সে উঠল, “আমি ঘরে যাই। ঘুমিয়ে পড়ি।”
বাবা বলল, “কিছু তো খা।”
মানালি বলল, “দেখছি।”
সে ফ্রিজ খুলল। একটা চকোলেট ছিল। সেটা হাতে নিয়ে বলল, “এই তো, ডিনার পেয়ে গেলাম। আর চিন্তা নেই।”
বাবা বলল, “তোর মা ঝাড়লে আমি জানি না কিন্তু।”
মানালি বলল, “আমি দরজা বন্ধ করে দিচ্ছি। তুমি সামলে নিয়ো।”
বাবা ব্যাজার মুখ করল, “দেখি, কী করে সামলাই।”
মানালি ঘরে ঢুকল। সকালে সব কিছু নিয়ে সে যতটা টেন্সড ছিল, অতটা আর হচ্ছিল না এখন। দরজা বন্ধ করে চেঞ্জ করে খাটে শুয়ে ল্যাপটপ খুলল। ফেসবুকে অনেকগুলো মেসেজ এসেছে। সে বেশিরভাগই ইগনোর করে গেল। কিছু পাবলিক আছে, মেয়ের প্রোফাইল পেলেই ওভারস্মার্ট সেজে ফ্যালে। বেশ কিছু এরকম মেসেজ জমেছে। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার ধরনগুলো দেখে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ল সে। নিজের ওয়ালে এল। কয়েকটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসেছে। একটাও অ্যাক্সেপ্ট করল না। বিতস্তা পিং করল, “কি রে, কী হল শেষমেশ?”
মানালি লিখল, “কী আবার হবে?”
“আর কেউ ঝাঁট জ্বালিয়েছে আজ? ধ্রুব বাগচী ফোন করেছিল?”
“আমি তো জ্বলার ওপরেই থাকি। ও আর কী!”
“আচ্ছা, লিভ ইট, গেস কর তো আমি কোথায় আছি?”
“আর কোথায় থাকবি? সৌরভের ফ্ল্যাটে?”
“না বে। হোটেলে। জাস্ট চেক ইন করলাম। সেই অ্যাপ রে।”
“গান্ডু। হোটেলে চেক ইন করে এখন ফেসবুক করছিস?”
“ডেবিউ হয়ে গেছে। সৌরভের সিগারেট শেষ হয়ে গেছে। আনতে বেরিয়েছে।”
“হি হি। ওকে, এনজয়।”
“হ্যাঁ রে বাই।”
বিতস্তার সাথে কথা বলে ল্যাপটপটা শাট ডাউন করল মানালি।
সারাদিন বড়ো টেনশন গেছে। মাথাটা হঠাৎ খুব শান্ত লাগছে। ঘুম পাচ্ছিল তার। চোখ বুজল সে।
ঘুম ভাঙল মোবাইলের শব্দে। মানালি দেখল রাত বারোটা বেজে গেছে। কোনও মতে ফোনটা ধরল সে, “কে?”
“আমি বলছি রে মানালি।” ওপাশ থেকে বিতস্তার গলা। কেমন টেন্সড।
মানালি বলল, “কী হল?”
“আর বলিস না, সেই যে সৌরভ বেরিয়েছিল এখনও ফেরেনি। আমি অনেকক্ষণ দেখলাম। তারপর সৌরভকে বারবার ফোন করছি। ফোন নট রিচেবল বলছে।” বিতস্তার গলার ভয়টা স্পষ্ট বুঝতে পারছিল মানালি।
সে বলল, “শোন, শোন, নিশ্চয়ই কোনও প্রবলেম হয়েছে, তুই টেনশন করিস না, রাতটা হোটেলেই কাটিয়ে দে। সকালে নাহয় চেক আউট করে যাস। টাকা আছে তো?”
বিতস্তা বলল, “টাকা আছে, কিন্তু আমার তো ভয় লাগছে রে! যদি অন্য কেউ চলে আসে? বুঝতেই তো পারছিস!”
মানালি বলল, “বিশ্বরূপদাকে বলব তোকে নিয়ে আসতে? বা ঋপণকে?”
বিতস্তা বলল, “তুই খেপেছিস? গোটা পৃথিবীর লোক জেনে যাবে তাহলে। আমার তো মাথাই কাজ করছে না রে। ভয় লাগছে ওর কিছু হল নাকি!”
মানালি বলল, “তুই চিন্তা করিস না, ফোনটা অন রাখ, কোনও রকম প্রবলেম হলে ফোন কর আমাকে।”
বিতস্তা বলল, “প্রবলেম হবে ভাবতে গেলেই তো কেমন কেমন লাগছে রে। আনম্যারিড কাপল হোটেলে থাকছে এসব কেউ মেনে নেবে না! কিছু হলে সবাই তো আমাকেই দেখাবে।”
মানালি একটা ধমক দিল, “কিচ্ছু হবে না। অত ভয় পাওয়ার কিছু হয়নি। মাথা ঠান্ডা রাখ জাস্ট। ঘুমিয়ে পড় বরং। সকালে উঠে সৌরভকে খোঁজা যাবে।”
বিতস্তা বলল, “শোন না, আমরা তো এখন পার্ক স্ট্রিট এরিয়ায় আছি। পুলিশ স্টেশনে ফোন করে একটু খোঁজ নিতে পারবি, সৌরভ দাস বলে কারও কোনও খবর আছে নাকি?”
মানালি বলল, “আচ্ছা দেখছি। তুই টেন্সড হোস না। ফোনটা রাখ, আমি দেখছি।”
ফোনটা কাটল সে। মাথাটা এক্কেবারে ফাঁকা লাগছে তার। কী করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না।
৩৩
“ভাই সুস্থ আছিস তো?”
লাঞ্চ করতে একাই বেরিয়েছিল দীপ। রাম পেছন থেকে দৌড়োতে দৌড়োতে এল।
দীপ বলল, “হ্যাঁ। অসুস্থ কেন হব?”
রাম বলল, “তোর হালচাল তো ভালো ঠেকছে না। পাবলিক ইউরিনালওয়ালা কোনও মেয়ের পাল্লায় পড়িসনি তো ভাই?”
দীপ অবাক হল, “মানে?”
রাম বলল, “কিছু কিছু আছে তো। টেগোরের একটা কবিতা শুনছিলাম, হেথায় আর্য হেথা অনার্য এক দেহে হল লীন। মানে ইউনিভারসাল গিভার। এরকম কারও পাল্লায় পড়িসনি তো ভাই? লাইফ হেল হয়ে যাবে কিন্তু আগে থেকে বলে দিলাম।”
দীপ বলল, “তুই টেগোর পড়লি কীভাবে? বাংলায় পড়েছিস?”
রাম চোখ নাচাল, “পড়েছি, কে পড়িয়েছে সেটা তোর না জানলেও হবে। আসল কথায় আয় ভাই। এরকম কারও পাল্লায় পড়লি না তো? যা ডেস্ক্রিপশন দিচ্ছিস, একদিনেই কোর্স কমপ্লিট করে ফেললি, তাতে তো সেরকমই লাগছে।”
দীপ উত্তর না দিয়ে একটা খাবারের স্টলে রুটি মাংস নিয়ে খেতে শুরু করল।
রাম বলল, “কী বে? চুপ হয়ে গেলি কেন?”
দীপ বলল, “পোষাচ্ছে না। ব্রেক লাগবে।”
রাম বলল, “হ্যাঁ তুই এই কর। একদিন পর পর ছুটি নে। তারপর বস তোকে একেবারেই লং ব্রেকে পাঠিয়ে দেবে।”
দীপ বলল, “বসের সঙ্গেই কথা বলব। মাইন্ডটা পুরো ছেতরে আছে। বিয়ে করলেও হয়।”
রাম অবাক হয়ে দীপের দিকে বড়ো বড়ো চোখে করে তাকিয়ে বলল, “এই হল তোদের বাঙালি ছেলেদের সমস্যা। বাঁড়া সারাজীবন কোনও মেয়ে দেখবি না, টেনে পড়াশুনা করবি, তারপর যখনই ফুটার পাল্লায় পড়বি, ঝাঁপিয়ে পড়ে যাচ্ছেতাই করে ফেলবি। তুই জাস্ট ভাব এ কদিনে তুই কী কী করলি! এর মধ্যে আবার তোর মাথায় বিয়েও নিয়ে এলি ভাই?”
দীপ মুরগির ঠ্যাং চিবোতে চিবোতে বলল, “আমি সিরিয়াস। আমার মনে হয় বিয়ে করলেই আমি এক্কেবারে ঠিক হয়ে যাব।”