আপনার চার ছেলে এখন কোথায়? শহীদ জিজ্ঞেস করে।
ওরা লরেঞ্জো মারকুইসেই থাকে। এখানে কালে ভদ্রে আসে। এখন সবাই ওখানে আছে। এই সময়টা ব্যবসার season কিনা।
মহুয়া ওর নিজের হাতে তৈরি পরোটা আর হালুয়া দিলো কুফুয়াকে খেতে। খেয়ে অজস্র প্রশংসা করলো কুফুয়া। শহীদকে জিজ্ঞেস করলো, Who is she? (কে মেয়েটা?
My wife. (আমার স্ত্রী)
Oh good God! Why didnt you tell it before? Then you are my daughter-in-law, eh? Come, darling. Come forward. (তাই নাকি? আগে বলোনি কেন? তাহলে তো তুমি আমার পুত্রবধূ গো! এদিকে এসো তো লক্ষ্মী।)
কুফুয়ার অভ্যর্থনার রীতি মহুয়া নিজ চোখে দেখেছে। ওর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল। এক পা এক পা করে পিছনে সরছে সে। Dont be afraid darling. কুফুয়া এগিয়ে এসে ওর হাত ধরলো। তারপর নিজের গলা থেকে একটা হার খুলে বললো, You see the big stone? A solitaire diamond from our mine, Would you like to have it? বহুমূল্য হীরের হারটা মহুয়ার গলায় পরিয়ে দিলো সে। আপত্তি করবারও সাহস পেলো না মহুয়া।
তারপর সে শুরু করলো তাদের নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য জবরদস্তি। নিয়ে সে যাবেই। কয়েকদিন ঘুরে ফিরে বেড়িয়ে তারপর দেশে ফিরতে পারে শহীদেরা। কুফুয়ার লোক তাদের নিয়ে একেবারে জাহাজে তুলে দিয়ে আসবে। লঞ্চ ছেড়ে দিতে বললো কুফুয়া।
কিন্তু শহীদ বললো যে দু একদিন সে কুফুয়ার বাড়িতে থাকতে পারে, কিন্তু তারপর সে যাবে দক্ষিণ রোডেশিয়ার বোঙ্কারা অঞ্চলে শিকার করতে। কাজেই লঞ্চ ছেড়ে দেয়া চলে না।
বোঙ্কারার নাম শুনেই চমকে উঠলো কুফুয়া। সামলে নিয়ে গম্ভীর ভাবে বললো, ওখানে কেন শহীদ? আরও তো অনেক জায়গা আছে। Better go anywhere else.
কেন, ওখানে যাওয়ায় আপনার আপত্তি কিসের? বোঙ্কারা…
Sh…h…hবাধা দিয়ে মুখের ওপর হাত রাখলো কুফুয়া, এখানে ওই জায়গাটার নাম জোরে বলো না। ওদেশের বহুলোক এখানে আছে। বড় সাংঘাতিক তারা।
শহীদ বুঝলো ভেতরে আরও কথা আছে, সবটা বললো না কুফুয়া। ব্যাপারটা সেখানেই চেপে গেল শহীদ। বিকেল বেলায় কামাল, মহুয়া, গফুর সবাই বেড়াতে গেছে, সন্ধ্যার দিকে কুফুয়াকে একা পেয়ে শহীদ জিজ্ঞেস করলো, বোঙ্কারা সম্বন্ধে আপনি কি জানেন?
কি শুনতে চাও?
প্রথমে বলুন ওখানকার লোক কেমন প্রকৃতির।
অত্যন্ত হিংস্র। ওরা প্রতিবছর কুমীরের কাছে নরবলি দেয়। আর সেজন্যে বাইরে থেকে মানুষ ধরে নিয়ে যায়। আমাদের এখান থেকেও বছর বছর লোক ধরে নিয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও ঠেকাতে পারিনি আমরা।
ওরা কি একেবারেই জংলী?
পুরোপুরি। ওদের দেশে দুই চারজন লোক আছে, যারা স্পাইয়ের কাজ করে। তারা মাঝে মাঝে বাইরে এসে সব রকম খবর নিয়ে যায়। তারা কিছু কিছু ইংরেজি বা পর্তুগীজ ভাষা বলতে পারে। শিক্ষা দীক্ষা বলতে কিছু নেই। ধর্ম হলো কুমীর দেবতার পূজা করা আর তাদের উদ্দেশে নরবলি দেয়া। ওদের দেশের শিশু থেকে শুরু করে বুড়ো পর্যন্ত অস্বাভাবিক গোঁড়া।
আচ্ছ, ওরা কি সুদূর ভারতবর্ষেও যায় মানুষ ধরবার জন্যে।
না। অতদূর যাওয়ার দরকার পড়ে না, এখানেই ওরা প্রচুর মানুষ পায়।
ওদের জীবিকা নির্বাহের উপায় কি?
প্রচুর পরিমাণে ফলের গাছ এমনিতেই ওদের অঞ্চলে আছে। তাছাড়া নানা রকমের ফলের চাষ করে ওরা। হরিণ, জিরাফ, জেব্রা, বন্যষাঁড়, হাতি, হিপোপটেমাস, এসব জন্তু শিকার করে তার মাংস খায়। কেউ কেউ গম ভূট্টার খেতও করে, তবে খুব কম।
আপনি এসব জানলেন কি করে?
আমার যুবক বয়সে, তা প্রায় আঠারো উনিশ বছর হবে, একবার ওরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল আমাকে বলি দেবে বলে। অনেক কষ্ট করে ছুটে আসতে পেরেছিলাম। তখনই ওদের সব কিছু দেখে এসেছিলাম। আমার এখনও মনে আছে কতো বন জঙ্গলে অনাহারে অনিদ্রায় ঘুরে বেড়িয়েছি। তখন সম্পূর্ণ নিরস্ত্র আমি। এখন সেসব কল্পনা করলেও গায়ে কাঁটা দেয়। গভীর রাতে গাছের ডাল আঁকড়ে ধরে নিচে বাঘ-সিংহের লড়াই দেখেছি। হাতির দল দাপাদাপি…
শহীদ দেখলো বুড়ো এখন মস্ত বড় গল্প ফেঁদে বসবে। তাড়াতাড়ি বললো, আমার কাছে কতগুলো ব্যাপার বড় অদ্ভুত লেগেছে। আপনাকে বললে আপনি হয়তো তার অর্থ আমাকে বুঝিয়ে দিতে পারবেন।
দক্ষিণ রোডেশিয়া থেকে কয়েকজন নিগ্রোর ঢাকায় যাওয়ার এবং তাদের সাথে ফিরে আসবার কথা সবিস্তারে বললো শহীদ। বাবার চিঠি, শহীদের ওপর আক্রমণ, সেদিন রাতে ঘরে উঁকি দেয়া কিছুই বাদ দিলো না সে। কুফুয়া চুপ করে শুনলে সবটা। ভীষণ গম্ভীর হয়ে গেছে তার মুখ।
ঠিক এমনি সময় বাড়ির বাইরে দশ-বারো জন লোকের হট্টগোল শোনা গেল। কারা যেন এগিয়ে আসছে বাড়ির দিকে। শহীদ ও কুফুয়া বেরিয়ে এলো বাইরে। কয়েকজন নিগ্রো দাঁড়িয়ে রয়েছে। কুফুয়া ওদের ভাষায় বোধকরি জিজ্ঞেস করলো, কি চাও তোমরা?
ওরাও কি যেন বললো। আবার কুফুয়া কথা বলে। কি কথা হচ্ছে শহীদ তার বর্ণও বোঝে না। কিন্তু কুফুয়া যে খুব উত্তেজিত হয়ে উঠেছে, তা সে বেশ বুঝতে পারলো। শহীদকে ঘরের ভিতর যেতে বললো কুফুয়া। শহীদ ভিতরে চলে এলো। এসেই দেখলো। কুফুয়ার স্ত্রী দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মুখ তার ভয়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে। কিছুই বুঝলো না শহীদ। কুফুয়া আর পেণ্ডা ছাড়া কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করবার উপায় নেই। আর কেউই ইংরেজি জানে না।