ধ্রুব হাসলেন, “আপনি বলে দেবেন। কিংবা আমিই কোনও দিন বলব। রাগের মাথায় অনেক কিছু বলেছি বটে, কিন্তু বেসিক্যালি আমাদের ভালোই চেয়েছিলেন উনি।”
মানালি বলল, “পরের সিনেমাটা কি তবে প্রেমের হবে?”
ধ্রুব হো হো করে হেসে উঠলেন।
৩৯
গাড়ি স্টার্ট করে দীপ বলল, “আমার লাইফে সত্যি সমস্যা আছে বুঝলেন?”
মানালি বলল, “কী রকম?”
দীপ বলল, “এত কিছু শুনেও আমি এখনও বুঝতে পারছি না এই জাগ্রত প্রেমের আবেগ নিয়ে আমি কার কাছে যাব, ঋতি, না চিত্রলেখা?”
মানালি হেসে ফেলল, “আপনি বরং গুরুদেবের কাছেই যান।”
দীপ বলল, “আচ্ছা আমরা কি বন্ধু? আপনি তো আবার কী যেন বললেন, কম বন্ধু না কী!”
মানালি বলল, “হ্যাঁ ওই হল আর কি!”
দীপ বলল, “তাহলে আমরা আপনি আপনি করছি কেন? তুইটা ঠিক আছে না?”
মানালি বলল, “ওকে, নো প্রবলেম। তবে একটাই শর্ত আছে বন্ধুত্বের।”
দীপ সিরিয়াস হয়ে রাস্তার বাঁদিকে গাড়ি দাঁড় করাল, “কী?”
মানালি বলল, “হঠাৎ করে ওয়ান ফাইন মর্নিং প্রোপোজ করে দেবেন না। আমার প্রায় সব ছেলে বন্ধুদের এটার জন্য কাটিয়েছি।”
দীপ বলল, “এই মরেছে।”
মানালি বলল, “কী হল?”
দীপ বলল, “আমি তো জাস্ট ভাবছিলাম তুই, মানে আপনিই আমার জন্য এক্কেবারে পারফেক্ট ম্যাচ। ন্যাগিং নন, হুটহাট রিঅ্যাক্ট করে ফেলেন না, জাজমেন্টাল বা মেন্টাল কোনোটাই নন, সব দিক থেকেই, মানে সেই ছক থেকেই আপনাকে আমি বন্ধু বানাবার ট্রাই নিচ্ছিলাম আর কি! ওল্ড স্কুল মেথড বা ওই সবই আর কি!”
মানালি চোখ বড়ো বড়ো করে বলল, “প্লিজ না, আপনি ভীষণ বিপজ্জনক মানুষ।”
দীপ বলল, “তবে তোকে ফোন করতে পারি তো? মানে অ্যাটলিস্ট বায়ু চড়েছে তো, ফোন করলে হয়তো ত্রিকোণ প্রেম থেকে এবারের মতো সসম্মানে পালিয়ে বাঁচতে পারব।”
মানালি বলল, “ওকে, তাই হোক।”
দীপ বেশ কয়েক সেকেন্ড মানালির দিকে তাকিয়ে বলল, “তবে ঋতি মেয়েটা খারাপ ছিল না যাই বলুন।”
মানালি মাথায় হাত দিয়ে বলল, “আপনি গাড়ি চালান প্লিজ।”
দীপ বলল, “তবে ঋতি তো আর ঈপ্সিতা নয় যে চাকরি ছেড়ে আমার জন্য থেকে যাবে! চিত্রলেখাও খারাপ না অবশ্য।”
মানালি গাড়ির এফ এমটা চালিয়ে দিল…
৪০
“তাহলে তুমি চাকরি করতে যাচ্ছ না? পড়তে যাচ্ছ? তাও এই বুড়ো বয়সে?”
বিশ্বরূপদাকে প্রশ্নটা করেই হেসে ফেলল মানালি। খানিকক্ষণ আগে বিশ্বরূপদার ফেয়ারওয়েল পার্টি হয়ে গেল। এখন বিশ্বরূপদাই তাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে যাচ্ছে তার গাড়িতে করে।
তার প্রশ্নের উত্তরে বিশ্বরূপদাও হাসল। বলল, “চাকরি করার থেকে ওটাই সেফ। দেখিস না কখন কার সেন্টিমেন্টে লেগে যায় আর পারলে তখনই ফাঁসিতে চড়িয়ে দেয়। বাদ দে, তোর খবর বল। বিপ্রতীপ রায়ের অফারটা নিয়ে কী ভাবলি?”
মানালি বলল, “জানি না। ভদ্রলোক আজকেও ফোন করেছিলেন। আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে আমার কথা ওঁকে তুমিই রেকমেন্ড করেছিলে, তাই না?”
বিশ্বরূপদা একটা খয়েরি রঙের আই-টুয়েন্টিকে পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বলল, “উঁহুঁ, এই বাজারে কেউ কাউকে রেকমেন্ড করে না। তুই একদিনে যা খেল দেখিয়ে দিয়েছিলি, এটা তারই সাইড এফেক্ট ছিল।”
মানালি বলল, “তোমার কী মনে হয়? আমার কী করা উচিত?”
বিশ্বরূপদা বলল, “কী আবার? সিম্পল। ট্রিভিয়া নিউজে জয়েন করবি। ওখানে তোকে কত বেশি স্যালারি দিচ্ছে সেটা দেখ!”
মানালি একটু ইতস্তত করে বলল, “বিতস্তাকে এভাবে একা ছেড়ে…”
বিশ্বরূপদা বলল, “শোন মানালি, এটা প্রফেশনাল ফিল্ড। এখানে এইসব সেন্টিমেন্ট নিয়ে ভাবলে জীবনে কিচ্ছু করতে পারবি না। তুই তো ঠিকই করে নিয়েছিস মোটামুটি সিঙ্গল থেকে জাতির উদ্দেশে নিজের সাংবাদিক কেরিয়রটাকে উৎসর্গ করবি। সেক্ষেত্রে এর থেকে বেটার অপশন আপাতত তোকে কে দেবে? আর বিতস্তা তো হারিয়ে যাচ্ছে না। দেখা করবি, মিট করবি মাঝে মাঝেই, সেরকম জায়গা করে নিতে পারলে ট্রিভিয়া নিউজে বিতস্তাকেও রেকমেন্ড করে নিতে পারবি।”
মানালি রাগল একটু, “তোমাকে কে বলেছে আমি সিঙ্গল থেকে জাতির উদ্দেশে এইসব বুলশিট?”
বিশ্বরূপদা হাসল, “সেরকমই তো ট্রেন্ড দেখছি। পাগলের মতো অফিস আসিস আর বাড়ি যাস। আর কোনও কিছু নিয়ে তো ভাবতেও দেখি না তোকে।”
মানালি বলল, “প্লিজ তুমি আর বাবা-মার মতো শুরু কোরো না।”
বিশ্বরূপদা বলল, “কোথায় ধ্রুব ঈপ্সিতার মতো জ্বলন্ত প্রেম করবি, গোটা দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দিবি, তা না…”
মানালি বলল, “ছোটো মুখে একটা বড়ো কথা বলব বিশ্বরূপদা?”
বিশ্বরূপদা বলল, “বাওয়া। বাংলা সিরিয়াল টাইপ ডায়লগ ঝাড়ছিস কবে থেকে? বল বল কী বলতে চাস।”
মানালি একটা ঢোক গিলে বলল, “ঈপ্সিতা বাগচীর ওপর কোনও এককালে তোমার চাপ ছিল, না?”
বিশ্বরূপদা গাড়ি চালাতে চালাতে হাসতে লাগল। মানালি বলল, “কী হল, বলো না, ছিল?”
বিশ্বরূপদা বলল, “এই এত্তবড়ো ওয়াইল্ড গেসটা করলি কী হিসেবে?”
মানালি বলল, “সব মেয়েই তো মা দুর্গার অংশ, জানো তো, ত্রিনয়ন দিয়ে সব দেখতে পায়। আমিও তেমন পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি ধ্রুব বাগচী আর ঈপ্সিতা প্রেম করছেন, তুমি ধীরে ধীরে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলে, একটা সময় ধ্রুব আর ঈপ্সিতার তুমুল ঝামেলা, তুমি বুঝলে আর যাই হোক, ঈপ্সিতা ধ্রুবকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসে না, শেষমেশ চারটে কথা শুনিয়ে দিলে ধ্রুবকে। পরে বুঝলে সেটা আরও বাজে কেলো করে ফেলেছ, এত বছর পরে এসে ব্যাপারটা খুঁচিয়ে দেখতে চাইলে সত্যি কোনও লাভ হয় নাকি, এবং শেষ পর্যন্ত সফল হলে। দূর থেকে কাল হো না হো-র শাহরুখ খানের মতো গোটা ব্যাপারটা দেখে শহরটাই ছেড়ে চলে গেলে।”