তাহলে আর বাকি থাকলো কে? বললো অ্যাথেস্টেন। ইহুদী দুটোর কথা জানি না, লেডি রোয়েনা আমার ভবিষ্যৎ স্ত্রী। ওকে তো আমি কিছুতেই এখানে ফেলে রেখে যেতে পারি না। আর এই বোকা ভাঁড় ওর মনিব মানে, আমার অত্যন্ত সুহৃদ একজনকে বাঁচিয়েছে। ওকেও যদি না ছেড়ে দাও, এক পেনিও তোমরা পাবে না আমার কাছ থেকে।
তোমার মতো একজন স্যামন দাসের ভবিষ্যৎ স্ত্রী লেডি রোয়েনা! সবিস্ময়ে উচ্চারণ করলো দ্য ব্রেসি।
দেখ, হে নরম্যান, মুখে তুমি আমাকে দাস বলো আর যা-ই বলো, বংশমর্যাদায় আমি যে তোমার মতো কাপুরুষ গুণ্ডার চেয়ে অনেক উপরে তা আমার চেয়ে তুমিই ভালো জানো, গর্বিত কণ্ঠে বললো অ্যাথেস্টেন। আমার পূর্ব পুরুষরা এদেশের রাজা ছিলেন। চারণ কবিরা তাদের মহিমা কীর্তন করে বেড়াতো গ্রামে গঞ্জে। তাদের কবরের ওপর তৈরি হয়েছে গির্জা।
জবাবটা ভালোই দিয়েছে স্যাক্সনের বাচ্চা, কি বলো, দ্য ব্রেসি? হাসতে হাসতে বললো বোয়া-গিলবার্ট।
যা মনে আসে বলতে থাকো, বাবা স্যাক্সন, অ্যাথেলস্টেনকে বললো দ্য ব্রেসি! তোমার মহান বাক্যে মুক্তি পাবে না লেডি রোয়েনা।
এই সময় এক পার্শ্বচর এসে ত দ্য বোয়েফকে বললো, স্যার, এক পাদ্রী এসেছে ফটকে, ভেতরে ঢুকতে চাইছে।
সত্যি সত্যি পাদ্রী? ওর কাপড় চোপড় সব ভালো করে পরীক্ষা করে দেখ। যদি না হয়, ওর চোখগুলো উপড়ে ফেলবি।
সত্যিই পাদ্রী, স্যার। আমি চিনি ওকে। আপনিও চেনেন। জরভক্স মঠের প্রায়োর অ্যায়মারের সাথে অনেকবার এসেছেন আমাদের দুর্গে। নাম ব্রাদার অ্যামব্রোজ।
নিয়ে আয় ওকে, আদেশ করলো রেজিনাল্ড। আর এই স্যাক্সন দুটোকে নিয়ে যা এখান থেকে। যেখানে ইলো সেখানেই আটকে রাখ।
ওয়াম্বা যখন ঘর থেকে বেরোচ্ছে ব্রাদার অ্যামব্রোজ তখন ঢুকছে। তাকে দেখেই অনাবিল এক হাসি ফুটে উঠলো ওয়াম্বার মুখে।
এই তো একজন আসল প্যাক্স ভবিসকাম! মন্তব্য করলো সে।
রুদ্ধশ্বাসে ঘরে ঢুকলো ব্রাদার অ্যামব্রোজ। উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছে যেন।
ওহ, শেষ পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে আসতে পেরেছি, বললো সে। আপনারা তো প্রায়োর অ্যামারের বন্ধু। উনি… দম নেয়ার জন্যে থামলো ব্রাদার অ্যামব্রোজ।
হ্যাঁ, কি হয়েছে প্রায়োর অ্যায়মারের? জলদি বলো নষ্ট করার মত সময় নেই আমাদের।
গুপ্তারা ওকে ধরে নিয়ে গেছে। ওঁর কাছে যত সোনা দানা ছিলো সব নিয়ে নিয়েছে। তার পরও ছাড়েনি, বলছে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা না দিলে ছাড়বে না। প্রায়োর আপনাদের সাহায্য চেয়েছেন।
আমরা সাহায্য করবো? কি ভাবে? বললো দ্রুত দ্য বোয়েফ। আমাদেরই কে সাহায্য করে তার ঠিক নেই, আর আমরা করবো সাহায্য আমরা যে কজন এখানে আছি তার বিশগুণ লোক আমাদের ঘিরে রেখেছে, যে কোনো মুহূর্তে আক্রমণ করে বসবে।
হ্যাঁ, এ সম্পর্কেও আমি বলতে যাচ্ছিলাম, ব্রাদার অ্যামব্রোজ বললো। শয়ে শয়ে রাজদ্রোহী গুণ্ডা জড় হয়েছে বনের প্রান্তে। কিছুক্ষণের মধ্যেই এই দুর্গ আক্রমণ করবে…
এক্ষুনি চলো, বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বললো ত দ্য বোয়েফ, দেয়ালের ওপর উঠে দেখি কি করছে ওরা!
তাড়াতাড়ি হলঘর থেকে বেরিয়ে দেয়ালের ওপর গিয়ে উঠলো সবাই। ব্রাদার অ্যামব্রোজ সত্যি কথাই বলেছে। শয়ে শয়ে গুণ্ডা, এখন আর বনের প্রান্তে নেই, দুর্গের সামনে এসে গেছে। আক্রমণ করার জন্যে তৈরি।
দ্য ব্রেসি, বোয়া-গিলবার্ট, আর তো দেরি করা যায় না…, শুরু করলো রেজিনান্ড।
স্যার নাইট! স্যার নাইট! তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো ব্রাদার অ্যামব্রোজ। প্রায়োর অ্যায়মারের অনুরোধ…
এই, কে আছিস, এই মূখটাকে তালাচাবি দিয়ে রাখ তো! চিৎকার করে বললো রেজিনাল্ড, লড়াই শেষ হওয়ার আগে ছাড়বি না। হ্যাঁ, যা বলছিলাম, দ্য ব্রেসি তোমার যে দুচারজন লোক আছে তাদের নিয়ে তুমি পুব দিকের দেয়াল সামলাবে; বোয়া-গিলবার্ট, তুমি পশ্চিমের দেয়াল, আর আমি নিজে থাকবো সামনের ফটকে। এই, কে আছিস ছুঁড়ে মারার জন্যে তেল গরম করা হয়েছে?
দেয়ালের ওপর দিয়ে একটু ঝুঁকে তাকালো বোয়া-গিলবার্ট। তারপর দ্য ব্রেসির দিকে ফিরে বললো, বেশ শৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে ব্যাটাদের ভেতর। নিশ্চয়ই যোগ্য কেউ নেতৃত্ব দিচ্ছে। ভেবে পাচ্ছি না কে-হতে পারে।
আমি দেখতে পাচ্ছি লোকটাকে, বললো দ্য ব্রেসি। ঐ যে দেখ, ঐ দিকে। ব্ল্যাক নাইট। অ্যাশবিতে আমাদের বিপক্ষে লড়েছিলো।
কই? আমি তো দেখছি না!
ঐ যে। সবচেয়ে বড় দলটার সামনে।
হ্যাঁ, এবার দেখেছি। দাঁড়াও, বাবা ব্ল্যাক নাইট, সেদিনের পরাজয়ের শোধ আজ নেবো।
নিজের নিজের লোকদের নিয়ে যার যার জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালো নাইটরা। প্রস্তুত আক্রমণ ঠেকানোর জন্যে।
১৬. দুর্গের ওপর দিককার ছোট একটা কামরা
দুর্গের ওপর দিককার ছোট একটা কামরায় রাখা হয়েছে আহত আইভানহোকে। বুড়ি উলরিকার ওপর দেয়া হয়েছিলো তার সেবা যত্নের ভার। অরটা যখন রেবেকা নিজের কাঁধে তুলে নিতে চেয়েছে তখন আপত্তি করা দূরে থাক রীতিমতো খুশি হয়েছে বুড়ি। রেবেকাকে আইভানহোর ঘরে পৌঁছে দিয়ে নিজের কাজে লেগে গেছে সে। সে কাজ যে কি, সে ছাড়া আর কেউ তা জানে না।
আইভানহোর সেবা করার সুযোগ পেয়ে দারুণ খুশি রেবেকা। ওর বাবাকে বাঁচিয়েছিলো বলেই হোক, বা অন্য কোনো কারণেই হোক, আইভনহো রোয়েনাকে ভালোবাসে জানা সত্ত্বেও রেবেকা ভালোবেসেছে আইভানহোকে। মা যেমন করে অসুস্থ সন্তানের সেবা করে তেমন যত্নে ও শুশ্রুষা করছে আইভানহোর।