বিশ্বরূপদা চেম্বারেই ছিল। ল্যাপটপে কাজ করছিল। মানালিকে দেখে অবাক হয়ে বলল, “কী হল? ছুটি নিবি ভেবেই নিলি না?”
মানালি বলল, “ধ্রুব বাগচীর বাড়ি থেকে আসছি। উনি লিগাল প্রসিডিংসে যাবেন বলে হুমকি দিয়েছেন। আর ভীষণ ঠান্ডা মাথায় কথা বলছিলেন। আগের মতো রেগে রেগে না।”
বিশ্বরূপদা ল্যাপটপে মন দিল, “গেলে যাবেন। আমাদের ল সেল আছে, ওরা বুঝবে। তারপর তারিখ পে তারিখ তারিখ পে তারিখ হয়ে কেসটা ধামাচাপা পড়ে যাবে। মাঝখান থেকে তুই নার্ভ ফেল করলি, এটাই যা কষ্ট থেকে যাবে আমার।”
মানালি চুপ করে গেল। বিশ্বরূপদা বলল, “ফোনটা অন কর দয়া করে।”
মানালি বলল, “স্টোরিটার কোথাও তোমার নাম নেই। সর্বত্র আমার নাম। তুমি কেস খাবে কেন? কেস খেলে আমিই খাব।”
বিশ্বরূপদা বলল, “ওই আনন্দেই থাক। এডিটরের এগেনস্টে কেসটা হবে। হলে হবে। কী আর করার আছে!”
বিশ্বরূপদা কাঁধ ঝাঁকাল।
মানালি বলল, “খাল কেটে কুমির আনলে।”
বিশ্বরূপদা তার দিকে তাকিয়ে ফিক ফিক করে হাসতে লাগল।
২৭
দীপ দুঃস্বপ্ন দেখছিল। একটা ওভারব্রিজে উঠেছে সে। নিচ দিয়ে ট্রেন যাচ্ছে। ঠিক সেই সময় ওভারব্রিজটা ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। ধড়মড় করে উঠে বসল সে। কপালটা ঘামে ভিজে গেছে। মোবাইলটা বের করে সময় দেখল। আড়াইটা বাজে। বিছানার পাশেই বোতল থাকে। অনেকটা জল খেল সে।
অস্বস্তি হচ্ছিল তার। শীতের রাত। কম্বলটা সরিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকল খানিকক্ষণ। শীত লাগছিল। তবু কম্বল গায়ে জড়াল না সে।
ফেসবুক গত রাত থেকে ডিঅ্যাক্টিভেট করা ছিল। সে লগ ইন করল নিজের অ্যাকাউন্টে। ঋতি কিংবা চিত্রলেখা কারও অ্যাকাউন্টই দেখা যাচ্ছে না।
সে বুঝল তাকে ব্লক করা হয়েছে।
দীপ বেশ খানিকক্ষণ চুপচাপ শুয়ে থেকে একটা নতুন আইডি খুলল। সেটা থেকে দুজনের প্রোফাইলে উঁকি মারল।
চিত্রলেখা বেশ লম্বা একখানা স্ট্যাটাস দিয়েছে। পুরুষ মাত্রেই ভয়ংকর, এটাই তার বক্তব্য। দীপ দেখল ঋতি সেখানে কমেন্ট করেছে। পুরুষ শুধু একটা জিনিসই চায়, সব পুরুষ সমান ইত্যাদি।
দীপ বেশ কিছুক্ষণ কমেন্টগুলো দেখল। ঋতির প্রোফাইল খুলল। প্রবল অস্বস্তির সঙ্গে সে লক্ষ করল হোটেলের রুমের কথাগুলো বারবার মাথায় চলে আসছে তার। ঋতিই কি তাহলে ঠিক? আদতে ঋতির শরীরটাই চেয়েছিল সে? ঠিকই তো, ঋতিকে সেভাবে মিসও করছে না সে। একটা গোটা দিন চলে গেল, চিত্রলেখা কিংবা ঋতি, কাউকেই সে মিস করেনি। বরং অনেকটা বিতৃষ্ণা এসেছে সম্পর্কের প্রতি। টানটা যেটা আসছে ঋতির প্রতি, তা সম্পূর্ণই জৈবিক কারণে।
দরজা খুলে বাথরুমে গিয়ে হিমশীতল জল দিয়ে মুখ ধুল দীপ। ঘাড়ে মাথায় জল দিয়ে এসে হোয়াটসঅ্যাপ ইনস্টল করল। বেশ খানিকক্ষণ ভেবে ঋতিকে মেসেজ করল, “মিসড ইউ। টেরিবলি। এক্সপ্লেইন করার একটা সুযোগ পাওয়া যাবে?” মেসেজটা না চাইতেই যেন করে ফেলল সে। শরীর যে কতরকম ভাবে মানুষকে মিথ্যা বলাতে বাধ্য করে!
ঋতি ফোন করছে। দীপ ধরল।
ওপাশ থেকে ঋতির গলা ভেসে এল, “কী চাই? এত রাতে ডিস্টার্ব করছ কেন?”
দীপ বলল, “আমি তোমায় জাস্ট একটা কথাই বলতে চাই। চিত্রলেখাকে আমি ইগনোর করা শুরু করেছিলাম। আমি কখনোই ওর সঙ্গে সেভাবে সম্পর্কে ছিলাম না।”
ঋতি কয়েক সেকেন্ড চুপ করে বলল, “ব্যস?”
দীপ মরিয়া হল, “দ্যাখো ঋতি, আমি তোমাকে মিথ্যা বলতে চাইনি। কিন্তু তুমিই ভেবে দ্যাখো, আমি যদি তোমাকে বলে দিতাম আমি কারও সঙ্গে সম্পর্কে আছি, তুমি কি এগোতে? আমি চাইছিলাম আমাদের কেমিস্ট্রিটা ওয়ার্ক আউট করুক। জাস্ট একটাই কারণে, বিশ্বাস করো আমি চিত্রলেখার থেকে বেরোতে চাইছিলাম। ও ভীষণ ন্যাগিং, কনফিউজড, আমি জানি, ও আজকে আমায় বলেছে ও তোমার সঙ্গে নাকি দারুণ বন্ধুত্ব করেছে, তুমি দুটো দিন ওর সঙ্গে কাটাও, নিজেই বুঝে যাবে আদতে ও কেমন মেয়ে।”
ঋতি বলল, “তুমি সত্যি আমাকে মিস করছিলে?”
দীপ বলল, “তোমার ঠোঁটের পাশের তিলটার দিব্যি, তোমার পারফিউমের দিব্যি, তোমার শ্যাম্পুর দিব্যি, বিলিভ মি।”
ঋতি ফোনটা কেটে দিল।
দীপ চুপচাপ বসে রইল।
নিজের ওপর রাগ হচ্ছিল তার। খানিকটা ভয়ও হচ্ছিল। ঋতি যদি কল রেকর্ডিং করে? কেন এমন হচ্ছে বারবার? কেন নিজের ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সে? যতবার ভাবছে সব কিছুর থেকে দূরে চলে যাওয়া দরকার, ততবারই হোটেলের ঘরটার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। রাত বাড়তে মনে পড়ে যাচ্ছে দরজা বন্ধ করেই কীভাবে পরস্পরের শরীরটা দখল করতে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। অন্য কোথায় কী হচ্ছে, কিছুই মাথায় আসছিল না সেই সময়টা।
ফোনটা বাজছিল দীপের।
দীপ দেখল ঋতি ফোন করছে। ধরতেই ওপাশ থেকে ঋতির গলা ভেসে এল, “তুমি সত্যি আমাকে মিস করছিলে?”
দীপ গলায় খানিকটা নাটকীয়তা আনল, “তোমার কী মনে হয়? আমি তোমাকে মিথ্যা কথা বলছি?”
ঋতি বলল, “না, আমার মনে হয় না। কালকে মিট করা যায়?”
দীপ কয়েক সেকেন্ড ফোনটা ধরে বলল, “থ্যাংক ইউ।”
***
সকালে তৈরি হয়ে দীপ নটার মধ্যেই বেরোল।
ঋতিকে যখন তুলল তখন পৌনে দশটা বাজে।
হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছিল তার।
এক অদ্ভুত নেশা মাথায় ভর করতে শুরু করেছিল।
২৮
দরজা খুললেন রত্না ব্যানার্জি নিজেই। মানালি খানিকটা চাপে পড়ে গেল। সে ভেবেছিল অন্য কেউ দরজা খুলবে। অফিসে ধ্রুব বাগচীর ব্যাপারটা নিয়ে একটু বেশি টেন্সড হয়ে ছিল সে, বিশ্বরূপদা জোর করে রত্না ব্যানার্জির ইন্টারভিউ নিতে পাঠিয়ে দিয়েছে। সঙ্গে ঋপণ এসেছে।