আপনি শুধু আমার পক্ষ থেকে তাকে আমার বিদায় অভিবাদন জানাবেন। আর বলবেন, রেবেকা কৃতজ্ঞ তার কাছে।
বিদায় অভিবাদন জানাবো! তুমি কি দেশ ছেড়ে যাচ্ছে?
হ্যাঁ, বলতে বলতে দুচোখ জলে ভরে উঠলো রেবেকার। বাষ্প রুদ্ধ কণ্ঠে বললো, হ্যাঁ, অনেক দূরে চলে যাচ্ছি।
ইংল্যান্ডে তো তোমার কোনো ভয় নেই। আইভানহো বেঁচে থাকতে কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
আমি জানি। তবু এখানে থাকা সম্ভব নয় আমার পক্ষে। উচিতও নয়। যাওয়ার আগে সামান্য একটা উপহার দিতে চাই আপনাকে। দয়া করে ফিরিয়ে দেবেন না বলুন?
ছোট একটা রূপার বাক্স এগিয়ে দিলো রেবেকা রোয়েনার দিকে। বাক্সটা খুলতেই চোখ বড় বড় হয়ে উঠলো রোয়েনার। বহুমূল্য রত্নখচিত একটি হার তাতে।
এ তো অনেক দামী জিনিস! এ জিনিস আমি নেবো কি করে!
আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না, লেডি রোয়েনা। আপনার স্বামী আমার প্রাণ ও সম্মান বাঁচিয়েছিলেন। এই হার আমার কৃতজ্ঞতার তুচ্ছ একটা প্রতীক। আমার জীবনে এসবের আর প্রয়োজন নেই। আর কখনো অলঙ্কার পরবো না। আমার এই জিনিসটা আপনি যদি রাখেন, মাঝে মাঝে পরেন, সত্যিই আমি খুব খুশি হবো।
কিসের এত দুঃখ তোমার মনে, রেবেকা, আমাকে বলো। দেখি, আমি বা আমার স্বামী তা দূর করতে পারি কি না।
ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ পারবে না সে দুঃখ দূর করতে।
তাই যদি হয় চলে যাবে কেন তুমি? এখানেই থাকো। আমরা দুজনে দুবোনের মতো থাকবো…
না, তা হয় না, বললো রেবেকা। আপনার এ অনুগ্রহ চিরদিন মনে থাকবে আমার। আমাদের গোত্রে এমন কিছু নারী সব সময় থাকেন যারা ঈশ্বরের পায়ে সমর্পণ করেন নিজেদের। যারা দুস্থ, পীড়িত তাদের সেবা করেন তাঁরা, ক্ষুধার্তের জন্যে খাবারের ব্যবস্থা করেন। আমি ঠিক করেছি তাদের সাথে থাকবো। যদি কোনো দিন আপনার স্বামী আমার কথা জিজ্ঞেস করেন, তাকে বলবেন একথা। ঈশ্বর আপনাদের মঙ্গল করুন। আপনারা সুখে থাকুন। বিদায়।
রোয়েনাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেল রেবেকা।
***