অন্য চারজনও একই কথা বললো। তারপর তারা অপেক্ষা করতে লাগলো বিজয়ীর সিদ্ধান্ত শোনার জন্যে।
তোমাদের চারজনের জন্যে আমার একই জবাব, বদোয়া ছাড়া অন্য চার পার্শ্বচরের দিকে তাকিয়ে বললো নাইট। তোমাদের প্রভুদের ঘোড়া এবং অস্ত্রশস্ত্র আমি নেবো না। ওগুলোর কোনো প্রয়োজন আমার নেই। তবে, আমি গৃহহীন এবং কপর্দকশূন্য, ওগুলোর বিনিময়ে উপযুক্ত মূল্য দিলে আমি নিতে পারি।
আমাদের ওপর নির্দেশ আছে, ঘোড়া ও অস্ত্রশস্ত্র যদি আপনি না নিতে চান, এত্যকে একশো করে স্বর্ণমুদ্রা দেবে আপনাকে। টাকা আমরা সঙ্গে করেই নিয়ে এসেছি।
ওরে বাবা, সে তো অনেক! জবাব দিলো নাইট। না, না, অত আমার দরকার নেই। অর্ধেক দাও আমাকে। বাকি অর্ধেক তোমরা রেখে দাও। ইচ্ছে হলে মনিবদের ফেরত দিও, না হলে রেখে দিও নিজেরা।
এত পুরস্কার পাবে কল্পনাও করেনি পার্শ্বচররা। মাথা নুইয়ে তারা সম্মান ও কৃতজ্ঞতা জানালো।
তরুণ নাইট এবার ব্রায়ান দ্য বোয়া-গিলবার্টের অনুচরের দিকে ফিরলো।
তোমার মনিবের কাছ থেকে আমি কিছুই নেবো না, বললো সে। ঘোড়া এবং অস্ত্রশস্ত্র তো নয়-ই, টাকাও না। ওর সাথে আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখনও শেষ হয়নি। তোমার প্রভুকে বোললা, এর পরের বার যখন আমরা লড়বো, দুজনের একজন অবশ্যই মরবে। সেই একজন তোমার প্রভুরই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আপনি নেন না নেন এগুলো আমি এখানেই রেখে যাবো, বললো বদোয়া। নিয়ম অনুযায়ী এসব এখন আপনার সম্পত্তি। আমার মনিব আর কখনও এগুলো ব্যবহার করবেন না।
বেশ, তোমার মনিব যদি না নিতে চায় তুমিই নিয়ে নাও। আমি দিচ্ছি তোমাকে।
ব্যাপারটা রীতিমতো অপ্রত্যাশিত দোয়ার কাছে। অন্য চার ভৃত্যের মতো সে-ও শতকণ্ঠে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানালো তরুণ নাইটকে। তারপর সঙ্গীদের নিয়ে চলে গেল নিজেদের তাবুতে।
এ পর্যন্ত ভালোই চললো, কি বললা, গাৰ্থ? নিজের ভৃত্যের দিকে তাকিয়ে বললো নাইট। স্যাক্সন নাইটরা কি করতে পারে দেখিয়ে দিয়েছি কি না?
তা আর বলতে? আমার ভূমিকাটা কেমন হলো বলুন তো? শুয়োর চরানো স্যাক্সন রাখাল, অভিনয় করলাম নরম্যান চাকরের, মোটামুটি উত্তরে গেছি তাই না?
উৎরে গেছ মানে? তুখোড় অভিনয় করেছো তুমি। তবে আমার ভয় কি জানো?-কবে না তুমি ধরা পড়ে যাও।
কি যে বলেন! ওয়াম্বা ছাড়া আর কারো সাধ্য নেই আমাকে ধরে। আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।
বেশ তা না হয় থাকলাম, কিন্তু, গাৰ্থ, এবার যে আরেকটা কাজ করতে হবে তোমাকে।
একটা কেন একশোটা বলুন।
একশো না, আপাতত এই একটা করো, তাতেই চলবে। একটা থলে দিলো নাইট গার্থের হাতে। এই থলেটা ইহুদী আইজাককে দিতে হবে, পারবে?
খুব পারবো, কোথায় আছে বুড়ো?।
অ্যাশবিতেই। কিন্তু কার বাড়িতে আমি জানি না, তোমাকে খুঁজে বের করতে হবে। ওর কাছ থেকে আমি যুদ্ধের ঘোড়া, অস্ত্র, পোশাক সব ধার করেছি। কথা ছিলো ওগুলো ফেরত দিতে না পারলে দাম দেবো। এই থলেতে আশি স্বর্ণমুদ্রা আছে। তুমি গিয়ে দিয়ে এসো।
এ আর এমন কি কাজ, আমি এক্ষুণি রওনা হচ্ছি।
এই নাও আরো দশ স্বর্ণমুদ্রা, এগুলো তোমার।
.
অ্যাশবির এক ধনী ইহুদীর বাড়িতে উঠেছেন আইজাক মেয়ে রেবেকাকে নিয়ে।
শহরের লোকজনের কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঠিকই বাড়িটা খুঁজে বের করে ফেললো গাৰ্থ। যখন সে বাড়িটার সামনে, ঘোড়া থেকে নামলো তখন বেশ রাত হয়ে গেছে। ওর টোকার জবাবে এক ভৃত্য এসে দরজা খুললো।
ইয়র্কের আইজাক আছেন এ বাড়িতে? জিজ্ঞেস করলো গাৰ্থ।
হ্যাঁ।
গিয়ে বলল, আমি তার সাথে দেখা করতে চাই।
আপনি দাঁড়ান, আমি বলছি গিয়ে দরজা বন্ধ করে চলে গেল ভৃত্য।
এক খ্রীষ্টান আপনার সাথে দেখা করতে চায়, আইজাকের কাছে গিয়ে বললো ভৃত্য।
ভেতরে নিয়ে এসো, বললেন বৃদ্ধ।
দোতলার চমৎকার সাজানো গোছানো একটা কামরায় নিয়ে যাওয়া হলো গাৰ্থকে। কয়েকটা রূপার লণ্ঠনের আলোয় আলোকিত ঘরটা। মাথার টুপিটা একটু টেনে দিলো গার্থ। এতক্ষণ কেবল চোখ ঢাকা ছিলো, এবার নাক ও মুখের খানিকটাও ঢাকা পড়ে গেল।
বৃদ্ধকে চেনে গাৰ্থ। তবু জিজ্ঞেস করলো, আপনিই তো ইয়র্কের আইজাক, তাই না?
হ্যাঁ। কিন্তু তুমি কে?
আমার পরিচয় জানার কোনো প্রয়োজন নেই আপনার। আমি এসেছি একজনের প্রতিনিধি হয়ে।
প্রতিনিধি! কার?
আজকের টুর্নামেন্টে যিনি বিজয়ী হয়েছেন। তার বর্মের দাম পরিশোধ করতে এসেছি আমি। ঘোড়াটাও নিয়ে এসেছি। যে ছেলেটা দরজা খুলে দিয়েছে তার হাতে দিয়ে আস্তাবলে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমার প্রভু যেমন নিয়ে গিয়েছিলেন ঠিক তেমন অবস্থায় ফেরত দিয়েছেন ওটা। কোথাও কোনো চোট পায়নি। এখন বলুন, বর্ম আর অস্ত্রগুলোর জন্যে কত দিতে হবে?
এ নিয়ে পরে আলাপ করা যাবে, আগে গলাটা একটু ভিজিয়ে নাও।
আইজাকের নির্দেশে ভূত্য দুগ্লাস পানীয় নিয়ে এলো। একটা গ্লাস গার্থের দিকে এগিয়ে দিয়ে অন্যটিা নিজে নিলেন আইজাক। বললেন, নাও, খাও। অনেক দূর থেকে এসেছে, নিশ্চয়ই গলা শুকিয়ে গেছে?
গ্লাস তুলে চুমুক দিলো গার্থ। এবং এক চুমুকে শেষ করে ফেললো সবটুকু পানীয়। এত ভালো জিনিস জীবনে আর কখনো মুখে দেয়নি ও।
পান পর্ব শেষ হওয়ার পর আইজাক বললেন, তোমার মনিব, বুঝলে খুব ভালো লোক। সেদিনই আমি বুঝেছিলাম। এখন বলো তো, কত টাকা পাঠিয়েছেন উনি? তোমার থলেটা তো বেশ ভারি মনে হচ্ছে…