- বইয়ের নামঃ দ্য পার্ল
- লেখকের নামঃ জন স্টেইনবেক
- সিরিজঃ কিশোর ক্লাসিক সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী বই
- বিভাগসমূহঃ কল্পকাহিনী, অ্যাডভেঞ্চার
দ্য পার্ল
দ্য পার্ল – জন স্টেইনবেক
হতদরিদ্র মুক্তো-ডুবুরি কিনো। বেচারা পয়সার অভাবে একমাত্র সন্তানের সুচিকিৎসা করাতে পারছে না। এমনি যখন অবস্থা, হঠাৎ করেই অপূর্ব সুন্দর এক মূল্যবান মুক্তো পেয়ে গেল ও, সাগরে ডুব দিয়ে। মুক্তো পেয়ে নানান রকমের রঙীন স্বপ্নে ছেয়ে গেল ওর অন্তর। ও ভাবছে, আর সবাইও বুঝি ওর মতই আনন্দে আত্মহারা। কিন্তু আসলেই কি তাই? সমাজে সব মানুষই কি কিনোর মত সরল আর সাদাসিধে? কুটিল চরিত্রের মানুষ কি নেই?
কিনোর মুক্তো মুখোশ খুলে দিল সমাজপতিদের।
——
০১. কাক ভোরে ঘুম ভাঙল কিনোর
কাক ভোরে ঘুম ভাঙল কিনোর। আকাশে তখনও তারাদের ঝিকিমিকি। সবে কুকুরুকু শুরু করেছে মোরগের পাল, আর শুয়োরগুলো ছোঁক ছোঁক করছে খাবারের খোঁজে। কাঠের ছোট বাসাটার বাইরে, ঝোপে-ঝাড়ে পাখিদের কলগুঞ্জন আর ওড়াওড়ি।
চোখ মেলল কিনো। দরজা দিয়ে চুইয়ে ঢোকা আলোর ম্লান রশ্মির উদ্দেশে চেয়ে রইল। এরপর ওর নজর গেল বাক্সটার দিকে, ওর ছেলে কয়োটিটো যেখানে ঘুমোচ্ছ। ছাদ থেকে টানা রশিতে ঝুলছে বাক্সটা। সবার শেষে কিনোর দৃষ্টি গেল হুয়ানা, অর্থাৎ ওর স্ত্রীর দিকে। মাদুরে ওর পাশে শুয়ে রয়েছে হুয়ানা। শালটায় তার পুরো শরীর আর মুখের অর্ধেকখানি ঢাকা পড়েছে। হুয়ানার চোখ দুটো খোলা। কিনো ঘুম ভেঙে কোনদিনই স্ত্রীর চোখ বোজা দেখেনি। চোখ তো নয় খুদে খুদে তারা যেন দুটো। চেয়ে চেয়ে কিনোর ঘুম ভাঙ্গা দেখছিল ও।
সাগরতীরে ঢেউ ভাঙছে শুনতে পাচ্ছে কিনো। নিস্তব্ধ প্রহরে, তরঙ্গের আছড়ে পড়ার শব্দ মধুর সঙ্গীত হয়ে বাজল ওর কানে। বাতাসে ঠাণ্ডার বেজায় দাপট, ফলে নাক পর্যন্ত কম্বল টেনে রেখেছে কিনো। ঘাড় কাত করে হুয়ানার দিকে চাইল ও। নিঃশব্দে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েছে সে। ঝুলন্ত বাক্সটার কাছে এগিয়ে গেল এবার। ঝুঁকে পড়ে আদর করল বাচ্চাকে। মুহূর্তের জন্যে চোখ মেলল কয়েটিটো, তারপর আবার বুজে ফেলে ঘুমোতে লাগল।
ছোট্ট চুলোটার কাছে চলে এল হুয়ানা। এক খণ্ড কয়লা ফেলে দিতে থাকল, অাগুন যতক্ষণ না ধরল ওটায়। এবার আগুনে খড়ি জুগিয়ে দিল। সটান উঠে দাঁড়িয়েছে কিনো, কাঁধ-মাথা মুড়ে নিয়েছে কম্বলে। পায়ে স্যান্ডেল গলিয়ে বাইরে বেরিয়ে এল। ঠায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় লক্ষ্য করল সে।
একটু পরে, দরজার বাইরে গুটিসুটি মেরে বসে পড়ে, কম্বলটা টেনে টুনে হাঁটু ঢাকল। সাগরের ও-ই উঁচুতে ঝুলে থাকা লালচে মেঘরাজি দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে ওর। একটা নধর ছাগল কাছিয়ে এসে কৌতূহলী চোখে কিনোকে লক্ষ্য করছে। কিনোর পেছনে, উজ্জ্বল আলো বিলোচ্ছে আগুন। আগুনের শিখা আর আভা দরজার ফাঁক দিয়ে দেখতে পাচ্ছে সে। ছোট্ট বাড়িটার ফাঁক-ফোকর গলেও অগ্নিস্ফুলিঙ্গ দেখা যাচ্ছে। নাস্তার জন্যে কর্নকেক তৈরি করতে ব্যস্ত হুয়ানা।
সূর্যটা হঠাৎ ফুঁড়ে বেরোল সাগরের বুক চিরে। জ্বলন্ত ভাস্কর চোখ ঢাকতে বাধ্য করল কিনোকে। কর্নকেকের সুঘ্রাণ নাকে আসছে ওর। হাড় জিরজিরে, সন্ত্রস্ত এক কুকুর কিনোর পাশে এসে জবুথুবু হয়ে শুয়ে পড়ল। অদ্ভুত সুন্দর এক ভোর, আর দশটা ভোরের মতই।
হুয়ানা কয়েটিটোকে বাক্স থেকে তুলে নিচ্ছে, তার আওয়াজ পেল কিনো। বাচ্চাটাকে মুখ ধুইয়ে নিজের শাল দিয়ে মুড়িয়ে দিল হুয়ানা। বাচ্চাকে বুকের কাছে ধরে এখন দুধ পান করাচ্ছে। এসব খুঁটিনাটি ব্যাপারগুলো দেখতে হয় না, এমনিতেই বুঝতে পারে কিনো। পুরানো এক গান ধরেছে হুয়ানা। অনেক রকম ভাবে এ গানটা গাইতে পারে ও। কি যেন এক আশ্চর্য প্রশান্তি আছে গানটার মধ্যে, এ গান শুনলে কিনো আশ্বস্ত বোধ করে; কয়োটিটোও কান্না ভুলে যায়।
কিনোর বাসা ঘিরে কাঠের বেড়া। বেড়ার ওপাশে আরও কিছু ঘরবাড়ি। ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে, নাস্তার আয়োজন চলছে শব্দে টের পাওয়া যায়। কিন্তু এ শব্দগুলোর সঙ্গে কিনোর বাসার নিত্যকার শব্দের বিস্তর ফারাক। ওর পড়শীদের বউদের সাথেও অবশ্য হুয়ানার কোন মিল নেই।
ঠাণ্ডা খানিকটা কমে এসেছে, ফলে মাথা থেকে কম্বলের ঘোমটা সরাল কিনো। রীতিমত শক্তিশালী এক যুবক সে। কালো চুল ঝুলে পড়ে ওর বাদামী কপাল ছুঁয়েছে। কঠোর, উজ্জ্বল একজোড়া চোখ ওর, পুরু গোঁফ।
সূর্যের হলদে আলো এসে পড়েছে বাড়িটার ওপর। কাঠের বেড়াটার কাছে, মোরগ লড়াই বেধে গেছে। এক মুহূর্ত মোরগ দুটোকে লক্ষ্য করল কিনো। এবার ওর দৃষ্টি কাড়ল পর্বতমালার উদ্দেশে উড়ে-যাওয়া পাখির ঝাঁক। ঘুম ভেঙে জেগে উঠছে পৃথিবী। সিধে উঠে দাঁড়িয়ে ছোট্ট বাসাটার ভেতর গিয়ে ঢুকল কিনো।
চুলোর কাছে বসে ছিল হুয়ানা। কিনোকে ঘরে ঢুকতে দেখে উঠে পড়ল। কয়েটিটোকে তার দোলনায় শুইয়ে দিল আবার। এবার কালো চুল আঁচড়ে নিয়ে, সবুজ রঙের চিকন রিবন দিয়ে পেছনে বেঁধে রাখল।
কিনো চুলোর ধারে বসে গরম গরম কর্নকেক খাচ্ছে। নাস্তায় কর্নকেক আর দুধ ছাড়া অন্য কিছু খায় না সে। ওর খাওয়া শেষ হলে, হুয়ানা এল চুলোর কাছে। নাস্তা করতে বসল ও। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই সুখী, পরিতৃপ্ত। কথা বলার প্রয়োজন বোধ করছে না কেউ।