দীপ অবাক হল, “মানে?”
ঋতি বলল, “একটু বসি প্লিজ। একটু গল্প করি। আজ ঠিক ভালো লাগছে না।”
দীপের রাগ হচ্ছিল। সে বলল, “তাহলে হোটেলে এলাম কেন?”
ঋতি বলল, “কথাটাও তো বলা দরকার আমাদের, তাই না?”
দীপ অবাক হচ্ছিল।
এই ঋতিকে সে চিনতে পারছিল না।
ঋতি খাটের সামনের সোফায় বসল। বলল, “আমাদের কিছু কথা বলা দরকার দীপ। শুরু করি?”
দীপ বলল, “করো।”
ঋতি বলল, “চিত্রলেখাকে তোমার ঠিক কোন কারণে অপছন্দ? তুমি সন্দেহ করো ও ভার্জিন নয়? ও মিথ্যাবাদী?”
দীপ খানিকটা হকচকিয়ে গেল। বলল, “এসব কথা কখন হল তোমার সঙ্গে?”
ঋতি বলল, “উত্তরটা দাও প্লিজ।”
দীপ বলল, “হ্যাঁ। অবশ্যই তাই। যখন থেকে বুঝতে পেরেছি ও মিথ্যে কথা বলছে, আমি সরে এসেছি।”
ঋতি বলল, “আমিও তোমায় মিথ্যে কথা বলেছি দীপ। তোমার সঙ্গে দেখা হবার আগে আমার দুটো অ্যাফেয়ার ছিল। দুবারেই আমার ফিজিক্যাল রিলেশন হয়েছিল।”
দীপ অবাক হয়ে ঋতির দিকে তাকাল। কয়েক সেকেন্ড পর খানিকটা নিজেকে সামলে বলল, “তবে আমাকে দেখে এতটা মুগ্ধতা? প্রথমবার হোটেলের রুমে… বললে… যেগুলো…”
ঋতি দীপের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “সব ফেক ছিল। আমার মনে হয়েছিল তুমি একটা ন্যালাভোলা ছেলে যাকে বাবা-মারও পছন্দ হয়। মেয়ে হিসেবে আমি যথেষ্ট অ্যাডভেঞ্চার লাভার দীপ। তুমি আর আমি তো অনেক ভদ্রভাবে হোটেলে এসে সব কিছু করছি, আমার লাস্ট যে এক্স ছিল তার সঙ্গে আমি যেখানে সেখানে যা ইচ্ছে করে বেড়াতাম। প্রায় সব উইকেন্ডেই, কখনও শান্তিনিকেতন, কখনও দিঘা, মন্দারমণি, বাবাকে বলতাম অফিস ট্যুরে বেরোচ্ছি, আদতে সব এসব করতে যেতাম। সমুদ্রের বালিতে রাত দেড়টার সময় সেক্স করার থ্রিল ইজ হেভেনলি…”
দীপের কথা বন্ধ হয়ে গেল। সে হাঁ করে ঋতির দিকে তাকিয়ে বলল, “এত সব কথা এখন আমায় বলছ কেন? না বললেও তো পারতে?”
ঋতি বলল, “তোমার সব কথা আমি জেনে গেছি। আমার কেন জানি না মনে হয় আমার সব কথাও তোমাকে বলে দি। আমি ভেবেছিলাম তুমি একেবারেই ভোলাভালা টাইপ ইনসান। ভেবেছিলাম সেটল হয়েই যাব সব কিছু ছেড়ে। চিত্রলেখার সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম তুমি একেবারেই সেরকম নও। তুমি ট্রুথ হাইড করতে পারো, তুমি সব কিছু লুকিয়ে ফেলতে পারো। আমার মনে হল আমি বরং তোমার সামনে কিছু অপ্রিয় সত্যি নিয়ে আসি। দেখি তুমি সহ্য করতে পারো কি না।”
দীপ ঋতির দিকে তাকাল। খানিকক্ষণ আগে তার নিজের ভেতরে যে উত্তেজনাটা তৈরি হচ্ছিল, ঋতির কথাগুলো সে সব কিছুর মুখে নুন ছুড়ে মেরেছে।
দীপ খানিকটা আক্রমণাত্মক হতে চেষ্টা করল, “আমি তো তোমাকে কাল রাতেই খুলে বলেছি সবটা। বলিনি?”
ঋতি বলল, “চিত্রলেখা যদি আমাকে না বলত তাহলে কি আদৌ কোনও দিন বলতে?”
দীপ বলল, “ভাগ্যিস বলেছিল। নইলে তো জানতেই পারতাম না তুমিও সব কোর্স কমপ্লিট করেই আমার কাছে সতী সাবিত্রী সেজে এসেছিলে। আমার অবশ্য প্রথমেই সন্দেহ হওয়া উচিত ছিল, যখন তুমি আমাকে চুমু খেতে চলে এসেছিলে।”
ঋতি হাসতে লাগল। বেশ খানিকটা অপ্রকৃতিস্থের মতো হেসে বলল, “আমি এরকমই খানিকটা এক্সপেক্ট করেছিলাম তোমার কাছে দীপ। একটু অন্য সুরে কথা বলতেই তোমার ভিতরের অন্য মানুষটা কীভাবে বেরিয়ে এল। বিশ্বাসও করে নিলে দ্যাখো কী সুন্দর, যা বললাম সবটাই। তোমরা কখনোই মেনে নিতে পারবে না মেয়েটা প্রথম চুমু খেতে আসবে। এলে সে-ই খারাপ, তাই না?”
দীপ বলল, “মানে? যা বললে এগুলো সত্যি না?”
ঋতি তার দিকে তাকিয়ে বলল, “হতেও পারে, নাও হতে পারে।”
দীপের রাগ হচ্ছিল। প্রত্যাশাভঙ্গের রাগ। সে বলল, “এই নাটকটা তুমি না করলেই পারতে ঋতি। ফোনে বলে দিতে, ব্রেকআপ হত, সেটাই ভালো হত। এখানে ডেকে আনার কোনও দরকার ছিল না।”
ঋতি বলল, “শোনো দীপ, ওইসব শরীর নিয়ে ন্যাকামো আমারও কোনও কালেই ভালো লাগে না। ভালোবাসায় শরীর আসবেই। যারা বলে আসবে না, তাদেরও পেটে খিদে থাকবে। ফোনে তো বললে হতই, আমি তোমার মুখোমুখি হতে চেয়েছিলাম।”
দীপ বলল, “তো? তুমি কী চাও?”
ঋতি উঠে তার পাশে এসে বসল। ঠোঁটটা দীপের কানের কাছে নিয়ে এসে বলল, “প্রেমটা মিথ্যে। প্রেম ছাড়া শরীরটাও। চলো বেরিয়ে যাই।”
ঋতি কাছে এলেও দীপের মধ্যে কোনও রকম যৌনাকাঙ্ক্ষা তৈরি হচ্ছিল না। বরং গোটা ব্যাপারটাই তিতকুটে লাগছিল তার কাছে। সে উঠল, “চলো।”
ঋতি উঠল না, বলল, “নিজেকে ডিফেন্ড করবে না দীপ?”
দীপ নিস্পৃহ গলায় বলল, “চলো তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আসি। আগে বললে অফিসটা ডুব মারতাম না।”
ঋতি বলল, “আমার আর চিত্রলেখার একসঙ্গে মুখোমুখি হবার সৎসাহস আছে তোমার?”
দীপ চোখ বড়ো করে বলল, “মানে? রিয়ালিটি শো পেয়েছ নাকি?”
ঋতি বলল, “যদি বলি তাই?”
দীপ বিরক্ত হল, “আমি বেরোলাম। তোমার ইচ্ছে হলে তুমি থেকে যাও। এখানে থেকে ফালতু সময় নষ্ট করতে পারছি না জাস্ট।”
ঋতি হাসল, “এখন সবই ফালতু লাগবে। এটাই স্বাভাবিক।”
দীপ বলল, “দ্যাখো ঋতি, মরাল অফ দ্য স্টোরি ইজ, আমি তোমাদের কারও সঙ্গেই কোনও রিলেশনে যাব না। সুতরাং এসব অর্থহীন জিনিস করে কোনও লাভ নেই।”
ঋতি বলল, “আমাকে একটা কথা বলো তো। তুমি তো চিত্রলেখাকে অ্যাভয়েড করছিলে জাস্ট। মেয়েটাকে সরাসরি বলে দিলে না কেন যে তোমার ওকে পছন্দ নয়?”