হ্যাঁ, সেরকমই তো মনে হলো। আপনি যে এক ফোটা দয়া দেখাবেন
তা বোধহয় ওরা বুঝতে পেরেছে।
ভালো। আপনি আসুন আমার সাথে।
কোথায়? আমাকেও কি বন্দী করে রাখবেন?
আপনি পাদ্রী না গাধা, হ্যাঁ? আপনাকে বন্দী করে আমার দুপয়সারও লাভ হবে?
মনে হয় না।
তাহলে কেন আপনাকে বন্দী করবো? আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি দুর্গের পেছন দিকে, গোপন দরজা দিয়ে বের করে দেবো। আসুন।
রেজিনান্ডের পেছন পেছন এগোলেন সেড্রিক। যেতে যেতে দুর্গরক্ষার কিছু কিছু গোপন ব্যবস্থা, সৈন্যদের ঢোকা, বেরোনোর গোপন পথ ইত্যাদি দেখতে পেলেন তিনি। মনে মনে হাসলেন।
বাইরে যে লোকগুলো আপনাকে ধরেছিলো ওরা আমার এই দুর্গ আক্রমণ করতে চায়, হাঁটতে হাঁটতে বলে চললো ত দ্য ববায়েফ। ওরা আবার যেন আপনাকে ধরতে না পারে সেজন্যে পেছন দরজা দিয়ে বের করে দিচ্ছি। বিনিময়ে আমার একটা কাজ করে দিতে হবে। পারবেন?
কি কাজ?
আপনি নরম্যান জানেন?
এক অক্ষরও না।
তাহলে এই চিঠিটা নিন, পোশাকের ভেতর থেকে একটা চিঠি বের করে সেড্রিকের হাতে দিলো রেজিনা। এটা যত তাড়াতাড়ি পারেন ফিলিপ দ্য ম্যালভয়সিঁর দুর্গে পৌঁছে দেবেন। আমার পক্ষ থেকে ওকে বলবেন চিঠিটা হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন ইয়র্কে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, বুঝতে পেরেছেন আমার কথা?
হ্যাঁ, স্যার নাইট।
যদি কাজটা সময় মতো করে আবার এখানে ফিরে আসেন, দেখবেন শেয়াল কুকুরের মতো মরে পড়ে আছে স্যাক্সন শুয়োরগুলো।
জি।
ইতোমধ্যে ওঁরা পৌঁছে গেছেন দুর্গের পেছনে ছোট্ট একটা দরজার সামনে। দরজাটা খুললো ত দ্য বোয়েফ। তিনটে স্বর্ণমুদ্রা ধরিয়ে দিলো সেড্রিকের হাতে। বললো, চিঠিটা যদি নিরাপদে পৌঁছে দিতে পারেন, আরো পাবেন।
হ্যাঁ-না কিছু বললেন না সেড্রিক। একটু ঝুঁকে বেরিয়ে গেলেন দরজা গলে। দুর্গ থেকে নিরাপদ দূরত্বে চলে আসার পর মুদ্রা তিনটে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন তিনি। দাঁতে দাঁত চেপে বললেন, শয়তান নরম্যান, তোর সঙ্গে সঙ্গে চুলোয় যাক তোর পয়সাও।
.
হলঘরে ফিরে এলো ফ্ৰঁত দ্য বোয়েফ। এক ভৃত্যকে ডেকে আদেশ করলো, সেড্রিক আর অ্যাথেলস্টেনকে নিয়ে এসো এখানে।
কিছুক্ষণের ভেতর হলঘরে পৌঁছে গেল দুই বন্দী।
তারপর, মহামহিম স্যাক্সন জমিদার ও রাজপুত্র, কৌতুকের সুরে বললো রেজিনান্ড, কেমন লাগছে আমার টরকুইলস্টোন দুর্গে থাকতে?
ওহ দারুণ! চটপট জবাব দিলো সেড্রিকবেশী ওয়া। নিজের বাড়িতেও কখনো এত আরামে থাকিনি।
আচ্ছা! দাঁড়াও এবার তাহলে আসল আরামের ব্যবস্থা করছি। গম্ভীর হয়ে উঠলো রেজিন্যান্ডের কণ্ঠস্বর। তোমাদের যদি মুক্তি দেই কত টাকা আমাকে দেবে? ভালো করে ভেবে তারপর বলো। যদি না দাও তা হলে কি করবো জানো তো? ঐ যে, ঐ জানালার সঙ্গে পা উপরে মাথা নিচে দিয়ে ঝুলাবো। ও ভাবেই থাকবে যতক্ষণ না কাকে ঠুকরে তোমাদের হাড় পরিষ্কার করে ফেলে। সেড্রিক, তুমি আগে বলো, কত দেবে?
এক পেনিও না, জবাব দিলো ওয়া। জন্ম থেকেই আমার মগজ উল্টো হয়ে আছে। এখন তুমি যদি উল্টো করে ঝুলাও তাহলে বোধ হয় এতদিন পরে ওগুলো একটু সোজা হওয়ার সুযোগ পাবে।
এত বড় স্পর্ধা! চিৎকার করে উঠে ভয়ানক বেগে এক চড় কষালো ফ্ৰঁত দ্য ববায়েফ ওয়াম্বার মাথায়। সময়মতো মাথাটা নিচু করে নিলো ওয়া। ফলে চড়টা লাগলো না, কিন্তু সেড্রিকের টুপিটা উড়ে চলে গেল তার মাথা থেকে। এবার আরো রেগে গেল রেজিনাল্ড। লাফ দিয়ে উঠে হ্যাচকা টানে ছিঁড়ে ফেললো ওয়ার কোট। অমনি বেরিয়ে পড়লো তার গলার দাসত্বের প্রতীক পেতলের আংটাটা।
এই কুত্তার দল, কাকে নিয়ে এসেছিস তোরা? ভৃত্যদের দিকে তাকিয়ে গর্জে উঠলো ফ্ৰঁত দ্য বোয়েফ।
ঠিক সেই সময় ঘরে ঢুকেছে দ্য ব্রেসি।
আমি বোধহয় বলতে পারি কে ও, জবাব দিলো সে। এ হচ্ছে সেড্রিকের ভড়।
আসল সেড্রিককে নিয়ে আয়, হতভাগার দল, ভৃত্যদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করলো রেজিনান্ড।
যাও যাও, ওয়াম্বা বললো, সেড্রিককে তো পাবে না, আরো কয়েকজন ভড়কে পাবে, ধরে নিয়ে এসো তাদের।
বলতে চাইছে কি বদমাশটা? দ্য ব্রেসিকে জিজ্ঞেস করলো ত দ্য ববায়েফ।
আমি বুঝতে পেরেছি। পাদ্রীর পোশাক পরে একটু আগে যে লোকটা বেরিয়ে গেল সে-ই সেড্রিক।
হায় হায়, আমিই তো তাকে গুপ্ত পথে প্রাসাদের বাইরে রেখে এলাম! হতাশার সুর ফ্ৰঁত দ্য বোয়েফের গলায়। পর মুহূর্তে গর্জে উঠলো সে, ঠিক আছে, এর ফল তুই পাবি, ব্যাটা ভাঁড়! তোকে আমি মিনারের ওপর থেকে ছুঁড়ে ফেলবো। তখন কেমন ভাঁড়ামি করতে পারিস দেখবো!
অ্যাথেস্টেনের দিকে ফিরলো সে, এবার তুমি বলো, কত টাকা দেবে যদি তোমাকে ছেড়ে দেই?
এক মুহূর্ত ভাবলো অ্যাথেলস্টেন। তারপর বললো, আমাকে এবং আমার সব সঙ্গীদেরকে যদি ছেড়ে দাও, এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা তোমাকে দেবো।
বেশ তাতেই আমি রাজি, তবে একটা শর্ত আছে, বাইরের ঐ গুণ্ডাগুলোকে তুমি সরাবে এখান থেকে, যেভাবে পারো।
চেষ্টা করবো, কথা দিচ্ছি।
বেশ, আমি তোমাকে ছেড়ে দেবো। তবে ইহুদী আইজাক কিন্তু তোমার সঙ্গীদের ভেতর পড়বে না।
ওর মেয়ে রেবেকাও না, বলে উঠলো বোয়া-গিলবার্ট।
লেডি রোয়েনাও না, বললো দ্য ব্রেসি।
এই বোকা ভাঁড়টাও না, যোগ করলো রেজিনাল্ড নিজে। ওকে আমি নিজের হাতে ধাক্কা মেরে ফেলবো মিনারের ওপর থেকে।