দীপ চুপ করে গেল।
মানালি বলল, “একদিনের আলাপে প্রোপোজ করে ফেললেন?”
দীপ মাথা নাড়ল, “একদিনের আলাপে আমাদের ফিজিক্যাল রিলেশন হয়ে গেল। কাল। রাত্তিরে ব্রেক আপ।”
মানালি চোখ বড়ো বড়ো করে দীপের দিকে তাকিয়ে বলল, “মানে? একদিনে শুরু একদিনে শেষ? আপনি তো বুলেট ট্রেনকেও হার মানিয়ে দেবেন দেখছি।”
দীপ অপ্রস্তুত মুখে বলল, “এখানে দাঁড়িয়ে সব কিছু সাম আপ করার পরে আমারও সেটাই মনে হচ্ছিল।”
মানালি বলল, “শেষ মানে ঠিক কীভাবে শেষ জানতে পারি?”
দীপ গত রাত্রের ঘটনাটা বলল।
মানালি সবটা শুনে মাথায় হাত দিল। বলল, “এবার কী করবেন?”
দীপ ম্লান হাসল, “অনেকদিন স্টক মার্কেটের খোঁজ খবর নিচ্ছিলাম না। আপাতত সেগুলোই শুরু করি। এই কদিনে যা বুঝলাম, এসব আমার জন্য না। যেমন ছিলাম তেমনই ভালো ছিলাম।”
মানালি বলল, “আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে ভালোই হল। সকাল থেকে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব কেস আমি একা খেয়ে বসে আছি। আপাতত মনে হচ্ছে আমার থেকেও খারাপ অবস্থার কেউ আছে।”
দীপ বলল, “সে আর বলতে। আচ্ছা আমি এখন কি ঋতির কাছে ক্ষমা চাইব? আপনার কী অ্যাডভাইস?”
মানালি মাথা নাড়ল, “লাভগুরু হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা শূন্য। তবে সিক্সথ সেন্স বলছে এখনই ক্ষমা চাইতে গেলে জুতো খেতে পারেন। অপেক্ষা করলেই ভালো।”
দীপ বলল, “কদিন অপেক্ষা?”
মানালি বলল, “অন্তত এক মাস।”
দীপ মাথা নাড়ল, “অত দিন নেই। ও বাইরে চলে যাবে।”
মানালি বলল, “তাহলে শেয়ার মার্কেটই ঠিক আছে। খারাপ হবে না।”
দীপ অস্ফুটে বলল, “আমারও তাই মনে হচ্ছে। ধুস, আমি অফিসই যাই বরং। জিজ্ঞেস করলে বলা যাবে ডাক্তার দেখাতে গেছিলাম।”
কোনও দিকে না তাকিয়ে দীপ হনহন করে চলে গেল।
মানালি বলল, “বোঝো!”
সে খানিকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ফোন অন করল।
ধ্রুব বাগচী এস এম এস করেছেন, “গেট রেডি ফর লিগাল প্রসিডিংস।”
২৫
“তোর হল কী ভাই?”
রাম কখন তার ডেস্কে চলে এসেছে দেখতে পায়নি দীপ। বলল, “ওই শরীর খারাপ বললাম তো।”
রাম তার পিঠ চাপড়ে বলল, “না ভাই, শরীর খারাপ বসকে বলেছিস ঠিক আছে। তোকে তো আমি চিনি। এ শরীর খারাপ না। অন্য কিছু হয়েছে।”
দীপ বিরক্ত হয়ে বলল, “বললাম তো শরীর খারাপ।”
রাম বলল, “ঠিক আছে। শরীর খারাপ। আচ্ছা আজকের সেনসেক্স কত বল তো?”
দীপ বলল, “জানি না।”
রাম অবাক হয়ে তার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে বলল, “জানিস না? তেরা তো হো গয়া ভাই!”
দীপ বলল, “হো গয়া তো! অব খুশ? ফুটে যা এবার।”
রাম বলল, “ঠিক আছে ভাই, টেক ইওর টাইম। পরে কথা বলছি।”
রাম চলে গেলে দীপের একটু খারাপ লাগছিল। সে বুঝতে পারছিল দুর্ব্যবহারটা একটু বেশিই হয়ে গেল।
অফিসে ঢুকতে ঢুকতে দেড়টা বেজে গেছে। সমীর স্যারকে বলে দিয়েছে ডাক্তার দেখিয়ে ঢুকেছে। বেশি প্রশ্ন করেননি ভদ্রলোক। পরের সপ্তাহে আর-একবার ভুবনেশ্বর যেতে হবে সেটা অবশ্য শুনিয়ে দিয়েছেন।
দীপ কিছু বলেনি আর। কয়েক দিন কলকাতা থেকে দূরে গিয়ে থাকতে পারলে আরও ভালো হত। মোবাইলে কোনও ফোন আসেনি সকাল থেকে। হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুক দুটোই আনইনস্টল করে দিয়েছে সে।
অফিসে সন্ধে সাড়ে ছটা অবধি কাটিয়ে বেরিয়ে দেখল রাম বেরোচ্ছে। সে নিজেই এগিয়ে গেল, “চল ভাই মদ খাওয়াব।”
রাম বলল, “তুই খাওয়াবি?”
দীপ বলল, “হ্যাঁ, আমি খাওয়াব। চল।”
রাম তার দিকে তাকিয়ে হাসল, “খুব বড়ো কিছু পাকিয়েছিস, তাই তো?”
দীপও হাসল, “হ্যাঁ ভাই।”
রাম বলল, “চল। গিয়ে শুনি। তবে মদ না আজ, কফি হোক।”
দীপ বলল, “তাই হোক।”
দুজনে মিলে একটা কফি শপে ঢুকল। ওপিয়ামের মতো ভিড় নেই। ফাঁকাই ছিল।
দীপ বলল সবটাই। রাম শুনে-টুনে বলল, “এটাই হয় ভাই। বহুদিন ভুখা থাকার পর মানুষ যখন খেতে পায়, তখন সে তোর মতোই পাগলাচোদা হয়ে যায়। তোর আর দোষ কোথায়। কিন্তু যতক্ষণ না তুই, ওই কী যেন নাম বললি চিতরলেখা না কী নাম, ওই মেয়েটাকে ব্লক করলি, ততক্ষণ রিলেশনশিপ অ্যাক্সেপ্ট করা উচিত হয়নি।”
দীপ বলল, “আমি কী করে জানব সে মেয়ে রাতে লগ ইন করে ফেলবে!”
রাম বলল, “খুব ফ্রাস্ট্রু মাল। বোঝাই যাচ্ছে।”
দীপ বলল, “আমি কী করব সেটা বল। ক্যারেক্টার অ্যানালিসিস করতে দিইনি তোকে।”
রাম বলল, “তুই আর কী করবি ভাই। কোনও একটা গুরু পাকড়ে ফেল। গায়ে নামাবলি জড়িয়ে একটা খোল কর্তাল জোগাড় করে ভিক্ষে করতে বেরিয়ে পড়। তোর দ্বারা তো এর বেশি কিছু হবে না।”
দীপ বলল, “এইজন্য তোকে বলতে চাই না। সব কিছুর খিল্লি উড়িয়ে দিস।”
রাম বলল, “খিল্লি উড়াব না? এটা নিয়ে খিল্লি উড়াব না তো কী নিয়ে খিল্লি উড়াব বল তো? তোকে সিরিয়াসলি বলছি এসব থেকে দূরে থাক। কোনও মেয়ের সঙ্গেই কোনও কিছু করিস না এখন।”
দীপ বলল, “সে চাইলেও করতে পারব না, কিন্তু তুই দূরে থাকতে বলছিস কেন?”
রাম বলল, “যে হোটেলে উঠেছিলি সেখানে আই কার্ড জমা রেখেছিলি?”
দীপ বলল, “হ্যাঁ।”
রাম বলল, “ওই মেয়েটার কত সেকেন্ড লাগবে এটা প্রমাণ করতে যে তুই ওকে নিয়ে ওই হোটেলে গেছিলি?”
দীপ অবাক হল, “ও কেন এসব প্রমাণ করতে যাবে?”
রাম বলল, “আজকালকার দিনের মেয়েদের চেনো মামা? বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস টার্মটা শুনেছ কখনও?”
দীপ জোরে জোরে মাথা নাড়ল, “না না, ঋতি একেবারেই সে মেয়ে নয়।”