‘হুঁ,’ বলল রানা। ‘শোন্, আরেকজনের ক্রেডিট রেটিং জানা দরকার। নামটা হচ্ছে: ফিলিপ শেফার্স। নিউ ইয়র্কেই, কুইন্সভিল রেসিডেনশিয়াল এরিয়ায় থাকে। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে বলতে পারবি না?’
‘দশ মিনিটেই পারব। যখন খুশি রিং দিস্, অফিসেই আছি।’
বন্ধুকে ধন্যবাদ জানিয়ে রিসিভার নামিয়ে রাখল রানা। সকাল সাতটায় ক্যাভিনকে নিয়ে বেরিয়েছে গিলটি মিয়া। রানাকে কাজ দেখিয়ে সন্তুষ্ট, এবং স্যাঙাৎকে মুগ্ধ করবার সুযোগ পেয়ে টগবগ করে ফুটছে সে উৎসাহ, উত্তেজনায়। একটা ফাইল টেনে নিয়ে মন দিল রানা সেটায়। মুচকি হাসল ক্যাভিনের লেখা গিলটি মিয়ার মন্তব্য পড়ে: ওর ধারণা, ওই কেসের দজ্জাল বুড়িটাকে যদি পা বেঁদে উল্টো করে ঝুলিয়ে দোয়া যেত, তাহালে সত্যি কতাটা বেরিয়ে আসত নির্ঘাত!
২
ঠিক সাড়ে আটটায় ফিলিপ শেফার্সের বাড়ি থেকে ত্রিশ গজ দূরে রাস্তায় পার্ক করা তোবড়ানো টয়োটা সিপ্রণ্টারে এসে ঢুকল গিলটি মিয়া। নাস্তা করতে গিয়েছিল। ফিরে এসেছে দুই হাতে দুটো প্যাকেট নিয়ে। ছোট প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিল ক্যাভিনের দিকে, ‘ল্যাও, ভাই, চারটে খেয়ে ল্যাও। তারপর নাববো আমরা কাজে। খেতে খেতে শোনাও দিকি গত একটা ঘণ্টায় কী দেকলে।’
কৃতজ্ঞচিত্তে ওস্তাদের আনা প্যাকেটটা খুলল ক্যাভিন। সুন্দর করে সাজানো রয়েছে সকালের নাস্তা: ম্যাকডোনাল্ডসের দুটো ক্লাব স্যাণ্ডউইচ, দুটো বার্গার, দুই পিস গ্রিল করা পুরু স্টেইক ও আলুভাজা। পাশে আলাদা একটা খোপে শোয়ানো আছে কোকের বোতল। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে শোনাল ক্যাভিন, ‘তেমন কিছুই ঘটেনি, ওস্তাদ। হুম-হাম হুম-হাম, কোঁৎ। সাড়ে সাতটায় দরজার সামনে দুধের বোতল রেখে গেছে মিল্ক-ভ্যান। সাতটা পঞ্চাশে সোনালি চুলো এক সুন্দরী ওটা তুলে নিয়ে গেছে ভেতরে।’
‘শেফার মিয়া কাজে যায়নি?’
‘ঢক-ঢক-ঢক, কেউ বেরোয়নি, কেউ ঢোকেনি, ওস্তাদ। ঘ্যাঁ—ও!’
মাথা ঝাঁকিয়ে তীক্ষ্নদৃষ্টিতে বাড়িটার উপর চোখ বুলাল গিলটি মিয়া কিছুক্ষণ। ‘লে হালুয়া!’ ভাবছে সে, ‘হাতে বেশি সোমায় নেইকো। ও-বাড়িতে ঢুঁকতে হবে না? সায়েব-বিবি না বেরুলে পরে টেলিফোনে ছারপোকাটা রাকা তো কটিন হয়ে যাবে!’
ক্যাভিনের নাস্তা ও কোক শেষ হতেই ওর দিকে বাড়িয়ে দিল গিলটি মিয়া বড় প্যাকেটটা।
‘কী আছে এর ভেতর?’ জানতে চাইল সাগরেদ।
‘খুলেই দ্যাকো না,’ বলল গিলটি মিয়া। ‘তোমার বেশভুষো। ল্যাও, পরে ল্যাও এগুনো।’
প্যাকেটের ভিতর থেকে বের হলো টুলবেল্ট, ব্যাগ ও তোবড়ানো ক্যাপ সহ টেলিফোন মিস্ত্রির একটা আধময়লা ওভারল। ওগুলো পরা হয়ে যেতেই পকেট থেকে টু ব্রাশের মত একফালি গোঁফ বের করে সাঁটিয়ে দিল গিলটি মিয়া ক্যাভিনের নাকের নীচে। একটা লোমওয়ালা জড়ুল বসিয়ে দিল গালে, চোখের ঠিক নীচে।
‘দারুণ মানিয়েচে, মাইরি!’ বলল সে খুশি হয়ে। ‘এবার ধরো এই ছারপোকাটা। টেলিফোনের মদ্যে ঢুঁকিয়ে দিয়ে এসো, আমি বাকি কাজ সেরে রাকচি।’
ক্যাভিনকে বিদায় দিয়ে একটা ওয়ায়্যারলেস রিসিভার ফিট করল সে ভয়েস কণ্ট্রোল্ড্ রেকর্ডারের সঙ্গে। কথা শুরু হলেই চালু হয়ে যাবে টেপরেকর্ডার, কথা থেমে গেলে থামবে। সব রেডি হয়ে গেলে গাড়িটা শেফার্সদের বাড়ি থেকে একশো গজ দূরে নিয়ে গিয়ে রাখল রাস্তার অপর পাশে।
ওদিকে সোজা গিয়ে শেফার্সদের বাড়ির দরজায় কলিংবেল টিপল ক্যাভিন। দ্রুতপায়ে এগিয়ে এসে ছিটকিনি সরাল কেউ। দরজার ফাঁক দিয়ে গোলাপি হাউসকোট পরা সেই সুন্দরী মেয়েটিকে দেখা গেল। আর কাউকে আশা করেছিল হয়তো, ওকে দেখে হতাশা ফুটল চোখেমুখে। একনজরে বোঝা গেল, খুবই উৎকণ্ঠায় রয়েছে মেয়েটি, চোখের নীচের কালচে দাগ বলে দিচ্ছে, রাতে ঘুমাচ্ছেও কম। হাতের নোটবইয়ের দিকে ভ্রূ কুঁচকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল ক্যাভিন, ‘মিসেস ফিলিপ শেফার্স?’ ‘হ্যাঁ, আমি মিসেস শেফার্স।’
‘কোড এরিয়া ফোন লাইনে একটা হামিং সাউণ্ড আসছে, ম্যাম। কোথায় শর্ট হয়ে আছে লাইন দেখতে এসেছি।’ নিজেকে টেলিফোন কোম্পানির লোক বলে মিথ্যে পরিচয় না দিয়ে জানতে চাইল, ‘টেলিফোনটা কোথায়, ম্যাম?’
‘আমার ফোন ঠিক আছে।’
‘ইয়েস, ম্যাম,’ হাসিমুখে নরম গলায় বলল ও, ‘তবে আপনার লাইনে যদি কোনও শর্ট থাকে তা হলে আর সব সার্কিটে গোলমালের সৃষ্টি করবে। চেক করতে মাত্র কয়েক সেকেণ্ড লাগবে আমার।’
‘আচ্ছা, ঠিক আছে। আসুন।’
লিভিংরুমটা অত্যন্ত সাদামাটা আসবাবে সাজানো। প্র মেই রিসিভার তুলে অপারেটরের সঙ্গে কথা বলার ভান করল ক্যাভিন। তারপর রিসিভারের সঙঊু খুলে মহিলার চোখের সামনেই ছোট্ট মাইক্রোসার্কিট ট্র্যান্সমিটারটা ফিট করল জায়গা মত। এগুলো ছোট হলে কী হবে, টেলিফোনে বলা প্রতিটা শব্দ পৌঁছে দেবে দুশ’ গজ দূরের রিসিভারে। কাজ হয়ে যেতেই রিসিভারটা জোড়া লাগিয়ে ক্রেড্লে্ টিপে ছেড়ে দিয়ে ডায়াল টোন চেক করল, তারপর বলল, ‘আপনার ফোন ঠিকই আছে, মিসেস শেফার্স। তবু বাড়তি সতর্কতা হিসেবে দুর্বল এক-আধটা পার্টস বদলে দিলাম। অনেক ধন্যবাদ, ম্যাম।’
গাড়িতে ফিরে এসে ছদ্মবেশ খুলে ফেলল ক্যাভিন হাওয়ার্ড। মাথা ঝাঁকিয়ে বুঝিয়ে দিল ওস্তাদকে, কাজ হয়ে গেছে। গিলটি মিয়া জিজ্ঞেস করল, ‘বাড়িতে আর কাউকে দেকলে?’