রাম দীপকে ভেঙিয়ে একইভাবে মাথা নেড়ে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, আমাল মদু বেত্যা নয়। সবাই এরকমই ভাবে। তুই তো কোন ছাড়।”
দীপ বিরক্ত হয়ে বলল, “ভাট বকছিস তুই এবার। দয়া করে থাম। পোষাচ্ছে না এসব। ঋতি ভালো ফ্যামিলির মেয়ে। তা ছাড়া হোটেলের ঘরে সব সময় সহবাস করার জন্যই যাওয়া হয় এরকম তো কোনও রুল নেই।”
রাম বলল, “তাহলে হোটেলের ঘরে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে কী করতে যায় ভাই? সাপলুডো খেলে?”
দীপ বলল, “আড্ডা মারতেও যায়। আমি বলে দেব আড্ডা মারতে গিয়েছিলাম। কী হয়েছে তাতে?”
রাম বলল, “তোকে যা বলছি তাই কর। পারলে মোবাইল নাম্বার চেঞ্জ করে ফেল। এই দুটো মেয়ের কারও সঙ্গেই কোনও রকম কন্ট্যাক্টস রাখিস না এখন।”
দীপ কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, এমন সময় তার ফোন বেজে উঠল। চিত্রলেখা ফোন করছে।
রাম বলল, “ধরিস না।”
দীপ বলল, “দাঁড়া না, কী বলে দেখি।”
রাম বলল, “যা পারিস কর।”
দীপ ধরল, “হ্যালো।”
ওপাশ থেকে চিত্রলেখা বলল, “কী করছ?”
দীপ রামের দিকে তাকাল। বিরক্ত মুখে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। সে বলল, “কিছু না।”
চিত্রলেখা বলল, “তোমাকে একটা খবর দেওয়ার আছে।”
দীপ বলল, “বলো।”
চিত্রলেখা বলল, “ঋতি আর আমি এখন খুব ভালো বন্ধু।”
দীপ বলল, “তোমার এক্সটাকেও জুটিয়ে নাও। একটা সাইকো জুটে গেলে ভালো থ্রিসাম হবে।”
চিত্রলেখা ফোনটা কেটে দিল।
রাম চারদিকে তাকিয়ে বলল, “আস্তে ভাই। কী সব বলছিস!”
দীপ বলল, “মাথা ঠিক রাখতে পারলাম না ভাই। হট করে মাথায় রক্ত উঠে গেল।”
রাম বলল, “শোন। তোকে যা বলছি কর। সিমটা ইমিডিয়েটলি চেঞ্জ কর।”
দীপ রেগে গেল, “কী হবে চেঞ্জ করে? আমার ব্যাংক ট্রানজাকশন থেকে শুরু করে সব অ্যালার্ট এই নাম্বারে আসে। চেঞ্জ করে কোথায় যাব?”
রাম বলল, “ওসব অল্টারনেটিভ নাম্বারে শিফট করতে ম্যাক্স এক দিন লাগবে। তুই ইনবক্স চেক কর, কোন কোন কোম্পানি তোকে মেসেজ পাঠায়, কোন কোন নোটিফিকেশন পাস, সবাইকে একসঙ্গে মোবাইল নাম্বার চেঞ্জের অ্যাপ্লিকেশন পাঠিয়ে দে। বেশিক্ষণ লাগবে না। ট্রাস্ট মি। শোন ভাই, তুই মেয়েদের চিনিস না, আমি চিনি, দুটো মেয়ে যদি মনে করে তোর গাঁড় মেরে তোকে সাদ্দাম হুসেন বানিয়ে দেবে, ওদের বেশি সময় লাগবে না। সো বিওয়্যার।”
দীপ বলল, “আমার দোষটা কোথায় আমাকে একটু বোঝাতে পারবি? আমার যদি মনে হয় চিত্রলেখা ন্যাগিং, চিত্রলেখা ডিজঅনেস্ট, তার জন্য যদি আমি রিলেশনটা কাটিয়ে দিতে চাই, ওকে ইগনোর করি, ঋতির সঙ্গে নতুন করে স্টার্ট করতে চাই, সেক্ষেত্রে আমি দোষটা কী করলাম? চিত্রলেখা নিশ্চয়ই গোটা ব্যাপারটা এমন করে ঋতিকে বুঝিয়েছে, যেন আমি কতবার চিত্রলেখার সঙ্গে একইভাবে হোটেলে শুয়ে এসেছি, কিন্তু ব্যাপারটা কি তাই? তা তো নয়! ঋতি কেন আমার ফোন ধরবে না, আমার জন্য ফোন অফ করে রেখে দেবে?”
রাম চোখ ছোটো ছোটো করে বলল, “তুই হঠাৎ করে ঋতিকে নিয়ে হোটেলে গেলি কেন?”
দীপ বলল, “না যাওয়ারই বা কী আছে? শোন ভাই, এসব ব্যাপারে আমি যথেষ্ট আধুনিক। প্রেমিকাকে নিয়ে হলে কিংবা ভিক্টোরিয়ার ঝোপে বসে দোতলার কাজ সেরে প্যান্ট ভিজিয়ে বাড়ি ফেরার পাবলিক আমি নই। আমার মনে হয়েছিল রিলেশনশিপে থাকলে ফিজিক্যাল হলে প্রবলেমের কিছু নেই। সো আই ডিড ইট।”
রাম বলল, “ওয়েল, তোর কথায় যুক্তি আছে, তবে এখানে অনেক কিন্তুও আছে। ঋতি সম্পূর্ণ স্ট্রেঞ্জার একটা মেয়ে। তুই ওর সম্পর্কে কিছু না জেনেই শুয়ে পড়লি? যদি কোনও রোগ হত? বা বড়ো কোনও ট্র্যাপ হত? কী করতিস?”
দীপ বলল, “আমি ওর বাবা-মার সঙ্গে কথা বলেছি। যথেষ্ট ডিগনিফায়েড ফ্যামিলি ওরা।”
রাম বলল, “বাড়ি গেছিস? ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যানালিসিস করেছিস? যদি ফ্রড হত? যদি জাল কারবারি হত? কী করতি তখন? ওকে লিভ ইট, সব ছেড়ে দিলাম, ওয়ান ফাইন মর্নিং তোকে যদি ফোন করে বলে তোমার বাচ্চার মা হতে চলেছি, তখন কী করবি তুই?”
দীপ কিছু বলতে পারল না। চুপ করে থাকল।
রাম বলল, “শোন ভালো কথা বলছি। একটা ভালো ভদ্র মামণি দেখে অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ কর। সব শনি থেকে দূরে থাকবি।”
দীপের মুখ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেরিয়ে এল, “আবার ম্যারেজ!”
রাম বলল, “এখনই না, দশ বছর পরে। আপাতত বনবাসে চলে যা ভাই।”
২৬
দরজা খুলে তাকে দেখে ধ্রুব অবাক হলেন না।
মৃদু হেসে বললেন, “একটা ওয়াইল্ড গেস করেছিলাম বটে। আসুন।”
মানালির নিজেরই অবাক লাগছিল। এস এম এসটা পাবার পর থেকে এমন উত্তেজনা হচ্ছিল যে সে আর কিছু চিন্তা করেনি। হাইল্যান্ড পার্ক থেকে ট্যাক্সি ধরে সোজা ধ্রুবর বাড়ি চলে এসেছে।
সে ঢুকল না। সসংকোচে বলল, “আমি আপনাকে এটুকুই বলতে এসেছিলাম…”
ধ্রুব তার কথা শেষ হবার আগেই বললেন, “আপনি একা নিউজটা করেননি, তাই তো?”
মানালি থতোমতো খেয়ে বলল, “হ্যাঁ।”
ধ্রুব বললেন, “সে তো জানা কথা। কেসটা পেপারের এগেনস্টেই করব। আপনার ভয় পাবার কিছু নেই।”
মানালি কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে বলল, “আমি আসি তাহলে।”
ধ্রুব বললেন, “ভিতরে আসুন। আপনি টেন্সড হয়ে আছেন। কফি খেয়ে যান।”
মানালি ইতস্তত করে ড্রয়িংরুমে ঢুকল।
ধ্রুব দরজা বন্ধ করে কিচেনে ঢুকলেন।
মানালি খানিকটা ঘোরের মধ্যে ছিল। সে চুপ করে বসে থাকল খানিকক্ষণ।