উপন্যাস সমগ্র ২
০. ভূমিকা / সূচিপত্র
ভূমিকা
উপন্যাস সমগ্র ১-এ ছিল নীল কাগজের ফুল, অসময়ের বৃত্তান্ত, অন্তবিহীন এবং শেষের পরে। উপন্যাস সমগ্র ২-এ থাকল আমার আরও তিনটি উপন্যাস।
রাস্তা পার হবে সাবধানে, আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে এবং বিজন ঘরে।
আমি যখন ফেসবুকে ‘কথা ও কাহিনী’ পেজে প্রথম আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে লিখতে শুরু করি, তখন এই উপন্যাস প্রবল জনপ্রিয় হয়। বই হিসেবেও ‘আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে’র বিক্রি বেশ ভালো। কিন্তু আমার বারে বারেই মনে হয়েছিল, অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে এই উপন্যাসটি পৌঁছনোর দরকার। একজন অপরাধী সমাজের বাইরে থেকে আসে না। সে সমাজেই থেকে প্রবল ক্ষতি করে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে।
‘রাস্তা পার হবে সাবধানে’ লাইনটি নেওয়া আমার প্রিয় গান চন্দ্রবিন্দুর ‘ভিনদেশী তারা’র থেকে। সম্পর্কের জটিলতা থেকে অন্য এক জার্নির গল্প বলেছি এই উপন্যাসে। বিজন ঘরে কিংবা রোদচশমা উপন্যাসদুটিও আমার অনেক সময় নিয়ে লেখা।
এক কালে তো গল্প লিখেছি, তাহলে হঠাৎ উপন্যাসের দিকে ঝুঁকলাম কেন?
মূলত আমার পাঠকদের চাপেই। ধারাবাহিকভাবে আমার পেজগুলোতে এবং পরে সিক্রেট গ্রুপে লিখতে লিখতে একের পর এক উপন্যাস লেখা হতে শুরু করল। পাঠকের দাবী মেনেই বড় লেখায় মনোনিবেশ করলাম।
এবার আসি বুক ফার্ম-এর কথায়।
প্রকাশনার ক্ষেত্রে শুধু বইটি প্রকাশ করেই কোন কোন প্রকাশক ভাবেন তার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। বুক ফার্ম এইখানেই আলাদা। বইয়ের মান এবং ডিস্ট্রিবিউশনকে বুক ফার্ম এক আলাদা উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। আমার বরাবরই মনে হয়েছে বাংলা বই তার বিপণনের জায়গায় অনেক পিছিয়ে আছে। অনেকেই ক্রমাগত প্রচার করে চলেন ‘বাংলা বই এখন আর কেউ পড়ে না’ বা ‘বাংলা ভাষা মৃতপ্রায়’।
তা সত্যি হলে এই অতিমারীর সময় শুধু বাংলা ভাষায় লিখে এত টাকা মানুষের জন্য আমি তুলে দিতে পারতাম না। বুক ফার্ম-এর কাছে আমি কৃতজ্ঞ, তারা আমার কাজকে সম্মান জানিয়ে আমার উপন্যাসগুলি সমগ্র আকারে প্রকাশ করার জন্য এগিয়ে এসেছেন।
আশা করি উপন্যাস সমগ্র ১ এর মত দ্বিতীয় খণ্ডটিও পাঠক আপন করে নেবেন।
আলো আসুক এই দীর্ঘ অন্ধকার সরণি শেষে, এই আশা করি।
অভীক দত্ত
৭.১১.২০২০
সূচিপত্র
- রাস্তা পার হবে সাবধানে
- আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে
- বিজন ঘরে
রাস্তা পার হবে সাবধানে
১ জীমূতবাহন
না। আমার নাম নিয়ে একদম হাসাহাসি করবেন না। নাম নিয়ে হাসাহাসি করা মোটেও সুস্থ মানুষের লক্ষণ নয়। তবে আপনারা সুস্থ মানুষ এটাই বা কে বলেছে? বাসে, ট্রেনে, মেট্রোতে নিজেদের মধ্যে ক্যালাকেলি করতে ব্যস্ত লোকজন আপনারা।
হে প্রিয় অসুস্থ মানুষেরা, আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবেন না। মানায় না আপনাদের। হ্যাঁ, হাসাহাসি করতে পারেন আমার বিয়েটা নিয়ে। আপনারা জানেন কি না জানি না, এই বিয়েতে আমার বাবা মায়ের মত ছিল না, আমার বউয়ের বাবা মায়ের মত ছিল না, এমনকি আমাদের নিজেদেরও মত ছিল না। কী করে যে বিয়েটা হয়ে গেল, তা উপরওয়ালাই জানেন। অবশ্য কী করে হয়ে গেল, সেটা এখনই বলে দিলে তো আপনারা পিঠটান দেবেন। রয়ে সয়ে এসব কেচ্ছা শুনতেই তো মঙ্গল, কী বলেন? ভাতের সঙ্গে রোজ একটু কেচ্ছা মিশিয়ে না খেলে পরের দিন সকালে আপনাদের পেট পরিষ্কার হয় না সেটা খুব ভালো করেই জানি। সব এখনই বলব না। শুধু জেনে রাখুন, এখন আমার ফুলশয্যা চলছে। একটা গম্ভীর বাড়ির চিলেকোঠার ঘরে বয়স্ক বয়স্ক কতগুলো পিসি এসে আমাদের ঘরের ভিতর ঢুকিয়ে বলে গেলেন দরজা বন্ধ করে শুতে। সিনেমার মতো কোনও রোম্যান্টিক ব্যাপার নেই, হাসি মজা নেই, গান নেই, খাটের তলায় শুয়ে থাকা ঢ্যামনা জামাইবাবু নেই, কিচ্ছু নেই। রোম্যান্টিকতাহীন একটা ঘেমো ফুলশয্যা। বিয়ের ডেটে শয়ে শয়ে বিয়ে হয়েছে, আজকে এতক্ষণে ফুলশয্যায় কন্ডোমের প্যাকেটও নিশ্চয়ই খোলা হয়ে গেছে সবার, আর আমি দরজা বন্ধ করে ফ্যানের রেগুলেটর জোরে দিতে ব্যস্ত।
একবার গলাখাঁকারি দিয়ে বললাম, “ফ্যান জোরে দিলে প্রবলেম নেই তো?”
মেয়েটা, মানে যাকে আজ থেকে আমার বউ বলা হবে, জোরে জোরে মাথা নেড়ে বলল, “না নেই।” ফ্যানটা চারের বেশি গেলেই কুত্তার বাচ্চার মতো ঘ্যাটাং ঘ্যাটাং শব্দ করে। আমি চারে রেখে একটা চেয়ার নিয়ে মেয়েটার সামনে বসে বললাম, “ইয়ে, তুমি মানে চেঞ্জ করবে না?” মেয়ে বা আমার বউ আমার দিকে না তাকিয়েই বলল, “নিচে বাথরুম, এখন নামলে আবার সমস্যা।” আমার মনে হল, তাই তো। হাসিমুখে বললাম, “ঠিকই, এখানেই গামছা-টামছা দিয়ে চেঞ্জ করে নিতে পারো, আজ থেকে তো আমরা বর বউ।” মেয়েটা উত্তর দিল না। শুধু নড়ল একটু। বুঝলাম অফসাইডে গোল হয়ে গেছে। এসব না বলাই ভালো। বললাম, “চোখ বন্ধ করবে হ্যাঁ তিরিশ সেকেন্ডের জন্য, আমি পাতলা গেঞ্জিটা পরে নি।” মেয়েটা বলল, “চেঞ্জ করুন না, আজ থেকে তো আমরা বর বউ।” আমি হাঁ। এ মেয়ে ডেঞ্জার তো! এ কথাটা বলে দিল? এত বড়ো কথাটা? যাক গে, বললই যখন, তখন এত লজ্জা পাবার কিছু নেই। পাঞ্জাবিটা খুলে আমার গেঞ্জিটা গলিয়ে, বারমুডা পরে খাটের ওপাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। বউ বলল, “আমি ও বাড়ি যাব কবে?”