তাহলে মুক্তিপণ হিশেবে কত দেয়া উচিত ফাদারের?। ছয়শো রৌপ্য মুদ্রা, আমার মনে হয়, খুব বেশি হবে না ওঁর পক্ষে।
ভালো কথা, বললো লক্সলি। আমি রাজি ছয়শো রৌপ্য মুদ্রায়। প্রায়োর অ্যাায়মর আপনি আমাদের ছয়শো রৌপ্য মুদ্রা দেবেন এবার বলুন, এই ই দী বৃদ্ধ কত দেবেন মুক্তিপণ?।
এক হাজার রৌপ্য মুদ্র। একটাও কম নয়। ব্যাটার ইয়র্কের বাড়ি সোনা রূপায় ঠাসা।
এক হাজার রৌপ্যমুদ্রা! আর্তনাদ করে উঠলেন আইজাক। আমার শেষ কপর্দকটা পর্যন্ত আপনারা নিয়ে নেবেন? আমার একমাত্র মেয়েকে আমি হারিয়েছি। এখন কি আমার সমস্ত সম্পদও হারাববা? ও রেবেকা! রেবেকা! তুই এখন কোথায়? হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন বৃদ্ধ। তুই বেঁচে আছিস না মরে গেছিস? আমার বাচ্চা! আমার মানিক!…।
বৃদ্ধের হাহাকার শুনে মন নরম হয়ে এলো সবারই। চুপ করে রইলো তারা! কেউ ভেবে পাচ্ছে না কি বলবে
আপনার মেয়ের চুল কি কালো? অবশেষে জিজ্ঞেস করলো একজন। কাপড়ের পাড় রূপালি জরির কাজ করা?
হ্যাঁ, হ্যাঁ। তুমি দেখেছো ওকে? ওর কোনো খবর দিতে পারবে? আগ্রহে কাঁপছে আইজাকের গলা।
টেম্পলার বোয়া-গিলবার্ট ওকে ধরে নিয়ে গেছে। আমি দেখেছি। যখন পালায় তখন আমি তীর ছোড়ার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু মেয়েটার গায়ে লাগতে পারে ভেবে ছুঁড়িনি।
ওই, কেন তুমি ছুঁড়লে না, তাই? টেম্পলারের মতো মানুষের হাতে আটকে থাকার চেয়ে মরা ভালো ছিলো ওর। ওহ! ওহ্! আমার মান সম্মান সব ধুলায় মিশে গেল!
লক্সলি মুখ ঘুরিয়ে তার সব লোকের দিকে তাকলো। দেখলে সবার দৃষ্টিতেই করুণা।
আইজাক, বললো সে। আপনার কাছ থেকে আমি পাঁচশো রৌপ্যমুদ্রা নেবো। বাকি টাকা আপনি টেম্পলার ব্রায়ানকে দেবেন কন্যার মুক্তিপণ হিশেবে। আশাকরি পাঁচশো রৌপ্যমুদ্রা পেলে আপনার মেয়েকে ছেড়ে দিতে রাজি হবে টেম্পলার।
প্রায়োর অ্যায়মারকে এক পাশে টেনে নিয়ে গিয়ে কড়া গলায় ঝুলি বললো, ফাদার, আমি এতদিন জানতাম আপনি ভালো খাওয়া দাওয়া, শিকার এসব পছন্দ করেন; কিন্তু বদমায়েশি, নিষ্ঠুরতা এসবও যে পছন্দ করেন তা কখনো শুনিনি।
মানে…মানে… তো তো করতে লাগলেন আয়মার।
মানে মানে, রেখে শুনুন। আমার মনে হয় আপনার কথা শুনবে টেম্পলার ব্রায়ান। রেবেকাকে ফিরিয়ে দিতে বলুন আপনার বন্ধুকে। বিনিময়ে ভালো দাম দেবেন আইজাক। চান তো আপনাকেও কিছু দেবেন উনি।
আমাকে ভাবনায় ফেলে দিলে দেখছি…, চিন্তিত কণ্ঠে বললেন প্রায়োর। ইহুরিকে সাহায্য করা আমাদের ধর্ম বিরুদ্ধ!…তবে…আইজাক যদি আমাদের মঠের সংস্কারের জন্যে কিছু সাহায্য দেয় তাহলে বোধ হয় আর আপত্তি করার কিছু থাকে না।
ঠিক আছে, দেবেন উনি। এবার তাহলে আপনি একটা চিঠি লিখে দিন ব্রায়ানকে।
দিচ্ছি। আমাকে একটা কলম দাও।
লেখা শেষ হতেই চিঠিটা প্রায়োরের কাছ থেকে নিয়ে পড়ে দেখলো লক্সলি। সন্তুষ্ট হয়ে এগিয়ে দিলো আইজাকের দিকে। বললো, চিঠিটা বোয়া-গিলবার্টকে দেবেন। আমার মনে হয় হাউস অভ দ্য টেম্পলারস মানে টেম্পলস্টো মঠে পাবেন ওকে। ব্রায়ান যা চায় দিয়ে দেবেন। দয়া করে এই একটা ক্ষেত্রে অন্তত টাকা পয়সা নিয়ে কোনো কৃপণতা করবেন না। আপনার কন্যার চেয়ে টাকা মূল্যবান নয়।
এতক্ষণ গভীর কৌতূহল নিয়ে এসব কাণ্ডকারখানা দেখছিলো ব্ল্যাক নাইট। এবার সে বিদায় নেয়ার জন্যে তৈরি হলো। যাওয়ার আগে লক্সলিকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো, এবার নিশ্চয়ই বলবে, কে তুমি?
আমি আমার দেশ ও রাজার একজন বন্ধু, জবাব দিলো ললি। এর বেশি আর কিছু আমি এখন বলতে পারবো না। নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন আমার মতো আপনারও কিছু গোপন কথা আছে। আমি তো তা জানতে চাইছি না।
বেশ। আশা করি পরের বার যখন আমাদের দেখা হবে, আরো ভালোভাবে আমরা জানবো একে অপরকে। এই আমার হাত, সাহসী দস্যু।
আর এই যে আমার, সাহসী নাইট।
দুটো হাত এক হলো।
লাফ দিয়ে ঘোড়ায় চাপলো ব্ল্যাক নাইট। ছুটিয়ে দিলো বনের পথে।
১৮. ইয়র্কের দুর্গ প্রাসাদ
ইয়র্কের দুর্গ প্রাসাদে বিরাট এক ভোজের আয়োজন করেছেন রাজপুত্র জন। তার মিত্র যত নাম করা লোক আছে সবাইকে দাওয়াত করেছেন। এদের সহায়তায়ই রাজা রিচার্ডের সিংহাসন দখল করার পরিকল্পনা করেছেন জন।
পান ভোজন চলছে। মাঝে মাঝেই উৎফুল্ল, পরিতৃপ্ত রাজপুরুষরা চিৎকার করে উঠছে:
রাজপুত্র জন দীর্ঘায়ু হোন!
এই সময় এক দূত ভয়ানক এক দুঃসংবাদ নিয়ে এলো। পতন হয়েছে টরকুইলস্টোন দুর্গের। রেজিনাল্ড ট্রুত দ্য বোয়েফ, ব্রায়ান দ্য বোয়া গিলবার্ট ও মরিস দ্য ব্রেসি তিনজনই নিহত। ওদের সঙ্গে যারা ছিলো তাদেরও বেশিরভাগই হয় নিহত নয়তো মারাত্মক আহত। অর্থাৎ এ মুহূর্তে যদি প্রয়োজন পুড়ে ওদিক থেকে একজন লোকের সাহায্যও জন পাবেন না। খবরটা শুনে রীতিমতো মুষড়ে পড়লেন রাজপুত্র। কারণ এই তিন নাইট ছিলো তার শক্তির মূল উৎস। ওদের ছাড়া কি করে তিনি সিংহাসন দখলের লড়াইয়ে নামবেন? মুহূর্তে থেমে গেল সব উল্লাস, হৈ-চৈ, ফুর্তি। রাজপুত্র জনের সাথে সাথে আর সবাইও বসে রইলো মুখ গোমড়া করে।
হঠাৎ একটা কোলাহন শোনা গেল হল কামরার বাইরে। কৌতূহলী হয়ে তাকালেন রাজকুমার জন। দরজায় দেখা গেল দ্য ব্রেসিকে।
তার বর্ম, ঢাল, শিয়োস্ত্রাণ রক্ত, ধোঁয়া আর কাদায় নোংরা হয়ে আছে, তাকে দেখেই হাসি ফুটে উঠলো জনের মুখে।