সব যদি আমাকে ছাড়তেই হয়, একমাত্র তোমার কথায় ছাড়বে। রিচার্ডের দয়া ভিক্ষা করতে যাবো না।
তাহলে ঈশ্বরের যা ইচ্ছা তা-ই হবে। মানুষের কাছ থেকে আর কোনো সাহায্যের আশা আমি করি না।
ভাঙবে তবু মচকাবে না! বিদ্রুপের সুরে বললো বোয়া-গিলবার্ট। ঠিক আছে, রেবেকা, আমি তাহলে যাই। একটা কথা মনে রেখো, লড়তেই যদি হয়, আমি প্রাণ দিয়ে লড়বো। এবং ফলাফল কি হবে তা তুমি জানো।
জানি। এবার আপনি আসুন। খামোকা কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।
তাহলে এভাবেই আমাদের বিদায় নিতে হবে? তোমাকে কেন যে আমি দেখেছিলাম। আর যদি দেখলামই কেন তুমি ইহুদী না হয়ে খ্রীষ্টান্ত হলে না!…আমাকে ক্ষমা করো, রেবেকা!
নিহত মানুষ তার আততায়ীকে যতটা ক্ষমা করতে পারে, সর্বান্তঃকরণে তাই করছি।
বিদায় রেবেকা? ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল ব্রায়ান।
২০. লক্সলির কাছ থেকে বিদায়
লক্সলির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সেইন্ট বটল্ফ প্রায়োরির পথে রওনা হলো ব্ল্যাক নাইট। গাৰ্থ আর ওয়াম্বা আগেই সেখানে চলে গেছে আহত আইভানহোকে নিয়ে।
প্রায়োরিতে পৌঁছে ব্ল্যাক নাইট দেখলো আইভানহো এখন অনেক সুস্থ, প্রায় স্বাভাবিক।
আরেক দিন এখানে বিশ্রাম নাও, বললে নাইট। কাল রওনা হবে তুমি।
না, আমি আপনার সাথেই যাব, বললো আইভানহো। পথে কি বিপদে পড়বেন তার ঠিক নেই…।
কিন্তু ব্ল্যাক নাইট শুনলো না ওর কথা। বললো, না, আমি যা বললাম তাই করবে। কাল রওনা হবে তুমি। সোজা অ্যাথেলস্টেনের কনিংসবার্গ দুর্গে চলে আসবে। ওখানে তোমার বাবার সাথে আবার যেন তোমার মিলন হয়, সে চেষ্টা করবো। ওয়াম্বাকে নিয়ে যাচ্ছি, পথ চিনিয়ে দেবে। বিপদআপদ হলে সাহায্যও করতে পারবে।
হাহ, ওয়াম্বাকে নিচ্ছেন বিপদ সামলাতে! ওকে কে সামলায় তার ঠিক নেই!
তবু আর কাউকে যখন পাওয়া যাচ্ছে না, কি আর করা। কিন্তু তুমি, কালকের আগে নড়বে না এখান থেকে। এটা আমার নির্দেশ।
বিদায় নিলো ব্ল্যাক নাইট।
ব্ল্যাক নাইট চলে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মাথায় উদ্বেগে অস্থির হয়ে উঠলো আইভানহো। গার্থকে ডেকে পাঠালো সে। বললো, এক্ষুনি আমার ঘোড়া সাজাও, গার্থ, ব্ল্যাক নাইটের পেছন পেছন যাবো আমরা।
কিন্তু আপনি এখনো খুব দুর্বল, প্রতিবাদ করলো গাৰ্থ। তাছাড়া ব্ল্যাক নাইট বলে গেলেন কাল পর্যন্ত এখানে থাকতে।
না, গার্থ, কাল পর্যন্ত এখানে বসে থাকা যাবে না। আমার মন বলছে পথে নিশ্চয়ই বিপদে পড়বেন ব্ল্যাক নাইট। একা তিনি পেরে উঠবেন না শত্রুর সাথে। আমাকে যেতেই হবে, গার্থ। তোমরা যা-ই বলো আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।
কিন্তু…।
আর কোনো কিন্তু নয়, গাৰ্থ। আমার ঘোড়া সাজাও, যাও। দেরি হয়ে যাচ্ছে!
কয়েক মিনিটের ভেতর দুটো ঘোড়ায় চেপে রওনা হলো দুজন।
.
গভীর বনের মাঝখান দিয়ে এগিয়ে চলেছে দুটো ঘোড়া। দুজন আরোহী তাদের পিঠে। একজন ব্ল্যাক নাইট। অন্যজন ওয়া। গুনগুনিয়ে গান করছে ব্ল্যাক নাইট। মাঝে মাঝে গান থামিয়ে টুকটাক প্রশ্ন করছে ওয়াম্বাকে। প্রশ্নের জবাব দিয়েই কিছু একটা হাসির কথা শুনিয়ে দিচ্ছে। ওয়াম্বা। প্রত্যেক বারই যে ব্ল্যাক নাইট হাসছে এমন নয়, তবু ওয়াম্বার বিরাম নেই।
রাজদ্রোহী ডাকাতদের চেয়েও মারাত্মক লোকজন আছে এ বনে, তা জানেন? হঠাৎ ওয়াম্বা বললো।
তাই নাকি! কারা?
ম্যালভয়সিঁর লোকজন। ডাকাতদের ডাকাতি করা ছাড়া বেঁচে থাকার আর কোনো পথ নেই। কিন্তু ওরা কেন করে?
বড় জটিল প্রশ্ন করেছো, ওয়াম্বা জমিদার ম্যালভয়সিঁর লোকজন কেন ডাকাতি করে? যাকগে, ও নিয়ে আমাদের মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই।
লাভ নেই ঠিকই, কিন্তু মাথা থাকলেই যে তা ঘামে, স্যার নাইট। ধরুন ওদের জন দুই এসে আমাদের আক্রমণ করলো, আপনি কি করবেন?
কি আর করবো, বর্শা চালাবো।
যদি চারজন আসে?
একই দশা হবে তাদেরও।
যদি ছজন আসে?
ঐ একই। সত্যিকারের নাইটরা দশ বিশ জন এলেও কোনো পরোয়া করে না, বুঝলে হে ভাঁড়।
বেশ, তাহলে আপনার ঐ শিঙাটা আমাকে একটু দিন।
ব্ল্যাক নাইট শিঙাটি দিতেই ওয়াম্বা সেটা নিজের গলায় ঝুলিয়ে নিলো।
আরে, আরে, তোমার মতলব কি, ওয়াম্বা? বলে উঠলেন নাইট। দাও, আমার শিঙা আমাকে ফিরিয়ে দাও! লক্সলি ওটা আমাকে উপহার দিয়েছে।
আমার কাছে এটা নিরাপদেই থাকবে, স্যার নাইট। বোকা ভাঁড়রা যখন বীরদের সাথে চলে তখন শিঙা-টিঙা এসব ভড়দেরই বহন করা উচিত। দরকারের সময় ওরাই ওগুলো ভালো বাজাতে পারে। দুশ্চিন্তা করবেন না, আপনার জিনিস আপনি ফেরত পেয়ে যাবেন।
নাহ্, হতাশ কণ্ঠে বললো নাইট, তোমার বেয়াদবি দিন দিন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মনে রেখো, আমারও ধৈর্যের একটা সীমা আছে।
দেখুন, স্যার নাইট, বোকা হাঁদাকে বেশি ভয় দেখাবেন না, তাহলে সে লেজ তুলে পালাবে। তখন এই অচেনা বনে পথ খুঁজে মরতে হবে আপনাকেই।
এই একটা ব্যাপারে তো আগেই হার মেনে বসে আছি। সুতরাং তোমার সাথে আর কোনো কথা নেই আমার। চুপ করে পথ দেখাও।
শিঙাটা তাহলে ভাড়ের কাছেই থাকছে। ঠিক আছে, এবার তাহলে প্রমাণ দিন কেমন বীর আপনি।
মানে?
মানে আমার মনে হচ্ছে, সামনের ঐ ঝোপটার আড়ালে একদল গুণ্ডা আমাদের আক্রমণ করার জন্যে ওঁৎ পেতে আছে।
কি করে বুঝলে?
পাতার আড়ালে দুতিনবার ওদের শিরোস্ত্রাণ ঝলকে উঠতে দেখেছি। ঐ দেখুন আবার। সৎ লোক হলে ঝোপের ভেতর লুকিয়ে না থেকে রাস্তা দিয়ে হাঁটতো।