কে বললো দ্য ব্রেসি মারা গেছে? উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করলেন তিনি। এসো এসো, দ্য ব্রেসি। ফ্ৰঁত দ্য ববায়েফ আর টেম্পলার কোথায়?
দ্য ব্রেসির জবাব শুনে আবার মুখ শুকিয়ে গেল রাজপুত্রের।
টেম্পলার পালিয়েছে, বললো দ্য ব্রেসি। আর ফ্ৰঁত দ্য ববায়েফ পুড়ে মরেছে নিজের জ্বলন্ত প্রাসাদে।
হতাশ মুখে প্রিয় বন্ধু ওয়াল্ডেমারের দিকে তাকালেন জন।
আরো দুঃসংবাদ আছে, রাজপুত্র, বলে চললো দ্য ব্রেসি। রাজা রিচার্ড এখন ইংল্যান্ডে।
কী! ফ্যাকাসে হয়ে গেল রাজপুত্রের মুখ।
হ্যাঁ রাজপুত্র। আমি নিজ চোখে তাঁকে দেখেছি, তাঁর সাথে কথা বলেছি।
এখন সে কোথায়? প্রশ্ন করলেন ওয়ার্ল্ডেমার।
আমি যখন শেষবার দেখেছি তখন বনের ভেতর দিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে যাচ্ছিলেন।
কজন লোক আছে ওর সাথে?
একজনও না।
একে অপরের সাথে দৃষ্টি বিনিময় করলেন রাজপুত্র ও ওয়ান্ডেমার।
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে কারাগারে পুরতে হবে, বললেন রাজপুত্র জন।
কবরের চেয়ে নিরাপদ কোনো কারাগার নেই, ওয়াল্ডেমার জবাব দিলেন।
মাথা ঝাকালেন রাজপুত্র।
এক্ষুনি তাহলে রওনা হয়ে যান, ওয়াল্ডেমারকে বললেন তিনি।
দ্য ব্রেসির দিকে তাকালেন ওয়ান্ডেমার। বললেন, তুমি যাবে নাকি আমার সাথে?
না, আমি তাঁর একটা চুলেরও ক্ষতি করবো না। কাল আমাকে বন্দী করার পরও উনি আমাকে ছেড়ে দিয়েছেন। আমি কথা দিয়েছি, ভবিষ্যতে তাঁর কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করবো মা।
দ্য ব্রেসির দিকে তীব্র এক দৃষ্টি হেনে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলেন ওয়াল্ডেমার।
.
দ্রুত ঘোড়া ছুটিয়ে হাউস অভ দ্য টেম্পলারস-এ পৌঁছুলেন আইজাক।
সবুজ সমভূমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে বিশাল টেম্পলস্টো মঠ। পরিখা দিয়ে ঘেরা দুর্গের মতো বিশাল দালানটা। দুজন কালো পোশাক পরা সৈন্য পাহারা দিচ্ছে ঝুলসেতু। দুর্গ প্রাচীরের আদলে তৈরি পুরু দেয়ালের ওপর টহল দিচ্ছে আরো বেশ কজন সৈনিক।
টেম্পলার নাইটদের গ্র্যান্ডমাস্টার লোকটা বৃদ্ধ। গায়ের চামড়া ঝুলে পড়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও হাঁটেন ঋজু হয়ে। শাদা ধবধবে পোশাক গায়ে। চোখের দৃষ্টিতে এখনও যেন আগুন জ্বলে। সদ্য প্যালেস্টাইন থেকে ফিরেছে এমন এক টেম্পলারের সাথে হাঁটছিলেন তিনি মঠের বাগানে। প্যালেস্টাইনের সর্বশেষ খবরাখবর সংগ্রহ করছিলেন সদ্য আসা টেম্পলারের কাছ থেকে।
ব্রাদার কনরাড অবশেষে বললেন গ্র্যান্ডমাস্টার, ইংল্যান্ডের নাইট টেম্পলারদের আচরণ দেখে খুবই মর্মাহত আমি।
হওয়ারই কথা। ফ্রান্সের ওদের চেয়েও খারাপ আচরণ করে এরা।
হ্যাঁ, এখানে সবচেয়ে ধনী লোক কারা খুঁজতে যাও, দেখবে টেম্পলাররাই। দেশের বেশিরভাগ সম্পদ কুক্ষিগত করে ফেলছে। টেম্পলার নাইট হওয়ার সময় যে শপথ নিয়েছিলো তা গুলিয়ে খেয়েছে সবাই। টেম্পলার হওয়ার সময় শাদাসিধে জীবন-যাপনের শপথ নিয়েছে, কিন্তু করছে কি? সবচেয়ে দামী কাপড়টা, সবচেয়ে ভালো খাবারটা না হলে চলে না ইংরেজ টেম্পলারদের সবচেয়ে দুঃখজনক কি জানো, কনরাড, এখানকার টেম্পলারদের অনেকেই সত্য বিশ্বাসের পথ থেকে সরে গিয়ে যতসব আজগুবী জাদু বিদ্যায় বিশ্বাসী হয়ে পড়েছে। কিন্তু আমি যখন এসেছি গ্র্যান্ডমাস্টার হয়ে, সবাইকে সোজা করে ছাড়বো। করবোই, তুমি দেখে নিও।
কনরাড কোনো জবাব দেয়ার আগেই এক ভৃত্য এসে জানালো, এক ইহুদী এসেছে। বুড়ো। স্যার ব্রায়ান দ্য বোয়া-গিলবার্টের সাথে কথা বলতে চায়।
বোয়া-গিলবার্ট! এই লোকটা, ব্রাদার কনরাড, সবচেয়ে খারাপগুলোর ভেতরেও খারাপ। দেখি ব্যাটা ইহুদী কি চায় ওর কাছে। ভূত্যের দিকে ফিরলেন গ্র্যান্ডমাস্টার। ভেতরে নিয়ে এসো–লোকটাকে, নির্দেশ দিলেন তিনি।
এলেন আইজাক প্রায় আভূমি নত হয়ে অভিবাদন জানালেন গ্র্যান্ড মাস্টার ও তার সঙ্গীকে।
শোনো, ইহুদী. শুরু করলেন গ্র্যান্ডমাস্টার, আমার সময় অত্যন্ত মূল্যবান। সুতরাং যা জিজ্ঞেস করবো, সংক্ষেপে সঠিক জবাব দেবে। যদি উল্টোপাল্টা বা মিথ্যে কথা বলো, তোমর জিভ ছিঁড়ে নেয়া হবে। এক মুহূর্ত থামলেন তিনি। তারপর তীক্ষ্ণ কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন, স্যার ব্রায়ান দ্য বোয়া-গিলবার্টের কাছে কি দরকার তোমার?
কি জবাব দেবেন ভেবে পেলেন না আইজাক। সত্য বলার অর্থ একজন টেম্পলারের বিরুদ্ধে কথা বলা। আর মিথ্যে বলা মানে বৃদ্ধ গ্র্যান্ড মাস্টারের কথা অনুযায়ী জিহ্বা খোয়ানো। একটু ইতস্তত করে অবশেষে তিনি বলেই ফেললেন, জরভক্স মঠের প্রায়োর অ্যামারের কাছ থেকে একটা চিঠি নিয়ে এসেছি আমি তাকে দেয়ার জন্যে।
চিঠি? আমাকে দাও।
বিনা বাক্যব্যয়ে চিঠিটা তুলে দিলেন বৃদ্ধ ইহুদী। গ্র্যান্ডমাস্টার সেটা খুলে পড়লেন।
ওহ! রীতিমতো আতঙ্কিত কণ্ঠে চিৎকার করে উঠলেন তিনি। ব্রাদার কনরাড, পড়ো। জোরে পড়ো, এই ইহুদীও যেন শুনতে পায়।
পড়লো ব্রাদার কনরাড:
স্যার ব্রায়ান দ্য বোয়া-গিলবার্ট,
রাজদ্রোহী দস্যুদের হাতে আমি বন্দী। ওদের কাছে শুনলাম, আপনি নাকি সেই ইহুদী ডাইনীকে নিয়ে পালিয়েছেন। আপনি নিরাপদে আছেন জেনে আমি আনন্দিত। তবে, ডাইনী মেয়েটার ব্যাপারে সাবধান থাকবেন! গ্র্যান্ডমাস্টার যদি মেয়েটার কথা শোনেন, ভয়ানক শাস্তি দেবেন আপনাকে। তার চেয়ে ওকে ছেড়ে দিন। মুক্তিপণ হিশেবে আপনি যে অঙ্কের অর্থই চান, দেবে ওর বাবা। চিঠিটা ত্বর হাতেই পাঠাচ্ছি।