- বইয়ের নামঃ রিটার্ন অভ শী
- লেখকের নামঃ হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রহস্য, রোমাঞ্চকর, ভূতের গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী
রিটার্ন অভ শী
০০-০৫. সেই অপ্রত্যাশিত ঘটনা
০০.
শুরুর আগে শেষ পর্যন্ত ঘটলো সেই অপ্রত্যাশিত ঘটনা। আমি আরেকটা চিঠি পেলাম লুডউইগ হোরেস হলির কাছ থেকে। শেষ চিঠিটা পেয়েছিলাম অনেক অনেক বছর আগে শী-এর পাণ্ডুলিপির সঙ্গে। তাতে মিস্টার হলি লিখেছিলেন, অপরূপা আয়শার খোঁজে লিও ভিনসি আর তিনি আবার রওনা হচ্ছেন। এবার মধ্য এশিয়ার পথে।
গেল বছরগুলোতে প্রায়ই আমার ওদের কথা মনে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত কি ঘটলো জানার কৌতূহল হয়েছে। পাগলপ্রায় মানুষ দুটো বেঁচে আছে না মরে গেছে? নাকি তিব্বতের বৌদ্ধ মঠের পুরোহিতদের সান্নিধ্যে এসে ভিক্ষু হয়ে গেছে? জবাব পাইনি প্রশ্নগুলোর।
অবশেষে আজ, কোনোরকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই আমাকে স্তম্ভিত করে দিয়ে হাজির হয়েছে চিঠিটা। হোরেস হলির লেখা শেষবার দেখার পর বহুদিন পার হয়ে গেছে। তবু তার স্বাক্ষর আজ দেখা মাত্র চিনতে পেরেছি। তক্ষুণি পড়লাম চিঠিটা। তাতে লেখা:
প্রীতিভাজনেষু,
আমার ধারণা আপনি এখনও বেঁচে আছেন, আশ্চর্যের কথা আমিও বেঁচে আছি—যদিও আর কদিন থাকবো তা ভবিতব্যই বলতে পারে।
সভ্য জগতে ফিরে আসার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে আপনার (নাকি আমার?) শী বই-এর একটা হিন্দুস্তানী অনুবাদ আমার হাতে আসে। বইটা আমি পড়েছি। বলতে দ্বিধা নেই, আপনার দায়িত্ব আপনি নিষ্ঠার সঙ্গে সমাপন করেছেন। প্রতিটি নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়েছে। সুতরাং আপনাকেই আমি এ-ইতিহাসের
শেষাংশ সম্পাদনার ভার দিয়ে যেতে চাই।
আমি খুবই অসুস্থ। অনেক কষ্টে, বোধহয় মরার জন্যে, ফিরে এসেছি আমার পুরনো বাড়িতে। আমার মৃত্যু সন্নিকটে। ডাক্তারকে আমি অনুরোধ জানিয়েছি, আমার মৃত্যুর পর যেন সব কাগজপত্র পাঠিয়ে দেয় আপনার কাছে। অবশ্য এখনও নিশ্চিত নয় ব্যাপারটা। একেকবার মনে হচ্ছে, এবারের পাণ্ডুলিপিটা। পুড়িয়ে ফেলাই বোধহয় ভালো। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কি ঠিক করি। যদি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেই তাহলে পাণ্ডুলিপির সঙ্গে একটা বাক্সও যাবে আপনার কাছে। কিছু খসড়া নকশা আর একটা সিট্রাম থাকবে ওতে। নকশাগুলো কখনও হয়তো কাজে লাগবে আপনার। আর সিট্রামটা হলো প্রমাণ। প্রাচীন মিসরের দেবী আইসিস-এর পূজায় ব্যবহার হতো এই সিট্রাম। আপনার কাছে জিনিসটা পাঠাচ্ছি দুটো কারণে: প্রথমত, আপনার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার নিদর্শন হিসেবে, দ্বিতীয়ত, সঙ্গের পাণ্ডুলিপিতে লেখা কথাগুলোর সত্যতা সম্পর্কে যেন নিঃসংশয় হতে পারেন সে জন্যে। আমার বক্তব্যের সপক্ষে একমাত্র প্রমাণ ওটা।
চিঠি দীর্ঘ করতে চাই না। সে শারীরিক ক্ষমতা আমার নেই, ইচ্ছাও নেই। প্রমাণগুলোই নিজেদের পক্ষে যা বলার বলবে,। ওগুলো দিয়ে আপনার যা ইচ্ছে করতে পারেন। বিশ্বাস করা না করা-ও আপনার ব্যাপার। আমি জানি ওগুলো সত্যি, সুতরাং কেউ বিশ্বাস না করলেও আমার কিছু এসে যায় না।
আয়শা কে? পুনর্জন্ম নেয়া এক সৌরভ? বাস্তবে রূপ নেয়া প্রকৃতির কোনো অদৃশ্য শক্তি? সুন্দর, নিষ্ঠুর এবং অমর কোনো আত্মগত প্রাণ? আপনিই বলুন। আমি বাস্তবের সাথে আমার কল্পনাশক্তির সম্পূর্ণটাই মিশিয়ে চেষ্টা করেছি, সমাধান করতে পারিনি।
আপনার সুখ আর সৌভাগ্য কামনা করি। বিদায়, আপনাকে এবং সবাইকে।
–এল, হোরেস হলি।
চিঠিটা নামিয়ে রাখলাম। এর বক্তব্য বিশ্লেষণ করার কোনো চেষ্টা না করে দ্বিতীয় খামটা খুললাম। কিছু অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য ছাড়া এই চিঠিটাও সম্পূর্ণ তুলে দিচ্ছি আপনাদের জন্যে।
চিঠিটা লেখা হয়েছে কাম্বারল্যাণ্ড উপকূলের এক অজ পাড়া গাঁ থেকে। তাতে লেখা:
মহাত্মন,
আমাকে আপনি চিনবেন না, আমি একজন ডাক্তার, শেষ বোগশয্যায় আমি মিস্টার হলির চিকিৎসা করেছিলাম। মৃত্যুর আগে দ্রলোক এক অদ্ভুত দায়িত্ব দিয়ে গেছেন আমাকে, তাই এ চিঠি লেখা। সত্যি কথা বলতে কি এ সম্পর্কে প্রায় কিছু না জানলেও ব্যাপারটা বেশ কৌতূহলী করে তোলে আমাকে। এবং সে জন্যেই আমার নাম এবং ঠিকানা গোপন রাখা হবে এই শর্তে শেষ পর্যন্ত রাজি হই দায়িত্বটা পালন করতে।
দিন দশেক আগে মিস্টার হলির চিকিৎসার জন্যে ডাক পড়ে আমার। পাহাড়ের ওপর এক বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় আমাকে। বহুদিন ধরে খালি পড়ে ছিলো বাড়িটা। বাড়ির তদারককারী মহিলা জানালো, দীর্ঘদিন বিদেশে কাটিয়ে সম্প্রতি ফিরেছেন বাড়িওয়ালা। তার ধারণা দ্রলোকের হৃৎপিণ্ডটা ভীষণ অসুস্থ, খুব শিগগিরই উনি মারা যাবেন। মহিলার ধারণা সত্যি হয়েছে।
ঘরে ঢুকে দেখি, বিছানায় বসে আছেন অদ্ভুতদর্শন এক বৃদ্ধ। শুনলাম ইনিই রোগী। কালো চোখ ভদ্রলোকের, কুতকুতে হলেও বুদ্ধির অদ্ভুত ঝিলিক তাতে, যেন জ্বলছে জ্বলজ্বল করে। অসম্ভব চওড়া বুকটা ঢাকা পড়ে গেছে তুষারের মতো ধবধবে সাদা দাড়িতে। চুলগুলোও সাদা, লম্বা হতে হতে কপাল এবং মুখের অনেকটা ঢেকে ফেলেছে। তার হাত দুটো অস্বাভাবিক লম্বা, তাতে শক্তিও তেমন। এই বয়েসে মানুষের দেহে এত শক্তি থাকতে পারে আমার ধারণা ছিলো না। এক হাতে দীর্ঘ একটা ক্ষত চিহ্ন। উনি জানালেন কি এক হিংস্র কুকুর নাকি কামড়েছিলো ওখানে। দ্রলোকের চেহারা কুৎসিত, কিন্তু তার মধ্যেও কোথায় যেন একটা অপূর্ব দীপ্তি লুকিয়ে আছে। কোনো সাধারণ মানুষের মুখে আমি অমন দীপ্তি দেখিনি।