কোনো আপত্তি নেই, বললো গার্থ।
যে দুজন ওকে ধরে ছিলো সর্দার তাদেরকে বললো, ছেড়ে দাও ওকে, আর ওর হাতে একটা লাঠি দাও।
গাৰ্থ এবং মিলার, দুজনেই লাঠি হাতে এগিয়ে গেল ফাঁকা জায়গাটার মাঝামাঝি জায়গায়।
আয়, ব্যাটা, সাহস থাকে তো! মাথার ওপর আশ্চর্য কৌশলে লাঠি ঘোরাতে ঘোরাতে চিৎকার করলো মিলার। আমার হাতে কত জোর তা টের পাবি!
ব্যাটা, তোর মতো ছিচকে চোরকে দেখে ভয় করি নাকি? একই রকম দক্ষতায় লাঠি ঘোরাতে ঘোরাতে জবাব দিলো গার্থ।
শুরু হলো লড়াই। হিংস্র ভঙ্গিতে একে অপরের ওপর লাফিয়ে পড়লো গার্থ এবং মিলার। কিন্তু দুজনেই দক্ষ লেঠেল। দুজনেই প্রতিপক্ষের আক্রমণ ফিরিয়ে দিলো নিপুণ কৌশলে। আবার আক্রমণ করলো। এভাবে চললো বেশ কিছুক্ষণ। কেউ কাউকে কাবু করতে পারলো না কায়দা মতো একটা ঘা-ও লাগাতে পারলো না। শেষ পর্যন্ত রেগে উঠলো মিলার। কৌশল ভুলে গায়ের জোরে লাঠি চালাতে লাগলো আনাড়ীর মতো। দেখে হাসতে শুরু করলো ওর সঙ্গীরা। ফলে আরো রেগে গেল মিলার। এতক্ষণ শুধু আক্রমণের ক্ষেত্রে কৌশলের অভাব দেখা যাচ্ছিলো, এবার প্রতিরক্ষার বেলায়ও দেখা যেতে লাগলো। মাথাটাকে যে আগলে রাখতে হবে তা ওর মনেই রইলো না। প্রথম সুযোগেই গাৰ্থ সেখানে বসিয়ে দিলো একটা রাম বাড়ি। এমন জোরে বাড়িটা লাগলো মিলারের মাথায় যে বেচারা মুখ থুবড়ে পড়ে গেল মাটিতে। এবং জ্ঞান হারালো।
সাবাস! সাবাস! চিৎকার করে উঠলো ডাকাতরা। দারুণ দেখিয়েছে! তোমার ধন-প্রাণ দু-ই বাঁচলো, ফাঁকতালে মার খেয়ে মরলো বেচারা মিলার।
এবার তুমি যেতে পারো, বললো সর্দার। আমার দুই সঙ্গী তোমাকে বন পার করে দিয়ে আসবে, যাতে আর কোনো বিপদ না ঘটে তোমার।
তার কোনো দরকার ছিলো না, বিনয়ের অবতার সেজে বললৈ গার্থ।
দরকার না থাকলে ওরা যাবে। তার আগে একটা কথা তোমাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমাদের সম্পর্কে মুখ খুলবে না কোথাও, আর আমরা কারা জানার কোনো চেষ্টা করবে না কখনও। যদি খোললা বা করো, তোমার কপালে দুঃখ আছে।
প্রতিশ্রুতি দিলো গাৰ্থ, সে কাউকে কিছু বলবে না। তারপর ডাকাতদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হলো নিজের পথে। লাঠি হাতে সঙ্গে চললো দুই দস্যু।
বনের প্রান্তে পৌঁছুতেই আরো দুজন ডাকাত যোগ দিলো ওদের সাথে। ফিসফিস করে নিজেদের ভেতর কি আলাপ করলো ওরা, তারপর ফিরে গেল বানর ভেতর। অবাক হলো গর্থ। ডাকাত দলটা খুবই সুসংগঠিত মনে হচ্ছে!
দুই ডাকাত পথ দেখিয়ে একটা পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে গেল ওকে। দাঁড়িয়ে পড়ে নিচের দিকে ইশারা করে বললো, এই পথে চলে যাও। ঐ যে দেখা যাচ্ছে টুর্নামেন্টের জায়গা। আমরা এবার বিদায় নেবো। যাওয়ার আগে আবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, প্রতিশ্রুতির কথা মনে রেখো। যদি না রাখো, আবারো বলছি, কপালে তোমার দুঃখ আছে।
তোমরা নিশ্চিন্ত থাকতে পারো, একটা কথাও বেরোবে না আমার মুখ দিয়ে, বললো গাৰ্থ। বিদায় জানানোর আগে একটা কথা বলি, কিছু মনে কোরো না, তোমরা ডাকাতি ছেড়ে দিয়ে ভালো হয়ে যাও। তোমাদের মতো লোকের এ কাজ মানায় না। শুভরাত্রি।
নিরাপদে মনিবের তাবুতে পৌঁছুলো গার্থ। এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে পুরো ঘটনা শোনালো মনিবকে। তারপর তাঁবুর প্রবেশপথের কাছে শুয়ে পড়লো একটা ভালুকের চামড়া বিছিয়ে। ওকে না ডিঙিয়ে কেউ তাবুতে ঢুকতে পারবে না।
শুয়ে পড়লো নাম না জানা নাইটও। কিছুক্ষণের ভেতর গভীর ঘুমের কোলে ঢলে পড়লো দুজন।
০৮. পূর্ণ হয়ে উঠলো টুর্নামেন্ট মাঠের গ্যালারি
পরদিন সকাল দশটা নাগাদ আবার পূর্ণ হয়ে উঠলো টুর্নামেন্ট মাঠের গ্যালারিগুলো। কালকের মতো আজও প্রতিযোগিতা দেখার জন্যে সমবেত হয়েছে হাজার হাজার লোক। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তারা, কখন রাজকুমার জন আসবেন। তিনি না আসা পর্যন্ত শুরু হবে না প্রতিযোগিতা।
অবশেষে শোনা গেল ট্রাম্পেটের তীক্ষ্ণ আওয়াজ। এসে গেছেন জন। সঙ্গে তাঁর সহচররা। কিছুক্ষণ পরেই এলেন সেড্রিক মেয়ে রোয়েনাকে নিয়ে। আজ অ্যাথেলস্টেন নেই ওঁদের সঙ্গে। টুর্নামেন্টে যোগ দেবে বলে আগেই এসে গেছে সে। যুদ্ধের সাজে তৈরি।
আসন গ্রহণ করেই সেড্রিক খুঁজতে লাগলেন অ্যাথেলস্টেনকে। এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই সবিস্ময়ে আবিষ্কার করলেন, নরম্যান নাইট বোয়াগিলবার্টের দলে যোগ দিয়ে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে সে।
অ্যাথেলস্টেন বহুদিন ধরেই আশা করে আছে রোয়েনাকে সে বিয়ে করবে। সেড্রিকও তাকে এ ধরনের আভাসই দিয়েছেন। সে আরও আশা করেছিলো, আজকের টুর্নামেন্টে বিজয়ী হয়ে সে-ই রোয়েনাকে সৌন্দর্য ও প্রেমের রানী নির্বাচিত করবে। মাঝখান থেকে কাল সেই তরুণ নাইট বিজয়ী হয়ে তার সব আশা আকাক্ষা মাটি করে দিয়েছে। অদ্ভুত এক ঈর্ষায় জ্বলছে তাঁর হৃদয়। নাম না জানা সেই নাইট রোয়েনাকেই নির্বাচিত করলো কেন? সে কি তবে ভালোবাসে রোয়েনাকে? আর রোয়েনা? সে-ও কি ভালোবাসে ঐ নাম গোত্রহীন নাইটকে? এই চিন্তাটাই বিশেষভাবে খেপিয়ে তুলেছে অ্যাথেলস্টেনকে। তাই মনের ঝাল মেটানোর জন্যে সে যোগ দিয়েছে শত্রুপক্ষে। আশা, উত্তরাধিকার বঞ্চিত নাইটকে আজ সে পরাজিত করবে।
রাজপুত্র জনের ইচ্ছায় দ্য ব্রেসি এবং তার সহযোগী যোদ্ধারাও দলবেঁধে যোগ দিয়েছে টেম্পলার ব্রায়ানের পক্ষে। জনের ইচ্ছা ব্রায়ানের দলই বিজয়ী হোক।