কত টাকা আছে তোমার কাছে, বলো, হুঙ্কার ছাড়লো এক ডাকাত।
আমার নিজের টাকার কথা যদি বলো, তাহলে ত্রিশটা স্বর্ণমুদ্রা, অচঞ্চল কণ্ঠে বললো গাৰ্থ। আমি একজন ক্রীতদাস। আমার স্বাধীনতা কেনার জন্যে অনেক কষ্টে টাকাগুলো জমিয়েছি।
কিন্তু তোমার বলে দেখে তো মনে হচ্ছে না মাত্র ত্রিশটা আছে, বললো দলের সর্দার। আমার বিশ্বাস ত্রিশের অনেক বেশি আছে এর ভেতরে।
তা আছে। তবে গুলো আমার নয় আমার মনিবের। যদি নিতেই চাও আমার টাকাগুলো নিয়ে ছেড়ে দাও আমাকে।
কে তোমার মনিব?
গৃহহীন নাইট।
আজকের টুর্নামেন্টে যিলিবিজয়ী হয়েছেন?
হ্যাঁ।
গৃহহীন নাইট! আসলে নাম কি লোকটার?
উহুঁ, তা বলা সম্ভব নয়। আমার মনিব চান না তার নাম পরিচয় জানাজানি হোক।
বেশ, তাহলে তোমার পরিচয় বলো।
তা-ও সম্ভব নয়। আমার পরিচয় বললেই মনিবের পরিচয়ও প্রকাশ হয়ে যাবে।
হুঁ। তোমার মনিব তো আজ অনেক রোজগার করেছে, তাই না?
তা করেছেন, তবে অর্ধেকের বেশিই আবার বিলিয়ে দিয়েছেন।
আচ্ছা! খুব দয়ালু লোক দেখছি! তা কত টাকা পেলেন আর কত বিলালেন?
চার নাইটের কাছ থেকে চারশো স্বর্ণমুদ্রা পেয়েছেন। দুশো নিজে রেখে দুশো বিলিয়ে দিয়েছেন।
পাগল নাকি! দুশো স্বর্ণমুদ্রা বিলিয়ে দিলো! একটু থামলো সর্দার। কোন চারজন টাকা দিয়েছে? নাম বলো।
বললো গার্থ।
আর সেই টেম্পলার স্যার ব্রায়ান দ্য বোয়া-গিলবার্টের খবর কি? সে টাকা দেয়নি?
চেয়েছিলো দিতে। আমার মনিব নেননি।
কেন? সব খুলে বলো তো, মজার ব্যাপার মনে হচ্ছে!
আমার মনিব প্রাণ ছাড়া আর কিছু নেবেন না টেম্পলারের কাছ থেকে। আবার ওঁরা লড়বেন, এবং দুজনের একজন না মরা পর্যন্ত সে লড়াই চলবে।
হো! হো! হো! চিৎকার করে উঠলো সর্দার;এখন বলো তো, তুমি অ্যাশুবিতে গিয়েছিলে কেন?
ধার শোধ দিতে।
ধার শোধ! কার?
আমার মনিবের। আইজাক নামের এক ইহুদীর কাছ থেকে উনি যুদ্ধের ঘোড়া, অস্ত্রশস্ত্র ও সাজ পোশাক ধার করেছিলেন। ঘোড়া ছাড়া আর সব মনিব রেখে দিয়েছেন। তাই ওগুলোর দাম শোধ করতে আমি গিয়েছিলাম।
কত দিলে?
আশি স্বর্ণমুদ্রা। কিন্তু বুড়ো ইহুদী সব আবার ফেরত দিয়ে দিয়েছে, তার ওপর আমাকে পুরস্কার দিয়েছে বিশ স্বর্ণমুদ্রা।
ও মিথ্যে কথা বলছে! চিৎকার করে উঠলো এক ডাকাত।
গল্প দেয়ার আর জায়গা পাও না, বললো আরেকজন। ইহুদীর বাচ্চা হাতে টাকা পেয়ে ফেরত দিয়ে দিলো, তাও আবার আশির বদলে একশো!
আমি সত্যি কথাই বলছি। রেগে গিয়ে ঝঝের সঙ্গে বললো গার্থ। বিশ্বাস না হয় আমার থলে খুলে দেখতে পারো। এর ভেতরে ছোট একটা রেশমী কাপড়ের থলে আছে, তাতে ঠিক একশো স্বর্ণমুদ্রা আছে।
এই, একটা আলো আনো তো, বললো দস্যু সর্দার। দেখি ও সত্যি বলছে কি না।
একটা মশাল জ্বাললো এক ডাকাত। গার্থের হাত থেকে থলেটা নিয়ে খুললো সর্দার। সব কজন ডাকাত ঝুঁকে পড়লো তার দিকে। এমন কি যে দুজন গার্থকে ধরে রেখেছিলো তারাও মুঠো শিথিল করে এগিয়ে গেল থলের ভেতর কি আছে দেখতে। এই সুযোগ ছাড়লো না গার্থ। এক ঝটকায় নিজেকে মুক্ত করে আরেক ঝটকায় এক ডাকাতের হাত থেকে লাঠি কেড়ে নিয়ে সর্ব শক্তিতে বসিয়ে দিলো সর্দারের মাথায়। গার্থের থলেটা হাত থেকে খসে পড়ে গেল সর্দারের। মাটিতে লুটিয়ে পড়লো সে।
গাৰ্থ টাকার থলেটা তুলে নিয়েই ছুটে পালানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু ও একা, ডাকাতরা অনেক। পারলো না পালাতে। ছুটে দুতিন পা যাওয়ার পরই আবার ধরা পড়ে গেল সে।
ইতোমধ্যে উঠে দাঁড়িয়েছে সর্দার। গার্থের মতো দশাসই লোকের হাতে বাড়ি খেয়েও কিছুই যেন হয়নি তার।
বদমাশ! মাথা ডলতে ডলতে সে চিৎকার করলো। আমার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে, এর ফল তোমাকে ভোগ করতে হবে। এবং এখনই। তার আগে তোমার মনিবের কথা শেষ করে নেই, ততক্ষণ চুপ করে দাঁড়াও। একটু নড়লেই প্রাণটা খোয়াবে! সঙ্গীদের দিকে তাকিয়ে যোগ করলো, রেশমের থলেটার ওপর হিব্রু অক্ষরে কি যেন লেখা আছে, ভেতরেও আছে ঠিক একশোটা স্বর্ণমুদ্রা। আমার মনে হয় ও যা বলছে সত্যি। টাকাটা ওর মনিবেরই। ও টাকা আমরা নিতে পারি না। ওর মনিব বেচারা আসলে আমাদেরই মতো।
আমাদেরই মতো! তা কি করে হয়?
কেন না? বেচারা আমাদেরই মতো গরীব, হতভাগ্য আমাদের মতোই তলোয়ারের জোরে উনি এই টাকা আয় করেছেন। আমাদের শত্রু রেজিনান্ড এবং ম্যালভয়সিঁকে উনি পরাজিত করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের পয়লা নম্বর শত্রু টেম্পলার ব্রায়ান ওঁরও শত্রু। শুনলে তো ব্যাটা ইহুদী কেমন উদার ব্যবহার করেছে ওঁর সাথে? আমরা তার চেয়ে কম উদারতা দেখাই কি করে, বলো তো?
ঠিক, ঠিক! এক সাথে চেঁচিয়ে উঠলো সব কজন ডাকাত। তা আমরা দেখাতে পারি না!
তারপর একজন গার্থকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো, এর সাথেও কি আমরা অমন উদার আচরণ করবো?
তোমরাই ঠিক করো, বলো সর্দার।
কক্ষনো না, জবাব দিলো এক দস্যু। ওকে ভালো রকম একটা শিক্ষা দিতে হবে। তোমার মাথায় বাড়ি মেরেছে!
ঠিক আছে, বলে বিশালদেহী এক ডাকাতের দিকে তাকালো সর্দার। মিলার তৈরি হওলাঠি নিয়ে। গার্থের দিকে ফিরলো সে। বললো, যুৎসই. একটা বাড়ি মেরেছো আমার মাথায়, দেখি মিলারকেও তেমন একটা মারতে পারো কি না। যদি পারো তোমাকে ছেড়ে দেবো।