শহীদ থামলো। দীর্ঘক্ষণ একটানা কথা বলে সে হাঁপিয়ে গেছে।
কামাল শহীদের দিকে ফিরে বললো, কিন্তু আজ আমরা যখন কুয়াশাকে নিরস্ত্র অবস্থায় পেলাম, তখন আমাদের হাত তুলে দাঁড়াতে বললো কে?
ও নিজেই বলেছিল।
কিন্তু শব্দটা তো আমাদের পেছন থেকে এলো?
শহীদ হেসে বললো, ওটা ventriloquism. আমিও প্ৰথম বুঝতে পারিনি, আমরা ওর ventriloquism-এর মায়াজালে পড়লাম বলেই তো ও পালাতে পারলো অমন ধোঁকা দিয়ে। ventriloquism যে জানে সে ইচ্ছা করলে কাছ থেকেও এমন করে কথা বলতে পারে, মনে হবে যেন বহুদূর থেকে কেউ বলছে। আবার দুর থেকে বললে মনে হবে একদম কানের পাশ থেকে বলছে।
বড় অদ্ভুত জিনিস তো।
জাকারিয়া চলে গেল বিদায় নিয়ে। রাত দুটো বেজে গেছে।
জানেন শহীদ ভাই, আমার একজন বড় ভাই ছিলেন, মহুয়া বললো।
তাই নাকি? কোথায় তিনি?
আমি তার কথা আর কোনদিন শুনিনি। বাব৷ কখনও বলেননি। বোধকরি তার ওপর বাবার খুব রাগ ছিলো। আপনি যেদিন আমাদের বাসায় প্রথম এলেন কি কি সব ভৌতিক খবর নিয়ে সেদিন বাবা প্রথম বলেন তার কথা। আপনার চেহারার কোথায় বলে তার সাথে খুব মিল আছে। তিনি যদি এখনও বেঁচে থাকেন তাহলে নাকি আপনারই মতো লম্বা চওড়া হয়েছেন।
তার সাথে আমার চেহারার কি মিল আছে জানি না। কিন্তু মনের মিল খুবই আছে।
আপনি চেনেন আমার দাদাকে?
হা চিনি। তার নাম মনসুর আলী ওরকে রফিকুল ইসলাম, ওরফে কুয়াশা।
বিস্মিত মহুয়ার মুখ থেকে কেবল বেরোলো, কী বললেন? কুয়াশা! অবাক চোখে চেয়ে রইলো সে শহীদের মুখের পানে।
শহীদ কুয়াশার চিঠিটা মহয়ার হাতে তুলে দিলো।
চিঠিটা পড়ে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো মহুয়ার চোখ থেকে।
দাদা বললেই পারতো! পরিচয় দিলেই পারতো! মহুয়ার চোখের জল আর বাঁধা মানে না। বড় সুন্দর লাগছে ওকে। শহীদ চেয়ে দেখে। এতো শক্ত মেয়েটার চোখে জল। কেমন যেন লাগে। কামাল কারও চোখের জল সহ্য করতে পারে না। তারও চোখে জল টলমল করতে লাগলো। দারোগা সাহেব খুটির মতো বসে আছেন শক্ত হয়ে। তার কোনও পরিবর্তন নেই।
হঠাৎ একজন লোক বাইরে থেকে ছুটে এসে দারোগা সাহেবের পায়ে পড়লো। সবাই চমকে তার দিকে ফিরে তাকলো। একজন পুলিশ। মাথায় তার ব্যান্ডেজ বাঁধা।
হাজুর। ডাকু ভাগ গিয়া। ঠান্ডা মিয়া খুন হো গিয়া। হাসপিটাল মে হ্যায়। মেরা ইয়ে৷ হালাত। নৌকরী তো নেহী যায়গী হাজুর! আপ বাঁচাইয়ে হাজর!
তার কাছ থেকে যে বিবরণ পাওয়া গেল তা সংক্ষেপে হচ্ছে- সে আর ঠান্ডা মিয়া হাতকড়া পরানো লোকটাকে নিয়ে নদীর পার ধরে থানার দিকে যাচ্ছিলো। হঠাৎ একজন কালো কাপড় পরা ভীষণাকৃতি মানুষ পিছন থেকে ঠান্ডা মিয়ার মাথায় ডান্ডা মারে। ঠান্ডা মিয়া মাটিতে পড়ে যায়। তখন সে রুখে দাঁড়ায়। কিন্তু সে লোক তাকেও প্রহার করে। শেষ পর্যন্ত সে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। তখন একটা নৌকায় বন্দী লোকটাকে উঠিয়ে নিয়ে সেই দেও চলে যায়। সে আরও লোকের সাহায্যে ঠান্ডা মিয়াকে হসপিটালে নিয়ে যায়। ঠান্ডা মিয়া সেখানেই মারা যায়। অনেক খুঁজে সে এখানে এসেছে সব খবর বড় সাবকে জানাতে।
কামাল বললো, উঃ! কী ferocious!
পাশের ঘর থেকে আওয়াজ এলো, মেরে ফেলো!…
গলাটা অনেক ক্ষীণ হয়ে এসেছে। মহুয়া ছুটে গেল সে ঘরে।
ডাক্তার বেরিয়ে এলেন ঘর থেকে। শহীদ, কামাল তার দিকে এগিয়ে গেল। তিনি গম্ভীর ভাবে বললেন, Dead।
দারোগা সাহেব চলে গেল ডাক্তারের সাথে। মৃতদেহ আগলে বসে রইলো শহীদ, কামাল আর মহুয়া।
অঝোরে কাঁদছে মহুয়া। আপন বলতে আমার আর কেউ রইলো না, শহীদ ভাই। শহীদ কোনও ভাষা পায় না সান্ত্বনা দেবার। ধীরে ধীরে মহুয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় সে।