গলাটা চিনতে পারল দীপ। চিত্রলেখার এক্স।
সে বলল, “হ্যাঁ। গেলাম। তো?”
ওপাশটা খানিক চুপচাপ থেকে বলল, “ভালো ভালো। খাওয়া মাল বিয়ে করতে ইচ্ছে হয়েছে তোর। কর গিয়ে বিয়ে। পরে বলতে পারবি না আমি তোকে অ্যালার্ট করিনি।”
দীপ বলল, “তুই কে ভাই? আমার বাপ না মা? আর কে খেয়েছে, না খেয়েছে, তাতে আমার কোনও ইন্টারেস্ট নেই।”
ওপাশ থেকে হাসির শব্দ ভেসে এল, “এই তো ছেলে বার খেয়ে গেছে। যা ভাই। বেস্ট অফ লাক।”
দীপ ফোনটা কেটে দিল। মাথায় হাত দিয়ে বসল। সব মিলিয়ে একটা অদ্ভুত জগাখিচুড়ি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সে নিজেই বুঝতে পারছিল। মাথায় রক্ত উঠে যাচ্ছিল। সে খানিকক্ষণ ভেবে দরজা খুলে ঘরের বাইরে বেরোল। বাবা মা ড্রয়িং রুমে গম্ভীর মুখে বসে আছে।
দীপ বলল, “মা, ওই বাড়িতে ফোন করে বলে দাও, আমরা বিয়ের জন্য রাজি।”
মা বাবা দুজনেই তার দিকে তাকাল।
বাবা বলল, “তুই তো দেখছি মহম্মদ বিন তুঘলককেও লজ্জায় ফেলে দিবি।”
মা বাবার দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “গুরুদেবের সঙ্গে কথা বলতে হবে গো। আমার মনে হয় দীপের ভিতরে কোনও দুষ্টু প্রেতাত্মা ঢুকেছে। ভূত তাড়াতে হবে।”
বাবা বলল, “ধুস। ভূত-টুত কিছু নেই। এ যুগে আবার ভূত বলে কিছু আছে নাকি? ওর বায়ু চড়েছে। কদিন ধরে শুধু পেপে আর কাঁচকলা রান্না করো। অফিসেও টিফিন দিয়ে দাও। বাইরের খাবার যেন না খায়।”
দীপ বাবা-মার সামনে গিয়ে বসল, “দ্যাখো, আমার প্রথমে মনে হয়েছিল চিত্রলেখা ঠিক মেয়ে না। এখন মনে হচ্ছে ও-ই ঠিক মেয়ে। তোমরা ফোন করো।”
মা তার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল, “ধর আমি ফোন করলাম। তার ঠিক ঘণ্টাখানেক পরে তোর যদি মনে হয় বিয়েটা করা ঠিক হবে না, তখন কী হবে?”
দীপ কয়েক সেকেন্ড বাবা-মার দিকে তাকিয়ে ফোন নিয়ে চিত্রলেখার নাম্বার ডায়াল করল।
রিং হতেই ধরল চিত্রলেখা। বলল, “মেসেজ করেছিলাম। পৌঁছেছ?”
দীপ বলল, “আমাকে একটা প্রশ্নের উত্তর দেবে?”
চিত্রলেখা বলল, “বলো।”
দীপ বলল, “আমি জানি আমি তোমার সঙ্গে খুব খারাপ করেছি। তবু এত সব কিছুর পরে আমি যদি তোমায় বিয়ে করতে চাই তুমি কি রাজি হবে?”
চিত্রলেখা চুপ করে গেল। বাবা মা হাঁ করে দীপের দিকে তাকিয়ে আছে।
দীপ অধৈর্য হল, “তোমার আবার কী হল?”
চিত্রলেখা বলল, “আমি খুব বোকা মেয়ে দীপ। মাঝে মাঝে অনেক কিছু বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয়। কিন্তু বুঝতে পারি আসলে একটা মিথ্যার মধ্যেই আছি। তুমি নিশ্চয়ই ঠাট্টা করছ?”
দীপ ফোন নিয়ে বাবা-মার সামনে থেকে উঠে নিজের ঘরে গেল, “দ্যাখো চিত্রলেখা। আমি এই মিনিট তিনেক আগেও ঠিক করেছিলাম তোমার সঙ্গে আর কোনও সম্পর্ক রাখব না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে কোনও একটা জায়গায় তুমি বা আমি কোথাও একটা মিলে যাচ্ছি। তুমি সময় নাও। প্রয়োজনে ঋতির সঙ্গেও কনসাল্ট করতে পারো। আমার কোনও আপত্তি নেই। এটুকু কথা তোমাকে আমি দিতে পারি, ভবিষ্যতে আর কোনও রকম সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগব না।”
চিত্রলেখা বলল, “তুমি ঝোঁকের মাথায় আবার এসব করছ দীপ, আমি বুঝতে পারছি। তুমি বরং একটা রাত সময় নাও। ভাবো। আমি অনেক কষ্টে এত সব কিছু থেকে নিজেকে সামলেছি দীপ। আবার সেই একই লুপে পড়তে চাই না। আমিও সময় নি। ভেবে নাহয় একটা সিদ্ধান্তে আসা যাবে? ঠিক আছে?”
দীপ বলল, “ঠিক আছে। সকালে জানিয়ো তুমি।”
ফোনটা কেটে দিল সে।
বিশ্রীভাবে মাথা ধরছে। দীপ ফোনটা রেখে একটু ভেবে ঋতিকে ফোন করল।
ঋতি ধরল না প্রথমটা। দীপ আবার ফোন করল।
এবার ধরল, ঠান্ডা গলায় বলল, “বলো।”
দীপ বলল, “আমি ঠিক করেছি চিত্রলেখাকে বিয়ে করব।”
ঋতি শুনে তেতো হাসল, “ফাইন। আমাকে বলছ কেন?”
দীপ কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল, “জানি না।”
ঋতি বলল, “শোনো দীপ। তোমাকে বন্ধুর মতো একটা অ্যাডভাইস দি। কলকাতা শহরে এসকর্ট সার্ভিস হয় জানো তো? তুমি বরং সেসব কনসাল্ট করো। এখনই রিলেশনশিপের মধ্যে যেয়ো না। আই স্ট্রংলি বিলিভ, ইউ হ্যাভ সিরিয়াস ইস্যুস। চিত্রলেখা তোমাকে ভালোবাসে। কিন্তু তুমি ওকে ভালোবাস না। জাস্ট কনফিউশন ক্রিয়েট হয়েছে তোমার মধ্যে, আর সব কিছুর মধ্যে ঘেঁটে থেকে তুমি এই ডিসিশনটা নিয়েছ।”
দীপ বলল, “আমি তো তোমাকে ভালোবেসেছিলাম। তুমি আমাকে ডিচ করে দিলে।”
ঋতি বলল, “শোনো দীপ গাঙ্গুলি, আমার মাথা খেয়ো না। তোমার কী মনে হয়, হঠাৎ করে এই সব কিছুর থেকে বেরোনোটা আমার পক্ষে খুব সহজ ছিল? কিন্তু এটাও জেনে রেখো, আমি যথেষ্ট স্ট্রং। মোহ কাটতে আমার বেশিক্ষণ লাগেনি, যখনই জেনেছি তোমাকে একেবারেই বিশ্বাস করা যায় না। আমি চিত্রলেখাকে কিছুই বোঝাতে যাব না। ও নিজেই বুঝুক। তুমি এসকর্ট সার্ভিস কনসাল্ট করো। কাজ দেবে।”
দীপ ফোন কেটে দিল।
৩৬
বিতস্তা ঘুমোচ্ছিল। তিন-চারবার ফোন করার পরে ধরল।
মানালি কী বলবে বুঝতে পারছিল না প্রথমে। বেশ খানিকটা ভেবে নিয়ে বলল, “অফিস চলে আয়। সৌরভের একটা খোঁজ পাওয়া গেছে।”
বিতস্তা ঘুমঘোরেই বলল, “বল না প্লিজ আমাকে একটা ফোন করতে।”
মানালি বলল, “অফিস আয়। ওখানেই দেখছি।”
কথা বাড়াল না মানালি। ফোনটা কেটে দিল।
খুব তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিল। রাস্তায় বেরিয়ে ক্যাব নিল একটা। মাথা কাজ করছিল না তার। বিতস্তার কাছে সৌরভই সব ছিল। এত বড়ো একটা ব্যাপার ঘটার পরে মেয়েটাকে কীভাবে সামলাবে তা নিয়ে ক্রমাগত ভেবে চলেছিল সে।