আর-একটা ব্যাপারও কাঁটার মতো বিঁধছিল। হোটেল কর্তৃপক্ষ বিতস্তাকে বলেছিল বারোটার মধ্যে সৌরভ তার আই কার্ড নিতে না এলে লোকাল পুলিশে তারা জানিয়ে দেবে। সেক্ষেত্রে ব্যাপারটা আরও জটিল হয়ে যাবে।
এই ব্যাপারটা বিশ্বরূপদাকে বলা হয়নি। একটু ভেবে সে ঠিক করল সবটা জানাবে।
একবার রিং হতেই ফোন তুলল বিশ্বরূপদা, “কী হল আবার?”
মানালি বলল ব্যাপারটা।
বিশ্বরূপদা একটু থমকে বলল, “এটা কোনও ইস্যু না। তুই একটা কাজ কর, আগে হোটেলটায় যা। ম্যানেজারকে মিট কর। জানা। বাকিটা আমি দেখছি।”
মানালি আকাশ থেকে পড়ল, “আমি বলব?”
বিশ্বরূপদা বলল, “কেন? তুই বললে সমস্যাটা কী? ভাবছিস তুই একটা মেয়ে, তোর কথা শুনলে ওরা কী রিঅ্যাক্ট করবে? শোন, তুই যে জিনিসটা বারবার ভুলে যাস, তোর কাছে একটা মহা শক্তিশালী অস্ত্র আছে। সেটা হল তোর প্রেস কার্ড। দ্বিতীয়ত, একটা হোটেলে নিজেদের মতো করে একটা আনম্যারেড কাপল থাকতেই পারে। এ দেশের কোনও আইনে এটা বলা হয়নি যে এটা বেআইনি। নীতিপুলিশগিরি অনেকেই মাড়ায়। কিন্তু এই সংক্রান্ত কোনও আইন নেই। স্বেচ্ছায় কে কী করবে তা বলার জন্য সমাজ কেউ না। কোথাও কোথাও পুলিশের পকেট ভরার জন্য হোটেলে রেইড ইত্যাদি হয়। তুই নিশ্চিন্ত থাক। বিতস্তার এই ক্ষেত্রে কোনও ভয়ই নেই। তুই যেটা করবি, হোটেলে গিয়ে ম্যানেজারকে নিজের পরিচয় দিয়ে ঘটনাটা এক্সপ্লেইন করবি। ওরা ঠিক বুঝে যাবে। পুলিশ ইত্যাদি আমি সামলাচ্ছি, ব্যাক আপ তো আমি থাকলাম। অফিসটাও তো সামলাতে হবে মা, আফটার অল সব কিছুর পরেও দ্য শো মাস্ট গো অন। আশা করি যেটা বোঝাতে চাইছি তুই বুঝলি।”
মানালি বলল, “ওকে। দেখছি।”
ফোনটা কেটে ক্যাব চালককে হোটেলের লোকেশন জানাল মানালি। জানলার বাইরে চোখ গেল তার। সব কিছু কেমন স্বাভাবিক গতিতে চলছে।
শহর ব্যাপারটাই এমন। সব কিছুই চলবে, আর প্রতিটা সময়ে কারও না কারও কত বড়ো ক্ষতি হয়ে যাবে, শহরের গায়ে কোনও আঁচই লাগবে না।
সাড়ে এগারোটা নাগাদ হোটেলে পৌঁছোল মানালি।
বেশ ঝাঁ চকচকে হোটেল। মানালি ট্যাক্সিতে বসেই যতটা সম্ভব মানসিক শক্তি অর্জন করছিল।
রিসেপশনিস্টকে বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই জানাল ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করতে চায়। রিসেপশনিস্ট তাকে লবিতে বসতে বলল। বসতে গিয়েই মানালির চোখ পড়ল দীপের দিকে। গম্ভীর মুখে বসে খবরের কাগজ পড়ছে।
মানালি প্রথমে ভাবল কিছু বলবে না, কিন্তু তার ভেতরে ভেতরে প্রচণ্ড টেনশন হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল একগাদা কথা বললে হয়তো খানিকটা টেনশন কমবে। দীপকে দেখে কেন জানে না সে বেশ আশ্বস্ত হল। বলল, “এখানে কী ব্যাপার?”
দীপ চমকে তার দিকে তাকাল। বলল, “ওহ আপনি? এখানে কী ব্যাপার?”
মানালি বলল, “সেটা তো আপনি বলবেন। আমি আগে প্রশ্নটা করলাম।”
দীপ কয়েক সেকেন্ড মানালির দিকে তাকিয়ে নিজের সিট থেকে উঠে তার পাশে এসে বসল, “অ্যাকচুয়ালি আমি একটা বিরাট সমস্যায় পড়েছি। আপনার নামটা কী যেন?”
– “মানালি।”
দীপ বলল, “ওহ, সরি। আমার ভোলাটা উচিত হয়নি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি ভীষণ কনফিউজড।”
মানালি বলল, “কী ব্যাপারে?”
দীপ কয়েক সেকেন্ড মানালির দিকে তাকিয়ে বলল, “কলকাতার এসকর্ট সার্ভিস সম্পর্কে আপনার কী ধারণা?”
মানালি হাঁ করে দীপের দিকে তাকিয়ে থাকল। বিতস্তা আর সৌরভের ব্যাপারটা কিছুক্ষণের জন্য পুরোপুরিই ভুলে গেল সে। বলল, “মানে?”
দীপ বলল, “আপনি কী জানেন? এগুলো কি সেফ? মানে পুলিশ ধরে? বা এইচ আই ভি-র চান্স আছে?”
মানালি বলল, “আপনি কী বলে চলেছেন? এসকর্ট সার্ভিস নিয়ে আমি কী করে জানব?”
দীপ বলল, “অ্যাকচুয়ালি আমি আজকেও অফিস ছুটি নিয়েছি। একটা নাম্বারে সকালে ফোন করেছিলাম। ওরা এখানে বসতে বলল। আধ ঘণ্টার মধ্যে ওরা আমাকে কন্ট্যাক্ট করছে জানাল।”
মানালি বলল, “কিন্তু অফিস-টফিস না গিয়ে হঠাৎ করে এসকর্ট সার্ভিস নিয়ে পড়লেন কেন আপনি?”
দীপ বলল, “ঋতি সাজেস্টেড। আপনি ঋতিকে চেনেন?”
মানালি দুদিকে মাথা নাড়ল।
দীপ বলল, “ঋতির ধারণা হয়েছে আমি সেক্সুয়ালি ফ্রাস্ট্রেটেড একটা লোক, আমার নাকি এসকর্ট সার্ভিস দরকার। আমি সেটা দেখতেই এসেছি। ব্যাপারটা কি সত্যি!”
মানালি বলল, “আমি কিছুই বুঝছি না।”
দীপ বলল, “আমি বোঝাচ্ছি। আপনাকে তো আমার স্টোরিটা বলেছিলাম।”
মানালি বলল, “হ্যাঁ। বলেছিলেন।”
দীপ বলল, “তারপরে অনেক জল গড়িয়েছে। আমি কাল বিয়ের ডিসিশনও নিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু সব গোলমাল ঘটল ঋতিকে ফোন করার পরে।”
মানালি বলল, “আপনি সত্যিই কনফিউজড। আপনি বরং বাড়ি যান। কলকাতার এসকর্ট সার্ভিস কেমন সে ব্যাপারে আমার কোনও ধারণা নেই, কিন্তু এটুকু বুঝতে পারি ওসব আপনার জন্য না। আপনি এখান থেকে বেরোন।”
দীপ বিহ্বল চোখে মানালির দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করল।
মানালির দীপকে দেখে হঠাৎ করেই খুব খারাপ লাগছিল।
প্রথম যেদিন আলাপ হয়েছিল সেদিনের সঙ্গে আজকের দীপকে সে কিছুতেই মেলাতে পারছিল না।
ম্যানেজার এসে গেছিলেন। তার দিকে তাকিয়ে বললেন, “গুড মর্নিং ম্যাম। হাউ মে আই হেল্প ইউ?”
মানালি উঠে নিজের আই কার্ড বের করল, “আমি সময়ের কণ্ঠস্বর থেকে আসছি। একটু আলাদা কথা বলা যাবে?”