বৃষ্টি থেমে গেছে অনেকক্ষণ। বাড়ির কাছে এসেই থ হয়ে গেল গফুর। বাড়ি তো নেই, অনেক ছাই গাদা হয়ে রয়েছে। বাড়ি পুড়ে গেছে। কেউ নেই আশেপাশে। স্তম্ভিত হয়ে কাদার মধ্যেই মাটিতে বসে পড়লো গফুর।
৭.
শহীদ আর কুফুয়া ঘরে ফিরে এসে একটা চৌকিতে বসলো। শহীদ জিজ্ঞেস করলো, ধরা পড়বেন না পুলিসের হাতে?
না। ধরা পড়লেও ভয়ের কারণ নেই।
কেন?
যে লোকগুলোকে খুন করা হলো ওদের এদেশে প্রবেশাধিকার নেই। সরকারীভাবে বহু আগেই আইন পাস হয়েছে। এরা গায়ের জোরে প্রবেশ করে। আমাদের দেশের লোকের সাথে এরা এমনভাবে মিশে যায় যে এদের চিনে বের করে তাড়াতে পারছে না পুলিস। আর চিনতে পারলেও সব সময় সাহসও পায় না।
এরা থাকে কোথায়?
বোঙ্কারা। সেখানেই ওদের বাসা।
I see! অনেক মিলে যাচ্ছে। ঢাকায় যে সব লোক গেছিলো তারাও বোঙ্কারার লোক। তারাও আমার সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে মন্ত্র পড়েছিল।
হ্যাঁ। এই এদের নিয়ম, গম্ভীরভাবে বলে কুফুয়া।
এরা কি যে কোনও একজন নতুন লোকের সামনে এমনি করে?
সে সব বলতে গেলে অনেক কথা, শহীদ। তোমাকে পরে সব গুছিয়ে বলবো। এখন এ প্রসঙ্গ থাক। তোমাকে নিয়ে সকালবেলা বাইরে যাওয়াই উচিত হয়নি। I should have doubted this befor.
আপনি কি বলছেন, কিছুই বুঝতে পারছি না, মি. কুফুয়া। Will you kindly make it clear?
পরে শহীদ, পরে।
আপাততঃ একটা কথার জবাব দেবেন কি?
কি কথা?
এতগুলো মানুষ শুধু শুধু খুন করলেন কেন?
Oh Shahid! Youre questioning like a pleader. যাক তোমার যখন এতোই আগ্রহ, তখন শোনো। এদের খুন না করলে আজ রাতে এ বাড়ি আক্রমণ করে বা যে করেই হোক তোমাকে ওরা ধরে নিয়ে যেতো বোঙ্কারায়। সকালে আমার সাথে তোমাকে দেখেছে ওরা। তাই সন্ধ্যায় এসে হাজির হয়েছিল তোমাকে নিয়ে যাবার জন্যে। আমি ভয় দেখিয়েছিলাম যে ঘরের মধ্যে আমার দশ-বারজন লোক আছে। ওদের কেবল মাত্র ইশারা করলেই তাদের ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে যাবে। তাই ওরা শেষ পর্যন্ত এই শর্তে রাজি হয়েছিল যে ওরা কেবল প্রার্থনা করেই ফিরে যাবে। সত্যি সত্যিই তাই তারা যাচ্ছিলো। কিন্তু আমি চিন্তা করে দেখলাম এদের কিছুতেই বাঁচতে দেয়া যেতে পারে না। আজ এরা এমনিতেই ফিরে যাচ্ছে বটে কিন্তু যে কোনও উপায়ে এরা তোমাকে হস্তগত করবেই। তাই সব কজনকে শেষ করে দিলাম। এখন তোমাকে লুকিয়ে কোনও মতে ভারতগামী জাহাজে তুলে দিতে পারলেই আমি নিশ্চিন্ত হতে পারি।
এরা আমাকে কেন নিয়ে যেতে চায়?
ছাড়বে না যখন, তখন গোড়া থেকেই বলি। দক্ষিণ রোডেশিয়ার বোঙ্করা অঞ্চলের অসভ্য অধিবাসীরা কুমীর পূজা করে। এর জন্যে তাদের একজন পুরোহিত থাকে। তাদের ধারণা পুরোহিতই একমাত্র কুমীরের কোপ থেকে তাদের বাঁচিয়ে রাখতে পারে। এই পুরোহিতের সামনে রোজ সন্ধ্যায় এরা হাঁটু গেড়ে বসে কুমীর দেবতার আনুগত্য স্বীকৃতির শ্লোক উচ্চারণ করে। ওদের পুরোহিত যখন বুড়ো হয়ে যায়। তখন এরা দেশ-বিদেশে লোক পাঠায় আরেকজন পুরোহিত ধরে আনার জন্যে। নতুন পুরোহিতের চেহারা অনেকটা পুরোনো পুরোহিতের মতো হওয়া চাই। নতুন পুরোহিতকে কাজ বুঝিয়ে দেয়ার পর পুরোনো জনকে লিম্পোপোর মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। দুর্ভাগ্যবশতঃ তোমার চেহারা পুরনো বৃদ্ধ পুরোহিতের মতো দেখতে। তাই তাঁকে ছুটি দেয়ার জন্যে ওরা তোমাকে নিয়ে যেতে চায়।
শহীদের মাথায় বোঁ করে অনেকগুলো চিন্তা ঘুরে গেল। তবে কি তার বাপকেও ওরা নিয়ে গেছে? নইলে তার ঠিকানা পেয়ে ওরা ঢাকায় যাবে কি করে? তার বাবা কি এখন বন্দী হয়ে বোঙ্কারার পুরোহিতের কাজ করেছেন? বাবার চিঠির আদ্যোপান্ত মনে পড়লো ওর।
তোমার মাথায় এখন যে সব চিন্তা ঘুরছে, সে সব কথা আমার মাথায়ও আজ সন্ধ্যায় ঘুরেছে। তাই অতো গম্ভীর হয়ে গিয়েছিলাম। এখন বুঝতে পারছো তো, কেন খুন করেছি এতো লোককে? ওরা তোমাকে দেখে ফেলেছিল, আর মনে মনে পুরোহিক হিসেবে বরণ করে নিয়েছিল। ওদের পথ থেকে সরিয়ে না ফেললে তোমার খুবই বিপদ হতো। ওরা গিয়ে শত শত লোককে খবর দিতো। তাদের ঠেকাতাম কি করে?
ওদের সবাই কিন্তু মারা পড়েনি, মি, কুফুয়া। আমরা যখন বাড়ি ফিরে আসি তখন দেখেছি একজন লোক গাছের আড়াল থেকে সরে রাস্তায় পড়েই দৌড়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।
তাই নাকি? আগে বলেনি কেন? উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়ালো কুফুয়া। চিন্তিত মুখে সারা ঘরে পায়চারি করতে লাগলো সে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, তোমাদের লঞ্চটা আছে না? আজ রাতে আমরা সবাই সেখানে গিয়ে থাকবে। গয়না গাটি টাকা-পয়সাও সাথে নিতে হবে। আজই রাতে হয়তো দল বেঁধে বাড়ি ঘেরাও করে খুনের প্রতিশোধ নিতে আসবে। তার আগেই আমাদের সরে পড়তে হবে। আমরা অল্প কয়েকজন ওদের অতো লোক ঠেকাতে পারবো না।
কিন্তু কামালরা ফিরছে না কেন? রাত তো অনেক হলো।
পেণ্ডার সাথে গেছে, অতএব পথ হারাবার ভয় নেই।
আমি ভাবছি কোনও বিপদে পড়লো না তো?
বোঙ্কারার লোক ছাড়া এখানকার সব লোকই মােটামুটি ভালো। তাছাড়া পেণ্ডা রয়েছে সাথে। ভয়ের কোনো কারণ নেই। খুব বুদ্ধিমতী মেয়ে পেণ্ডা।
শহীদ কিন্তু অতোটা নিঃসন্দেহ হতে পারে না। মনটা খুঁত খুঁত করছে তার অমঙ্গল আশঙ্কায়। তাছাড়া ওরা যদি ফিরে এসে ওই নিগ্রোগুলোর হাতে পড়ে?