ঐ একই কথা হলো, বললেন জন। শুয়োরে আর কুকুরে যেমন তফাৎ নেই ইহুদী আর স্যাক্সনেও তেমনি কোনো পার্থক্য নেই। দুই-ই সমান আমার কাছে। সে জন্যেই বলছি রেবেকাকেই নির্বাচিত করুন, স্যাক্সন কুত্তাগুলো জব্দ হবে তাহলে।
রাজপুত্রের মুখে এমন ইতরের মতো কথা শুনে তাঁর সঙ্গীদের অনেকেই অসম্ভষ্ট হলেন। স্যাক্সনদের যারা দুচক্ষে দেখতে পারেন না তারা পর্যন্ত হতভম্ব হয়ে গেলেন। স্যাক্সনদের তারা নিচু ভাবেন সন্দেহ নেই, তাই বলে ইহুদীদের মতো?
নরম্যান নাইট দ্য ব্রেসি তো মুখের ওপর বলেই ফেললো, এভাবে স্যাক্সনদের অপমান করলে ফল ভালো হবে বলে মনে হয় না।
এর চেয়ে বোকামি আর কিছু হতে পারে না, রাজপুত্রের এক বয়স্ক সহচর ওয়াল্ডেমার বললেন। আপনার সব পরিকল্পনাই পও হবে, আপনি নিজেই নিজের সর্বনাশ ডেকে আনবেন, রাজপুত্র।
গম্ভীর হয়ে উঠলোজনের মুখ।
দেখুন আপনাদের আমি সাথে এনেছি আমাকে সঙ্গ দেয়ার জন্যে, উপদেশ দেয়ার জন্যে নয়, বললেন তিনি।
আমরা যারা আপনার সাথে, আপনার পক্ষে আছি, আপনার সব কাজে সহায়তা করছি, তারা মনে করি, আপনার এবং আমাদের সবার স্বার্থেই আপনাকে পরামর্শ দেয়ার অধিকার আমাদের আছে।
যে সুরে কথাগুলো বলা হলো, জন পরিষ্কার বুঝতে পারলেন অহেতুক গোয়ার্তুমি করলে ফল ভালো হয়ে না। তাড়াতাড়ি সামলে নিয়ে হেসে উঠলেন তিনি।
আপনারা ঠাট্টাও বোঝেন না! আমি যাবো বিধর্মী ইহুদীর মেয়েকে এই সম্মানের আসন দিতে? আমার কি মাথা খারাপ হয়েছে। আপনারা সবাই মিলে কাউকে নির্বাচিত করুন।
আমার মনে হয় নির্বাচনটা আপাতত বন্ধ থাক, বললো দ্য ব্রেসি। আজ যিনি বিজয়ী হবেন তার ওপরেই ছেড়ে দেয়া যাবে নির্বাচনের ভার। তাতে বিজয়ীর প্রতি সম্মান দেখানোও হবে, নির্বাচন নিয়ে বিতর্কেরও সৃষ্টি হবে না।
খুব ভালো প্রস্তাব, প্রায়োর অ্যায়মার বললেন। আমি এ প্রস্তাব সমর্থন করছি।
আমরাও, বললেন ওয়ার্ল্ডেমার। এবার শুরু করতে হয় প্রতিযোগিতা। দর্শকরা সব অস্থির হয়ে উঠেছে।
রাজপুত্র জন আর কথা না বাড়িয়ে সিংহাসনে বসলেন। হাত উঁচিয়ে ইশারা করতেই বেজে উঠলো ট্রাম্পেট। একজন ঘোষক এগিয়ে এলো সামনে। উচ্চ কণ্ঠে সে পড়ে শোনাতে লাগলো প্রতিযোগিতার নিয়মকানুন:
প্রথমত, যিনি-ই প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে চাইবেন, আজকের পাঁচ চ্যালেঞ্জারের যে কোনো একজনের সাথে তাকে লড়তে হবে। প্রতিদ্বন্দ্বী তার পছন্দমতো চ্যালেঞ্জারকে বেছে নিতে পারবেন। নিজের পছন্দ তিনি ঘোষণা করবেন চ্যালেঞ্জারের ঢালে তাঁর বর্শা ছুঁইয়ে। বর্শার ফলা দিয়ে যদি ছোঁয়া হয়, লড়াই চলবে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর অন্তত একজন নিহত না হওয়া পর্যন্ত। আর যদি বর্শার বাঁট দিয়ে স্পর্শ করা হয়, লড়াই চলবে অন্তত একজন আহত না হওয়া পর্যন্ত।
দ্বিতীয়ত, প্রথম দিনের প্রতিযোগিতায় যিনি বিজয়ী হবেন তিনি পুরস্কার হিশেবে পাবেন একটি যুদ্ধের ঘোড়া। সৌন্দর্য ও প্রেমের রানী নির্বাচনের সম্মানও তিনি লাভ করবেন।
তৃতীয়ত, আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবে সাধারণ প্রতিযোগিতা। যে কোনো নাইটই তাতে যোগ দিতে পারবেন। সমান সংখ্যার দলে বিভক্ত হয়ে ভঁরা লড়বেন। যতক্ষণ না রাজপুত্র খামার নির্দেশ দেবেন ততক্ষণ চলবে লড়াই। রাজপুত্রের কাছে যিনি সবচেয়ে সাহসী বলে বিবেচিত হবেন তার মাথায় বিজয় মুকুট পরিয়ে দেবেন সৌন্দর্য ও প্রেমের রানী।
ঘোষণা শেষ হতেই গ্যালারির অভিজাত দর্শকরা স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা ছুঁড়ে দিতে লাগলেন ঘোষকের দিকে। এ ধরনের অনুষ্ঠানে আভিজাত্য দেখানোর এ-ই নিয়ম। যে ঘোষণা করেছে শুধু সে-ই না, তার সহযোগীরাও প্রতিযোগিতা স্থানের মাঝখানে এসে কুড়িয়ে নিচ্ছে মুদ্রাগুলো। সাধারণ দর্শক, যারা এভাবে মুদ্রা ছুঁড়ে দিতে পারছে না, তারা চিৎকার করছে আর হাততা লি দিচ্ছে মহা উল্লাসে।
ধীরে ধীরে থিতিয়ে এলো চিৎকার আর হাততা লির শব্দ। অভিজাতদের আভিজাত্যের প্রদর্শনী শেষ হয়েছে। যার যার জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে ঘোষকরা। আগাগোড়া বর্মে মোড়া কয়েকজন অশ্বারোহী মার্শাল ধীর কদমে ঘোড়া চালিয়ে প্রবেশ করলো প্রতিযোগিতা স্থানে। দুপ্রান্তের প্রবেশ পথের পাশে দাঁড়িয়ে গেল তারা মূর্তির মতো। এবার শুরু হবে টুর্নামেন্ট। এক স্বরে বেজে উঠলো অনেকগুলো ট্রাম্পেট।
উত্তর দিকের প্রবেশ পথ দিয়ে পাঁচজন নাইট ঢুকলো প্রতিযোগিতা স্থানে। ঘাড় ঘুরিয়ে দুপাশের দর্শকদের দিকে তাকালো তারা। সামান্য মাথা নুইয়ে অভিবাদনের ভঙ্গি করলো। তারপর ধীরে ধীরে ঘোড় চালিয়ে এগোলো দক্ষিণের প্রবেশ পথের দিকে।
চ্যালেঞ্জারদের সুসজ্জিত তাঁবুর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো তারা। পঁচজন চ্যালেঞ্জারের পাঁচটা ঢাল সাজিয়ে রাখা পাঁচটা তাবুর সামনে। যে নাইট যে চ্যালেঞ্জারের মোকাবেলা করবে ঠিক করেছে সে তার ঢালে নিজের বর্শা ছোঁয়ালো। না, কেউই ফলা দিয়ে স্পর্শ করলো না, করলো বাঁট দিয়ে। অর্থাৎ প্রতিদ্বন্দ্বীদের কেউই মরণপণ করে লড়বে না, লড়বে প্রতিযোগিতার মনোভাব নিয়ে নিছক বীরত্ব প্রদর্শনের জন্যে।
প্রতিদ্বন্দ্বীদের বর্শা চ্যালেঞ্জারদের ঢাল স্পর্শ করতেই আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে বেজে উঠলো ঢাক। লড়াই শুরুর সংকেত! পাঁচ প্রতিদ্বন্দ্বী ফিরে এলো উত্তর দিকে, তাদের নির্দিষ্ট জায়গায়। ঘোড়াগুলোকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো চ্যালেঞ্জারদের জন্যে।