আমি বললাম, “যবে খুশি। কেন, মন খারাপ করছে এখনই?”
বউ মাথা নাড়ল।
আমি বললাম, “দিয়ে আসব কালকে।”
বউ বলল, “কাল কী করে হবে? যেদিন যাবার, সেদিনই যাব।”
আমি বললাম, “তাহলে মনখারাপ বললে কেন?”
বউ বলল, “মনখারাপ হলেই যে তার সলিউশন পাওয়া যাবে কে বলল? মেয়েদের মনখারাপ করতে নেই। আমি জানি।” আমি বললাম, “উরিব্বাস। তুমি তো ভালো ডায়লগ মারতে পারো! বাংলা সিরিয়ালের স্ক্রিপ্ট লেখো নাকি?”
বউ বলল, “ঠাট্টা করার মতো কিছু বলেছি কি? নাকি আমাকে মানুষ বলেই মনে করছেন না?”
আমি জিভ কাটলাম, “সেসব না। আচ্ছা শোনো না, এই জবরজং পরে থেকো না। চেঞ্জ করে নাও। আমি ওপাশ ফিরে শুচ্ছি। দেখব না। মাইরি বলছি।” বউ অবিশ্বাসী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “ঠিক তো দেখবেন না?”
আমি বললাম, “মা শীতলার দিব্যি। সিরিয়াসলি। যাও।”
বউ উঠল। আমি ওপাশ ফিরে তাকালাম। একটা ছোটো আয়না সেট আছে। চাইলেই দেখা যেত, কিন্তু দেখলাম না। নিজে থেকে কিছু চাইব না। যেদিন দেবে, সেদিন নেব। নইলে মাঝরাতে যদি কান্না জুড়ে দেয়, সামলানো শিবের অসাধ্য হয়ে যাবে।
মিনিট পাঁচেক পরে বউ বলল, “আপনি কি কিছু করতে চান?”
আমি হতভম্ব হয়ে বললাম, “কী মানে?”
বউ বলল, “বিয়ে করলে যা করে?”
আমি বললাম, “না না, তুমি ঘুমাও। ভয় নেই। আমি ভালো লোক।”
বউ খাটের ওপর বসে বলল, “সে সবাই বলে আমি ভালো, হ্যান ত্যান। তারপরই আসল চেহারা বেরোয়।”
আমি বললাম,“তুমি কত লোক দেখেছ?”
বউ বলল, “অনেক। শুয়ে পড়াই তো কাজ আমার। আপনাকে ঠকিয়েছে। আমি এক্কেবারে বেশ্যা মেয়ে। আমার মতো মেয়েকে কেউ বিয়ে করে না। এসব বলেনি আপনাকে?”
আমি হাঁ করে বউয়ের দিকে তাকালাম। বউ বলল, “এইচ আই ভি টেস্ট করতে দিয়েছি। রেজাল্ট এলে তবেই শোবেন। যান, ঘুমিয়ে পড়ুন এখন।”
আমি কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে তড়িঘড়ি পাশ ফিরে শুলাম। এই দিনটাও দেখতে হল আমায়!
২
“মুত। এই মুত।” রাস্তার মধ্যে দিয়ে দৌড়োতে দৌড়োতে এসে ঈশান দাঁড়াল। লোকজন সব বিচ্ছিরি দাঁতক্যালানো মুখে তাকাচ্ছে। আমি ঈশানের দিকে একটা ভস্ম করা দৃষ্টি দিলাম। অন্য দিন হলে ব অক্ষর দিতাম, আজ মুড ছিল না। ঈশান কাঁধে জোরে চাপড় মেরে বলল, “কী রে ভাই? সিল খুললি?”
আমি অবাক হয়ে বললাম, “মানে?”
ঈশান বাঁ হাতের আঙুল দিয়ে একটা গোল বানিয়ে ডান হাতের তর্জনীটা ওটায় ঢুকিয়ে বার করতে করতে চোখ নাচিয়ে নাচিয়ে বলল, “হল ভাই, হল? গাব ছাড়িয়েছিস?”
আমি ঈশানের কথা না শুনে জোরে জোরে পা চালাতে লাগলাম। ঈশান দৌড়োতে দৌড়োতে আমার পাশে এসে বলল, “পারিসনি? ও ঠিক আছে। সবাই প্রথম দিনে পারে না। ইনফ্যাক্ট আমাদের দাদাও অস্ট্রেলিয়ায় ফার্স্ট ইনিংসে ধেড়িয়ে চার বছর পরে লর্ডসে সেঞ্চুরি করেছিল। তুইও হয়তো পারবি, চার বছর পর।”
আমি ফুটপাথের দোকানে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট নিলাম। দড়ির আগুন থেকে সেটায় আগুন দিয়ে বললাম, “নিজে তো এই দামড়া বয়সেও একটা জোটাতে পারলি না। অন্যদের কথা শুনে অরগ্যাজম হয় কেন বে তোর? ফোট তো!”
ঈশান আমার কাঁধে হাত দিয়ে বলল, “কী হল ভাই? ব্যাপার সিরিয়াস লাগছে? বউদি গম্ভীর? নাকি ফেসবুক কবি? তুই ছুঁলেই তিরিশ পাতা বিদ্রোহী কবিতা নামিয়ে ফেলবে?”
আমি ফুটপাথের দিকে তাকালাম। কাল রাতে ভালো বৃষ্টি হয়েছে। ভেজা ভেজা ভাব আছে একটা। এদিকের ফুটপাথে দুজন শুত। নিশ্চয়ই বৃষ্টি বলে অন্য কোথাও ঠাঁই নিয়েছে। খুব সম্ভবত পঞ্চাননতলার পেতে রাখা পাইপগুলোতে। একটা আস্ত মানুষ দিব্যি সেঁধিয়ে যেতে পারে। আমারই কতবার ইচ্ছে হয়েছে পাইপে সেঁধিয়ে যাই, ইন ফ্যাক্ট এখনও হচ্ছে। এমন বিয়ে করলি মদন, হাড়মাস সুদ্ধ খেল…? ধুস! কী সব ভাবছি। এত কিছু ভেবে তো লাভ নেই। যা হবে হবে। বিয়েটা এরকম করে হয়ে যাবে তাই বা কে জানত! আর কে বলে আমরা এখন এগিয়েছি? এখনও লগ্নভ্রষ্টা মেয়ের বিয়ে হয়। দিব্যি গেছিলাম বিয়ে খেতে। ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়ে দিল। বাবা মা তো এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না। আর বউয়ের দিকে তাকাব কী, কিছুই তো বলে না। যেন বিয়ে হয়েছে, চেপে যাও বস। বেটির বয়ফ্রেন্ড বিয়ের রাতে পালিয়েছে দেখে কে বলবে! সিগারেটটাও বিড়ালের হিসির মতো লাগছিল। ফেলে জুতো দিয়ে পিষে দিলাম। ঈশান বলল, “যাই বল ভাই, লো বাজেট বিয়েতেও খেয়ে সুখ আছে। তোর বিয়েটা হঠাৎ করে হল বটে, খাসি করতে পারিসনি বটে, কিন্তু মুরগির মাংসটাও জব্বর বানিয়েছিল। আচ্ছা ভাই, মদ পার্টিটা কবে দিবি?”
আমি বললাম, “আমার শ্রাদ্ধের দিন খাস।”
ঈশান মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলল, “শ্রাদ্ধের দিন তো মাংস খাওয়া যাবে না, নিরিমিষ চাট আমার পোষায় না, নিয়মভঙ্গের দিন খাব। আমার অ্যাকাউন্টে বেশি করে টাকা পেটিএম করে দিস তো বাপ। গ্লেনফিডিচ খাব। বড়ো লোকের মদ। ওরা নাকি ওটা খেয়ে বিডিএসএম করে। বিডিএসএম জানিস তো কী? চোখ বেঁধে লাগায়। হেবি জিনিস। দেখলেই কেমন লাগে। আরে ফিফটি শেডস অফ গ্রে দেখিসনি? হেবি জিনিস রে ভাই। তুইও ট্রাই নে।”
আমি এবার খিস্তির বন্যা বইয়ে দেবার জন্য রেডি হচ্ছিলাম, এমন সময় অফিসের বাস এসে গেল। খরুস হারামি বসটা সামনেই বসে আছে। আমার দিকে রসসিক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেন আমি কীভাবে করেছি তার সব রিপোর্ট এখনই ওকে দিতে হবে, ও হেড অফিসে মেল করবে।