চাচী আম্মা থাকেন।
ওকে আমি কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই।
হারুন বাড়ির ভিতর চলে গেল। একটু পরেই তার সাথে এলেন এক প্রৌঢ়া মহিলা। শহীদ, কামাল দুজনেই তাকে আদাব দিলো। তিনিও আদাব জানিয়ে বললেন, বসো বাবারা। বলে নিজেই খাটের উপর বসে পড়লেন।
শহীদ জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা চাচী আম্মা, কাল আপনি কোনও কিছুর শব্দ শুনতে পাননি রাতের বেলা?
না বাবা। আমি হাঁপানিতে কষ্ট পাই, রাতে ঘুম হয় না। তাই আজ মাসখানেক ধরে ঘুমের ওষুধ খেয়ে বিছানায় শুই। ভোর ছটা৷ -সাড়ে ছটার আগে আর আমার ঘুম ভাঙে না।
এতগুলো কথা বলে তিনি হাঁপাতে লাগলেন। শহীদ বললো, আচ্ছা আয়রণ সেফে কি কি ছিলো বলতে পারবেন?
উনি কাল দুপুরে পঞ্চাশ হাজার নগদ টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলে এনেছিলেন, সেই টাকা ছিলো, কিছু গহনা ছিলো, আর গিনি ছিলো কয়েকটা। সুন্দর সাজিয়ে কথাগুলো বলেন ভদ্রমহিলা।
সবই চুরি হয়ে গেছে?
গহনা বেশির ভাগই রয়েছে। একটা হীরে বসানো হার শুধু গেছে গহনা থেকে আর টাকা, গিনি সবই গেছে।
হীরে বসানো হারটার দাম কতো হবে?
পঁচিশ হাজার টাকা দিয়ে উনি ওটা তৈরি করেছিলেন হারুনের বউকে দেবার জন্যে। হারুনের বিয়ের কথাবার্তা চলছে কিনা।
কাকা যখন বিছানা থেকে উঠে যান, আপনি টের পাননি?
না বাবা।
আচ্ছা, চাচী আম্মা, আমরা এবার আসি।
শহীদ কামালের হাত ধরে এগিয়ে গেল। হারুন পিছন পিছন চললো। জিজ্ঞেস করলো, কিছু বুঝতে পারলে, শহীদ?
কিছুমাত্র না। তুমি কাউকে সন্দেহ করো এ ব্যাপারে?
আমি কিছু বুঝতে পারছি না। সম্পূর্ণ ব্যাপারটা ভৌতিক বলে বোধ হচ্ছে আমার কাছে। তাছাড়া আমি রিসার্চ নিয়ে থাকি, কাকার বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিত কারো সঙ্গে আমার বিশেষ চেনাশোনাও নেই। কাকে সন্দেহ করবো?
গাড়ির কাছে এসে হারুনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো শহীদ।
গুডবাই। রমনা থানাটা ঘুরে যাই একটু।
হারুন মিনতি ভরা কণ্ঠে বললো, দেখো ভাই, একটা কিছু সুরাহা তোমার করতেই হবে। তোমার যা খরচ পড়ে আমাকে বিল দিয়ো তক্ষুণি শোধ করে দেবো।
তুমি জানো আমি শখের গোয়েন্দা। যদি কিছু করি, কারো অনুরোধের অপেক্ষা রাখবো না। তাছাড়া টাকার প্রয়োজনও আমার পড়বে না।
এঞ্জিন স্টার্ট দিলো শহীদ। হারুন কি বলতে যাচ্ছিলো গাড়ি চলতে শুরু করায় থেমে গেল।
অনেক খোঁজ করে টহলদার নাইটগার্ডকে বের করে শহীদ জানতে পারলো যে রাত প্রায় দেড়টা-দুটোর সময় সিটি এস. পি.-র গাড়ি গিয়েছিল সেগুন বাগানে। আধঘন্টা পরেই আবার সে গাড়ি ফিরে যায়। ও জিজ্ঞেস করলো, এস. পি. সাহেবের গাড়ি চিনলে কি করে।
হুজুর, চিবারলেট গাড়ি আছিলো, পন্দ্রসও বাইশ নম্বর আছিলো।
আর কোনও গাড়ি যায়নি বেশি রাতে ওদিকে?
না, হুজুর।
কামাল বললো, পথে যাতে বাধা না পায় তার জন্যে শেভ্রোলে গাড়িতে প্রয়োজন মতো নম্বর লাগিয়ে নিতে পারে চোর বা চোরেরা।
হ্যাঁ, তা পারে। গম্ভীরভাবে উত্তর দিলো শহীদ। গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়েছে সে।
পরদিন কাগজে খবর বেরোলো, বিখ্যাত ব্যবসায়ী জনাব মাযহারুল হক নিখোঁজ। এরপর সবিস্তারে চুরির কথা লেখা হয়েছে। সব শেষে লিখেছে, বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়াছে যে তীক্ষ্মধী শখের গোয়েন্দা মি. শহীদ খান এই ব্যাপারে তদন্ত করিতেছেন।
৩.
তিনদিন পর খবরের কাগজের মফঃস্বল সংবাদ বিভাগে ছোট্ট করে একটা খবর বেরোলো। গোয়ালন্দ স্টীমার ঘাটের নিকট নদীতে একটি লাশ ভাসিয়া যাইতেছিল। স্থানীয় ধীবররা উহা পাইয়া নিকটস্থ থানায় পৌঁছাইয়া দিয়াছে। মৃতদেহটি সম্পূর্ণ উলঙ্গ ছিলো। তাহার শরীরের সহিত একটি ভারি পাথর বাধা ছিলো। মুখে অনেকগুলো ছুরিকাঘাতের চিহ্ন থাকায় মৃতদেহ সনাক্ত করা যায় নাই। ময়না তদন্তের জন্য লাশ রাজবাড়িতে পাঠানো হইয়াছে।
খবরটা কারো নজরে পড়লো, কেউবা দেখলোই না। অনেকের মতো শহীদও পড়লো খবরটা।
ঠিক যেদিন খবরটা বেরোলো তার পরদিন আবার বড় বড় হরফে খবরঃ
গতরাতে লক্ষপতি অক্ষয় ব্যানার্জির বাড়িতে চুরি। সেই সঙ্গে অক্ষয় ব্যানার্জি নিখোঁজ। বহুমূল্য অলঙ্কারাদি এবং নগদ পচিশ হাজার টাকা লইয়া৷ চোরের নিরাপদে পলায়ন… ইত্যাদি।
শহীদ ভাবছিল, এ ব্যাপারটা তাকে না জানাবার কারণ কি? তবে কি পুলিস তাকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছে। পত্রিকা অফিসেও রাতের বেলাই জানানো হয়েছে, অথচ…।
ঠিক সেই সময়ই টেলিফোন বেজে উঠলো।
হ্যালো!… লোকমান সাহেব?… এক্ষুণি আসতে হবে…. আচ্ছা, আসছি পনেরো মিনিটের মধ্যে।
রিসিভার নামিয়ে পিছনে ঘুরতেই শহীদ দেখলো কামাল দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে। কামাল বললো, যাক, পেয়ে গেলাম তোকে। আমি খবরটা দেখেই এক দৌড়ে চলে এসেছি। ভাবছিলাম তুই হয়তো এতক্ষণে বেরিয়ে পরেছিস।
তুই একটু বোস, আমি কাপড়টা পরে আসি। এখনই থানায় যেতে হবে। তুইও চল আমার সঙ্গে।
শহীদের গাড়িটা রমনা থানার সামনে এসে দাঁড়ালো। লোকমান সাহেব এগিয়ে এলেন। সালাম বিনিময়ের পর শহীদ আর কামালকে নিয়ে অফিস ঘরে বসালেন লোকমান সাহেব। ইনিই রমনা থানার ও. সি.। মানুষটা খুবই আলাপী হাসিখুশি। শহীদের সাথে তাঁর অনেকদিনের পরিচয়। গত কয়েকটা কেসে এই লোকমান সাহেব অনেক সাহায্য করেছেন শহীদকে।
নিজের চেয়ারটায় বসে লোকমান সাহেব বললেন, মি. শহীদ, প্রথমেই কাজের কথা বলি। পর পর দুটো ঘটনা ঘটে গেল সেগুন বাগান আর পুরোনো পল্টনে। কাজেই পুলিস বিভাগ অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই দেখুন আই. জি. সাহেবের চিঠি। আপনার উপর তার অত্যন্ত আস্থা আছে, তাই তিনি প্রাইভেটলি এই ব্যাপারে আপনাকে এনগেজ করবার নির্দেশ দিয়েছেন। আপনার যা কিছু সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তা আমাদের করতে হকুম দিয়েছেন।