এরপর সেড্রিক ওয়াম্বার দিকে তাকালেন। বললেন, এদিকে আয়, বোকা-গাধা-ভড়।
এই নাকি প্রাণ বাঁচানোর পুরস্কার! বিড় বিড় করতে করতে এগিয়ে এলো ওয়া।
সেড্রিক উঠে জড়িয়ে ধরলেন ওকে।
কি করে তোর ঋণ শোধ করবো বল তো, হাঁদা? আমার জন্যে প্রাণ দিতে গেছিলি তুই…, বলতে বলতে গলা ধরে এলো বদমেজাজী লোকটাব। সুহৃদ অ্যাথেলস্টেনের মৃত্যুতেও যে চোখে জল দেখা যায়নি সে চোখে টল টল করে উঠলো জল।
চোখের জলে তো আমার ঋণ শোধ হবে না, স্বভাবসুলভ চপল কণ্ঠে বললো ওয়াম্বা। শোধ যদি করতেই চান আমার দোস্ত গার্থকে ক্ষমা করুন। আপনার ছেলের সেবা করার জন্যেই ও পালিয়ে গিয়েছিলো।
ওকে শুধু ক্ষমা নয়, পুরস্কারও দেবো। গার্থের দিকে ফিরলো সেড্রিক। এদিকে এসো, গার্থ। হাঁটু গেড়ে বসো। আজ থেকে তুমি আর ক্রীতদাস নও। আর দশজনের মতোই স্বাধীন মানুষ। আমার জমিদারীতে কিছু জমি দেবো তোমাকে। স্বাধীনভাবে চাষবাস করবে।
লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো গার্থ। মাথার উপর দুহাত তুলে এক পাক ঘুরে নিয়ে তাকালো সাবেক মনিবের দিকে।
আপনার মতো দয়াশীল লোক হয় না, স্যার! চিৎকার করে উঠলো সে। আমার গলার এই আংটা খুলে দেবে কে?
ওয়াম্বা, তুইও বোস হাঁটু গেড়ে, আদেশ করলেন সেড্রিক।
বসলো ভাঁড়।
তুইও আজ থেকে স্বাধীন, সেড্রিক বললেন গার্থের গলার আংটা খুলে দে, তোরটা খুলে দেবে গার্থ।
এই সময় ঘোড়ায় চেপে সেখানে উপস্থিত হলো রোয়েনা। লক্সলি ও তার দলের সবাই উঠে দাঁড়িয়ে তাকে অভ্যর্থনা করলো। সবাইকে ধন্যবাদ জানালো রোয়েনা।
একপাশে মুখ নিচু করে বসে ছিলো বন্দী দ্য ব্রেসি। সে এবার উঠে দাঁড়ালো। অনুতপ্ত গলায় বললো, আপনার সাথে যে জঘন্য আচরণ করেছি সে জন্যে ক্ষমা চাইছি, লেডি রোয়েনা।
ক্ষমা করলাম আপনাকে, ঘোড়া থেকে নামতে নামতে বললো রোয়েনা। কিন্তু আপনার পাগলামিতে যে ক্ষতি হয়েছে, সবাইকে যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সে কথা ভুলতে পারবো না কিছুতেই।
তোমাকে মেরে ফেললেই হতো উচিত শাস্তি, বলে উঠলেন সেড্রিক। অবশ্য না মেরেও যে খুব খারাপ হয়েছে তা নয়। তুমি যে অন্যায় করেছে, সে জন্যে যে অন্তর্জালা ভোগ করবে আজীবন সে-ও শাস্তি হিশেবে কম নয়।
উঠে দাঁড়ালেন সেড্রিক। আর সময় নষ্ট করতে চান না। এক্ষুনি রদারউডের পথে রওনা না হলে পৌঁছুতে দেরি হয়ে যাবে। ব্ল্যাক নাইটের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন তিনি। উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে দারউডে আমন্ত্রণ জানালেন তাকে।
সাধারণ অতিথি হিশেবে নয়, বললেন সেড্রিক, আমার পুত্র বা ভাইয়ের মতো সাদরে আপনাকে অভ্যর্থনা জানাবো আমার প্রাসাদে।
আপনার আমন্ত্রণ গ্রহণ করলাম, সেড্রিক, জবাব দিলো নাইট। খুব শিগগিরই আপনার রদারউডে আমি আসবো। এবং যখন আসবো বিশেষ
একটা জিনিস আমি চাইবো আপনার কাছে।
কি তা এখন আমি শুনতে চাইবে না। শুধু এটুকু বলবো, ধরে নিন জিনিসটা আপনি পেয়ে গেছেন।
দেখবো, আজকের এই প্রতিশ্রুতির কথা সেদিন আপনার কেমন মনে থাকে!
দেখবেন, বলে দলবল নিয়ে রওনা হয়ে গেলেন সেড্রিক। গাৰ্থ আর ওয়াম্বা রয়ে গেল ব্ল্যাক নাইটের নির্দেশে। তাদের এক পাশে ডেকে নিয়ে কানে কানে কি যেন বললো নাইট। অমনি মাথা ঝাঁকিয়ে বনের ভেতর অদৃশ্য হয়ে গেল দুজন।
লক্সলি এবার এগিয়ে এলো ব্ল্যাক নাইটের দিকে।
স্যার নাইট, আপনার সাহায্য না পেলে আমাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হতো, বললো সে। আমি এবং আমার দলের সবাই আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ। অনুগ্রহ করে এই সব লুটের মাল থেকে আপনার পছন্দ মতো কিছু একটা গ্রহণ করুন। আমরা সবাই খুব খুশি হবো।
বেশ, বেশ, আমি তোমার উপহার সানন্দে গ্রহণ করবো। আমার পছন্দ দ্য ব্রেসিকে। ওকে তুলে দাও আমার হাতে।
কোনো আপত্তি নেই আমার। দ্য ব্রেসির ভাগ্য আপনি ওকে নিয়ে যেতে চাইছেন। এখানে থাকলে যে দুর্দশা হতো তার হাত থেকে বেঁচে গেল বদমাশটা।
দ্য ব্রেসির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ব্ল্যাক নাইট।
তোমাকে মুক্তি দিলাম, দ্য ব্রেসি, বললো সে। যেখানে খুশি চলে যেতে পারো। অতীতে যা করেছে তা হয়তো আমরা ভুলে যাবো যদি ভবিষ্যতে সাবধান হও।
দ্য ব্রেসি আজানু নত হয়ে কুর্নিশ করলো ব্ল্যাক নাইটকে।
আপনার কথা আমার মনে থাকবে, স্যার নাইট, বলে সে অদৃশ্য হয়ে গেল বনের ভেতর।
লক্সলি এবার তার গলা থেকে একটা চমৎকার শিঙা খুলে নিলো। ব্ল্যাক নাইটকে বললো, সেদিনের টুর্নামেন্টে আমি এটা পুরস্কার পেয়েছি। কালকের যুদ্ধে আপনি যে বীরত্ব দেখিয়েছেন তার স্মৃতিচিহ্ন হিশেবে এটা আমি আপনাকে দিতে চাই। আপনি নিলে খুশি হবো।এই শেরউড বনে যদি কখনো কোনো বিপদে পড়েন তিনবার ফুঁ দেবেন এই শিঙায়, এমন করে, শিঙাটা তিনবার বাজিয়ে দেখালো লক্সলি, আমার লোকজন এসে আপনাকে সব রকম সাহায্য করবে।
আমি নিচ্ছি তোমার এই উপহার, বললো ব্ল্যাক নাইট। অনেক ধন্যবাদ। প্রয়োজন হলে নিশ্চয়ই তোমাদের সাহায্য চাইবো।
কিন্তু আমাদের বীর পুরুষ সন্ন্যাসী বাবাজি কোথায়? হঠাৎ মনে পড়ে গেছে এমন ভঙ্গিতে প্রশ্ন করলো লক্সলি। যেসময় খাবার দাবারের বন্দোবস্ত হয় বা লুটের মাল ভাগাভাগি হয় সে সময় তো কখনো তাকে গর হাজির থাকতে দেখিনি! আজ হলো কী?
লক্সলির কথা শেষ হতে না হতেই গম্ভীর একটা গলা শোনা গেল: পথ ছাড়ো! ভালো মানুষের দল পথ ছাড়ো! বিজয়ী বীর আর তার বন্দীর জন্যে পথ ছেড়ে দাও!