দীপ বলল, “তুমি কি এভাবে ইমোশনাল অত্যাচার করার জন্য হোটেলে রুম নিতে বললে?”
ঋতি ঠান্ডা গলায় বলল, “মানুষজন যদি জানে একটা মেয়েকে ভুলভাল বুঝিয়ে হোটেলের রুমে এনে এক্সপ্লয়েট করার চেষ্টা করেছ, তোমার কী হবে ভেবে দেখেছ?”
দীপের শিরদাঁড়া বেয়ে যেন একটা শীতল স্রোত চলে গেল। সে ফ্যালফ্যাল করে ঋতির দিকে তাকিয়ে থাকল। ঋতিকে কোনও ভাবেই আর চিনতে পারছিল না সে।
৩০
ধ্রুব ড্রয়িং রুমে ঢুকে মানালিকে দেখে বললেন, “বাহ, আপনি এখানেও?”
মানালি একেবারেই শকড অবস্থায় ছিল। কিছু বলতে পারল না।
রত্না অবাক হয়ে বললেন, “ওঁর এখানে না থাকারই বা কী হল?”
ধ্রুব সোফায় বসতে বসতে বললেন, “সে আর আপনার শুনে কাজ নেই দিদি।”
রত্না বললেন, “বেশ। তুমি যখন বলছ তখন নেই।”
ধ্রুব মানালির দিকে তাকালেন, “আপনার কতক্ষণ লাগবে?”
মানালি ঋপণকে উঠতে ইশারা করে নিজে উঠে দাঁড়াল, “আপনারা কথা বলবেন। আমি আসি বরং।”
রত্না হাঁ হাঁ করে উঠলেন, “একদম না। সবে তো এলে। বসো। সর্বক্ষণ তো একা একাই কাটাচ্ছি। একটু থাকো। ভালো লাগবে।”
রত্নার কণ্ঠস্বরে কিছু একটা ছিল যেটা মানালি অবজ্ঞা করতে পারল না। চুপচাপ বসে পড়ল।
ধ্রুবর প্রশ্নটায় সে হঠাৎই খানিকটা অপমানিত বোধ করছিল, রত্নার কথায় খানিকটা প্রলেপ লাগল তাতে।
রত্না বললেন, “ওঁর সামনেই বলো ধ্রুব। অসুবিধা নেই।”
ধ্রুব চোখ ছোটো করে তাকে আর ঋপণকে খানিকটা দেখে বললেন, “বলব? ওরা কারা জানেন তো?”
রত্না বললেন, “জানব না কেন। প্রেস তো। যদি তোমার সিনেমার প্রচার হয় তাহলে সমস্যা কোথায়?”
ধ্রুব বললেন, “সিনেমা শুরু হল কোথায়? আপনিই বা রাজি হলেন কখন? আমি তো সেই ব্যাপারে জানতেই এলাম।”
রত্না বললেন, “ভাবছি ধ্রুব। ভেবে যাচ্ছি।”
ধ্রুব বললেন, “বেশ। ভাবুন। কিন্তু একটু তাড়াতাড়ি ভাবুন। আপনার ওপরই নির্ভর করে আছে এই সিনেমার ভবিষ্যৎ।”
রত্না অবাক হলেন, “এরকম ব্যাপার?”
ধ্রুব বললেন, “অবশ্যই। আমি যে চরিত্রে আপনাকে ভেবেছি, সেটা আপনি না করলে সিনেমাটাই আমি বানাব না।”
রত্না একটা নিঃশ্বাস ছাড়লেন। বললেন, “এই কিছুদিন আগেও একা একা এই ঘরে বসে থেকে যখন টিভি দেখতাম ধ্রুব, আমার প্রতিদিন মনে হয়েছে আমাকে বোধহয় আর কেউ মনে রাখেনি। সবাই সব কিছু ভুলে গেছে। মানুষ স্বর্ণযুগ স্বর্ণযুগ বলে এত মাতামাতি করে অথচ নায়করা যে সম্মানটা পেয়ে বাঁচেন তার সিকিভাগও নায়িকারা পান না। কেমন নিঃশব্দে সবাই চলে যান। অথবা হয়তো যেতে না চাইলেও যেতে বাধ্য হন। তোমার এই কথাগুলো আমাকে অনেকটা বল দিল ধ্রুব। আমি তোমার সিনেমা করব। তবে আমি বয়স্কা একজন মানুষ। আশা করব…”
ধ্রুব হাত তুললেন, “আর কিছু বলতে হবে না। ওসব চিন্তা আমার।”
পরক্ষণেই ধ্রুব মানালির দিকে তাকালেন, “নিউজটা করছেন তো?”
মানালি অপ্রস্তুত হল, “আমি শুধু এটুকু জানলাম আপনি একটা সিনেমা বানাচ্ছেন, তাতে দিদি অভিনয় করবেন। এর বেশি আমি এমন কিছুই জানি না যা নিয়ে কোনও স্টোরি করা যায়।”
ধ্রুব বললেন, “টার্মটা একদম পারফেক্ট বলেছেন। স্টোরিই বটে। আপনারা নিউজ করেন না। স্টোরি করেন।”
রত্না বললেন, “এসব কথা এখানে না বললে খুশি হতাম ধ্রুব। ও কিন্তু আমার বাড়িতে এসেছে আজকে।”
রত্না যে রুষ্ট হচ্ছেন, বুঝল সবাই। মানালি ভেতরে ভেতরে একটু স্বস্তি বোধ করল।
ধ্রুব বললেন, “সরি সরি দিদি। আর হবে না। তবে কী জানেন তো, বাড়ি বয়ে এসে কেউ যদি কেচ্ছা খুঁড়ে বের করে নিউজ করে তখন খানিকটা রাগ হওয়া জায়েজ। সব সুস্থ মানুষই হয়তো রাগ করত, যেমন আমি করেছিলাম। সকাল থেকে ফোন আর টিভির ব্রেকিং নিউজের জ্বালায়… যাই হোক।”
রত্না বললেন, “বেশ তো। আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে নাহয় ঝগড়াটা কোরো। আপাতত বন্ধ রাখো।”
ধ্রুব কাঁধ ঝাঁকালেন, “আচ্ছা। আপাতত তাই হোক। অবশ্য আমার খুশি হবার কথা এখন। আমার এতদিনের পরিশ্রম আজ সফল হল। এবার প্রি-প্রোডাকশনের কাজ আমরা শুরু করে দিতে পারব।”
রত্না বললেন, “আর কে কে থাকবে?”
ধ্রুব একবার মানালির দিকে তাকালেন, তারপর রত্নার দিকে তাকিয়ে বললেন, “শিগগিরি জানাচ্ছি দিদি।”
মানালি বুঝল তার সামনে বলতে চাইছেন না ধ্রুব।
রত্না বললেন, “যে-ই থাকুক আমার কোনও অসুবিধা নেই অবশ্য। আমার শুধু আমার শরীরটা নিয়েই যা ভয় লাগে। কখনও খুব খারাপ হয়ে পড়লে তোমাদের বড়ো সমস্যা হয়ে যাবে।”
ধ্রুব মাথা নাড়লেন, “সেসব ব্যাপার আমি বুঝব দিদি।”
রত্না খুশি হলেন, “বেশ। তাই হোক। দেখি কতটা কী করতে পারি।”
মানালি উঠল, “আমি আসি দিদি। আমাকে আবার বাড়িতে ফিরতে হবে।”
রত্না বললেন, “অনেকটা দূরে বাড়ি তোমার?”
মানালি বলল, “হ্যাঁ দিদি। আমি আসি।”
রত্না বললেন, “বেশ। সাবধানে যেয়ো। খবরটা বেরোলে আমায় জানিয়ো একটু ফোন করে।”
মানালি হাসল, “নিশ্চয়ই দিদি। গুড নাইট।”
রত্না বললেন, “সাবধানে যেয়ো।”
মানালি আর ধ্রুবর দিকে তাকাল না। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল।
রত্না ব্যানার্জি দরজা অবধি এলেন তাদের পৌঁছে দিতে।
রাস্তায় নেমে মানালি একটা শ্বাস ছাড়ল, “উফ, দেখলি? যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যা হয়।”
ঋপণ বলল, “হয়েছিল তোর আজকে। মালটা তক্কে তক্কে আছে।”