শ দুয়েক তো হবেই, স্যার।
যখনই তোমাদেরকে আমার দুর্গ ব্যবহার করতে দেই, এ ধরনের কিছু কিছু ঘটবেই, ঝঝের সাথে বললো রেজিনান্ড। মহা বিপদে পড়া গেল দেখছি! এক মুহূর্ত থেমে আবার বললো, তখনই বলেছিলাম, ভালো করে ভেবে দেখ এখানেই আনবে কি না।
এত ভয় পাচ্ছো কেন তুমি, রেজিনান্ড! বিরক্ত হয়ে বললো টেম্পলার
ভয় পাব না? ওদের যে নেতা, দুর্দান্ত সাহস তার। কোনো কিছুতেই তার পরোয়া নেই। তবে কামান, মই, এবং সুদক্ষ অধিনায়ক ছাড়া এ দুর্গ জয় করা সম্ভব নয়, এই যা ভরসা।
আমার তো মনে হয় আধ ঘণ্টার ভেতর আমরা ঐ দুশো লোককে শেষ করে দিয়ে আসতে পারবো, বললো টেম্পলার। আমরা একজনই ওদের বিশ জনের সমান। তোমার লোকদের সব ডাক দাও, এক্ষুনি হতভাগাগুলোকে আক্রমণ করবো আমি।
ডাক দেবো! এখানে কেউ থাকলে তো ডাক দেবো। যুদ্ধ করার মতো যত লোক ছিলো সবাইকে ইয়র্কে পাঠিয়ে দিয়েছি। দ্য ব্রেসি, তোমার লোকরাও তো সব চলে গেছে, না?
হ্যাঁ। ইয়র্কে একটা খবর পাঠালে কেমন হয়?–ওরা চলে আসতো।
পাঠাতে পারলে তো ভালোই হয়, কিন্তু পাঠাবোটা কি করে? পুরো দুর্গ ওরা ঘিরে ফেলেছে। প্রতিটা পথে পাহারা রেখেছে। একটা মাছিও ওদের অগোচরে বেরোতে পারবে না এখান থেকে। চুপ করে গিয়ে কিছুক্ষণ ভাবলো ফ্ৰঁত দ্য বোয়েফ। তারপর বললো। আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে–।
কি? এক সাথে প্রশ্ন করলো বোয়া-গিলবার্ট আর দ্য ব্রেসি।
চিঠিটার একটা জবাব দিতে হবে। বোয়া-গিলবার্ট, আমার পক্ষ থেকে তুমিই লেখো। আমি বলছি–।
কলম নয়, তলোয়ার দিয়ে জবাব দিলেই ভালো হতো, বললো বোয়াগিলবার্ট। তবু তুমি যখন বলছো লিখছি। কাগজ-কলম টেনে নিলো সে।
বলতে লাগলো ফ্ৰঁত দ্য বোয়েফ। নরম্যান ভাষায় লিখতে লাগলো টেম্পলার। লেখা শেষ হতেই রেজিনা বললো, হ্যাঁ, পড় তো একবার।
পড়লো ব্রায়ান:
রেজিনাল্ড ট্রুত দ্য বোয়েফ ও তার মিত্ররা ক্রীতদাস ও রাজদ্রোহী গুণ্ডাদের চোখরাঙানীকে ভয় করে না। ব্ল্যাক নাইট যদি সত্যিই তাদের সাথে হাত মিলিয়ে থাকে তাহলে বলতে হবে আসলে সে কোনো নাইটই নয়।
আজ দুপুরের আগেই বন্দীদের প্রাণদণ্ড কার্যকর করা হবে। সুতরাং তাদের শেষ স্বীকারোক্তি শোনার জন্যে তোমরা ইচ্ছে হলে একজন পাদ্রী পাঠাতে পারো।
.
গার্থ এবং ওয়াম্বার দূত দুর্গ ফটকে অপেক্ষা করছিলো। তার হাতে দিয়ে দেয়া হলো চিঠিটা। কিছুক্ষণের ভেতর যথাস্থানে পৌঁছে গেল সেটা। এতক্ষণ সবাই অধীর আগ্রহে বসে ছিলো এই চিঠির জন্যে।
দেখা গেল এপক্ষে একমাত্র ব্ল্যাক নাইটই নরম্যান ভাষা জানে। সে চিঠিটা পড়ে স্যাক্সন ভাষায় অনুবাদ করে শোনালো সবাইকে।
জমিদার সেড্রিককে হত্যা করবে! আর্তনাদ করে উঠলো ওয়াম্বা। আপনি নিশ্চয়ই ভুল পড়েছেন, স্যার নাইট।
না, এই কথাই এখানে লেখা আছে: আজ দুপুরের আগেই বন্দীদের প্রাণদণ্ড কার্যকর করা হবে।
খালি হাতেই ওদের এই দুর্গ আমরা মাটিতে মিশিয়ে দেব, গর্জে উঠলো গার্থ।
হ্যাঁ, খালি হাত ছাড়া তো আর কিছু নেই আমাদের, বললো ওয়া।
আমার মনে হয় ওদের একটা চাল এটা, চিন্তিত কণ্ঠে বললো লক্সলি। কিছু সময় হাতে পেতে চায় আসলে।
দুর্গে ওদের কতজন লোক আছে জানতে পারলে ভালো হতো, ব্ল্যাক নাইট বললো। ওদের প্রস্তাব মতো তাহলে পাঠানো যাক কাউকে। কে যাবে? আমার মনে হয়, কপম্যানহারে মাননীয় সন্ন্যাসী, আপনিই যোগ্য লোক।
না, না, ললি আমাকে কি নামে ডাকছিলো শোনোনি? বললেন সন্ন্যাসী। আমি গেলে ওরা ঠিকই ধরে ফেলবে।
তাহলে কে যাবে? পাদ্রী-পুরুত তো আমাদের ভেতর আর কেউ নেই।
কাউকে সাজিয়ে পাঠাতে হবে।
কাকে?
সবাই চুপ। ঝুঁকিপূর্ণ কাজটায় যেতে রাজি নয় কেউ।
জ্ঞাণী গুণীরা কেউ যখন যেতে চাইছে না তখন বোকা-গাধা-ভাঁড় আমিই যাই, বললো ওয়া।
সন্ন্যাসী তার গাউন ও হুড খুলে দিলেন। পরে নিলো ওয়া। সঙ্গীদের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর মুখে পাদ্রীদের অনুকরণে বললো প্যাক্স ভবিসকাম। তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে টরকুইলস্টোন দুর্গের দিকে হাঁটতে শুরু করলো সে।
.
যে সাহস নিয়ে ওয়াম্বা রওনা হয়েছিলো ফ্ৰঁত দ্য বোয়েফের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই তা কপুরের মতো উবে গেল। ভয়ে তার শরীর কাঁপছে রীতিমতো।
রেজিনান্ড জানে, অনেকেই ভয় পায় তার সামনে দাঁড়াতে। তাই পাদ্রীবেশী ওয়াম্বার ভীত ভাব দেখে অবাক হলো না সে। গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো, কে আপনি? কোত্থেকে আসছেন?
প্যাক্স ভবিসকাম, মনের সমস্ত সাহস এক করে জবাব দিলো ওয়া। আমি সেইন্ট ফ্রান্সিসের একজন দীন অনুসারী। বনের পথ ধরে যাচ্ছিলাম নিজের কাজে। হঠাৎ এক দল ডাকাত চড়াও হয় আমার ওপর। আপনার দুর্গের ওপাশেই একটা ঝোপের ভেতর নিয়ে এসে তারা বললো, আপনার এখানে নাকি মৃত্যুপথযাত্রী কয়েকজন লোক আছে, আমাকে তাদের শেষ স্বীকারোক্তি শুনতে হবে। তাই আমি এসেছি। প্যাক্স ভবিসকাম!
কত জন হবে ডাকাত? সত্যি জবাব দেবেন, নইলে আপনার কপালে দুঃখ আছে।
মিথ্যে বলে আমার কি লাভ, স্যার নাইট?
হুঁ। ঠিক আছে বলুন, ওখানে কতজন ডাকাত আছে।
অসংখ্য।
এটা কোনো জবাব হলো না, ঠিক সংখ্যা বলুন।
আমি তো গুণিনি, তবে মনে হয় চার পাঁচ শোর কম…।
ঠিক এই সময় ঘরে ঢুকছিলো টেম্পলার ব্রায়ান। দরজার কাছ থেকে সে চিৎকার করে উঠলো, কি! এর ভেতর ওরা এত লোক জুটিয়ে ফেলেছে। আর তো দেরি করা যায় না, রেজিনান্ড, এবার কিছু একটা ব্যবস্থা নিতে হয়!