বর্শা হারিয়ে দুই নাইটই ফিরে এসেছে যার যার জায়গায়। দুই প্রতিপক্ষ ও তাদের ঘোড়াদের বিশ্রাম দেয়ার জন্যে কয়েক মিনিটের বিরতি এখন।
বিরতি শেষ হলো রাজপুত্র জনের ইঙ্গিতে। নতুন বর্শা নিয়ে আবার দুই নাইট আক্রমণ করলো পরস্পরকে। আগের মতোই ভয়ঙ্কর বেগে ছুটলো ঘোড়াগুলো। এবার দুজনই সতর্ক আগের চেয়ে। তরুণ নাইটের ঢাল লক্ষ্য করে বর্শা চালালো ব্রায়ান। অচেনা নাইটও প্রতিদ্বন্দ্বীর ঢালে আঘাত করবে বলে বর্শা তুললো। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মত বদলালো সে। বর্শা চালালো টেম্পলারের শিরোম্রাণ লক্ষ্য করে। দুজনের বর্শাই তীব্র বেগে আঘাত করলো যার যার লক্ষ্যে। অচেনা নাইট প্রস্তুত ছিলো, নিজের ঢালটাকে সামান্য ঘুরিয়ে দিয়ে আঘাতটা সামলে নিলো সে। কিন্তু ব্রায়ান স্বপ্নেও ভাবেনি তার শিরোম্রাণের ওপর আঘাত আসতে পারে। আক্রমণটা সে ঠেকাতে পারলো না। ঘোড়ার ওপর চিৎ হয়ে গেল তার শরীর। উল্টে পড়তে পড়তে সামলে নিলো কোনোমতে টেম্পলার। কিন্তু কপাল খারাপ, ঠিক সেই মুহূর্তে ছিঁড়ে গেল তার জিনের বাধন ঘোড়া সমেত মাটিতে আছড়ে পড়লো বোয়া-গিলবার্ট।
সারা শরীর বর্মে ঢাকা থাকা সত্ত্বেও আশ্চর্য ক্ষিপ্রতায় উঠে দাঁড়ালো টেম্পলার। প্রতিহিংসায় পাগল হয়ে উঠেছে সে। দর্শকদের উৎফুল্ল চিৎকার আরো বাড়িয়ে দিয়েছে তার ক্রোধ। হ্যাচকা টানে বাপ থেকে তলোয়ার বের করে ছুটে গেল প্রতিপক্ষের দিকে। তরুণ নাইট তৈরিই ছিলো। ঘোড়া থেকে লাফিয়ে পড়ে তলোয়ার বের করলো সে-ও। দর্শকরা থমকে গেছে। এবার শুরু হবে আসল লড়াই। নিশ্চয়ই দুজনের একজন না মরা. পর্যন্ত তলোয়ার যুদ্ধ চলবে।
কিন্তু না, চিৎকার করে লড়াই বন্ধের নির্দেশ দিলেন প্রধান বিচারক। এ ধরনের টুর্নামেন্টে তলোয়ারের লড়াই নিষিদ্ধ। মার্শালরা এগিয়ে এলো দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিরস্ত করতে।
আবার আমাদের দেখা হবে, ক্রোধকম্পিত কণ্ঠে বললো বোয়াগিলবার্ট। এবং সেদিন আমাদের থামানোর জন্যে কেউ থাকবে না!
আমার কোনো আপত্তি নেই, জবাব দিলো অচেনা নাইট। আপনার যখন যেখানে ইচ্ছা আমার মুখোমুখি হতে পারেন। খালি আমাকে আগে থাকতে একটু সংবাদ দেবেন, আমি নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে যাবো জায়গামতো। মাটিতে দাঁড়িয়ে বা ঘোড়ায় চড়ে; বর্শা, তলোয়ার বা কুঠার যা নিয়ে খুশি লড়তে চান, আমি রাজি। মনে রাখবেন, সেদিন আপনার মৃত্যু কেউ ঠেকাতে পারবে না।
দেখা যাবে কে কাকে শুরু করলো টেম্পলার, কিন্তু শেষ করতে পারলো না। বিচারকমণ্ডলীর নির্দেশে মার্শালরা তাকে জোর করে নিয়ে গেল তার তাবুতে। তরুণ নাইটকেও নিয়ে যাওয়া হলো উত্তর দিকের একটা তাঁবুতে।
তাবুতে ঢুকেই এক পাত্র মদ চাইলো সে। কে আগে তাকে সন্তুষ্ট করবে তাই নিয়ে হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। শুধু ভৃত্য আর অনুচররাই নয় একটু আগে যেসব নাইট পরাজিত হয়ে ফিরে এসেছে তারাও ছুটে এলো মদের পাত্র হাতে। একজনের হাত থেকে এক পাত্র মদ তুলে নিলো নাইট। পাত্রটা মুখের সামনে ধরে বললো:
এখানে খাঁটি ইংরেজ যারা উপস্থিত আছেন তাদের সম্মানে আমি পান করছি! জয় হোক ইংরেজ জাতির! নিপাত যাক সেই সব বিদেশী অত্যাচারী যারা দখল করে আছে আমাদের মাতৃভূমি, বলে মদের পাত্রে চুমুক দিলো তরুণ নাইট। অনুচরকে ডেকে নির্দেশ দিলো, আবার শিঙা বাজাও।
নতুন করে ট্রাম্পেট বেজে উঠতেই দর্শকরা উল্লাসে ফেটে পড়লো। আবার ট্রাম্পেট বাজছে, মানে আবার লড়াই হবে।
কয়েকজন ঘোষককে যেতে দেখা গেল বিজয়ী নাইটের তাঁবুর দিকে। একটু পরেই ফিরে এসে তারা ঘোষণা করলো: এইমাত্র যে তরুণ নাইট বিজয়ী হয়েছেন তিনি আবার পড়বেন। এবার আর তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী নির্বাচন করবেন না। প্রতিপক্ষের যিনিই আসবেন তার সাথেই তিনি লড়তে রাজি। যদি অপরাজিত চার চ্যালেঞ্জার পালা করে আসেন তাছেও তিনি রাজি। সবার সাথেই তিনি লড়বেন!
দক্ষিণের তাঁবু থেকে প্রথমে এলো বিশালদেহী রেজিনাল্ড ট্র্যত দ্য বোয়েফ। কুচকুচে কালো বর্ম তার শরীরে। বেশ কিছুক্ষণ সমানে সমানে লড়লো সে তরুণ নাইটের সঙ্গে। তারপর ধীরে ধীরে কমে আসতে লাগলো তার আক্রমণের ধার। এবং শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়ে ফিরে গেল তাবুতে। এরপর একে একে এলো ম্যালভয়সিঁ, গ্র্যান্টমেনসিল এবং দ্য ভাইপন্ট। রেজিনান্ডের দশা হলো সবারই। ভাইপন্ট তো ঘোড়া থেকে পড়ে অজ্ঞানই হয়ে গেল। রক্ত পড়তে লাগলো তার নাক মুখ দিয়ে। কয়েকজন ভৃত্য ধরাধরি করে তাঁবুতে নিয়ে গেল অচেতন দেহটা।
রাজপুত্র জন উঠে দাঁড়ালেন অবশেষে। উত্তরাধিকার বঞ্চিত তরুণ নাইটকেই টুর্নামেন্টের প্রথম দিনের বিজয়ী বলে ঘোষণা করলেন।
দর্শকদের উল্লসিত চিৎকার আর করতালিতে মুখর হয়ে উঠলো আকাশ, বাতাস!
.
বিজয়ীকে অভিনন্দন জানানোর জন্যে এগিয়ে এলেন বিচারকরা। রাজপুত্রের কাছে নিয়ে যাওয়ার আগে আঁরা তাকে শিরোস্ত্রাণ খুলে ফেলার অনুরোধ জানালেন। সবিনয়ে অনুরোধটা প্রত্যাখ্যান করলো নাইট।
না, এক্ষুণি আমি শিয়োস্ত্রাণ খুলতে পারবো না, অসুবিধা আছে, বললো সে।
এ ধরনের প্রত্যাখ্যান অস্বাভাবিক কোনো ব্যাপার নয়। প্রায় প্রতি টুর্নামেন্টেই দুএকজন নাইট এমন করে থাকে। তবু রেগে গেলেন জন। পার্শ্বচরের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন: