন। আবার ফিরে এসে জলাশয়ের কাছে চুপ করে বসে ছিলেন। রুকসানা গিয়ে মাথা নুইয়ে দাঁড়াল, “হুজুর, তলব করেছিলেন?”
বাদশাহ বললেন, “আমি যুদ্ধ করতে যাব মনস্থ করেছি। হারেম থেকে একশো জন জেনানা আমার সঙ্গে যাবে। তুমি ব্যবস্থা করো।”
রুকসানা মাথা নোয়াল, “হুজুর।”
বাদশাহ বললেন, “আর ওই মেয়েটি মনে হয় বাড়ি যেতে চায়। ওকে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।”
রুকসানা স্তম্ভিত হয়ে বাদশাহের দিকে তাকিয়ে বলল, “তা কী করে হয় হুজুর? বাদশাহি হারেম থেকে কেউ তো…”
বাদশাহ বললেন, “বাদশাহ চাইলে না হওয়ার কিছু নেই। আমি ব্যবস্থা করতে বলছি। তুমি ওই মেয়েটিকে বলে দিয়ো।”
রুকসানা বলল, “হুজুরের যা আদেশ।”
বাদশাহ বললেন, “তুমি যাও। এখানে যেন কেউ আমাকে বিরক্ত না করে। আমার একা থাকতে ইচ্ছা করছে।”
রুকসানা মাথা নুইয়ে চলে গেল।
রাধা তখনও কাঁদছিল। রুকসানা রাধাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরল, “ওরে মেয়ে, তোর কী ভালো নসিব! স্বয়ং বাদশাহ তোকে বাড়ি ফেরাবেন বলেছেন।”
রাধা অবিশ্বাসী চোখে রুকসানার দিকে তাকাল। কিছুক্ষণের মধ্যে তার মুখ হাসিতে পরিপূর্ণ হল।
রুকসানা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “তোর এই হাসিটা যেন থাকে রে মেয়ে।”
রাধা রুকসানাকে জড়িয়ে ধরল।
রুকসানা বলল, “জাহাঁপনা তোর মধ্যে কী দেখলেন কে জানে। সবসময় আত্মমগ্ন হয়ে থাকেন। সবাই ঠিকই বলে, হুজুর যে কখন কী করবেন কেউ জানে না। এই কারও চোখ উপড়ে দিচ্ছেন, তো এই কাউকে গরিব থেকে আমির করে দিচ্ছেন। শাহি অনুগ্রহ পেয়েছিস, খুশি হ মেয়ে।”
রাধা আবার কাঁদতে শুরু করল।
এবার আনন্দাশ্রু।
৪৯
আদিত্য অফিস বেরিয়ে যাওয়ার পরে রুমকি বলল, “ঝুম।”
ঝুমকি বলল, “বল।”
রুমকি ওর সামনের চেয়ারে বসে বলল, “তোর মনে আছে, ছোটোবেলায় বাবা তোর জন্মদিন কত বড়ো করে করত? তোর স্কুলের সবাইকে বলত?”
ঝুমকি মাথা নাড়ল, “হুঁ।”
রুমকি ঝুমকির হাত ধরল, “শোন না ঝুম, মনমরা হয়ে যাস না। আমরা আছি তো। কিচ্ছু হবে না।”
ঝুমকি বলল, “তুই জামাইবাবুকে আমাকে নিয়ে কী বলেছিস?”
রুমকি একটু থতোমতো খেয়ে বলল, “কী বলব বল? এগুলো কাপল প্রবলেম বুঝিস না?”
ঝুমকি বলল, “আমি জামাইবাবুকে সবসময় নিজের দাদা ভেবে এসেছি। এখানে এসে কোনওরকম ইনসিকিউরিটি ফিল করিনি যে জামাইবাবু কোনও উলটোপালটা কিছু করতে পারে। আর তুই…”
ঝুমকি মাথা নিচু করল।
রুমকি ঝুমকির কাঁধে হাত দিল, “এগুলো তুই বুঝবি না ঝুম। পুরুষমানুষদের বিশ্বাস করতে নেই। ওরা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তুই নিজেই দেখ তোর লাইফ দিয়ে। এই যে, কী যেন ছেলেটা, রিন্টু না কী, তোকে কী সব মিথ্যে কথা বলে নিয়ে গিয়ে কী করল? তুই বল!”
ঝুমকি বলল, “তাহলে তো বাবাকে বিশ্বাস করা যায় না। তুই বল না, তুই বিশ্বাস করিস, বাবা মাকে লুকিয়ে অন্য কোনও মহিলার সঙ্গে…”
রুমকি ঝুমকিকে ধরে একটা ঝাঁকুনি দিল, “এসব কী বলছিস তুই? তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি? বাবা কোনও দিন এরকম করতে পারে? সাত্ত্বিক ভদ্রলোক একজন। পাড়ার সবাই বাবাকে দেখলে মাথা নিচু করে। আর তুই বাবার নামে এসব বলে যাচ্ছিস?”
ঝুমকি বলল, “তুই যাকে ভালোবাসিস, বিয়ে করেছিস, তুই যদি তার সম্পর্কেও এরকম ভাবতে পারিস, তাহলে বাবাকে নিয়ে ভাবতেই বা তোর অসুবিধাটা কোথায়? ছোটোবেলা থেকে একসঙ্গে বড়ো হয়েছিস, আর এটুকু চিনতে পারলি না আমাকে?”
রুমকি বলল, “না। চিনতে পারলাম না। যদি চিনতে পারতাম, তাহলে যদি বিন্দুমাত্র বুঝতাম, তুই ওই ছেলেটার সঙ্গে প্রেম করছিস সবাইকে লুকিয়ে, তাহলে তোকে জুতিয়ে সিধে করে দিতাম। তোর কপাল ভালো যে আমি এখানে ছিলাম। বাড়িতে থাকলে তো ঠিকই বুঝতাম। শোন, তোর ওই ছেলেটার সঙ্গে কবে থেকে ফিজিক্যাল রিলেশন ছিল? সত্যি করে বল। হোটেলে যেতিস?”
ঝুমকি বলল, “এসব কী বলছিস?”
রুমকি বলল, “না বলার কী আছে? তোর রস উঠেছিল, রসের ঠ্যালায় এসব করেছিস। খুব মজা না? কাটা তো ওদেরটা? মজা পেয়েছিস?”
ঝুমকি বিস্ফারিত চোখে দিদির দিকে তাকিয়ে বলল, “এসব কথা তুই বলতে পারছিস?”