না, না, ভারি কোথায়! তাড়াতাড়ি বললো গার্থ।
ভারি না? তাহলে এমন পেট মোটা লাগছে কেন?
পেট মোটা! কি বলছেন, আপনি! এইটুকুন একটা থলে, তার আবার পেট মোটা পেট সরু।
বেশ, তোমার কথাই সই। এখন বললো, কত টাকা আছে ওতে?
খুব বেশি না।
কেন? পাঁচ পাঁচ জন নাইটকে হারিয়েছেন, তার তো আজ অনেক কিছু পাওয়ার কথা!
পেয়েছেনও। কিন্তু বেশির ভাগই উনি বিলিয়ে দিয়েছেন।
বিলিয়ে দিয়েছেন! এমন অবিবেচক মানুষ হয় নাকি আজকের দুনিয়ায়? এতগুলো ঘোড়া, এতগুলো অস্ত্র, বর্ম, বিক্রি করলে তো অনেক টাকা পাওয়া যেতো!
টাকার খুব একটা প্রয়োজন নেই আমার মনিবের।
কি বললে! টাকার প্রয়োজন নেই? একটা কথা হলো? যাকগে, কি আর করা যাবে, ওঁর জিনিস উনি বিলিয়ে দিয়েছেন, আমার কি? তুমি আমাকে আশি স্বর্ণমুদ্রা দাও, তাহলেই হবে।
আশি স্বর্ণমুদ্রা! তাহলে তো আমার মনিবের কাছে আর এক পয়সাও ধাঁকবে না। সত্তরটা নিন। না হলে আমি চললাম, মনিবকেই পাঠিয়ে দিই আপনার কাছে।
না, না! টেবিলের ওপর রাখো টাকাটা। আশিটাই দাও, বুঝলে, তাতে আমার এক পয়সাও লাভ থাকবে না। তাছাড়া, ঘোড়াটা জখম হয়েছে কিনা কে জানে?
সত্যিই বলছি ঘোড়ার কিছু হয়নি, নিয়ে যাওয়ার সময় যেমন ছিলো এখনও তেমনি আছে। ইচ্ছে হলে আপনি নিজে দেখে আসতে পারেন আস্তাবলে গিয়ে। তাই বলছি, ঘোড়াটা যখন সম্পূর্ণ অক্ষত আছে, সত্তর নিয়েই সন্তুষ্ট হোন।
না, না, আশিই দাও। আমি বরং খুশি করে দেব তোমাকে।
গুনে গুনে গাৰ্থ আশিটা স্বর্ণমুদ্রা রাখলো টেবিলের ওপর। আইজ্যাক আবার গুনে গুনে সেগুলো ওঠাতে লাগলেন নিজের একটা থলেতে। সত্তর ~ পর্যন্ত দ্রুত গুনলেন বৃদ্ধ। তারপর মন্থর হয়ে এলো তার গোনার গতি। গার্থ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে, বুড়ো ইহুদী ওকে খুশি করবে কটা স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে?
একাত্তর, গুনে চলেছেন আইজাক, বাহাত্তর। তোমার মনিব, বুঝলে, খুব ভালো। তিহাত্তর। সত্যিই খুব ভালো লোক তোমার মনিব। চুহাত্তর, পঁচাত্তর। এটা একটু হালকা লাগছে। ছিয়াত্তর, সাতাত্তর। গাৰ্থ ভাবলো শেষ তিনটে মুদ্রা বোধ হয় দেবেন ওকে বৃদ্ধ। কিন্তু না! আইজাক শুনেই চলেছেন, আটাত্তর। তুমি লোকটাও খুব ভালো। ঊনআশি। কষ্ট করে টাকাগুলো নিয়ে এসেছে, তোমার কিছু পাওয়া উচিত। শেষ স্বর্ণমুদ্রাটার দিকে তাকালেন আইজাক। ঝকঝকে একেবারে নতুন। কি করে এটা দিয়ে দেবেন? অবশেষে গুনলেন, আশি। হ্যাঁ, সব ঠিক আছে। চিন্তা কোরো না, তুমি যে কষ্ট করলে এর জন্যে নিশ্চয়ই তোমার মনিব তোমাকে কিছু দেবেন।
হতবুদ্ধির মতো দাঁড়িয়ে আছে গাৰ্থ। মনে মনে ভাবছে, একেই বলে ইহুদী।
টাকা বুঝে পেয়েছেন এই মর্মে একটা রশিদ লিখে সই করে গার্থের হাতে দিলেন আইজাক। কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো গাৰ্থ। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো। সামনে একটা অন্ধকার কামরা, ওটা পেরোলেই বাড়ি থেকে বেরোনোর দরজা। অন্ধকার কামরাটার দিকে সবেমাত্র পা বাড়িয়েছে, এমন সময় শ্বেতবসনা এক মূর্তি এগিয়ে এলো ওর দিকে। হাতে ছোট একটা লণ্ঠন। মূর্তি আর কেউ নয়, রেবেকা।
বাবা এতক্ষণ ঠাট্টা করছিলেন তোমার সাথে, শান্ত কণ্ঠে বললো সে। তোমার মনিব আমার বাবার যে উপকার করেছেন, তার ঋণ কোনো দিনই শোধ করা সম্ভব নয়। টাকা নেয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। কত দিয়েছো বাবাকে?
আশি স্বর্ণমুদ্রা।
রেশমী একটা থলে এগিয়ে দিল রেবেকা গার্থের দিকে।
এতে একশো স্বর্ণমুদ্রা আছে, বললো সে। আশিটা তোমার মনিবকে ফেরত দিও। বাকিগুলো তোমার। যাও, এবার তাড়াতাড়ি পালাও। পথে সাবধানে থেকো। শহর বোঝাই চোর বাটপাড়, আর বন তো ডাকাতদের আস্তানা।
বিস্ময়ে কোনো কথা ফুটলো না গার্থের মুখে। অস্ফুট কণ্ঠে রেবেকাকে ধন্যবাদ জানিয়ে পথে নেমে এলো সে। মনে মনে বললো, এ তো ইহুদীর মেয়ে নয়, সাক্ষাৎ স্বর্গের দেবী। মনিবের কাছে পেয়েছি দশ স্বর্ণমুদ্রা, দেবীর কাছে পেলাম বিশ এই হারে পেতে থাকলে স্বাধীনতা কিনতে আর বেশি সময় লাগবে না আমার।
০৭. শহরের সীমানা ছাড়িয়ে
শিগগিরই শহরের সীমানা ছাড়িয়ে এলো গাৰ্থ। নিবিড় বনের ভেতর দিয়ে এগিয়ে গেছে সরু পায়ে চলা পথ। হাঁটার গতি বাড়ালো ও। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ বন পেরিয়ে যেতে চায়। কিন্তু বেশিদূর যেতে পারলো না। এক জায়গায় বড় বড় গাছ খুব ঘন হয়ে বেড়ে উঠেছে। চাঁদের আলো ঢাকা পড়ে গেছে সেখানে। মাত্র জায়গাটার শেষ প্রান্তে পৌঁছেছে গাৰ্থ, এমন সময় দুদিক থেকে দুজন দুজন করে চারজন লোক লাফ দিয়ে এসে পড়লো.ওর ঘাড়ের ওপর।
সাথে মাল কড়ি যা আছে চটপট দিয়ে দাও দেখি, বাছা, বললো একজন।
যেতে দাও আমাকে, চিৎকার করে উঠলো গার্থ। ধস্তাধস্তি করে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করছে নিজেকে।
ব্যাটার তেজ তো কম নয়, দাঁড়াও দেখাচ্ছি, বলে চারজন টানতে টানতে নিয়ে চললো গার্থকে।
বনের ভেতর একটুখানি একটা ফাঁকা জায়গায় গিয়ে থামলো তারা। চঁদের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে আছে জায়গাটা। ওদের সাড়া পেয়ে আরো দুই ডাকাত বেরিয়ে এলো গাছপালার আড়াল থেকে। গার্থ দেখলো তাদের হাতেও অন্য চারজনের মতো মোটা লাঠি, কোমরে ঝুলছে ছোট এক ধরনের তলোয়ার। সব কজনের পরনে সবুজ পোশাক। চারজন ছিলো, হলো ছজন। ছাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা বলতে গেলে শূন্য। তবু গাৰ্থ আশা ছাড়লো না।