আশাকরি শিগগিরই আমাদের দেখা হবে। তখন বিস্তারিত আলাপ করবো।
এখন বিদায়,
অ্যায়মার।
.
ডাইনী! একই রকম আতঙ্কিত স্বরে চিৎকার করলেন আবার গ্র্যান্ডমাস্টার। ব্রাদার কনরাড, সত্যিই মেয়েটা ডাইনী?
আমার মনে হয় না। প্রায়োর অ্যায়মার বোধ হয় বোঝাতে চেয়েছেন মেয়েটা অপূর্ব সুন্দরী।
না, না! তুমি বুঝতে পারছে না, কনরাড, প্রায়োর অ্যায়মারের মতো দায়িত্বশীল ব্যক্তি এমন আজেবাজে কথা লিখতেই পারে না। মেয়েটা তার জাদুবিদ্যা দিয়ে বশ করেছে টেম্পলার ব্রায়ানকে, অ্যায়মার সে কথাই বোঝাতে চেয়েছে! দাঁড়াও দেখি, বুড়ো কি বলে।
আইজাকের দিকে ফিরলেন গ্র্যান্ড মাস্টার। বললেন, যদ্র বুঝতে পারছি, তোমার মেয়ে টেম্পলার বোয়া-গিলবার্টের হাতে বন্দী।
জি হ্যাঁ, মহামান্য নাইট। মুক্তিপণ হিশেবে উনি যা চাইবেন…।
থামো! আগে আমার প্রশ্নের জবাব দাও, তোমার মেয়ে মানুষের অসুখ ভালো করার ব্যাপারে বিশেষ পারদর্শী, তাই না?
জি, আগ্রহের সঙ্গে জবাব দিলেন আইজাক। অনেক আহত নাইটের ক্ষত ও সারিয়ে তুলেছে। যে ক্ষত চিকিৎসকরাও অনেক সময় সারাতে পারেনি, ও তা ভালো করে দিয়েছে।
কোথায় শিখলো এসব কায়দা কানুন?
আমাদের গোত্রের এক বৃদ্ধার কাছে।
কে সেই বুড়ি?
তার নাম মরিয়ম–
কী! সেই জাদুকরী মরিয়ম! যার জাদু বিদ্যারকাহিনী সারা খ্রীষ্টান দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিলো! যাকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিলো! শুনেছো, কনরাড? আমি ঠিক বলেছি কি না? বদমাশ ইহুদী! আইজাকের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করলেন গ্র্যান্ডমাস্টার। তোর মেয়ে ডাইনী। আর কত বড় সাহস, টেম্পল-এর নাইটদের সে জাদু করে! এক্ষুনি তুই দূর হয়ে যা আমার সামনে থেকে, নইলে তোর মৃত্যু কেউ ঠেকাতে পারবে না। মেয়েকে ছাড়াতে এসেছে, হাহ্! শুনে রাখ, ওর বিচার হবে। যদি ডাইনী প্রমাণ হয়, পুড়িয়ে মারা হবে ওকে!
স্যার, নাইট! মহামান্য গ্র্যান্ড মাস্টার শুরু করতে গেলেন আইজাক।
দূর হয়ে যা আমার সামনে থেকে, ভণ্ড ইহুদী, নয়তো রক্ষীদের ডাকবো।
আর কোনো উপায় না দেখে মঠ থেকে বেরিয়ে গেলেন আইজাক।
মঠের প্রধান পুরোহিতকে ডাকলেন গ্র্যান্ড মাস্টার।
আলবার্ট ম্যালভয়সিঁ! এই মঠে একজন ইহুদী ডাইনীকে এনে রাখা হয়েছে, আর আপনি তার কোনো প্রতিকার করছেন না, আশ্চর্য!
ইহুদী ডাইনী! চমকে উঠলেন আলবার্ট ম্যালভয়সিঁ।
হ্যাঁ, ইহুদী ডাইনী। ইয়র্কের সুদখোর আইজাকের মেয়ে। সে এখন এই পবিত্র মঠেই আছে। ছি!
কিন্তু কোথায়?
টেম্পলার ব্রায়ানের ঘরে খুঁজে দেখুন। এক মুহূর্ত থামলেন গ্র্যান্ড মাস্টার। তারপর বললেন, উচিত শাস্তি দিতে হবে ওকে। আপনি বিচার সভার আয়োজন করুন।
.
নাইট টেম্পলার ব্রায়ান দ্য বোয়া-গিলবার্টের ঘরে বন্দী রেবেকা।
যখন দুপুরের ঘণ্টা পড়লো, ও শুনতে পেলো অনেকগুলো পায়ের শব্দ এগিয়ে আসছে ওর ঘরের দিকে। একটু স্বস্তি বোধ করলো রেবেকা। এ ঘরের ভেতরে বা বাইরে অন্য লোক থাকলে ব্রায়ান এসে বারবার তাকে বিরক্ত করতে পারবে না।
খুলে গেল ঘরের দরজা এক সঙ্গী ও চারজন অনুচরসহ ভেতরে ঢুকলেন মঠের প্রধান পুরোহিত। রেবেকাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে বিস্ময়ে হাঁ হয়ে গেল তার মুখ। টেম্পলার ব্রায়ানের ঘরে সত্যি সত্যিই একজন মহিলাকে দেখবেন গ্র্যান্ডমাস্টারের কথা শোনার পরও আশা করেননি তিনি। এক মুহূর্ত স্থায়ী হলো তার মুখের বিস্মিত ভাব। তারপরই সেখানে দেখা দিলো ক্রোধ।
ওঠো! চলো আমার সাথে! কঠোর স্বরে আদেশ করলেন তিনি।
কোথায় যাবো? কেন?
প্রশ্ন করার অধিকার তোমার নেই। আদেশ পালন করাই তোমার কাজ।তবু বলছি, গ্র্যান্ডমাস্টারের বিচার সভায় তোমার বিচার হবে।
বিচারের কথা শুনে প্রথমে ঘাবড়ে গেল রেবেকা। তারপর আশার সঞ্চার হলো ওর মনে বিচারক খ্রীষ্টান হলেও বিচারক তো! হয়তো ন্যায় বিচারই পাওয়া যাবে। আর ন্যায় বিচার পেলে মুক্তি পাবে।
বিচার সভায় নিয়ে আসা হলো রেবেকাকে।
উঁচু একটা বেদীর ওপর বসেছেন প্রধান বিচারক, গ্র্যান্ডমাস্টার অভ দ্য নাইটস টেম্পলার। হাতে গ্র্যান্ডমাস্টারের দণ্ড! তাঁর পায়ের কাছে নিচু একটা টেবিলে বসে দুজন লিপিকার। বিচার অনুষ্ঠানের কার্যবিবরণী লিখবে তারা। বিচারকমণ্ডলীর অপর চার সদস্য চার প্রধান পুরোহিত। গ্র্যান্ডমাস্টারের চেয়ে সামান্য নিচু চারটে আসনে তারা বসেছেন, প্রধান বিচারকের দুপাশে দুজন করে। বেদীর দুপাশে দুটো কাঠগড়া। একটায় দাঁড়িয়ে আছে আসামী। অন্যটা এখন ফাঁকা। যারা সাক্ষী দেবে তারা এসে দাঁড়াবে ওটায় যে বিরাট হলঘরটায় বিচার সভা বসেছে তিল ধারণের স্থান নেই তাতে। ডাইনীর বিচার হবে, যে শুনেছে সে-ই হাজির হয়েছে দেখতে।
অবশেষে শুরু হলো বিচার অনুষ্ঠান।
সমবেত দর্শক ও শ্রোতমণ্ডলী, জলদগম্ভীর স্বরে শুরু করলেন গ্র্যান্ড মাস্টার, ইয়র্কের ইহুদী আইজাকের কন্যা রেবেকার বিচার করতে আমরা এখানে সমবেত হয়েছি। ইহুদী কন্যার বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর। সে নাকি ডাইনী, জাদুবিদ্যার চর্চা করে। শুধু চর্চা করেই ক্ষান্ত হয়নি, সে তার জাদুর প্রভাবে এই পবিত্র মনে একজন টেম্পলারকে মোহিত করে রেখেছে। যারা এই জাদুকরী, ডাইনীর স্বপক্ষে বা বিপক্ষে সাক্ষী দিতে প্রস্তুত তারা দাঁড়াও।