বিশ্বরূপদা হাসতে হাসতে বলল, “তাও ভালো, বলিসনি পৃথিবীটা ছেড়েই চলে গেলে।”
মানালি বলল, “বলো না, ঠিক বললাম কি না?”
বিশ্বরূপদা মাথা নাড়ল, “তুই ভাবলি কী করে ট্রিভিয়া নিউজের স্কুপ খুঁজে বেড়ানো সাংবাদিককে আমি এত বড়ো কনফেশনটা করে ফেলব?”
মানালি হেসে ফেলল, “তার মানে আমার গেস সত্যি?”
বিশ্বরূপদা চোখ পাকাল, “একদম না। এইসব নিয়ে আমি আর একটা কথাও বলব না।”
মানালি হাসছিল। বলল, “আচ্ছা। বলতে হবে না।”
মানালির ফোন বাজছিল। মানালি দেখল দীপ ফোন করছে। কেটে দিল।
বিশ্বরূপদা বলল, “কী ব্যাপার? কে ফোন করছে?”
মানালি বলল, “আরে এক পাগলের পাল্লায় পড়েছি। টোটাল কনফিউজড মেটিরিয়াল।”
বিশ্বরূপদা বলল, “বেশ তো পড়েছিস, পড়েছিস, তাতে ব্লাশ করছিস কেন?”
মানালি রেগে গেল, “কোথায় ব্লাশ করলাম?”
বিশ্বরূপদা বলল, “এই তো করছিস।”
মানালি বলল, “তুমি সামনের দিকে দেখে গাড়ি চালাও তো। কী সব ভুলভাল বকে যাচ্ছ।”
বিশ্বরূপদা বলল, “কেসটা কী?”
মানালি বলল, “সেরকম কিছু না। একটা কমপ্লিটলি এইমলেস ছেলে। এককালে বেশ গোছানো ছিল। এখন দুটো মেয়ের পাল্লায় পড়ে মাথা-টাথা বিগড়ে পেগলে গেছে।”
বিশ্বরূপদা বলল, “বেশ তো, তুই দিশা দেখা তবে।”
মানালি বলল, “খেপেছ? দুদিন পরে আরও কোনও একটা মেয়ের পাল্লায় পড়ে আমাকেও কনফিউজ করে দেবে। এইসব পাবলিকদের থেকে যত দূরে থাকা যায় তত ভালো।”
বিশ্বরূপদা বলল, “তাহলে ছেলেটা তোকে ফোন করছে কেন? তুই-ই বা ব্লাশ করছিস কেন?”
মানালি থতোমতো খেয়ে বলল, “কোথায় ব্লাশ করতে দেখছ তুমি?”
বিশ্বরূপদা বলল, “হয়, হয়, যানতি পারো না। ফোনটা করল ছেলেটা, সেটাও কেটে দিল, এটা বোঝাচ্ছে ব্যাপারটা নিয়ে তুই ওভারপ্রোটেক্টিভও বটে। গুড গুড, মেয়েরা একটু কনফিউজড ন্যালাক্যাবলা পছন্দ করে, তুইও সেরকমই তাহলে।”
মানালি রেগে গেল, “কী সব ফালতু বকে যাচ্ছ বলো তো? তুমি ছেলেটাকে দেখেছ? দেখলে এ কথা বলতে না।”
বিশ্বরূপদা বলল, “কথাগুলো আমাকে বলছিস না নিজেকে?”
মানালি গুম হয়ে বসে রইল।
বিশ্বরূপদা বলল, “প্রাচীন বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, জন্ম মৃত্যু বিয়ে…”
মানালি বলল, “ইশ, সেই ক্লিশে, মানে বলতে চাইছ ছেলেটা এত কনফিউজড কারণ শেষ পর্যন্ত আমার সঙ্গেই জুটবে বলে?”
বিশ্বরূপদা বলল, “একজ্যাক্টলি। এই তো, ভালো মেয়ে। বুঝে গেছিস। এবার ফোন করে ফেল।”
মানালি বলল, “চুপ করো তো। যত ভুলভাল।”
তাদের বাড়ির গলি এসে গিয়েছিল। বিশ্বরূপদা হাসতে হাসতে বলল, “ঠিক আছে। করিস না। কিন্তু কিছু হলে ফেসবুকে আপডেট দিস। দূর থেকে আশীর্বাদ করে দেব।”
মানালি বলল, “কাল ফ্লাইট তো?”
বিশ্বরূপদা বলল, “ইয়েস।”
মানালি বলল, “কে এবার আমার পাগলামিগুলো প্রশ্রয় দেবে?”
বিশ্বরূপদা বলল, “দেখ মানালি, সাইকেল যারা শেখে, কখনও দেখেছিস?”
মানালি বলল, “না, আমি সাইকেল জানি না।”
বিশ্বরূপদা বলল, “যারা সাইকেল শেখায়, তারা প্রথমে ধরে থাকে, যে শিখছে সে নিশ্চিন্ত যে কেউ ধরে আছে, একটা সময় কিন্তু সাপোর্টটা ছেড়ে দেওয়া হয়। যে শিখছিল সে জানতেও পারে না সাপোর্টটা নেই। যখন জানতে পারে প্রথম প্রথম পড়ে যায়। একটা সময় ঠিকই শিখে যায়। তুই নিশ্চিন্ত থাক, এখন কদিন একটু আধটু পড়বি ঠিকই, কিন্তু তুই সাইকেল চালানোটা ঠিকই শিখে যাবি।”
মানালি কয়েক সেকেন্ড চুপচাপ বসে থেকে বলল, “ভালো থেকো বিশ্বরূপদা।”
বিশ্বরূপদা বলল, “তুইও। যাহ্। অনেক রাত হল।”
মানালি গাড়ি থেকে নামল। বিশ্বরূপদা বেরিয়ে গেলে কয়েক সেকেন্ড রাস্তাতেই চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে বাড়ির পথে রওনা দিল। মনখারাপ লাগছিল। বিশ্বরূপদা একটা ছাতার মতো ছিল। মনে হচ্ছিল ছাতাটা সরে গেল আজ থেকে।
ফোনটা আবার বাজছিল।
মানালি ধরল, “বলুন।”
“আমি ঠিক করেছি সন্ন্যাস নিয়ে নেব। গেরুয়া পরে অফিস করব। ব্যাপারটা কেমন হবে?”
মানালি গম্ভীর হয়ে বলল, “ভালো হবে।”
“হাতের কাছে তো একজন গুরুদেব আছেই। চাঁদবদন মহারাজ। বাবার পাদপদ্মে আশ্রয় নিয়ে জনসেবা করা যাবে।”
মানালি বলল, “আচ্ছা, আর কী কী প্ল্যান আছে?”
দীপ বলল, “একটা জিনিস জানার আছে। সন্ন্যাসীদের মিউচুয়াল ফান্ডে ইনভেস্ট থাকলে পাপ লাগে না তো?”
মানালি বলল, “সেটা জানি না, চাঁদবদন মহারাজকে জিজ্ঞেস করলে বলে দেবে।”
দীপ বলল, “আমায় কাল আবার ভুবনেশ্বর যেতে হবে।”
মানালির বলল, “বেশ তো, যাবেন।”
দীপ বলল, “কবে ফিরব ঠিক নেই। ফোনও করতে পারব না।”
মানালি বলল, “ভালো তো।”
দীপ বলল, “আপনি রাগ করলেন?”
মানালি বলল, “রাগ করতে যাব কেন বলুন তো?”
দীপ বলল, “তাও তো ঠিক। রাগ করতে যাবেন কেন খামোখা। তা ছাড়া আমি তো সন্ন্যাসী হয়ে যাব।”
মানালি বলল, “হুঁ। এবার রাখি?”
দীপ বলল, “আচ্ছা রাখুন।”
মানালি গলি দিয়ে হাঁটছিল। বাড়ির সামনে এসে দেখল দীপ দাঁড়িয়ে আছে। সে হাঁ করে বলল, “আপনি এখানে?”
দীপ বলল, “এই একটু চমকে দিলাম আপনাকে।”
মানালি বাড়ির চারপাশে দেখল। আশেপাশের কাকিমা পিসিমাদের অ্যান্টেনাগুলো বেশিই সক্রিয়। সে বিরক্ত হয়ে বলল, “বাড়ির ভেতরে গিয়ে বসতে পারতেন তো।”
দীপ বলল, “ও বাবা, আপনার বাবা মা আছেন না? তাঁরা কী ভেবে নেবেন।”
মানালি বলল, “কী ভাববে?”