Site icon BnBoi.Com

সহিহ বুখারী ০৪র্থ খণ্ড (১৯১৯-২৫১০)

Sahi Bukhari 4th Part by Imam Bukhari

সহিহ বুখারী ০৪র্থ খণ্ড (১৯১৯-২৫১০)

 

ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায় (১৯১৯-২০৯৬)

হাদীস নং ১৯১৯

আবুল ইয়ামান রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আপনারা বলে থাকেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আবু হুরায়রা রা. বেশী বেশী হাদীস বর্ণনা করে থাকে এবং আরো বলেন, মহাজির ও আনসারদের কি হল যে, তারা তো নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করেন না ? আমার মুহাজির ভাইগণ বাজারে কেনা-বেচায় ব্যস্ত থাকতেন আর আমি কোন প্রকারে আমার পেটের চাহিদা মিটিয়ে (খেয়ে না খেয়ে) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে পড়ে থাকতাম। তাঁরা যখন (কাজের ব্যস্ততায়) অনুপস্থিত থাকতেন আমি তখন উপস্থিত থাকতাম। তাঁরা যা ভুলে যেতেন আমি তা সংরক্ষণ করতাম। আর আমার আনসার ভায়েরা নিজেদের খেত-খামারের কাজে ব্যাপৃত থাকতেন। আমি ছিলাম সুফফার মিসকীনদের একজন মিসকীন। তাঁরা যা ভুলে যেতেন, আমি তা সংরক্ষণ করতাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এক বর্ণনায় বললেন : আমার এ কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যে কেউ তার কাপড় বিছিয়ে দিবে এবং পরে নিজের শরীরের সাথে তার কাপড় জরিয়ে নেবে, আমি যা বলছি সে তা স্মরণ রাখতে পারবে। (আবু হুরায়রা রা. বলেন) আমি আমার গায়ের চাদরখানা বিছিয়ে দিলাম, যতক্ষণ না নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কথা শেষ করলেন, পরে আমি তা আমার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলাম। ফলে আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সে কথার কিছুই ভুলিনি।

হাদীস নং ১৯২০

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..আবদুর রাহমান ইবনে আওফা রা. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন মদীনায় আসি, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার এবং সাদ ইবনে রাবী রা.-এর মাজে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন সৃষ্টি করে দেন। পরে সাদ ইবনে রাবী বললেন, আমি আনসারদের মাঝে অধিক ধন-সম্পত্তির অধিকারী। আমার অর্ধেক সম্পত্তি তোমাকে ভাগ করে দিচ্ছি এবং আমার উভয় স্ত্রীকে দেখে যাকে তোমার পছন্দ হয়, বল আমি তাকে তোমার জন্য পরিত্যাগ করব।যখন সে (ইদ্দত পূর্ণ করবে) তখন তুমি তাকে বিবাহ করে নিবে। আবদুর রাহমান রা. বললেন, এ সবে আমার কোন প্রয়োজন নেই । বরং (আপনি বলুন) ব্যবসা-বাণিজ্য করার মত কোন বাজার আছে কি ? তিনি বললেন, কায়নুকার বাজার আছে। পরের দিন আবদুর রাহমান রা. সে বাজারে গিয়ে পনীর ও ঘি (খরিদ করে) নিয়ে আসলেন। এরপর ক্রমাগত যাওয়া-আসা করতে থাকেন। কিছুকাল পরে আবদুর রাহমান রা.-এর কাপড়ে বিয়ের মেহেদী দেখা গেল। এতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি বিবাহ করেছ ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সে কে ? তিনি বললেন, জনৈকা আনাসারী মহিলা। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কী পরিমাণ মহর দিয়েছ ? আবদুর রাহমান আ. বললেন, খেজুরের এক আটি পরিমাণ স্বর্ণ। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন : একটি বকরী দিয়ে হলেও ওয়ালীমা কর।

হাদীস নং ১৯২১

আহমদ ইবনে ইউনুস রহ…….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুর রাহমান ইবনে আওফা রা. মদীনায় আগমন করলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ও সাদ ইবনে রাবী আনসারীর মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন করে দেন। সাদ রা. ধনী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি আবদুর রাহমান রা.-কে বললেন, আমি তোমার উদ্দেশ্যে আমার সম্পত্তি অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করে নিতে চাই এবং তোমাকে বিবাহ করিয়ে দিতে চাই। তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা তোমার পরিবার ও সম্পদে বরকত দান করুন। আমাকে বাজার দেখিয়ে দাও। তিনি বাজার হতে মুনাফা করে নিয়ে আসলেন পনীর ও ঘি। এভাবে কিছু কাল কাটালেন। একদিন তিনি এভাবে আসলেন যে, তাঁর গায়ে বিয়ের মেহেদীর রংয়ের চিহ্ন লেগে আছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কী ব্যাপার ? তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সে কে ? তিনি বললেন, জনৈকা আনাসারী মহিলা। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কী পরিমাণ মহর দিয়েছ ? আবদুর রাহমান আ. বললেন, খেজুরের এক আটি পরিমাণ স্বর্ণ। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন : একটি বকরী দিয়ে হলেও ওয়ালীমা কর।

হাদীস নং ১৯২২

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উকায মাজিন্না ও যুল-মাজায (নামক স্থানে) জাহিলিয়্যাতের যুগে বাজার ছিল। ইসলামের আবির্ভাবের পরে লোকেরা ঐ সকল বাজারে যেতে গুনাহ মনে করতে লাগল। ফলে (কুরআন মজিদের আয়ত) নাযিল হল : তোমাদের রবের অনুগ্রহ সন্ধানে তোমাদের কোন পাপ নেই। (২ : ১৯৮) ইবনে আব্বাস রা. (আয়াতের সংগে) হজ্জের মওসুমে কথাটুকুও পড়লেন।

হাদীস নং ১৯২৩

মুহাম্মদ ইবন মুসান্না, আলী ইবনে আবদুল্লাহ, আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ও মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ……..নুমান ইবনে বাশীর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : হালাল সুস্পষ্ট, হারামও সুস্পষ্ট, উভয়ের মাঝে অস্পষ্ট বিষয় রয়েছে। যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ পরিত্যাগ করে, সে ব্যক্তি যে বিষয়ে গুনাহ হওয়া সুস্পষ্ট, সে বিষয়ে অধিকতর পরিত্যাগকারী হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ করতে দুঃসাহস করে, সে ব্যক্তির সুস্পষ্ট গুনাহের কাজে পতিত হবার যথেষ্ট আশংকা রয়েছে। গুনাহসমূহ আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা, যে জানোয়ার সংরক্ষিত এলাকার চার পাশে চরতে থাকে, তার ঐ সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করার সম্ভবনা রয়েছে।

হাদীস নং ১৯২৪

মুহাম্মদ ইবনে কাসীর রহ……..উকবা ইবনে হারিছ রা. থেকে বর্ণিত যে, একজন মেয়েলোক এসে দাবী করল যে, সে তাদের (উকবা ও তার স্ত্রী) উভয়কে দুধপান করিয়েছে। তিনি এ কথা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বর্ণনা করলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং মুচকি হেঁসে বললেন, কিভাবে ? অথচ এমনটি বলা হয়ে গেছে। তাঁর স্ত্রী ছিলেন আবু ইহাব তামীমীর কন্যা।

হাদীস নং ১৯২৫

ইয়াহইয়া ইবনে কাযাআ রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উতবা ইবনে আবু ওয়াক্কাস তার ভাই সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা.-কে ওয়াসীয়াত করে যান যে, যামআর বাদীর গর্ভস্থিত পুত্র আমার ঔরসজাত; তুমি তাকে তোমার অধীনে নিয়ে আসবে। আয়িশা রা. বলেন, মক্কা বিজয়ের কালে ঐ ছেলেটিকে সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা. নিয়ে নিলেন এবং বললেন, এ আমার ভাইয়ের পুত্র। তিনি আমাকে এর সম্পর্কে ওয়াসীয়াত করে গেছেন । এদিকে যামআর পুত্র আবদ দাবী করে যে, এ আমার ভাই, আমার পিতার বাঁদীর পুত্র। তার শয্যা সঙ্গিনীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছে। তারপর উভয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গেলেন। সাদ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এ আমার ভাইয়ের পুত্র, সে এর ব্যাপারে আমাকে ওয়াসীয়াত করে গেছে। এবং আবদ ইবনে যামআ বললেন, আমার ভাই। আমার পিতার দাসীর পুত্র, তাঁর সঙ্গে শায়িনীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছে। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : হে আবদ ইবনে যামআ ! এ ছেলেটি তোমার প্রাপ্য। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : শয্যা যার, সন্তান তার। ব্যভিচারী যে, বঞ্চিত সে। এরপর তিনি নবী সহধর্মিণী সাওদা বিনতে যামআ রা.-কে বললেন, তুমি ঐ ছেলেটি থেকে পর্দা করবে। কারণ তিনি ঐ ছেলেটির মধ্যে উতবার সাদৃশ্য দেখতে পান। ফলে মৃত্যু পর্যন্ত ঐ ছেলেটি আর সাওদা রা.-কে দেখেনি।

হাদীস নং ১৯২৬

আবুল ওয়ালীদ রহ………আদী ইবনে হাতিম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পার্শ্বফলা বিহীন তীর (দ্বারা শিকার) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, যদি তীরের ধারালো পার্শ্ব আঘাত করে, তবে সে খাবে, আর যদি এর ধারহীন পার্শ্বের আঘাতে মারা যায়, তবে তা খাবেনা। কেননা তা প্রহারে মৃত। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি বিসমিল্লাহ পড়ে আমার কুকুর ছেড়ে দিয়ে থাকি । পরে তার সাথে শিকারের কাছে অন্য কুকুর দেখতে পাই যার উপর আমি বিসমিল্লাহ পড়িনি এবং জানি না যে, উভয়ের মধ্যে কে শিকার ধরেছে। তিনি বললেন : তুমি তা খাবে না। তুমি তো তোমার কুকুরের উপর বিসমিল্লাহ পড়েছ, অন্যটির উপর পড় নাই।

হাদীস নং ১৯২৭

কাবীসা রহ…….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একবার) পথ অতিক্রমকালে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়ে থাকা একটি খেজুর দেখে বললেন, যদি এটা সাদকার খেজুর বলে সন্দেহ না হতো, তবে আমি তা খেতাম। আবু হাম্মাদ রহ. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমার বিছানায় পড়ে থাকা খেজুর আমি পাই।

হাদীস নং ১৯২৮

আবু নুআইম রহ………আববাদ ইবনে তামীমের চাচা (আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ ইবনে আসিম) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এক ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হল যে, সালাত আদায়কালে তার উযূ ভঙ্গের কিছু হয়েছে বলে মনে হয়, এতে কি সে সালাত ছেড়ে দেবে ? তিনি বলেন, না, যতক্ষণ না সে আওয়াজ শোনে বা দুর্গন্ধ টের পায় অর্থাৎ নিশ্চিত না হয়। ইবনে আবু হাফসা রা. যুহরী রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তুমি গন্ধ না পেলে অথবা আওয়াজ না শোনলে উযূ করবে না।

হাদীস নং ১৯২৯

আহমদ ইবনে মিকদাম ইজলী রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, কিছু সংখ্যক লোক বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! বহু লোক আমাদের কাছে গোশত নিয়ে আসে আমরা জানিনা, তারা বিসমিল্লাহ পড়ে যবেহ করেছিল কিনা ? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা এই উপর আল্লাহর নাম লও এবং তা খাও (ওয়াসওয়াসা শিকার হয়ো না)।

হাদীস নং ১৯৩০

তালক ইবনে গান্নাম রহ………জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সালাত আদায় করছিলাম। তখন সিরিয়া হতে একটি ব্যবসায়ী কাফেলা খাদ্য নিয়ে আগমন করল। লোকজন সকলেই সে দিকে চলে গেলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে মাত্র বারোজন থেকে গেলেন । এ প্রসংগে নাযিল হল : যখন তারা দেখল ব্যবসা ও কৌতুক তখন তারা সে দিকে ছুটে গেল।

হাদীস নং ১৯৩১

আদম রহ……..আবু হুরায়রা রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এমন এক যুগ আসবে, যখন মানুষ পরোয়া করবে না যে, সে কোথা থেকে অর্জন করল, হালাল থেকে না হারাম থেকে।

হাদীস নং ১৯৩২

আবু আসিম রহ…….আবুল মিনহাল রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সোনা-রূপার ব্যবসা করতাম। এ সম্পর্কে আমি যায়েদ ইবনে আরকাম রা.-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ফাযল ইবনে ইয়াকুব রহ. অন্য সনদে…….আবুল মিনহাল রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বারা ইবনে আযিব ও যায়েদ ইবনে আরকাম রা.-কে সোনা-রূপার ব্যবসা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা উভয়ে বললেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে ব্যবসায়ী ছিলাম। আমরা তাকে সোনা-রূপার ব্যবসা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, যদি হাতে হাতে (নগদ) হয়, তবে কোন দোষ নেই, আর যদি বাকী হয় তবে দুরস্ত নয়।

হাদীস নং ১৯৩৩

মুহাম্মদ রহ………উবায়দুল্লাহ ইবনে উমায়র রহ. থেকে বর্ণিত যে, আবু মূসা আশআরী রা. উমর ইবনে খাত্তাব রা.-এর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইলে তাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি; সম্ভবত: তিনি কোন কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তাই আবু মূসা রা. ফিরে আসেন। পরে উমর রা. পেরেশান তাকে আসতে বল। কেউ বলল, তিনি তো ফিরে চলে গেছেন। উমর রা. তাকে ডেকে পাঠালেন। তিনি (উপস্থিত হয়ে) বললেন, আমাদের এরূপই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উমর রা. বললেন, তোমাকে এর উপর সাক্ষী পেশ করতে হবে। আবু মূসা রা. ফিরে গিয়ে আনসারদের এক মজলিসে পৌছে তাদের এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। তাঁরা বললেন, এ ব্যাপারে আমাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ আবু সাঈদ খুদরী রা.-ই সাক্ষ্য দেবে। তিনি আবু সাঈদ খুদরী রা.-কে নিয়ে গেলেন। উমর রা. (তার কাছ থেকে সে হাদীসটি শুনে) বললেন, (কি আশ্চর্য) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ কি আমার কাছ থেকে গোপন রয়ে গেল ? (আসল ব্যাপার হল) বাজারের ক্রয়-বিক্রয় অর্থাৎ ব্যবসায়ের জন্য বের হওয়া আমাকে অনবহিত রেখেছে।

হাদীস নং ১৯৩৪

মুহাম্মদ রহ……..জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে জুমুআর দিন সালাত আদায় করছিলাম। এমন সময় এক বাণিজ্যিক কাফেলা এসে হাযির হয়, তখন বারজন লোক ছাড়া সকলেই কাফেলার দিক ছুটে যান। তখন এ আয়াত নাযিল হয় : যখন তারা দেখল ব্যবসা ও কৌতুক তখন তারা আপনাকে দাঁড়ান অবস্থায় রেখে সেদিকে ছুটে গেল। (৬২ : ১০)।

হাদীস নং ১৯৩৫

উসমান ইবনে আবু শায়বা রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন মহিলা তার ঘরের খাদ্য থেকে ফাসাদের উদ্দেশ্য ছাড়া ব্যয় করে তখন তার জন্য সাওয়াব রয়েছে তার খরচ করার, তার স্বামীর জন্য সাওয়াব রয়েছে তার উপার্জনের এবং সংরক্ষণকারীর জন্যও অনুরূপ রয়েছে। তাদের কারো কারণে সাওয়াব কিছুই কম হবে না।

হাদীস নং ১৯৩৬

ইয়াহইয়া ইবনে জাফর রহ…..আবু হুরায়রা রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন কোন মহিলা তার স্বামীর উপার্জন থেকে তার অনুমতি ছাড়াই ব্যয় করবে, তখন তার জন্য অর্ধেক সাওয়াব রয়েছে।

হাদীস নং ১৯৩৭

মুহাম্মদ ইবনে আবু ইয়াকুব কিরমানী রহ……আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শুনেছি, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার জীবিকা বৃদ্ধি হোক অথবা তার মৃত্যুর পরে সুনাম থাকুক, তবে সে যেন আত্মীয়ের সঙ্গে সদাচরণ করে।

হাদীস নং ১৯৩৮

মুয়াল্লা ইবনে আসাদ রহ………আমাশ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন ইবরাহীম রহ.-এর কাছে বাকিতে ক্রয়ের জন্য বন্ধক রাখা সম্পর্কে আমরা আলোচনা করছিলাম। তখন তিনি বলেন, আসওয়াদ রহ. আয়িশা রা. থেকে আমার কাছে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ইয়াহুদীর নিকট থেকে নির্দিষ্ট মেয়াদে মূল্য পরিশোধের শর্তে খাদ্য ক্রয় করেন এবং তার নিকট নিজের লোহার বর্ম বন্ধক রাখেন।

হাদীস নং ১৯৩৯

মুসলিম ও মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে হাওশাব রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, একবার তিনি যবের আটা ও পুরোনো গন্ধযুক্ত চর্বি নিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হলেন। রাবী বলেন, আমি তাকে বলতে শুনেছি যে , মদীনায় অবস্থায় কালে তাঁর বর্ম জনৈক ইয়াহুদীর নিকট বন্ধক রেখে তিনি নিজ পরিবারের জন্য তার থেকে যব খরিদ করেন। (রাবী কাতাদা রহ বলেন) আমি তাকে (আনাস রা.-কে) বলতে শুনেছি যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবারের কাছে এক সা’ পরিমাণ গম বা এক সা’ পরিমাণ আটাও থাকত না, অথচ সে সময় তাঁরা নয়জন সহধর্মিণী ছিলেন।

হাদীস নং ১৯৪০

ইসমাঈল ইবনে আবদুল্লাহ রহ…….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আবু বকর সিদ্দীক রা.-কে খলীফা বানানো হল, তখন তিনি বললেন, আমার কওম জানে যে, আমার উপার্জন আমার পরিবারের ভরণ পোষণে অপর্যাপ্ত ছিলনা। কিন্তু এখন আমি মুসলিম জনগণের কাজে সার্বক্ষণিক ব্যাপৃত হয়ে গেছি। অতএব আবু বকরের পরিবার এই রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে খাদ্য গ্রহণ করবে এবং আবু বকর রা. মুসলিম জনগণের সম্পদের তত্ত্বাবধান করবে।

হাদীস নং ১৯৪১

মুহাম্মদ রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর সাহাবীগণ নিজেদের কাজ-কর্ম নিজেরা করতেন। ফলে তাদের শরীর থেকে ঘামের গন্ধ বের হত। সেজন্য তাদের বলা হল, যদি তোমরা গোসল করে নাও (তবে ভাল হয়) হাম্মাম রহ………আয়িশা রা. থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ১৯৪২

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ……..মিকদাম রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিজ হাতে উপার্জিত জীবিকার খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য কখনো কেউ খায় না। আল্লাহর নবী দাউদ আ. নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন।

হাদীস নং ১৯৪৩

ইয়াহইয়া ইবনে মূসা রহ……..আবু হুরায়রা রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর নবী দাউদ আ. নিজের হাতের উপার্জন থেকেই খেতেন।

হাদীস নং ১৯৪৪

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কারো পক্ষে এক বোঝা লাকড়ী সংগ্রহ করে পিঠে বহন করে নেওয়া উত্তম কারো কাছে সাওয়াল করার চাইতে। (যার কাছে যাবে) সে দিতেও পারে অথবা নাও দিতে পারে।

হাদীস নং ১৯৪৫

ইয়াহইয়া ইবনে মূসা রহ………যুবাইর ইবনে আওয়াম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের কারো পক্ষে তার রশি নিয়ে কাঠ সংগ্রহ করতে বের হওয়া তার সাওয়াল করা থেকে উত্তম। আবু নুআইম রহ. বলেন, মুহাম্মদ ইবনে সওযয়াব ও ইবনে নুমাইর রহ. হিশাম রহ.-এর মাধ্যমে তার পিতা থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ১৯৪৬

আলী ইবনে আইয়্যাশ রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি ক্রয়-বিক্রয় এবং পাওনা তাগাদায় নম্র ব্যবহার করে, আল্লাহ তা’আলা তার উপর রহম করুন।

হাদীস নং ১৯৪৭

আহমদ ইউনুস রহ………..হুযায়ফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের পূর্ববর্তীগণের মধ্যে এক ব্যক্তির রূহের সাথে সাথে সাক্ষাত করে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি কোন নেক কাজ করেছ? লোকটি উত্তর দিল, আমি আমার পীড়াপীড়ি না করে। রাবী বলেন, তিনি বলেছেন, ফেরেশতারাও তাকে ক্ষমা করে দেন। আবু মালিক রহ. রিবঈ ইবনে হিরাশ রহ. সূত্রে বর্ণনা করেন, আমি সচ্ছল ব্যক্তির ব্যাপারে সহজ করতাম এবং অভাবগ্রস্ত কে অবকাশ দিতাম। শুবা রহ. আবদুল মালিক রহ. থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন। আবু আওয়ানা রহ. আবদুল মালিক রহ. সূত্রে বর্ণনা করেন, আমি সচ্ছল কে অবকাশ দিতাম এবং অভাবগ্রস্ত কে মাফ করে দিতাম এবং নুআইম ইবনে আবু হিনদ রহ. রিবঈ রহ. সূত্রে বলেন, আমি সচ্ছল ব্যক্তি থেকে গ্রহণ করতাম এবং অভাবগ্রস্ত কে ক্ষমা করে দিতাম।

হাদীস নং ১৯৪৮

হিশাম ইবনে আম্মার রহ……….আবু হুরায়রা রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যবসায়ী লোকদের ঋণ দিত। কোন অভাবগ্রস্তকে দেখল সে তার কর্মচারীদের বলত, তাকে মাফ করে দাও, হয়তো আল্লাহ তা’আলা আমাদের মাফ করে দিবেন। এর ফলে আল্লাহ তা’আলা তাকে মাফ করে দেন।

হাদীস নং ১৯৪৯

সুলাইমান ইবনে হারব রহ………..হাকীম ইবনে হিযাম রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ক্রেতা-বিক্রেতা যতক্ষণ পরস্পর বিচ্ছিন্ন না হয়, ততক্ষণ তাদের ইখতিয়ার থাকবে। যদি তারা সত্য বলে এবং অবস্থা ব্যক্ত করে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে আর যদি মিথ্যা বলে এবং দোষ গোপন করে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত চলে যাবে।

হাদীস নং ১৯৫০

আবু নুআঈম রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের মিশ্রিত খেজুর দেওয়া হত, আমরা তার দু’ সা এক সা’-এর বিনিময়ে বিক্রি করতাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এক সা’ এর পরিবর্তে দু’ সা এবং এক দিরহামের পরিবর্তে দু’ দিরহাম বিক্রি করবে না।

হাদীস নং ১৯৫১

উমর ইবনে হাফস রহ………আবু মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু শুআইব নামক জনৈক আনসারী এসে তার কসাই গোলামকে বললেন, পাঁচ জনের উপযোগী খাবার তৈরী কর। আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-সহ পাঁচ জনকে দাওয়াত দিলেন। তাদের সঙ্গে আরেকজন অতিরিক্ত এলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এ আমাদের সঙ্গে এসেছে, তুমি ইচ্ছা করলে একে অনুমতি দিতে পার আর তুমি যদি চাও সে ফিরে যাক, তবে সে ফিরে যাবে। সাহাবী বললেন, না, এবং আমি তাকে অনুমতি দিলাম।

হাদীস নং ১৯৫২

বদল ইবনে মুহাববার রহ……..হাকীম ইবনে হিযাম রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যতক্ষণ বিচ্ছিন্ন না হবে ততক্ষণ ক্রেতা-বিক্রেতার ইখতিয়ার থাকবে । যদি তারা সত্য বলে ও যথাযথ অবস্থা বর্ণনা করে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে, আর যদি পণ্যের প্রকৃত অবস্থা গোপন করে ও মিথ্যা বলে তবে ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত চলে যাবে।

হাদীস নং ১৯৫৩

আদম ইবনে আবু ইয়াস রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মানুষের উপর এমন এক যুগ অবশ্যই আসবে যখন মানুষ পরোয়া করবে না যে কিভাবে সে মাল অর্জন করল হালাল থেকে না হারাম থেকে।

হাদীস নং ১৯৫৪

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো নাযিল হল, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা মসজিদে পড়ে শোনালেন। তারপর মদের ব্যবসা হারাম বলে ঘোষণা করেন।

হাদীস নং ১৯৫৫

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……..সামুরা ইবনে জুনদুব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আজ রাতে আমি স্বপ্নে দেখিছি যে, দু’ ব্যক্তি আমার নিকট এসে আমাকে পবিত্র ভূমিতে নিয়ে গেল। আমরা চলতে চলতে এক রক্তের নদীর কাছে পৌঁছলাম। নদীর মধ্যস্থলে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে এবং আরেক ব্যক্তি নদীর তীরে, তার সামনে পাথর পড়ে রয়েছে। নদীর মাঝখানের লোকটি যখন বের হয়ে আসতে চায় তখন তীরের লোকটি তার মুখে পাথর খণ্ড নিক্ষেপ করে তাকে স্বস্থানে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এভাবে যতবার সে বেরিয়ে আসতে চায় ততবারই তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করছে আর সে স্বস্থানে ফিরে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ কে ? সে বলল, যাকে আপনি (রক্তের) নদীতে দেখেছেন, সে হল সুদখোর।

হাদীস নং ১৯৫৬

আবুল ওয়ালীদ রহ………আওন ইবনে আবু জুহাইফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার পিতাকে দেখেছি, তিনি এক গোলাম খরিদ করেন যে শিঙ্গা লাগানোর কাজ করত। তিনি তার শিঙ্গার যন্ত্রপাতি সম্পর্কে নির্দেশ দিলেন এবং তা ভেঙ্গে ফেলা হল। আমি এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুরের মূল্য এবং রক্তের মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন, আর দেহে দাগ দেওয়া ও লওয়া থেকে নিষেধ করেছেন। সূদ খাওয়া ও খায়ানো নিষেধ করেছেন আর ছবি অংকনকারীর উপর লা’নত করেছেন।

হাদীস নং ১৯৫৭

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, মিথ্যা কসম পণ্য চালু করে দেয় বটে, কিন্তু বকরত নিশ্চিহ্ন করে দেয়।

হাদীস নং ১৯৫৮

আমর ইবনে মুহাম্মদ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রা. থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি বাজারে পণ্য আমদানী করে আল্লাহর নামে কসম খেল যে, এর এত দাম লাগান হয়েছে ; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা কেউ বলেনি। এতে তার উদ্দেশ্য সে যেন কোন মুসলিমকে পণ্যের ব্যাপারে ধোঁকায় ফেলতে পারে। এ প্রসঙ্গে আয়াত নাযিল হয়, যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছমূল্যে বিক্রি করে (৩ : ৭৭) ।

হাদীস নং ১৯৫৯

আবদান রহ………হুসাইন ইবনে আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন, আলী রা. বলেছেন, (বদর যুদ্ধের) গনীমতের মাল থেকে আমার অংশের একটি উটনী ছিল এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর খুমস থেকে একটি উটনী আমাকে দান করলেন। যখন আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা ফাতিমা রা. এর সঙ্গে বাসর রাত যাপনের ইচ্ছা করলাম সে সময় আমি কায়নুকা গোত্রের একজন স্বর্ণকারের সাথে এই চুক্তি করেছিলাম যে, সে আমার সঙ্গে (জংগলে) যাবে এবং ইযখির ঘাস বহন করে আনবে এবং তা স্বর্ণকারদের নিকট বিক্রি করে তার মূল্য দ্বারা আমার বিবাহের ওয়ালীমার ব্যবস্থা করব।

হাদীস নং ১৯৬০

ইসহাক রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কা বিজয়ের দিন) বলেন, আল্লাহ তা’আলা মক্কায় (রক্তপাত) হারাম করে দিয়েছেন। আমার আগেও কারো জন্য মক্কা হালাল করা হয়নি এবং আমার পরেও কারো জন্য হালাল করা হবে না। আমার জন্য শুধুমাত্র দিনের কিছু অংশে মক্কায় (রক্তপাত) হালাল হয়েছিল। মক্কার কোন ঘাস কাটা যাবে না, কোন গাছ কাটা যাবে না। কোন শিকারকে তাড়ানো যাবে না। ঘোষণাকারী ব্যতীত কেউ মক্কার যমীনে পড়ে থাকা মাল উঠাতে পারবে না। তখন আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব রা. বললেন, কিন্তু ইযখির ঘাস, যা আমাদের স্বর্ণকারদের ও আমাদের ঘরের ছাদের জন্য ব্যবহৃত তা ব্যতীত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইযখির ঘাস ব্যতীত। রাবী ইকরামা রহ. বলেন, তুমি জানো শিকার তাড়ানোর অর্থ কি ? তা হল, ছায়ায় অবস্থিত শিকারকে তাড়িয়ে তার স্থানে নিজে বসা। আবদুল ওহাব রহ. খালিদ রহ .সূত্রে বলেছেন, আমাদের স্বর্ণকারদের জন্য ও আমাদের কবরের জন্য।

হাদীস নং ১৯৬১

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ…….খাব্বাব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহিলিয়্যাতের যুগে আমি কর্মকারের পেশায় ছিলাম। আস ইবনে ওয়াইলের কাছে আমার কিছু পাওনা ছিল আমি তার কাছে তাগাদা করতে গেলে সে বলল, যতক্ষণ তুমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অস্বীকার না করবে ততক্ষণ আমি তোমাকে তোমার পাওনা দিব না। আমি বললাম, আল্লাহ তোমাকে মৃত্যু দিয়ে তারপর তোমাকে পুনরুত্থিত করা পর্যন্ত আমি তাকে অস্বীকার করব না। সে বলল, আমি মরে পুনরুত্থিত হওয়া পর্যন্ত আমাকে অব্যাহতি দাও। শীগ্রীরই আমাকে সম্পদ ও সন্তান দেওয়া হবে, তখন আমি তোমার পাওনা পরিশোধ করব। এ প্রসঙ্গে এ আয়াত নাযিল হল : তুমি কি লক্ষ্য করেছ তাকে, যে আমার আয়াত সমূহ প্রত্যাখান করে এবং বলে আমাকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দেওয়া হবেই (১৯ : ৭৭)।

হাদীস নং ১৯৬২

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক দরজী খাবার তৈরী করে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দাওয়াত করলেন। আনাস ইবেন মালিক রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে রুটি এবং সুরুয়া যাতে কদু ও গোশতের টুকরা ছিল, পেশ করলেন। আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেলাম যে, পেয়ালার পার্শ্ব থেকে তিনি কদুর টুকরা খোঁজ করে নিচ্ছেন।

হাদীস নং ১৯৬৩

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……..সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক মহিলা একটি বুরদা আনলেন (সাহল রা.) বললেন, তোমরা জান বুরদা কি? তাকে বলা হয়, হ্যাঁ, তা হল এমন চাদর, যা পাড় বুনানো। মহিলা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনাকে পরিধান করানোর জন্য আমি এটি নিজ হাতে বুনে নিয়ে এসেছি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা গ্রহণ করলেন এবং তাঁর এর প্রয়োজন ছিল। তারপর তিনি তা তহবন্দরূপে পরিধান করে আমাদের সামনে এলেন। উপস্থিত লোকজনের মধ্যে একজন বলে উঠলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তা আমাকে পরিধান করতে দিন। তিনি বললেন, আচ্ছা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষণ মজলিসে বসে পরে ফিরে গেলেন। তারপর চাদরটি ভাঁজ করে সে লোকটির কাছে পাঠিয়ে দিলেন। লোকজন সে ব্যক্তিকে বললেন, তুমি ভাল করনি, তুমি তাঁর কাছে চাদরটি চেয়ে ফেললে, অথচ তুমি জান যে, তিনি কোন সাওয়ালকারীকে ফিরিয়ে দেন না। সে লোকটি বললেন, আল্লাহর কসম, আমি চাদরটি এ জন্যই সাওয়াল করেছি যে, তা যাতে আমার মৃত্যুর পর আমার কাফন হয়। রাবী সাহল রা. বলেন, সেটি তার কাফন হয়েছিল।

হাদীস নং ১৯৬৪

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ……..আবু হাযিম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিছু লোক সাহল ইবনে সাদ রা.-এর কাছে এসে মিম্বরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন (আনসারী) মহিলা সাহল রা. যার নাম উল্লেখ করেছিলেন, তার কাছে তিনি সংবাদ পাঠালেন যে, তোমার সূত্রধর গোলামকে বল, সে যেন আমার জন্য কাঠ দিয়ে একটি (মিম্বর) তৈরী করে দেয়। লোকদের সাথে কথা বলার সময় যার উপর আমি বসতে পারি। সে মহিলা তাকে গাবা নামক স্থানের কাঠ দিয়ে মিম্বর বানানোর নির্দেশ দিলেন। তারপর গোলামটি তা নিয়ে এল এবং সে মহিলা এটি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। তার নির্দেশক্রমে তা স্থাপন করা হল, পরে তার উপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপবেশন করলেন।

হাদীস নং ১৯৬৫

খাল্লাদ ইবনে ইয়াহইয়া রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, একজন আনসারী মহিলা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি কি আপনার জন্য এমন একটি জিনিস তৈরী কের দিব ন, যার উপর আপনি উপবেশন করবেন ? কেননা, আমার একজন সূত্রধর গোলাম আছে। তিনি বললেন, যদি তুমি ইচ্ছা কর। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর সে মহিলা তাঁর জন্য মিম্বর বানিয়ে দিলেন। যখন জুমুআর দিন হল, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই তৈরী মিম্বরের উপরে বসলেন। সে সময় যে খেজুর গাছের উপর ভর দিয়ে তিনি খুতবা দিতেন, সেটি এমনভাবে চীৎকার করে উঠল, যেন তা ফেটে পড়েব। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নেমে এসে তাকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে ধরলেন। তখন সেটি ফোপাতে লাগল, যেমন ছোট শিশুকে চুপ করানোর সময় ফোপায়। অবশেষে তা স্থির হয়ে গেল। (রাবী বলেন) খেজুর কাণ্ডটি যে যিকির-নসীহত শুনত তা হারানোর কারণে কেঁদেছিল।

হাদীস নং ১৯৬৬

ইউসুফ ইবনে ঈসা রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ইয়াহুদী থেকে বাকিতে খাদ্য ক্রয় করেন এবং নিজের লৌহবর্ম তার কাছে বন্ধক রাখেন।

হাদীস নং ১৯৬৭

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক যুদ্ধে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। আমর উটটি অত্যন্ত ধীরে চলছিল বরং চলতে অক্ষম হয়ে পড়েছিল । এমতাবস্থায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এলেন এবং বললেন, জাবির ? আমি বললাম, জী । তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার অবস্থা কী ? আমি বললাম, আমার উট আমাকে নিয়ে অত্যন্ত ধীরে চলছে এবং অক্ষম হয়ে পড়ছে। ফলে আমি পিছনে পড়ে গেছি। তখন তিনি নেমে চাবুক দিয়ে উটটিকে আঘাত করতে লাগলেন। তারপর বললেন, এবার আরোহণ কর। আমি আরোহণ করলাম। এরপর অবশ্য আমি উটটিকে এমন পেলাম যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অগ্রসর হওয়ায় বাঁধা দিতে হয়েছিল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি বিবাহ করেছ ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, কুমারী না বিবাহিতা ? আমি বললাম, বিবাহিতা। তিনি বললেন, তরুনী বিবাহ করলে না কেন? তুমি তার সাথে হাসি-তামসা এবং সে তোমার সাথে পূর্ণভাবে হাসি-তামসা করত। আমি বললাম, আমার কয়েকটি বোন রয়েছে, ফলে আমি এমন এক মহিলাকে বিবাহ করতে পছন্দ করলাম, যে তাদেরকে মিল-মুহাব্বতে রাখতে, তাদের পরিচর্যা করতে এবং তাদের উপর উত্তমরূপে কর্তৃত্ব করতে সক্ষম হয়। তিনি বললেন, শোন ! তুমি তো বাড়ীতে পৌঁছবে ? যখন তুমি পৌঁছবে তখন তুমি বৃদ্ধিমত্তার পরিচয় দেবে। তিনি বললেন, তোমার উটটি বিক্রি করবে ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি তা এক উকীয়ার বিনিময়ে আমার নিকট থেকে কিনে নিলেন। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার আগে (মদীনায়) পৌঁছলেন এবং আমি (পরের দিন) ভোরে পৌঁছলাম। আমি মসজিদে নববীতে গিয়ে তাকে দরজার নামনে পেলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এখন এলে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তোমার উটটি রাখ এবং মসজিদে প্রবেশ করে দু’ রাকআত সালাত আদায় কর। আমি মসজিদে প্রবেশ করে সালাত আদায় করলাম। তারপর তিনি বিলাল রা.-কে উকীয়া ওযন করে আমাকে দিতে বললেন। বিলাল রা. ওযন করে দিলেন এবং আমার পক্ষে ঝুঁকিয়ে দিলেন। আমি রওয়ানা হলাম। যখন আমি পিছন ফিরছি তখন তিনি বললেন, জাবিরকে আমার কাছে ডাক । আমি ভাবলাম, এখন হয়ত উটটি আমাকে ফিরিয়ে দেবেন। আর আমার কাছে এর চাইতে অপছন্দনীয় আর কিছুই ছিলনা। তিনি বললেন, তোমার উটটি নিয়ে যাও এবং তার মূল্যও তোমার।

হাদীস নং ১৯৬৮

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, উকায, মাজান্না ও যুল-মাজায জাহিলী যুগের বাজার ছিল, ইসলামের আবির্ভাবের পরে লোকেরা তথায় ব্যবসা করা গুনাহের কাজ মনে করল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা নাযিল করলেন: তোমাদের উপর কোন গুনাহ নাই…… (অর্থাৎ হজ্জের মওসুমে। ইবনে আব্বাস রা. এরূপ পড়েছেন।

হাদীস নং ১৯৬৯

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………আমর (ইবনে দীনার) বলেন, এখানে নাওওয়াস নামক এক ব্যক্তি ছিল। তার নিকট অতি পিপাসা রোগে আক্রান্ত একটি উট ছিল।ইবনে উমর রা. তার শরীকের কাছ থেকে সে উটটি কিনে নেন। পরে তার শরীক তার নিকট উপস্থিত হলে বলল, সে উটটি বিক্রি করে দিয়েছি। নাওওয়াস জিজ্ঞাসা করলেন, কার কাছে বিক্রি করেছ? সে বলল, এমন আকৃতির এক বৃদ্ধের কাছে । নাওওয়াস বলে উঠলেন, আরে কি সর্বনাশ ! তিনি তো আল্লাহর কসম ইবনে উমর রা. ছিলেন। এরপর নাওওয়াস তাঁর নিকট এলেন এবং বললেন, আমার শরীক আপনাকে চিনতে না পেরে আপনার কাছে একটি পিপাসাক্রান্ত উট বিক্রি করেছে। তিনি বললেন, তবে উটটি নিয়ে যাও। সে যখন উটটি নিয়ে যেতে উদ্যত হল, তখন তিনি বললেন, রেখে দাও। আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ফায়সালায় সন্তুষ্ট যে, রোগে কোন সংক্রামন নেই। সুফিয়ান রহ. আমর রহ. থেকে উক্ত হাদীসটি শুনেছেন।

হাদীস নং ১৯৭০

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……..আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে হুনায়নের যুদ্ধে গেলাম। তখন তিনি আমাকে একটি বর্ম দিয়েছিলেন। আমি সেটি বিক্রি করে তার মূল্য দ্বারা বনূ সালিমা গোত্রের এলাকায় অবস্থিত একটি বাগান খরিদ করি। এ ছিল ইসলাম গ্রহণের পর আমার প্রথম স্থাবর সম্পত্তি অর্জন।

হাদীস নং ১৯৭১

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………আবু মূসা রা.থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ মিসক বিক্রেতা ও কর্মকারের হাপরের ন্যায়। আতর বিক্রেতাদের থেকে তুমি রেহাই পাবে না। হয় তুমি আতর খরিদ করবে, না হয় তার সুঘ্রাণ পাবে। আর কর্মকারের হাপর হয় তোমার ঘর অথবা তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে, না হয় তুমি তার দুর্গন্ধ পাবে।

হাদীস নং ১৯৭২

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ…….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু তায়বা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে শিংগা লাগলেন তখন তিনি তাকে এক সা’ পরিমাণ খেজুর দিতে আদেশ করলেন এবং তার মালিককে তার দৈনিক পারশ্রমিকের হার কমিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন।

হাদীস নং ১৯৭৩

মুসাদ্দাদ রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিংগা লাগালেন এবং যে তাকে শিংগা লাগিয়েছে, তাকে তিনি মজুরী দিলেন। যদি না হারাম হত তবে তিনি তা দিতেন না।

হাদীস নং ১৯৭৪

আদম রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমর রা.-এর নিকট রেশমী চাদর পাঠিয়ে দেন, পরে তিনি তা তাঁর গায়ে দেখতে পেয়ে বলেন, আমি তো তোমাকে এ জন্য দেইনি যে, তুমি তা পরিধান করবে।অবশ্য তা তারাই পরিধান করে, যার (আখিরাতে) কোন অংশ নেই। আমি তো তা তোমার কাছে এজন্য পাঠিয়েছি যে, তুমি তা দিয়ে উপকৃত হবে অর্থাৎ বিক্রি করবে।

হাদীস নং ১৯৭৫

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন যে, তিনি একটি ছবিযুক্ত বালিশ খরিদ করেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখতে পেয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে গেলেন, ভিতরে প্রবেশ করলেন না। আমি তাঁর চেহারায় অসন্তুটির ভাব দেখতে পেলাম। তখন বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কাছে তাওবা করছি। আমি কী অপরাধ করেছি? তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ বালিশের কী সমাচার? আয়িশা রা. বলেন, আমি বললাম, আমি এটি আপনার জন্য খরিদ করেছি, যাতে আপনি হেলান দিয়ে বসতে পারেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই ছবিওয়ালাদেরকে কিয়ামতের দিন আযাব দেওয়া হবে। তাদের বলা হবে, তোমরা যা বানিয়েছিলে, তা জীবিব কর। তিনি আরো বলেন, যে ঘরে এ সব ছবি থাকে, সে ঘরে (রহমতের) ফেরেশতাগণ প্রবেশ করেন না।

হাদীস নং ১৯৭৬

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে বনূ নাজ্জার ! আমাকে তোমাদের বাগানের মূল্য বল। বাগানটিতে ঘরের ভাঙ্গা চুরা অংশ ও খেজুর গাছ ছিল।

হাদীস নং ১৯৭৭

সাদাকা রহ……….ইবনে উমর রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ক্রেতা-বিক্রেতা যতক্ষণ বিচ্ছিন্ন না হবে, ততক্ষণ তাদের বেচা-কেনার ব্যাপারে উভয়ের ইখতিয়ার থাকবে। আর যদি খিয়ারের শর্তে ক্রয়-বিক্রয় হয় (তাহলে পরেও ইখতিয়ার থাকবে) নাফি রহ. বলেন, ইবনে উমররা. কোন পণ্য ক্রয়ের পর তা পছন্দ হলে মালিক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তেন।

হাদীস নং ১৯৭৮

হাফস ইবনে উমর রহ………হাকীম ইবন হিযাম রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যতক্ষণ ক্রেতা-বিক্রেতা বিচ্ছিন্ন না হবে ততক্ষণ তাদের খিয়ারের অধিকার থাকবে। আহমদ রহ. বাহয রহ. সূত্রে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন যে হাম্মাম রহ. বলেন, আমি আবু তাইয়্যাহ রহ.-কে এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বললেন, আবদুল্লাহ ইবনে হারিস যখন এই হাদীসটি আবু খলীলকে বর্ণনা করেন, তখন আমি তার সঙ্গে ছিলাম।

হাদীস নং ১৯৭৯

আবু নুমান রহ…….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিচ্ছিন্ন না হওয়া পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের খিয়ার থাকবে অথবা এক পক্ষ অপর পক্ষকে বলবে, গ্রহণ করে নাও। রাবী অনেক সময় বলেছেন, অথবা খিয়ারের শর্তে ক্রয়-বিক্রয় হলে।

হাদীস নং ১৯৮০

ইসহাক রহ…….হাকীম ইবনে হিযাম রা. সূত্রে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ক্রেতা-বিক্রেতা বিচ্ছিন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের উভয়ের ইখতিয়ার থাকবে। যদি তারা উভয়ে সত্য কথা বলে ও (পণ্যের দোষত্রুটি) যথাযথ বর্ণনা করে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে, আর যদি তার মিথ্যা বলে এ (দোষ) গোপন করে, তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত বিনষ্ট হয়ে যাবে।

হাদীস নং ১৯৮১

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ক্রেতা-বিক্রেতা প্রত্যেকের একে অপরের উপর ইখতিয়ার থাকবে, যতক্ষণ তারা বিচ্ছিন্ন না হবে। তবে খিয়ারের শর্তে ক্রয়-বিক্রয়ে (বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরও ইখতিয়ার থাকবে)।

হাদীস নং ১৯৮২

কুতাইবা রহ……….ইবনে উমর রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন দু’ ব্যক্তি ক্রয়-বিক্রয় করে, তখন তাদের উভয়ে যতক্ষণ বিচ্ছিন্ন না হবে অথবা একে অপরকে ইখতিয়ার প্রদান না করবে, ততক্ষণ তাদের উভয়ের ইখতিয়ার থাকবে। এভাবে তারা উভয়ে যদি ক্রয়-বিক্রয় করে তবে তা সাব্যস্ত হয়ে যাবে। আর যদি তারা উভয়ে ক্রয়-বিক্রয়ের পরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং তাদের কেউ যদি তা পরিত্যাগ না করে তবে ক্রয়-বিক্রয় সাব্যস্ত হয়ে যাবে।

হাদীস নং ১৯৮৩

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে যতক্ষণ বিচ্ছিন্ন না হবে, ততক্ষণ তাদের মাঝে কোন ক্রয়-বিক্রয় সাব্যস্ত হবে না। অবশ্য ইখতিয়ারের শর্তে ক্রয়-বিক্রয় হলে তা সাব্যস্ত হবে।

হাদীস নং ১৯৮৪

ইসহাক রহ………হাকীম ইবনে হিযাম রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ক্রেতা-বিক্রেতার ইখতিয়ার থাকবে উভয়ের বিচ্ছিন্ন না হওয়া পর্যন্ত। যদি তারা উভয়ে সত্য কথা বলে ও (পণ্যের দোষত্রুটি) যথাযথ বর্ণনা করে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে, আর যদি তার মিথ্যা বলে এ (দোষ) গোপন করে, তবে হয়ত খুব লাভ করবে কিন্তু তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত বিনষ্ট হয়ে যাবে। অপর সনদে হাম্মাম ……..আবদুল্লাহ ইবনে হারিস রহ. হাকীম ইবনে হিযাম রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ১৯৮৫

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, এক সাহাবী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উল্লেখ করলেন যে, তাকে ক্রয়-বিক্রয়ে ধোঁকা দেওয়া হয়। তখন তিনি বললেন, যখন তুমি ক্রয়-বিক্রয় করবে তখন বলে নিবে কোন প্রকার ধোঁকা নেই।

হাদীস নং ১৯৮৬

মুহাম্মদ ইবনে সাববাহ রহ…….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : (পরবর্তী যামানায়) একদল সৈন্য কাবা (ধ্বংসের উদ্দেশ্যে) অভিযান চালাবে। যখন তারা বায়দা নামক স্থানে পৌঁছবে তখন তাদের আগের পিছের সকলকে যমীনে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। আয়িশা রা. বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তাদের অগ্রবাহিনী ও পশ্চাৎবাহিনী সকলকে কীভাবে ধ্বসে দেওয়া হবে, অথচ সে সেনাবাহিনীতে তাদের বাজারের (পণ্য-সামগ্রী বহনকারী) লোকও থাকবে এবং এমন লোকও থাকবে যারা তাদের দলভূক্ত নয়, তিনি বললেন : তাদের আগের পিছনের সকলকে ধ্বসে দেওয়া হবে। তারপরে (কিয়ামতের দিবসে) তাদের নিজদের নিয়্যাত অনুযায়ী উত্থান করা হবে।

হাদীস নং ১৯৮৭

কুতাইবা রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের কারো জামাআতে সালাত আদায় নিজ ঘরের সালাতের চাইতে বিশ গুণেরও অধিক মর্তবা রয়েছে। কারণ সে যখন উত্তমরূপে উযূ করে মসজিদে আসে, সালাত আদায় ছাড়া অন্য কোন অভিপ্রায়ে আসে না, সালাত ছাড়া অন্য কিছুই তাকে উদ্বুদ্ধ করে না। এমতাবস্থায় তার প্রতি কদমে এক মর্তবা বৃদ্ধি করা হবে এবং একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর ফেরেশতাগণ তোমাদের সে ব্যক্তির জন্য (এমর্মে) দু’আ করতে থাকবেন, যতক্ষণ সে যেখানে সালাত আদায় করেছে, সেখানে থাকবে: আয় আল্লাহ আপনি তার প্রতি অনুগ্রহ করুন, তার প্রতি রহম করুন। যতক্ষণ না সে তথায় উযূ ভঙ্গ করে, যতক্ষণ না সে তথায় কাউকে কষ্ট দেয়। তিনি আরো বলেছেন, তোমাদের সে ব্যক্তি সালাতরত গণ্য হবে, যতক্ষণ সে সালাতের অপেক্ষায় থাকে।

হাদীস নং ১৯৮৮

আদম ইবনে আবু ইয়াস রহ……..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সময় বাজারে ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি বললেন, হে আবুল কাসিম ! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকালে তিনি বললেন, আমি তো তাকে ডেকেছি। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আমার নামে নাম রাখ কিন্তু আমার কুনিয়াতে কুনিয়াত রেখো না।

হাদীস নং ১৯৮৯

মালিক ইবনে ইসমাঈল রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সাহাবী বাকী নামক স্থানে আবুল কাসিম বলে (কাউকে) ডাক দিলেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকালেন। তিনি বললেন, আমি আপনাকে উদ্দেশ্যে করিনি। তখন তিনি বললেন, তোমরা আমার নামে নাম রাখ কিন্তু আমার কুনিয়াতে কারো কুনিয়াত রেখোনা।

হাদীস নং ১৯৯০

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………আবু হুরায়রা দাওসী রা. থেকে থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিনের এক অংশে বের হলেন, তিনি আমার সঙ্গে কথা বলেননি এবং আমিও তাঁর সাথে কথা বলিনি। অবশেষে তিনি বনূ কায়নুকা বাজারে এলেন (সেখান থেকে ফিরে এসে) ফাতিমা রা.-এর ঘরের আঙিনায় বসে পড়লেন। তারপর বললেন, এখানে খোকা (হাসান রা.) আছে কি? এখানে খোকা আছে কি ? ফাতিমা রা. তাকে কিছুক্ষণ দেরী করালেন। আমার ধারণা হল তিনি তাকে পুতির মালা সোনা-রূপা ছাড়া যা বাচ্চাদের পরানো হত, পরাচ্ছিলেন বা তাকে গোসল করালেন। তারপর তিনি দৌড়িয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং চুমু খেলেন। তখন তিনি বললেন, আয় আল্লাহ ! তুমি তাকেও (হাসানকে) মুহাব্বত কর এবং তাকে যে ভালবাসবে তাকেও মুহাব্বত কর। সুফিয়ান রহ. বলেন, আমার কাছে উবায়দুল্লাহ বর্ণনা করেছেন যে, তিনি নাফি ইবনে জুবায়রকে এক রাকআত মিলিয়ে বিতর আদায় করতে দেখেছেন।

হাদীস নং ১৯৯১

ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ…….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, তারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে বাণিজ্যিক দলের কাছ থেকে (পথিমধ্যে) খাদ্য খরিদ করতেন। সে কারণে খাদ্য-দ্রব্য বিক্রয়ের স্থানে তা স্থানান্তর করার আগে, বণিক দলের কাছ থেকে ক্রয়ের স্থলে বেচা-কেনা করতে নিষেধ করার জন্য তিনি তাদের কাছে লোক পাঠাতেন। রাবী বলেন, ইবনে উমর রা. আরো বর্ণনা করেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ণভাবে অধিকারে আনার আগে খরিদ করা পণ্য বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন।

হাদীস নং ১৯৯২

মুহাম্মদ ইবনে সিনান রহ…….আতা ইবনে ইয়াসার রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা.-কে বললাম, আপনি আমাদের কাছে তাওরাতে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গুণাবলী বর্ণনা করেন। তিনি বললেন : আচ্ছা। আল্লাহ কসম ! কুরআনে বর্ণিত তাঁর কিছু গুণাবলী তাওরাতে ও উল্লেখ করা হয়েছে : হে নবী ! আমি আপনাকে সাক্ষীরূপে সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী রূপে প্রেরণ করেছি এবং উম্মীদের রক্ষক হিসাবেও। আপনি আমার বান্দা ও আমার রাসূল। আমি আপনার নাম মুতাওয়াক্কিল (আল্লাহর উপর ভরসাকারী) রেখেছি। তিনি মন্দ স্বভাবের নন, কঠোর হৃদয়ের নন বরং বাজারে চীৎকারীও নন। তিনি অন্যায়কে অন্যায় দ্বারা প্রতিহত করেন না বরং মাফ করে দেন, ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তা’আলা তাকে ততক্ষণ মৃত্যু দিবেন না যতক্ষণ না, তাঁর দ্বারা বিকৃত মিল্লাতকে সঠিকপথে আনেন অর্থাৎ যতক্ষণ না তারা (আরববাসীরা) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু এর ঘোষণা দিবে। আর এ কালিমার মাধ্যমে অন্ধ-চক্ষু, বধির-কর্ণ ও আচ্ছাদিত হৃদয় খুলে যাবে। আবদুল আযীয ইবনে আবু সালামা রহ হিলাল রহ. থেকে হাদীস বর্ণনায় ফুলাইহ রহ.-এর অনুসরণ করেছেন। সাঈদ রহ……….ইবনে সালাম রহ. থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন আবু আবদুল্লাহ বুখারী রহ. বলেন, যে সকল বস্তু আবরণের মধ্যে থাকে তাকে غلف বলে। তার একবচন أغلف যেমন, বলা হয়, سيف أغلف কোষাবদ্ধ তরবারি। قوس غلفاء কোষবদ্ধ ধনুক । رجل أغلف খাতনা না করা পুরুষ।

হাদীস নং ১৯৯৩

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি খাদ্য খরিদ করবে, সে তা পুরাপুরী আয়ত্ত্বে না এনে বিক্রি করবে না।

হাদীস নং ১৯৯৪

আবদান রহ……….জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (আমার পিতা) আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে হারাম রা. ঋণী অবস্থায় মারা যান। পাওনাদারেরা যেন তাঁর কিছু ঋণ ছেড়ে দেয়, এজন্য আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে সাহায্য চাইলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে কিছু ঋণ ছেড়ে দিতে বললে, তারা তা করল না। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন : যাও তোমার প্রত্যেক ধরনের খেজুরকে আলাদা আলাদা করে রাখ, আজওয়া আলাদা এবং আযকা যায়েদ আলাদা করে রাখ। পরে আমাকে খবর দিও। (জাবির রা. বলেন) আমি তা করে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খবর দিলাম। তিনি এসে খেজুরের (স্তপের) উপরে বা তার মাঝখানে বসলেন। তারপর বললেন, পাওনাদারদের মেপে দাও। আমি তাদের মেপে দিতে লাগলাম, এমনকি তাদের পাওনা পুরোপুরী দিয়ে দিলাম। আর আমার খেজুর এরূপ থেকে গেল, যেন এ থেকে কিছুই কমেনি। ফিরাস রহ. শাবী রহ. সূত্রে জাবির রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের এ পর্যন্ত মেপে দিতে থাকলেন যে তাদের ঋণ পরিশোধ করে দিলেন। হিশাম রহ. ওহাব রহ. সূত্রে জাবির রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন গাছ থেকে খেজুর কেটে নাও এবং পুরোপুরী আদায় করে দাও।

হাদীস নং ১৯৯৫

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ………মিকদাদ ইবনে মাদীকারিব রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা তোমাদের খাদ্য মেপে নিবে, তাঁতে তোমাদের জন্য বরকত হবে।

হাদীস নং ১৯৯৬

মূসা রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইবরাহীম আ. মক্কাকে হারাম ঘোষণা করেছেন ও তার জন্য দু’আ করেছেন। আমি মদীনাকে হারাম ঘোষণা করেছি, যেমন ইবরাহীম আ. মক্কাকে হারম ঘোষণা করেছেন এবং আমি মদীনার এক মুদ ও সা’ এর জন্য দু’আ করেছি। যেমন ইবরাহীম আ. মক্কার জন্য দু’আ করেছিলেন।

হাদীস নং ১৯৯৭

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ইয়া আল্লাহ ! আপনি তাদের মাপের পাত্রে বরকত দিন এবং তাদের সা’ও মুদ-এ বরকত দিন অর্থাৎ মদীনাবাসীদের।

হাদীস নং ১৯৯৮

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম রহ…….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যারা অনুমানে (না মেপে) খাদ্য খরিদ করে নিজের স্থানে পৌঁছানোর আগেই তা বিক্রি করত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে আমি দেখেছি যে, তাদেরকে মারা হত।

হাদীস নং ১৯৯৯

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদ্য (খরিদ করে) পুরাপুরী আয়ত্ত্বে না এনে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। (রাবী তাইস রহ. বলেন) আমি ইবনে আব্বাস রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, এ কিভাবে হয়ে থাকে ? তিনি বললেন, এ এভাবে হয়ে থাকে যে, দিরহাম এর বিনিময়ে দিরহাম আদান-প্রদান হয় অথচ পণ্যদ্রব্য অনুপস্থিত থাকে। ইমাম বুখারী রহ. বলেন, আয়াতে বর্ণিত ‘মারজুন’ অর্থ যারা নির্দেশ পালনে বিলম্বিত করে।

হাদীস নং ২০০০

আবুল ওয়ালীদ রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : খাদ্য খরিদ করে কেউ যেন তা হস্তগত করার পূর্বে বিক্রি না করে।

হাদীস নং ২০০১

আলী রহ…….মালিক ইবনে আওস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি ঘোষণা দিলেন যে, কে সারফ এর বেচা-কেনা করবে ? তালহা রা. বললেন, আমি করব। অবশ্য আমার পক্ষের বিনিময়ে প্রদানে আমার হিসাব রক্ষক গাবা (এলাকা) থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত দেরী করে। (বর্ণনাকারী) সুফিয়ান রহ. বলেন, আমি যুহরী রহ. থেকে এটুকু মনে রেখেছি, এর থেকে বেশী নয়। এরপর যুহরী রহ. বলেন, মালিক ইবনে আওস রা. আমাকে বলেছেন যে, তিনি উমর ইবনে খাত্তাব রা.-কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতে শুনেছেন যে, তিনি বলেছেন : নগদ হাতে হাতে বিনিময় ছাড়া সোনার বদলে সোনা বিক্রি, গমের বদলে গম বিক্রি, খেজুরের বদলে খেজুর বিক্রি, যবের বদলে যব বিক্রি করা সূদ হিসাবে গণ্য।

হাদীস নং ২০০২

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিষেধ করেছেন, তা হল অধিকারে আনার পূর্বে খাদ্য বিক্রয় করা। ইবনে ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আমি মনে করি, প্রত্যেক পণ্যের ব্যাপারে অনুরূপ নির্দেশ প্রযোজ্য হবে।

হাদীস নং ২০০৩

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, খাদ্য খরিদ করে পুরোপুরী মেপে না নিয়ে। রাবী ইসমাঈল রহ. আরো বলেন খাদ্যদ্রব্য খরিদ করে নিজের অধিকারে না এনে কেউ যেন তা বিক্রি না করে।

হাদীস নং ২০০৪

ইয়াহইয়া ইবনে বুকারই রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে দেখেছি যে, লোকেরা খাদ্য আনুমানিক পরিমাণের ভিত্তিতে বেচা-কেনা করত, পরে তা সেখানেই নিজেদের ঘরে তুলে নেওয়ার আগেই বিক্রি করলে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হত।

হাদীস নং ২০০৫

ফারওয়া ইবনে আবুল মাগরা রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এমন দিন খুব কমই গিয়েছে, যে দিন সকালে বা বিকালে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমার পিতা)) আব বকর রা.-এর ঘরে আসেননি। যখন তাকে (আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে) মদীনার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হল, তখন তিনি একদিন দুপুরের সময় আগমন করায় আমরা শংকিত হয়ে পড়লাম। আবু বকর রা.-কে এ সংবাদ জানানো হলে তিনি বলে উঠলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষ কোন ঘটনার কারণেই অসময়ে আগমন করেছেন। যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবেশ করলেন তখন তিনি আবু বকর রা.-কে বললেন : যারা তোমার কাছে আছে তাদের সরিয়ে দাও। আবু বকর রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এরা তো আমার দুই কন্যা আয়িশা ও আসমা। তিনি বললেন : তুমি কি জান আমাকে তো বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে ? আপনার সঙ্গে সফর হওয়া আমার কাম্য ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তিনি বললেন : হ্যাঁ, তুমি আমার সফর সঙ্গী হবে। আবু বকর রা. বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার কাছে দুটি উটণী রয়েছে, যা আমি হিজরতের জন্য প্রস্তুত রেখেছি। এর একটি আপনি গ্রহণ করুন। তিনি বললেন : আমি মূল্যের বিনিময়ে তা গ্রহণ করলাম।

হাদীস নং ২০০৬

ইসমাঈল রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় না করে।

হাদীস নং ২০০৭

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গ্রামবাসীর পক্ষে শহরবাসী কর্তৃক বিক্রয় করা থেকে নিষেধ করেছেন এবং তোমরা প্রতারণামূলক দালালী করবে না। কোন ব্যক্তি যেন তার ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় না করে। কেউ যেন তার ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়। কোন মহিলা যেন তার বোনের (সতীনের) তালাকের দাবী না করে, যাতে সে তার পাত্রে যা কিছু আছে, তা নিজেই নিয়ে নেয়।

হাদীস নং ২০০৮

বিশর ইবনে মুহাম্মদ রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি তার মৃত্যুর পরে তার গোলাম আযাদ হবে বলে ঘোষণা দিল। তারপর সে অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়ল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোলামটিকে নিয়ে নিলেন এবং বললেন, কে একে আমার নিকট থেকে খরিদ করবে? নুআঈশ ইবনে আবদুল্লাহ রা. (তাঁর কাছ থেকে) সেটি এত এত মূল্যে খরিদ করলেন। তিনি গোলামটি তার হাওলা করে দিলেন।

হাদীস নং ২০০৯

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতারণামূলক দালালী থেকে নিষেধ করেছেন।

হাদীস নং ২০১০

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গর্ভস্থিত বাচ্চার গর্ভের প্রসবের মেয়াদের উপর বিক্রি নিষেধ করেছেন। এ এক ধরনের বিক্রয়, যা জাহিলিয়াতের যুগে প্রচলিত ছিল। কেউ এ শর্তে উটণী ক্রয় করতে যে, এই উটণীটি প্রসব করবে পরে ঐ শাবক তার গর্ভ প্রসব করার পর তার মূল্য দেওয়া হবে।

হাদীস নং ২০১১

সাঈদ ইবনে উফায়র রহ………..আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুনাবাযা পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করেছেন। তা হল, বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ক্রেতা কাপড়টি উল্টানো পাল্টানো অথবা দেখে নেওয়ার আগেই বিক্রেতা কর্তৃক তা ক্রেতার দিকে নিক্ষেপ করা। আর তিনি মুলামাসা পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় করতেও নিষেধ করেছেন। মুলামাসা হল কাপড়টি না দেখে স্পর্শ করা (এতেই বেচা-কেনা সম্পন্ন হয়েছে বলে গণ্য হত)।

হাদীস নং ২০১২

কুতাইবা রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দুই ধরনের পোশাক পরিধান করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। তা হল একটি কাপড় শরীরে জড়িয়ে তার এক পার্শ্ব কাঁধের উপর তুলে দেওয়া এবং দুই ধরনের বেচা-কেনা হতে নিষেধ করা হয়েছে; স্পর্শের এবং নিক্ষেপের বেচা-কেনা।

হাদীস নং ২০১৩

ইসমাঈল রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পর্শ ও নিক্ষেপের পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করেছেন।

হাদীস নং ২০১৪

আইয়্যাশ ইবনে ওয়ালীদ রহ………আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ধরনের পোশাক পরিধান এবং স্পর্শ ও নিক্ষেপ এরূপ দু’ ধরনের বেচা-কেনা নিষেধ করেছেন।

হাদীস নং ২০১৫

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……..আবু হুরায়রা রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তোমরা উটণী ও বকরীর দুধ (স্তনে) আটকিয়ে রেখো না। যে ব্যক্তি এরূপ পশু খরিদ করবে, সে দুধ দোহনের পরে দুটি অধিকারের একটি যেটি তার পক্ষে ভাল মনে করবে, তাই করতে পারবে। যদি সে ইচ্ছা করে তবে ক্রীত পশুটি রেখে দিবে আর যদি ইচ্ছা করে তবে তা ফেরৎ দিবে এবং এর সাথে এক সা’ পরিমাণ খেজুর দিবে। আবু সালিহ মুজাহিদ, ওয়ালীদ ইবনে রাবাহ ও মূসা ইবনে ইয়াসার রহ. আবু হুরায়রা রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এক সা’ খেজুরের কথা উল্লেখ রয়েছে। কেউ কেউ ইবনে সীরীন রহ. সূত্রে এক সা’ খাদ্যের কথা বলেছেন। এবং ক্রেতার জন্য তিন দিনের ইখতিয়ার থাকবে । আর কেউ কেউ ইবনে সীরীন রহ. সূত্রে এক সা’ খেজুরের কথা বলেছেন, তবে তিন দিনের ইখতিয়ারের কথা উল্লেখ করেননি। ( ইমাম বুখারী রহ. বলেন অধিকাংশের বর্ণনায় খেজুরের উল্লেখ রয়েছে)।

হাদীস নং ২০১৬

মুসাদ্দাদ রহ…….আবদুল্লাহ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি (স্তনে) দুধ আটকিয়ে রাখা বকরী খরিদ করে তা ফেরৎ দিতে চায় সে যেন এর সঙ্গে এক সা’ পরিমাণ খেজুরও দেয়। আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (পণ্য খরিদ করার জন্য) বণিক দলের সাথে (শহরে প্রবেশের পূর্বে পথিমধ্যে) সাক্ষাত করতে নিষেধ করেছেন।

হাদীস নং ২০১৭

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা (পণ্যবাহী) কাফেলার সাথে (শহরে প্রবেশের পূর্বে) সাক্ষাত করবে না তোমাদের কেউ যেন কারো ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় না করে। তোমরা প্রতারণামূলক দালালী করবে না। শহরবাসী তোমাদের কেউ যেন গ্রামবাসীর পক্ষে বিক্রয় না করে। তোমরা বকরীর দুধ আটকিয়ে রাখবে না। যে এ রূপ বকরী খরিদ করবে, সে দুধ দোহনের পরে এ দুটির মধ্যে যেটি ভাল মনে করবে, তা করতে পারে। সে যদি এতে সন্তুষ্ট হয় তবে বকরী রেখে দিবে, আর যদি সে তা অপছন্দ করে তবে ফেরৎ দিবে এবং এক সা’ পরিমাণ খেজুর দিবে।

হাদীস নং ২০১৮

মুহাম্মদ ইবনে আমর রা. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি (স্তনে) দুধ আটকিয়ে রাখা বকরী খরিদ করে, তবে দোহনের পরে যদি ইচ্ছা করে তবে সেটি রেখে দেবে আর যদি অপছন্দ করে তবে দুহিত দুধের বিনিময়ে এক সা’ খেজুর দিবে।

হাদীস নং ২০১৯

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যদি বাঁদী ব্যভিচার করে এবং তার ব্যভিচার প্রমাণিত হয়, তবে তাকে বেত্রাঘাত করবে। আর তিরস্কার করবে না। তারপর যদি আবার ব্যভিচার করে তাকে বেত্রাঘাত করবে, তিরস্কার করবে না। এরপর যদি তৃতীয়বার ব্যভিচার করে তবে তাকে বিক্রি করে দিবে ; যদিও পশমের রশির (ন্যায় সামান্য বস্তুর) বিনিময়ে হয়।

হাদীস নং ২০২০

ইসমাঈল রহ………আবু হুরায়রা রা. ও যায়েদ ইবনে খালিদ রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অবিবাহিতা দাসী যদি ব্যভিচার করে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, যদি বাঁদী ব্যভিচার করে ব্যভিচার তবে তাকে বেত্রাঘাত কর। তারপর যদি আবার ব্যভিচার করে তাকে বেত্রাঘাত কর। এরপর যদি ব্যভিচার করে তবে তাকে বিক্রি করে দিবে ; যদিও রশির বিনিময়ে হয়।

হাদীস নং ২০২১

আবুল ইয়ামান রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে প্রবেশ করলেন তখন আমি তাঁর নিকট (বারীরা নাম্নী দাসীর খরিদ সংক্রান্ত ঘটনা) উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, তুমি খরিদ কর এবং আযাদ করে দাও। কেননা, যে আযাদ করবে ওয়ালা (আযাদ সূত্রে উত্তরাধিকার) তারই। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিকালের দিকে (মসজিদে নববীতে) দাঁড়িয়ে আল্লাহ তা’আলার যথাযথ প্রশংসা বর্ণনা করে তারপর বললেন, লোকদের কী হল যে, তারা এরূপ শর্তারোপ করে, যা আল্লাহ কিতাবে নেই। কোন ব্যক্তি যদি এমন শর্তারোপ করে, যা আল্লাহর কিতাবে নেই, তা বাতিল, যদিও সে শত শত শর্তারোপ করে। আল্লাহর শর্তই সঠিক ও সুদৃঢ়।

হাদীস নং ২০২২

হাসসান ইবনে আবু আববাদ রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, আয়িশা রা. বারীরার দরদাম করেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের উদ্দেশ্যে বের হয় যান। যখন ফিরে আসেন তখন আয়িশা রা. তাকে বললেন যে, তারা (মালিক পক্ষ) ওয়ালা এর শর্ত ছাড়া বিক্রি করতে রাযী নয়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : ওয়ালা তো তারই, যে আযাদ করে। (রাবী বলেন, আমি নাফি রহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, বারীরার স্বামী আযাদ ছিল, না দাস ? তিনি বললেন, আমি কি করে জানব?

হাদীস নং ২০২৩

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………জারীর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদার রাসূল্লাহ-এ কথা সাক্ষ্য দেওয়ার, সালাত কায়েম করার, যাকাত দেওয়ার আমীরের কথা শুনার ও মেনে চলার এবং প্রত্যেক মুসলমানের হিত কামনা করার উপর বায়আত করেছিলাম।

হাদীস ২০২৪

সালত ইবনে মুহাম্মদ রহ…….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা পণ্যবাহী কাফেলার সাথে (শহরে প্রবেশের পূর্বে সস্তায় পণ্য খরিদের উদ্দেশ্যে) সাক্ষাৎ করবে না এবং শহরবাসীর পক্ষে বিক্রয় না করে। রাবী তাউস রহ. বলেন, আমি ইবনে আব্বাস রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, শহরবাসী যেন গ্রামবাসীর পক্ষে বিক্রয় না করে, তাঁর একথার অর্থ কি? তিনি বললেন, তার হয়ে যেন সে প্রতারণামূলক দালালী না করে।

 

হাদীস নং ২০২৫

আবদুল্লাহ ইবনে সাববাহ রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, গ্রামবাসীর পক্ষে শহরবাসীর বিক্রয় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। ইবনে আব্বাস রা. ও এ মত পোষণ করেছেন।

হাদীস নং ২০২৬

মক্কী ইবনে ইবরাহীম রহ……আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যেন তার ভাইয়ের কেনা-বেচার উপর খরিদ না করে। আর তোমরা প্রতারণামূলক দালালী করবে না এবং শহরবাসী যেন গ্রামবাসীর পক্ষে বিক্রি না করে।

হাদীস নং ২০২৭

মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ……..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, গ্রামবাসীর পক্ষে শহরবাসীর বিক্রয় করা থেকে আমাদের কে নিষেধ করা হয়েছে।

হাদীস নং ২০২৮

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, শহরে প্রবেশের পূর্বে বণিক দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা এবং গ্রামবাসীর পক্ষে শহরবাসীর বিক্রয় করা থেকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন।

হাদীস নং ২০২৯

আইয়্যাশ ইবনে ওয়ালীদ রহ………তাউস রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে আব্বাস রা. -কে গ্রামবাসীর পক্ষে শহরবাসী বিক্রয় করবে না, এ উক্তির অর্থ কি, তা জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তার পক্ষে দালালী করবে না।

হাদীস নং ২০৩০

মুসাদ্দাদ রহ……….আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি স্তনে দুধ আটকিয়ে রাখা (বকরী-গাভী) উটনী খরিদ করে (তা ফেরৎ দিলে) সে যেন তার সাথে এক সা’ পরিমাণ (খেজুরও) ফেরৎ দেয়। তিনি আরো বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বণিক দলের সাথে (শহরে প্রবেশের পূর্বে) সাক্ষাৎ করতে নিষেধ করেছেন।

হাদীস নং ২০৩১

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তোমাদের কেউ ক্রয়-বিক্রয়ের উপর যেন ক্রয়-বিক্রয় না করে এবং তোমরা পণ্য ক্রয় কর না তা বাজারে উপস্থিত না করা পর্যন্ত।

হাদীস নং ২০৩২

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা বণিক দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের থেকে খাদ্য খরিদ করতাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদ্যের বাজারে পৌছানোর পূর্বে আমাদের তা খরিদ নিষেধ করেছেন । আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, তা হল বাজারের প্রান্ত সীমা। উবায়দুল্লাহ রহ.-এর হাদীসে এ বর্ণনা রয়েছে।

হাদীস নং ২০৩৩

মুসাদ্দাদ রহ…….আবদুল্লাহ (ইবনে উমর) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা বাজারের প্রান্ত সীমায় খাদ্য খরিদ করে সেখানেই বিক্রি করে দিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্থানান্তর না করে সেখানেই বিক্রি করতে তাদের নিষেধ করলেন।

হাদীস নং ২০৩৪

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বারীরা রা. আমার কাছে এসে বলল, আমি আমার মালিক পক্ষের সাথে নয় উকিয়া দেওয়ার শর্তে মুকতাবা করেছি-প্রতি বছর যা থেকে এক উকিয়া করে দেওয়া হবে। আপনি (এ ব্যাপারে) আমাকে সাহায্য করান। আমি বললাম, যদি তোমরা মালিক পক্ষ পছন্দ করে যে, আমি তাদের একবারেই তা পরিশোধ করব এবং তোমার ওয়ালা-এর অধিকার আমার হবে, তবে আমি তা করব। তখন বারীরা রা. তার মালিকদের নিকট গেল এবং তাদের তা বলল। তারা তা অস্বীকার করল। বারীরা রা. তাদের নিকট থেকে (আমার কাছে) এল। আর তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সে বলল, আমি (আপনার) সে কথা তাদের কাছে পেশ করেছিলাম। কিন্তু তার নিজেদের জন্য ওয়ালার অধিকার সংরক্ষণ ছাড়া রাযী হয়নি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শোনলেন, আয়িশা রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তা সবিস্তারে জানালেন।তিনি বললেন : তুমি তাকে নিয়ে নাও এবং তাদের জন্য ওয়ালার শর্ত মেনে নাও। কেননা, ওয়ালা এর হক তারই, যে আযাদ করে। আয়িশা রা. তাই করলেন। তারপর বললেন, লোকদের কী হল যে, তারা এমন শর্ত আরোপ করে যা আল্লাহর বিধানে নেই। আল্লাহর বিধানে যে শর্তের উল্লেখ নেই, তা বাতিল বলে গণ্য হবে, শত শর্ত হলেও। আল্লাহর ফায়সালাই সঠিক, আল্লাহর শর্তই সুদৃঢ়। ওয়ালার হক তে তারই, যে আযাদ করে।

হাদীস নং ২০৩৫

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ…………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা রা. একটি দাসী খরিদ করে তাকে আযাদ করার ইচ্ছা করেন। দাসীটির মালিক পক্ষ বলল, দাসীটি এ শর্তে বিক্রি করব যে, তার ওয়ালার হক আমাদের থাকবে।তিনি একথা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উল্লেখ করলেন। তিনি বললেন, এতে তোমার বাঁধা হবে না। কেননা, ওয়ালা তারই, যে আযাদ করে।

হাদীস নং ২০৩৬

আবুল ওয়ালীদ রহ……….উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হাতে হাতে (নগদ নগদ) ছাড়া গমের বদলে গম বিক্রি করা সূদ, নগদ নগদ ছাড়া যবের বদলে যব বিক্রয় সূদ, নগদ নগদ ব্যতীত খেজুরের বিনিময়ে খেজুর বিক্রয় সূদ।

হাদীস নং ২০৩৭

ইসমাঈল রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযাবান নিষেধ করেছেন । তিনি (ইবনে উমর) বলেন, মুযাবানা হল তাজা খেজুর শুকনো খেজুরের বদলে ওযন করে বিক্রয় করা এবং কিসমিস তাজা আঙ্গুরের বদলে ওযন করে বিক্রি করা।

হাদীস নং ২০৩৮

আবুন নুমান রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযাবানা নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, মুযাবানা হল-শুকনা খেজুর তাজা খেজুরের বিনিময়ে ওযন করে বিক্রি করা, বেশি হলে আমার তা আমার প্রাপ্য, কম হলে তা পূরণ করা আমার দায়িত্ব। রাবী বলেন, আমাকে যায়েদ ইবনে সাবিত রা. বলেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুমান করে আরায়া এর অনুমতি দিয়েছেন।

হাদীস নং ২০৩৯

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………মালিক ইবনে আওস রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি একবার এক দীনারের বিনিময়ে সারফ-এর জন্য লোক সন্ধান করছিলেন। তখন তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ রা. আমাকে ডাক দিলেন। আমরা বিনিময় দ্রব্যের পরিমাণ নিয়ে আলোচনা করতে থাকলাম। অবশেষে তিনি আমার সঙ্গে সারফ করতে রাযী হলেন এবং আমার থেকে স্বর্ণ নিয়ে তার হাতে নাড়া-চাড়া করতে করতে বললেন, আমার খাযাঞ্জী গাবা (নামক স্থান) হতে আসা পর্যন্ত (আমার জিনিস পেতে) দেরী করতে হবে। ঐ সময়ে উমর রা. আমাদের কথা-বার্তা শুনছিলেন। তিনি বলে উঠলেন, আল্লাহর কসম! তার জিনিস গ্রহণ না করা পর্যন্ত তুমি তার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারবে না। কারণ, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : নগদ নগদ না হলে স্বর্ণের বদলে স্বর্ণের বিক্রয় রিবা (সূদ) হবে। নগদ নগদ ছাড়া গমের বদলে গমের বিক্রয় রিবা হবে। নগদ নগদ ছাড়া যবের বদলে যবের বিক্রয় রিবা হবে। নগদ নগদ না হলে খেজুরের বদলে খেজুরের বিক্রয় রিবা হবে।

হাদীস নং ২০৪০

সাদাকা ইবনে ফযল রহ………আবু বাকরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সমান সমান ছাড়া তোমরা সোনার বদলে সোনা বিক্রয় করবে না। অনুরূপ রূপার বদলে রূপা সমান সমান ছাড়া (বিক্রি করবে না)। রূপার বদলে সোনা এবং সোনার বদলে রূপা তোমরা যেরূপ দাও, ক্রয়-বিক্রয় করতে পার।

হাদীস নং ২০৪১

উবায়দুল্লাহ ইবনে সাদ রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, আবু সাঈদ খুদরী রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (আবু বাকরার হাদীসের)-অনুরূপ একটি হাদীস তাঁর কাছে বর্ণনা করেন। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. তাঁর (আবু সাঈদ রা.-এর) সঙ্গে দেখা বললেন, হে আবু সাঈদ ! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আপনি কী হাদীস বর্ণনা করে থাকেন ? আবু সাঈদ রা. সারফ (মুদ্রার বিনিময়ে) সম্পর্কে বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছি যে, সোনার বদলে সোনার বিক্রয় সমান পরিমাণ হতে হবে। রূপার বদলে রূপার বিক্রয় সমান হতে হবে।

হাদীস নং ২০৪২

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সমান পরিমাণ ছাড়া তোমরা সোনার বদলে সোনা বিক্রি করবে না, একটি অপরটি থেকে কম-বেশী করবে না। সমান ছাড়া তোমরা রূপার বদলে রূপা বিক্রি করবে না ও একটি অপরটি থেকে কমবেশী করবে না। আর নগদ মুদ্রার বিনিময়ে বাকি মুদ্রা বিক্রি করবে না।

হাদীস নং ২০৪৩

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..আবু সালিহ যায়য়াত রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু সাঈদ খুদরী রা.-কে বলতে শুনলাম, দীনারের বদলে এবং দিরহামের বদলে দিরহাম (সমান সমান বিক্রি করবে) এতে আমি তাকে বললাম, ইবনে আব্বাস রা. তো তা বলেন না? উত্তরে আবু সাঈদ রা. বলেন, আমি তাকে (ইবনে আব্বাস রা.) জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, আপনি তা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে শুনেছেন, না আল্লাহর কিতাবে পেয়েছেন ? তিনি বললেন, এর কোনটি বলিনি। আপনারাই তো আমার চাইতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বেশী জানেন। অবশ্য আমাকে উসামা (ইবনে যায়েদ রা. জানিয়েছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বাকি বিক্রয় ব্যতীত রিবা হয় না। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, আমি সুলাইমান ইবনে হারব রহ.কে বলতে শুনেছি, বাকি বিক্রয় ব্যতীত রিবা হয় না, এ কথার অর্থ আমাদের মতে এই যে, সোনা-রূপার বিনিময়ে, গম যবের বিনিময়ে কম-বেশী বেচাকেনা করাতে দোষ নেই নগদ নগদ হয়, কিন্তু বাকি বেচাকেনাতে কোন মঙ্গল নেই।

হাদীস নং ২০৪৪

হাফস ইবনে উমর রহ…….আবু মিনহাল রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বারা ইবনে আযিব ও যায়েদ ইবনে আরকাম রা.-কে সারফ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম। তাঁরা উভয়ে (একে অপরের সম্পর্কে) বললেন, ইনি আমার চাইতে উত্তম। এরপর উভয়েই বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাকিতে রূপার বিনিময়ে সোনার ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছন।

হাদীস নং ২০৪৫

ইমরান ইবনে মায়সারা রহ………আবু বাকরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমান সমান রূপার বদলে রূপার ক্রয়-বিক্রয় এবং সোনার বদলে সোনার ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন এবং তিনি রূপার বিনিময়ে সোনার বিক্রয়ে এবং সোনার বিনিময়ে রূপার বিক্রয়ে আমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী অনুমতি দিয়েছেন।

হাদীস নং ২০৪৬

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : উপযোগিতা প্রকাশ না পাওয়া পর্যন্ত তোমরা ফল বিক্রি করবে না এবং শুকনা খেজুরের বিনিময়ে তাজা খেজুর বিক্রি করবে না। রাবী সালিম রহ. বলেন, আবদুল্লাহ রা. যায়েদ ইবনে সাবিত রা. সূত্রে আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরে তাজা বা শুকনা খেজুরের বিনিময়ে আরিয়্যা বিক্রয়ের অনুমতি দিয়েছেন। আরিয়্যা ব্যতীত অন্য কিছুতে এরূপ বিক্রির অনুমতি দেননি।

হাদীস নং ২০৪৭

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযাবানা থেকে নিষেধ করেছেন। মুযাবানা অর্থ হল মেপে শুকনা খেজুরের বিনিময়ে তাজা খেজুর এবং মেপে কিসমিসের বিনিময়ে আঙ্গুর ক্রয় করা।

হাদীস নং ২০৪৮

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযাবানা ও মুহাকালা নিষেধ করেছেন। মুযাবানা অর্থ হল খেজুরের বিনিময়ে গাছের মাথায় অবস্থিত তাজা খেজুর ক্রয় করা।

হাদীস নং ২০৪৯

মুসাদ্দাদ রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাকালা ও মুযাবানা থেকে নিষেধ করেছেন।

হাদীস নং ২০৫০

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……….যায়েদ ইবনে সাবিত রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরিয়্যা এর মালিককে তা অনুমানে বিক্রি করার অনুমতি দিয়েছেন।

হাদীস নং ২০৫১

ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান রহ………জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপযোগী হওয়ার আগে ফল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। (এবং এ-ও বলেছেন যে,) এর কিছুই দীনার ও দিরহামের বিনিময়ে ব্যতীত বিক্রি করা যাবে না, তবে আরায়্যার হুকুম এর ব্যতিক্রম।

হাদীস নং ২০৫২

আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল ওহহাব রহ. বলেন যে, আমি মালিকের কাছে শুনেছি, উবায়দুল্লাহ ইবনে রাবী রহ. তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আবু সুফিয়ান রা. সূত্রে আবু হুরায়রা রা. থেকে দাউদ রহ. এই হাদীস কি আপনার কাছে বর্ণনা করেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচ ওসাক অথবা পাঁচ ওসাকের কম পরিমাণে আরিয়্যা বিক্রয়ের অনুমতি দিয়েছেন ? তিনি বললেন, হ্যাঁ।

হাদীস নং ২০৫৩

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….সাহল ইবনে আবু হাসমা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুকনা খেজুরের বিনিময়ে তাজা খেজুর বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন এবং আরিয়্যা-এর অনুমতি দিয়েছেন। তা হল তাজা ফল অনুমানে বিক্রি করা, যাতে (ক্রেতা) তাজা খেজুর খাওয়ার সুযোগ লাভ করতে পারে। রাবী সুফিয়ান রহ. আর একবার এভাবে বর্ণনা করেছেন, অবশ্য তিনি (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরিয়্যা এর ক্ষেত্রে অনুমতি দিয়েছেন যে, ফলের মালিক অনুমানে তাজা খেজুর বিক্রয় করে, যাতে তারা (ক্রেতাগণ) তাজা খেতে পারে। রাবী বলেন, এ কথা পূর্বের কথা একই এবং সুফিয়ান রহ. বলেন, আমি তরুণ বয়সে (আমার উস্তাদ) ইয়াহইয়া (ইবনে সাঈদ রহ.) কে বললাম, মক্কাবাসীগণ তো বলে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরিয়্যা-এর ক্রয়-বিক্রয়ের অনুমতি দিয়েছেন। তিনি বললেন, মক্কাবাসীদের তা কিসে অবহিত করল ? আমি বললাম, তারা জাবির রা. থেকে বর্ণনা করে থাকেন। এতে তিনি নীরব হয়ে গেলেন। সুফিয়ান রহ.-কে জিজ্ঞাসা করা হল , এ হাদীসে এ কথাটুকু নাই যে, উপযোগিতা প্রকাশের আগে ফল বিক্রি নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, না।

হাদীস নং ২০৫৪

মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ……….যায়েদ ইবনে সাবিত রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরিয়্যার ব্যপারে অনুমতি দিয়েছেন যে, ওযন করে খেজুরের বদলে গাছের অনুমান কৃত খেজুর বিক্রি করা যেতে পারে। মূসা ইবনে উকবা রহ. বলেন, আরিয়্যা বলা হয়, বাগানে এসে কতগুলো নির্দিষ্ট গাছের খেজুর (শুকনা খেজুরের বদলে) খরিদ করে নেওয়া।

হাদীস নং ২০৫৫

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফলের উপযোগিতা প্রকাশ হওয়ার আগে তা বিক্রি করতে ক্রেতা বিক্রেতাকে নিষেধ করেছেন।

হাদীস নং ২০৫৬

ইবনে মুকাতিল রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর ফল পোখতা হওয়ার আগে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। আবু আবদুল্লাহ বলেন, অর্থাৎ লালচে হওয়ার আগে।

হাদীস নং ২০৫৭

মুসাদ্দাদ রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফলের রং পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। রাবী বলেন, অর্থাৎ লালচে বর্ণের বা হলুদ বর্ণের না হওয়া পর্যন্ত এবং তা খাওয়ার যোগ্য না হওয়া পর্যন্ত ।

হাদীস নং ২০৫৮

আলী ইবনে হায়সাম রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফলের উপযোগিতা প্রকাশ হওয়ার আগে তা বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। এবং খেজুরের রং ধরার আগে (বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন)। জিজ্ঞাসা করা হল, রং ধরার অর্থ কী ? তিনি বলেন, লাল বর্ণ বা হলুদ বর্ণ ধারণ করা। আবু আবদুল্লাহ বলেন, আমি মুআল্লা ইবনে মানসুর রহ. থেকে হাদীস লিপিবদ্ধ করেছি। কিন্তু এ হাদীস তার থেকে লিখিনি।

হাদীস নং ২০৫৯

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রং ধরার আগে ফল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। জিজ্ঞাসা করা হল, রং ধারণ করার অর্থ কী ? তিনি বললেন, লাল বর্ণ ধারণ করা। পরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : দেখ, যদি আল্লাহ তা’আলা ফল ধরা বন্ধ করে দেন, তবে তোমাদের কেউ (বিক্রেতা) কিসের বদলে তার ভাইয়ের মাল (ফলের মূল্য) নিবে? লাইস রহ………ইবনে শিহাব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি যদি ফলের উপযোগিতা প্রকাশ হওয়ার পূর্বে তা খরিদ করে, পরে তাঁতে মড়ক দেখা দেয়, তবে যা নষ্ট হবে তা মালিকের উপর বর্তাবে।(যুহরী রহ.) বলেন, আমার কাছে সালিম ইবনে আবদুল্লাহ রহ. ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, উপযোগিতা প্রকাশ হওয়ার আগে তোমরা ফল খরিদ করবে না এবং শুকনা খেজুরের বিনিময়ে তাজা খেজুর বিক্রি করবে না।

হাদীস নং ২০৬০

উমর ইবনে হাফস ইবনে গিয়াস রহ……..আমাশ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবরাহীম রহ.-এর কাছে বন্ধক রেখে বাকিতে ক্রয় করার ব্যাপারে আলোচনা করলাম। তিনি বললেন, এতে কোন দোষ নেই। এরপর তিনি আসওয়াদ রহ. সূত্রে আয়িশা রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দিষ্ট মেয়াদে (মূল্য বাকি রেখে) জনৈক ইয়াহুদীর নিকট থেকে খাদ্য খরিদ করেন এবং তাঁর বর্ম বন্ধক রাখেন।

হাদীস নং ২০৬১

কুতাইবা রহ……..আবু সাঈদ খুদরী ও আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে খায়বারে তহসীলদার নিযুক্ত করেন। সে জানীব নামক (উত্তম) খেজুর নিয়ে উপস্থিত হলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, খায়বারের সব খেজুর কি এ রকমের? সে বলল, না আল্লাহর কসম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এরূপ নয়, বরং আমরা দু’ সা’ এর পরিবর্তে এ ধরনের এক সা’ খেজুর নিয়ে থাকি এবং তিন সা’ এর পরিবর্তে এর দু’ সা’। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এরূপ করবে না। বরং মিশ্রিত খেজুর দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে দিরহাম দিয়ে জানাবী খেজুর খরিদ করবে।

হাদীস নং ২০৬২

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ তাবীর করার পরে খেজুর গাছ বিক্রি করলে বিক্রেতা সে ফলের মালিক থাকবে, অবশ্য ক্রেতা যদি (ফল লাভের) শর্ত করে, তবে সে পাবে।

হাদীস নং ২০৬৩

কুতাইবা রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযাবানা নিষেধ করেছেন, আর তা হল বাগানের ফল বিক্রি করা। খেজুর হলে মেপে শুকনা খেজুরের বদলে, আঙ্গুর হলে মেপে কিসমিসের বদলে, আর ফসল হলে মেপে খাদ্যের বদলে বিক্রি করা। তিনি এসব বিক্রি নিষেধ করেছেন।

হাদীস নং ২০৬৪

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি খেজুর গাছ তাবীর করার পরে মূল গাছ বিক্রি করল, সে গাছের ফল যে তাবীর করেছে তারই থাকবে, অবশ্য ক্রেতা যদি ফলের শর্ত করে (তবে সে খাবে)।

হাদীস নং ২০৬৫

ইসহাক ইবনে ওহাব রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাকালা, মুখাদারা, মুলামাসা, মুনাবাযা ও মুযাবানা নিষেধ করেছেন।

হাদীস নং ২০৬৬

কুতাইবা রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাকার পূর্বে ফল বিক্রি নিষেধ করেছেন। (রাবী বলেন) আমরা আনাস রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ফল পাকার অর্থ কি? তিনি বললেন, লালচে বা হলদে হওয়া। (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন) বলত, আল্লাহ তা’আলা যদি ফল নষ্ট করে দেন, তবে কিসের বদলে তোমরা ভাইয়ের মাল গ্রহণ করবে?

হাদীস নং ২০৬৭

আবুল ওয়ালীদ হিশাম ইবনে আবদুল মালিক রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ছিলাম, তিনি সে সময়ে খেজুরের মাথি খাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন, গাছের মধ্যে এমনও গাছ আছে, যা মুমিন ব্যক্তির সদৃশ। আমি বলতে ইচ্ছা করলাম যে, তা হল খেজুর গাছ। কিন্তু আমি লক্ষ্য করলাম যে, আমি সকলের মাঝে বয়ঃকনিষ্ঠ (তাই লজ্জায় বলি নাই। কেউ উত্তর না দেওয়ায়) তিনি বললেন, তা খেজুর গাছ।

হাদীস নং ২০৬৮

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু তায়বা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে শিংগা লাগালেন। তিনি এক সা’ খেজুর দিতে বললেন এবং তার উপর থেকে দৈনিক আয়কর কমানোর জন্য তার মালিককে আদেশ দিলেন।

হাদীস নং ২০৬৯

আবু নুআইম রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, মুআবিয়া রা.-এর মা হিন্দ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলেন, আবু সুফিয়ান রা. একজন কৃপণ ব্যক্তি। এমতাবস্থায় আমি যদি তার মাল থেকে গোপনে কিছু গ্রহণ করি, তাঁতে কি আমার গুনাহ হবে? তিনি বললেন, তুমি তোমার ও সন্তানদের প্রয়োজনানুসারে যথাযথভাবে গ্রহণ করতে পার।

হাদীস নং ২০৭০

ইসহাক ও মুহাম্মদ ইবনে সালাম রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুরআনের আয়াত : যে অভাবমুক্ত সে যেন নিবৃত্ত থাকে এবং যে অভাবগ্রস্ত সে যেন সঙ্গত পরিমাণে ভোগ করে (৪ : ৬)। ইয়াতীমের ঐ অবিভাবক সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়, যে তার তত্ত্বাবধান করে ও তার সম্পত্তির পরিচর্যা করে, সে যদি অভাবগ্রস্ত হয়, তবে তা থেকে নিয়মমাফিক খেতে পারবে।

হাদীস নং ২০৭১

মাহমুদ রহ………জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে সম্পত্তির ভাগ বাঁটোয়ারা হয়নি, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে শুফআ এর অধিকার প্রদান করেছেন। যখন সীমানা নির্ধারিত হয়ে যাবে এবং রাস্তা ভিন্ন করা হয়, তখন আর শুফআ এর অধিকার থাকবে না।

হাদীস নং ২০৭২

মুহাম্মদ ইবনে মাহবুব রহ……..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়নি, তার মধ্যে শুফআ লাভের ফায়সালা প্রদান করেছেন। তারপর যখন সীমানা নির্ধারিত হয়ে যায় এবং স্বতন্ত্র করা হয় তখন আর শুফআ এর অধিকার থাকবে না।

হাদীস নং ২০৭৩

মুসাদ্দাদ রহ……….আবদুল ওয়াহিদ রহ. থেকে এটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন, যে সম্পদ ভাগ-বাটোয়ারা হয়নি (তাতে শুফআ)। হিশাম রহ. মামার রহ. থেকে হাদীস বর্ণনায় মুসাদ্দাদের অনুসরণ করেছেন। আবদুর রাযযাক রহ. বলেছেন, যে সম্পদ ভাগ-বাটোয়ারা হয়নি, সে সব সম্পদেই (শুফআ রয়েছে)। হাদীসটি আবদুর রাহমান ইবনে ইসহাক রা. যুহরী রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ২০৭৪

ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম রহ………ইবনে উমর রা থেকে সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা তিন ব্যক্তি হেঁটে চলছিল।এমন সময় প্রবল বৃষ্টি শুরু হলে তারা এক পাহাড়ের গুহায় প্রবেশ করে। হঠাৎ একটি পাথর গড়িয়ে তাদের গুহার মুখ বন্ধ করে দেয়। তাদের একজন আরেক জনকে বলল; তোমরা যে সব আমল করেছ, তরি মধ্যে উত্তম আমলে ওয়াসীলা করে আল্লাহর কাছে দু’আ কর। তাদের একজন বলল, ইয়া আল্লাহ ! আমার অতিবৃদ্ধ পিতামাতা ছিলেন, আমি (প্রত্যহ সকালে) মেষ চরাতে বের হতাম। তারপর ফিরে এসে দুধ দোহন করতাম। এবং এ দুধ নিয়ে আমার পিতা-মাতার নিকট উপস্থিত হতাম ও তাঁরা তা পান করতেন। তারপরে আমি শিশুদের, পরিজনদের এবং আমার স্ত্রীকে পান করতে দিতাম। একরাত্রে আটকা পড়ে যাই। তারপর আমি যখন এলাম তখন তাঁরা দু’জনে ঘুমিয়ে পড়েছেন। সে বলল, আমি তাদের জাগানো পছন্দ করলাম না। আর তখন শিশুরা আমার পায়ের কাছে (ক্ষুধায়) চীৎকার করছিল। এ অবস্থায়ই আমার এবং পিতামাতার ফজর হয়ে গেল। ইয়া আল্লাহ ! তুমি যদি জান তা আমি শুধুমাত্র তোমার সন্তুষ্টি লাভের আশায় করেছিলাম। তাহলে তুমি আমাদের গুহার মুখ এতটুকু ফাঁক করে দাও, যাতে আমরা আকাশ দেখতে পারি। বর্ণনাকারী বলেন, তখন একটু ফাঁকা হয়ে গেল। আরেকজন বলল, ইয়া আল্লাহ ! তুমি জান যে, আমি আমার এক চাচাতো বোনকে এত চরম ভালবাসতাম, যা একজন পুরুষ নারীকে ভালবাসে থাকে। সে বলল, তুমি আমার থেকে সে মনস্কামনা সিদ্ধ করতে পারবে না, যতক্ষণ আমাকে একশত দীনার না দেবে। আমি চেষ্টা করে তা সংগ্রহ করি। তারপর যখন আমি তার পদদ্বয়ের মাঝে উপবেশন করি, তখন সে বলে আল্লাহকে ভয় কর। বৈধ অধিকার ছাড়া মাহরকৃত বস্তুর সীল ভাঙবে না। এতে আমি তাকে ছেড়ে উঠে পড়ি। (হে আল্লাহ) তুমি যদি জান আমি তা তোমারই সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে করেছি, তবে আমাদের থেকে আরো একটু ফাঁক করে দাও। তখন তাদের থেকে (গুহার মুখের) দুই-তৃতীয়াংশ ফাঁক হয়ে গেল। অপরজন বলল, হে আল্লাহ ! তুমি জান যে, এক ফারাক (পরিমাণ) শস্য দানার বিনিময়ে আমি একজন মজুর রেখেছিলাম। আমি যখন তাকে তা দিতে গেলে সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করল। তারপর আমি সে এক ফারাক শস্য দানা দিয়ে চাষ করে ফসল উৎপন্ন করি এবং তা দিয়ে গরু খরিদ করি ও রাখাল নিযুক্ত করি। কিছুকাল পরে সে মজুর এসে বলল, হে আল্লাহর বান্দা ! আমাকে আমার পাওনা দিয়ে দাও। আমি বললাম, এই গরুগুলো ও রাখাল নিয়ে যাও। সে বলল, তুমি কি আমার সাথে উপহাস করছ ? আমি বললাম, আমি তোমার সাথে উপহাস করছি না বরং এসব তোমার। হে আল্লাহ ! তুমি যদি জান আমি তা তোমারই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করছি, তবে আমাদের থেকে (গুহার মুখ) খুলে দাও। তখন তাদের থেকে গুহার মুখ খুলে গেল।

হাদীস নং ২০৭৫

আবুন নুমান রহ………আবদুর রাহমান ইবনে আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছিলাম। এ সময়ে এলোমেলো লম্বা চুল বিশিষ্ট এক মুশরিক ব্যক্তি তার বকরী হাঁকিয়ে উপস্থিত হল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, এটা কি বিক্রির জন্য, না দান হিসাবে, অথবা তিনি বললেন, না হেবা হিসাবে? সে বলল, বরং বিক্রির জন্য। তখন তিনি তার কাছ থেকে একটি বকরী খরিদ করলেন।

হাদীস নং ২০৭৬

আবুল ইয়ামান রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : (হযরত) ইবরাহীম আ. সারাকে সাথে নিয়ে হিজরত করলেন এবং এমন এক জনপদে প্রবেশ করলেন, যেখানে এক বাদশাহ ছিল, অথবা বললেন, এক অত্যাচারী শাসক ছিল। তাকে বলা হল যে, ইবরাহীম (নামক এক ব্যক্তি) এক পরমা সুন্দরী নারীকে নিয়ে (আমাদের এখানে প্রবেশ করেছে। সে তখন তাঁর কাছে লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞাসা করল যে, হে ইবরাহীম ! তোমার সাথে এ নারী কে ? তিনি বললেন, আমার বোন। তারপর তিনি সারার কাছে ফিরে এসে বললেন, তুমি আমার কথা মিথ্যা প্রতিপন্ন করা না। আমি তাদেরকে বলেছি যে, তুমি আমার বোন। আল্লাহর কসম ! দুনিয়াতে (এখন) তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ মুমিন নেই। সুতরাং আমি ও তুমি দীনী ভাই বোন। এরপর ইবরাহীম আ. (বাদশাহর নির্দেশে) সারাকে বাদশাহর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। বাদশাহ তাঁর দিকে অগ্রসর হল। সারা উযূ করে সালাত আদায়ে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং এ দু’আ করলেন হে আল্লাহ ! আমিও তোমার উপর এবং তোমার রাসূলের উপর ঈমান এনেছি এবং আমার স্বামী ছাড়া সকল থেকে আমার লজ্জা স্থানের সংরক্ষণ করেছি। তুমি এই কাফিরকে আমার উপর ক্ষমতা দিও না। তখন বাদশাহ বেহুঁশ হয়ে পড়ে মাটিতে পায়ের আঘাত করতে লাগল। তখন সারা বললেন, আয় আল্লাহ ! এ যদি মারা যায় তবে লোকে বলবে, স্ত্রীলোকটি একে হত্যা করেছে। তখন সে সংজ্ঞা ফিরে পেল। এভাবে দুইবার বা তিনবারের পর বাদশাহ বলল, আল্লাহর কসম ! তোমরা তো আমার নিকট এক শয়তানকে পাঠিয়েছ। একে ইবরাহীমের কাছে ফিরিয়ে দাও এবং তার জন্য হাজিরাকে হাদিয়া স্বরূপ দান কর। সারা রা. ইবরাহীম আ.-এর নিকট ফিরে এসে বললেন, আপনি জানেন কি, আল্লাহ তা’আলা কাফিরকে লজ্জিত ও নিরাশ করেছেন এবং সে এক বাঁদী হাদিয়া হিসাবে দেয়।

হাদীস নং ২০৭৭

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাদ ইবনে আবু ওয়াক্বাস ও আবদ ইবনে যামআ উভয়ে এক বালকের ব্যাপারে বিতর্ক করেন। সাদ রা. বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এতো আমার ভাই উৎবা ইবনে আবী ওয়াক্বাসের পুত্র। সে তার পুত্র হিসাবে আমাকে ওয়াসিয়্যাত করে গেছে। আপনি ওর সাদৃশ্যের প্রতি লক্ষ্য করুন। আবদ ইবনে যামআ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এ আমার ভাই, আমার পিতার দাসীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলেন যে, উতবার সাথে তার পরিষ্কার সাদৃশ্য রয়েছে। তিনি বললেন, এ ছেলেটি তুমি পাবে, হে আবদ ইবনে যামআ ! বিছানা যার, সন্তান তার। ব্যভিচারীর জন্য রয়েছে বঞ্চনা। হে সাওদা বিনতে যামআ ! তুমি এর থেকে পর্দা কর। ফলে সাওদা রা. কখনও তাকে দেখেননি।

হাদীস নং ২০৭৮

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….আবদুর রাহমান ইবনে আওফ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি সুহায়ব রা. কে বলেন, আল্লাহকে ভয় কর। তুমি নিজ পিতা ছাড়া অন্যকে নিজের পিতা বলে দাবী করো না। এর উত্তরে সুহায়ব রা. বলেন, আমি এতে আনন্দবোধ করব না যে, এত এত সম্পদ হোক আর আমি আমার পিতৃত্বের দাবী অন্যের প্রতি আরোপ করি, বরং (আসল ব্যাপার) আমাকে শিশুকালে চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

হাদীস নং ২০৭৯

আবুল ইয়ামান রহ………হাকীম ইবনে হিযাম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি বলুন, আমি জাহিলিয়্যা যুগে দান, খায়রাত, গোলাম আযাদ ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার ইত্যাদি যে সব নেকীর কাজ করেছি, এতে কি আমি সাওয়াব পাব? হাকীম রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : অতীতের সৎ কর্মসহ তুমি ইসলাম গ্রহণ করেছ অর্থাৎ তুমি যে সব নেকী করছ, তার পুরোপুরি সাওয়াব লাভ করবে।

হাদীস নং ২০৮০

যুহায়ব ইবনে হারব রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একবার) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মৃত বকরীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন, তোমরা এর চামড়া কাজে লাগাও না কেন? তারা বললেন, এ তো মৃত। তিনি বললেন, শুধু তার গোশত খাওয়া হারাম করা হয়েছে।

হাদীস নং ২০৮১

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শপথ সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ। অচিরেই তোমাদের মাঝে ন্যায় বিচারক রূপে মারয়াম তনয় (ঈসা আ.) অবতরণ করবেন। তারপর তিনি ক্রুশ ভেংগে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন, জিযয়া রহিত করবেন এবং ধন-সম্পদের এরূপ প্রাচুর্য হবে যে, কেউ তা গ্রহণ করবে না।

হাদীস নং ২০৮২

হুমাইদী রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে খাত্তাব রা.-এর নিকট সংবাদ পৌঁছল যে, অমুক ব্যক্তি শরাব বিক্রি করেছে। তিনি বললেন, আল্লাহ তা’আলা অমুকের বিনাশ করুন। সে কি জানে না যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহ তা’আলা ইয়াহুদীদের সর্বনাশ করুন, তাদের জন্য চর্বি হারাম করা হয়েছিল : কিন্তু তারা তা গলিয়ে বিক্রি করে।

হাদীস নং ২০৮৩

আবদান রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহ ইয়াহুদীদের বিনাশ করুন। তাদের জন্য চর্বি হারাম হয়েছে। তারা তা (গলিয়ে) বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করে। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন,قاتلهم الله এর অর্থ আল্লাহ তাদের বিনাশ করুন قتل অর্থ বিনাশ করা গেল الخرمون এর অর্থ মিথ্যাবাদী।

হাদীস নং ২০৮৪

আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব রহ………সাঈদ ইবনে আবুল হাসান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে আব্বাস রা.-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম, এমন সময়ে তার কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আবু আব্বাস ! আমি এমন ব্যক্তি যে, আমার জীবিকা হস্তশিল্পে। আমি এ সব ছবি তৈরী করি। ইবনে আব্বাস রা. তাকে বলেন, (এ বিষয়ে) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমি যা বলতে শুনেছি, তাই তোমাকে শোনাব। তাকে আমি বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোন ছবি তৈরী করে আল্লাহ তা’আলা তাকে শাস্তি দিবেন, যতক্ষণ না সে তাঁতে প্রাণ সঞ্চার করে। আর সে তাঁতে কখনো প্রাণ সঞ্চার করতে পারবে না। (এ কথা শুনে) লোকটি ভীষণভাবে ভয় পেয়ে গেল এবং তার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। এতে ইবনে আব্বাস রা. বললেন, আক্ষেপ তোমার জন্য, তুমি যদি এ কাজ নাই ছাড়তে পার, তবে এ গাছ-পালা এবং যে সকল জিনিসে প্রাণ নেই, তা তৈরী করতে পার। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, সাঈদ রা. বলেছেন আমি নযর ইবনে আনাস রা. থেকে শুনেছি তিনি বলেছেন, ইবনে আব্বাস রা. হাদীস বর্ণনা করার সময় আমি তার কাছে ছিলাম। ইমাম বুখারী রহ. আরো বলেন, সাঈদ ইবনে আবু আরুবাহ রহ. একমাত্র এ হাদীসটি নযর ইবনে আনাস রা. থেকে শুনেছেন।

হাদীস নং ২০৮৫

মুসলিম রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো নাযিল হলো, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে বললেন, শরাবের ব্যবসা হারাম করা হয়েছে।

হাদীস নং ২০৮৬

বিশর ইবনে মারহুম রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেছেন যে, কিয়ামতের দিবসে আমি নিজে তিন ব্যক্তির বাদী হব। এক ব্যক্তি, যে আমার নামে ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করল। আরেক ব্যক্তি, যে কোন আযাদ মানুষকে বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করল। আর এক ব্যক্তি, যে কোন মজুর নিয়োগ করে তার থেকে পুরা কাজ আদায় করে এবং তার পারিশ্রমিক দেয় না।

হাদীস নং ২০৮৭

সুলাইমান ইবনে হারব রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাফিয়্যা রা. বন্দীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন তিনি দিহয়া কালবী রা.-এর ভাগে পড়েন, এর পরে তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অধীনে এসে যান।

হাদীস নং ২০৮৮

আবুল ইয়ামান রহ………আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত যে, একদা তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বসা ছিলাম, তখন তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমরা বন্দী দাসীর সাথে সংগত হই। কিন্তু আমরা তাদের (বিক্রয় করে) মূল্য হাসিল করতে চাই। এমতাবস্থায় আযল-(নিরুদ্ধ সংগম করা) সম্পর্কে আপনি কি বলেন ? তিনি বললেন, আরে তোমরা কি এরূপ করে থাক! তোমরা যদি তা (আযল) না কর তাঁতে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কারণ আল্লাহ তা’আলা যে সন্তান জন্ম হওয়ার ফায়সালা করে রেখেছেন, তা অবশ্যই জন্মগ্রহণ করবে।

হাদীস নং ২০৮৯

ইবনে নুমাইর রহ……….জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুদাব্বার গোলাম বিক্রি করেছেন।

হাদীস নং ২০৯০

কুতাইবা রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুদাব্বার বিক্রি করেছেন।

হাদীস নং ২০৯১

যুহাইর ইবনে হারব রহ………..যায়েদ ইবনে খালিদ ও আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অবিবাহিত ব্যভিচারিণী দাসী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তাকে বলতে শুনেছেন যে, ব্যভিচারিণী কে বেত্রাঘাত কর। সে আবার ব্যভিচার করলে আবার বেত্রাঘাত কর। এরপর বিক্রি করে দাও তৃতীয় বা চতুর্থ বারের পরে।

হাদীস নং ২০৯২

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছি, তোমাদের কোন দাসী ব্যভিচার করলে এবং তার ব্যভিচার প্রমাণিত হলে তাকে ‘হদ’ স্বরূপ বেত্রাঘাত করবে এবং তাকে ভৎর্সনা করবে না। এরপর যদি সে আবার ব্যভিচার করে তাকে ‘হদ’ হিসাবে বেত্রাঘাত করবে কিন্তু তাকে ভৎর্সনা করবে না। তারপর সে যদি তৃতীয়বার ব্যভিচার করে এবং তার ব্যভিচার প্রমাণিত হয় তবে তাকে বিক্রি করে দেবে, যদিও তা চুলের রশির (তুচ্ছ মূল্যের) বিনিময়ে হয়।

হাদীস নং ২০৯৩

আবদুল গাফফার ইবনে দাউদ রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খঅয়বার গমন করেন। যখন আল্লাহ তা’আলা তাঁর পক্ষে দুর্গের বিজয় দান করেন, তখন তাঁর সামনে সাফিয়্যা রা. বিনতে হুয়ায়্যি ইবনে আখতাব এর সৌন্দর্যের আলোচনা করা হয়। তাঁর স্বামী নিহত হয় এবং তিনি তখন ছিলেন নব-বিবাহিতা। অবশেষে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নিজের জন্য গ্রহণ করে নেন। তিনি তাকে নিয়ে রওয়ানা হন। যখন আমরা সাদ্দা রাওহা নামক স্থানে উপনীত হলাম, তখন সাফিয়্যা রা. পবিত্র হলেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে মিলিত হন। তারপর চামড়ার ছোট দস্তরখানে হায়েজ (খেজুরের ছাতু ও ঘি মিশ্রিত খাদ্য) তৈরী করে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা আশেপাশের লোকদের উপস্থিত হওয়ার জন্য খবর দিয়ে দাও। এই ছিল সাফিয়্যা রা.-এর বিবাহে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ওলীমা। এরপর আমরা মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়অনা হই। আনাস রা. বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখতে পেলাম যে, তাকে নিজের আবা দিয়ে ঘেরাও করে দিচ্ছেন। তারপর তিনি তাঁর উটের পাশে বসে হাঁটু সোজা করে রাখলেন, পরে সাফিয়্যা রা. তাঁর হাঁটুর উপর পা দিয়ে ভর করে আরোহণ করলেন।

হাদীস নং ২০৯৪

কুতাইবা রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মক্কা বিজয়ের বছর মক্কায় অবস্থানকালে বলতে শুনেছেন : আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূল শরাব, মৃত জন্তু, শুকর ও মূর্তি কেনা-বেচা হারাম করে দিয়েছেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! মৃত জন্তুর চর্বি সম্পর্কে আপনি কি বলেন ? তা দিয়ে তো নৌকায় প্রলেপ দেওয়া হয় এবং চামড়া তৈলাক্ত করা হয় আর লোকে তা দ্বারা জ্বালিয়ে থাকে। তিনি বললেন, না, তাও হারাম। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা’আলা ইয়াহুদীদের বিনাশ করুন। আল্লাহ যখন তাদের জন্য মৃতের চর্বি হারাম করে দেন, তখন তারা তা গলিয়ে বিক্রি করে মূল্য ভোগ করে। আবু আসিম রহ…….আতা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাবির রা.-কে (হাদীসটি) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি।

হাদীস নং ২০৯৫

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবু মাসউদ আনসারী রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুরের মূল্য, ব্যভিচারের বিনিময় এবং গণকের পারিতোষিক (গ্রহণ করা) থেকে নিষেধ করেছেন।

হাদীস নং ২০৯৬

হাজ্জাজ ইবনে মিনহাল রহ……..আউন ইবনে আবু জুহায়ফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে দেখেছি যে, তিনি একটি শিংগা লাগানেওয়া গোলাম কিনলেন। তিনি তার শিংগা লাগানোর যন্ত্র ভেঙ্গে ফেলতে নির্দেশ দিলে তা ভেঙ্গে ফেলা হল। আমি তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রক্তের মূল্য, কুকুরের মূল্য, দাসীর (ব্যভিচারের মাধ্যমে) উপার্জন করা থেকে নিষেধ করেছেন। আর তিনি শরীরে উলকি অংকনকারী ও উলকি গ্রহণকারী, সূদখোর ও সূদ দাতার উপর এবং (জীবের) ছবি অংকনকারীর উপর লা’নত করেছেন।

 সলম অধ্যায় (২০৯৭-২১১৩)

হাদীস নং ২০৯৭

আমর ইবনে যুরারা রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করেন তখন লোকেরা এক বা দু’বছরের বাকীতে (রাবী ইসমাঈল সন্দেহ করে বলেন, দু’ অথবা তিন বছরের (মেয়াদে) সলম (পদ্ধতিতে) বেচা-কেনা করত। এতে তিনি বললেন,) যে ব্যক্তি খেজুরের সলম করতে চায় সে যেন নির্দিষ্ট মাপে এবং নির্দিষ্ট ওযনে সলম করে।

হাদীস নং ২০৯৮

মুহাম্মদ রহ……..ইবনে আবু নাজীহ রহ. থেকে নির্দিষ্ট মাপে এবং নির্দিষ্ট ওযনে (সলম করার কথা) বর্ণিত রয়েছে।

হাদীস নং ২০৯৯

সাদাকা রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আসেন তখন মদীনাবাসী ফলে দু’ ও তিন বছরের মেয়াদে সলম করত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : কোন ব্যক্তি সলম করলে সে যেন নির্দিষ্ট মাপে এবং নির্দিষ্ট ওযনে নির্দিষ্ট মেয়াদে সলম করে।

হাদীস নং ২১০০

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..ইবনে আবু নাজীহ রহ. সূত্রে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সে যেন নির্দিষ্ট মাপে ও নির্দিষ্ট মেয়াদে সলম করে।

হাদীস নং ২১০১

কুতাইবা রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মদীনা) আসেন এবং বলেন, নির্দিষ্ট ওযনে ও নির্দিষ্ট মেয়াদে (সলম) কর।

হাদীস নং ২১০২

আবুল ওয়ালীদ রহ. ইয়াহইয়া রহ. ও হাফস ইবনে উমর রহ…….মুহাম্মদ অথবা আবদুল্লাহ ইবনে আবুল মুজালিদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে শাদ্দাদ ইবনে হাদ ও আবু বুরদাহ রহ.-এর মাঝে সলম কেনা-বেচার ব্যাপারে মতভেদ দেখা দিলে তাঁরা আমাকে ইবনে আবু আওফা রা.-এর নিকট পাঠান। আমি এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর ও উমর রা.-এর যুগে আমরা গম, যব, কিসমিস ও খেজুরের সলম করতাম। (তিনি আরো বলেন) এবং আমি ইবনে আবযা রা.-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনিও অনুরূপ বলেন।

হাদীস নং ২১০৩

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………মুহাম্মদ ইবনে আবু মুজালিদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে সাদ্দাদ ও আবু বুরদাহ রহ. আমাকে আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রা.-এর কাছে পাঠান। তাঁরা বললেন যে, (তুমি গিয়ে) তাকে জিজ্ঞাসা কর, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে সাহাবায়ে কিরাম গম বিক্রয় কি সলম (পদ্ধতি গ্রহণ) করতেন ? আবদুল্লাহ রা. বললেন, আমরা সিরিয়ার লোকদের সঙ্গে গম, যব ও কিসমিস নির্দিষ্ট মাপে ও নির্দিষ্ট মেয়াদে সলম করতাম। আমি বললাম, যার কাছে এসবের মূল বস্তু থাকত তাঁর সঙ্গে ? তিনি বললেন, আমরা এ সম্পর্কে তাদের জিজ্ঞাসা করিনি।তারপর তাঁরা দু’জনে আমাকে আববদুর রহমান ইবনে আবযা রা.-এর কাছে পাঠালেন এবং আমি তাকে (এ ব্যাপারে) জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে সাহাবীগণ সলম করতেন, কিন্তু তাদেরকে জিজ্ঞাসা করতেন যে, তাদের কাছে মূল বস্তু মওজুদ আছে কি-না।

হাদীস নং ২১০৪

ইসহাক ওয়াসিতী রহ……….মুহাম্মদ ইবনে আবু মুজালিদ রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন, আমরা তাদের সঙ্গে গম ও যবে সলম করতাম।

হাদীস নং ২১০৫

কুতাইবা রহ……….শায়বানী রহ. থেকে বর্ণিত যে, রাবী বলেন, গম, যব ও কিসমিসে (সলম করতেন)। আবদুল্লাহ ইবনুল ওয়ালীদ রহ. সুফিয়ান রহ. সূত্রে শায়বানী রহ.-এর বর্ণনায় রয়েছে এবং যায়তুনে।

হাদীস নং ২১০৬

আদম রহ………আবুল বাখতারী তাঈ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে আব্বাস রা.-কে খেজুরে সলম করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর খাবার যোগ্য এবং ওযন করার যোগ্য হওয়ার আগে বিক্রি করা নিষেধ করেছেন। ঐ সময় এক ব্যক্তি বলল, কী ওযন করবে ? তার পাশের এক ব্যক্তি বলল, সংরক্ষিত হওয়া পর্যন্ত । মুআয রহ. সূত্রে শুবা রহ. থেকে আমর রা. বর্ণিত, আবুল বাখতারী রহ. বলেছেন, ইবনে আব্বাস রা.-কে বলতে শুনেছি যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ (করতে) নিষেধ করেছেন।

হাদীস নং ২১০৭

আবুল ওয়ালীদ রহ………আবুল বাখতারী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে উমর রা.-কে খেজুর সলম করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, খেজুর আহারযোগ্য হওয়ার আগে তা বিক্রি করা নিষেধ করা হয়েছে, আর নগদ রূপার বিনিময়ে বাকী রূপা বিক্রয় করতেও (নিষেধ করা হয়েছে)। আমি ইবনে আব্বাস রা.-কে খেজুরে সলম করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাওয়ার যোগ্য এবং ওযনের যোগ্য হওয়ার আগে খেজুর বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন।

হাদীস নং ২১০৮

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….আবুল বাখতারী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে উমর রা.-কে খেজুর সলম করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, আহারযোগ্য হওয়ার আগে ফল বিক্রি করতে উমর রা. নিষেধ করেছেন এবং তিনি নগদ সোনা বা রূপার বিনিময়ে বাকীতে সোনা বা রূপা বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। আমি এ সম্পর্কে ইবনে আব্বাস রা.-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাওয়ার যোগ্য এবং ওযনের যোগ্য হওয়ার আগে খেজুর বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। আমি বললাম, এর ওযন করা কি? তখন তার নিকটে বসা একজন বলে উঠল, (অর্থাৎ) সংরক্ষণ পর্যন্ত।

হাদীস নং ২১০৯

মুহাম্মদ ইবনে সালাম রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ইয়াহুদীর কাছ থেকে বাকীতে খাদ্য খরিদ করে তাঁর লৌহ নির্মিত বর্ম ইয়াহুদীর কাছে বন্ধক রেখেছেন।

হাদীস নং ২১১০

মুহাম্মদ ইবনে মাহবুব রহ………আমাশ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা সলম ক্রয়-বিক্রয়ে বন্ধক রাখা সম্পর্কে ইবরাহীমকে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বলেন, আমাকে আসওয়াদ রহ. আয়িশা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ইয়াহুদীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট মেয়াদে বাকীতে খাদ্য খরিদ করে তার নিকট নিজের লৌহ নির্মিত বর্ম বন্ধক রেখেছেন।

হাদীস নং ২১১১

আবু নুআইম রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করেন, তখন তারা (মদীনাবাসী) দু’ ও তিন বছরের মেয়াদে ফলের বিক্রয়ে সলম করত। তিনি বলেন, তোমরা নির্দিষ্ট মাপে ও নির্দিষ্ট মেয়াদে সলম করবে। আবদুল্লাহ ইবনে ওয়ালীদ রহ……ইবনে আবু নাজীহ রহ. সূত্রে বর্ণিত, আর তিনি বলেন নির্দিষ্ট মাপে ও নির্দিষ্ট ওযনে।

হাদীস নং ২১১২

মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ……..মুহাম্মদ ইবনে আবু মুজালিদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু বুরদা ও আবদুল্লাহ ইবনে শাদ্দাদ রহ. আমাকে আবদুর রহমান ইবনে আবযা ও আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রা.-এর নিকট পাঠালেন। আমি সলম (পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয়) সম্পর্কে তাদের জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা উভয়ে বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে (জিহাদে) আমরা মালে গনীমত লাভ করতাম, আমাদের কাছে সিরিয়া থেকে কৃষকগণ আসলে আমরা তাদের সঙ্গে গম, যব ও যায়তুন নির্দিষ্ট মেয়াদে সলম করতাম । তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তাদের কাছে সে সময় ফসল মওজুদ থাকত, কি থাকত না? তাঁরা উভয়ে বললেন, আমরা এ বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসা করিনি।

হাদীস নং ২১১৩

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………আবদুল্লাহ (ইবনে উমর রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা (মুশরিকরা) গর্ভবতী উটনীর বাচ্চার বাচ্চা প্রসব করার মেয়াদে ক্রয়-বিক্রয় করত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ থেকে নিষেধ করলেন। (রাবী) নাফি রহ.-এর ব্যাখ্যা করেছেন, উটনী তার পেটের বাচ্চা প্রসব করবে।

শুফআ অধ্যায় (২১১৪-২১১৬)

হাদীস নং ২১১৪

মুসাদ্দাদ রহ……..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা হয়নি, তাতে শুফআ এর ফায়সালা দিয়েছেন। যখন সীমানা নির্ধারিত হয়ে যায় এবং রাস্তাও পৃথক হয়ে যায়, তখন শুফআ এর অধিকার থাকে না।

হাদীস নং ২১১৫

মাক্কী ইবনে ইবরাহীম রহ……….আমর ইবনে শারীদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা.-এর কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তখন মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা. এসে তাঁর হাত আমার কাঁধে রাখেন। এমতাবস্থায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আযাদকৃত গোলাম আবু রাফি রা. এসে বললেন, হে সাদ ! আপনার বাড়িতে আমার যে দুটি ঘর আছে, তা আপনি আমার থেকে খরিদ করে নিন। সাদ রা. বললেন, আল্লাহর কসম, আমি সে দুটি খরিদ করব না। তখন মিসওয়ার রা. বললেন, আল্লাহর কসম, আপনি এ দুটো অবশ্যই খরিদ করবেন। সাদ রা. বললেন, আল্লাহর কসম, আমি তোমাকে কিস্তিতে চার হাজার (দিরহাম)-এর অধিক দিব না। আবু রাফি রা. বললেন, এই ঘর দুটির বিনিময়ে আমাকে পাঁচশ দীনার দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে। আমি যদি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে না শুনতাম যে, প্রতিবেশী অধিক হকদার তার নৈকট্যের কারণে, তাহলে আমি এ দুটি ঘর আপনাকে চার হাজার (দিরহাম)-এর বিনিময়ে কিছুতেই দিতাম না। আমাকে এ দুটি ঘরের বিনিময়ে পাঁচশ দীনার দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তারপর তিনি তা তাকে (সাদকে) দিয়ে দিলেন।

হাদীস নং ২১১৬

হাজ্জাজ ও আলী রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার দুজন প্রতিবেশী রয়েছে, তাদের মধ্যে কাকে আমি হাদিয়া দিব? তিনি বললেন, উভয়ের মধ্যে যার দরজা তোমার বেশী কাছে।

ইজারা অধ্যায় (২১১৭-২১৪১)

হাদীস নং ২১১৭

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ……..আবু মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমানতদার খাজাঞ্চি, যাকে কোন কিছু আদেশ করা হলে সন্তুষ্টচিত্তে তা আদায় করে, সে হল দানকারীদের একজন।

হাদীস নং ২১১৮

মুসাদ্দাদ রহ………আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হাযির হলাম, আমার সঙ্গে আশআরী গোত্রের দু’জন লোক ছিল। তিনি বলেন, আমি বললাম, আমি জানতাম না যে, এরা কর্ম প্রার্থী হবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি কর্ম প্রার্থী হয়, আমরা আমাদের কাজে তাকে কখনো নিয়োজিত করি না অথবা বলেছেন কখনো করব না।

হাদীস নং ২১২৯

সাঈদ ইবনে ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ কুরাইশী রহ……..আবু মাসউদ আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাদকা করার নির্দেশ দিলে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ বাজারে চলে যেত এবং বোঝা বহন করে এক মুদ (খাদ্য) মজুরী হিসাবে পেত (এবং তা থেকে দান করত) আর তাদের কারো কারো এখন লক্ষ মুদ্রা রয়েছে। (বর্ণনাকারী শাকীক) বলেন, আমার ধারণা, এর দ্বারা তিনি (আবু মাসউদ) নিজেকে ইঙ্গিত করেছেন।

হাদীস নং ২১৩০

মুসাদ্দাদ রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাণিজ্যিক কাফেলার সাথে সাক্ষাৎ করা থেকে নিষেধ করেছেন, এবং শহরবাসী, গ্রামবাসীর পক্ষে বেচা-কেনা করবে না। (রাবী তাউস রহ.) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে ইবনে আব্বাস, শহরবাসী গ্রামবাসীর পক্ষে বেচা-কেনা করবে না-এর কথার অর্থ কি ? তিনি বললেন, শহরবাসী গ্রামবাসীর পক্ষে দালাল হবে না।

হাদীস নং ২১৩১

আমর ইবনে হাফস রহ…….খাব্বাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একজন কর্মকার ছিলাম। আমি আস ইবনে ওয়ায়িলের তরবারি বানিয়ে দিলাম। তার নিকট আমার পাওনা কিছু মজুরী জমে যায়। আমি পাওনা টাকার তাগাদা দিতে তার কাছে গেলাম। সে বলল, আল্লাহর কসম ! আমি তোমাকে টাকা দিব না, যে পর্যন্ত না তুমি মুহাম্মদকে অস্বীকার করবে। আমি বললম, আল্লাহর কসম, আমি তা করব না, যে পর্যন্ত না তুমি মৃত্যুবরণ করবে, তারপর পুনরুত্থিত হবে। সে বলল, আমি কি মৃত্যুর পর পুনরুত্থিত হব ? আমি বললাম, হ্যাঁ। সে বলল, তাহলে তো সেখানে আমার ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিও হবে । তখন আমি তোমার পাওনা পরিশোধ করে দিব। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করলেন। আপনি কি সে ব্যক্তিকে দেখেছেন, যে আমার নিদর্শন সমূহ অস্বীকার করে এবং বলে আমাকে (পরকালে) অবশ্যই ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দেওয়া হবে (২ : ৭৭)।

হাদীস নং ২১৩২

আবু নুমান রহ………আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একদল সাহাবী কোন এক সফরে যাত্রা করেন। তারার এক আরব গোত্রে পৌছে তাদের মেহমান হতে চাইলেন। কিন্তু তারা তাদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল।সে গোত্রের সরদার বিচ্ছু দ্বারা দংশিত হল। লোকেরা তার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করল। কিন্তু কিছুতেই কোন উপকার হল না। তখন তাদের কেউ বলল, এ কাফেলা যারা এখানে অবতরণ করেছে তাদের কাছে তোমরা গেলে ভাল হত। সম্ভাবত, তাদের কারো কাছে কিছু থাকতে পারে। ওরা তাদের নিকট গেল এবং বলল, হে যাত্রীদল ! আমাদের সরদারকে বিচ্ছু দংশন করেছে, আমরা সব রকমের চেষ্টা করেছি, কিন্তু কিছুতেই উপকার হচ্ছে না। তোমাদের কারো কাছে কিছু আছে কি ? তাদের একজন বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহর কসম আমি ঝাড়-ফুক করতে পারি। আমরা তোমাদের মেহমানদারী কামনা করেছিলাম, কিন্তু তোমরা আমাদের জন্য মেহমানদারী করনি। কাজেই আমি তোমাদের ঝাড়-ফুক করব না, যে পর্যন্ত না তোমরা আমাদের পারিশ্রমিক নির্ধারণ কর। তখন তারা এক পাল বকরীর শর্তে তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হল। তারপর তিনি গিয়ে আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন (সূরা ফাতিহা) পড়ে তার উপর ফু দিতে লাগলেন। ফলে সে (এমনভাবে নিরাময় হল) যেন বন্ধন থেকে মুক্ত হল এবং সে এমনভাবে চলতে ফিরতে লাগল যেন তার কোন কিছু ছিল না। (বর্ণনাকারী বলেন, ) তারপর তারা তাদের স্বীকৃত পারিশ্রমিক পুরোপুরি দিয়ে দিল। সাহাবীদের কেউ কেউ বলেন, এগুলো বন্টন কর। কিন্তু যিনি ঝাড়-ফুক করেছিলেন, তিনি বললেন এটা করব না, যে পর্যন্ত না আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গিয়ে তাকে এই ঘটনা জানাই এবং লক্ষ্য করি তিনি আমাদের কি হুকুম দেন। তারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে ঘটনা বর্ণনা করলেন। তিনি বলেন, তুমি কিভাবে জানলে যে, সূরা ফাতিহা একটি দু’আ ? তারপর বলেন, তোমরা ঠিকই করেছ। বন্টন কর এবং তোমাদের সাথে আমার জন্যও একটা অংশ রাখ। এ বলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসলেন এবং শুবা রহ. বলেন, আমার নিকট আবু বিশর রহ. বর্ণনা করেছেন যে, আমি মুতাওয়াক্কিল থেকে এ হাদীস শুনেছি।

হাদীস নং ২১৩৩

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ………..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু তায়বা রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে শিংগা লাগিয়েছিলেন। তিনি তাকে এক সা’ কিংবা দু’ সা খাদ্য দিতে আদেশ করলেন এবং তার মালিকের সাথে আলোচনা করে তার উপর ধার্যকৃত মাসুল কমিয়ে দিলেন।

হাদীস নং ২১৩৪

মূসা ইবনে ইসমাঈর রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিংগা নিয়েছিলেন এবং শিংগা প্রয়োগকারীকে তার পারিশ্রমিক দিয়েছিলেন।

হাদীস নং ২১৩৫

মুসাদ্দাদ রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিংগা লাগিয়েছিলেন এবং শিংগা প্রয়োগকারীকে পারিশ্রমিক দিয়েছিলেন। যদি তিনি তা অপছন্দ করতেন তবে তাকে (পারিশ্রমিক) দিতেন না।

হাদীস নং ২১৩৬

আবু নুআইম রহ…….আমর ইবনে আমির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস রা.-কে বলতে শুনেছি যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিংগা লাগাতেন এবং কোন লোকের পারিশ্রমিক কম দিতেন না।

হাদীস নং ২১৩৭

আদম রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিংগা প্রয়োগকারী এক গোলামকে দিতে নির্দেশ দিলেন। এরপর তার ব্যপারে (তার মালিকের সাথে) কথা বললেন, ফলে তার উপর ধার্যকৃত মাসুল কমিয়ে দেওয়া হল।

হাদীস নং ২১৩৮

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………আবু মাসউদ আনসারী রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুরের মূল্য, পতিতার উপার্জন এবং গণকের পারিতোষিক নিষিদ্ধ করেছেন।

হাদীস নং ২১৩৯

মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাসীদের অবৈধ উপার্জন নিষিদ্ধ করেছেন।

হাদীস নং ২১৪০

মুসাদ্দাদ রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পশুকে পাল দেওয়ানো বাবদ বিনিময় নিতে নিষেধ করেছেন।

হাদীস নং ২১৪১

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………আবদুল্লাহ (ইবনে উমর) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের জমি (ইয়াহুদীদেরকে) এ শর্তে দিয়েছিলেন যে, তারা তাঁতে কৃষি কাজ করে ফসল উৎপাদন করবে এবং উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক তাদের প্রাপ্য হবে। ইবনে উমর রা. নাফি রহ.-কে বলেছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় কিছু মূল্যের বিনিময়ে যার পরিমাণটা নাফি রহ. নির্দিষ্ট করে বলেছিলেন, কিন্তু আমার মনে নেই, জমি ইজারা দেওয়া হত। রাফি ইবনে খাদীজ রা. রিওয়ায়েত করেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শস্যক্ষেত বর্গা দিতে নিষেধ করেছেন। উবায়দুল্লাহ রহ. নাফি রহ.-এর বরাত দিয়ে ইবনে উমর রা. থেকে (এটুকু অতিরিক্ত) বর্ণনা করেছেন যে, উমর রা. কর্তৃক ইয়াহুদীদেরকে তাড়িয়ে দেয়া পর্যন্ত (খায়বারের জমি তাদের নিকট ইজারা দেওয়া হত)।

 হাওয়ালা অধ্যায় (২১৪২-২১৪৪)

হাদীস নং ২১৪২

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ধনী ব্যক্তির ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করা জুলুম। যখন তোমাদের কাউকে (তার জন্য) কোন ধনী ব্যক্তির হাওয়ালা করা হয়, তখন সে যেন তা মেনে নেয়।

হাদীস নং ২১৪৩

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ধনী ব্যক্তির পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করা জুলুম। যাকে (তার পাওনার জন্য) ধনী ব্যক্তির হাওয়ালা করা হয়, তখন সে যেন তা মেনে নেয়।

হাদীস নং ২১৪৪

মাক্কী ইবনে ইবরাহীম রহ………সালামা ইবনে আকওয়া রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, একদিন আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বসা ছিলাম, এমন সময় একটি জানাযা উপস্থিত করা হল। সাহাবীগণ বললেন, আপনি তার জানাযার সালাত আদায় করে দিন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তার কি কোন ঋণ আছে? তারা বলল, না । তিনি বললেন : সে কি কিছু রেখে গেছে ? তারা বলল, না । তখন তিনি তার জানাযার সালাত আদায় করলেন। তারপর আরেকটি জানাযা উপস্থিত করা হল। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি তার জানাযার সালাত আদায় করে দিন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তার কি কোন ঋণ আছে? তারা বলল, হ্যাঁ । তিনি বললেন : সে কি কিছু রেখে গেছে ? তারা বলল, তিনটি দীনার। তখন তিনি তার জানাযার সালাত আদায় করলেন। তারপর তৃতীয় আরেকটি জানাযা উপস্থিত করা হল। সাহাবীগণ বললেন, আপনি তার জানাযার সালাত আদায় করুন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তিনি বললেন : সে কি কিছু রেখে গেছে ? তারা বলল, না। তিনি বললেন : তার কি কোন ঋণ আছে? তারা বলল, তিন দীনার। তিনি বললেন : তোমাদের এ লোকটির সালাত তোমরাই আদায় করে নাও। আবু কাতাদা রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তার জানাযার সালাত আদায় করুন, তার ঋণের জন্য আমি দায়ী। তখন তিনি তার জানাযার সালাত আদায় করলেন।

 যামিন অধ্যায়(২১৪৫-২১৫১)

হাদীস নং ২১৪৫

সালত ইবনে মুহাম্মদ রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ولكل جعلنا موالى আয়াতে موالى শব্দের অর্থ উত্তরাধিকারী। আর والذين عقدت أيمانكم আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে তিনি (ইবনে আব্বাস রা.) বলেন, মদীনায় মুহাজিরদের নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আগমনের পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করেন, তার ভিত্তিতে মুহাজিররা আনসারদের উত্তরাধিকারী হত, কিন্তু আনসারদের আত্মীয়-স্বজনরা ওয়ারিস হত না। যখন এ ولكل جعلنا موالى আয়াত নাযিল হল, তখন والذين عقدت আয়াতের হুকুম রহিত হয়ে গেল। তারপর তিনি আরো বলেন, উপরোক্ত আয়াতের প্রেক্ষিতে মুহাজির ও আনসারদের পারস্পারিক সাহায্য-সহযোগিতা ও আদেশ-উপদেশের হুকুম বাকী রয়েছে। কিন্তু তাদের জন্য মীরাস বা উত্তরাধিকার স্বত্ব রহিত হয়ে গেছে। অবশ্য তাদের জন্য ওসীয়াত করা যেতে পারে।

হাদীস নং ২১৪৬

কুতাইবা রহ…………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুর রাহমান ইবনে আওফ রা. যখন আমাদের নিকট (মদীনুয়) আসেন, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ও সাদ ইবনে রাবী-এর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক স্থাপন করেন।

হাদীস নং ২১৪৭

মুহাম্মদ ইবনে সাব্বাহ রহ………আসিম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার নিকট কি এ হাদীস পৌছেছে যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ইসলামে হিলফ (জাহিলী যুগের সহযোগিতা চুক্তি) নেই ? তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে কুরাইশ এবং আনসারদের মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন।

হাদীস নং ২১৪৮

আবু আসিম রহ………..সালামা ইবনে আকওয়া রা. থেকে বর্ণিত যে, একদিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে সালাতে জানাযা আদায়ের জন্য একটি জানাযা উপস্থিত করা হল। তিনি বললেন : তার কি কোন ঋণ আছে? তারা বলল, না । তখন তিনি তার জানাযার সালাত আদায় করলেন। তারপর আরেকটি জানাযা উপস্থিত করা হল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন : তার কি কোন ঋণ আছে? তারা বলল, হ্যাঁ । তিনি বললেন : তোমাদের এ লোকটির সালাত তোমরাই আদায় করে নাও। আবু কাতাদা রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তার ঋণের জন্য আমি দায়ী। তখন তিনি তার জানাযার সালাত আদায় করলেন।

হাদীস নং ২১৪৯

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন : যদি বাহরাইনের মাল এসে যায় তাহলে আমি তোমাকে এতো এতো দেব। কিন্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাত পর্যন্ত বাহরাইনের মাল এসে পৌছায়নি। পরে যখন বাহরাইনের মাল পৌঁছল, আবু বকর রা.-এর আদেশে ঘোষণা করা হল, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যার অনুকুলে কোন প্রতিশ্রুতি বা ঋণ রয়েছে সে যেন আমার নিকট আসে। আমি তার নিকট গিয়ে বললাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এতো এতো দিবেন বলেছিলেন। তখন আবু বকর রা. আমাকে এক অঞ্জলী ভরে দিলেন, আমি তা গণনা করলাম এতে পাঁচশ ছিল। তারপর তিনি বললেন, এর দ্বিগুণ নিয়ে নাও।

হাদীস নং ২১৫০

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……… নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যেদিন থেকে আমার জ্ঞান হয়েছে সেদিন থেকেই আমি আমার পিতা-মাতাকে দীনের অনুসারী হিসাবেই পেয়েছি। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, আবু সালিহ রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যেদিন থেকে আমার জ্ঞান হয়েছে সেদিন থেকেই আমি আমার পিতা-মাতাকে দীন ইসলামের অনুসারী হিসাবেই পেয়েছি এবং আমাদের এমন কোন দিন যায়নি, যে দিনের দূরপ্রান্তে সকাল-সন্ধ্যায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আসেননি। যখন মুসলিমগণ কঠিন বিপদের সম্মুখীন হলেন তখন আবু বকর রা. হাবশা অভিমুখে হিজরতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। যখন তিনি বারকুল গিমাদ নামক স্থানে এসে পৌঁছলেন তখন ইবনে দাগিনা তার সাথে সাক্ষাত করল। সে ছিল কারা গোত্রের নেতা। সে বলল, হে আবু বকর ! আপনি কোথায় যেতে ইচ্ছা করেছেন ? আবু বকর রা. বললেন, আমার গোত্র আমাকে বের করে দিয়েছে, তাই আমি ইচ্ছা করেছি যে, দেশে দেশে ঘুরে বেড়াবো আর আমার প্রতিপালকের ইবাদত করব। ইবনে দাগিনা বলল, আপনার মত লোক বেরিয়ে যেতে পারে না এবং আপনার মত লোককে বহিষ্কার করাও চলে না। কেননা আপনি নিঃস্ব কে সাহায্য করেন, আত্মীয়তার বন্ধানকে রক্ষা করেন, অক্ষমের বোঝা নিজে বহন করেন, মেহমানদারি করেন এবং দুর্যোগের সময় মানুষকে সাহায্য করেন। আমি আপনার আশ্রয়দাতা। কাজেই আপনি মক্কায় ফিরে চলুন এবং নিজ শহরে গিয়ে আপন প্রতিপালকের ইবাদত করুন। তারপর ইবনে দাগিনা আবু বকর রা. কে সঙ্গে নিয়ে ফিরে এল। সে কাফির কুরাইশদের যারা নেতা তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করল এবং তাদেরকে বলল, আবু বকর রা.-এর মত লোক বেরিয়ে যেতে পারে না এবং তার মত লোককে বহিষ্কার করাও চলে না। আপনারা কি এমন একজন লোককে বহিষ্কার করতে চান, যে নিঃস্ব কে সাহায্য করে, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে, অক্ষমের বোঝা বহন করে, মেহমানের মেহমানদারি করে এবং দুর্যোগের সময় মানুষকে সাহায্য করে। আবু বকর রা. কে ইবনে দাগিনার আশ্রয় প্রদান কুরাইশরা মেনে নিল এবং তারা আবু বকর রা.-কে নিরাপত্তা দিয়ে ইবনে দাগিনা বলল, আপনি আবু বকরকে বলে দিন, তিনি যেন নিজ বাড়ীতে তাঁর প্রতিপালকের ইবাদত করেন, সেখানে যেন সালাত আদায় করেন এবং তাঁর যা ইচ্ছা তা যেন পড়েন। এ ব্যাপারে তিনি যেন আমাদেরকে কোন কষ্ট না দেন এবং তিনি যেন প্রকাশ্যে সালাত ও তিলাওয়াত না করেন। কেননা, আমরা আশংকা করছি যে, তিনি আমাদের স্ত্রী-পুত্রদের ফিতনায় লিপ্ত না করেন। ইবনে দাগিনা এসব কথা আবু বকর রা.-কে বলল। আবু বকর রা. নিজ বাড়িতেই তার প্রতিপালকের ইবাদত করতে থাকেন, নিজ বাড়ী ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ্যে সালাত আদায় এবং কুরআন তিলাওয়াত করতে লাগলেন। ফলে মুশরিকদের স্ত্রী-পুত্ররা তাঁর কাছে ভিড় জমাতে লাগল। তাদের কাছে তা ভাল লাগত এবং তাঁর প্রতি তারা তাকিয়ে থাকত। আবু বকর রা. ছিলেন অতি ক্রন্দন শীল ব্যক্তি। যখন তিনি কুরআন তিলাওয়াত করতেন তখন অশ্রু সংবরণ করতে পারতেন না।অ এতে কুরাইশদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা ঘাবড়িয়ে গেল। তারা ইবনে দাগিনাকে ডেকে পাঠাল। সে তাদের কাছে আসার পর তারা তাকে বলল, আমরা তো আবু বকর রা. -কে এই শর্তে আশ্রয় ও নিরাপত্তা দিয়েছিলাম যে, তিনি নিজ গৃহে তাঁর প্রতিপালকের ইবাদত করবেন। কিন্তু তিনি তা লংঘন করে নিজ গৃহের আঙ্গিনায় মসজিদ বানিয়েছেন এবং (তাতেই) প্রকাশ্যভাবে সালাত আদায় ও কুরআন তিলাওয়াত করেছেন। এতে আমাদের ভয় হচ্ছে যে, তিনি আমাদের স্ত্রী-পুত্রদের ফিতনায় লিপ্ত করবেন। কাজেই আপনি তাকে গিয়ে বলুন, তিনি যদি নিজ গৃহে তাঁর প্রতিপালকের ইবাদত সীমাবদ্ধ রাখতে চান তবে তিনি তা করতে পারেন। আর যদি তিনি অস্বীকার করেন এবং প্রকাশ্যে এসব করতে চান তবে আপনি তাকে বলুন, তিনি যেন আপনার যিম্মাদারী ফিরিয়ে দেন। কেননা আমরা যেমন আপনার সাথে অঙ্গীকার ভঙ্গ করা পছন্দ করি না, তেমনি আবু বকর রা. প্রকাশ্যে ইবাদত করাটা মেনে নিতে পারি না। আয়িশা রা. বলেন, তারপর ইবনে দাগিনা আবু বকর রা.-এর নিকট এসে বলল, যে শর্তে আমি আপনার যিম্মাদারী নিয়ে ছিলাম, তা আপনার জানা আছে। হয়ত আপনি সে শর্তের উপর সীমাবদ্ধ থাকুন, নয়ত আমার যিম্মাদারী আমাকে ফেরত দিন। কেননা, কোন ব্যক্তির সাথে আমি নিরাপত্তার চুক্তি করার পর আমার পক্ষ থেকে তা ভঙ্গ করা হয়েছে, এমন একটা কথা আরব জাতি শুনতে পাক তা আমি আদৌ পছন্দ করি না। আবু বকর রা. বললেন, আমি আপনার যিম্মাদারী ফেরত দিচ্ছি এবং আল্লাহর আশ্রয় লাভেই আমি সন্তুষ্ট। এ সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় ছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমাকে (স্বপ্নযোগে) তোমাদের হিজরতের স্থান দেখানো হয়েছে। আমি খেজুর বৃক্ষে পরিপূর্ণ একটি কংকরময় স্থান দেখলাম, যা দুটি প্রান্তরের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এ কথা বললেন, তখন যারা হিজরত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাদের কেউ কেউ মদীনার দিকেই হিজরত করলেন। আর যারা আবিসিনিয়ায় হিজরত করছিলেন তাদের কেউ কেউ মদীনার দিকে ফিরে গেলেন। আবু বকর রা.-ও হিজরতের জন্য তৈরী হলেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আপনি অপেক্ষা করুন। কেননা, আমি নিশ্চিতভাবে আশঅ করছি যে, আমাকেও হিজরতের অনুমতি দেয়া হবে। আবু বকর রা. বললেন, আমার পিতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক, আপনি কি আশা করেন যে, আপনি অনুমতি পাবেন ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন আবু বকর রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গী হওয়ার উদ্দেশ্যে নিজেকে বিরত রাখলেন এবং তাঁর নিকট যে দুটি উট ছিল, তাদেরকে চার মাস ধরে বাবলা গাছের পাতা খাওয়াতে থাকলেন।

হাদীস নং ২১৫১

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যখন কোন ঋণী ব্যক্তির জানাযা উপস্থিত করা হত তখন তিনি জিজ্ঞাসা করতেন, সে তার ঋণ পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত মাল রেখে গেছে কি ? যদি তাকে বল হত যে সে তার ঋণ পরিশোধের মত মাল রেখে গেছে তখন তার জানাযার সালাত আদায় করতেন। নতুবা বলতেন, তোমাদের সাথীর জানাযা আদায় করে নাও। পরবর্তীতে যখন আল্লাহ তাঁর বিজয়ের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন, তখন তিনি বললেন, আমি মুমিনদের জন্য তাদের নিজের চাইতেও অধিক নিকটবর্তী। তাই কোন মুমিন ঋণ রেখে মারা গেলে সে ঋণ পরিশোধ করার দায়িত্ব আমার। আর যে ব্যক্তি সম্পদ রেখে যায়, সে সম্পদ তার ওয়ারিসদের জন্য।

ওয়াকালাত অধ্যায় (২১৫২-২১৬৮)

হাদীস নং ২১৫২

কাবীসা রহ……..আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কুরবানীকৃত উটের গলার মালা ও তার চামড়া দান করার হুকুম দিয়েছেন।

হাদীস নং ২১৫৩

আমর ইবনে খালিদ রহ……….উকবা ইবনে আমির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কিছু বকরী (ভেড়া) সাহাবীদের মধ্যে বন্টন করতে দিলেন। বন্টন করার পর একটি বকরীর বাচ্চা বাকী থেকে যায়। তিনি তা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অবহিত করেন। তখন তিনি বললেন, তুমি নিজে এটাকে কুরবানী করে দাও।

হাদীস নং ২১৫৪

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..আবদুর রহমান ইবেন আওফ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমাইয়া ইবনে খালফের সঙ্গে এ মর্মে একটা চুক্তিনামা করলাম যে, সে মক্কায় আমার মাল-সামানা হিফাযত করবে আর আমি মদীনায় তার মাল-সামানা হিফাযত করব। যখন আমি চুক্তিনামায় আমার নামের শেষে ‘রাহমান’ শব্দটি উল্লেখ করলাম তখন সে বলল, আমি রাহমাকে চিনি না। জাহিলী যুগে তোমার যে নাম ছিল সেটা লিখ। তখন আমি তাতে আবদু আমর লিখে দিলাম। বদর যুদ্ধের দিন যখন লোকজন ঘুমিয়ে পড়ল তখন আমি উমাইয়াকে রক্ষা করার জন্য একটি পাহাড়ের দিকে গেলাম। বিলাল রা. তাকে দেখে ফেললেন। তিনি দৌড়ে গিয়ে আনসারীদের এক মজলিসে বললেন, এই যে উমাইয়া ইবনে খালফ। যদি উমাইয়া বেঁচে যায়, তবে আমার বেঁচে থাকায় লাভ নেই।তখন আনসারীদের এক দল তার সাথে আমাদের পিছে পিছে ছুটল। যখন আমার আশংকা হল যে, তারা আমাদের নিকট এসে পড়বে, তখন আমি উমাইয়ার পুত্রকে তাদের জন্য পেছনে রেখে এলাম, যাতে তাদের দৃষ্টি তার উপর পড়ে। তারা তাকে হত্যা করল। তারপরও তারা ক্ষান্ত হল না, তারা আমাদের পিছু ধাওয়া করল। উমাইয়া ছিল স্থুলদেহী। যখন আনসারীরা আমাদের কাছে পৌছে গেল, তখন আমি তাকে বললাম, বসে পড়। সে বসে পড়ল। আমি তাকে বাঁচানোর জন্য আমার দেহখানা তাকে আড়াল করে রাখলাম। কিন্তু তারা আমার নীচে দিয়ে তরবারি ঢুকিয়ে তাকে হত্যা করে ফেলল। তাদের একজনের তরবারির আঘাত আমার পায়েও লাগল। রাবী বলেন, ইবনে আওফ রা. তাঁর পায়ের সে আঘাত আমাদেরকে দেখাতেন। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, ইউসুফ রহ. সালিহ রহ. থেকে এবং ইবরাহীম রহ. তার পিতা থেকে রিওয়ায়েত শুনেছেন।

হাদীস নং ২১৫৫

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবু সাঈদ খুদরী ও আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবীকে খায়বারের শাসক নিয়োগ করলেন। তিনি বেশ কিছু উন্নতমানের খেজুর তাঁর নিকটে নিয়ে আসলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খায়বারের সব খেজুরই কি এরকম ? তিনি বললেন, আমরা দু’ সা’র বদলে এর এক সা’ কিনে থাকি কিংবা তিন সা’র বদলে দু’সা’ কিনে থাকি। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এরূপ করা না। মিশ্রিত খেজুর দিরহাম নিয়ে বিক্রি কর। তারপর এ দিরহাম দিয়েই উন্নতমানের খেজুর ক্রয় কর। ওযনে বিক্রয়যোগ্য বস্তুসমূহের ব্যাপারেও তিনি অনুরূপ বলেছেন।

হাদীস নং ২১৫৬

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম রহ……..ইবনে কা’ব ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তার কতকগুলো ছাগল-ভেড়া ছিল, যা সাল নামক স্থানে চরে বেড়াত। একদিন আমাদের এক দাসী দেখল যে, আমাদের ছাগল ভেড়ার মধ্যে একটি ছাগল মারা যাচ্ছে। তখন সে একটি পাথর ভেঙ্গে তা দিয়ে ছাগলটাকে যবেহ করে দিল। কা’ব তাদেরকে বললেন, তোমরা এটা খেয়োনা যে পর্যন্ত না আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করে আসি অথবা কাউকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জিজ্ঞাসা করতে পাঠাই। তিনি নিজেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন অথবা কাউকে পাঠিয়েছিলেন। তিনি (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা খাওয়ার হুকুম দিয়েছিলেন। উবায়দুল্লাহ বলেন, এ কথাটা আমার কাছে খুব ভালো লাগলো যে, দাসী হয়েও সে ছাগলটাকে যবেহ করল।

হাদীস নং ২১৫৭

আবু নুআইম রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কোন এক ব্যক্তির একটি বিশেষ বয়সের উট পাওনা ছিল। সে পাওনার জন্য আসলে তিনি সাহাবীদেরকে বললেন, তার পাওনা দিয়ে দাও। তারা সে উটের সমবয়সী উট অনেক খোঁজাখুঁজি করলেন। কিন্তু তা পেলেন না। কিন্তু তার থেকে বেশী বয়সের উট পেলেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাই দিয়ে দাও। তখন লোকটি বলল, আপনি আমার প্রাপ্য পুরোপুরি আদায় করেছেন, আল্লাহ আপনাকেও পুরোপুরি প্রতিদান দিন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : যে ঠিক মত ঋণ পরিশোধ করে সেই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি।

হাদীস নং ২১৫৮

সুলাইমান ইবনে হারব রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পাওনার জন্য তাগাদা দিতে এসে রূঢ় ভাষায় কথা বলতে লাগল। এতে সাহাবীগণ তাকে শায়েস্তা করতে উদ্যত হলেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাকে ছেড়ে দাও। কেননা, পাওনাদারদের কড়া কথা বলার অধিকার রয়েছে। তারপর তিনি বললেন, তার উটের সমবয়সী একটি উট তাকে দিয়ে দাও। তারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এটা নেই। এর চাইতে উত্তম উট রয়েছে। তিনি বললেন, তাই দিয়ে দাও। তোমাদের মধ্যে সেই সর্বোৎকৃষ্ট যে ঋণ পরিশোধের বেলায় উত্তম।

হাদীস নং ২১৫৯

সাঈদ ইবনে উফাইর রহ………মারওয়ান ইবনে হাকাম ও মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা. থেকে বর্ণিত, হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধি দল যখন ইসলাম গ্রহণ করে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলেন, তখন তিনি উঠে দাঁড়ালেন। প্রতিনিধি দল নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তাদের ধন-সম্পদ ও বন্দী ফেরত চাইলেন। তখন তিনি বললেন, আমার নিকট সত্য কথাই অধিকতর পছন্দনীয়। কাজেই তোমরা দু’টোর মধ্যে একটা বেছে নাও- হয় বন্দী, নয় ধন-সম্পদ। আমি তো এদের আগমনের অপেক্ষায়ই প্রতীক্ষমাণ ছিলাম। (বর্ণনাকারী বলেন) তায়িফ থেকে প্রত্যাবর্তন করে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ রাতেও বেশী তাদের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। যখন (প্রতিনিধি দল) বুঝতে পারলেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটোর মধ্যে একটি ফেরত দেবেন, তখন তারা বললেন, আমরা আমাদের বন্দীদেরকে গ্রহণ করছি। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমগণের মাঝে দাঁড়িয়ে আল্লাহ পাকের যথাযথ প্রশংসা করে বললেন : তোমাদের এই ভাইয়েরা তাওবা করে আমার কাছে এসেছে এবং আমার অভিপ্রায় এই যে, আমি তাদের বন্দীদের ফেরত দেই। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি নিজ খুশিতে স্বেচ্ছা-প্রণোদিত হয়ে ফেরত দিতে চায়, সে দিক। আর তোমাদের মধ্যে যে এর বিনিময় গ্রহণ পছন্দ করে, আমরা সেই গনীমতের মাল থেকে তা দেবো যা আল্লাহ প্রথম আমাদের দান করবেন। সে তা করুক অর্থাৎ বিনিময় নিয়ে ফেরত দিক। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমরা স্বেচ্ছায় তাদেরকে ফেরত দিলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমাদের মধ্যে কে কে অনুমতি দিল আর কে কে অনুমতি দিল না, তা আমরা বুঝতে পারছি না। কাজেই তোমরা ফিরে যাও এবং তোমাদের নেতাগণ তোমাদের মতামত আমাদের নিকট পেশ করুক। সাহাবীগণ ফিরে গেলেন। তাদের নেতা তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করলেন। তারপর তারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে জানালেন যে, সাহাবীগণ সন্তুষ্টচিত্তে অনুমতি দিয়েছেন।

হাদীস নং ২১৬০

মক্কী ইবনে ইবরাহীম রহ……..জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক সফরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। আমি ধীরগতি সম্পন্ন উটের উপর সওয়ার ছিলাম, যার ফলে উটটা দলের পেছনে পড়ে গেল। এমতাবস্থায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছ দিয়ে গেলেন এবং বললেন : এ কে ? আমি বললাম, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ। তিনি বললেন : তোমার কি হল (পেছনে কেন)? আমি বললাম, আমি ধীরগতি সম্পন্ন উটে সাওয়ার হয়েছি। তিনি বললেন : তোমার কাছে কি কোন লাঠি আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ, আছে। তিনি বললেন : এটা আমাকে দাও। আমি তখন সেটা তাকে দিলাম। তিনি উটটাকে চাবুক মেরে হাঁকালেন। এতে উটটা (দ্রুত চলে) সে স্থান থেকে দলের অগ্রভাগে চলে গেল। তিনি বললেন, এটা আমার কাছে বিক্রি করে দাও। আমি বললাম, নিশ্চয়ই ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এটা আপনারই । তিনি বললেন : (না) বরং এটা আমার কাছে বিক্রি কর। তিনি বললেন, চার দীনার মূল্যে আমি এটা কিনে নিলাম। তবে মদীনা পর্যন্ত এর পিঠে তুমিই সাওয়ার থাকবে। আমরা যখন মদীনার নিকটবর্তী হলাম, তখন আমি আমার বাড়ীর দিকে রওয়ানা হলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কোথায় যাচ্ছ ? আমি বললাম, আমি একজন বিধবা মেয়েকে বিয়ে করেছি। তিনি বললেন : কুমারী কেন বিয়ে করলে না ? সে তোমার সাথে কৌতুক করত এবং তুমি তার সাথে কৌতুক করতে ? আমি বললাম, আমার আব্বা মারা গেছেন এবং কয়েকজন কন্যা রেখে গেছেন। আমি চাইলাম এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করতে, যে হবে অভিজ্ঞতা সম্পন্না এবং বিধবা। তিনি বললেন : তাহলে ঠিক আছে। আমরা মদীনায় পৌঁছলে তিনি বললেন, হে বিলাল ! জাবিরকে তার দাম দিয়ে দাও এবং কিছু বেশীও দিয়ে দিও। কাজেই বিলাল রা. তাকে চার দীনার এবং অতিরিক্ত এক কীরাত সোনা দিলেন। জাবির রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দেওয়া অতিরিক্ত এক কীরাত সোনা কখনো আমার কাছ থেকে বিচ্ছন্ন হত না। তাই তা জাবির রা.-এর থলেতে সব সময় থাকত কখনো বিচ্ছিন্ন হত না।

হাদীস নং ২১৬১

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক মহিলা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি আমাকে আপনার প্রতি হেবা করে দিয়েছি। তখন এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ ! একে আমার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিন। তিনি বললেন : কুরআনের যে অংশটুকু তোমার মুখস্থ রয়েছে তার বিনিময়ে আমি এর সঙ্গে বিয়ে দিলাম।

হাদীস নং ২১৬২

ইসহাক রহ………আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিলাল রা. কিছু বরনী খেজুর নিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন : এগুলো কোথায় পেলে ? বিলাল রা. বললেন, আমাদের নিকট কিছু নিকৃষ্ট মানের খেজুর ছিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে তা দু’ সা’ বিনিময়ে এক সা’ কিনেছি। একথা শুনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : হায় ! হায় ! এটাতো একেবারে সূদ ! এটাতো একেবারে সূদ ! এরূপ করো না। যখন তুমি উৎকৃষ্ট খেজুর কিনতে চাও, তখন নিকৃষ্ট খেজুর ভিন্নভাবে বিক্রি করে দাও। তারপর সেই মূল্যের বিনিময়ে উৎকৃষ্ট খেজুর কিনে নাও।

হাদীস নং ২১৬৩

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ……….আমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর রা. -এর সাদকা সম্পর্কিত লিপিতে ছিল যে, মুতাওয়াল্লী নিজে ভোগ করলে এবং তার বন্ধু-বান্ধবকে আপ্যায়ন করালে কোন গুনাহ নেই : যদি মাল সঞ্চয় করার উদ্দেশ্যে না থাকে। ইবনে উমর রা. উমর রা.-এর সাদকার মুতাওয়াল্লী ছিলেন। তিনি যখন মক্কাবাসী লোকদের নিকট অবতরণ করতেন, তখন তাদেরকে সেখান থেকে উপঢৌকন দিতেন।

হাদীস নং ২১৬৪

আবুল ওয়ালিদ হর……….যায়েদ ইবনে খালিদ ও আবু হুরায়রা রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে উনাইস (ইবনে যিহাক আসলামী) সে মহিলার কাছে যাও । যদি সে (অপরাধ) স্বীকার করে তবে তাকে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা কর।

হাদীস নং ২১৬৫

ইবনে সালাম রহ……….উকবা ইবনে হারিছ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নুআইমানকে অথবা ইবনে নুআইমানকে নেশাগ্রস্ত্র অবস্থায় আনা হল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে উপস্থিত লোকদেরকে তাকে প্রহার করতে আদেশ দিলেন। রাবী বলেন, যারা তাকে প্রহার করেছিল, তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। আমরা তাকে জুতা দিয়ে এবং খেজুরের ডাল দিয়ে প্রহার করেছি।

হাদীস নং ২১৬৬

ইসমাঈল ইবনে আবদুল্লাহ রহ………আমরা বিনতে আবদুর রাহমান রা. থেকে বর্ণিত যে, আয়িশা রা. বলেন, আমি নিজ হাতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কুরবানীর জন্তুর জন্য হার পাকিয়েছি। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নজি হাতে তাকে হার পরিয়ে (আমার পিতা) আবু বকর রা.-এর সঙ্গে পাঠিয়েছেন। কুরবানীর জন্তু যবেহ করার পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর কোন কিছু হারাম থাকেনি, যা আল্লাহ তাঁর জন্য হালাল করেছেন।

হাদীস নং ২১৬৭

ইয়াহইয়া ইবনে ইয়াহইয়া রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মদীনায় আনসারদের মধ্যে আবু তালহাই সবচেয়ে বেশী ধনী ছিলেন এবং তাঁর সম্পদের মধ্যে বায়রুহা তাঁর সবচাইতে প্রিয় সম্পদ ছিল, এটা মসজিদের (নববীর) সম্মুখে অবস্থিত ছিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তথায় যেতেন এবং এতে যে উৎকৃষ্ট পানি ছিল তা পান করতেন। যখন এ আয়াত নাযিল হল : “তোমরা যা ভালোবাস, তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পূণ্য লাভ করবে না”(৩ : ৯২) তখন আবু তালহা রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে এসে দাঁড়ালেন এবং বললন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আল্লাহ তাঁর কিতাবে বলেছেন : “তোমরা যা ভালোবাস, তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পূণ্য লাভ করবে না”। আর আমার সম্পদের মধ্যে বায়রুহা আমার কাছে সবচাইতে প্রিয় সম্পদ। আমি ওটা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করে দিলাম। এর সাওয়াব ও প্রতিদান আমি আল্লাহ নিকট প্রত্যাশা করছি। কাজেই ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি ওটাকে যেখানে ভালো মনে করেন, খরচ করেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : বেশ। এটাতো চলে যাবার মত সম্পদ, এটা তো চলে যাওয়ার মত সম্পদ। তুমি এ ব্যাপারে যা বললে, আমি তা শুনলাম এবং আমি এটাই সংগত মনে করি যে, এটা তুমি তোমার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে বন্টন করে দিবে। আবু তালহা রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি তাই করবো। তারপর আবু তালহা রা. তার নিকটাত্মীয় ও চাচাতো ভাইদের মধ্যে বন্টন করে দিলেন। ইসমাঈল রহ. মালিক রহ. থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনায় ইয়াহইয়া রহ.-এর অনুসরণ করেছেন। রাওহা মালিক রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন, এতে তিনি ‘রায়িহুন’ স্থলে ‘রাবিহুন’ বলেছেন। এর অর্থ হল, লাভজনক।

হাদীস নং ২১৬৮

মুহাম্মদ ইবনে আলা রহ………আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : বিশ্বস্ত কোষাধ্যক্ষ যে ঠিকমত ব্যয় করে, অনেক সময় বলেছেন : যাকে দান করতে বলা হয় তাকে তা পরিপূর্ণভাবে সন্তুষ্টচিত্তে দিয়ে দেয়। সেও (কোষাধ্যক্ষ) দানকারীদের একজন।

বর্গাচাষ অধ্যায় (২১৬৯-২১৯৫)

হাদীস নং ২১৬৯

কুতাইবা ইবনে সাঈদ ও আবদুর রাহমান ইবনে মুবারক রহ……..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে কোন মুসলমান ফলবান গাছ রোপণ করে কিংবা কোন ফসল ফলায় আর তা থেকে পাখি কিংবা মানুষ বা চতুষ্পদ জন্তু খায় তবে তা তার পক্ষ থেকে সাদকা বলে গণ্য হবে। মুসলিম রহ……..আনাস রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।

হাদীস নং ২১৭০

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবু উমামা বাহিলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লাঙ্গলের হাল এবং কিছু কৃষি যন্ত্রপাতি দেখে বললেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি এটা যে সম্প্রদায়ের ঘরে প্রবেশ করে, আল্লাহ সেখানে অপমান প্রবেশ করান। রাবী মুহাম্মদ (ইবনে যিয়াদ রহ.) বলেন, আবু উমামা রা.-এর নাম হল সুদাই ইবনে আজলান।

হাদীস নং ২১৭১

মুআয ইবনে ফাযালা রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি শস্য খেতের পাহাড়া কিংবা পশুর হিফাযতের উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে কুকুর পোষে, প্রতিদিন তার নেক আমল থেকে এক কীরাত পরিমাণ কমতে থাকবে। ইবনে সীরীন ও আবু সালিহ রহ. আবু হুরায়রা রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। বকরী অথবা ক্ষেতের হিফাযত কিংবা শিকারের উদ্দেশ্য ছাড়া । আবু হাযিম রহ. আবু হুরায়রা রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, শিকার ও পশুর হিফাযত করার কুকুর।

হাদীস নং ২১৭২

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………সুফিয়ান ইবনে আবু যুহাইর রা. থেকে বর্ণিত, যিনি আযদ-শানুআ গোত্রের লোক, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একজন সাহাবী ছিলেন। তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি এমন কুকুর পোষে যা ক্ষেত ও গবাদী পশুর হিফাযতের কাজে লাগে না, প্রতিদিন তার নেক আমল থেকে এক কীরাত পরিমাণ কমতে থাকে। আমি বললাম, আপনি কি এটা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, এ মসজিদের রবের কসম (আমি তাঁর কাছেই শুনেছি)।

হাদীস নং ২১৭৩

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এক ব্যক্তি একটি গরুর উপর সাওয়ার ছিল, তখন গরুটি সে ব্যক্তির দিকে লক্ষ্য করে বলল, আমাকে এ কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়নি। আমাকে চাষাবাদ তথা ক্ষেতের কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমি আবু বকর ও উমর রা. এটা বিশ্বাস করি। তিনি আরো বললেন : এক নেকড়ে বাঘ একটি বকরী ধরেছিল, রাখাল তাকে ধাওয়া করল। নেকড়ে বাঘটা তাকে বলল, সেদিন হিংস্র জন্তুর প্রাধান্য হবে, যেদিন আমি ছাড়া কেউ তার রাখাল থাকবে না, সেদিন কে তাকে রক্ষা করবে? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমি আবু বকর ও উমর রা. এটা বিশ্বাস করি। আবু সালামা রা. বলেন, তারা দু’জন (আবু বকর ও উমর রা.) সেদিন মজলিসে হাযির ছিলেন না।

হাদীস নং ২১৭৪

হাকাম ইবনে নাফি রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনসাররা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, আমাদের এবং আমাদের ভাই (মুহাজির)-দের মধ্যে খেজুরের বাগান ভাগ করে দিন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : না। তখন তাঁরা (মুহাজিরগণকে) বললেন, আপনারা আমাদের বাগানে কাজ করুন, আমরা আপনাদেরকে ফলে অংশীদার করব। তাঁরা বললেন, আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম।

হাদীস নং ২১৭৫

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ নাযির গোত্রের বুওয়াইরা নামক (স্থানে অবস্থিত বাগানটির খেজুর গাছ জ্বালিয়ে দিয়েছেন এবং বৃক্ষ কেটে ফেলেছেন। এ সম্পর্কে হাসসান রা. (তাঁর রচিত কবিতায়) বলেছেন, বুওয়াইরা নামক স্থানে অবস্থিত বাগানটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে আর বনূ লূয়াই গোত্রের সর্দাররা তা সহজে মেনে নিল।

হাদীস নং ২১৭৬

মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ………রাফি ইবনে খাদিজ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মদীনাবাসীদের মধ্যে বেশী যমীন আমাদের ছিল। আমরা ভাগে যমীনে চাষ করতে দিতাম এবং সে ক্ষেতের এক নির্দিষ্ট অংশ জমির মালিকের জন্য নির্ধারিত করে দিতাম। তিনি বলেন, কখনো এ অংশের উপর দুর্যোগ আসতো, অন্য অংশ নিরাপদ থাকতো। আবার কখনো অন্য অংশের উপর দুর্যোগ আসতো আর এ অংশ নিরাপদ থাকতো। আমাদের এরূপ করতে নিষেধ করে দেয়া হয়েছিল। আর সে সময় সোনা রূপার (বিনিময়ে জমি চাষ করার) প্রচলন ছিল না।

হাদীস নং ২১৭৭

ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারবাসীদের উৎপাদিত ফল বা অর্ধেক ভাগের শর্তে জমি বর্গা দিয়েছিলেন। তিনি নিজের সহধর্মিণীদেরকে একশ ওসক দিতেন, এর মধ্যে আশি ওসক খুরমা ও বিশ ওসক যব। উমর রা. (তাঁর খিলাফতকালে খায়বারের) জমি বন্টন করেন। তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণীদের ইখতিয়ার দিলেন যে, তাঁরা জমি ও পানি নিবেন, না কি তাদের জন্য ওটাই চালু থাকবে, যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় ছিল। তখন তাদের কেউ জমি নিলেন আর কেউ ওসক নিতে রাযী হলেন আয়িশা রা. জমিই নিয়েছিলেন।

হাদীস নং ২১৭৮

মুসাদ্দাদ রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উৎপাদিত ফল কিংবা ফসলের অর্ধেক শর্তে খায়বরের জমি বর্গা দিয়েছিলেন।

হাদীস নং ২১৭৯

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..আমর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তাউস রহ.-কে বললাম, আপনি যদি বর্গাচাষ ছেড়ে দিতেন, (তাহলে খুব ভাল হত) কেননা, লোকদের ধারণা যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা নিষেধ করেছেন। তাউস রহ. বললেন, হে আমর ! আমি তো তাদেরকে বর্গাচাষ করতে দিই এবং তাদের সাহায্য করি এবং তাদের মধ্যে সবচাইতে জ্ঞানী অর্থাৎ ইবনে আব্বাস রা. আমাকে বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্গাচাষ নিষেধ করেননি। তবে তিনি বলেছেন, তোমাদের কেউ তার ভাইকে জমি দান করুক, এটা তার জন্য তার ভাইয়ের কাছ থেকে নির্দিষ্ট উপার্জন গ্রহণ করার চাইতে উত্তম।

হাদীস নং ২১৮০

মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের জমি ইয়াহুদীদেরকে এ শর্তে বর্গা দিয়েছিলেন যে, তারা তাঁতে পরিশ্রম করে কৃষি কাজ করবে এবং উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক তারা পাবে।

হাদীস নং ২১৮১

সাদাকা ইবনে ফাযল রহ………রাফি রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মদীনাবাসীদের মধ্যে ফসলের জমি আমাদের বেশী ছিল। আমাদের মধ্যে কেউ তার জমি ইজারা দিত এবং বলত, জমির এ অংশ আমার আর এ অংশ তোমার। কখনো এক অংশে ফসল হত আর অন্য অংশে হত না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এরূপ করতে নিষেধ করেছেন।

হাদীস নং ২১৮২

ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : একবার তিনজন লোক পথ চলছিল, তারা বৃষ্টিতে আক্রান্ত হল। তারপর তারা এক পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিল। হঠাৎ পাহাড় থেকে এক খণ্ড পাথর পরে তাদের গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। তখন একে অপরকে বলল, নিজেদের কৃত কিছু সৎকাজের কথা চিন্তা করে বের করো, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয়েছে এবং তার ওয়াসীলা করে আল্লাহর নিকট দু’আ কর। তাহলে হয়ত আল্লাহ তোমাদের উপর থেকে পাথরটি সরিয়ে দিবেন। তাদের একজন বলতে লাগল, ইয়া আল্লাহ ! আমার অতিবৃদ্ধ পিতামাতা ছিলেন এবং আমার ছোট ছোট সন্তানও ছিল। আমি তাদের ভরণ-পোষণের জন্য পশু পালন করতাম। সন্ধ্যায় যখন আমি বাড়ি ফিরতাম তখন দুধ দোহন করতাম। এবং এ দুধ আমার সন্তানদের আগে পিতা-মাতাকে পান করতাম। একদিন দেরি হয় এবং সন্ধ্যা হওয়ার আগে আসতে পারলাম না। তারপর আমি যখন এলাম তখন তাঁরা দু’জনে ঘুমিয়ে পড়েছেন। তখন আমি দুধ দোহন করলাম যেমন প্রতিদিন দোহন করি। তারপর আমি শিয়রে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমি তাদের জাগানো পছন্দ করলাম না এবং তাদের আগে বাচ্চাদের কে পান করানোও অসঙ্গত মনে করি। অথচ বাচ্চাগুলো আমার পায়ের কাছে পড়ে কান্নাকাটি করছিল। এ অবস্থায়ই ভোর হল। ইয়া আল্লাহ ! তুমি যদি জান তা আমি শুধুমাত্র তোমার সন্তুষ্টি লাভের আশায় করেছিলাম। তাহলে তুমি আমাদের থেকে পাথরটি খানিক সরিয়ে দিন যাতে আমরা আকাশ দেখতে পারি। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আল্লাহ পাক পাথরটি একটু সরিয়ে দিলেন এবং তারা আসমান দেখতে পেল। আরেকজন বলল, ইয়া আল্লাহ ! তুমি জান যে, আমি আমার এক চাচাতো বোনকে এত চরম ভালবাসতাম, যা একজন পুরুষ নারীকে ভালবাসে থাকে। একদিন আমি তার কাছে চেয়ে বসলাম (অর্থাৎ খারাপ কাজ করতে চাইলাম) কিন্তু সে অস্বীকার করল, যতক্ষণ না আমি তার জন্য একশত দীনার নিয়ে আসি। আমি চেষ্টা করে তা সংগ্রহ করি। তারপর যখন আমি তার পদদ্বয়ের মাঝে উপবেশন করি, তখন সে বলল, হে আল্লাহর বান্দা, আল্লাহকে ভয় কর। অন্যায়ভাবে মাহর (পর্দা) ছিড়ে দিয়োনা। এতে আমি তাকে ছেড়ে উঠে পড়ি। (হে আল্লাহ) তুমি যদি জান আমি তা তোমারই সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে করেছি, তবে আমাদের থেকে পাথরটি সরিয়ে দিন। তখন পাথরটি কিছু সরে গেল। তৃতীয় ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ ! আমি ফারাক (পরিমাণ) চাউলের বিনিময়ে একজন মজুর রেখেছিলাম। যখন সে তার কাজ শেষ করল আমাকে বলল, আমার পাওনা দিয়ে দাও। আমি যখন তাকে তা দিতে গেলে সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করল। তারপর আমি সে এক ফারাক শস্য দানা দিয়ে চাষ করে ফসল উৎপন্ন করি এবং তা দিয়ে গরু খরিদ করি ও রাখাল নিযুক্ত করি। কিছুকাল পরে সে মজুর এসে বলল আল্লাহকে ভয় কর (আমার মুজরী দাও)। আমি বললাম, এই গরুগুলো ও রাখাল নিয়ে যাও। সে বলল, আল্লাহকে ভয় কর তুমি আমার সাথে উপহাস করোনা। আমি বললাম, আমি তোমার সাথে উপহাস করছি না বরং এসব তোমার। তখন সে তা নিয়ে গেল। হে আল্লাহ ! তুমি যদি জান আমি তা তোমারই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করছি, তবে আমাদের থেকে পাথরের বাকিটুকু সরিয়ে দিন। তখন আল্লাহ পাথরটিকে সরিয়ে দিলেন। আবু আবদুল্লহ রহ. বলেন, ইবনে উকবা রহ. নাফি রহ. فبغيت এর স্থলে فسعيت বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ২১৮৩

সাদাকা রহ……….আসলাম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর রা. বলেছেন, পরবর্তী যুগের মুসলমানদের বিষয়ে যদি আমরা চিন্তা না করতাম, তবে যে সব এলাকা জয় করা হত, তা আমি মুজাহিদদের মধ্যে বন্টন করে দিতাম, যেমন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার বন্টন করে দিয়েছিলেন।

হাদীস নং ২১৮৪

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি এমন কোন জমি আবাদ করে, যা কারো মালিকনায় নয়, তাহলে সেই (মালিক হওয়ার) বেশী হকদার। উরওয়া রহ. বলেন, উমর রা. তাঁর খিলাফতকালে এরূপ ফায়সালা দিয়েছিলেন।

হাদীস নং ২১৮৫

কুতাইবা রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল-হুলাইফার উপত্যকায় শেষরাতে বিশ্রাম করছিলেন। তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে, তাকে বলা হল, আপনি বরকতময় উপত্যকায় রয়েছেন। মূসা রহ. বলেন, সালিম আমাদের সাথে সে জায়গাতেই উট বসিয়েছিলেন যেখানে আবদুল্লাহ রা. উট বসাতেন এবং সে জায়গা লক্ষ্য করতেন, যে জায়গায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষরাতে অবতরণ করেছিলেন। সে জায়গা ছিল উপত্যকায় মধ্যেখানে অবস্থিত মসজিদ থেকে নীচে এবং মসজিদ ও রাস্তার মধ্যখানে।

হাদীস নং ২১৮৬

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম রহ…………উমর রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, গতরাতে আমার নিকট আমার রবের দূত এসেছিলেন। এ সময় তিনি আকীক উপত্যকায় অবস্থান করছিলেন। (এসে) তিনি বললেন, এই মুবারক উপত্যকায় সালাত আদায় করুন, আর তিনি বললেন, হজ্জের সাথে উমরারও থাকবে।

হাদীস নং ২১৮৭

আহমদ ইবনে মিকদাম ও আবদুর রাযযাক রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর ইবনে খাত্তাব রা. ইয়াহুদী ও নাসারাদের হিজায থেকে নির্বাসিত করেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খায়বার জয় করেন, তখন ইয়াহুদীদের সেখান থেকে বের করে দিতে চেয়েছিলেন। যখন তিনি কোন স্থান জয় করেন, তখন তা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুসলিমদের জন্য হয়ে যায়। কাজেই ইয়াহুদীদের সেখান থেকে বহিষ্কার করে দিতে চাইলেন। তখন ইয়াহুদীরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অনুরোধ করল, যেন তাদের সে স্থানে বহাল রাখা হয় এ শর্তে যে, তারা সেখানে চাষাবাদে দায়িত্ব পালন করবে আর ফসলেন অর্ধেক তাদের থাকবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন : আমরা এ শর্তে তোমাদের এখানে বহাল থাকতে দিব যতদিন আমাদের ইচ্ছ। কাজেই তারা সেখানে বহাল রইল। অবশেষে উমর রা. তাদেরকে তাইমা ও আরীহায় নির্বাসিত করে দেন।

হাদীস নং ২১৮৮

মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ……….যুহাইর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একটি কাজ আমাদের উপকারী ছিল, যা করতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিষেধ করলেন। আমি বললাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, তাই সঠিক। যুহাইর রা. বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা তোমাদের ক্ষেত-খামার নির্দিষ্ট কয়েক ওসাক প্রদানের শর্তে জমি ইজারা দিয়ে থাকি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমরা এরূপ করবে না। তোমরা নিজেরা তা চাষ করবে অথবা অন্য কাউকে দিয়ে চাষ করাবে অথবা তা ফেলে রাখবে। রাফি রা. বলেন, আমি শুনলাম ও মেনে নিলাম।

হাদীস নং ২১৮৯

উবাইদুল্লাহ ইবনে মূসা রহ……….জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা এক-তৃতীয়াংশ, এক-চতূর্থাংশ ও অর্ধেক ফসলের শর্তে বর্গা চাষ করত। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : যে ব্যক্তির নিকট জমি রয়েছে, সে যেন নিজে চাষ করে অথবা তা কাউকে দিয়ে দেয়। যদি তা না করে তবে সে যেন তার জমি ফেলে রাখে। রবী ইবনে নাফি আবু তাওবা রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যার নিকট জমি রয়েছে, সে যেন নিজে চাষ করে অথবা তার ভাইকে দিয়ে দেয়। যদি তা না করতে চায়, তবে সে যেন তার জমি ফেলে রাখে।

হাদীস নং ২১৯০

কাবীসা রহ……..আমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (বর্গাচাষ সম্পর্কিত) এ হাদীসটি তাউস রহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, চাষাবাদ করতে দেওয়া হোক। ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা (বর্গাচাষ) নিষেধ করেননি। তবে তিনি বলেছেন যে,, তোমাদের নিজের ভাইকে জমি দান করে দেওয়া উত্তম, তার কাছ থেকে নির্দিষ্ট কিছু গ্রহণ করার চাইতে।

হাদীস নং ২১৯১

সুলাইমান ইবনে হারব রহ……….নাফি রহ. থেকে বর্ণিত যে, ইবনে উমর রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে এবং আবু বকর, উমর, উসমান রা. মুআবিয়া রা-এর শাসনের শুরু ভাগে নিজের ক্ষেত বর্গাচাষ করতে দিতেন। তারপর রাফি ইবনে খাদিজের বর্ণিত হাদীসটি তাঁর নিকট বর্ণনা করা হয় যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ষেত ভাগে ইজারা দিতে নিষেধ করেছেন। তখন ইবনে উমর রা. রাফি রা.-এর নিকট গেলেন। আমিও তাঁর সঙ্গে গেলাম। তিনি (ইবনে উমর) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি (রাফি রা.) বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ষেত ভাগে ইজারা দিতে নিষেধ করেছেন। তখন ইবনে উমর রা. বললেন, আপনি তো জানেন যে, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় নালার পার্শ্বস্থ ক্ষেতের ফসলের শর্তে এবং কিছু ঘাসের বিনিময়ে আমাদের ক্ষেত ইজারা দিতাম।

হাদীস নং ২১৯২

ইয়াতহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….সালিম রহ. থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেছেন, আমি জানতাম যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় ক্ষেত বর্গাচাষ করতে দেয়া হত। তারপর আবদুল্লাহ রা.-এর ভয় হল, হয়ত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সম্পর্কে এমন কিছু নতুন নির্দেশ দিয়েছেন, যা তাঁর জানা নেই। তাই তিনি ভাগে জমি ইজারা দেওয়া ছেড়ে দিলেন।

হাদীস নং ২১৯৩

আমর ইবনে খালিদ রহ……..রাফি ইবনে খাদীজ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার কাছে আমার চাচারা বর্ণনা করেছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় লোকেরা নালার পার্শ্বস্থ ফসলের শর্তে কিংবা এমন কিছু শর্তে ভাগে জমি ইজারা দিত, যা ক্ষেতের মালিক নিজের জন্য নির্দিষ্ট করে নিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এরূপ করতে নিষেধ করেন। রাবী বলেন, আমি রাফি রা.-কে বললাম, দীনার ও দিরহামের শর্তে জমি (ইজারা দেওয়া) কেমন ? রাফি রা. বললেন, দীনার ও দিরহামের বিনিময়ে ইজারা দেওয়াতে কোন দোষ নেই। (লায়ছ রহ. বলেন, আমার মনে হয়, যে বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছে, হালাল ও হারাম বিষয়ে বিজ্ঞজনেরা সে সম্পর্কে চিন্তা করলেও তারা তা জায়িয মনে করবেন না। কেননা, তাঁতে (ক্ষতির) আশংকা রয়েছে। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী রহ.) বলেন, আমার মনে হয় যে, বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছে-এখান থেকে লাইছ রহ.-এর উক্তি শুরু হয়েছে।

হাদীস নং ২১৯৪

মুহাম্মদ ইবনে সিনান রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথা বলছিলেন, তখন তাঁর নিকট গ্রামের একজন লোক বসা ছিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেন যে, জান্নাতবাসীদের কোন একজন তার রবের কাছে চাষাবাদের অনুমতি চাইবে। তখন আল্লহ তা’আলা তাকে বললেন, তুমি কি যা চাও, তা পাচ্ছ না? সে বলবে, হ্যাঁ নিশ্চয়ই। কিন্তু আমার চাষ করার খুবই আগ্রহ।। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তখন সে বীজ বুনবে এবং তার চারা হওয়া, গাছ বড় হওয়া ও ফসল কাটা সব কিছু পলকের মধ্যে হয়ে যাবে। আর তা (ফসল) পাহাড় সমান হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, হে আদম সন্তান ! এ গুলো নিয়ে নাও। কোন কিছুই তোমাকে তৃপ্তি দেয় না। তখন গ্রাম্য লোকটি বলে উঠল, আল্লাহর কসম, এই ধরনের লোক আপনি কুরাইশী বা আনসারদের মধ্যেই পাবেন। কেননা তাঁরা চাষী। আর আমরা তো চাষী নই। (আমরা পশু পালন করি) এ কথা শুনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেঁসে দিলেন।

হাদীস নং ২১৯৫

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জুমুআর দিন আসলে আমরা আনন্দিত হতাম এ জন্য যে, আমাদের (প্রতিবেশী) এক বৃদ্ধা ছিলেন, তিনি আমাদের নালার ধারে লাগানো বীট গাছের মূল তুলে এনে তার ডেকচিতে রাখতেন এবং তার সাথে যবের দানাও মিশাইতেন। (বর্ণনাকারী বলেন) আমার যতটুকু মনে পড়ে তিনি (সাহল) বলেছেন যে, তাঁতে কোন চর্বি বা তৈলাক্ত কিছু থাকতো না। আমরা জুমুআর সালাতের পর বৃদ্ধার নিকট আসতাম এবং তিনি তা আমাদের সামনে পরিবেশন করতেন। এ কারণে জুমুআর দিন আমাদের খুব আনন্দ হত। আমরা জুমুআর সালাতের পরই আহার করতাম এবং কায়লুলা (বিশ্রাম) করতাম।

হাদীস নং ২১৯৬

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকজন বলে যে, আবু হুরায়রা রা. বেশী হাদীস বর্ণনা করে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছেই সবার প্রত্যাবর্তন। এবং তারা আরো বলে, মুহাজির ও আনসারদের কি হল যে, তারা আবু হুরায়রা মত এতো হাদীস বর্ণনা করেন না। (আবু হুরায়রা রা. বলেন) আমার মুহাজির ভাইদেরকে বাজারে বেচা-কেনা এবং আনসার ভাইদেরকে তাদের ক্ষেত-খামার ও বাগানের কাজ-কর্ম ব্যতিব্যস্ত রাখত। আমি ছিলাম একজন মিসকীন লোক। পেটে যা জুটে, খেয়ে না খেয়ে তাতেই তুষ্ট থেকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পড়ে থাকতাম। তাই লোকেরা যখন অনুপস্থিত থাকত, আমি হাযির থাকতাম। লোকেরা যা ভুলে যেত আমি তা স্মরণ রাখতাম। একদিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমাদের যে কেউ আমার কথা শেষ হওয়া পর্যন্ত তার চাদর বিছিয়ে রাখবে এবং আমার কথা শেষ হলে চাদরখানা তার বুকের সাথে মিলাবে, তাহলে সে আমার কোন কথা ভুলবে না। আমি আমার পশমী চাদরটা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিছিয়ে রাখলাম। সে চাদর ছাড়া আমার গায়ে আর কোন চাদর ছিল না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কথা শেষ হওয়ার পর আমি তা আমার বুকের সাথে মিলালাম। সে সত্তার কসম, যিনি তাকে সত্য দিয়ে প্রেরণ করেছেন, আজ পর্যন্ত আমি তাঁর একটি কথাও ভুলিনি। আল্লাহর কসম ! যদি আল্লাহর কিতাবের এ দুটি আয়াত না থাকত, তবে আমি কখনো তোমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করতাম না। (তা এই) “যারা আমার নাযিলকৃত নিদর্শনসমূহ গোপন করে………….আল্লাহ অত্যন্ত দয়ালু” পর্যন্ত।

পানি সিঞ্চন অধ্যায় (২১৯৭-২২২৬)

হাদীস নং ২১৯৭

সাঈদ ইবনে আবু মারয়াম রহ……….সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট একটি পিয়ালা আনা হল। তিনি তা থেকে পান করলেন। তখন তাঁর ডান দিকে ছিল একজন বয়ঃকনিষ্ঠ বালক আর বয়স্ক লোক ছিলেন তাঁর বাম দিকে। তিনি বললেন, হে বালক ! তুমি কি আমাকে অবশিষ্ট (পানিটুকু) বয়স্কদের কে দেওয়ার অনুমতি দিবে ? সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনার অবশিষ্ট পানির ব্যাপারে আমি কাউকে প্রাধান্য দিব না। এরপর তিনি তা তাকে দিলেন।

হাদীস নং ২১৯৮

আবুল ইয়ামান রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য একটি বকরীর দুধ দোহন করা হল। তখন তিনি আনাস ইবনে মালিক রা.-এর ঘরে অবস্থান করছিলেন এবং সেই দুধের সঙ্গে আনাস ইবনে মালিকের বাড়ীর কূপের পানি মিশানো হল। তারপর পাত্রটি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেওয়া হল। তিনি তা থেকে পান করলেন। পাত্রটি তাঁর মুখ থেকে আলাদা করার পর তিনি দেখলেন যে, তাঁর বাঁদিকে আবু বকর রা. ও বাম দিকে একজন বেদুঈন রয়েছে। পাত্রটি তিনি হয়ত বেদুঈনকে দিয়ে দেবেন এ আশংকায় উমর রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আবু বকর রা. আপনার পাশেই, তাকে পাত্রটি দিন। তিনি বেদুঈনকে পাত্রটি দিলেন, যে তাঁর ডানপাশে ছিল। তারপর তিনি বললেন, ডানদিকের লোক বেশী হকদার।

হাদীস নং ২১৯৯

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ঘাস উৎপাদন থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি রুখে রাখা যাবে না।

হাদীস নং ২২০০

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : অতিরিক্ত ঘাসে বাঁধা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত পানি রুখে রাখবে না।

হাদীস নং ২২০১

মাহমুদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : খনি ও কূপে কাজ করা অবস্থায় অথবা জন্তু-জানোয়ারের আঘাতে মারা গেলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না এবং রিকাযে পঞ্চমাংশ দিতে হবে।

হাদীস নং ২২০২

আবদান রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি কোন মুসলমানদের অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা কসম খায়, সে আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় মিলিত হবে যে, আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট থাকবেন। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা’আলা নাযিল করেন : “যারা আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতিও নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে………এর শেষ পর্যন্ত। (৩ : ৭৭) এরপর আশআস রা. এসে বলেন, আবু আবদুর রাহমান রা. তোমার নিকট কি হাদীস বর্ণনা করছিলেন ? এ আয়াতটি তো আমার সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। আমার চাচাতো ভাইয়ের জায়গায় আমার একটি কূপ ছিল। (এ ব্যাপারে আমাদের মধ্যে বিবাদ হওয়ায়) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন : তোমার সাক্ষী পেশ কর। আমি বললাম, আমার সাক্ষী নেই। তিনি বললেন : তাহলে তাকে কসম খেতে হবে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সে তো কসম করবে। এ সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীস বর্ণনা করেন এবং আল্লাহ তা’আলা তাকে সত্যায়িত করে এই আয়াতটি নাযিল করেন।

হাদীস নং ২২০৩

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর লোকের প্রতি আল্লাহ তা’আলা দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদের পবিত্র করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। এক ব্যক্তি যার নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি আছে, অথচ সে মুসাফিরকে তা দিতে অস্বীকার করে। অন্য একজন সে ব্যক্তি, যে ইমামের হাতে একমাত্র দুনিয়ার স্বার্থে বায়আত হয়। যদি ইমাম তাকে দুনিয়াবি সুযোগ দেন, তাহলে সে খুশী হয়, আর যদি না দেন তবে সে অসন্তুষ্ট হয়। অন্য একজন সে ব্যক্তি, যে আসরের সালাত আদায়ের পর তার জিনিসপত্র (বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে) তুলে ধরে আর বলে যে, আল্লাহর কসম, যিনি ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই, আমার এই দ্রব্যের মূল্য এতো দিতে আগ্রহ করা হয়েছে। (কিন্তু আমি বিক্রি করিনি) এতে এক ব্যক্তি তাকে বিশ্বাস করে (তা ক্রয় করে নেয়) এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন, “যারা আল্লাহর কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে (৩:৭৭)।

হাদীস নং ২২০৪

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক আনসারী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে যুবাইর রা.-এর সঙ্গে হাররার নালার পানির ব্যাপারে ঝগড়া করল, যে পানি দ্বারা খেজুর বাগন সিঞ্চন করত। আনসারী বলল, নালার পানি ছেড়ে দিন, যাতে তা (প্রবাহিত থাকে) কিন্তু যুবাইর রা. তা দিতে অস্বীকার করেন। তারা দু’জনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এ নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবাইর রা.-কে বললেন : হে যুবাইর ! তোমার যমীনে (প্রথমে) সিঞ্চন করে নাও। এরপর তোমার প্রতিবেশীর দিকে পানি ছেড়ে দাও। এতে আনসারী অসন্তুষ্ট হয়ে বলল, সে তো আপনার ফুফাত ভাই। এতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারায় অসন্তুষ্টির লক্ষণ প্রকাশ পেল। এরপর তিনি বললেন : হে যুবাইর ! তুমি নিজের জমি সিঞ্চন কর। এরপর পানি আটকিয়ে রাখ, যাতে তা বাঁধ পর্যন্ত পৌঁছে। যুবাইর রা. বললেন : আল্লাহর কসম, আমার মনে হয়, এ আয়াতটি এ সম্পর্কে নাযিল হয়েছে : “কিন্তু না, তোমার রবের কসম ! তারা মুমিন হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ বিসম্বাদের বিচার ভার আপনার উপর অর্পন না করে (৪: ৬৫)।

হাদীস নং ২২০৫

আবদান রহ………উরওয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যুবাইর রা. এক আনসারীর সঙ্গে ব্যাপারে ঝগড়া করলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবাইর রা.-কে বললেন : হে যুবাইর ! জমিতে পানি সেচের পর তা ছেড়ে দাও। এতে আনসারী বলল, সে তো আপনার ফুফাত ভাই। এরপর তিনি বললেন : হে যুবাইর ! পানি বাঁধে পৌঁছা পর্যন্ত সেচ দিতে থাক। তারপর বন্ধ করে দাও। যুবাইর রা. বললেন : আমার মনে হয়, এ আয়াতটি এ সম্পর্কে নাযিল হয়েছে : “কিন্তু না, তোমার রবের কসম ! তারা মুমিন হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ বিসম্বাদের বিচার ভার আপনার উপর অর্পন না করে (৪: ৬৫)।

হাদীস নং ২২০৬

মুহাম্মদ রহ………উরওয়া ইবনে যুবাইর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন আনসারী যুবাইর রা.-এর সঙ্গে হাররার নালার পানির ব্যাপারে ঝগড়া করল, যে পানি দ্বারা খেজুর বাগান সিঞ্চন করত। এ বিষয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : হে যুবাইর ! সেচ দিতে থাক। তারপর নিয়ম-নীতি অনুযায়ী তিনি তাকে নির্দেশ দিলেন, তারপর তা তোমার প্রতিবেশীর জন্য ছেড়ে দাও। এতে আনসারী বলল, সে তো আপনার ফুফাত ভাই। এতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারায় অসন্তুষ্টির লক্ষণ প্রকাশ পেল। এরপর তিনি বললেন : হে যুবাইর ! পানি বাঁধে পৌঁছা পর্যন্ত সেচ দিতে থাক। তারপর বন্ধ করে দাও। যুবাইরকে তার পূর্ন হক দিলেন। যুবাইর রা. বললেন : আল্লাহর কসম, আমার মনে হয়, এ আয়াতটি এ সম্পর্কে নাযিল হয়েছে : “কিন্তু না, তোমার রবের কসম ! তারা মুমিন হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ বিসম্বাদের বিচার ভার আপনার উপর অর্পন না করে (৪: ৬৫)। বর্ণনাকারী বলেন, ইবনে শিহাবের বর্ণনা হচ্ছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কথা পানি নেয়ার পর বাঁধ অবধি পৌছা পর্যন্ত তা বন্ধ রাখ। আনসার এবং অন্যান্য লোকেরা এর পরিমাণ করে দেখেছেন যে, তা টাখনু পর্যন্ত পৌঁছে।

হাদীস নং ২২০৭

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : একজন লোক রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে তার ভীষণ পিপাসা লাগল। সে কূপে নেমে পানি পান করল। এরপর সে বের হয়ে দেখতে পেল যে, একটা কুকুর হাঁপাচ্ছে এবং পিপাসায় কাতর হয়ে মাটি চাটছে। সে ভাবল, কুকুরটাও আমার মত পিপাসা লেগেছে। সে কূপের মধ্যে নামল এবং নিজের মোজা ভরে পানি নিয়ে মুখ দিয়ে সেটি ধরে উপরে উঠে এসে কুকুরটিকে পানি পান করাল। আল্লাহ পাক তার আমল কবুল করলেন এবং আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেন। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! চতুষ্পদ জন্তুর উপকার করলেও কি আমাদের সাওয়াব হবে? তিনি বললেন : প্রত্যেক প্রাণীর উপকার করাতেই সাওয়াব রয়েছে।

হাদীস নং ২২০৮

ইবনে আবু মারয়াম রহ…….আসমা বিনতে আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য গ্রহণের সালাত আদায় করলেন। তারপর বললেন : দোযখ আমার নিকটবর্তী করা হলে আমি বললাম, হে রব, আমিও কি এই দোযখীদের সাথী হব? এমতাবস্থায় একজন মহিলা আমার নযরে পড়ল। বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা, তিনি বলেছেন : বিড়াল তাকে (মহিলা) খামছাচ্ছিল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ মহিলার কি হল? ফেরেশতারা জবাব দিলেন, সে একটি বিড়াল বেঁধে রেখেছিল, যার কারণে বিড়ালটি ক্ষুধায় মারা যায়।

হাদীস নং ২২০৯

ইসমাঈল রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : একজন মহিলাকে একটি বিড়ালের কারণে আযাব দেওয়া হয়। সে বিড়ালটি বেঁধে রেখেছিল, অবশেষে বিড়ালটি মারা যায়। এ কারণে মহিলা জাহান্নামে প্রবেশ করল। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আল্লাহ ভালো জানেন, বাঁধা থাকাকালীন তুমি তাকে না খেতে দিয়েছিলে, না পান করতে দিয়েছিলে এবং না তুমি তাকে ছেড়ে দিয়েছিলে, তাহলে সে যমীনে পোক-মাকড় খেয়ে বেঁচে থাকত।

হাদীস নং ২২১০

কুতাইবা রহ………সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট একটি পানির পেয়ালা আনা হল। তিনি তা থেকে পান করলেন। তাঁর ডানদিকে একজন বালক ছিল, সে ছিল লোকদের মধ্যে সবচাইতে কম বয়স্ক এবং বয়োজ্যেষ্ঠ লোকেরা তার তার বাম দিকে ছিল। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : হে বালক! তুমি কি আমাকে জ্যেষ্ঠদের এটি দিতে অনুমতি দিবে ? সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি আপনার উচ্ছিষ্টের ব্যাপারে নিজের উপর কাউকে প্রাধান্য দিতে চাই না। এরপর তিনি তাকেই সেটি দিলেন।

হাদীস নং ২২১১

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, আমি নিশ্চয়ই (কিয়ামতের দিন) আমার হাউজ (কাউসার) থেকে কিছু লোকদেরকে এমনভাবে তাড়াব, যেমন অপরিচিত উট হাউজ হতে তাড়ান হয়।

হাদীস নং ২২১২

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ…….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ইসমাঈল আ.-এর মা হাজেরা আ.-এর উপর আল্লাহ রহম করুন। কেননা যদি তিনি যমযমকে স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে দিতেন অথবা তিনি বলেছেন : যদি তা হতে অঞ্জলে পানি না নিতেন, তাহলে তা একটি প্রবাহিত ঝরনায় পরিণত হত। জুরহাম গোত্র তাঁর নিকট এসে বলল, আপনি কি আমাদেরকে আপনার নিকট অবস্থান করার অনুমতি দিবেন? তিনি (হাজেরা) বললেন, হ্যাঁ। তবে পানির উপর তোমাদের কোন অধিকার থাকবে না। তারা বলল, ঠিক আছে।

হাদীস নং ২২১৩

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তিন শ্রেণীর লোকের সাথে আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না এবং তাদের প্রতি তাকাবেনও না । (এক) যে ব্যক্তি কোন মাল সামানের ব্যাপারে মিথ্যা কসম খেয়ে বলে যে, এর দাম এর চেয়ে বেশী বলে ছিল কিন্তু তা সত্ত্বেও সে তা বিক্রি করেনি। (দুই) যে ব্যক্তি আসারের সালাতের পর একজন মুসলমানের মাল-সম্পত্তি আত্মসাত করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা কসম করে। (তিন) যে ব্যক্তি তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি মানুষকে দেয় না। আল্লাহ তা’আলা বলবেন (কিয়ামতের দিন) আজ আমি আমার অনুগ্রহ থেকে তোমাকে বঞ্চিত রাখব। যেরূপ তুমি তোমার প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি থেকে বঞ্চিত রেখে ছিলে অথচ তা তোমার হাতের তৈরী নয়। আলী রহ. আর সালিহ রহ. থেকে বর্ণিত যে, তিনি হাদীসের সনদটি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন।

হাদীস নং ২২১৪

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………সাব ইবনে জাসসামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : চারণভূমি সংরক্ষিত করা আল্লাহ ও তাঁর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া আর কারো অধিকারে নেই। তিনি বলেন, আমাদের নিকট রিওয়ায়েত পৌছেছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাকীর চারণভূমি (নিজের জন্য) সংরক্ষিত করেছিলেন, আর উমর রা. সারাফ ও রাবাযার চারণভূমি সংরক্ষণ করেছিলেন।

হাদীস নং ২২১৫

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ঘোড়া একজনের জন্য সাওয়াব, একজনের জন্য ঢাল এবং আরেকজনের জন্য পাপ। সাওয়াব হয় তার জন্য, যে আল্লাহর রাস্তায় তা জিহাদের উদ্দেশ্যে বেঁধে রাখে এবং সে ঘোড়ার রশি চারণভূমি বা বাগানে লম্বা করে দেয়। এমতাবস্থায় সে ঘোড়া চারণভূমি বা বাগানে তার রশির দৈর্ঘ্য পরিমাণ যতটুকু চরবে, সে ব্যক্তির জন্য সে পরিমাণ সাওয়াব হবে। যদি তার রশি ছিড়ে যায় এবং সে একটি কিংবা দুটি টিলা অতিক্রম করে, তাহলে তার প্রতিটি পদচিহ্ন ও তার গোবর মালিকের ইচ্ছা ব্যতিরেকে সে তা থেকে পানি পান করে, তাহলে এ জন্য মালিক সাওয়াব পাবে। আর ঢাল সরূপ সে লোকের জন্য, যে মুখাপেক্ষী ও ভিক্ষা নির্ভরতা থেকে বাঁচার জন্য তাকে বেঁধে রাখে। তারপর এর পিঠে ও গর্দানে আল্লাহর নির্ধারিত হক আদায় করতে ভুলে করে না। গুনাহর কারণ সে লোকের জন্য, যে তাকে অহংকার ও লোক দেখাবার কিংবা মুসলমানদের প্রতি শত্রুতার উদ্দেশ্যে বেঁধে রাখে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে গাধা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার প্রতি কোন আয়াত নাযিল হয়নি। তবে এ ব্যাপারে একটি পরিপূর্ণ ও অনন্য আয়াত রয়েছে। (তা হল আল্লাহ তা’আলার এ বাণী) কেউ অনু পরিমাণ সৎকর্ম করলে সে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে সে তাও দেখতে পাবে” (৯৯ : ৭-৮)।

হাদীস নং ২২১৬

ইসমাঈল রহ………যায়েদ ইবন খালিদ আল-জুহানী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন লোক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে পড়ে থাকা জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তিনি বললেন : থলেটি এবং তার মুখের বন্ধনটি চিনে রাখ। তারপর এক বছর পর্যন্ত তা ঘোষণা করতে থাক। যদি তার মালিক এসে যায় তো ভাল। তা নাহলে সে ব্যাপারে তুমি যা ভাল মনে কর তা করবে। সে আবার জিজ্ঞাসা করল, হারানো বকরি কি করব? তিনি বললেন : সেটি হয় তোমার, না হয় তোমার ভাইয়ের, না হয় নেকড়ে বাঘের। সে আবার জিজ্ঞাসা করল, হারানো উট হলে কি করব? তিনি বললেন :তাঁতে তোমার প্রয়োজন কি ? তার সঙ্গে তার মশক ও খুর রয়েছে। সে জলাশয়ে উপস্থিত হয়ে গাছ-পালা খাবে, শেষ পর্যন্ত তার মালিক তাকে পেয়ে যাবে।

হাদীস নং ২২১৭

মুয়াল্লা ইবনে আসাদ রহ………যুবাইর ইবনে আওয়াম রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের কেউ রশি নিয়ে লাকড়ীর আটি বেঁধে তা বিক্রি করে, এতে আল্লাহ তা’আলা তার সম্মান রক্ষা করেন, এটা তার জন্য মানুষের কাছে ভিক্ষা করার চাইতে উত্তম। লোকজনের নিকট এমন চাওয়ার চেয়ে, যে চাওয়ায় কিছু পাওয়া যেতে পারে বা নাও পারে।

হাদীস নং ২২১৮

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কারো নিকট সাওয়াল করা, যাতে সে তাকে কিছু দিতেও পারে আবার নাও দিতে পারে, এর চেয়ে পিঠে বোঝা বহন করা (তা বিক্রি করা) উত্তম।

হাদীস নং ২২১৯

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ………আলী ইবনে আবু তালিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বদরের যুদ্ধে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমি মালে গনীমত হিসাবে একটি উট লাভ করি। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আরো একটি উট দেন। একদিন আমি উট দুটিকে একজন আনসারীর ঘরের দরজায় বসাই। আমার ইচ্ছা ছিল এদের উপর ইযখির (এক ধরণের ঘাস) চাপিয়ে তা বিক্রি করতে নিয়ে যাব। আমার সাথে বনূ কায়নুকার একজন স্বর্ণকার ছিল। আমি এর দ্বারা ফাতিমা রা.-এর ওলীমা করতে সমর্থ হব। সে ঘরে হামযা ইবনে আবদুল মুত্তালিব রা. শরাব পান করছিলেন। আর তাঁর সাথে একজন গায়িকাও ছিল। সে বলল, হে হামযা ! তৈরী হও, মোটা উটগুলোর উদ্দেশ্যে। এরপর হামযা রা. উট দুটোর দিকে তরবারি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং তাদের কুজ দুটিও কেটে নিলেন এবং পেট ফেড়ে উভয়ের কলিজা বের করে নিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ইবনে শিহাব রহ.-কে জিজ্ঞাসা করি, কুজ কি করা হল? তিনি বলেন, সেটি কেটে দিল। এরপর আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলাম। তাঁর নিকট তখন যায়েদ ইবেন হারিসা রা. উপস্থিত ছিলেন। আমি তাকে খবর বললাম। তিনি বের হলেন এবং তাঁর সঙ্গে ছিলেন যায়েদ রা.। আমিও তাঁর সঙ্গে গেলাম। তিনি হামযা রা.-এর নিকট উপস্থিত হলেন এবং তার প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করলেন। হামযা দৃষ্টি উচু করে তাদের দিকে তাকালেন। আর বললেন, তোমরা আমার বাপ-দাদার দাস বটে। হামযা রা.-এর এ অবস্থা দেখে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিছনে সরে তাদের নিকট থেকে চলে আসলেন। ঘটনাটি শরাব হারাম হওয়ার আগেকার।

হাদীস নং ২২২০

সুলাইমান ইবনে হারব রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদেরকে বাহরাইনে কিছু জায়গীর দিতে চাইলেন। তারা বলল, আমাদের মুহাজির ভাইদেরও শীঘ্রই তোমরা দেখবে, তোমাদের উপর অন্যদেরকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। তখন তোমরা সবর করবে, যে পর্যন্ত না তোমরা আমার সঙ্গে মিলিত হও।

হাদীস নং ২২২১

ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, উটের হক এই যে, পানির কাছে তার দুধ দোহন করা।

হাদীস নং ২২২২

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি খেজুর গাছ তাবীর করার পর গাছ বিক্রয় করে, তার ফল বিক্রেতার। কিন্তু ক্রেতা শর্ত করলে তা তারই। কিন্তু যদি ক্রেতা শর্ত করে তাহলে তা হবে তার। মালিক রহ………উমর রা. থেকে গোলাম বিক্রয়ের ব্যাপারে অনুরূপ বর্ণিত রয়েছে।

হাদীস নং ২২২৩

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ……….যায়েদ ইবনে সাবিত রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুমান করে শুকনো খেজুরের বিনিময়ে আরায়্যা বিক্রি অনুমতি দিয়েছেন।

হাদীস নং ২২২৪

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখাবারা, মুহাকালা ও শুকনো খেজুরের বিনিময়ে গাছের খেজুর বিক্রি করা এবং ফল উপযুক্ত হওয়ার আগে তা বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। গাছে থাকা অবস্থায় ফল দিনার বা দিরহামের বিনিময়ে ছাড়া যেন বিক্রি করা না হয়। তবে আরায়্যার অনুমতি দিয়েছেন।

হাদীস নং ২২২৫

ইয়াহইয়া ইবনে কাযাআ রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুমান করে শুকনো খেজুরের বিনিময়ে পাঁচ ওসাক কিংবা তার চাইতে কম আরায়্যার বিক্রির অনুমতি দিয়েছেন।বর্ণনাকারী দাউদ এ বিষয়ে সন্দেহ করেছেন।

হাদীস নং ২২২৬

যাকারিয়া ইবনে ইয়াহইয়া রহ………..রাফি ইবনে খাদিজ ও সাহল ইবনে আবু হাসমা রা. থেকে বর্ণিত, তাঁরা উভয়ে বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযাবানা অর্থাৎ গাছে ফল থাকা অবস্থায় তা শুকনা ফলের বিনিময়ে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু যারা আরায়্যা করে, তাদের জন্য তিনি এর অনুমতি দিয়েছেন।

 ঋণ গ্রহণ অধ্যায় (২২২৭-২২৪৯)

হাদীস নং ২০২৭
Missing

হাদীস নং ২২২৮

মুয়াল্লা ইবনে আসাদ রহ……..আবদুল ওয়াহিদ সূত্রে আমাশ রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমরা ইবরাহীম নাখয়ীর কাছে ধার (বাকীতে) ক্রয় করা সম্পর্কে আলোচনা করলাম। তখন তিনি বললেন, আসওয়াদ রা. বর্ণনা করেন যে, আয়িশা রা. থেকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ইয়হুদীর কাছ থেকে এক নির্দিষ্ট মেয়াদে (বাকীতে) খাদ্য ক্রয় করেন এবং তার নিকট নিজের লোহার বর্মটি বন্ধক রাখেন।

হাদীস নং ২২২৯

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ উয়ায়সী রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি মানুষের মাল (ধার) নেয় পরিশোধ করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা’আলা তা আদায়ের ব্যবস্থা করে দেন। আর যে তা নেয় বিনষ্ট করার নিয়্যাতে আল্লাহ তা’আলা তাকে ধ্বংস করেন।

হাদীস নং ২২৩০

আহমদ ইবনে ইউনুস রহ………..আবু যার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। যখন তিনি উহুদ পাহাড় দেখলেন, তখন বললেন, আমি পছন্দ করি না যে, এই পাহাড়টি আমার জন্য সোনার পরিণত করা হোক এবং এর মধ্য থেকে একটি দিনার ও (স্বর্ণমুদ্রা) আমার নিকট তিন দিনের বেশী থাকুক, সেই দীনার ব্যতীত যা আমি ঋণ আদায়ের জন্য রেখে দেই। তারপর তিনি বললেন, যারা অধিক সম্পদশালী তারাই স্বল্পের অধিকারী । কিন্তু যারা এভাবে ওভাবে ব্যয় করেন (তারা ব্যতীত)। (বর্ণনাকারী) আবু শিহাব তার সামনের দিকে এবং ডান ও বাম দিকে ইশারা করেন এবং বলেন, এইরূপ লোক খুব কম আছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি এখানেই অবস্থান কর। তিনি একটু দূরে গেলেন। আমি কিছু শব্দ শুনতে পেলাম। তখন আমি তার কাছে আসতে চাইলাম। এরপর আমি ফিরে আসা পর্যন্ত তুমি এখানে অবস্থান কর তার এ কথাটি আমার মনে পড়ল। তিনি যখন আসলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! যা আমি শুনলাম অথবা বললেন যে আওয়াযটি আমি শুনতে পেলাম তা কি? তিনি বললেন, তুমি কি শুনেছ ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমার কাছে জিবরীল আ. এসেছিলেন এবং তিনি বললেন, আপনার কোন উম্মত আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছু শরীক না করে মারা গেলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, যদিও সে এরূপ, এরূপ কাজ করে ? তিনি বললেন, হ্যাঁ।

হাদীস নং ২২৩১

আহমদ ইবন শাবীব ইবনে সাঈদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমার কাছে যদি উহুদ পাহাড়ের সমান সোনা থাকত, তাহলেও আমার পছন্দ নয় যে, তিনদিন অতিবাহিত হওয়ার পর তার কিছু অংশ আমার কাছে থাকুক। তবে এতটুকু পরিমাণ ব্যতীত, যা আমি ঋণ পরিশোধ করার জন্য রেখে দেই। ছালিহ ও উকাইল রহ. যুহরী রহ. থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ২২৩২

আবু ওয়ালীদ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তার পাওনা আদায়ের কড়া তাগাদা দিল। সাহাবায়ে কিরাম তাকে শায়েস্তা করতে উদ্যত হলেন। তিনি বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। কেননা, পাওনাদারের কথা বলার অধিকার রয়েছে। তার জন্য একটি কিনে আন এবং তাকে তা দিয়ে দাও। তাঁরা বললেন, তার উটের চাইতে বেশী বয়সের উট ছাড়া আমরা পাচ্ছি না। তিনি বললেন, সেটিই কিনে তাকে দিয়ে দাও। কারণ, তোমাদের উত্তম লোক সেই, যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে।

হাদীস নং ২২৩৩

মুসলিম রহ………হুযায়ফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, একজন লোক মারা গেল, তাকে জিজ্ঞাসা করা হল তুমি কি বলতে ? সে বলল, আমি লোকজনের সাথে বেচা-কেনা করতাম। ধনীদেরকে অবকাশ দিতাম এবং গরীবদেরকে হ্রাস করে দিতাম। কাজেই তাকে মাফ করে দেওয়া হল। আবু মাসউদ রা. বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হতে এ হাদীস শুনেছি।

হাদীস নং ২২৩৪

মুসাদ্দাদ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, একজন লোক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট তার (প্রাপ্য) উটের তাগাদা দিতে আসে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের বললেন : তাকে একটি উট দিয়ে দাও। তাঁরা বললেন, তার চাইতে উত্তম বয়সের উটই পাচ্ছি। লোকটি বলল, আপনি আমাকে পূর্ণ হক দিয়েছেন, আল্লাহ আপনাকে যেন পূর্ণ হক দেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাকে সেটি দিয়ে দাও। কেননা মানুষের মধ্যে সেই উত্তম, যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে।

হাদীস নং ২২৩৫

আবু নুআইম রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যিম্মায় একজন লোকের এক নির্দিষ্ট বয়সের উট ঋণ ছিল। লোকটি তাঁর নিকট সেটির তাদাগা করতে আসল। তিনি সাহাবীদের বললেন : তাকে একটি উট দিয়ে দাও। তাঁরা সে বয়সের তালাশ করলেন। কিন্তু তার চাইতে উত্তম বয়সের উট ছাড়া পাওয়া গেলনা। তিনি বললেন: সেটি তাকে দিয়ে দাও। লোকটি বলল, আপনি আমাকে পূর্ণ হক দিয়েছেন, আল্লাহ আপনাকে যেন পূর্ণ হক দেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে।

হাদীস নং ২২৩৬

খাল্লাদ ইবনে ইয়াহইয়া রহ…….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলাম। তখন তিনি মসজিদে ছিলেন। মিসআর রহ. বলেন, আমার মনে হয়, তিনি বলেছেন, তা ছিল চাশতের ওয়াক্ত। তিনি বললেন, দু’রাকআত সালাত আদায় কর। তাঁর কাছে আমার কিছু ঋণ প্রাপ্য ছিল। তিনি আমার ঋণ আদায় করলেন এবং পাওনার চাইতেও বেশী দিলেন।

হাদীস নং ২২৩৭

আবদান রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. বর্ণনা করেন যে, তাঁর পিতা উহুদের যুদ্ধে শহীদ হন এবং তাঁর উপর কিছু ঋণ ছিল। পাওনাদাররা তাদের পাওনা সম্পর্কে কড়াকড়ি শুরু করে দিল। আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সমীপে আসলাম। তিনি তাদেরকে আমার বাগানের ফল নিয়ে নিতে এবং আমার পিতার অবশিষ্ট ঋণ মাফ করে দিতে বললেন। কিন্তু তারা তা মানল না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে আমার বাগানটি দিলেন না। আর তিনি (আমাকে) বলেন, আমরা সকালে তোমার কাছে আসব। তিনি সকাল বেলায় আমাদের কাছে আসলেন এবং বাগানের চারদিকে ঘুরে বরকতের জন্য দু’আ করলেন। আমি ফল পেড়ে তাদের সমস্ত ঋণ আদায় করে দিলাম এবং আমার কাছে কিছু অতিরিক্ত খেজুর রয়ে গেল।

হাদীস নং ২২৩৮

ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, তাঁর পিতা একজন ইয়াহুদীর কাছ থেকে নেওয়া ত্রিশ ওসাক ঋণ রেখে ইন্তিকাল করেন। জাবির রা. তার নিকট (ঋণ পরিশোধেল জন্য) সময় চান। কিন্তু সে সময় দিতে অস্বীকার করে। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কথা বললেন, যেন তিনি তার জন্য ইয়াহুদীর কাছে সুপারিশ করেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন এবং ইয়াদীর সাথে কথা বললেন, ঋণের বদলে সে যেন তার খেজুর গাছের ফল নিয়ে নেয়। কিন্তু সে তা অস্বীকার করল। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাগানে প্রবেশ করে সেখানে গাছের (চারদিক) হাঁটাচলা করলেন। তারপর তিনি জাবির রা.-কে বললেন, ফল পেড়ে তার সম্পূর্ণ প্রাপ্য আদায় করে দাও। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে আসার পর তিনি ফল পাড়লেন এবং তাকে এরপর পূর্ণ ত্রিশ ওসাক (খেজুর) দিয়ে দিলেন এবং সতর ওসাক (খেজুর) অতিরিক্ত রয়ে গেল। জাবির রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বিষয়টি অবহিত করার জন্য আসলেন। তিনি তাকে আসরের সালাত আদায় করা অবস্থায় পেলেন। তিনি সালাত শেষ করলে তাকে অতিরিক্ত খেজুরের কথা অবহিত করলেন। তিনি বললেন, খবরটি ইবনে খাত্তাব রা.কে পৌঁছাও। জাবির রা. উমর রা.-এর কাছে গিয়ে খবরটি পৌঁছালেন। উমর রা. তাকে বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বাগানে প্রবেশ করে হাঁটাচলা করলেন, তখনই আমি বুঝতে পারছিলাম যে, নিশ্চয় এতে বরকত দান করা হবে।

হাদীস নং ২২৩৯

ইসমাঈল রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে এই বলে দু’আ করতেন, হে আল্লাহ ! আমি তোমার কাছে গুনাহ এবং ঋণ থেকে পানাহ চাচ্ছি। একজন প্রশ্নকারী বলল, (ইয়া রাসূলাল্লাহ) ! আপনি ঋণ থেকে এত বেশী বেশী পানাহ চান কেন? তিনি জবাব দিলেন, মানুষ ঋণগ্রস্ত হলে যখন কথা বলে মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা করলে তা খেলাফ করে।

হাদীস নং ২২৪০

আবুল ওয়ালীদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি মাল রেখে গেল, তা তার ওয়ারিসদের আর যে দায়-দায়িত্বের বোঝা রেখে গেল, তা আমার যিম্মায়।

হাদীস নং ২২৪১

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : দুনিয়া ও আখিরাতে আমি প্রত্যেক মুমিনেরই সবচেয়ে ঘনিষ্ঠতর। যদি তোমরা ইচ্ছা কর তাহলে এ আয়াতটি তিলাওয়াত করে দেখ : النبى أولى بالمؤمنين من أنفسهم নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমিনদের নিকট তাদের নিজদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর। তাই যখন কোন মুমিন মারা যায় এবং মাল রেখে যায়, তাহলে তার যে আত্মীয়-স্বজন থাকে তারা তার ওয়ারিস হবে; আর যদি সে ঋণ কিংবা অসহায় পরিজন রেখে যায়, তবে তারা যেন আমার নিকট আসে; আমিই তাদের অভিভাবক।

হাদীস নং ২২৪২

মুসাদ্দাদ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ধনী ব্যক্তির (ঋণ আদায়ে) টালবাহানা করা জুলুম।

হাদীস নং ২২৪৩

মুসাদ্দাদ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এক লোক (ঋণ পরিশোধের) তাগাদা দিতে আসল এবং কড়া কথা বলল। সাহাবীগণ তাকে শায়েস্তা করতে উদ্যত হলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। হকদারের (কড়া) কথা বলার অধিকার রয়েছে।

হাদীস নং ২২৪৪

আহমদ ইবনে ইউনুস রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কিংবা তিনি বলেছেন যে, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যখন কেউ তার মাল এমন লোকের কাছে পায়, যে নিঃসম্বল হয়ে গেছে, তবে অন্যের চাইতে সে-ই তার বেশী হকদার। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, এ সনদে উল্লেখিত রাবীগণ বিচারকের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তারা হলেন ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ, আবু বকর ইবনে মুহাম্মদ, উমর ইবনে আবদুল আযীয, আবু বকর ইবনে আবদুর রাহমান রহ. ও আবু বকর রহ. তারা সকলেই মীনায় বিচারক ছিলেন।

হাদীস নং ২২৪৫

মুসাদ্দাদ রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কেউ তার গোলামকে মরণোত্তর শর্তে আযাদ করল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কে আমার থেকে এই গোলামটি খরিদ করবে? তখন নুআইম ইবনে আবদুল্লাহ রা. সেটি ক্রয় করলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দাম গ্রহণ করে গোলামের মালিককে দিয়ে দিলেন।

হাদীস নং ২২৪৬

মূসা রহ………জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ রা. উহুদের যুদ্ধে শহীদ হন এবং পরিবার-পরিজন ও ঋণ রেখে যান। আমি পাওনাদারের নিকট কিছু ঋণ মাফ করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। কিন্তু তারা তা অস্বীকার করে। আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গিয়ে তাঁর দ্বারা তাদের কাছে সুপারিশ করাই। তবুও তারা অস্বীকার করল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : প্রত্যেক শ্রেণীর খেজুর আলাদা আলাদা করে রাখ। আযক ইবনে যায়েদ এক জায়গায়, লীন আরেক জায়গায় এবং আজওয়াহ অন্য জায়গায় রাখবে। তারপর পাওনাদারদের হাযির করবে। তখন আমি তেমার নিকট আসব। আমি তাই করলাম। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন এবং তার উপর বসলেন। আর প্রত্যেককে মেপে মেপে দিলেন। শেষ পর্যন্ত পুরাপুরি আদায় করলেন। কিছু খেজুর যেমন ছিল তেমনি রয়ে গেল, যেন কেউ স্পর্শ করেনি।আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে একবার আমাদের একটি উটে চড়ে জিহাদে গিয়েছিলাম। উটটি পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে এবং আমাকে নিয়ে পেছেনে পড়ে যায়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেছন থেকে উটটিকে চাবুক মারেন এবং বলেন, এটি আমার নিকট বিক্রি করে দাও। তবে মদীনা পর্যন্ত তুমি এর উপর সাওয়ার হতে পারবে।আমরা যখন মদীনার নিকটে আসলাম তখন আমি তাঁর কাছে জলদি বাড়ী যাওয়ার অনুমতি চাইলাম এবং বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি নব বিবাহিত। তিনি বললেন, কুমারী বিয়ে করেছে, না বিবাহিতা? আমি বললাম, বিবাহিতা। কেননা (আমার পিতা) আবদুল্লাহ রা. ছোট ছোট মেয়ে রেখে শহীদ হয়েছেন। তাই আমি বিবাহিতা বিয়ে করেছি, যাতে সে তাদের জ্ঞান ও আদব শিক্ষা দিতে পারে। তিনি বললেন, তবে তোমার পরিবারের নিকট যাও। আমি গেলাম এবং উট বিক্রির কথা আমার মামার কাছে বললাম। তিনি আমাকে তিরস্কার করলেন। আমি তার নিকট উটটি ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এটিকে আঘাত করার ও তার (মুজিযার) কথা উল্লেখ করলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় পৌঁছলে আমি উটটি নিয়ে তাঁর কাছে হাযির হলাম। তিনি আমাকে উটটির মূল্য এবং উটটিও দিয়ে দিলেন। আর লোকদের সঙ্গে আমার অংশ দিলেন।

হাদীস নং ২২৪৭

আবু নুআইম রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল, আমাকে ক্রয়-বিক্রয়ে ধোঁকা দেয়া হয়। তিনি বলেন, ক্রয়-বিক্রয়ের সময় তুমি বলবে, ধোঁকা দিবে না। এরপর লোকটি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় এই কথা বলত।

হাদীস নং ২২৪৮

উসমান রহ……….মুগীরা ইবনে শুবা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : আল্লাহ তা’আলা তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মায়ের নাফরমানী, কন্যা সন্তানদেরকে জীবন্ত কবর দেওয়া কারো প্রাপ্য না দেওয়া এবং অন্যায়ভাবে কিছু নেওয়া আর অপছন্দ করেছেন অনর্থক বাক্য ব্যয়, অতিরিক্ত প্রশ্ন করা, আর মাল বিনষ্ট করা।

হাদীস নং ২২৪৯

আবুল ইয়ামান রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক। আর প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হবে। নেতা একজন রক্ষক, সে তার অধীনস্থদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হবে। পুরুষ তার পরিবারের রক্ষক, সে তার পরিবারের লোকজন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামীর ঘরের রক্ষক, তাকে তার রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। ইবনে উমর রা. বলেন, আমি এ সকলেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি। আমার মনে হয় তিনি এ কথাও বলেছেন, ছেলে তার পিতার সম্পত্তির রক্ষক এবং সে জিজ্ঞাসিত হবে তার রক্ষণাবেক্ষণ সম্বন্ধে। অতএব, তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক এবং তোমাদের প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হবে।

কলহ-বিবাদ অধ্যায় (২২৫০-২২৬৪)

হাদীস নং ২২৫০

আবুল ওয়ালীদ রহ……….আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিকে একটি আয়াত পড়তে শুনলাম। অথচ আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে (আয়াতটি) অনুরূপ পড়তে শুনছি। আমি তার হাত ধরে তাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে এলাম। তিনি বললেন, তোমরা উভয়েই ঠিক পড়েছ। শুবা রহ. বলেন, আমার মনে হয়, তিনি বলেছিলেন, তোমরা বাদানুবাদ করো না। কেননা, তোমাদের পূর্ববর্তীরা বাদানুবাদ করে ধ্বংস হয়েছে।

হাদীস নং ২২৫১

ইয়াহইয়া ইবনে কাযআ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দু’ব্যক্তি একে অপরকে গালি দিয়েছিল। তাদের একজন ছিল মুসলিম, অন্যজন ইয়াহুদী। মুসলিম লোকটি বলল, তাঁর কসম, যিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সমস্ত জগতের মধ্যে ফযীলত প্রদান করেছেন। আর ইয়াহুদী লোকটি বলল, সে সত্তার কসম, যিনি মূসা আ.-কে সমস্ত জগতের মধ্যে ফযীলত দান করেছেন। এ সময় মুসলিম ব্যক্তি নিজের হাত উঠিয়ে ইয়াহুদীর মুখে চড় মারল। এতে ইয়াহুদী ব্যক্তিটি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে তার এবং মুসলিম ব্যক্তিটির মধ্যে যা ঘটে ছিল, তা তাকে অবহিত করল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিম ব্যক্তিটিকে ডেকে আনলেন এবং এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন। সে ঘটনা বলল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমরা আমাকে মূসা আ.-এর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিও না। কারণ কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষ বেহুঁশ হয়ে পড়বে, তাদের সাথে আমিও বেহুঁশ হয়ে পড়ব। তারপর সকলের আগে আমার হুশ আসবে, তখন (দেখতে পাবে) মূসা আ. আরশের একপাশ ধরে রয়েছেন। আমি জানি না, তিনি বেহুঁশ হয়ে আমার আগে হুশে এসেছেন অথবা আল্লাহ তা’আলা যাদেরকে বেহুঁশ হওয়া থেকে রেহাই দিয়েছেন, তিনি তাদের মধ্যে ছিলেন।

হাদীস নং ২২৫২

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ…………আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসা ছিলেন, এমন সময় এক ইয়াহুদী এসে বলল, হে আবুল কাসিম ! আপনার এক সাহাবী আমার মুখে আঘাত করেছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কে? সে বলল, একজন আনসারী। তিনি বললেন : তাকে ডাক। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন : তুমি ওকে মেরেছ ? সে বলল, আমি তাকে বাজারে শপথ করে বলতে শুনেছি : শপথ তাঁর, যিনি মূসা আ.-কে সকল মানুষের উপর ফযীলত দিয়েছেন। আমি বললাম, হে খবীস বল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপরও কি? এতে আমার রাগ এসে গিয়েছিল, তাই আমি তার মুখের উপর আঘাত করি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমরা নবীদের একজনকে অপরজনের উপর ফযীলত দিওনা। কারণ, কিয়ামতের দিন সকল মানুষ বেহুঁশ হয়ে পড়বে। তারপর যমীন ফাটবে এবং যারাই উঠবে, আমিই হব তাদের মধ্যে প্রথম। তখন দেখতে পাব মূসা আ. আরশের একটি পায়া ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি জানি না, তিনিও বেহুঁশ লোকদের মধ্যে ছিলেন, না তাঁর পুর্বেকার (তুর পাহাড়ের) বেহুঁশীই তাঁর জন্য যথেষ্ট হয়েছে।

হাদীস নং ২২৫৩

মূসা রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, এক ইয়াহুদী একটি দাসীর মাথা দুটি পাথরের মাঝখানে রেখে থেঁতলিয়ে দিয়েছিল। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, কে তোমাকে এরূপ করেছে? অমুক ব্যক্তি, অমুক ব্যক্তি? যখন জনৈক ইয়াহুদীর নাম বলা হল-তখন সে দাসী মাথার দ্বারা হ্যাঁ সূচক ইশারা করল। ইয়াহুদীকে ধরে আনা হল। সে অপরাধ স্বীকার করল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে নির্দেশ দিলেন। তখন তার মাথা দুটি পাথরের মাঝখানে রেখে থেঁতলিয়ে দেওয়া হল।

হাদীস নং ২২৫৪

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারে এক ব্যক্তিকে ধোঁকা দেওয়া হত। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যখন বেচা-কেনা কর তখন বলে দেবে যে, ধোঁকা দিবে না। এরপর সে এ কথাই বলত।

হাদীস নং ২২৫৫

আসিম রহ………জাবির রা. থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি তার গোলাম আযাদ করে দিয়েছিল। তার কাছে এ ছাড়া অন্য কিছু ছিল না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার গোলাম আযাদ করে দেয়া রদ করে দিলেন।পরে সে গোলামটি তার থেকে নুআইম নাহহাম ক্রয় করে নিলেন।

হাদীস নং ২২৫৬

মুহাম্মদ রহ………..আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কোন ব্যক্তি যদি কোন মুসলিমের অর্থ সম্পদ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা শপথ করে, তাহলে সে আল্লাহর সমীপে এমন অবস্থায় হাযির হবে যে, আল্লাহ তার উপর রাগান্বিত থাকবেন। আশআস রা. বলেন, আল্লাহর কসম ! এটা আমার সম্পর্কেই ছিল, আমার ও এক ইয়াহুদী ব্যক্তির সাথে যৌথ মালিকানায় এ খণ্ড জমি ছিল। সে আমার মালিকানার অংশ অস্বীকার করে বসল। আমি তাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে গেলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন : তোমার কোন সাক্ষী আছে কি ? আমি বললাম, না। তখন তিনি (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইয়াহুদীকে বললেন, তুমি কসম কর। আমি তখন বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সে তো কসম করবে এবং আমার সম্পত্তি নিয়ে নেবে। তখন আল্লাহ তা’আলা (এ আয়াত) নাযিল করেন : “যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করে……….আয়াতের শেষ পর্যন্ত (ত :৭৭)।

হাদীস নং ২২৫৭

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………কাব ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি মসজিদের মধ্যে ইবনে আবু হাদরাদের কাছে তার প্রাপ্য কর্জের তাগাদা করেন। তাদের আওয়াজ বুলন্দ হয়ে গিয়েছিল, এমন কি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঘর থেকে তা শুনতে পেলেন। তিনি (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হুজরার পর্দা তুলে বাইরে এলেন এবং হে কাব ! বলে ডাকলেন। কাব রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি হাযির । তিনি ইশারায় তাকে কর্জের অর্ধেক মাফ করে দিতে বললেন। কাব রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি মাফ করে দিলাম, তিনি (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইবনে আবু হাদরাদকে বললেন, উঠ, কর্জ পরিশোধ করে দাও।

হাদীস নং ২২৫৮

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………….উমর ইবনে খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হিশাম ইবনে হাকীম ইবনে হিযামকে সূরা ফুরকান আমি যেভাবে পড়ি তা থেকে ভিন্ন পড়তে শুনলাম। আর যেভাবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এ সূরা পড়িয়েছেন। আমি তাড়াতাড়ি তাকে বাঁধা দিতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু তার সালাত শেষ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। এরপর তার গলায় চাদর পেঁচিয়ে তাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে এলাম এবং বললাম, আপনি আমাকে যা পড়তে শিখিয়েছেন, আমি তাকে তা থেকে ভিন্ন পড়তে শুনেছি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ছেড়ে দিতে আমাকে বললেন। তারপর তাকে পড়তে বললেন, সে পড়ল। তিনি (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এরূপই নাযিল হয়েছে। কুরআন সাত হরফে নাযিল হয়েছে। তাই যেরূপ সহজ হয় তোমরা সেরূপেই তা পড়।

হাদীস নং ২২৫৯

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমি ইচ্ছা করেছিলাম যে, সালাত আদায় করার আদেশ করব। সালাত দাঁড়িয়ে গেলে পরে যে সম্প্রদায় সালাতে উপস্থিত হয় না, আমি তাদের বাড়ি গিয়ে তা জ্বালিয়ে দেই।

হাদীস নং ২২৬০

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, আবদ ইবনে যামআ ও সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা. যামআর দাসীর পুত্র সংক্রান্ত বিবাদ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পেশ করলেন। সাদ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার ভাই আমাকে ওসীয়াত করে গেছেন যে, আমি (মক্কায়) পৌঁছলে যেন যামআর দাসীর পুত্রের প্রতি লক্ষ্য রাখি। দেখতে পেলে যেন তাকে হস্তগত করে নেই। কেননা সে তার পুত্র । আবদ ইবনে যামআ রা. বললেন, সে আমার ভাই এবং আমার পিতার দাসীর পুত্র। আমার পিতার ঔরসে তার জন্ম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উতবার সাথে তার চেহারা-সুরতের স্পষ্ট মিল দেখতে পেলেন, তখন তিনি (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন : তুমিই তার হকদার। হে আবদ ইবনে যামআ ! সন্তান যার ঔরসে জন্মগ্রহণ করে তারই হয়। হে সাওদা, তুমি তার থেকে পর্দা কর।

হাদীস নং ২২৬১

কুতাইবা রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজদের দিকে এক অশ্বারোহী সেনাদল পাঠালেন। তারা ইয়ামামাবাসীদের সরদার বনূ হানীফা গোত্রের সুমামা ইবনে উসাল নামের একজন লোককে গ্রেফতার করে এনে মসজিদের একটি খুটির সাথে বেঁধে রাখলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, সুমামা তোমার কি খবর ? সে বলল, হে মুহাম্মদ ! আমার কাছে ভাল খবর আছে। সে (বর্ণনাকারী) সম্পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: সুমামাকে ছেড়ে দাও।

হাদীস নং ২২৬২

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজদে একদল অশ্বারোহী সেনাদল পাঠালেন। তারা বনূ হানীফা গোত্রের সুমামা ইবনে উসাল নামের একজন লোককে গ্রেফতার করে এনে মসজিদের একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখলেন।

হাদীস নং ২২৬৩

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………কাব ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ ইবনে আবু হাদরাদ আসলামী রা.-এর কাছে তাঁর কিছু পাওনা ছিল। তিনি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করলেন এবং পিছনে লেগে থাকলেন। তাঁরা উভয় কথা বলতে লাগলেন, এমনকি এক পর্যায়ে তাদের উভয়ের আওয়াজ উচু হল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে গেলেন এবং বললেন, হে কাব, উভয় হাত দিয়ে তিনি ইশারা করলেন, যেন অর্ধেক (গ্রহণ করার কথা) বুঝিয়েছিলেন। তাই তিনি (কাব) তার ঋণের অর্ধেক গ্রহণ করলেন এবং অর্ধেক ছেড়ে দিলেন।

হাদীস নং ২২৬৪

ইসহাক রহ………খাব্বাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহেলী যুগে আমি ছিলাম একজন কর্মকার। আস ইবনে ওয়ায়লের কাছে আমার কিছু দিরহাম পাওনা ছিল। আমি তাঁর কাছে তাগাদা করতে গেলাম। সে আমাকে বলল, যতক্ষণ না তুমি মুহাম্মদকে অস্বীকার করছ ততক্ষণ আমি তোমার পাওনা পরিশোধ করব না। আমি বললাম, তা হতে পারে না, আল্লাহর কসম, যে পর্যন্ত না আল্লাহ তোমার মৃত্যু ঘটায় এবং তোমার পুনরুত্থান না হয় সে পর্যন্ত আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অস্বীকার করব না। সে বলল, ঠিক আছে, যতক্ষণ না আমার মৃত্যু হয় এবং পুনরুত্থান না হয় আমাকে অব্যহতি দাও। তখন আমাকে মাল ও সন্তান দেয়া হবে এরপর তোমার পাওনা পরিশোধ করে দেব। এ প্রসঙ্গে এ আয়াত নাযিল হয় : তুমি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছ, যে আমার আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে, আমাকে অবশ্যই ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দেওয়া হবে (১৯ : ৭৭)।

পড়ে থাকা বস্তু উঠান (কুড়ানো বস্তু) অধ্যায় (২২৬৫-২২৭৭)

 

হাদীস নং ২২৬৫

আদম ও মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………উবাই ইবনে কাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একটি থলে পেয়েছিলাম, যার মধ্যে একশ দীনার ছিল এবং আমি (এটা নিয়ে) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলাম। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এক বছর পর্যন্ত ঘোষণা দাও। আমি তাই করলাম। কিন্তু এটি সনাক্ত করার মত লোক পেলাম না। তখন আবার তাঁর কাছে এলাম। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আরো এক বছর ঘোষণা দাও। আমি তাই করলাম। কিন্তু কাউকে পেলাম না। আমি তৃতীয়বার তাঁর কাছে এলাম। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : থলে ও এর প্রাপ্ত বস্তুর সংখ্যা এবং এর বাঁধন স্মরণ রাখ। যদি এর মালিক আসে (তাকে দিয়ে দিবে) নতুবা তুমি তা ভোগ করবে। তারপর আমি তা ভোগ করলাম। (শুবা রহ. বলেছেন) আমি এরপর মক্কায় সালামা রা.-এর সঙ্গে দেখা করলাম, তিনি বললেন, তিন বছর কিংবা এক বছর তা আমার মনে নেই।

হাদীস নং ২২৬৬

আমর ইবনে আব্বাস রহ……….যায়েদ ইবনে খালিদ জুহানী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক বেদুঈন এসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পড়ে থাকা বস্তু গ্রহণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এক বছর যাবত এর ঘোষণা দিতে থাক। এরপর থলে ও তার বাঁধন স্মরণ রাখ। এর মধ্যে যদি কোন ব্যক্তি আসে এবং তোমাকে তার বিবরণ দেয় (তবে তাকে দিয়ে দিবে) নতুবা তুমি তা ব্যবহার করবে। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! হারানো বস্তু যদি বকরী হয় ? তিনি (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন : সেটা তোমার অথবা তোমার ভাইয়ের অথবা নেকড়ের জন্য। সে আবার বলল, হারানো বস্তু উট হলে ? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চেহারায় রাগের ভাব ফুটে উঠল। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এতে তোমার কি প্রয়োজন ? তার সাথেই (জুতার ন্যায়) ক্ষুর ও পানির পাত্র রয়েছে, সে পানি পান করবে এবং গাছের পাতা খাবে।

হাদীস নং ২২৬৭

ইসমাঈল ইবনে আবদুল্লাহ রহ……..যায়েদ ইবনে খালিদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, পড়ে থাকা বস্তু সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করা হলে রাবীর বিশ্বাস যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : থলেটি এবং তার বাঁধন চিনে রাখ। এরপর এক বছর যাবত ঘোষণা দিতে থাক। ইয়াযীদ রহ. বলেন, যদি এর সনাক্তকারী না পাওয়া যায়, তবে যে এটা উঠিয়ে সে খরচ করবে। কিন্তু সেটা তার কাছে আমানত স্বরূপ থাকবে। ইয়াহইয়া রহ. বলেন, আমার জনা নেই যে, এ কথাটা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসের অন্তর্ভূক্ত ছিল, না তিনি নিজ থেকে বলেছেন। এরপর সে জিজ্ঞাসা করল, হারিয়ে যাওয়া বকরী সম্পর্কে আপনি কি বলেন ? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এটা নিয়ে নাও। তা তোমার অথবা তোমার ভাইয়ের অথবা নেকড়ে বাঘের। ইয়াযীদ রহ. বলেন এটাও ঘোষণা দেওয়া হবে। তারপর আবার সে জিজ্ঞাসা করল, হারিয়ে যাওয়া উট সম্পর্কে আপনি কি বলেন ? বর্ণনাকারী বলেন, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এটা ছেড়ে দাও। এর সাথেই রয়েছে তার ক্ষুর ও তার পানির পাত্র। সে নিজেই পানি পান করবে এবং গাছ পালা খাবে, যতক্ষণ এর মালিক একে ফিরে পায়।

হাদীস নং ২২৬৮

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….যায়েদ ইবনে খালিদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে পড়ে থাকা জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল, তিনি বললেন : থলেটি এবং এর বাঁধন চিনে রাখ। এরপর এক বছর যাবত ঘোষণা দিতে থাক। যদি মালিক আসে (তবে তাকে তা দিয়ে দাও) আর যদি না আসে তা তোমার দায়িত্ব। সে পুনরায় জিজ্ঞাসা করল, যদি বকরী হারিয়ে যায়? তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তা তোমার অথবা তোমার ভাইয়ের অথবা নেকড়ে বাঘের। ইয়াযীদ রহ. বলেন এটাও ঘোষণা দেওয়া হবে। তারপর আবার সে জিজ্ঞাসা করল, হারিয়ে যাওয়া উট সম্পর্কে। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এতে তোমার কি ? এর সাথেই রয়েছে তার ক্ষুর ও তার পানির পাত্র। মালিক তাকে না পর্যন্ত পানি পান করবে এবং গাছ পালা খাবে।

হাদীস নং ২২৬৯

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাস্তায় পড়ে থাকা খেজুরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি বললেন : আমার যদি আশংকা না হত যে এটি সাদকার খেজুর তাহলে আমি এটা খেতাম।

হাদীস নং ২২৭০

মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমি আমার ঘরে ফিরে যাই, আমার বিছানায় খেজুর পড়ে থাকতে দেখি। খাওয়ার জন্য আমি তা তুলে নেই। পরে আমার ভয় হয় যে, হয়ত তা সাদকার খেজুর হবে তাই আমি তা রেখে দেই।

হাদীস নং ২২৭১

ইয়াহইয়া ইবনে মূসা রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা যখন তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মক্কা বিজয় দান করলেন, তখন তিনি লোকদের সামনে দাঁড়িয়ে আল্লাহর হামদ ও সানা বর্ণনা করলেন। এরপর বললেন : আল্লাহ তা’আলা মক্কায় (আবরাহার) হস্তি বাহিনীকে প্রবেশ করতে দেননি। এবং তিনি তাঁর রাসূল ও মুমিন বান্দাদেরকে মক্কার উপর আধিপত্য দান করেছেন। আমার আগে অন্য কারোর জন্য মক্কায় যুদ্ধ করা বৈধ ছিল না, তবে আমার পক্ষে দিনের সামান্য সময়ের জন্য বৈধ করা হয়েছিল, আর তা আমার পরেও কারোর জন্য বৈধ হবে না। কাজেই এখানকার শিকার তাড়ানো যাবে না, এখানকার গাছ কাটা ও উপড়ানা যাবে না, ঘোষণাকারী ব্যক্তি ব্যতীত এখানকার পড়ে থাকা জিনিস তুলে নেওয়া যাবে না। যার কোন লোক এখানে নিহত হয় তবে দুটির মধ্যে তার কাছে যা ভাল বলে বিবেচিত হয়, তা গ্রহণ করবে। ফিদইয়া গ্রহণ অথবা কিসাস। আব্বাস রা. বলেন, ইযখিরের অনুমতি দিন। কেননা আমরা এগুলো আমাদের কবরের উপর এবং ঘরের কাজে ব্যবহার করে থাকি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : ইযখির ব্যতীত (অর্থাৎ তা কাটা ও ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হল। তখন ইয়ামানবাসী আবু শাহ রা. দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমাকে লিখে দিন। তিনি বললেন : তোমরা আবু শাহকে লিখে দাও। (ওয়ালিদ ইবনে মুসলিম বলেন) আমি আওযায়ীকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমাকে লিখে দিন-তাঁর এ উক্তির অর্থ কি ? তিনি বলেন, এ ভাষণ যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে তিনি শুনেছেন, তা লিখে দিন।

হাদীস নং ২২৭২

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : অনুমতি ব্যতীত কারো পশু কেউ দোহন করবে না। তোমাদের কেউ কি এটা পছন্দ করবে যে, তার তোশাখানায় কোন এক লোক এসে ভাণ্ডার ভেঙ্গে ফেলে এবং ভাণ্ডারের শস্য নিয়ে যায় ? তাদের পশুগুলো স্তন তাদের খাদ্য সংরক্ষিত রাখে। কাজেই কারোর পশু তার অনুমতি ব্যতীত কেউ দোহন করবে না।

হাদীস নং ২২৭৩

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………যায়েদ ইবনে খালিদ রা. থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি কুড়ানো বস্তু সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করল। তিনি বললেন : এক বছর যাবত এর ঘোষণা দিতে থাক। এরপর পাত্র ও তার বাঁধন স্মরণ রাখ এবং সেটা খরচ কর। যদি তার মালিক এসে যায়, তবে তাকে দিয়ে দাও। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! হারানো বস্তু যদি বকরী হয় তাহলে কি করতে হবে ? তিনি (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন : তা তুমি নিয়ে নাও। কেননা, সেটা তোমার অথবা তোমার ভাইয়ের অথবা নেকড়ে বাঘের। সে আবার বলল, হারানো বস্তু উট হলে কি করতে হবে ? এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হলেন এমনকি তাঁর উভয় গাল লাল হয়ে গেল অথবা রাবী বলেন, তাঁর মুখমণ্ডল লাল হয়ে গেল। তিনি বললেন : এতে তোমার কি ? তার সাথেই (জুতার ন্যায়) ক্ষুর ও মশক রয়েছে, শেষ পর্যন্ত মালিক তার সন্ধান পেয়ে যাবে।

হাদীস নং ২২৭৪

সুলাইমান ইবনে হারব রহ……….সুওয়াইদ ইবনে গাফালা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সুলাইমান ইবনে রবীআ এবং যায়েদ ইবনে সুহানের সঙ্গে আমি এক যুদ্ধে শরীক ছিলাম। আমি একটি চাবু পেলাম। তার উভয়ে আমাকে এটা ফেলে দিতে বললেন। আমি বললাম, না , এর মালিক এলে এটা আমি তাকে দিয়ে দিব। নতুবা আমিই এটা ব্যবহার করব। আমরা ফিরে গিয়ে হজ্জ করলাম; এরপর যখন মদীনায় গেলাম তখন উবাই ইবনে কাব রা.-কে (এ বিষয়ে) জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে আমি একটি থলে পেয়েছিলাম, এর মধ্যে একশ দীনার ছিল। আমি এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে গেলাম। তিনি বললেন : এক বছর পর্যন্ত তুমি এটার ঘোষণা দিতে থাক। কাজেই আমি এক বছর পর্যন্ত এর ঘোষণা দিলাম। এরপর আমি তাঁর কাছে এলাম। তিনি আরো এক বছর ঘোষণা দিতে বললেন। আমি আরো এক বছর ঘোষণা দিলাম। এরপর আমি আবার তাঁর কাছে এলাম। তিনি আবার এক বছর ঘোষণা দিতে বললেন। আমি আরো এক বছর ঘোষণা দিলাম। এরপর আমি চতুর্থবার তাঁর কাছে আসলাম। তিনি বললেন: থলের ভিতরের দীনারের সংখ্যা, বাঁধন এবং থলেটি চিনে রাখ। যদি মালিক ফিরে আসে তাকে দিয়ে দাও। নতুবা তুমি নিজে তা ব্যবহার কর।

হাদীস নং ২২৭৫

আবদান রহ……….সালামা রা. থেকে হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেন যে, সুওয়াইদ ইবনে গাফালা রহ. বলেন যে, আমি উবাই ইবনে কাব রা.-এর সঙ্গে মক্কায় সাক্ষাত করলাম। তখন তিনি (এ হাদীস সম্পর্কে) বললেন, আমার স্মরণ নেই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন বছর যাবত না এক বছর যাবত ঘোষণা দিতে বলেছেন।

হাদীস নং ২২৭৬

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ…………যায়েদ ইবনে খালিদ রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জনৈক বেদুঈন এসে পড়ে থাকা বস্তু গ্রহণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এক বছর যাবত এর ঘোষণা দিতে এর মধ্যে যদি কোন ব্যক্তি আসে এবং তোমাকে তার থলে ও বাঁধন সম্পর্কে বিবরণ দেয় (তবে তাকে দিয়ে দিবে) নতুবা তুমি তা ব্যবহার করবে। এরপর সে হারিয়ে যাওয়া উট সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। এতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চেহারার রং পরিবর্তন হয়ে গেল। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এতে তোমার কি প্রয়োজন ? তার সাথেই (জুতার ন্যায়) ক্ষুর ও মশক রয়েছে, সে নিজেই পানির কাছে যায় এবং গাছের পাতা খায়। তারপর সে হারিয়ে যাওয়া বকরী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তিনি (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন : সেটা তোমার অথবা তোমার ভাইয়ের অথবা নেকড়ের জন্য।

হাদীস নং ২২৭৭

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম ও আবদুল্লাহ ইবনে রাজা রহ…………আবু বকর রা.থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আম (হিজরত করে মদীনার দিকে) যাচ্ছিলাম। তখন বকরীর এক রাখালের সাথে দেখা হল। সে তার বকরীগুলো হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল । আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কার রাখাল। সে কুরাইশ গোত্রর এক ব্যক্তির নাম বলল। আমি সে ব্যক্তিকে চিনতাম।আমি তাকে বললাম তোমার বকরীর দুধ আছে কি ? সে বলল, হ্যাঁ, আছে। তখন আমি তাকে বললাম, তুমি আমাকে দুধ দোহন করে দিবে কি ? সে বলল, হ্যা দিব। তখন আমি তাকে দুধ দোহন করতে বললাম। বকরীর পাল থেকে সে একটি বকরী ধরে নিয়ে এল। আমি তাকে এর ওলান ধুলাবালি থেকে পরিষ্কার করে নিতে এবং তার হাতও পরিষ্কার করে নিতে বললাম। সে তদ্রূপ করল। এক হাত দিয়ে অপর হাত ঝেড়ে সে এক পেয়ালা দুধ দোহন করল। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য একটি পাত্র রেখেছিলাম। যার মুখে কাপড়ের টুকরা রাখা ছিল। তা থেকে আমি দুধের উপর (পানি) ঢেলে দিলাম। এতে দুধ নীচ পর্যন্ত ঠাণ্ডা হয়ে গেল। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এই দুধ নিয়ে গেলাম এবং বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি পান করুন। তিনি তা পান করলেন। এতে আমি আনন্দিত হলাম।

 

জুলুম ও কিসাস অধ্যায় (২২৭৮-২৩২০)

হাদীস নং ২২৭৮

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম রহ………আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুমিনগণ যখন জাহান্নাম থেকে নাজাত পাবে তখন জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে এক পুলের উপর তাদের আটকে রাখা হবে।তখন পৃথিবীতে একের প্রতি অন্যের যা যা জুলুম ও অন্যায় ছিল, তার প্রতিশোধ গ্রহণের পরে যখন তারা পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে, তখন তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। সেই সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যেকে পৃথিবীতে তার আবাসস্থল যেরূপ চিনত, তার চাইতে অধিক তার জান্নাতের আবাসস্থল চিনতে পারবে।

হাদীস নং ২২৭৯

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………..সাফওয়ান ইবনে মুহরিয আল-মাযিনী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমি ইবনে উমর রা.-এর সাথে তাঁর হাত ধরে চলছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর মুমিন বান্দার একান্তে কথাবার্তা সম্পর্কে আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কি বলতে শুনেছেন ? তখন তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা’আলা মুমিন ব্যক্তিকে নিজের কাছে নিয়ে আসবেন এবং তার উপর স্বীয় আবরণ দ্বারা তাকে ঢেকে নিবেন। তারপর বললেন, অমুক পাপের কথা কি তুমি জান? তখন সে বলবে, হ্যাঁ, হে আমার প্রতিপালক ! এভাবে তিনি তার কাছ থেকে তার পাপগুলো স্বীকার করিয়ে নিবেন। আর সে মনে করবে যে, তার ধ্বংস অনিবার্য। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আমি পৃথিবীতে তোমার পাপ গোপন করে রেখেছিলাম। আর আজ আমি তা মাফ করে দিব। তারপর তার নেকের আমলনামা তাকে দেওয়া হবে। কিন্তু কাফির ও মুনাফিকদের সম্পর্কে সাক্ষীরা বলবে, এরাই তাদের প্রতিপালক সম্পর্কে মিথ্যা বলেছিল। সাবধান, জালিমদের উপর আল্লাহর লা’নত।

হাদীস নং ২২৮০

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার উপর জুলুম করবে না এবং তাকে জালিমের হাতে সোপর্দ করবে না। যে কেউ তার ভাইয়ের অভাব পূরণ করবে আল্লাহ তার অভাব পূরণ করবেন । যে ব্যাক্তি (পৃথিবীতে) কোন মুসলমানের বিপদ দূর করবে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ গোপন করবে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন করবেন।

হাদীস নং ২২৮১

উসমান ইবনে আবু শায়বা রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের ভাইকে সাহায্য কর, সে জালিম হোক বা মাজলুম। (অর্থাৎ জালিম ভাইকে জুলুম থেকে বিরত রাখবে এবং মাজলুম ভাইকে জালিমের হাত থেকে রক্ষা করবে)।

হাদীস নং ২২৮২

মুসাদ্দাদ রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমার ভাইকে সাহায্য কর, সে জালিম হোক বা মাজলুম। তিনি (আনাস) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! মাজলুমকে সাহায্য করব, তা তো বুঝলাম। কিন্তু জালিমকে কি করে সাহায্য করব? তিনি বললেন : তুমি তার হাত ধরে তাকে বিরত রাখবে। (অর্থাৎ তাকে জুলুম করতে দিবে না)।

হাদীস নং ২২৮৩

সাঈদ ইবনে রাবী রহ………বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাতটি বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন এবং সাতটি বিষয়ে নিষেধ করেছেন। তারপর তিনি উল্লেখ করলেন, পীড়িতের খোঁজখবর নেওয়া, জানাযার অনুসরণ করা, হাঁচির জাবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা, সালামের জওয়াব দেওয়া, মাজলুমকে সাহায্য করা, আহবানকারীর প্রতি সাড়া দেওয়া, কসমকারীকে দায়িত্ব মুক্ত করা।

হাদীস নং ২২৮৪

মুহাম্মদ ইবনে আলা রহ……….আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : এক মুমিন আর এক মুমিনের জন্য ইমারত তুল্য যার এক অংশ আর এক অংশকে সুদৃঢ় করে। আর তিনি তাঁর এক হাতের আঙ্গুল আর এক হাতের আঙ্গুলে প্রবেশ করিয়ে দেখালেন।

হাদীস নং ২২৮৫

আহমদ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : জুলুম কিয়ামতের দিন অনেক অন্ধকারের রূপ ধারণ করবে।

হাদীস নং ২২৮৬

ইয়াহইয়া ইবনে মূসা রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মুআয রা.-কে ইয়ামানে পাঠান এবং তাকে বলেন, মাজলুমের ফরিয়াদকে ভয় করবে। কেননা তার ফরিয়াদ এবং আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা থাকে না।

হাদীস নং ২২৮৭

আদম ইবনে ইয়াস রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রম হানী বা অন্য কোন বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ থেকে মাফ করায়ে নেয়, সে দিন আসার পূর্বে যে দিন তার কোন দীনার বা দিরহাম থাকবে না। সে দিন তার কোন সৎকর্ম থাকলে তার জুলুমের পরিমাণ তা তার নিকট থেকে নেওয়া হবে আর তার কোন সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ থেকে নিয়ে তা তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, ইসমাঈল ইবনে উয়াইস রহ. বলেছেন, সাঈদ আল-মাকবুরী রহ. কবরস্থানের পার্শ্বে অবস্থান করতেন বলে তাকে আল-মাকবুরী বলা হত। আবু আবদুল্লাহ রহ. এও বলেছেন, সাঈদ আল-মাকবুরী হলেন, বনূ লাইসের আযাদকৃত গোলাম। ইনি হলেন সাঈদ ইবনে আবু সাঈদ। আর আবু সাঈদের নাম হল কায়সান।

হাদীস নং ২২৮৮

মুহাম্মদ রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, কোন স্ত্রী যদি স্বামীর দুর্ব্যবহার ও উপেক্ষার আশংকা করে (৪ : ১২৮) আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে তিনি (আয়িশা) বলেন, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর কাছে বেশী যাওয়া-আসা করত না বরং তাকে আলাদা অর্থাৎ তালাক দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করত। এ অবস্থায় স্ত্রী বলল, আমি তোমাকে আমার ব্যাপারে দায়মুক্ত করে দিলাম। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে এই আয়াতটি নাযিল হয়।

হাদীস নং ২২৮৯

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………সাহল ইবনে সাদ সাঈদী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কিছু পানীয় দ্রব্য আনা হল। তিনি তার কিছুটা পান করলেন। তাঁর ডান দিকে বসা ছিল একটি বালক আর বাম দিকে ছিলেন বয়োজ্যেষ্ঠরা। তিনি বালকটিকে বললেন, এ বয়োজ্যেষ্ঠদের কে দেওয়ার জন্য আমাকে অনুমতি দিবে কি ? তখন বালকটি বলল, না ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আল্লাহর কসম, আমি আপনার কাছ থেকে প্রাপ্য আমার অংশে কাউকে অগ্রাধিকার দিব না। রাবী বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানির পেয়ালাটা তার হাতে ঠেলে দিলেন।

হাদীস নং ২২৯০

আবুল ইয়ামান রহ………সাঈদ ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কারো জমির অংশ জুলুম করে কেড়ে নেয়, কিয়ামতের দিন এর সাত তবক জমিন তার গলায় লটকিয়ে দেওয়া হবে।

হাদীস নং ২২৯১

আবু মামার রহ……….আবু সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন যে, তাঁর এবং কয়েকজন লোকের মধ্যে একটি বিবাদ ছিল। আয়িশা রা.-এর কাছে উল্লেখ করা হলে তিনি বললেন, হে আবু সালামা ! জমির ব্যাপারে সতর্ক থাক। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি এক বিঘত জমি অন্যায়ভাবে নিয়ে নেয়, (কিয়ামতের দিন) এর সাত তবক জমি তার গলায় লটকিয়ে দেওয়া হবে।

হাদীস নং ২২৯২

মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ………..সালিম রা.-এর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে সামান্য পরিমাণ জমিও নিয়ে নিবে, কিয়ামতের দিন তাকে সাত তবক জমিনের নীচ পর্যন্ত ধসিয়ে দেওয়া হবে। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. কর্তৃক খুরাসানে রচিত হাদীসগ্রন্থে এ হাদীসটি নেই। এ হাদীসটি বসরায় লোকজনকে শুনানো হয়েছে।

হাদীস নং ২২৯৩

হাফস ইবনে উমর রহ……..জাবালা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা মদীনায় কিছু সংখ্যক ইরাক লোকের সঙ্গে ছিলাম। একবার আমরা দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত হই, তখন ইবনে যুবাইর রা. আমাদেরকে খেজুর খেতে দিতেন। ইবনে উমররা. আমাদের কাছ দিয়ে যেতেন এবং বলতেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে তার ভাইয়ের অনুমতি ছাড়া এক সাথে দুটো করে খেজুর খেতে নিষেধ করেছেন।

হাদীস নং ২২৯৪

আবু নুমান রহ………আবু মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত যে, আবু শুয়াইব রা. নামক এক আনাসারী গোশত বিক্রেতা একজন গোলাম ছিল। একদিন আবু শুয়াইব রা. তাকে বললেন , আমার জন্য পাঁচ জন্য লোকের খাবার তৈরী কর। আমি আশা করছি যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দাওয়াত করব। আর তিনি হলেন পাঁচ জনের একজন । উক্ত আনসারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারায় ক্ষুধার চাপ লক্ষ্য করেছিলেন। কাজেই তিনি তাকে দাওয়াত করলেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে আরেকজন লোক আসলেন, যাকে দাওয়াত করা হয়নি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আনাসারীকে) বললেন : এ আমাদের পিছে পিছে চলে এসেছে। তুমি কি তাকে অনুমতি দিচ্ছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ।

হাদীস নং ২২৯৫

আবু আসিম রহ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহর নিকট সেই লোক সবচেয়ে বেশী ঘৃণীত, যে অতি ঝগড়াটে।

হাদীস নং ২২৯৬

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ………. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী উম্মু সালামা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, একদিন তিনি তাঁর ঘরের দরজার নিকটে ঝগড়ার শব্দ শুনতে পেয়ে তাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন।(তাঁর কাছে বিচার চাওয়া হল) তিনি বললেন : আমি তো একজন মানুষ। আমার কাছে (কোন কোন সময়) ঝগড়াকারীরা আসে। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অন্যের চাইতে অধিক বাকপটু। তখন আমি মনে করি যে, সে সত্য বলেছে। তাই আমি তার পক্ষে রায় দেই। বিচারে যদি আমি ভুলবশত অন্য কোন মুসলমানের হক তাকে দিয়ে থাকি, তবে তা দোযখের টুকরা। এখন সে তা গ্রহণ করুক বা ত্যাগ করুক।

হাদীস নং ২২৯৭

বিশর ইবনে খালিদ রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকে, সে মুনাফিক অথবা যার মধ্যে, এ চারটি স্বভাবের কোন একটা থাকে, তার মধ্যেও মুনাফিকীর একটি স্বভাব থাকে, যে পর্যন্ত সে তা পরিত্যাগ করে। ১. সে যখন কথা বলে মিথ্যা বলে ২. যখন ওয়াদা করে ভঙ্গ করে ৩. যখন চুক্তি করে তা লংঘন করে ৪. যখন ঝগড়া করে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে।

হাদীস নং ২২৯৮

আবুল ইয়ামান রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন উতবা ইবনে রবীআর কন্যা হিন্দা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! (আমার স্বামী) আবু সুফিয়ান কৃপণ লোক। তার সম্পদ থেকে যদি আমার সন্তানদের খেতে দেই, তাহলে আমার কোন গুনাহ হবে কি ? তখন তিনি বললেন : যদি তুমি তাদেরকে ন্যায়সংগতভাবে খেতে দাও তাহলে কোন তোমার গুনাহ হবে না।

হাদীস নং ২২৯৯

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….উকবা ইবনে আমির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, আপনি যখন আমাদের কোন অভিযানে পাঠান, আর আমরা এমন কওমের কাছে অবতরণ করি, যারা আমাদের মেহমানদারী করে না। এ ব্যাপারে আপনি কি বলেন ? তিনি আমাদের বললেন, যদি তোমরা কোন কওমের কাছে অবতরণ কর এবং তোমাদের জন্য যদি উপযুক্ত মেহমানদারীর আয়োজন করা হয়, তবে তোমরা তা গ্রহণ করবে, আর যদি তা না করে তবে তাদের কাছ থেকে মেহমানের হক আদায় করে নিবে।

হাদীস নং ২৩০০

ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান রহ……….উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা যখন তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর সান্নিধ্যে উঠিয়ে নিলেন, তখন আনসারগণ বনূ সাঈদা গোত্রের ছায়া ছাউনীতে গিয়ে সমবেত হলেন। আমি আবু বকর রা. -কে বললাম, আমাদের সঙ্গে চলুন। এরপর আমরা তাদের নিকট সাকীফাহ বনূ সাঈদাতে গিয়ে পৌঁছলাম।

হাদীস নং ২৩০১

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কোন প্রতিবেশী যেন তার প্রতিবেশীকে তার দেয়ালে খুটি পুঁততে নিষেধ না করে। তারপর আবু হুরায়রা রা. বলেন, কি হল, আমি তোমাদেরকে এ হাদীস থেকে উদাসীন দেখতে পাচ্ছি। আল্লাহর কসম, আমি সব সময় তোমাদেরকে এ হাদীস বলতে থাকব।

হাদীস নং ২৩০২

মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রাহীম আবু ইয়াইয়া রহ……আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমি আবু তালহার বাড়িতে লোকজনকে শরাব পান করাচ্ছিলাম। সে সময় লোকেরা ফাযীখ শরাব ব্যবহার করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে আদেশ করলেন, যেন সে মর্মে ঘোষণা দেয় যে, সাবধান ! শরাব এখন থেকে হারাম করে দেওয়া হয়েছে। আবু তালহা রা. আমাকে বললেন, বাইরে যাও এবং সমস্ত শরাব ঢেলে দাও। আমি বাইরে গেলাম এবং সমস্ত শরাব রাস্তায় ঢেলে দিলাম। আনাস রা. বলেন, সেদিন মদীনার অলিগলিতে শরাবের প্লাবন বয়ে গিয়েছিল। তখন কেউ কেউ বলল, একদল লোক নিহত হয়েছে, অথচ তাদের পেটে শরাব ছিল। তখন এ আয়াত নাযিল হল: যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারা পূর্বে যা কিছু পানাহার করেছে তার জন্য তাদের কোন গুনাহ হবে না (৫:৯৩)।

হাদীস নং ২৩০৩

মুআয ইবনে ফাযালা রহ………..আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তোমরা রাস্তার উপর বসা ছেড়ে দাও। লোকজন বলল, এ ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই। কেননা, এটাই আমাদের উঠাবসার জায়গা এবং এখানেই আমরা কথাবার্তা বলে থাকি। তিনি বললেন : যদি তোমাদের সেখানে বসতেই হয়, তবে রাস্তার হক আদায় করবে। তারা বলল, রাস্তার হক কি ? তিনি বললেন : দৃষ্টি অবনমিত রাখা, কষ্ট দেওয়া হতে বিরত থাকা, সালামের জওয়াব দেওয়া, সৎকাজের আদেশ দেওয়া এবং অসৎকাজে নিষেধ করা।

হাদীস নং ২৩০৪

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : একদিন এক ব্যক্তি রাস্তায় চলার পথে অত্যন্ত তৃষ্ণার্ত হল। তারপর একটি কূপ দেখতে পেয়ে তাতে সে নেমে পড়ল এবং পানি পান করল। উপরে উঠে এসে সে দেখতে পেল, একটা কুকুর হাঁপাচ্ছে আর পিপাসার দরুন ভিজে মাটি চেটে খাচ্ছে। লোকটি (মনে মনে) বলল, এ কুকুরটির তেমনি পিপাসা পেয়েছে, যেমনি আমার পিপাসা পেয়েছিল। তারপর সে কূপের মধ্যে নামল এবং নিজের মোজা পানি ভর্তি করে এনে কুকুরটিকে পান করাল। আল্লাহ তার এ কাজ কবুল করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন। সাহাবীগণ বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ !পশুদের ব্যাপারেও কি আমাদের জন্য সাওয়াব রয়েছে? তিনি বললেন : প্রাণী মাত্রের সেবার মধ্যেই সাওয়াব রয়েছে।

হাদীস নং ২৩০৫

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ…….উসামা ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার এক টিলার উপর উঠে বললেন : আমি যা দেখছি তোমরা কি তা দেখতে পাচ্ছ ? যে তোমাদের ঘরগুলোতে বৃষ্টি বর্ষণের মত ফিতনা বর্ষিত হচ্ছে।

হাদীস নং ২৩০৬

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণীদের মধ্যে ঐ দু’ সহধর্মিণী সম্পর্কে উমর রা. কে কাছে জিজ্ঞাসা করতে সব সময় আগ্রহী ছিলাম, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : যদি তোমরা দু’জনে তাওবা কর (তাহলে সেটাই হবে কল্যাণকর)। কেননা তোমাদের অন্তর বাঁকা হয়ে গেছে। একবার আমি তাঁর (উমর রা.-এর) সঙ্গে হজ্জে রওয়ানা করলাম। তিনি রাস্তা থেকে সরে গেলেন। আমিও একটি পানির পাত্র নিয়ে তাঁর সঙ্গে গতি পরিবর্তন করলাম। তিনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে ফিরে এলেন। আমি পানির পাত্র থেকে তাঁর দু’হাতে পানি ঢাললাম, তিনি উযূ করলেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আমীরুল মুমিনীন ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণীদের মধ্যে দু’সহধর্মিণী কারা ছিলেন, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : যদি তোমরা দু’জনে তাওবা কর (তাহলে সেটাই হবে কল্যাণকর)। কেননা তোমাদের অন্তর বাঁকা হয়ে গেছে। তিনি বললেন, হে ইবনে আব্বাস ! এটা তোমার জন্য তাজ্জাবের বিষয় যে, তুমি তা জান না। তারা দু’জন হলেন আয়িশা ও হাফসা রা. (অতঃপর উমর রা. পুরো ঘটনা বলতে শুরু করলেন। তিনি বললেন, আমি ও আমার এক আনসারী প্রতিবেশী মদীনার অদূরে বনূ উমাইয়া ইবনে যায়েদের মহল্লায় বসবাস করতাম। আমরা দু’জন পালাক্রমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হাযির হতাম। একদিন তিনি যেতেন, আরেক দিন আমি যেতাম, আমি যেদিন যেতাম সেদিনের খবর (ওয়াহী) ইত্যাদি বিষয় তাকে অবহিত করতাম। আর তিনি যেদিন যেতেন, তিনিও অনুরূপ করতেন। আর আমরা কুরাইশ গোত্রের লোকেরা মহিলাদের উপর কর্তৃত্ব করতাম। কিন্তু আমরা যখন মদীনায় আনসারদের কাছে আসলাম তখন তাদেরকে এমন পেলাম, যাদের নারীরা তাদের উপর কর্তৃত্ব করে থাকে। ধীরে ধীরে আমাদের মহিলারাও আনসারী মহিলাদের রীতিনীতি গ্রহণ করতে লাগল। একদিন আমি আমার স্ত্রীকে ধমক দিলাম। সে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিউত্তর তুমি অসন্তুষ্ট হও কেন ? আল্লাহর কসম ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণীরাও তো তাঁর কথার প্রতিউত্তর করে থাকেন এবং তাঁল কোন কোন সহধর্মিণী রাত পর্যন্ত পুরো দিন তাঁর কাছ থেকে আলাদা থাকেন। এ কথা শুনে আমি ঘাবড়ে গেলাম। বললাম, যিনি এরূপ করেছেন তিনি অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারপর আমি জামা-কাপড় পরে (আমার মেয়ে) হাফসা রা.-এর কাছে গিয়ে বললাম, হে হাফসা, তোমাদের কেউ কেউ নাকি রাত পর্যন্ত পুরো দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অসন্তুষ্টে রাখে। সে বলল, হ্যাঁ। আমি বললাম, তবে তো সে বরবাদ এবং ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তোমার কি ভয় হয় না যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসন্তষ্ট হলে আল্লাহও অসন্তুষ্ট হবেন। এর ফলে তুমি বরবাদ হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বাড়াবাড়ি করো না এবং তাঁর কোন কথার প্রতিউত্তর দিওনা এবং তাঁর থেকে পৃথক থেকো না। তোমার কোন কিছুর দরকার হয়ে থাকলে আমাকে বলবে। আর তোমার প্রতিবেশী তোমার চাইতে অধিক সুন্দরী এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অধিক প্রিয় এ যেন তোমাকে ধোঁকায় না ফেলে। তিনি উদ্দেশ্য করেছেন আয়িশা রা.-কে। সে সময় আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছিলো যে, গাসসানের লোকেরা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ঘোড়াগুলিকে প্রস্তুত করছে। একদিন আমার সাথী তার পালার দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গেলেন এবং ঈশার সময় এসে আমার দরজায় খুব করাঘাত করলেন এবং বললেন, তিনি (উমর রা.) কি ঘুমিয়েছেন ? তখন আমি ঘাবড়িয়ে তাঁর কাছে বেরিয়ে এলাম। তিনি বললেন, সাংঘাতিক ঘটনা ঘটে গেছে। আমি বললাম, সেটা কি ? গাসসানের লোকেরা কি এসে গেছে? তিনি বললেন, না, বরং তার চাইতেও বড় ঘটনা ঘটতে পারে। আমি কাপড় পরে বেরিয়ে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ফজরের সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষে তিনি তাঁর কোঠায় প্রবেশ করে একাকী বসে থাকলেন। তখন আমি হাফসা রা.-এর কাছে গিয়ে দেখি সে কাঁদছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কাঁদছ কেন ? সে বলল, আমি জানি না। তিনি তাঁর ঐ কোঠায় আছেন। আমি বের হয়ে মিম্বরের কাছে আসলাম, দেখি যে লোকজন মিম্বরের চারপাশ জুড়ে বসে আছেন এবং কেউ কেউ কাঁদছেন। আমি তাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ বসলাম। তারপর আমার উদ্যেগ প্রবল হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কোঠায় ছিলেন, আমি সে কোঠার কাছে আসলাম। আমি তাঁর এক কালো গোলামকে বললাম, উমরের জন্য অনুমতি গ্রহণ কর। সে প্রবেশ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আলাপ করে বেরিয়েএসে বলল, আমি আনার কথা তাঁর কাছে উল্লেখ করেছি , কিন্তু তিনি নীরব রইলেন। আমি ফিরে এলাম এবং মিম্বরের পাশে বসা লোকদের কাছে গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ পর আমর আবার উদ্বেগ প্রবল হল। তাই আমি আবার এসে গোলামকে বললাম। সে এসে আগের মতই বলল। আম আবার মিম্বরের কাছে উপবিষ্ট লোকরেদ সাথে গিয়ে বসলাম। তারপর আমার উদ্বেগ আবার প্রবল হল আমি গোলামের কাছে এসে বললাম, (উমরের জন্য অনুমতি গ্রহণ কর) এবারও সে আগের মত বলল। তারপর যখন আমি ফিরে আসছিলাম, গোলাম আমাকে ডেকে বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে অনুমতি দিয়েছেন। এখন আমি তাঁর নিকট প্রবেশ করে দেখি, খেজুরের পাতায় তৈরী ছোবড়া ভর্তি একটা চামড়ার বালিশে হেলান দিয়ে খালি চাটাই এর উপর কাত হয়ে শুয়ে আছেন। তাঁর শরীর ও চাটাই এর মাঝখানে কোন ফরাশ ছিল না। ফলে তাঁর শরীরের পার্শ্বে চাটাইয়ের দাগ পড়ে গিয়েছে। আমি তাকে সালাম করলাম এবং দাঁড়িয়েই আবার আরয করলাম আপনি কি আপনার সহধর্মিণীদেরকে তালাক দিয়েছেন ? তখন তিনি আমার দিকে চোখ তুলে তাকালেন এবং বললেন, না। তারপর আমি (থমথমে ভাব কাটিয়ে) অনুকূলভাব সৃষ্টির জন্য দাঁড়িয়ে থেকেই বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! দেখুন, আমরা কুরাইশ গোত্রের নারীদের উপর কর্তৃত্ব করতাম। তারপর যখন আমরা এমন একটি সম্প্রদায়ের নিকট এলাম, যাদের উপর তাদের নারীরা কর্তৃত্ব করছে। তিনি এ ব্যাপারে আলোচনা করলেন। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাঁসলেন। তারপর আমি বললাম, আপনি হয়ত লক্ষ্য করছেন যে, আমি হাফসার ঘরে গিয়েছে এবং তাকে বলেছি, তোমাকে এ কথা যেন ধোঁকায় না ফেলে যে, তোমার প্রতিবেশীণী (সতীন) তোমার চাইতে অধিক আকর্ষণীয় এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অধিক প্রিয়। এ কথা দ্বারা তিনি আয়িশা রা.-কে বুঝিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার মুচকি হাঁসলেন। তাকে একা দেখে আমি বসে পড়লাম। তারপর আমি তাঁর ঘরের ভিতর এদিক সেদিক দৃষ্টি করলাম। কিন্তু তাঁর ঘরে তিনটি কাঁচা চামড়া ব্যতীত দৃষ্টিপাত করার মত আর কিছুই দেখতে পেলাম না, তখন আমি আরয করলাম, আল্লাহ তা’আলার কাছে দু’আ করুন, তিনি যেন আপনার উম্মতকে পার্থিব স্বচ্ছলতা দান করেন। কেননা, পারস্য ও রোমের অধিবাসীদেরকে স্বচ্ছলতা দান করা হয়েছে এবং তাদেরকে পার্থিব (অনেক প্রাচুর্য) দেওয়া হয়েছে, অথচ তারা আল্লাহর ইবাদত করে না। তিনি তখন হেলান দিয়ে ছিলেন। তিনি বললেন :হে ইবনে খাত্তাব ! তোমার কি এতে সন্দেহ রয়েছে যে, তারা তো এমন এক জাতি, যাদেরকে তাদের ভাল কাজের প্রতিদান দুনিয়ার জীবনেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার জন্য ক্ষমার দু’আ করুন। হাফসা রা. আয়িশা রা.-এর কাছে এ কথা প্রকাশ করলেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিণীদের থেকে আলাদা হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আল্লাহর কসম ! আমি এক মাস তাদের কাছে যাব না। তাদের উপর ­ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভীষণ রাগের কারণে তা হয়েছিল। যেহেতু আল্লাহ তা’আলা তার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। যখন ঊনত্রিশ দিন কেটে গেল, তিনি সর্বপ্রথম আয়িশা রা.-এর কাছে এলেন। আয়িশা রা. তাকে বললেন, আপনি কসম করেছেন যে, এক মাসের মধ্যে আমাদের কাছে আসবেন না। আর এ পর্যন্ত আমরা ঊনত্রিশ রাত অতিবাহিত করেছি, যা আমি ঠিক ঠিক গণনা করে রেখেছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়। আর মূলত: এ মাসটি ঊনত্রিশ দিনেরই ছিল। আয়িশা রা. বলেন, যখন ইখতিয়ারের আয়াত নাযিল হল, তখন তিনি তাঁর সহধর্মিণীদের মধ্যে সর্বপ্রথম আমার কাছে আসলেন এবং বললেন : আমি তোমাকে একটি কথা বলতে চাই, তবে তোমার পিতা-মাতার সঙ্গে পরামর্শ না করে এর জওয়াবে তুমি তাড়াহুড়া করবে না। আয়িশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা জানতেন যে, আমার পিতা-মাতা তাঁর থেকে আলাদা হওয়ার পরামর্শ আমাকে কখনো দিবেন না। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন: হে নবী ! আপনি আপানার সহধর্মিণীদের বলুন।………মহা প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন।(৩৩:২৮,২৯) আমি বললাম, এ ব্যাপারে আমি আমার পিতা-মাতার কাছে কি পরামর্শ নিব? আমি তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি এবং পরকালীন (সাফল্য) পেতে চাই। তারপর তিনি তাঁর অন্য সহধর্মিণীদেরকেও ইখতিয়ার দিলেন এবং প্রত্যেক সে একই জবাব দিলেন, যা আয়িশা রা. দিয়েছিলেন।

হাদীস নং ২৩০৭

ইবনে সালাম রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মাস তাঁর সহধর্মিণীদের কাছে যাবেন না বলে কসম করেন। এ সময় তাঁর পা মচকে গিয়েছিল। তাই তিনি একটি চিলেকোঠায় অবস্থান করেন। একদিন উমর রা. এসে বললেন, আপনি কি আপনার সহধর্মিণীদের তালাক দিয়েছেন ? তিনি বললেন : না তবে আমি একমাস তাদের কাছে যাব না; বলে কসম করেছি। তিন ঊনত্রিশ দিন সেখানে অবস্থান করেন এরপর তিনি অবতরণ করলেন এবং নিজের সহধর্মিণীদের কাছে আসেন।

হাদীস নং ২৩০৮

মুসলিম রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করলেন। আমি উটটাকে মসজিদের আঙিনার পাশে বেঁধে রেখে তাঁর কাছে গেলাম এবং বললাম, এটা আপনার উট। তিনি বেরিয়ে এলেন এবং উটের পাশে ঘুরাফেরা করতে লাগলেন। তারপর বললেন, উট ও তার মূল্য দুটোই তোমার ।

হাদীস নং ২৩০৯

সুলাইমান ইবনে হারব রহ………হুযায়ফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি। (রাবী বলেন) অথবা তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন লোকদের ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্থানে এরপর তিনি দাঁড়িয়ে পেশাব করলেন (বিশেষ কারণে)।

হাদীস নং ২৩১০

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে চলার সময় কাঁটাদার গাছের একটি ডাল রাস্তায় পেল, তখন সেটাকে রাস্তা থেকে অপসারণ করল, আল্লাহ তার এ কাজকে কবুল করলেন এবং তাকে মাফ করে দিলেন।

হাদীস নং ২৩১১

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন মালিকেরা রাস্তার ব্যাপারে পরস্পরে বিবাদ করল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাস্তার জন্য সাত হাত জমি ছেড়ে দেওয়ার ফয়সালা দেন।

হাদীস নং ২৩১২

আদম ইবনে আবু ইয়াস রহ………আদী ইবনে সাবিত রা. -এর নানা ইবনে ইয়াযীদ আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লুটতারাজ করতে এবং জীবকে বিকলাঙ্গ করতে নিষেধ করেছেন।

হাদীস নং ২৩১৩

সাঈদ ইবনে উফায়র রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কোন ব্যভিচারী মুমিন অবস্থায় ব্যভিচার করে না এবং কোন মদ্যপায়ী মুমিন অবস্থায় মদ পান করে না। কোন চোর মুমিন অবস্থায় চুরি করে না। কোন লুটতরাজকারী মুমিন অবস্থায় এরূপ লুটতরাজ করে না যে, যখন সে লুটতরাজ করে তখন তার প্রতি লোকজন চোখ তুলে তাকিয়ে থাকে। সাঈদ ও আবু সালামা রা. আবু হুরায়রা রা. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত, তবে তাঁতে লুটতরাজের উল্লেখ নেই। ফিরাবরী রহ. বলেন, আমি আবু জাফর রহ. -এর লেখা পাণ্ডুলিপিতে পেয়েছি যে, আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, এর অর্থ হল, তার থেকে ঈমানের নূর ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

হাদীস নং ২৩১৪

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………আবু হুরায়রা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন : ইবনে মারয়াম (ঈসা আ.) তোমাদের মাঝে ন্যায়বিচারক হয়ে অবতরণ না করা পর্যন্ত কিয়ামত হবে না। তিনি এসে ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন এবং জিযয়া কর তুলে দিবেন। তখন ধন-সম্পদের এত প্রাচুর্য হবে যে, তা গ্রহণ করার মত কেউ থাকবে না।

হাদীস নং ২৩১৫

আবু আসিম যাহহাক ইবনে মাখলাদ রহ…….সালামা ইবনে আকওয়া রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার যুদ্ধে আগুন প্রজ্বলিত দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, এ আগুন কেন জ্বালানো হচ্ছে ? সাহাবীগণ বললেন, গৃহপালিত গাধার গোশত রান্না করার জন্য। তিনি বললেন : পাত্রটি ভেঙ্গে দাও এবং গোশত ফেলে দাও। তাঁরা বললেন, আমরা গোশত ফেলে দিয়ে পাত্রটা ধুয়ে নিব কি ? তিনি বললেন : ধুয়ে নাও। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, ইবনে আবু উয়াইস বললেন যে, الإنسية শব্দটি আলিফ ও নুনে যবর হবে।

হাদীস নং ২৩১৬

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত ,তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (বিজয়ের বেশে) মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন কা’বা শরীফের চারপাশে তিনশত ষাটটি মূর্তি ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের হাতের লাঠি দিয়ে মূর্তিগুলোকে আঘাত করতে থাকেন আর বলতে থাকেন : সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে, (আয়াতের শেষ পর্যন্ত(১৭ : ৮১)।

হাদীস নং ২৩১৭

ইবরহামী ইবনে মুনযির রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি তার (কামরার) তাকের সম্মুখে একটি পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন, যাতে ছিল প্রাণীর ছবি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা ছিড়ে ফেললেন। এরপর আয়িশা রা. তা দিয়ে দু’খানা গদি তৈরী করেন। এই গদি দু’খানা ঘরেই ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উপর বসতেন।

হাদীস নং ২৩১৮

আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত ,তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শদীদ।

হাদীস নং ২৩১৯

মুসাদ্দাদ রহ……..আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোন এক সহধর্মিণীর কাছে ছিলেন। উম্মুল মুমিনীনদের অপর একজন খাদিমের মারফত এক পাত্র খাবার পাঠালেন। তিনি তার হাতের আঘাতে পাত্রটি ভেঙ্গে ফেলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা জোড়া লাগিয়ে তাঁতে খাবার রাখলেন এবং (সাথীদেরকে) বললেন, তোমরা খাও। যে পর্যন্ত তাঁরা খাওয়া শেষ না করলেন, সে পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাত্রটি ও প্রেরিত খাদেমকে আটকিয়ে রাখলেন। তারপর তিনি ভাঙ্গা পাত্রটি রেখে দিয়ে একটি ভাল পাত্র ফেরত দিলেন। ইবনে আবু মারয়াম রহ……..আনাস রা. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে।

হাদীস নং ২৩২০

মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন বনী ইসরাঈলের মধ্যে জুরাইজ নামক একজন লোক ছিলেন। একদিন তিনি সালাত আদায় করছিলেন। এমন সময় তাঁর মা তাকে ডাকলেন। কিন্তু তিনি তাঁর ডাকে সাড়া দিলেন না। তিনি বললেন : সালাত আদায় করব, না কি তার জবাব দেব। তারপর মা তাঁর কাছে এলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ ! তাকে মৃত্যু দিও না যে পর্যন্ত তুমি তাকে কোন বেশ্যার মুখ না দেখাও। একদিন জুরাইজ তার ইবাদত খানায় ছিলেন। এমন সময় এক মহিলা বললেন, আমি জুরাইজকে ফাঁসিয়ে ছাড়ব। তখন সে তার নিকট গেল এবং তার সাথে কথাবার্তা বলল। কিন্তু তিনি অস্বীকৃতি জানালেন। তারপর সে মহিলা এক রাখালের কাছে এসে স্বেচ্ছায় নিজেকে তার হাতে সপে দিল। তার কিছুদিন পর সে একটি ছেলে প্রসব করল। তখন সে বলে বেড়াতে লাগল যে, এ ছেলে জুরাইজের । এ কথা শুনে লোকেরা জুরাইজের নিকট এল এবং তার ইবাদতখানা ভেঙ্গে তাকে বের করে দিল এবং তাকে গালিগালাজ করল। এরপর তিনি উযূ করলেন এবং সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি ছেলেটির কাছে এসে বললেন, হে ছেলে, তোমার পিতা কে? সে জবাব দিল, রাখাল। তখন লোকেরা বলল, আমরা তোমার ইবাদতখানাটি সোনা দিয়ে তৈরী করে দিব। জুরাইজ বললেন, না মাটি দিয়েই তৈরী করে দাও (যেমনটা পূর্বে ছিল)।

অংশীদারিত্ব অধ্যায় (২৩২১-২৩৪২)

হাদীস নং ২৩২১

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমুদ্র তীর অভিমুখে বাহিনী প্রেরণ করেন এবং আবু উবায়দা ইবনে জাররাহ রা.-কে তাদের সেনাপতি নিয়োগ করলেন। এ বাহিনীতে তিনশত লোক ছিলেন। আমি তাদের মধ্যে ছিলাম। আমরা রওয়ানা হলাম। কিন্তু মাঝখানেই আমাদের পাথেয় শেষ হয়ে গেল। তখন আবু উবায়দা রা. দলের সকলকে নিজ নিজ খাদ্যদ্রব্য এক জায়গায় জমা করার নির্দেশ দিলেন। তাই সমস্ত খাদ্য দ্রব্য জমা করা হল। এতে মোট দুথলে খেজুর জমা করা হল। আবু উবায়দা রা. প্রতিদিন আমাদের এই খেজুর থেকে কিছু কিছু করে খেতে দিতেন। অবশেষে তাও শেষ হওয়ার উপক্রম হল এবং জন প্রতি একটা করে খেজুর ভাগে পড়তে লাগল। (রাবী বলেন) আমি (জাবির রা.-কে) বললাম, একটি খেজুর কি যথেষ্ট হত। তিনি বললেন, তার মূল্য তখন বুঝতে পারলাম, যখন তাও শেষ হয়ে গেল । তিনি বলেন, এরপর আমরা সমুদ্র পর্যন্ত পৌছে গেলাম। হঠাৎ ছোট পাহাড়ের ন্যায় একটা মাছ আমরা পেয়ে গেলাম। এবং এ বাহিনী আঠারো দিন পর্যন্ত এই মাছ থেকে খেল। তারপর আবু উবায়দা রা.-এর আদেশে সে মাছের পাঁজর থেকে দুটো কাঁটা দাঁড় করানো হল। তারপর তিনি হাওদা লাগাতে বললেন। হাওদা লাগানো হল। এরপর উট আর তার পাঁজরের নীচ দিয়ে চলে গেল কিন্তু উটের দেহ সে দুটো কাঁটা স্পর্শ করল না।

হাদীস নং ২৩২২

বিশর ইবনে মারহুম রহ……..সালামা ইবনে আকওয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক সফরে লোকদের পাথেয় কমে গিয়েছিল এবং তারা অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। তখন তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তাদের উট যবেহ করার অনুমতি দেয়ার জন্য এলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের অনুমতি দিলেন। তারপর তাদের সঙ্গে উমর রা.-এর সাক্ষাত হলে তারা তাকে এ খবর দিলেন। তিনি বললেন, উট শেস হয়ে যাবার পর তোমাদের বাঁচার কি উপায় থাকবে? তারপর উমর রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললে, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! উট শেষ হয়ে যাবার পর তাদের বাঁচার কি উপায় হবে? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : লোকদের কাছে ঘোষণা করে দাও যে, যাদের কাছে অতিরিক্ত যে খাদ্য সামগ্রী আছে, তা যেন আমার কাছে নিয়ে আসে। এর জন্য একটা চামড়া বিছিয়ে দেওয়া হল। তার সেই চামড়ার উপর তা রাখলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে তাঁতে বরকতের জন্য দু’আ করলেন। এরপর তিনি তাদেরকে তাদের পাত্রগুলো নিয়ে আসতে বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর রাসূল।

হাদীস নং ২৩২৩

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ……..রাফি ইবনে খাদীজ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আসরের সালাত আদায় করে উট যবেহ করতাম। তারপর সে গোশত দশ ভাগে ভাগ করা হত এবং সূর্যাস্তের পূর্বেই আমরা রান্না করা গোশত খেয়ে নিতাম।

হাদীস নং ২৩২৪

মুহাম্মদ ইবনে আলা রহ……..আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আশআরী গোত্রের লোকেরা যখন জিহাদে গিয়ে অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়ে বা মদীনাতেই তাদের পরিবার পরিজনদের খাবার কম হয়ে যায়, তখন তারা তাদের যা কিছু সম্বল থাকে, তা একটা কাপড়ে জমা করে। তারপর একটা পাত্র দিয়ে মেপে তা নিজেদের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে নেয়। কাজেই তারা আমার এবং আমি তাদের।

হাদীস নং ২৩২৫

মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মুসান্না রহ……….আনাস রা. থেকে রা. বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাতের বিধান হিসাবে যা নির্দিষ্ট করেছিলেন, আবু বকর রা. তা আমাকে লিখে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, যেখানে দু’জন অংশীদার থেকে (যাকাত প্রদানের পর) তারা দু’জনে নিজ নিজ অংশ আদান-প্রদান করে নেবে।

হাদীস নং ২৩২৬

আলী ইবনে হাকাম আনসারী রহ……..রাফি ইবনে খাদীজ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে যুল-হুলাইফাতে ছিলাম। সাহাবীগণ ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েন, তারা কিছু উট ও বকরী পেলেন। রাফি রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দলের পিছনে ছিলেন। তারা তাড়াহুড়া করে গনীমতের মাল বন্টনের পূর্বে সেগুলোকে যবেহ করে পাত্রে চড়িয়ে দিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশে পাত্র উল্টিয়ে ফেলা হল। তারপর তিনি (গনীমতের মাল) বন্টন শুরু করলেন। তিনি একটি উটের সমান দশটি বকরী নির্ধারণ করেন। হঠাৎ একটি উট পালিয়ে গেল। সাহাবীগণ উটকে ধরার জন্য ছুটলেন, কিন্তু উটটি তাদেরকে ক্লান্ত করে ছাড়ল। সে সময় তাদের নিকট অল্প সংখ্যক ঘোড়া ছিল। অবশেষে তাদের মধ্যে একজন সেটির প্রতি তীর ছুড়লেন। তখন আল্লাহ উটটাকে থামিয়ে দিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : নিশ্চয়ই পলায়নপর বন্য জন্তুদের মত এ সকল চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে কতক পলায়নপর হয়ে থাকে। কাজেই যদি এসব জন্তুর কোনটা তোমাদের উপর প্রবল হয়ে উঠে তবে তার সাথে এরূপ করবে। (রাবী বলেন) তখন আমার দাদা (রাফি রা.) বললেন, আমরা আশংকা করছিলাম যে, কাল শত্রুর সাথে মুকাবিলা হবে। আমর আমাদের নিকট কোন ছুরি ছিল না। তাই আমরা ধারালো বাঁশ দিয়ে যবেহ করতে পারব কি ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : যে বস্তু প্রবাহিত করে এবং যার উপর আল্লাহর নাম নেওয়া হয়, সেটা তোমরা আহার করতে পার। কিন্তু দাঁত বা নখ দিয়ে যেন যবেহ না করা হয়। আমি তোমাদেরকে এর কারণ বলে দিচ্ছি। দাঁত তো হাড় আর নখ হল হাবশীদের ছুরি।

হাদীস নং ২৩২৭

খাল্লাদ ইবনে ইয়াহইয়া রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এক সাথে খেতে বসে) সঙ্গে দুটো করে করে খেজুর খেতে নিষেধ করেছেন।

হাদীস নং ২৩২৮

আবুল ওয়ালিদ রহ……….জাবালা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা মদীনায় ছিলাম। একবার আমরা দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হলাম। তখন ইবনে যুবাইর রা. আমাদেরকে (প্রত্যহ) খেজুর খেতে দিতেন। একদিন ইবনে উমর রা. আমাদের কাছে দিয়ে যাচ্ছিলেন। (আমাদের খেজুর খেতে দেখে) তিনি বললেন, তোমরা এক সাথে দুটো করে খেজুর খেওনা। কেননা , নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে তার ভাইয়ের অনুমতি ব্যতীত দুটো খেজুর খেতে নিষেধ করেছেন।

হাদীস নং ২৩২৯

ইমরান ইবনে মায়সারা রহ………উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : (শরীকী) গোলাম থেকে কেউ নিজের অংশ আযাদ করে দিলে এবং তার কাছে গোলামের ন্যায্য মূল্য পরিমাণ অর্থ থাকলে সে গোলাম (সম্পূর্ণ) আযাদ হয়ে যাবে (তবে আযাদকারী ন্যায্যমূল্য শরীকদের ক্ষতিপূরণ দিবে) আর সে পরিমাণ অর্থ না থাকলে যতটুকু সে আযাদ করবে ততটুকুই আযাদ হবে। (রাবী আইয়ূব রা.) বলেন, عتق منه ما عتق বাক্যটি নাফি রহ.-এর নিজস্ব উক্তি, না নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীসের অংশ, তা আমি বলতে পারি না।

হাদীস নং ২৩৩০

বিশর ইবনে মুহাম্মদ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কেউ (শরীক) গোলাম থেকে নিজের অংশ আযাদ করে দিলে তার দায়িত্ব হয়ে পড়ে নিজস্ব অর্থে সেই গোলামকে পূর্ণ আযাদ করা। যদি তার প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকে, তাহলে গোলামের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। তারপর (অন্য শরীকদের অংশ পরিশোধের জন্য) তাকে উপার্জনে যেতে হবে, তবে তার উপর অতিরিক্ত কষ্ট চাপানো যাবে না।

হাদীস নং ২৩৩১

আবু নুআঈম রহ……….নুমান ইবনে বাশীর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে মহান আল্লাহর নির্ধারিত সীমার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং যে সীমা লংঘন করে, তাদের দৃষ্টান্ত সেই যাত্রীদলের মত, যারা কুরআর মাধ্যেমে এক নৌযানে নিজেদের স্থান নির্ধারণ করে নিল। তাদের কেউ স্থান পেল উপর তলায় আর কেউ নীচ তলায় (পানির ব্যবস্থা ছিল উপর তলা) কাজেই নীচের তলার লোকেরা পানি সংগ্রহ কালে উপর তলায় লোকদের ডিঙ্গিয়ে যেত। তখন নীচ তলার লোকেরা বলল, উপর তলার লোকদের কষ্ট না দিয়ে আমরা যদি নিজেদের অংশে একটি ছিদ্র করে নেই (তবে ভাল হত) এমতাবস্থায় তারা যদি এদেরকে আপন মর্জির উপর ছেড়ে দেয় তাহলে সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে। আর যদি তারা এদের হাত ধরে রাখে। (বিরত রাখ) তবে তারা এবং সকলেই রক্ষা পাবে।

হাদীস নং ২৩৩২

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ আমিরী ওয়াইসী ও লাইস রহ……..উরওয়া ইবনে যুবাইর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি একবার আয়িশা রা.-কে আল্লাহর তা’আলার বাণী : আর যদি তোমরা আশংকা কর যে, ইয়াতীম বালিকাদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না তাহলে অন্য মহিলাদের মধ্য থেকে তোমাদের পছন্দ মত দু’জন বা তিনজন কিংবা চারজনকে বিয়ে করতে পারবে (৪ : ৩) এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আয়িশা রা. বললেন, আমার ভাগিনা ! এ হচ্ছে সেই ইয়াতীম মেয়ের কথা, যে অভিভাবকের আশ্রয়ে থাকে এবং তার সম্পদে অংশীদার হয়। এদিকে মেয়ের ধন-রূপে মুগ্ধ হয়ে তার অভিভাবক মহরানার ব্যাপারে সুবিচার না করে অর্থাৎ অন্য কেউ যে পরিমাণ মহরানা দিতে রাযী হত, তা না দিয়েই তাকে বিয়ে করতে চাইত। তাই প্রাপ্য মহরানা আদায়ের মাধ্যমে সুবিচার না করা পর্যন্ত তাদরেকে আশ্রিতা ইয়াতীম বালিকাদের বিয়ে করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং পছন্দমত অন্য মহিলাদেরকে বিয়ে করতে বলা হয়েছে। উরওয়া রা. বলেন, আয়িশা রা. বলেছেন, পরে সাহাবীগণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট (মহিলাদের সম্পর্কে) ফাতওয়া জিজ্ঞাসা করলেন তখন আল্লাহ তা’আলা আয়াত নাযিল করেন। তারা আপনার নিকট মহিলাদের সম্পর্কে ফাতওয়া জিজ্ঞাসা করে, আপনি বলুন, আল্লাহই তাদের সম্পর্কে তোমাদের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আর ইয়াতীম মেয়েদের সম্পর্কে কিতাব থেকে তোমাদেরকে পাঠ করে শোনান হয় যে, তাদের জন্য যা বিধিবদ্ধ রয়েছে, তা তোমরা তাদের দাও না অথচ তাদের তোমরা বিয়ে করতে চাও। (৪: ১২৭) يتلى عليكم في الكتاب বলে আল্লাহ পূর্বোক্ত আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে- আর যদি তোমরা আশংকা কর যে, ইয়াতীম বালিকাদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না তাহলে অন্য মহিলাদের মধ্য থেকে তোমাদের পছন্দ মত দু’জন বা তিনজন কিংবা চারজনকে বিয়ে করতে পারবে। আয়িশা রা. বলেন, আর অপর আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ এর মর্ম হল ধন ও রূপের স্বল্পতা হেতু তোমাদের আশ্রিতা ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি তোমাদের অনাগ্রহ। তাই ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি অনাগ্রহ সত্ত্বেও শুধু ধন-রূপের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাদের বিয়ে করতে নিষেধ করা হয়েছে। অবশ্য ন্যায়সংগত মহরানা আদায় করে বিয়ে করতে পারে।

হাদীস নং ২৩৩৩

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে সব (স্থাবর) সম্পত্তি এখনো বণ্টিত হয়নি, সেগুলোর ক্ষেত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুফআ আর (তথা ক্রয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার) বিধান দিয়েছেন। এরপর সীমানা নির্ধারণ করা হলে এবং পথ আলাদা করে নেওয়া হলে শুফআর অধিকার থাকেনা।

হাদীস নং ২৩৩৪

মুসাদ্দাদ রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব ধরনের অবণ্টিত স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে শুফআর ফায়সাল দিয়েছেন। এরপর সীমানা নির্ধারণ করে পথ আলাদা করে নেওয়া হলে শুফআর অধিকার থাকে না ।

হাদীস নং ২৩৩৫

আমর ইবনে আলী রহ……..সুলাইমান ইবনে আবু মুসলিম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবুল মিনহাল রহ.-কে মুদ্রার নগদ বিনিময় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আমি এবং আমরা এক অংশীদার একবার কিছু মুদ্র নগদ ও বাকীতে বিনিময় করেছিলাম। এরপর বারা ইবনে আযিব রা. আমাদের কাছে এলে আমরা তাকে (সে সম্পর্কে) জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আমি এবং আমার অংশীদার যায়েদ ইবনে আরকাম রা. এরূপ করেছিলাম।পরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করায় তিনি বললেন, নগদে যা বিনিময় করেছ, তা বহাল রাখ, আর বাকীতে যা বিনিময় করেছ, তা প্রত্যাহার কর।

হাদীস নং ২৩৩৬

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারে জমি এ শর্তে ইয়াহুদীদের দিয়েছেলেন যে, তারা নিজেদের শ্রমে তাঁতে চাষাবাদ করবে, তার বিনিময়ে উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক তাদের হবে।

হাদীস নং ২৩৩৭

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………উকবা ইবনে আমির রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর কিছু বকরী সাহাবীদের মাঝে বন্টনের জন্য তাকে (দায়িত্ব) দিয়ে ছিলেন। বন্টন শেষে এক বছর বয়সী একটা ছাগল ছানা রয়ে গেল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- কে সে কথা জানালে তিনি ইরশাদ করলেন : ওটা তুমিই কুরবানী কর।

হাদীস নং ২৩৩৮

আসবাগ ইবনে ফারজ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে হিশাম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। তার মা যায়নাব বিনতে হুমাইদ রা. একবার তাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে গেলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! একে বায়আত করে নিন। তিনি বললেন : সে তো ছোট। তখন তিনি তার মাথায় হাত বুলালেন এবং তার জন্য দু’আ করলেন। (একই সনদে) যুহরা ইবনে মাবাদ রহ. থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, তার দাদা আবদুল্লাহ ইবনে হিশাম রা. তাকে নিয়ে বাজারে যেতেন, খাদ্য সমাগ্রী করিদ করতেন। পথে ইবনে উমর রা. ও ইবনে যুবাইরের সাথে দেখা হলে তারা তাকে বলতেন (আপনার সাথে ব্যবসায়) আমাদেরও শরীক করে নিন। কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার জন্য বরকতের দু’আ করেছেন। এ কথায় তিনি তাদের শরীক করে নিতেন। অনেক সময় (লভ্যাংশ হিসাবে) এক উট বোঝাই মাল তিনি ভাগে পেতেন আর তা বাড়িতে পাঠিয়ে দিতেন।

হাদীস নং ২৩৩৯

মুসাদ্দাদ রহ………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : (শরীকী) গোলাম থেকে কেউ নিজের অংশ আযাদ করে দিলে সেই গোলামের সম্পূর্ণটা আযাদ করা তার জন্য ওয়াজিব হবে যাবে। যদি তারা কাছে সেই গোলামের মূল্য পরিমাণ সম্পদ থাকে, তাহলে ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করে অংশীদারদের তাদের প্রাপ্য অংশ পরিশোধ করা হবে এবং আযাদকৃত গোলামের পথ ছেড়ে দেওয়া হবে।

হাদীস নং ২৩৪০

আবু নুমান রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কেউ (শরীকী) গোলাম থেকে একটা অংশ আযাদ করে দিলে গোলামটাই আযাদ হয়ে যাবে। যদি তার কাছে (প্রয়োজনীয়) অর্থ থাকে (তাহলে সেখান থেকে অন্য অংশীদারদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে) অন্যথায় অতিরিক্ত কষ্ট না চাপিয়ে তাকে উপার্জন করতে বলা হবে।

হাদীস নং ২৩৪১

আবু নুমান রহ……….জাবির ও ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণ ৪ঠা যিলহজ্জ ভোরে শুধু হজ্জের ইহরাম বেধে মক্কায় এসে পৌঁছলেন। কিন্তু আমরা মক্কায় এসে পৌঁছলে তিনি আমাদেরকে হজ্জের ইহরামকে উমরার ইহরামে পরিণত করার আদেশ দিলেন। তখন আমরা হজ্জকে উমরায় পরিণত করলাম। তিনি আমাদেরকে স্ত্রীদের সাথে সহবাসেরও অনুমতি দিলেন। এ বিষয়ে কেউ কথা ছড়ালো (অধস্তন রাবী) আতা রহ. বলেন, জাবির রা. বলেছেন, আমাদের মধ্যে কেউ কেউ স্ত্রীর সাথে সংগম করে মিনায় যাবে। এ কথা বলে জাবির রা. নিজের হাত লজ্জাস্থানের দিকে ইঙ্গিত করে দেখালেন। এ খবর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কানে পৌঁছলে তিনি দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। আমি শুনতে পেয়েছি যে, লোকেরা এটা সেটা বলছে। আল্লাহর কসম ! আমি তাদের চেয়ে অধিক পরহেযগার এবং অধিক আল্লাহ ভীরু। পরে যা জেনেছি তা আগে ভাগে জানতে পারলে হাদী সাথে নিয়ে আসতাম না। আর সাথে হাদীস না থাকলে আমি ও ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যেতাম। তখন সুরাকা ইবনে মালিক ইবনে জুসুম রা. দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এ হুকুম শুধু আমাদের জন্য, না এটা সর্বকালের জন্য। (রাবী আতা রহ.) বলেন, পরে আলী ইবনে আবু তালেব রা. (ইয়ামান থেকে) মক্কায় এলেন দুই রাবীর একজন বলেন যে, তিনি বলেন, আমি রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অনুরূপ ইহরাম বাঁধলাম। অপরজনের মতে তিনি বললেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুরূপ ইহরাম বাঁধলাম। অপরজনের মতে তিনি বললেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুরূপ ইহরাম বাঁধলাম। ফলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইহরাম অবস্থায় থাকার নির্দেশ দিলেন এবং তাকেও হাদী এর মধ্যে শরীক করে দিলেন।

হাদীস নং ২৩৪২

মুহাম্মদ রহ……….রাফি ইবনে খাদীজ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিহামার অন্তর্গত যুলহুলাইফা নামক স্থানে আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে অবস্থান করছিলাম। সে সময় আমরা (গনীমতের অংশ হিসাবে) কিছু বকরী কিংবা উট পেয়ে গেলাম। সাহাবীগণ (অনুমতির অপেক্ষা না করেই) তাড়াহুড়া করে পাত্রে গোশত ছড়িয়ে দিলেন। পরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে পাত্রগুলো উল্টিয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন। (বন্টনকালে) প্রতি দশটি বকরীকে তিনি একটি উটের সমান ধার্য করলেন। ইতিমধ্যে একটি উট পালিয়ে গেল। সে সময় দলে ঘোড়ার সংখ্যাও ছিল খুব অল্প। তাই একজন তীর ছুড়ে সেটাকে আটকালেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দেখ, পলায়নপর বন্য জন্তুদের মতো এই গৃহপালিত পশুগুলোর মধ্যেও কোন কোনটা পলায়নপর স্বভাব বিশিষ্ট। কাজেই সেগুলোর মধ্যে যেটা তোমাদের উপর প্রবল হয়ে উঠবে তার সাথে এরূপই করবে। (রাবী আবয়াহ রহ.) বলেন, আমার দাদা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমরা আশংকা করি, আগামীকাল হয়ত আমরা শত্রুর মুখোমুখি হব। আমাদের সাথে তো কোন ছুরি নেই। এমতাবস্থায় আমরা কি বাঁশের ধারালো কুঞ্চি দিয়ে যবেহ করতে পারি? তিনি বললেন : যে রক্ত বের করে তা দিয়ে দ্রুত কর। যা আল্লাহর নাম দিয়ে যবেহ হয়, তা তোমরা খেতে পার। তবে তা যেন দাঁত বা নখ না হয়। তোমাদের আমি এর কারণ বলছি, দাঁত তো হাড় আর নখ হল হাবশীদের ছুরি।

বন্ধক অধ্যায় (২৩৪৩-২৩৫০)

হাদীস নং ২৩৪৩

মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যবের বিনিময়ে তাঁর বর্ম বন্ধক রেখেছিলেন। আমি একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে যবের রুটি এবং দুর্গন্ধযুক্ত চর্বি নিয়ে গেলাম, তখন তাকে বলতে শুনলাম, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পরিবার পরিজনের কাছে কোন সকাল বা সন্ধ্যায় এক সা’ এর অতিরিক্ত (কোন খাদ্য) দ্রব্য থাকে না। (আনাস রা. বলেন) সে সময়ে তারা মোট নয় ঘর (নয় পরিবার) ছিলেন।

হাদীস নং ২৩৪৪

মুসাদ্দাদ রহ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ইয়াহুদীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট মিয়াদে খাদ্যশস্য খরিদ করেন এবং নিজের বর্ম তার কাছে বন্ধক রাখেন।

হাদীস নং ২৩৪৫

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : কা’আব ইবনে আশরাফকে হত্যা করার দায়িত্ব কে নিতে পারবে? আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সে তো কষ্ট দিয়েছে। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. তখন বললেন, আমি । পরে তিনি তার কাছে গিয়ে বললেন, আমরা তোমার কাছে এক ওসাক অথবা দুই ওসাক (খাদ্য) ধার চাচ্ছি। সে বলল, তোমাদের মহিলাদেরকে আমার কাছে বন্ধক রাখ। তিনি বললেন : তুমি হলে আরবের সেরা সুন্দর ব্যক্তি। তোমার কাছে কিভাবে মহিলাদের বন্ধক রাখতে পারি? সে বলল, তাহলে তোমাদের সন্তানদের আমার কাছে বন্ধক রাখ। তিনি বললেন, কিভাবে সন্তানদের তোমার কাছে বন্ধক রাখি। পরে এই বলে তাদের নিন্দা করা হবে যে, দু’ এক ওসাকের জন্য তারা বন্ধক ছিল, এটা আমাদের জন্য হবে বিরাট কলংক। তার চেয়ে বরং আমরা তোমার কাছে আমাদের অস্ত্র বন্ধক রাখতে পারি। রাবী সুফিয়ান রহ. ‘আল-লামাতু’ অর্থ করেছেন অস্ত্র। তারপর তিনি তাকে পরে আসার প্রতিশ্রুতি দিলেন এবং (পরে এসে) তাকে হত্যা করলেন এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে সে সম্পর্কে তাকে অবহিত করলেন।

হাদীস নং ২৩৪৬

আবু নুআইম রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : বন্ধকী প্রাণীর উপর তার খরচ পরিমাণ আরোহণ করা যাবে। তদ্রূপ দুধেল প্রাণী বন্ধক থাকলে (খরচ পরিমাণ) তার দুধ পান করা যাবে।

হাদীস নং ২৩৪৭

মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ…….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : বাহনের পশু বন্ধক থাকলে তার খরচের পরিমাণে তাঁতে আরোহণ করা যাবে। তদ্রুপ দুধেল প্রাণী বন্ধক থাকলে তার খরচের পরিমাণে দুধ পান করা যাবে। (মোট কথা) আরোহণকারী এবং দুধ পানকারীকেই খরচ বহন করতে হয়।

হাদীস নং ২৩৪৮

কুতাইবা রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ইয়াহুদী থেকে কিছু খাদ্যদ্রব্য কিনেছিলেন এবং তার কাছে নিজের বর্ম বন্ধক রেখেছিলেন।

হাদীস নং ২৩৪৯

খাল্লাদ ইবনে ইয়াহইয়া রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই ফায়সালা দিয়েছেন যে, (বাদী সাক্ষী পেশ করতে ব্যর্থ হলে) কসম করা বিবাদীর কর্তব্য।

হাদীস নং ২৩৫০

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ……..আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মিথ্যা কসম করে যে ব্যক্তি অর্থ-সম্পদ হস্তগত করে সে (কিয়ামতের দিন) আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে এ অবস্থায় যে, আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত থাকবেন। তারপর আল্লাহ তা’আলা (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর) উক্ত বাণী সমর্থন করে আয়াত নাযিল করলেন : “নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের প্রতিশ্রুতি তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে………..মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে। (৩:৭৭) (রাবী বলেন) পরে আশআস ইবনে কায়স রা. আমাদের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, আবু আবদুর রাহমান (ইবনে মাসউদ) তোমাদের কি হাদীস শুনালেন (রাবী বলেন) আমরা তাকে হাদীসটি শুনালে তিনি বললেন, তিনি নির্ভুল হাদীস শুনিয়েছেন। আমাকে কেন্দ্র করেই তো আয়াতটি নাযিল হয়েছিল। কুয়া (এর মালিকানা) নিয়ে আমার সাথে এক লোকের ঝগড়া চলছিলো। পরে আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে বিরোধটি উত্থাপন করলাম। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে বললেন, তুমি দুজন সাক্ষী উপস্থিত করবে, নতুবা সে হলফ করবে। আমি বললাম, তবে তো নির্দ্বিধায় হলফ করে বসবে। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : যে ব্যক্তি মিথ্যা হলফ করে অর্থ-সম্পদ হস্তগত করবে, সে (কিয়ামতের দিন) আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে এ অবস্থায় যে, আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত থাকবেন। তিনি (আশআস) বলেন, তখন আল্লাহ তা’আলা এর সমর্থনে আয়াত নাযিল করলেন। তারপর তিনি (আশআস) إن الذين يشترون بعهد الله الآية এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন।

 গোলাম আযাদ করা অধ্যায় (২৩৫১-২৩৯০)

হাদীস নং ২৩৫১

আহমদ ইবনে ইউনুস রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কেউ কোন মুসলিম গোলাম আযাদ করলে আল্লাহ সেই গোলামের প্রত্যেক অংগের বিনিময়ে তার একেকটি অংগ (জাহান্নামের) আগুন থেকে মুক্ত করবেন। সাঈদ ইবনে মারজানা রা. বলেন, এ হাদীসটি আমি আলী ইবনে হুসায়নের খিদমতে পেশ করলাম। তখন আলী ইবনে হুসায়ন রা. তার এক গোলামের কাছে উঠে গেলেন যার বিনিময়ে আবদুল্লাহ ইবনে জাফার রা. তাকে দশ হাজার দিরহাম কিংবা এক হাজার দীনার দিতে চেয়েছিলেন এবং তিনি তাকে আযাদ করে দিলেন।

হাদীস নং ২৩৫২

উবাদুল্লাহ ইবনে মূসা রহ……….আবু যার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কোন আমল উত্তম ? তিনি বললেন : আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং তাঁর পথে জিহাদ করা। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কোন ধরনের গোলাম আযাদ করা উত্তম? তিনি বললেন : যে গোলামের মূল্য অধিক এবং যে গোলাম তার মনিবের কাছে অধিক আকর্ষনীয়। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ যদি আমি করতে না পারি ? তিনি বললেন, তাহলে কাজের লোককে (তার কাজে) সাহায্য করবে কিংবা বেকারকে কাজ দিবে। আমি (আবারও) বললাম, এ-ও যদি না পারি ? তিনি বললেন: মানুষকে তোমার অনিষ্টতা থেকে মুক্ত রাখবে। বস্তুত : এটা তোমার নিজের জন্য তোমার পক্ষ থেকে সাদকা।

হাদীস নং ২৩৫৩

মূসা ইবনে মাসউদ রহ……..আসমা বিনতে আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যগ্রহণের সময় গোলাম আযাদ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আলী রহ. দরাওয়ারদী রহ. সূত্রে হিশাম রহ. হাদীস বর্ণনায় মূসা ইবনে মাসউদ রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ২৩৫৪

মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর রহ……….আসমা বিনতে আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সূর্যগ্রহণের সময় আমাদেরকে গোলাম আযাদ করার নির্দেশ দেওয়া হত।

হাদীস নং ২৩৫৫

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….সালিমের পিতা (ইবনে উমর রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি দু’জনের মালিকানাধীন গোলাম আযাদ করে, সে সচ্ছল হলে প্রথমে গোলামের মূল্য নির্ধারণ করা হবে, তারপর আযাদ করবে।

হাদীস নং ২৩৫৬

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কেউ যদি কোন গোলাম থেকে নিজের অংশ আযাদ করে আর গোলামের মূল্য পরিমাণ অর্থ তার কাছে থাকে, তবে তার উপর দায়িত্ব হবে গোলামের ন্যয্যমূল্য নির্ণয় করা। তারপর সে শরীকদের কে তাদের প্রাপ্য অংশ পরিশোধ করবে এবং গোলামটি তার পক্ষ থেকে আযাদ হয়ে যাবে, কিন্তু (সে পরিমাণ অর্থ) না থাকলে তার পক্ষ থেকে ততটুকুই আযাদ হবে। যতটুকু সে আযাদ করেছে।

হাদীস নং ২৩৫৭

উবায়দ ইবনে ইসমাঈল রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কেউ কোন (শরীকী) গোলাম থেকে নিজের অংশ আযাদ করলে ঐ গোলামের সম্পূর্ণটা আযাদ কার তার জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়বে, যদি তার কাছে সেই গোলামের মূল্য পরিমাণ অর্থ থাকে। আর যদি তার কাছে কোন অর্থ না থাকে তাহলে তার দায়িত্ব হবে আযাদ কৃত (গোলামের) ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করা এতে আযাদকারীর পক্ষ থেকে ততটুকুই আযাদ হবে, যতটুকু সে আযাদ করেছে। মুসাদ্দাদ রহ. বিশর ইবনে মুফাদ্দাল রহ. সূত্রে উবায়দুল্লাহ রহ. উক্ত হাদীসটি সংক্ষিপ্ত বর্ণিত আছে।

হাদীস নং ২৩৫৮

আবু নুমান রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কেউ কোন (শরীকী) গোলাম থেকে নিজের অংশ বা হিসসা আযাদ করে দিলে এবং তার কাছে সেই গোলামের মূল্য পরিমাণ অর্থ থাকে তাহলে ঐ গোলামের সম্পূর্ণটা আযাদ হবে যাবে। নাফি রহ. বলেন, আর যদি তার কাছে কোন অর্থ না থাকে তাহলে তার দায়িত্ব হবে আযাদ কৃত (গোলামের) ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করা এতে আযাদকারীর পক্ষ থেকে ততটুকুই আযাদ হবে, রাবী আইউব রহ. বলেন, আমি জানি না, এটা কি নাফি রহ. নিজ থেকে বলেছেন না এটাও হাদীসের অন্তর্ভূক্ত।

হাদীস নং ২৩৫৯

আমহদ ইবনে মিকদাম রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি শরীকী গোলাম বা বাঁদী সম্পর্কে ফাতওয়া দিতেন যে, শরীকী গোলাম শরীকদের কেউ নিজের অংশ আযাদ করে দিলে তিনি বলতেন, সম্পূর্ণ গোলামটাই আযাদ করা তার উপর ওয়াজিব হয়ে গেছে। যদি আযাদকারীর কাছে গোলামের মূল্য পরিমাণ অর্থ থাকে, তাহলে সে অর্থ থেকে গোলামের ন্যায্যমূল্য নির্ণয় করা হবে এবং শরীকদের কে তাদের প্রাপ্য হিসসা পরিশোধ করা হবে, আর আযাদকৃত গোলাম পূর্ণ আযাদ হয়ে যাবে। বক্তব্যটি ইবনে উমর রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনাক করেন, এবং লায়ছ, ইবনে আবু যিব, ইবনে ইসহাক জওয়াইরিয়া, ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ ও ইসমাঈল ইবনে উমাইয়া রহ. নাফি রহ.-এর মাধ্যমে ইবনে উমর রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি সংক্ষিপ্ত ভাবে বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ২৩৬০

আহমদ ইবনে আবু রাজা রহ. ও মুসাদ্দাদ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কেউ শরীকী গোলাম থেকে নিজের ভাগ বা অংশ (রাবীর দ্বিধা) আযাদ করে দিলে নিজ অর্থ ব্যয়ে সেই গোলামাকে রেহাই করা তার উপর কর্তব্য, যদি তার কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ থাকে। অন্যথায় তার ন্যায্যমূল্য নির্ধারন করা হবে এবং তাকে অতিরিক্ত কষ্ট না দিয়ে উপার্জন করতে বলা হবে। হাজ্জাজ ইবনে হাজ্জাজ, আবান ও মূসা ইবনে খালাফ রহ. কাতাদা রহ. থেকে হাদীস সাঈদ ইবনে আবু আরুবা রহ.-এর অনুসরণ করেছেন। হাদীসটি শুবা রহ. সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ২৩৬১

হুমাইদী রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : (আমার বরকতে) আল্লাহ আমার উম্মতের অন্তরে উদিত ওয়াসওয়াসা (পাপের ভাব ও চেতনা) মাফ করে দিয়েছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তা কাজে পরিণত করে অথবা মুখে বলে।

হাদীস নং ২৩৬২

মুহাম্মদ ইবনে কাছীর রহ……….উমর ইবনে খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমলসমূহ নিয়্যতের সাথে সম্পৃক্ত। আর মানুষ তাই পাবে, যা সে নিয়্যত করবে। কাজেই কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে হিজরত করে থাকলে তার সে হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে বলেই গণ্য হবে। আর যার হিজরত হবে দুনিয়া হাসিলের উদ্দেশ্য অথবা কোন নারীকে বিয়ে করার মতলবে; তার হিজরত সে উদ্দেশ্যে বলেই গণ্য হবে।

হাদীস নং ২৩৬৩

মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে নুমাইর রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি ইসলাম গ্রহণের ইচ্ছায় আপন গোলামকে সাথে নিয়ে (মদীনায়) আসছিলেন। পথে তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন। পরে গোলামটি এসে পৌছলো। আবু হুরায়রা রা. সে সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে বসা ছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবু হুরায়রা ! দেখো, তোমার গোলাম এসে গেছে। তখন তিনি বললেন, শুনুন; আমি আপনাকে সাক্ষী রেখে বলছি, সে আযাদ। রাবী বলেন, (মদীনায়) পৌঁছে তিনি বলতেন : কত দীর্ঘ আর কষ্টদায়কই না ছিল হিজরতের সে রাত তবুও আমাকে দারুল কুফর থেকে মুক্তি দিয়েছে।

হাদীস নং ২৩৬৪

উবায়দুল্লাহ ইবনে সাঈদ রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজীর খিদমতে আগমনকালে আমি পথে পথে (কবিতা) বলতাম : হিজরতের সে রাত কতনা দীর্ঘ আর কষ্টদায়ক ছিল- তবুও তা আমাকে দারুল কুফর থেকে মুক্তি দিয়েছে। তিনি বলেন, পথে আমার এক গোলাম পালিয়ে গিয়েছিলো। যখন আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে এসে তাঁর (হাতে) বায়আত হলাম। আমি তাঁর খিদমতেই ছিলাম, এ সময় গোলামটি এসে হাযির হল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবু হুরায়রা! এই যে, তোমার গোলাম ! আমি বললাম, সে আল্লাহর ওয়াস্তে আযাদ। এই বলে তাকে আযাদ করে দিলাম। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, আবু কুরায়ব রহ. আবু উসামা রহ. থেকে বর্ণিত রিওয়ায়েতে حر শব্দটি বলেন নি।

হাদীস নং ২৩৬৫

শিহাব ইবনে আব্বাদ রহ………কায়স রহ. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আবু হুরায়রা রা. তাঁর গোলামকে সাথে করে ইসলামের উদ্দেশ্যে (মদীনা) আগমন কালে পথিমধ্যে তারা একে অপরকে হারিয়ে ফেললেন এবং তিনি (আবু হুরায়রা) বললেন, শুনন ! আমি আপনাকে সাক্ষী রেখে বলছি, সে আল্লাহর জন্য।

হাদীস নং ২৩৬৬

আবুল ইয়ামান রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উতবা ইবনে আবু ওয়াক্কাস আপন ভাই সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাসকে ওসীয়্যত করেছিলেন, তিনি যেন যামআর দাসীর গর্ভজাত পুত্রকে গ্রহণ করেন। (কারণ স্বরূপ) উতবা বলেছিলেন; সে আমার (ঔরসজাত) পুত্র। মক্কা বিজয়কালে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় তাশরীফ আনলেন ; তখন সাদ যামআর দাসীর পুত্রকে নিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে আসলেন এবং তার সাথে আবদ ইবনে যামআকে নিয়ে আসলেন। সাদ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এতো আমার ভাতিজা। আমার ভাই বলেছেন যে, সে তার ছেলে আবদ ইবনে যামআর বলেলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এ আমার ভাই যামআর পুত্র। তার শয্যাতেই এ জন্ম নিয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন যামআর দাসীর পুত্রের দিকে তাকালেন। দেখলেন, উতবার সাথেই তার (আদলের) সর্বাধিক মিল। তবু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবদ ইবনে যামআ এ -তোমারই (ভাই) কেননা, এ তার (আবদ ইবনে যামআর) শয্যাতে জন্মগ্রহণ করেছে। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : হে সাওদা বিনতে যামআ ! তুমি এ থেকে পর্দা করবে। কেননা তিনি উতবার সাথেই তার মিল দেখতে পেয়েছিলেন। সাওদা ছিলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রী।

হাদীস নং ২৩৬৭

আদম ইবনে আবু ইয়াস রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের একজন তার এক গোলামকে মুদাববাররূপে আযাদ ঘোষণা করল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই গোলামকে ডেকে নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিলেন। জাবির রা. বলেন, গোলামটি সে বছরই মারা গিয়েছিল।

হাদীস নং ২৩৬৮

আবুল ওয়ালীদ রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোলামের অভিভাবকত্ব বিক্রি করতে এবং তা দান করতে নিষেধ করেছেন।

হাদীস নং ২৩৬৯

উসমান ইবনে আবু শায়বা রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বারীরাকে আমি (আযাদ করার নিয়্যতে) খরিদ করলাম, তখন তার (পূর্বতন) মালিক অভিভাবকত্বের শর্তারোপ করল। প্রসংগটি আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উত্থাপন করলাম। তিনি বললেন, তুমি তাকে আযাদ করে দাও। অভিভাবকত্ব সেই লাভ করবে, যে অর্থ ব্যয় করবে। তখন আমি তাকে আযাদ করে দিলাম। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে তার স্বামীর ব্যাপারে ইখতিয়ার দিলেন। বারীরা রা. বললেন, যদি সে আমাকে এতো এতো সম্পদও দেয় তবু আমি তার কাছে থাকব না। অবশেষে তিনি তার ইখতিয়ার প্রয়োগ করলেন।

হাদীস নং ২৩৭০

ইসমাঈল ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মদীনার কিছু লোক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে বলল, আপনি অনুমতি দিলে আমরা আমাদের বোনপো আব্বাসের মুক্তিপণ ছেড়ে দিব। কিন্তু তিনি বললেন, তোমরা তার (মুক্তিপণের) একটি দিরহামও ছাড়তে পার না।

হাদীস নং ২৩৭১

উবায়দ ইবনে ইসমাঈল রহ………হিশাম রহ. থেকে বর্ণিত, আমার পিতা অবগত করলেন যে, হাকীম ইব হিযাম রা. জাহিলী যুগে একশ গোলাম করছিলেন এবং আরোহণের জন্য একশ উট দিয়েছিলেন। যখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন, তখনও একশ উট বাহন হিসাবে দান করেন এবং একশ গোলাম আযাদ করলেন। তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! জাহেলী যুগে কল্যাণের উদ্দেশ্য যে কাজগুলো আমি করতাম, সেগুলো সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। তিনি বলেন, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার পিছনের আমলগুলোর কল্যাণেই তো তুমি ইসলাম গ্রহণ করেছ।

হাদীস নং ২৩৭২

ইবনে আবু মারয়াম রহ………..মারওয়ান ও মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা. থেকে বর্ণিত, হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধি দল নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে হাযির হলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এরপর তার অর্থ-সম্পদ ও বন্দীদের ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানাল। তখন তিনি বললেন, তোমরা দেখছো, আমার সাথে আরো, সাহাবী আছেন। আর সত্য ভাষণই আমার নিকট প্রিয়। কাজেই অর্থ-সম্পদ ও বন্দী এ দুটির যে কোন একটি তোমরা বেছে নাও। বন্দীদের বন্টনের ব্যাপারে আমি বিলম্বও করেছিলাম। (রাবী বলেন) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়েফ থেকে ফিরে প্রায় দশ রাত তাদেরকে সুযোগ দিয়েছিলেন। যখন প্রতিনিধি দলের কাছে সুস্পষ্ট হয় যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে দুটির যে কোন একটি ফেরত দিবেন, তখন তারা বলল, তবে আমরা আমাদের বন্দীদেরই পছন্দ করছি। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবার সামনে দাঁড়িয়ে আল্লাহ পাকের যথাযোগ্য প্রশংসা করার পর বললেন, তোমাদের ভাইয়েরা তাওবা করে আমাদের কাছে এসেছে। এমতাবস্থায় আমি তাদেরকে তাদের বন্দীদের ফেরত দিতে মনস্থ করেছি। কাজেই তোমাদের মধ্যে যারা সন্তুষ্টচিত্তে তা পছন্দ করে, তারা যেন তাই করে। আর যারা তাদের নিজেদের হিসসা পেতে পছন্দ করে। তা এভাবে যে, প্রথম যে ফায় আল্লাহ পাক আমাকে দান করবেন, সেখান থেকে আমি তাদের সে হিসসা আদায় করে দিব। সে যেন তা করে। তখন সবাই বলল, আমরা আপনার জন্য সন্তুষ্টচিত্তে তা করতে রাযি আছি। তিনি বললেন, আমি বুঝতে পারছি না, তোমাদের মধ্যে কারা সম্মত আর কারা সম্মত নও। কাজেই তোমরা ফিরে যাও। আর তোমাদের মুখপাত্ররা তোমাদের মতামত আমার কাছে উত্থাপন করুক। তারপর সবাই ফিরে গেলো আর তোমাদের মুখপাত্ররা তাদের সাথে আলোচনা সেরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ফিরে এসে জানালেন যে তারা সকলেই সন্তুষ্টচিত্তে সম্মতি প্রকাশ করেছে। (ইবনে শিহাব যুহরী রহ. বলেন) হাওয়াযিন গোত্রের যুদ্ধ বন্দী সম্পর্কে এতটুকুই আমাদের কাছে পৌছেছে। আনাস রা. বলেন, আব্বাস রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, (বদর যুদ্ধে) আমি (একাই) নিজের ও আকীলের মুক্তিপণ আদায় করেছি।

হাদীস নং ২৩৭৩

আলী ইবনে হাসান ইবনে শাকীক রহ……..ইবনে আউন রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাফি রহ.-কে পত্রে লিখলাম, তিনি জওয়াবে আমাকে লিখেন যে, মুস্তালিক গোত্রের উপর অতর্কিত ভাবে অভিযান পরিচালনা করেন। তাদের গবাদি পশুকে তখন পানি পান করানো হচ্ছিলো। তিনি তাদের যুদ্ধক্ষমদের হত্যা এবং নাবালকদের বন্দী করেন এবং সেদিনই তিনি জুওয়ায়রিয়া (উম্মুল মুমিনীন)-কে লাভ করেন। (নাফি রহ. বলেন) আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. আমাকে এ সম্পর্কিত হাদীস শুনিয়েছেন। তিনি নিজেও সে সেনাদলে ছিলেন।

হাদীস নং ২৩৭৪

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….ইবনে মুহারিয রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু সাঈদ রা.-কে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আমরা বনী মুস্তালিক যুদ্ধে কিছু আরব যুদ্ধ বন্দী আমাদের হস্তগত হল। তখন আমাদের স্ত্রীদের কথা মনে পড়ে (কেননা) দূর-নিঃসংগ জীবন আমাদের জন্য পীড়াদায়ক হয়ে পড়েছিল। (সে সময়) আমরা আযল করতে চাইলাম (বাদী ব্যবহার করে)। এ সম্পর্কে আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, এরূপ না করলে তোমাদের কোন ক্ষতি হবে না। কেননা কিয়ামত পর্যন্ত যাদের জন্ম নির্ধারিত রয়েছে।

হাদীস নং ২৩৭৫

যুহায়র ইবনে হারব ও ইবনে সালাম রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তিনটি কথা শোনার পর থেকে বনী তামীম গোত্রকে আমি ভালোবেসে আসছি। আমি তাকে বলতে শুনেছি, দাজ্জালের মুকাবিলায় আমার উম্মতের মধ্যে এরাই হবে অধিকতর কঠোর। আবু হুরায়রা রা. বলেন, একবার তাদের পক্ষ থেকে সাদকার মাল আসল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ যে আমার কওমের সাদকা। আয়িশা রা.-এর হাতে তাদের এক বন্দিনী ছিল। তা দেখে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একে আযাদ করে দাও। কেননা, সে ইসমাঈলের বংশধর ।

হাদীস নং ২৩৭৬

ইসহাক ইবনে ইবরাহীম রহ……….আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কারো যদি একটি বাদী থাকে আর সে তাকে প্রতিপালন করে, তার সাথে ভাল আচরণ করে এবং তাকে মুক্তি দিয়ে বিয়ে করে, তাহলে সে দ্বিগুণ সাওয়াব লাভ করবে।

হাদীস নং ২৩৭৭

আদম ইবনে আবু ইয়াস রহ……….মারূর ইবনে সুওয়াইদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি আবু যার গিফারী রা.-এর দেখা পেলাম। তার গায়ে তখন একজোড়া কাপড় আর তার গোলামের গায়েও (অনুরূপ) এক জোড়া কাপড় ছিল। তাকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, একবার এক ব্যক্তিকে আমি গালি দিয়েছিলাম। সে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি তার মার প্রতি কটাক্ষ করে তাকে লজ্জা দিলে? তারপর তিনি বললেন, তোমাদের গোলামেরা তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করেছেন, কাজেই কারো ভাই যদি তার অধীনে থাকে তবে সে যা খায়, তা থেকে যেন তাকে খেতে দেয় এবং সে যা পরিধান করে, তা থেকে যেন পরিধান করায়। এবং তাদের সাধ্যাতীত কোন কাজে বাধ্য কর না। তোমরা যদি তাদের শক্তির উর্ধ্বে কোন কাজ তাদের দাও তবে তাদের সহযোগিতা কর।

হাদীস নং ২৩৭৮

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গোলাম যদি তার মনিবের হিতাকাঙ্ক্ষী হয় এবং তার প্রতিপালকের উত্তম ইবাদত করে, তাহলে তার সাওয়াব হবে দ্বিগুণ।

হাদীস নং ২৩৭৯

মুহাম্মদ ইবনে কাছীর রহ……….আবু মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, লোক তার দ্বিগুণ সাওয়াব লাভ করবে। আর যে গোলাম আল্লাহর হক আদায় করে এবং মনিবের হকও আদায় করে, সেও দ্বিগুণ সাওয়াব লাভ করবে।

হাদীস নং ২৩৮০

বিশর ইবনে মুহাম্মদ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সৎ ক্রীতদাসের সাওয়াব হবে দ্বিগুণ। আবু হুরায়রা রা. বলেন, যার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ করে বলছি, আল্লাহর পথে জিহাদ, হজ্জ এবং আমার মায়ের সেবার মত উত্তম কাজ যদি না থাকত তাহলে ক্রীতদাস রূপে মৃত্যুবরণ করাই আমি পছন্দ করতাম।

হাদীস নং ২৩৮১

ইসহাক ইবনে নাসর রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কত ভাগ্যবান সে, যে উত্তমরূপে আপন প্রতিপালকের ইবাদত করে এবং নিজ মনিবের হিতাকাঙ্ক্ষী হয়।

হাদীস নং ২৩৮২

মুসাদ্দাদ রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গোলাম যদি আপন মনিবের হিতাকাঙ্ক্ষী হয় এবং আপন প্রতিপালকের উত্তম ইবাদত করে তাহলে তার সাওয়াব হবে দ্বিগুণ।

হাদীস নং ২৩৮৩

মুহাম্মদ ইবনে আলা রহ……….আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে গোলাম আপন প্রতিপালকের উত্তম রূপে ইবাদত করে এবং আপন মনিবের যে হক আছে তা আদায় করে, তার কল্যাণ কামনা করে আর তার আনুগত্য করে, সে দ্বিগুণ সাওয়াব লাভ করবে।

হাদীস নং ২৩৮৪

মুহাম্মদ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন এমন কথা না বলে তোমার প্রভুকে আহার করাও তোমার প্রভুকে উযূ করাও, তোমার প্রভুকে পান করাও আর যেন (গোলাম বাদীরা) এরূপ বলে, আমার মনিব আমার অভিভাবক তোমাদের কেউ যেন এরূপ না বলে আমার দাস, আমার দাসী। বরং বলবে আমার বালক আমার বালিকা। আমার খাদিম।

হাদীস নং ২৩৮৫

আবু নুমান রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যেন (শরীকী) গোলাম থেকে নিজের অংশ আযাদ করে দিলে এবং তার কাছে সেই গোলামের মূল্য পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করা হবে এবং তার সম্পদ থেকেই সেই গোলাম সম্পূর্ণ আযাদ হয়ে যাবে, অন্যথায় সে যতটুকু আযাদ করেছে ততটুকুই আযাদ হবে।

হাদীস নং ২৩৮৬

মুসাদ্দাদ রহ………আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। কাজেই প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। যেমন- জনগণের শাসক তাদের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন পুরুষ তার পরিবার পরিজনদের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে।অ স্ত্রী স্বামীর ঘরের এবং তার সন্তানের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। আর গোলাম আপন মনিবের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণকারী। কাজেই সে বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। শোন ! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। কাজেই প্রত্যেকেই আপন অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে।

হাদীস নং ২৩৮৭

মালিক ইবনে ইসমাঈল রহ……….আবু হুরায়রা রা. ও যায়েদ ইবনে খালিদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : বাদী যিনায় লিপ্ত হলে তাকে চাবুক লাগাবে। আবার যিনা করলে আবারও চাবুক লাগবে। তৃতীয়বার বা চতুর্থবার বলেছেন, একগাছি রশির বিনিময়ে হলেও তাকে বিক্রি করে ফেলবে।

হাদীস নং ২৩৮৮

হাজ্জাজ ইবনে মিনহাল রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের কারো খাদিম খাবার নিয়ে হাযির হলে তাকেও নিজের সাথে বসানো উচিত। তাকে সাথে না বসালে দু’ এক লোকমা কিংবা দু’ এক গ্রাস তাকে দেওয়া উচিত। কেননা সে এর জন্য পরিশ্রম করেছে।

হাদীস নং ২৩৮৯

আবুল ইয়ামান রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। ইমাম (শাসক) একজন দায়িত্বশীল, কাজেই সে আপন অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন পুরুষ তার পরিবার পরিজনদের দায়িত্বশীল, কাজেই সে আপন অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামীর ঘরের দায়িত্বশীল, কাজেই সে আপন অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। আর গোলাম আপন মনিবের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণকারী। কাজেই সে বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। (আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.) বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এদের সম্পর্কে (নিশ্চিতভাবেই) শুনেছি। তবে আমার ধারণা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, আর সন্তান তার পিতার সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণকারী। কাজেই তার দায়িত্বাধীন বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। মোটকথা তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। কাজেই প্রত্যেকেই আপন অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে।

হাদীস নং ২৩৯০

মুহাম্মদ ইবনে উবায়দুল্লাহ ও আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের মধ্যে কেউ যখন লড়াই করবে, তখন সে যেন মুখমণ্ডলে আঘাত করা থেকে বিরত থাকে। আবু ইসহাক রহ. বলেন, ইবনে হারব রহ. বলেছেন, ইবনে ফুলান কথাটি ইবনে ওয়াহব রহ. বলেছেন এবং ইবনে ফুলান হলেন ইবনে সামআন রহ.।

মুকাতাব অধ্যায় (২৩৯১-২৩৯৫)

হাদীস নং ২৩৯১

কুতাইবা রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, বারীরা রা. একবার তার মুকাতাবাতের ব্যাপারে সাহায্য চাইতে আসলেন। তখন পর্যন্ত তিনি মুকাতাবাতের অর্থ থেকে কিছুই আদায় করেননি। আয়িশা রা. তাকে বললেন, তুমি তোমার মালিকের কাছে ফিরে যাও। তারা সম্মত হলে আমি তোমার মুকাতাবাতের প্রাপ্য পরিশোধ করে দিবে। আর তোমার ওয়ালার অধিকার আমার হবে। বারীরা রা. কথাটি তার মালিকের কাছে পেশ করলেন। কিন্তু তারা তা অস্বীকার করল এবং বলল, তিনি যদি তোমাকে আযাদ করে সাওয়াব পেতে চান, তবে করতে পারেন। ওয়ালা আমাদেরই থাকবে। আয়িশা রা. বিষয়টি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে পেশ করলে তিনি বললেন, তুমি খরিদ করে আযাদ করে দাও। কেননা যে আযাদ করবে, সেই ওয়ালার অধিকারী হবে। (রাবী বলেন) তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীগণের সমাবেশ) দাঁড়িয়ে বললেন, মানুষের কি হল, এমন সব শর্তারোপ করে, যা আল্লাহর কিতাবে নেই। যে এমন শর্তারোপ করবে, যা আল্লাহর কিতাবে নেই, তা তার জন্য প্রযোজ্য হবে না; যদিও সে শতবার শর্তারোপ করে। কেননা আল্লাহর দেওয়া শর্তই সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য।

হাদীস নং ২৩৯২

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উম্মুল মুমিনীন আয়িশা রা. আযাদ করার জন্য জনৈকা বাদীকে খরিদ করতে চাইলেন। কিন্তু তার মালিক পক্ষ বলল, এই শর্তে (আমরা সম্মত) যে, ওয়ালা আমাদেরই থাকবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ শর্তারোপ যেন তোমাকে তা খরিদ করতে বিরত না রাখে। কেননা ওয়ালা তারই জন্য, যে আযাদ করবে।

হাদীস নং ২৩৯৩

উবায়দ ইবনে ইসমাঈল রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বারীরা রা. এসে বললেন, আমি প্রতি বছর এক উকিয়া করে নয় উকিয়া আদায় করার শর্তে কিতাবাতের চুক্তি করেছি। এ ব্যাপারে আপনি আমাকে সাহায্য করুন। আয়িশা রা. বললেন, তোমার মালিক পক্ষ সম্মত হলে আমি উক্ত পরিমাণ এককালীন দান করে তোমাকে আযাদ করতে পারি এবং তোমার ওয়ালা হবে আমার জন্য। তিনি তার মালিকের কাছে গেলেন, তারা তার এ শর্ত মানতে অস্বীকার করল। তখন তিনি বললেন, বিষয়টি আমি তাদের কাছে উত্থাপন করেছিলাম, কিন্তু ওয়ালা তাদেরই হবে, এ শর্ত ছাড়া তারা মানতে অসম্মতি প্রকাশ করেছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়টি শুনে এ সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন। আমি ঘটনাটি তাকে খুলে বললাম। তখন তিনি বললেন, তাকে নিয়ে নাও এবং আযাদ করে দাও। ওয়ালা তাদের হবে, এ শর্ত মেনে নাও, (এতে কিছু আসে যায় না) কেননা, যে আযাদ করে ওয়ালা তারই হবে। আয়িশা রা. বলেন, এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের সমাবেশে দাঁড়িয়ে আল্লাহর হামদ ও সানা পাঠ করলেন আর বললেন, তোমাদের কিছু লোকের কি হল ? এমন শর্ত তারা আরোপ করে, যা আল্লাহর কিতাবে নেই। এমন কোন শর্ত, যা আল্লাহর কিতাবে নেই, তা বাতিল বলে গন্য হবে; এমনকি সে শর্ত শতবার আরোপ করলেও। কেননা আল্লাহর হুকুমই যথার্থ এবং আল্লাহর শর্তই নির্ভরযোগ্য। তোমাদের কিছু লোকের কি হল? তারা এমন কথা বলে যে, হে অমুক! তুমি আযাদ করে দাও, ওয়ালা আমারই থাকবে। অথচ যে আযাদ করবে সে-ই ওয়ালার অধিকারী হবে।

হাদীস নং ২৩৯৪

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ…………আমরা বিনতে আবদুর রহমান রহ. থেকে বর্ণিত যে, বারীরা রা. একবার উম্মুল মুমিনীন আয়িশা রা. -এর কাছে সাহায্য চাইতে আসলেন। তখন তিনি বললেন, তোমার মালিক পক্ষ চাইলে আমি তাদের এক সাথেই তোমার মূল্য দিয়ে দিব এবং তোমাকে আযাদ করে দিব। বারীরা রা. মালিক পক্ষকে তা বললেন, কিন্তু জবাবে তারা বলল, তোমার ওয়ালা আমাদের থাকবে, এছাড়া আমরা সম্মত নই। (রাবী) মালিক রহ. বলেন, ইয়াহইয়া রহ. বলেন, আমরা রহ. ধারণা করেন যে, আয়িশা রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তা উত্থাপন করেছিলেন, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, তুমি তাকে খরিদ করে আযাদ করে দাও। কেননা ওয়ালা তারই হবে, যে আযাদ করে।

হাদীস নং ২৩৯৫

আবু নুআঈম রহ……….আয়মান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়িশা রা.-এর কাছে গিয়ে বললাম, আমি উতবা ইবনে আবু লাহাবের গোলাম ছিলাম। সে মারা গেলে তার ছেলেরা আমার মালিক হল। আর তারা আমাকে ইবনে আবু আমর মাখযুমীর নিকট বিক্রি করেন। ইবনে আবু আমর আমাকে আযাদ করে দিলেন। কিন্তু উতবার ছেলেরা ওয়ালার শর্ত আরোপ করল। তখন আয়িশা রা. বললেন, মুকাতাব থাকা অবস্থায় বারীরা রা. একবার তার কাছে এসে বললেন, আমাকে ক্রয় করে আযাদ করে দিন। তিনি বললেন, হ্যাঁ। সে বলল, তাঁরা ওয়ালার শর্ত আরোপ ব্যতিরেকে আমাকে বিক্রি করবে না। তিনি বললেন, আমার তা প্রয়োজন নেই । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে কথা শুনলেন, কিংবা তার কাছে এ সংবাদ পৌঁছল। তখন তিনি আয়িশা রা.-এর কাছে এ ব্যাপারে আলোচনা করলেন। আর আয়িশা রা. বারীরা রা.-কে যা বলেছিলেন তাই জানালেন। তখন তিনি বললেন, তুমি তাকে ক্রয় করে আযাদ করে দাও, আর তাদেরকে যত ইচ্ছা শর্তারোপ করতে দাও। পরে আয়িশা রা. তাকে খরিদ করে আযাদ করে দিলেন এবং তার মালিকপক্ষে ওয়ালার শর্তারোপ করল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওয়ালা তারই থাকবে, যে আযাদ করে যদিও তার মালিক পক্ষ শত শর্তারোপ করে থাকে।

হিবা ও তার ফযীলত অধ্যায় (২৩৯৬-২৪৬০)

হাদীস নং ২৩৯৬

আসিম ইবনে আলী রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে মুসলিম মহিলাগণ ! কোন মহিলা প্রতিবেশীনী যেন অপর মহিলা প্রতিবেশীনী (প্রদত্ত হাদীয়া) তুচ্ছ মনে না করে, এমন কি তা স্বপ্ল গোশত বিশিষ্ট বকরীর হাড় হলেও।

হাদীস নং ২৩৯৭

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ উওয়াসী রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি একবার উরওয়া রা.-কে লক্ষ্য করে বললেন, বোনপো। আমরা (মাসের) নতুন চাঁদ দেখতাম, আবার নতুন চাঁদ দেখতাম। এভাবে দু’মাসে তিনটি নতুন চাঁদ দেখতাম। কিন্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন ঘরেই আগুন জ্বালানো হতো না। (উরওয়া রহ. বলেন) আমি জিজ্ঞাসা করলাম, খালা। আপনারা তাহলে বেচে থাকতেন কিভাবে? তিনি বললেন, দুটি কালো জিনিস অর্থাৎ খেজুর আর পানিই শুধু আমাদের বাঁচিয়ে রাখত। অবশ্য কয়েক ঘর আনসার পরিবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতিবেশী ছিল। তাদের কিছু দুধালো উটনী ও বকরী ছিল। তাঁরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য দুধ হাদিয়া পাঠাত। তিনি আমাদের তা পান করতে দিতেন।

হাদীস নং ২৩৯৮

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যদি আমকে হালাল পশুর পায়া বা হাতা খেতে আহবান করা হয়, তবু তা আমি গ্রহণ করব আর যদি আমকে পায়া বা হাতা হাদিয়া দেওয়া হয়, তবে আমি তা গ্রহণ করব।

হাদীস নং ২৩৯৯

ইবনে আবু মারয়াম রহ………..সাহল রা. থেকে বর্ণিত যে, এক মুহাজির মহিলার কাছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোক পাঠালেন। তাঁর এক গোলাম ছিল কাঠমিস্ত্রী। তিনি তাকে বললেন, তুমি তোমার গোলামকে বল, সে যেন আমদের জন্য একটা কাঠের মিম্বর বানিয়ে দেয়। তিনি তার গোলামকে নির্দেশ দিলেন। সে গিয়ে এক প্রকার গাছ কেটে এনে মিম্বর তৈরী করল। কাজ শেষ হলে তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে লোক পাঠায়ে জানালেন যে, গোলাম তার কাজ শেষ করেছে। তিনি বললেন, সেটা আমার কাছে পাঠিয়ে দাও। তখন লোকেরা সেটা নিয়ে এল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটা বহন করে সেখানে স্থাপন করলেন, যেখানে তোমরা (এখন) দেখতে পাচ্ছ।

হাদীস নং ২৪০০

আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ…….আবু কাতাদা সালামী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমি মক্কার পথে কোন এক মনযিলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কয়েকজন সাহাবীর সংগে বসা ছিলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অগ্রবর্তী কোন যমীনে অবস্থান করেছিলেন। সবাই ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। আমি শুধু ইহরাম ছাড়া ছিলাম। তাঁরা একটি বন্য গাধা দেখতে পেলেন। আমি তখন আমার জুতা মেরামত করছিলাম। তাঁরা আমাকে সে সম্পর্কে অবহিত করেননি। অথচ সেটি আমার নযরে পড়ুক তাঁরা তা চাচ্ছিলেন। আমি হঠাৎ সেদিকে তাকালাম, সেটা আমার নযরে পড়ল। তখন আমি উঠে ঘোড়ার দিকে এগিয়ে গেলাম এবং জীন লাগিয়ে তাতে সাওয়ার হলাম। কিন্তু চাবুক ও বর্শা নিতে ভুলে গেলাম। তখন তাদের বললাম, চাবুক আর বর্শাটা আমাকে তুলে দাও। কিন্তু তাঁরা বললেন, আল্লাহর কসম । গাধা শিকার করার ব্যাপারে আমরা তোমাকে কোন সাহায্যই করব না। আমি তখন রাগ করে নেমে এলাম এবং সে দুটি তুলে নিয়ে সাওয়ার হলাম। আর গাধাটা আক্রমণ করে যখম করলাম। এতে সেটি মারা গেল। এরপর সেটাকে নিয়ে আসলাম। (পাকানোর পর) তারা সেই গাধার গোশত খেতে লাগলেন। পরে তাদের মনে ইহরাম অবস্থায় তা খাওয়া নিয়ে সন্দেহ দেখা দিল। কিছু সময় পর আমরা যাত্রা শুরু করলাম। এক ফাকে আমি আমার কাছে গাধার একটি হাতা লুকিয়ে রেখেছিলাম। (পথে) আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাক্ষাত পেয়ে সেই গোশত সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তোমাদের সাথে সেটার গোশতের কিছু আছ কি? আমি বললাম, হ্যা, আছে। এরপর হাতাখানা তাকে দিলে তিনি ইহরাম অবস্থায় তার সবটুকু খেলেন। এ হাদীসটি যায়েদ ইবনে আসলাম রা.। আতা ইবনে ইয়াসার রহ.-এর মাধ্যমে আবু কাতাদা রা. থেকে আমার কাছে বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং ২৪০১

খালিদ ইবনে মাখলাদ রহ……..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এই ঘরে আগমন করেন এবং কিছু পান করতে চাইলেন। আমরা আমাদের একটা বকরীর দুধ দোহন করে তাতে আমাদের এই কুয়ার পানি মিশালাম। তারপর তা সম্মুখে পেশ করলাম। এ সময় আবু বকর রা. ছিলেন তাঁর বামে, উমর রা. ছিলেন তাঁর সম্মুখে, আর এক বেদুঈন ছিলেন তাঁর ডানে। তিনি যখন পান শেষ করলেন, তখন উমর রা. বললেন, ইনি আবু বকর রা. (তাকে দিন) কিন্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেদুঈনকে তার অবশিষ্ট পানি দান করলেন। এরপর বললেন, ডান দিকের লোকদেরই (অগ্রাধিকার) ডান দিকের লোকদের (অগ্রাধিকার) শোন ! ডান দিক থেকেই শুরু করবে। আনাস রা. বলেন, এই সুন্নাত। এই সুন্নাত, তিনবার বললেন।

হাদীস নং ২৪০২

সুলাইমান ইবনে হারব রহ………..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (মক্কার অদূরে) মাররায যাহারান নামক স্থানে আমরা একটি খরগোশ তাড়া করলাম। লোকেরা সেটার পিছনে ধাওয়া করে ক্লান্ত হয়ে পড়ল। অবশেষে আমি সেটাকে নাগালে পেয়ে ধরে আবু তালহা রা.-এর কাছে নিয়ে গেলাম। তিনি সেটাকে যবেহ করে তার পাছা অথবা রাবী বলেন, দু’উরু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে পাঠালেন। শুবা রহ. বলেন দুটি উরুই পাঠিয়ে ছিলেন, এ শব্দের বর্ণনায় কোন সন্দেহ নেই । তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা গ্রহণ করেছিলেন। রাবী বলেন, আমি শুবা রহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কি তা খেয়েছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, খেয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা গ্রহণ করেছিলেন।

হাদীস নং ২৪০৩

ইসমাঈল রহ……….সাআব ইবনে জাসসামা রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য একটি বন্য গাধা হাদিয়া পাঠালেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আবওয়া কিংবা ওয়াদ্দান নামক স্থানে ছিলেন। তিনি হাদিয়া তাকে ফেরত পাঠালেন। পরে তার মুখমণ্ডলের বিষণ্ণতা লক্ষ্য করে বললেন, শোন ! আমরা ইহরাম অবস্থায় আছি, তা নাহলে তোমার হাদিয়া ফেরত দিতাম না।

হাদীস নং ২৪০৪

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, লোকেরা তাদের হাদিয়া পাঠাবার জন্য আয়িশা রা. -এর নির্ধারিত দিনের অপেক্ষা করত। এতে তারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করত।

হাদীস নং ২৪০৫

আদম ইবনে আবু ইয়াস রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে আব্বাসের খালা উম্মু হুফায়দ রা. একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে পনীর ঘি ও গুইসাপ হাদিয়া পাঠালেন। কিন্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু পনীর ও ঘি খেলেন আর গুইসাপ রুচি বিরুদ্ধ হওয়ার কারণে রেখে দিলেন। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দস্তরখানে (গু-সাপ) খাওয়া হয়েছে। যদি তা হারাম হতো তাহলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দস্তরখানে তা খাওয়া হত না।

হাদীস নং ২৪০৬

ইবরাহীম ইবনে মুনযির রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে কোন খাবার আনা হলে তিনি জানতে চাইতেন , এটা হাদিয়া না সাদকা? যদি বলা হত, সাদকা তাহলে সাহাবীদের তিনি বলতেন, তোমরা খাও। কিন্তু তিনি খেতেন না। আর যদি বলা হত হাদিয়া। তাহলে তিনিও হাত বাড়াতেন এবং তাদের সাথে খাওয়ায় শরীক হতেন।

হাদীস নং ২৪০৭

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমতে কিছু গোশত আনা হল এবং বলা হল যে, এটা আসলে বারীরার কাছে সাদকারূপে এসেছিল । তখন তিনি বললেন, এটা তার জন্য সাদকা আর আমাদের জন্য হাদিয়া।

হাদীস নং ২৪০৮

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি বারীরা রা.-কে (আযাদ করার উদ্দেশ্যে) খরিদ করার ইচ্ছা করলে তার মালিক পক্ষ ওয়ালার শর্তারোপ করল। তখন বিষয়টি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে আলাচিত হল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাকে খরিদ করে আযাদ করে দাও। কেননা যে আযাদ করবে, সেই ওয়ালা লাভ করবে। আয়িশা রা.-এর জন্য কিছু গোশত হাদিয়া পাঠানো হল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলা হল যে, এ গোশত বারীরাকে সাদকা করা হয়েছিল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা তার জন্য সাদকা আর আমাদের জন্য হাদিয়া। তাকে ইখতিয়ার দেওয়া হল। (রাবী) আবদুর রাহমান রহ. বলেন, তার স্বামী তখন আযাদ কিংবা গোলাম ছিল? শুবা রহ. বলেন, পরে আমি আবদুর রাহমান রহ.-কে তার স্বামী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, আমি জানি না, সে আযাদ ছিল না গোলাম ছিল।

হাদীস নং ২৪০৯

মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল আবুল হাসান রহ………..উম্মু আতিয়্যা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা রা. -এর ঘরে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের কাছে খাবার কিচু আছে কি ? তিনি বললেন, না, তবে সে বকরীর কিছু গোশত উম্মু আতিয়্যা পাঠিয়েছেন, যা আপনি তাকে সাদকা স্বরূপ পাঠিয়েছিলেন। তিনি বললেন, সাদকা তো যথাস্থানে পৌছে গিয়েছে (অর্থাৎ এটা তাকে সাদকা স্বরূপ পাঠিয়েছিলেন। তিনি বললেন, সাদকা তো যথাস্থানে পৌছে গিয়েছে (অর্থাৎ এটা এখন তার মালিকানায়, সুতরাং আমাদের জন্য সেটা সাদকা নয় হাদিয়া।

হাদীস নং ২৪১০

সুলাইমান ইবনে হারব রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা তাদের হাদিয়া পাঠাবার বিষয় আমার জন্য নির্ধারিত দিনের অপেক্ষা করত। উম্মু সালামা রা. বলেন, আমার সতিনগণ (এ বিষয় নিয়ে আমার ঘরে) একত্রিত হলেন। ফলে উম্মু সালামা রা. বিষয়টি তাঁর কাছে উত্থাপন করল, কিন্তু তিনি জাওয়াব দিলেন না।

হাদীস নং ২৪১১

ইসমাঈল রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ দুদলে বিভক্ত ছিলেন। একদলে ছিলেন আয়িশা, হাফসা, সাফিয়্যা ও সাওদা রা. অপর দলে ছিলেন উম্মু সালামা রা. সহ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্যান্য স্ত্রীগণ । আয়িশা রা.-এর প্রতি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিশেষ ভালোবাসার কথা সাহাবীগণ জানতেন। তাই তাদের মধ্যে কেউ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কিছু হাদিয়া পাঠাতে চাইলে তা বিলম্বিত করতেন। যেদিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা রা.-এর ঘরে অবস্থান করতেন সেদিন হাদিয়া দানকারী ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আয়িশা রা.-এর ঘরে তা পাঠিয়ে দিতেন। উম্মু সালামা রা.-এর দল তা নিয়ে আলোচনা করলেন। উম্মু সালামা রা.-কে তাঁরা বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে (এ বিষয়ে) আপনি আলাপ করুন। তিনি যেন লোকদের বলে দেন যে, যারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে হাদিয়া পাঠাতে চান, তারা যেন তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেন, যে স্ত্রীর ঘরেই তিনি থাকুননা কেন। উম্মু সালামা রা. তাদের প্রস্তাব নিয়ে তাঁর সাথে আলাপ করলেন। কিন্তু তিনি তাকে কোন জওয়াব দিলেন না। পরে সবাই তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, তিনি আমাকে কোন জবাব দিলেন না। তখন তাঁরা তাকে বললেন, আপনি তার সাথে আবার আলাপ করুন। (আয়িশা) বলেন, যেদিন তিনি তাঁর (উম্মু সালামার) ঘরে গেলেন, সেদিন তিনি আবার তাঁর কাছে আলাপ তুললেন। সেদিনও তিনি তাকে কিছু বললেন না। তারপর তারা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তখন তিনি বললেন, আমাকে তিনি কিছুই বলেননি। তখন তাঁরা বললেন, তিনি কোন জওয়াব না দেওয়া পর্যন্ত আপনি বলতে থাকুন। তিনি তার ঘরে গেলে আবার তিনি তাঁর কাছে সে প্রসঙ্গ তুললেন। এবার তিনি তাকে বললেন, আয়িশা রা.-এর ব্যাপার নিয়ে আমাকে কষ্ট দিও না। মনে রেখ, আয়িশা রা. ছাড়া আর কোন স্ত্রীর বস্ত্রাচ্ছাদনে থাকা অবস্থায় আমার উপর ওহী নাযিল হয়নি। (আয়িশা রা.) বলেন, একথা শুনে তিনি (উম্মু সালামা রা.) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনাকে কষ্ট দেওয়ার (অপরাধ) থেকে আমি আল্লাহর কাছে তাওবা করছি। তারপর সকলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা ফাতিমা রা.-এক এনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা সম্পর্কে ইনসাফের আবেদন জানাচ্ছেন। (ফাতিমা রা.) তাঁর কাছে বিষয়টি তুলে ধরলেন। তখন তিনি বললেন, প্রিয় কন্যা !আমি যা পছন্দ করি, তাই কি তুমি পছন্দ কর না? তিনি বললেন, অবশ্যই করি। তারপর তাদের কাছে গিয়ে তাদেরকে অবহিত করলেন। তাঁরা তাকে বললেন, তুমি আবার যাও। কিন্তু এবার তিনি যেতে অস্বীকার করলেন। তখন তারা যায়নাব বিনতে জাহাশ রা.-কে পাঠালেন তিনি তাঁর কাছে গিয়ে কঠোর ভাষা ব্যবহার করলেন, এবং বললেন, আপনার স্ত্রীগণ! আল্লাহর দোহাই দিয়ে ইবনে আবু কুহাফার (আবু বকর রা.)-এর কন্যা সম্পর্কে ইনসাফের আবেদন জানাচ্ছেন। এরপর তিনি গলার স্বর উচু করলেন। এমনকি আয়িশা রা.-কে জড়িয়েও কিছু বললেন। আয়িশা রা. সেখানে বসা ছিলেন। শেষ পর্যন্ত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা রা.-এর দিকে তাকিয়ে দেখছিলেন। তিনি কিছু বলেন কিনা। (রাবী উরওয়া রা.) বলেন, আয়িশা রা. যায়নাব রা.-এর কথার প্রস্তুতি বাদে কথা বলতে শুরু করলেন এবং তাকে চুপ করে দিলেন। আয়িশা রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আয়িশা রা.-এর দিকে তাকিয়ে বললেন, এ হচ্ছে আবু বকর রা. -এর কন্যা। আবু মারওয়ান গাসসনী রা. হিশাম এর সূত্রে উরওয়া রহ. থেকে বলেন, লোকেরা তাদের হাদিয়াসমূহ নিয়ে আয়িশা রা.-এর জন্য নির্ধারিত দিনের অপেক্ষা করত। অন্য সনদে হিশাম রহ. মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রাহমান ইবনে হারিস ইবনে হিশাম রহ. থেকে বর্ণিত, আয়িশা রা. বলেছেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ছিলাম, এমন সময় ফাতিমা রা. অনুমতি চাইলেন।

হাদীস নং ২৪১২

আবু মামার রহ……….আযরা ইবনে সাবিত আনসারী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদিন ছুমামা ইবনে আবদুল্লাহ রহ.-এর কাছে গেলাম, তিনি আমাকে সুগন্ধি দিলেন এবং বললেন, আনাস রা. কখনো সুগন্ধি দ্রব্য ফিরিয়ে দিতেন না । তিনি আরো বলেন, আর আনাস রা. বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুগন্ধি ফিরিয়ে দিতেন না।

হাদীস নং ২৪১৩

সাঈদ ইবনে আবু মারয়াম রহ……….মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা. ও মারওয়ান রা. থেকে বর্ণিত যে, তারা বলেন, হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধি দল যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলেন। তখন তিনি লোকদের সামনে ভাষণ দিতে দাঁড়িয়ে আল্লাহ পাকের যথাযোগ্য প্রশংসা করলেন। এরপর বললেন, তোমাদের ভাইয়েরা আমদের কাছে তাওবা করে (মুসলমান হয়ে) এসেছে। আমি তাদেরকে ফেরত দিয়ে তাদের যুদ্ধবন্দীদের দেওয়া সংগত মনে করছি। কাজেই তোমাদের মধ্যে যারা সন্তুষ্টচিত্তে করতে চায় তারা যেন তা করে। আর যে নিজের অংশ রেখে দিতে চায়, এভাবে প্রথম যে ফায় আল্লাহ আমাদের দান করবেন সেখান থেকে তার হিসসা আদায় করে দিব। (সে যেন তা করে) তখন সকলেই বললেন, আমরা আপনার সন্তুষ্টির জন্য তা করলাম।

হাদীস নং ২৪১৪

মুসাদ্দাদ রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিয়া কবুল করতেন এবং তার প্রতিদানও দিতেন। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, ওয়াকী ও মুহাযির রহ. হিশাম তার পিতা সূত্রে আয়িশা রা. থেকে উল্লেখ করেননি।

হাদীস নং ২৪১৫

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….নুমান ইবনে বাশীর রা. থেকে বর্ণিত যে, তার পিতা তাকে নিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হাযির হলেন এবং বললেন, আমি আমার এই ছেলেকে একটি গোলাম দান করেছি। তখন (তিনি) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার সব ছেলেকেই কি তুমি এরূপ দান করেছ। তিনি বললেন, না (তা করিনি) তিনি বললেন, তবে তুমি তা ফেরত নাও।

হাদীস নং ২৪১৬

হামীদ ইবনে উমর রহ……..আমির রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নুমান ইবনে বশীর রা.-কে মিম্বরের উপর বলতে শুনেছি যে, আমার পিতা আমাকে কিছু দান করেছিলেন। তখন (আমার মাতা) আমরা বিনতে রাওয়াহা রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সাক্ষী রাখা ছাড়া (এ দানে) সম্মত নই। তখন তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে হাযির হয়ে আরয করলেন, আমরা বিনতে রাওয়াহার গর্ভজাত আমার পুত্রকে কিছু দান করেছি। কিন্তু ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে আমকে বলেছে, আপনাকে সাক্ষী রাখতে। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার সব ছেলেকেই কি এ ধরনের দান করেছ? তিনি বললেন, না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে আল্লাহকে ভয় কর এবং আপন সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা কর (নুমান রা.) বলেন, এরপর তিনি ফিরে এসে তার দান প্রত্যাহার করলেন।

হাদীস নং ২৪১৭

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং তার কষ্ট বেড়ে গেল। তখন তিনি তাঁর স্ত্রীগণের কাছে আমার ঘরে সেবা-শুশ্রূষা লাভের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। তারা তাকে সম্মতি দিলেন। তারপর একদিন দু’ব্যক্তির উপর ভর করে বের হলেন, তখন তার উভয় কদম মুবারক মাটি স্পর্শ করছিল । তিনি আব্বাস রা. ও আরেক ব্যক্তির মাঝে ভর দিয়ে চলছিলেন। উবায়দুল্লাহ রহ. বলেন, আয়িশা রা. যা বললেন, তা আমি ইবনে আব্বাস রা. -এর কাছে আরয করলাম, তিনি তখন আমাকে বললেন, জানো, আয়িশা রা. যার নাম উল্লেখ করলেন, না তিনি কে ? আমি বললাম, না, (জানিনা) তিনি বললেন, তিনি হলেন আলী ইবনে আবু তালিব রা.।

হাদীস নং ২৪১৮

মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে তার দান ফেরত নেয়, সে ঐ কুকুরের ন্যায় যে বমি করে এরপর পুনরায় খায়।

হাদীস নং ২৪১৯

আবু আসিম রহ………আসমা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যুবায়ের রা. আমার কাছে যে ধন-সম্পদ রাখেন, সেগুলো ছাড়া আমার নিজস্ব কোন ধন-সম্পদ নেই। এমতাবস্থায় আমি কি (তা থেকে) সাদকা করব ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, সাদকা করতে পার। লুকিয়ে রাখবে না। তাহলে তোমার ক্ষেত্রে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) লুকিয়ে রাখা হবে।

হাদীস নং ২৪২০

উবায়দুল্লাহ ইবনে সঈদ রহ………..আসমা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : (আল্লাহর পথে) খরচ কর, আর হিসাব করতে যেওনা, তাহলে আল্লাহ তোমার বেলায় হিসাব করে দিবেন। লুকিয়ে রাখবে না, তবে আল্লাহও তোমার লুকিয়ে রাখবেন।

হাদীস নং ২৪২১

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….মায়মূনা বিনতে হারিস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুমতি না নিয়ে তিনি আপন বাদীকে আযাদ করে দিলেন। তারপর তার ঘরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবস্থানের দিন তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি জানেন আমি আমার বাদী আযাদ করে দিয়েছি? তিনি বললেন, তুমি কি তা করেছ? মায়মূনা রা. বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, শুনো! তুমি যদি তোমার মামাদেরকে এটা দান করতে তাহলে তোমার জন্য তা অধিক পুণ্যের হত। অন্য সনদে বাকর ইবনে মুযার রহ………কুরায়ব রহ. থেকে বর্ণিত যে, মায়মূনা রা. গোলাম আযাদ করেছেন।

হাদীস নং ২৪২২

হিব্বান ইবনে মূসা রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরের ইচ্ছা করলে স্ত্রীদের মাঝে কুরআর প্রক্রিয়া গ্রহণ করতেন । যার নাম আসত তিনি তাকে নিয়েই সফরে বের হতেন। এছাড়া প্রত্যেক স্ত্রীর জন্য একদিন একদিন এক রাত নির্ধারিত করে দিতেন। তবে সাওদা বিনতে যামআ রা. নিজের অংশের দিন ও রাত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী আয়িশা রা.-কে দান করেছিলেন। এর দ্বারা তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সন্তুষ্টি কামনা করতেন।

হাদীস নং ২৪২৩

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার দু’জন প্রতিবেশী আছে। এ দু’জনের কাকে আমি হাদিয়া দিব? তিনি বললেন, এ দুয়ের মাঝে যার দরজা তোমার অধিক নিকটবর্তী।

হাদীস নং ২৪২৪

আবুল ইয়ামান রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একজন সাহাবী সাআব ইবনে জাছছামা লাইছী রা.-কে বলতে শুনেছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তিনি একটি বন্য গাধা হাদিয়া দিয়েছিলেন। তিনি তখন ইহরাম অবস্থায় আবওয়াহ কিংবা ওয়াদ্দান নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তাই তিনি তা ফিরিয়ে দিলেন। সাআব রা. বলেন, যখন তিনি আমার চেহারায় ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করলেন, তখন তিনি বললেন, আমরা ইহরাম অবস্থায় আছি। এ কারণ ব্যতীত তোমার হাদিয়া ফিরিয়ে দেওয়ার কোন কারণ নেই।

হাদীস নং ২৪২৫

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….আবু হুমাইদ সাঈদী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযদ গোত্রের ইবনে উতবিয়া নামক এক ব্যক্তিকে সাদকা সংগ্রহের কাজে নিয়োগ করেছিলেন। তিনি ফিরে এসে বললেন, এগুলো আপনাদের (অর্থাৎ সাদকার মাল) আর এগুলো আমাকে হাদিয়া দেওয়া হয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে তার বাবার ঘরে কিংবা তার মায়ের ঘরে কেন বসে থাকল না? তখন সে দেখত, তাকে কেউ হাদিয়া দেয় কিনা? যার হাতে আমার প্রাণ, সেই সত্তার কসম, সাদকার মাল থেকে সামান্য পরিমাণও যে আত্মসাৎ করবে, সে তার কাধে করে কিয়ামতের দিন হাযির হবে। সে মাল যদি উট হয় তাহলে তা তরা আওয়াজে, আর যদি গাভী হয় তাহলে হাম্বা হাম্বা করে আর যদি বকরী হয় তাহলে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে (আওয়াজ করতে থাকবে)। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দু’হাত এতটুকু উত্তোলন করলেন যে, আমরা তাঁর উভয় বগলের শুভ্রতা দেখতে পেলাম। তিনি তিনবার বললেন, হে আল্লাহ ! আমি কি পৌছে দিয়েছি? হে আল্লাহ আমি কি পৌছে দিয়েছি?

হাদীস নং ২৪২৬

আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………জাবির রা. থেকে বর্ণিত ,তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, বাহরাইন থেকে মাল এসে পৌঁছলে তোমাকে আমি এভাবে তিনবার দিব, কিন্তু বাহরাইনের মাল আসার পূর্বেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাত হল। পরে আবু বকর রা.-এর নির্দেশে জনৈক ঘোষক ঘোষণা দিল; নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে কারো জন্য কোন প্রতিশ্রুতি থাকলে কিংবা কারো কোন ঋণ থাকলে সে যেন আমার কাছে আসে। এ ঘোষণা শুনে আমি তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, আমাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বাহরাইনের সম্পদ এলে কিছু) প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তখন তিনি আমাকে অঞ্জলী ভরে তিনবার দান করলেন।

হাদীস নং ২৪২৭

কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ…………মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার কিছু কবা (পোষাক বিশেষ) বন্টন করলেন। কিন্তু মাখরামাকে তা থেকে একটিও দিলেন না। মাখরামা রা. তখন (ছেলেকে) বললেন, প্রিয় বৎস ! আমাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে নিয়ে চল। (মিসওয়ার রা. বলেন) আমি তার সঙ্গে গেলাম, তখন তিনি আমাকে বললেন, যাও, ভেতরে গিয়ে তাকে আমার জন্য আহবান জানাও। (মিসওয়ার রা.) বলেন, এরপর আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আহবান জানালাম। তিনি বেরিয়ে এলেন। তখন তাঁর কাছে একটি করা ছিল। তিনি বললেন, এটা আমি তোমার জন্য হিফাযত করে রেখে দিয়েছিলাম। মাখরামা রা. সেটি তাকিয়ে দেখলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মাখরামা খুশী হয়ে গেছে।

হাদীস নং ২৪২৮

মুহাম্মদ ইবনে মাহবুব রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক লোক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এল এবং বলল, আমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছি। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তা কি? সে বলল, রমাযানে (দিবাভাগে) আমি স্ত্রী সহবাস করেছি। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি কোন গোলামের ব্যবস্থা করতে পারবে ? সে বলল, না, তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি একাধারে দু’মাস সিয়াম পালন করতে পারবে? সে বলল, না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে তুমি কি ষাটজন মিসকিনকে খাওয়াতে পারবে? সে বলল, না। বর্ণনাকারী বলেন, ইতিমধ্যে জনৈক আনসারী এক আরক খেজুর নিয়ে হাযির হল। আরক হল নির্দিষ্ট মাপের খেজুর পাত্র। তখন তিনি বললেন, যাও, এটা নিয়ে গিয়ে সাদকা করে দাও। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমাদের চেয়ে অধিক অভাবগ্রস্ত কাউকে সাদকা করে দিব? যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম কংকরময় মরুভূমির মধ্যবর্তী স্থানে আমাদের চেয়ে অভাবগ্রস্ত কোন ঘর নেই । শেষে তিনি বললেন, আচ্ছা, যাও এবং তা তোমার পরিবার-পরিজনদের খাওয়াও।

হাদীস নং ২৪২৯

আবদান রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধে তাঁর পিতা শহীদ হলেন। পাওনাদাররা তাদের পাওনা আদায়ের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করল। তখন আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে হাযির হয়ে তাকে এ বিষয়ে বললাম। তখন তিনি তাদেরকে আমার বাগানের খেজুর নিয়ে আমার পিতাকে অব্যাহতি দিতে বললেন। কিন্তু তারা অস্বীকার করল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বাগান তাদের দিলেন না এবং তাদের ফল কাটতেও দিলেন না। বরং তিনি বললেন, আগামীকাল ভোরে আমি তোমাদের কাছে যাব। জারিব রা. বলেন, পরদিন ভোরে তিনি আমাদের কাছে আগমন করলেন এবং খেজুর বাগানে ঘুরে ঘুরে ফলের বরকতের জন্য দু’আ করলেন। এরপর আমি ফল কেটে এনে তাদের পাওনা পরিশোধ করলাম। তারপরও সেই ফলের কিছু অংশ রয়ে গেল। পরে আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হাযির হয়ে তাকে সে সম্পর্কে অবহিত করলাম। তখন তিনি বসা ছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমরকে বললেন, শোন হে উমর ! তখন তিনিও সেখানে বসা ছিলেন। উমর রা. বললেন, আমরা কি আগে থেকেই জানিনা যে, আপনি আল্লাহর রাসূল ? আল্লাহর কসম, নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর রাসূল।

হাদীস নং ২৪৩০

ইয়াহইয়া ইবনে কাযআ রহ………..সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কিছু পানীয় হাযির করা হল। সেখান থেকে কিছু তিনি নিজে পান করলেন। তাঁর ডান পার্শ্বে ছিল এক যুবক আর বাম পার্শ্বে ছিলেন বয়োবৃদ্ধগণ। তখন তিনি যুবককে বললেন, তুমি আমাকে অনুমতি দিলে এদেরকে আমি দিতে পারি। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনার (বরকত) থেকে আমার প্রাপ্য হিসসার ব্যাপারে আমি অন্য কাউকে অগ্রাধিকার দিতে পারি না। তখন তিনি তার হাতে পাত্রটি সজোরে রেখে দিলেন।

হাদীস নং ২৪৩১

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সফরে আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে একটা উট বিক্রি করলাম। মদীনায় ফিরে এসে তিনি আমাকে বললেন, মসজিদে আস, দু’রাকআত সালাত আদায় কর। তারপর তিনি (উটের মূল্য) ওযন করে দিলেন রাবী শুবা রহ. বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছিলেন, তারপর তিনি আমাকে ওযন করে (উটের মূল্য) দিলেন এবং বলেন, তিনি ওযনে প্রাপ্যের অধিক দিলেন। হাররা যুদ্ধের সময় সিরিয়াবাসীরা ছিনিয়ে নেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমার কাছে ঐ মালের কিছু না কিছু অবশিষ্ট ছিল।

হাদীস নং ২৪৩২

কুতাইবা রহ……….সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কিছু পানীয় হাযির করা হল। তখন তাঁর ডানপাশে ছিল এক যুবক বামপাশে ছিল কতিপয় বৃদ্ধ লোক। তিনি যুবককে বললেন, তুমি কি আমাকে এই পানীয় এদের দেওয়ার অনুমতি দিবে? যুবক বলল, না, আল্লাহর কসম ! আপনার (বরকত) থেকে আমার প্রাপ্য অংশের ব্যাপারে আমি কাউকে অগ্রাধিকার দিব না। তখন তিনি পান পাত্র তার হাতে সজোরে রেখে দিলেন।

হাদীস নং ২৪৩৩

আবদুল্লাহ ইবনে উসমান ইবনে জাবালা রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এক ব্যক্তির কিছু ঋণ পাওনা ছিল। সাহাবীগণ তাকে কিছু করতে চাইলেন। তিনি তাদের বললেন, তাকে ছেড়ে দাও, পাওনাদারের কিছু বলার অধিকার আছে। তিনি তাদের আরও বললেন, তাকে এক বছর বয়সী একটি উট খরিদ করে দাও। সাহাবীগণ বললেন, আমরা তো তার দেওয়া এক বছর বয়সী উটের মত পাচ্ছি না, বরং তার চেয়ে ভালো উট পাচ্ছি। তিনি বললেন, তবে তাই কিনে তাকে দিয়ে দাও। কেননা,যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে, সে তোমাদের সর্বোত্তম ব্যক্তিদের অন্তর্ভূক্ত। কিংবা তিনি বলেছেন সে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম।

হাদীস নং ২৪৩৪

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………মারওয়ার ইবনে হাকাম রহ. ও মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাওয়াযিন গোত্রের লোকেরা ইসলাম গ্রহণের পর প্রতিনিধি হিসাবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এল এবং তাদের সম্পদ ও যুদ্ধবন্দী ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানাল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন, তোমরা দেখতে পাচ্ছ আমার সঙ্গে আরো লোক আছে। আমার নিকট সত্য কথা হল অধিক প্রিয়। তোমরা যুদ্ধবন্দী অথবা সম্পদ এ দুয়ের একটি বেছে নাও। আমি তো তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। (রাবী বলেন) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়েফ থেকে ফিরে প্রায় দশ রাত তাদের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। যখন তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটির যে কোন একটিই শুধু তাদের ফিরিয়ে দিবেন, তখন তারা বলল, তবে তো আমরা আমাদের বন্দী (স্বজন)-দেরই যে কোন পছন্দ করব। তারপর তিনি মুসলিমদের সামনে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করে বললেন, আম্মাবাদ। তোমাদের এই ভায়েরা তাওবা করে আমাদের কাছে এসেছে, আর আমি তাদেরকে তাদের বন্দী (স্বজনদের) ফিরিয়ে দেওয়া সংগত মনে করছি, কাজেই তোমাদের মধ্যে যারা সন্তুষ্টচিত্তে এ সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া পছন্দ করে, তারা যেন তা করে। আর যারা নিজেদের হিসসা পেতে পসন্দ করে এরূপভাবে যে, আল্লাহ আমাকে প্রথমে যে, ফায় সম্পদ দান করবেন, তা থেকে তাদের প্রাপ্য অংশ আদায় করে দিব, তারা যেন তা করে। সকলেই তখন বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমরা সন্তুষ্টচিত্তে তা মেনে নিলাম। তিনি তাদের বললেন, তোমরা ফিরে যাও। তোমাদের নেতারা তোমাদের মতামত আমার কাছে পেশ করবে। তারপর লোকেরা ফিরে গেল এবং তাদের নেতারা তাদের সাথে আলোচনা করল। পরে তারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ফিরে এসে তাকে জানাল যে, সন্তুষ্টচিত্তে অনুমতি দিয়েছি। হাওয়াযিনের বন্দী যুহরী রহ.-এর বক্তব্য।

হাদীস নং ২৪৩৫

মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দিষ্ট বয়সের একটি উট ধার নিয়েছিলেন। কিছুদিন পর উটের মালিক এসে তাগাদা দিল। সাহাবীগণও তাকে কি বললেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পাওনাদারদের কিছু বলার অধিকার আছে। তারপর তিনি তাকে তার (দেওয়া) উটের চেয়ে উত্তম উট পরিশোধ করলেন এবং বললেন, ভালভাবে ঋণ পরিশোধকারী ব্যক্তিই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম।

হাদীস নং ২৪৩৬

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সফরে তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলেন এবং তখন তিনি (ইবনে উমর) উমর রা. -এর একটি অবাধ্য উটে সাওয়ার ছিলেন। উটটি বারবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগে যাচ্ছিল। আর তা পিতা উমর রা. তাকে বলছিলেন, হে আবদুল্লাহ ! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগে আগে চলা কারো জন্য উচিত নয়। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, এটা আমার কছে বিক্রি কর। উমর রা. বললেন, এটাতো আপনার । তখন তিনি সেটা খরিদ করে বললেন, হে আবদুল্লাহ ! এটা (এখন থেকে) তোমার। কাজেই এটা দিয়ে তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পার।

হাদীস নং ২৪৩৭

আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর রা. মসজিদের দ্বারা প্রান্তে একজোড়া রেশমী বস্ত্র (বিক্রি হতে) দেখে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এটা যদি আপনি খরিদ করে নেন এবং তা জুমআর দিনে ও প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়ে পরিধান করতেন। তখন তিনি বললেন, এ তো সেই পরিধান করে, আখিরাতে যার কোন হিসসা নেই। পরে (কোন এক সময়) কিছু রেশমী জোড়া আসলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান থেকে উমর রা.-কে এক জোড়া দান করলেন। তখন উমর রা. বললেন, আপনি এটা আমাকে পরিধান করতে দিলেন অথচ (কয়েক দিন আগে) রেশমী কাপড় সম্পর্কে আপনি যা বলার বলেছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তো এটা তোমাকে পরিধান করার জন্য দেইনি। তখন উমর রা. তা মক্কায় বসবাসকারী তার এক মুশরিক ভাইকে দিয়ে দিলেন।

হাদীস নং ২৪৩৮

মুহাম্মদ ইবনে জাফর রহ……….ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন ফাতিমার ঘরে গেলেন। কিন্তু ভিতরে প্রবেশ না করে (ফিরে এলে) আলী রা. ঘরে এলে তিনি তাকে ঘটনা জানালেন। তিনি আবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বিষয়টি আরয করলেন। তখন তিনি বললেন, আমি তার দরজায় নকশা করা পর্দা ঝুলতে দেখেছি। দুনিয়ার চাকচিক্যের সঙ্গে আমার কি সম্পর্ক? আলী রা.-এর কাছে এসে ঘটনা খুলে বললেন। (সব শুনে) ফাতিমা রা. বললেন, তিনি আমাকে এ সম্পর্কে যা ইচ্ছা নির্দেশ দিন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অমুক পরিবারের অমুকের কাছে এটা পাঠিয়ে দাও, তাদের বেশ প্রয়োজন আছে।

হাদীস নং ২৪৩৯

হাজ্জাজ ইবনে মিনহাল রহ………আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে একজোড়া রেশমী কাপড় দিলেন। আমি তা পরিধান করলাম। তাঁর মুখমণ্ডলে অসন্তুষ্টির ভাব দেখতে পেয়ে আমি আমার (আত্মীয়) মহিলাদের মাঝে তা ভাগ করে দিয়ে দিলাম।

হাদীস নং ২৪৪০

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে একটি রেশমী জুব্বা হাদিয়া দেওয়া হল। অথচ তিনি রেশমী কাপড় ব্যবহারে নিষেধ করতেন। এতে সাহাবীগণ খুশী হলেন। তখন তিনি বললেন, সেই সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, জান্নাতে সাদ ইবনে মুআযের রুমালগুলো এর চেয়ে উৎকৃষ্ট। সাঈদ রহ. কাতাদা রহ.-এর মাধ্যমে আনাস রা. থেকে বর্ণনা করেন যে দুমার উকাইদর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হাদিয়া দিয়েছিলেন।

হাদীস নং ২৪৪১

আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল ওয়াহাব রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ইয়াহুদী মহিলা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে বিষ মিশানো বকরী নিয়ে এল। সেখান থেকে কিছু অংশ তিনি খেলেন এবং মহিলাকে হাযির করা হল। তখন বলা হল, আপনি কি একে হত্যার আদেশ দিবেন না? তিনি বললেন, না। আনাস রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (মুখ গহবরের) তালুতে আমি বরাবরই বিষক্রিয়ার আলামত দেখতে পেতাম।

হাদীস নং ২৪৪২

আবু নুমান রহ……..আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (কোন এক সফরে) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আমরা একশ ত্রিশজন লোক ছিলাম। সে সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন , তোমাদের কারো সাথে কি খাবার আছে ? দেখা গেল, এক ব্যক্তির সঙ্গে এক সা’ কিংবা তার কমবেশী পরিমাণ খাদ্য আছে। সে আটা গোলানো হল। তারপর দীর্ঘ দেহী এলোমেলো চুল বিশিষ্ট এক মুশরিক এক পাল বকরী হাকিয়ে নিয়ে এল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, বিক্রি করবে, না উপতার দিবে? সে বলল, না, বরং বিক্রি করব। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছ থেকে একটা বকরী কিনে নিলেন। সেটাকে যবেহ করা হল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বকরীর কলিজা ভুনা করার আদেশ দিলেন। আল্লাহর কসম ! একশ ত্রিশ জনের প্রত্যেককে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই কলিজার কিছু কিছু করে দিলেন। যে উপস্থিত ছিল, তাকে হাতে দিলেন; আর যে অনুপস্থিত ছিল তার জন্য তুলে রাখলেন। তারপর দুটি পাত্রে তিনি গোশত ভাগ করে রাখলেন। সবাই তৃপ্তির সাথে খেলেন। আর উভয় পাত্রে কিছু উদ্ধৃত্ত থেকে গেল। সেগুলো আমরা উটের পিঠে উঠিয়ে নিলাম। অথবা রাবী যা বললেন।

হাদীস নং ২৪৪৩

খালিদ ইবনে মাখলাদ রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর রা. জনৈক ব্যক্তিকে রেশমী কাপড় বিক্রি করতে দেখে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, এ জোড়াটি খরিদ করে নিন। জুমুআর দিন এবং যখন আপনার খিদমতে কোন প্রতিনিধি দল আসে, তখন তা পরিধান করবেন। তিনি বললেন, এসব তো তারই পরিধান করে, যাদের আখিরাতে কোন হিসসা নেই। পরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কয়েক জোড়া রেশমী কাপড় এল। সেগুলো থেকে একটি জোড়া তিনি উমর রা.-এর কাছে পাঠালেন। তখন উমর রা. বলেন, এটা আমি কিভাবে পরিধান করব। অথচ এ সম্পর্কে আপনি যা বলার বলেছেন। এতে তিনি বললেন, এটা তোমাকে আমি পরিধান করার জন্য দেইনি। হয় এটা বিক্রি করে দিবে, নয় কাউকে দিয়ে দিবে। তখন উমর রা. সেটা মক্কায় বসবাসকারী তাঁর এক (দুধ) ভাইকে ইসলাম গ্রহণের আগে হাদিয়া পাঠালেন।

হাদীস নং ২৪৪৪

উবাইদ ইবনে ইসমাঈল রহ……..আসমা বিনতে আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় আমার আম্মা মুশরিক অবস্থায় আমার কাছে এলেন। আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে ফাতওয়া চেয়ে বললাম তিনি আমার প্রতি খুবই আকৃষ্ট, এমতাবস্থায় আমি কি তার সাথে সদাচরণ করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি তোমার মায়ের সঙ্গে সদাচরণ করবে।

হাদীস নং ২৪৪৫

মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : দান করার পর যে তা ফিরিয়ে নেয়, সে ঐ ব্যক্তির মতই, যে বমি করে তা আবার খায়।

হাদীস নং ২৪৪৬

আবদুর রহমান ইবনে মুবারক রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : নিকৃষ্ট উপমা দেওয়া আমাদের জন্য শোভনীয় (তবু বলতে হয়) যে দান করে তা ফিরিয়ে নেয়, সে ঐ কুকুরের মত, যে বমি করে তা আবার খায়।

হাদীস নং ২৪৪৭

ইয়াহইয়া ইবনে কাযাআ রহ………উমর ইবনে খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তিকে আমি আমার একটি ঘোড়া আল্লাহর রাস্তায় আরোহণের জন্য দান করলাম। ঘোড়াটি যার কাছে ছিল, সে তার চরম অযত্ন করল। তাই সেটা আমি তার কাছ থেকে কিনে নিতে চাইলাম। আমার ধারণা ছিল যে, সে তা কম দামে বিক্রি করবে। এ সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, এক দিরহামের বিনিময়েও যদি সে তোমাকে তা দিতে রাযী হয় তবু তুমি তা কিনবে না। কেননা, সাদকা করার পর যে তা ফিরিয়ে নেয়, সে ঐ কুকুরের মত, যে বমি করে আবার তা খায়।

হাদীস নং ২৪৪৮

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ……..আবদুল্লাহ ইবনে উবায়দুল্লাহ ইবনে আবু মুলায়কা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে জুদআনের আযাদকৃত গোলাম সুহাইবের সন্তান দুটি ঘর ও একটি কামরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুহাইব রা.-কে দান করেছিলেন বলে দাবী জানান। (মদীনার গভর্নর মারওয়ান রহ. তখন বললেন, এ ব্যাপারে তোমাদের পক্ষে কে সাক্ষী দিবে? তারা বলল, ইবনে উমর রা. (আমাদের হয়ে সাক্ষী দিবেন) মারওয়ান রহ. তখন ইবনে উমর রা.-কে ডেকে পাঠালেন। তিনি এ মর্মে সাক্ষী দিলেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুহাইব রা.-কে দুটি ঘর ও একটি কামরা দান করেছিলেন। তাদের স্বপক্ষে ইবনে উমরের সাক্ষী অনুযায়ী মারওয়ান ফায়সালা করলেন।

হাদীস নং ২৪৪৯

আবু নুআঈম রহ……….জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমরা (বস্তু) সম্পর্কে ফায়সালা দিয়েছেন যে, যাকে দান করা হয়েছে সেই- মালিক হবে।

হাদীস নং ২৪৫০

হাফস ইবনে উমর রা. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : উমরা জায়েয। আতা রহ. বলেন, জাবির রা. আমাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদীস শুনিয়েছেন।

হাদীস নং ২৪৫১

আমদ রহ………কাতাদা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনাস রা.-কে বলতে শুনেছি, মদীনায় একবার শত্রুর আক্রমণের ভয় ছড়িয়ে পড়ল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আবু তালহা রা.-এর কাছ থেকে একটি ঘোড়া ধার নিলেন এবং তাঁতে সাওয়ার হলেন। ঘোড়াটির নাম ছিল মানূদব। তারপর (মদীনা টহল দিয়ে) ফিরে এসে তিনি বললেন, কিছুই তো দেখতে পেলাম না, তবে এই ঘোড়াটিকে আমি সমুদ্রের তরঙ্গের মত পেয়েছি।

হাদীস নং ২৪৫২

আবু নুআঈম রহ……….আয়মান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আয়িশা রা.-এর নিকট আমি হাযির হলাম। তাঁর গায়ে তখন পাঁচ দিরহাম মূল্যের মোটা কাপড়ের কামিজ ছিল। তিনি আমাকে বললেন, আমার এ বাদীটার দিকে চোখ তুলে একটু তাকাও, ঘরের ভিতরে এটা পরতে সে অপছন্দ করে। অথচ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় মদীনার মেয়েদের মধ্যে আমারই শুধু কামিজ ছিল। মদীনায় কোন মেয়েকে বিয়ের সাজে সাজাতে গেলেই আমার কাছে কাউকে পাঠিয়ে ঐ কামিজটি চেয়ে নিত (সাময়িক ব্যবহারের জন্য)।

হাদীস নং ২৪৫৩

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মানীহা হিসাবে অধিক দুধেল উটনী ও অধিক দুধেল বকরী কতইনা উত্তম, যা সকালে বিকালে, পাত্র ভর্তি দুধ দেয়।

হাদীস নং ২৪৫৪

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ ও ইসমাঈল রহ. হাদীসটি মালিক রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন, এতে তিনি বলেন, সাদকা হিসাবে কতইনা উত্তম (দুধেল উটনী, যা মানীহা হিসাবে দেওয়া হয়)।

হাদীস নং ২৪৫৫

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ…………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের সময় মুহাজিরদের হাতে কোন কিছু ছিল না। অন্য দিকে আনসারগণ ছিলেন জমি ও ভূসম্পত্তির অধিকারী। তাই আনসারগণ এই শর্তে মুহাজিরদের সাথে ভাগাভাগি করে নিলেন যে, প্রতি বছর তারা এর উৎপন্ন ফল ও ফসলের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ তাদের (আনসারদের) দিবেন আর তারা এ কাজে শ্রম দিবে ও দায়দায়িত্ব নিবে। আনাসের মা উম্মু সুলাইম রা. ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে আবু তালহার মা। আনাসের মা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে (ফল ভোগ করার জন্য) কয়েকটি খেজুর গাছ দিয়ে ছিলেন। আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলো তাঁর আযাদকৃত বাদী উসামা ইবনে যায়েদের মা উম্মু আয়মানকে দান করে দিয়েছিলেন। ইবনে শিহাব রহ. বলেন, আনাস রা. আমাকে বলেছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারে ইয়াহুদীদের বিরুদ্ধে লড়াই শেষে মদীনায় ফিরে এলে মুহাজিরগণ আনসারদেরকে তাদের অস্থায়ী দানের সম্পত্তি ফিরিয়ে দিলেন, যেগুলো ফল ও ফসল ভোগ করার জন্য তারা মুহাজিরদের দান করেছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর (আনাসের) মাকে তার খেজুর গাছগুলো ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর র উম্মু আয়মানকে ঐ গাছগুলোর পরিবর্তে নিজ বাগানের কিছু অংশ দান করলেন। আহমদ ইবনে শাবীব রহ. বলেন, আমার পিতা আমাদেরকে ইউনুসের সূত্রে এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন এবং حائطه এর স্থলে خالصه বলেছেন, যার অর্থ নিজ ভূমি থেকে।

হাদীস নং ২৪৫৬

মুসাদ্দাদ রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : চল্লিশটি স্বভাবের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হল দুধ পান করার জন্য কাউকে বকরী দেওয়া। কোন বান্দা যদি সাওয়াবের আশায় এবং পুরস্কার দানের প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস রেখে উক্ত চল্লিশ স্বভাবের যে কোন একটির উপরে আমল করে তবে আল্লাহ অবশ্যই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। হাসসান রহ. বলেন, দুধেল বকরী মানীহা দেওয়া ছাড়া আর যে কয়টি স্বভাব আমরা গণনা করলাম, সেগুলো হল সালামরে উত্তর দেওয়া, হাঁচি দাতার হাঁচির উত্তরে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা, (চলাচলের) পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো ইত্যাদি। কিন্তু আমরা পনেরটি স্বভাবের বেশী গণনা করতে সক্ষম হলাম না।

হাদীস নং ২৪৫৭

মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ………জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কিছু লোকের অতিরিক্ত ভূসম্পত্তি ছিল। তারা পরষ্পর পরামর্শ করে ঠিক করল যে এগুলো আমরা তিন ভাগের এক ভাগ, চার ভাগের এক ভাগ বা অর্ধেক হিসাবে ইজারা দিবে। একথা শুনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কারো অতিরিক্ত জমি থাকলে হয় সে নিজেই চাষ করবে, কিংবা তার ভাইকে তা (চাষ করতে( দিবে। আর তা না করতে চাইলে তা নিজের কাছেই রেখে দিবে। মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ…….আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক বেদুঈন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে হিজরত সম্পর্কে জানতে চাইল । তিনি তাকে বললেন, থাম ! হিজরতের ব্যাপারে সুকঠিন। (তার চেয়ে বরং বল) তোমার কি উট আছে? সে বলল, হ্যাঁ আছে। তিনি বললেন, তুমি কি এর সাদকা (যাকাত) আদায় করে থাক? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি দুধ পানের জন্য এগুলো মানীহা হিসাবে দিয়ে থাক সে বলল, হ্যাঁ। আবার তিনি প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা ! পানি পান করানোর (ঘাটে সমবেত অভাবী লোকদের মাঝে বিতরণের জন্য) উটগুলো দোহন করো কি ? সে বলল, হ্যাঁ। তখন তিনি ইরশাদ করলেন, এ যদি হয় তাহলে সাগরের ওপারে হলেও অর্থাৎ তুমি যেখানে থাক আমল করতে থাক। আল্লাহ তোমার আমলের প্রতিদানে কম করবেন না।

হাদীস নং ২৪৫৮

মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……….ইবনে আব্বসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার এক জমিতে গেলেন, ফসলগুলো আন্দোলিত হচ্ছিল । তিনি জানতে চাইলেন, কার (ফসলের) জমি? লোকেরা বলল, (অমুক ব্যক্তির কাছে থেকে) অমুক ব্যক্তি এটি ইজারা নিয়েছে। তিনি বললেন, জমিটার নির্দিষ্ট ভাড়া গ্রহণ না করে সে যদি তাকে সাময়িকভাবে তা দিয়ে দিত তবে সেটাই হতো তার জন্য উত্তম।

হাদীস নং ২৪৫৯

আবুল ইয়ামান রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বর্ণিত গ্রন্থ হতে বলেছেন, ইবরাহীম আ.(স্ত্রী) সারাকে সাথে নিয়ে হিজরত করলেন। (পথে এক জনপদের) লোকেরা সারার উদ্দেশ্যে হাজিরকে হাদিয়া দিলেন। তিনি ফিরে এসে (ইবরাহীমকে) বললেন, আপনি কি জেনেছেন; কাফিরকে আল্লাহ পরাস্ত করেছেন এবং সেবার জন্য একটি বালিকা দান করেছেন। ইবনে সীরীন রহ. আবু হুরায়রা রা.-এর সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তারপর (সেই কাফির) সারার সেবার উদ্দেশ্যে হাজেরাকে দান করল।

হাদীস নং ২৪৬০

হুমাইদী রহ……..উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি একটি লোককে আল্লাহর পথে বাহন হিসাবে একটি ঘোড়া দিলাম। কিন্তু পরে তা বিক্রি হতে দেখে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলেন, এটা খরিদ করো না এবং সাদকাকৃত মাল ফিরিয়ে নিও না।

 শাহাদাত অধ্যায় (২৪৬১-২৫১০)

হাদীস নং ২৪৬১

হাজ্জাজ রহ………ইবনে শিহাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার নিকট আয়িশা রা.-এর ঘটনা সম্পর্কে উরওয়া, ইবনে মুসায়্যাব, আলকামা, ইবনে ওয়াক্কাস এবং উবায়দুল্লাহ রা. আয়িশা রা. সম্পর্কে রটনা করেছিল। এদিকে ওয়াহী অবতরণ বিলম্বিত হল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী ও উসামা রা.-কে স্বীয় সহধর্মিণীকে পৃথক রাখার ব্যাপারে পরামর্শের জন্য ডেকে পাঠালেন। উসামা রা. তখন বললেন, আপনার স্ত্রী সম্পর্কে ভাল ছাড়া কিছুই আমরা জানি না। আর বারীরা রা. বললেন, তার সম্পর্কে একটি মাত্র কথাই আমি জানি, তা এই যে, অল্প বয়স হওয়ার কারণে পরিবারের লোকদের জন্য আটা খামির করার সময় তিনি ঘুমিয়ে পড়েন আর সেই ফাঁকে বকরী এসে তা খেয়ে ফেলে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কে আমাকে সাহায্য করবে ; যার জ্বালাতন আমার পারিবারিক ব্যাপারে আমাকে আঘাত হেনেছে? আল্লাহর কসম আমার সহধর্মিণী সম্পর্কে আমি ভাল ছাড়া অন্য কিছু জানি না। আর এমন এক ব্যক্তির কথা তারা বলে, যার সম্পর্কে আমি ভাল ছাড়া অন্য কিছু জানি না।

হাদীস নং ২৪৬২

আবুল ইয়ামান রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও উবাই ইবনে কাব আনসারী রা. সেই খেজুর বাগানের উদ্দেশ্যে বাগানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন, যেখানে ইবনে সাইয়াদ থাকত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (বাগানে) প্রবেশ করলেন, তখন তিনি সতর্কতার সাথে খেজুর শাখার আড়ালে আড়ালে চললেন। তিনি চাচ্ছিলেন, ইবনে সাইয়াদ তাকে দেখে ফেলার আগেই তিনি তার কোন কথা শুনে নিবেন। ইবনে সাইয়াদ তখন চাদর মুড়ি দিয়ে বিছানায় শায়িত ছিল। আর গুন গুন বা (রাবী বলেছেন) গুমগুমভাবে কিছু বলছিল। এ সময় ইবনে সাইয়াদের মা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খেজুর শাখার আড়ালে আড়ালে সতর্কতার সাথে আসতে দেখে ইবনে সাইয়াদকে বলল, হে সাফ‍! (নামের সংক্ষেপ) এই যে মুহাম্মদ ! তখন ইবনে সাইয়াদ চুপ হয়ে গেল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে (তার মা) যদি (কিছু না বলে) তাকে নিজের অবস্থায় ছেড়ে দিত, তাহলে (তার প্রকৃত অবস্থা আমাদের সামনে) প্রকাশ পেয়ে যেত।

হাদীস নং ২৪৬৩

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রিফাআ কুরাযীর স্ত্রী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, আমি রিফাআর স্ত্রী ছিলাম। কিন্তু সে আমাকে বায়েন তালাক দিয়ে দিল। পরে আমি আবদুর রহমান ইবনে যুবাইর কে বিয়ে করলাম। কিন্তু তার সাথে রয়েছে কাপড়ের আচলের মত নরম কিছু (অর্থাৎ সে পুরুষত্বহীন) তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে কি তুমি রিফাআর কাছে ফিরে যেতে চাও? না , তা হয় না, যতক্ষণ না তুমি তার মধুর স্বাদ গ্রহণ করবে আর সে তোমার মধুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আবু বকর রা. তখন তাঁর কাছে বসা ছিলেন। আর খালিদ ইবনে সাঈদ ইবনে আস রা. দ্বারপ্রান্তে প্রবেশের অনুমতির অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি বললেন, হে আবু বকর ! মহিলা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উচ্চস্বরে যা বলছে, তা কি আপনি শুনতে পাচ্ছেন না?

হাদীস নং ২৪৬৪

হিববান রহ……..উকবা ইবনে হারিছ রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি আবু ইহাব ইবনে আযীযের কন্যাকে বিয়ে করলেন। পরে জনৈক মহিলা এসে বলল, আমি তো উকবা এবং যাকে সে বিয়ে করেছে দু’জনকেই দুধ পান করিয়েছি। উকবা রা. তাকে বললেন, এটা তো আমার জানা নেই যে, আপনি আমাকে দুধ পান করিয়েছেন আর আপনিও এ বিষয়ে আমাকে অবহিত করেননি। এরপর আবু ইহাব পরিবারের কাছে লোক পাঠিয়ে তিনি তাদের কাছে ( এ সম্পর্কে) জানতে চাইলেন। তারা বলল, সে আমাদের মেয়েকে দুধ পান করিয়েছে বলে তো আমাদের জানা নেই। তখন তিনি মদীনার উদ্দেশ্যে সাওয়ার হলেন এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন এরূপ বলা হয়েছে তখন এটা কিভাবে সম্ভব? তখন উকবা রা. তাকে ত্যাগ করলেন। আর সে অন্য জনকে বিয়ে করল।

হাদীস নং ২৪৬৫

হাকাম ইবনে নাফি রহ………..উমর ইবনে খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় কিছু লোককে ওয়াহীর ভিত্তিতে পাকড়াও করা হত। এখন যেহেতু ওয়াহী বন্ধ হয়ে গেছে, সেহেতু এখন আমাদের সামনে তোমাদের যে ধরনের আমল প্রকাশ পাবে, সেগুলোর ভিত্তিতেই আমরা তোমাদের বিচার করব। কাজেই যে ব্যক্তি আমাদের সামনে ভাল প্রকাশ করবে তাকে আমরা নিরাপত্তা দান করব এবং কাছে টানব, তার অন্তরের বিষয়ে আমাদের কিছু করণীয় নেই। আল্লাহরই তার অন্তরের বিষয়ে হিসাব নিবেন। আর যে ব্যক্তি আমাদের সামনে মন্দ আমল প্রকাশ করবে, তার প্রতি আমরা তাদের নিরাপত্তা প্রদান করব না এবং সত্যবাদী বলে গ্রহণও করব না, যদিও সে বলে যে, তার অন্তর ভাল।

হাদীস নং ২৪৬৬

সুলাইমান ইবনে হারব রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখ দিয়ে এক জানাযা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। লোকটি সম্পর্কে সবাই প্রশংসা করছিলেন। তিনি বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেছে। পরে আরেকটি জানাযা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। লোকেরা তার সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করল কিংবা বর্ণনাকারী অন্য কোন শব্দ বলেছেন। তিনি বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেছে। তখন বলা হল ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এ ব্যক্তি সম্পর্কে বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেছে আবার ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেছে। তিনি বললেন, মানুষের সাক্ষ্য (গ্রহণযোগ্য) আর মুমিনগণ হলেন পৃথিবীতে আল্লাহর সাক্ষ্যদাতা।

হাদীস নং ২৪৬৭

মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………আবুল আসওয়াদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি মদীনায় আসলাম, সেখানে তখন মহামারী দেখা দিয়েছিল। এতে ব্যাপক হারে লোক মারা যাচ্ছিল। আমি উমর রা.-এর কাছে বসা ছিলাম। এমন সময় একটি জানাযা অতিক্রম করল এবং তার সম্পর্কে ভাল ধরনের মন্তব্য করা হল। তা শুনে উমর রা. বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেছে। এরপর আরেকটি জানাযা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল এবং তার সম্পর্কেও ভাল মন্তব্য করা হল। তা শুনে তিনি বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেছে। এরপর তৃতীয় জানাযা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল এবং তার সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করা হল। এবারও তিনি বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কি ওয়াজিব হয়ে গেছে, হে আমীরুল মুমিনীন! তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন বলেছিলেন, আমিও তেমন বললাম। (তিনি বলেছিলেন) কোন মুসলমান সম্পর্কে চার জন লোক ভালে সাক্ষ্য দিলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, আর তিনজন সাক্ষ্য দিল ? তিনি বললেন, তিনজন সাক্ষ্য দিলেও। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, দু’জন সাক্ষ্য দিলে ? তিনি বললেন, দু’জন সাক্ষ্য দিলেও। এরপর আমরা একজনের সাক্ষ্য সম্পর্কে তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করিনি।

হাদীস নং ২৪৬৮

আদম রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, আফলাহ রা. আমার সাক্ষাতের অনুমতি চাইলেন। আমি অনুমতি না দেওয়ায় তিনি বললেন, আমি তোমার চাচা, অথচ তুমি আমার সাথে পর্দা করছ? আমি বললাম তা কিভাবে? তিনি বললেন, আমার ভাইয়ের স্ত্রী, আমার ভাইয়ের দুধ (ভাইয়ের কারণে তার স্তনে হওয়া দুধ) তোমাকে পান করিয়েছে। আয়িশা রা. বলেন, এ সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, আফলাহ রা. ঠিক কথাই বলেছে। তাকে (সাক্ষাতের) অনুমতি দিও।

হাদীস নং ২৪৬৯

মুসলিম ইবনে ইবরাহীম রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হামযার কন্যা সম্পর্কে বলেছেন, সে আমার জন্য হালাল নয়। কেননা বংশ সম্পর্কের কারণে যা হারাম হয়, দুধ পানের সম্পর্কের কারণেও তা হারাম হয়, আর সে আমার দুধ ভাইয়ের কন্যা।

হাদীস নং ২৪৭০

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে অবস্থান করছিলেন। এমন সময় তিনি একজন লোকের আওয়াজ শুনতে পেলেন। সে হাফসা রা.-এর ঘরে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করছে। আয়িশা রা. বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এই যে একজন লোক আপনার ঘরে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করছে। তিনি বলেন, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে হাফসার অমুক দুধ চাচা বলে মনে হচ্ছে। তখন আয়িশা রা. বললেন, আচ্ছা আমার অমুক দুধ চাচা যদি জীবিত থাকত তাহলে সে কি আমার ঘরে প্রবেশ করতে পারত? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, পারত। কেননা, জন্ম সূত্রে যা হারাম, দুধ পানেও তা হারাম হয়ে যায়।

হাদীস নং ২৪৭১

মুহাম্মদ ইবনে কাছীর রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট তাশরীফ আনলেন, তখন আমর কাছে একজন লোক ছিল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে আয়িশা ! এ কে ? আমি বললাম, আমার দুধ ভাই। তিনি বললেন, হে আয়িশা ? কে তোমার সত্যিকার দুধ ভাই তা যাচাই করে দেখ নিও। কেননা, ক্ষুধার কারণে (অর্থাৎ শিশু বয়সে শরীআত অনুমোদিত মুদ্দতে) দুধ পানের ফলেই শুধু সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ইবনে মাহদী রহ. সুফিয়ান রহ. থেকে হাদীস বর্ণনায় মুহাম্মদ ইবনে কাছীর রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ২৪৭২

ইসমাঈল রহ………উরওয়া ইবনে যুবাইর রর. থেকে বর্ণিত যে, মক্কা বিজয়ের সময় জনৈক মহিলা চুরি করলে তাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে হাযির করা হল, তারপর তিনি তার সম্পর্কে নির্দেশ জারি করলে তার হাত কাটা হল। আয়িশা রা. বলেন, এরপর খাটি তাওবা করল এবং বিয়ে করল। তারপর সে (মাঝে মাঝে আমার কাছে) আসলে আমি তার প্রয়োজন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে পেশ করতাম।

হাদীস নং ২৪৭৩

ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………যায়েদ ইবনে খালিদ রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবিবাহিত ব্যভিচারী সম্পর্কে একশ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের নির্বাসনের দিয়েছেন।

হাদীস নং ২৪৭৪

আবদান রহ………নুমান ইবনে বাশীর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার মাতা আমার পিতাকে তার মালের কিছু অংশ আমাকে দান করতে বললেন। পরেতাকে দেওয়া ভাল মনে করলে আমাকে তা দান করেন। তিনি (আমার মাতা) তখন বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সাক্ষী করা ছাড়া আমি রাযী নাই। এরপর তিনি (আমার পিতা) আমার হাত ধরে আমাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে গেলেন, আমি তখন বালক মাত্র। তিনি বললেন, এর মা বিনতে রাওয়াহা এ-কে কিছু দান করার জন্য আমার কাছে আবদার জানিয়েছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সে ছাড়া তোমার আর কোন ছেলে আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আছে। নুমান রা. বলেন, আমার মনে পড়ে তিনি বলেছিলেন, আমাকে অন্যায় কাজে সাক্ষী করবেন না। আর আবু হারিয রহ. ইমাম শাবী রহ. সূত্রে বর্ণনা করেছেন, আমি অন্যায় কাজে সাক্ষী হতে পারি না।

হাদীস নং ২৪৭৫

আদম রহ……….ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার যুগের লোকেরাই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। তারপর তাদের নিকটবর্তী যুগের লোকেরা, এরপর তাদের নিকটবর্তী যুগের লোকেরা। ইমরান রা. বলেন, আমি বলতে পারছি না, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাঁর যুগের) পরে দুই যুগের কথা বলছিলেন, না তিন যুগের কথা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের পর এমন লোকদের আগমন ঘটবে, যারা খিয়ানত করবে, আমানতদারী রক্ষা করবে না। সাক্ষ্য দিতে না ডাকলেও তারা সাক্ষ্য দিবে। তারা মান্নত করবে কিন্তু তা পূর্ণ করবে না। তাদের মধ্যে মেদ বৃদ্ধি পাবে।

হাদীস নং ২৪৭৬

মুহাম্মদ ইবনে কাছীর রহ…….আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার যুগের লোকেরাই হচ্ছে সর্বোত্তম লোক, এরপর যারা তাদের নিকটবর্তী, এরপর যার তাদের নিকটবর্তী যুগের। এরপরে এমন সব লোক আসবে যারা কসম করার আগেই সাক্ষ্য দিবে, আবার সাক্ষ্য দেওয়ার আগে কসম করে বসবে। ইবরাহীম (নাখঈ) রহ. বলেন, আমাদেরকে সাক্ষ্য দিলে ও অঙ্গীকার করলে মারতেন।

হাদীস নং ২৪৭৭

আবদুল্লাহ ইবনে মুনীর রহ……..আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কবীরা গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, (সেগুলো হচ্ছে) আল্লাহর সাথে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। গুনদার, আবু আমির, বাহয ও আবদুস সামাদ রহ. শুবা রহ. থেকে হাদীস বর্ণনায় ওয়াহাব রহ.-এর অনুসরণ করেছেন।

হাদীস নং ২৪৭৮

মুসাদ্দাদ রহ……..আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন তিনবার বললেন, আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহগুলো সম্পর্কে অবিহিত করব না? সকলে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! অবশ্য বলুন। তিনি বললেন, (সেগুলো হচ্ছে) আল্লাহর সাথে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। তিনি হেলান দিয়ে বসেছিলেন; এবার সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেন, শুনে রাখ, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, এ কথাটি তিনি বার বার বলতে থাকলেন। এমনকি আমরা বলতে লাগলাম, আর যদি তিনি না বলতেন।

হাদীস নং ২৪৭৯

মুহাম্মদ ইবনে উবাইদ ইবনে মায়মূন রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লোককে মসজিদে (কুরআন) পড়তে শুনলেন। তিনি বললেন, আল্লাহ তাকে রহম করুন। সে আমাকে অমুক অমুক সূরার অমুক অমুক আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, যা আমি ভুলে গিয়েছিলাম। আব্বাদ ইবনে আবদুল্লাহ রহ. আয়িশা রা. থেকে এতটুকু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করলেন। সে সময় তিনি মসজিদে সালাত রত আব্বাদের আওয়াজ শুনতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আয়িশা ! এটা কি আব্বাদের কণ্ঠস্বর? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ আব্বাদকে রহম করুন।

হাদীস নং ২৪৮০

মালিক ইবনে ইসমাঈল রহ………আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিলাল রা. রাত থাকতেই আযান দিয়ে থাকে। সুতরাং ইবেন উম্মু মাকতুম রা. আযান দেওয়া পর্যন্ত তোমরা পানাহার করতে পার। অথবা তিনি বলেন, ইবনে উম্মু মাকতুমের আযান শোনা পর্যন্ত। ইবনে উম্মে মাকতুম রা. অন্ধ ছিলেন, ফলে ভোর হয়ে যাচ্ছে, লোকেরা একথা তাকে না বলা পর্যন্ত তিনি আযান দিতেন না।

হাদীস নং ২৪৮১

যিয়াদ ইবনে ইয়াহইয়া রহ……….মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে কিছু ‘কাবা’ (পোশাক বিশেষ) আসল। আমার পিতা মাখরামা রা. তা শুনে আমাকে বললেন, আমাকে তাঁর কাছে নিয়ে চল। সেখান থেকে তিনি আমাদের কিছু দিতেও পারেন। আমার পিতা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কণ্ঠস্বর চিনতে পারলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন একটি ‘কাবা’ সাথে করে বেরিয়ে এলেন, তিনি তার সৌন্দর্য বর্ণনা করছিলেন এবং বলছিলেন, আমি এটা তোমার জন্য লুকিয়ে রেখেছিলাম। আমি এটা তোমার জন্য লুকিয়ে রেখে ছিলাম।

হাদীস নং ২৪৮২

ইবনে আবু মারয়াম রহ……….আবু সাঈদ খুদরী রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহিলাদের সাক্ষ্য কি পুরুষদের সাক্ষ্যের অর্ধেক নয়? তারা (উপস্থিত মহিলারা) বলল, তাতো অবশ্যই অর্ধেক। তিনি বলেন, এটা মহিলাদের জ্ঞানের ত্রুটির কারণেই।

হাদীস নং ২৪৮৩

আবু আসিম রহ. ও আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….উকবা ইবনে হারিস রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি উম্মু ইয়াহইয়া বিনতে আবু ইহাবকে বিয়ে করলেন। তিনি বলেন, তখন কালো বর্ণের এক দাসী এসে বলল, আমি তো তোমাদের দু’জনকে দুধপান করিয়েছি। সে কথা আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উত্থাপন করলে তিনি আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আমি সরে গেলাম। পরে এসে বিষয়টি (আবার) তার কাছে উত্থাপন করলাম। তিনি তখন বললেন, (এ বিয়ে হতে পারে) কি ভাবে ? সে তো দাবী করছে যে, তোমাদের দু’জনকেই সে দুধ পান করিয়েছে। এরপর তিনি তাকে (উকবাকে) তার (উম্মু ইহাবের) সাথে বিবাহ সম্পর্ক ছিন্ন করতে বললেন।

হাদীস নং ২৪৮৪

আবু আসিম রহ………উকবা ইবনে হারিছ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক মহিলাকে আমি বিয়ে করলাম। কিন্তু আরেক মহিলা এসে বলল, আমি তো তোমাদের দু’জনকে দুগ্ধপান করিয়েছি, তখন আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে (বিষয়টি) উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, এমন কথা যখন বলা হয়েছে তখন আর তা (বিয়ে) কিভাবে সম্ভব ? তাকে তুমি পরিত্যাগ কর। অথবা তিনি অনুরূপ কিছু বললেন।

হাদীস নং ২৪৮৫

আবু রাবী সুলাইমান ইবনে দাউদ রহ……… নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়িশা রা.থেকে বর্ণিত, মিথ্যা অপবাদকারীরা যখন তাঁর সম্পর্কে অপবাদ রটনা করল এবং আল্লাহ তা থেকে তাঁর পরিত্রতা ঘোষণা করলেন। রাবীগণ বলেন, আয়িশা রা. বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে বের হওয়ার ইচ্ছা করলে স্বীয় সহধর্মিণীদের মধ্যে কুরআ ঢালার মাধ্যমে সফর সঙ্গীণী নির্বাচন করতেন। তাদের মধ্যে যার নাম বেরিয়ে আসত তাকেই তিনি নিজের সঙ্গে নিয়ে যেতেন। এক যুদ্ধে যাওয়ার সময় তিনি আমাদের মধ্যে কুরআ ঢাললেন, তাঁতে আমার নাম বেরিয়ে এল। তাই আমি তাঁর সঙ্গে (সফরে) বের হলাম। এটা পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার পরের ঘটনা। আমাকে হাওদার ভিতরে সাওয়ারীতে উঠানো হত, আবার হাওদার ভিতরে (থাকা অবস্থায়) নামানো হত। এভাবেই আমরা সফর করতে থাকলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ যুদ্ধ শেষ করে যখন প্রত্যাবর্তন করলেন এবং আমরা মদীনার কাছে পৌছে গেলাম তখন এক রাতে তিনি (কাফেলাকে) মনযিল ত্যাগ করার ঘোষণা দিলেন। উক্ত ঘোষণা দেওয়ার সময় আমি উঠে সেনাদলকে অতিক্রম করে গেলাম এবং নিজের প্রয়োজন সেরে হাওদায় ফিরে এলাম। তখন বুকে হাত দিয়ে দেখি আযফার দেশীয় সাদা কালো পাথরের তৈরী আমার একটা মালা ছিড়ে পড়ে গেছে। তখন আমি আমার মালার সন্ধানে ফিরে গেলাম, এবং সন্ধান কার্য আমাকে দেরি করিয়ে দিল। ওদিকে যারা আমার হাওদা উঠিয়ে দিত তারা তা উঠিয়ে যে উটে আমি সাওয়ার হতাম, তার পিঠে রেখে দিল। তাদের ধারণা ছিল যে, আমি হাওদাতেই আছি। তখনকার মেয়েরা হালকা পাতলা হত, মোটাসোটা হতা না। কেননা, খুব সামান্য খাবার তারা খেতে পেত। তাই হাওদায় উঠতে গিয়ে তার ভার তাদের কাছে অস্বাভাবিক বলে মনে হল না। তদুপরি সে সময় আমি অল্প বয়স্ক কিশোরী ছিলাম এবং তখন তারা হাওদা উঠিয়ে উট হাঁকিয়ে রওনা হয়ে গেলো। এদিকে সেনাদল চলে যাওয়ার পর আমি আমার মালা পেয়ে গেলাম, কিন্তু তাদের জায়গায় ফিরে এসে দেখি, সেখানে কেউ নেই। তখন আমি আমার জায়গায় এসে বসে থাকাই মনস্থ করলাম। আমার ধারণা ছিল যে, আমাকে না পেয়ে আবার এখানে তারা ফিরে আসবে। বসে থাকা অবস্থায় আমার দু’চোখে ঘুম নেমে এলে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সাফওয়ান ইবনে মুআত্তাল, যিনি প্রথমে সুলামী এবং পরে যাকওয়ানী হিসাবে পরিচিত ছিলেন, সেনাদলের পিছনে থেকে গিয়েছিলন। সকালের দিকে আমার অবস্থান স্থলের কাছাকাছি এসে পৌঁছলেন এবং একজন ঘুমন্ত মানুষের অবয়ব দেখতে পেয়ে আমার দিকে এগিয়ে এলেন। পর্দার বিধান নাযিলের আগে তিনি আমাকে দেখিছিলেন। যে সময় তিনি উট বসাচ্ছিলেন, সে সময় তার ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ শব্দে আমি জেগে গেলাম। তিনি উটের সামনের পা চেপে ধরলে আমি তাঁতে সাওয়ার হলাম। আর তিনি আমাকে নিয়ে সাওয়ারী হাকিয়ে চললেন। সেনাদল ঠিক দুপুরে যখন বিশ্রাম করছিল, তখন আমরা সেনাদলে পৌঁছলাম। সে সময় যারা ধ্বংস হওয়ার, তারা ধ্বংস হল। অপবাদ রটনায় যে নেতৃত্ব দিয়েছিল, সে হল (মুনাফিকের সরদার) আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল। আমরা মদীনায় উপনীত হলাম এবং আমি এসেই একমাস অসুস্থতায় ভুগলাম। এদিকে কিছু লোক অপবাদ রটনাকারীদেরই রটনা নিয়ে চর্চা করতে থাকল। আমার অসুস্থার সময় এ বিষয়টি আমাকে সন্দিহান করে তুলল যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তরফ থেকে সেই স্নেহ আমি অনুভব করছিলাম না, যা আমার অসুস্থতার সময় সচারাচর আমি অনুভব করতাম। তিনি শুধু ঘরে প্রবেশ করে সালাম দিয়ে বলতেন কেমন আছ? আমি সে বিষয়ের কিছুই জানতাম না। শেষ পর্যন্ত খুব দুর্বল হয়ে পড়লাম। (একরাতে) আমি ও উম্মু মিসতাহ প্রয়োজন সারার উদ্দেশ্যে ময়দান বের হলাম। আমরা রাতেই শুধু সে দিকে যেতাম। এ আমাদের ঘরগুলোর নিকটবর্তী স্থানে পায়খানা বানানোর আগের নিয়ম। জঙ্গলে কিংবা দূরবর্তী স্থানে প্রয়োজন সারার ব্যাপারে আমাদের অবস্থাটা প্রথম যুগের আরবদের মতই ছিল। যাই হোক, আমি এবং উম্মু মিসতাহ বিনতে আবু রূহম হেটে চলছিলাম। ইত্যবসরে সে তার চাদরে পা জড়িয়ে হোচট খেল এবং (পড়ে গিয়ে) বলল মিসতাহ এর জন্য দুর্ভোগ। আমি তাকে বললাম, তুমি খুব খারাপ কথা বলেছ। বদর যুদ্ধে শরীক হয়েছে, এমন এক লোককে তুমি অভিসাপ দিচ্ছ ! সে বলল, হে সরলমনা ! (তোমার সম্পর্কে) যে সব কথা তারা উঠিয়েছে, তা কি তুমি শুনোনি? এরপর অপবাদ রটনাকারীদেরই সব রটনা সম্পর্কে সে আমাকে অবহিত করল। তখন আমার রোগের উপর রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পেল। আমি ঘরে ফিরে আসার পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, কেমন আছো? আমি বললাম, আমাকে আমার পিতা-মাতার কাছে যাওয়অর অনুমতি দিন। তিনি (আয়িশা রা.) বলেন, আমি তখন তাদের (পিতা-মাতার) কাছ থেকে এ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাচ্ছিলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে অনুমতি দিলেন। আমি আমার পিতা-মাতার কাছে গেলাম। তারপর আমি মাকে বললাম, লোকেরা কি বলাবলি করে? তিনি বললেন, বেটি ব্যাপারটাকে নিজের জন্য হালকাভাবেই গ্রহণ কর। আল্লাহর কসম ! এমন সুন্দরী নারী খুব কমই আছে, যাকে তার স্বামী ভালোবাসে আর তার একাধিক সতীনও আছে ; অথচ ওরা তাকে উত্ত্যক্ত করে না। আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ ! লোকেরা সত্যি তবে এসব কথা রটিয়েছে? তিনি বলেন, ভোর পর্যন্ত সে রাত আমার এমনভাবে ভোর হল। পরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াহীর বিলম্ব দেখে আপন স্ত্রীকে বর্জনের ব্যাপারে ইবনে আবু তালিব ও উসামা ইবনে যায়েদকে ডেকে পাঠালেন। যাই হোক ; উসামা পরিবারের জন্য তাঁর ভালোবাসার প্রতি লক্ষ্য করে পরামর্শ দিতে গিয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আল্লাহর কসম (তাঁর সম্পর্কে) ভালো ছাড়া অন্য কিছু আমরা জানি না, আর আলী ইবনে আবু তালিব রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! কিছুতেই আল্লাহ আপনার পথ সংকীর্ণ করেননি। তাকে ছাড়া আরো অনেক মহিলা আছে। আপনি না হয় বাদীকে জিজ্ঞাসা করুন সে আপনাকে সত্য কথা বলবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বারীরাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন। হে বারীরা ! তুমি কি তার মধ্যে সন্দেহজনক কিছু দেখতে পেয়েছ? বারীরা বলল, আপনাকে যিনি সত্যসহ পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম করে বলছি, না তেমন কিছু দেখিনি, এই একটি অবস্থায়ই দেখেছি যে, তিনি অল্পবয়স্কা কিশোরী। আর তাই আটা-খামীর করতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সেই ফাঁকে বকরী এসে তা খেয়ে ফেলে। সে দিনই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মসজিদে) ভাষণ দিতে দাঁড়িয়ে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুলের ষড়যন্ত্র থেকে বাঁচার উপায় জিজ্ঞাসা করলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার পরিবারকে কেন্দ্র করে যে লোক আমাকে জ্বালাতন করেছে, তার মুকাবিলায় কে প্রতিকার করবে? আল্লাহর কসম, আমি তো আমার স্ত্রী সম্পর্কে ভালো ছাড়া অন্য কিছু জানি না। আর এমন ব্যক্তিকে জড়িয়ে তারা কথা তুলেছে, যার সম্পর্কে ভালো ছাড়া অন্য কিছু আমি জানি না আর সে তো আমার সাথে ছাড়া আমার ঘরে কখনও প্রবেশ করত না। তখন সাদ (ইবনে মুআয রা.) দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আল্লাহর কসম ! আমি তার প্রতিকার করব। যদি সে আউস গোত্রের কেউ হয়ে থাকে, তাহলে তার গর্দান উড়িয়ে দিব; আর যদি সে আমাদের খাযরাজ গোত্রীয় ভাইদের কেউ হয়, তাহলে আপনি তার ব্যাপারে আমাদের নির্দেশ দিবেন, আমরা আপনার নির্দেশ পালন করব। খাযরাজ গোত্রপতি সাদ ইবনে উবাদা রা. তখন দাঁড়িয়ে গেলেন। এর আগে তিনি ভালো লোকই ছিলেন। আসলে গোত্রপ্রীতির তাকে পেয়ে বসেছিল। তিনি বললেন, তুমি মিথ্যা বলছ। আল্লাহর কসম ! তুমি তাকে হত্যা করতে পারবে না, সে শক্তি তোমার নেই। তখনি উসায়িদ ইবনুল হুযাইর রা. দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন, তুমিই মিথ্যা বলছ। আল্লাহর কসম ! আমরা অবশ্যই তাকে হত্যা করে ছাড়ব। আসলে তুমি একজন মুনাফিক। তাই মুনাফিকদের পক্ষ হয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়েছ। এরপর আউস ও খাজরাজ উভয় গোত্রই উত্তেজিত হয়ে উঠল। এমনকি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে থাকা অবস্থায়ই তারা উদ্যত হল। তখন তিনি নেমে তাদের চুপ করালেন। এতে সবাই শান্ত হল আর তিনিও নীরবতা অবলম্বন করলেন। আয়িশা রা. বলেন, সেদিন সারাক্ষণ আমি কাঁদলাম, চোখের পানি আমর শুকালাম এবং ঘুমের সামান্য পরশও পেলাম না। আমার পিতা-মাতা আমার পাশে পাশেই থাকলেন। পুরো রাত দিন আমি কেঁদেই কাটালাম। আমার মনে হল, কান্না বুঝি আমার কলিজা বিদীর্ণ করে দিবে। তিনি বলেন, তারা (পিতা-মাতা) উভয়ে আমার কাছেই বসা ছিলেন, আর আমি কাঁদছিলাম। ইতিমধ্যে এক আনাসারী মহিলা ভিতরে আসার অনুমতি চাইল। আমি তাকে অনুমতি দিলাম। সেও আমার সঙ্গে বসে কাঁদতে শুরু করল। আমরা এ অবস্থায় থাকতেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবেশ করে (আমার কাছে) বসলেন, অথচ যে দিন থেকে আমার সম্পর্কে অপবাদ রটানো হয়েছে। সেদিন থেকে তিনি আমার কাছে বসেননি। এর মধ্যে একমাস কেটে গিয়েছিল। অথচ আমার সম্পর্কে তার কাছে কোন ওয়াহী নাযিল হল না। তিনি বলেন, এরপর হামদ ও সানা পাঠ করে তিনি বললেন, হে আয়িশা ! তোমার সম্পর্কে এ ধরনের কথা আমার কাছে পৌছেছে। তুমি নির্দোষ হলে আল্লাহ অবশ্যই তোমার নির্দোষিতার ঘোষণা করবেন। আর যদি তুমি কোন গুনাহ জড়িয়ে গিয়ে থাক, তাহলে আল্লাহর কাছে তাওবা ও ইসতিগফার কর। কেননা, বান্দা নিজের পাপ স্বীকার করে তাওবা করলে আল্লাহ তাওবা কবুল করেন। তিনি যখন তাঁর বক্তব্য শেষ করলেন, তখন আমর অশ্রু বন্ধ হয়ে গেল। এমনকি এক বিন্দু অশ্রুও আমি অনুভব করলাম না। আমার পিতাকে বললাম, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার তরফ থেকে জওয়াব দিন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, আমি বুঝে উঠতে পারি না, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কি বলব? আমি তখন অল্প বয়স্কা কিশোরী। কুরআনও খুব বেশী পড়িনি। তবুও আমি বললাম, আল্লাহর কসম ! আমার জানতে বাকী নেই যে, লোকেরা যা রটাচ্ছে, তা আপনারা শুনতে পেয়েছেন এবং আপনাদের মনে তা বসে গেছে, ফলে আপনারা তা বিশ্বাস করে নিয়েছেন। এখন যদি আমি আপনাদের বলি যে, আমি নিষ্পাপ আর আল্লাহ জানেন, আমি অবশ্যই নিষ্পাপ, তবু আপনারা আমার সে কথা বিশ্বাস করবেন না। আর যদি আপনাদের কাছে কোন বিষয় আমি স্বীকার করি, অথচ আল্লাহ জানেন আমি নিষ্পাপ তাহলে অবশ্যই আপনারা আমাকে বিশ্বাস করে নিবেন। আল্লাহর কসম, ইউসুফ আ.-এর পিতার ঘটনা ছাড়া আমি আপনাদের জন্য কোন দৃষ্টান্ত খুজে পাচ্ছি না। যখন তিনি বলেছিলেন, পূর্ণ ধৈর্য ধারণই আমার জন্য শ্রেয়। আর তোমরা যা বলছ সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহই আমার সাহায্যকারী। এরপর আমি আমার বিছানায় পার্শ্ব পরিবর্তন করে নিলাম। এটা আমি অবশ্যই আশা করছিলাম যে, আল্লাহ আমাকে নির্দোষ ঘোষণা করবেন। কিন্তু আল্লাহর কসম ! এ আমি ভাবিনি যে, আমার ব্যাপারে কোন ওয়াহী নাযিল হবে। কুরআনে আমার ব্যাপারে কোন কথা বলা হবে, এ বিষয়ে আমি নিজেকে উপযুক্ত মনে করি না। তবে আমি আশা করছিলাম যে, নিদ্রায় আল্লাহর রাসূল এমন কোন স্বপ্ন দেখবেন, যা আমাকে নির্দোষ প্রমাণ করবে। কিন্তু আল্লাহর কসম ! তিনি তাঁর আসন ছেড়ে তখনও উঠে যাননি এবং ঘরের কেউ বেরিয়েও যায়নি, এরই মধ্যে তাঁর উপর ওয়াহী নাযিল হওয়া শুরু হয়ে গেল এবং তিনি যে রূপ কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হতেন, সেরূপ অবস্থার সম্মুখীন হন। এমনকি সে মুহূর্তে শীতের দিনেও তার শরীর থেকে মুক্তার ন্যায় ফোটা ফোটা ঘাম ঝরে পড়ত। যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ওয়াহীর সে অবস্থা কেটে গেল, তখন তিনি হাসছিলেন। আর প্রথমে যে বাক্যটি তিনি উচ্চারণ করলেন, তা ছিল এই যে, আমাকে বললেন, হে আয়িশা ! আল্লাহর প্রশংসা কর। কেননা, তিনি তোমাকে নির্দোষ ঘোষণা করেছেন। আমার মাতা তখন আমাকে বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে যাও। (কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর) আমি বললাম, না আল্লাহর কসম ! আমি তাঁর কাছে যাব না এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো প্রশংসাও করব না। আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেন, যখন আমার সাফাই সম্পর্কে নাযিল হল তখন আবু বকর রা. সিদ্দীক রা. বললেন, আল্লাহর কসম ! নিকটাত্মীয়ার কারণে মিসতাহ ইবনে উসাসার জন্য তিনি যা খরচ করতেন, আয়িশা রা. সম্পর্কে এ ধরনের কথা বলার পর মিসতার জন্য আমি আর কখনও খরচ করব না। তখন আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করলেন : তোমাদের মধ্যে যারা নিয়ামতপ্রাপ্ত ও স্বচ্ছল, তারা যেন দান না করার কসম না করে…………আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মেহেরবান। তখন আবু বকর রা. বললেন, আল্লাহর কসম ! আমি অবশ্যই চাই আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন। এরপর তিনি মিসতাহ-কে যা দিতেন, তা পুনরায় দিতে লাগলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়নাব বিনতে জাহাশকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি বললেন, হে যায়নাব ! (আয়িশা সম্পর্কে) তুমি কি জান? তুমি কি জান ? তুমি কি দেখছ? তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি আমার কান, আমি আমার চোখের হিফাজত করতে চাই । আল্লাহর কসম তার সম্পর্কে ভালো ছাড়া অন্য কিছু আমি জানি না। আয়িশা রা. বলেন, অথচ তিনিই আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন। কিন্তু পরহেযগারীর কারণে আল্লাহ তাঁর হিফাযত করেছেন। আবু রাবী রহ…..আয়িশা ও আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণানা করেছেন। ফুলাইছ রহ……..কাসিম ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর রা. থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।

হাদীস নং ২৪৮৬

মুহাম্মদ ইবনে সালাম রহ………..আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তির প্রশংসা করল। তখন তিনি বললেন, তোমার জন্য আফসোস। তুমি তো তোমার সাথীর গর্দান কেটে ফেললে, তুমি তো তোমার সাথীর গর্দান কেটে ফেললে। তিনি একথা কয়েকবার বললেন, এরপর তিনি বললেন, তোমাদের কেউ যদি তার (মুসলমান) ভাইয়ের প্রশংসা করতেই চায় তাহলে তার (এভাবে) বলা উচিত, অমুককে আমি এরূপ মনে করি, তবে আল্লাহই তার সম্পর্কে অধিক জানেন। আর আল্লাহর প্রতি সোপর্দ না করে আমি কারো সাফাই পেশ করি না। তার সম্পর্কে ভালো কিছু জানা থাকলে বলবে, আমি তাকে এরূপ মনে করি।

হাদীস নং ২৪৮৭

মুহাম্মদ ইবনে সাব্বাহ রহ……..আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তির প্রশংসা করতে শুনে বললেন, তোমরা তাকে ধ্বংস করে দিলে কিংবা (বারীর সন্দেহ) বলেছেন, তোমরা লোকটির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে ফেললে।

হাদীস নং ২৪৮৮

উবায়দুল্লাহ ইবন সাঈদ (রঃ) …….. ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, উহুদ যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) এর কাছে তাকে (ইবন উমরকে) পেশ করলেন, তখন তিনি চৌদ্দ বছরের বালক। (ইবন উমর বলেন) তখন তিনি আমাকে (যুদ্ধে গমনের) অনুমতি দেননি। পরে খন্দকের যুদ্ধে তিনি আমাকে পেশ করলেন এবং অনুমতি দিলেন। তখন আমি পনের বছরের যুবক। নাফি (রঃ) বলেন, আমি খলীফা উমর ইবন আবদুল আযীযের কাছে গিয়ে এ হাদীস শোনালাম। (হাদীস শুনে) তিনি বললেন, এটাই হচ্ছে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্ত বয়সের সীমারেখা। এরপর তিনি তার গভর্নরদেরকে লিখিত নির্দেশ পাঠালেন যে, (সেনাবাহিনীতে) যাদের বয়স পনেরতে উপনীত হয়েছে তাদের জন্য যেন ভাতা নির্ধারণ করেন।

হাদীস নং ২৪৮৯

আলী ইবন আবদুল্লাহ (রঃ) ………. আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী (সাঃ) . বলেছেন, প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্কের উপর জুমু’আ দিবসের গোসল কর্তব্য।

হাদীস নং ২৪৯০

মুহাম্মদ (রঃ) ……. আবদুল্লাহ (ইবন মাস’উদ) (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের সম্পদ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে মিথ্যা শপথ করবে, (কিয়ামতের দিন) সে আল্লাহর সংগে সাক্ষাৎ করবে এমন অবস্থায় যে আল্লাহ তার উপর অত্যন্ত অসন্তুষ্ট। রাবী বলেন, তখন আশআস ইবন কায়স (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম। এ বর্ণনা আমার ব্যাপারেই। একখন্ড জমি নিয়ে (জনৈক) ইয়াহূদী ব্যক্তির সাথে আমার বিবাদ ছিল। সে আমাকে অস্বীকার করলে আমি তাকে নাবী (সাঃ) . এর কাছে হাযির করলাম। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) আমাকে বললেন, তোমার কি কোন প্রমাণ আছে ! আসআস (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, না (কোন প্রমাণ নেই।) তখন তিনি (উক্ত ইয়াহূদীকে) বললেন, তুমি কসম কর। আশআস (রাঃ) বলেন, (একথা শুনে) আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) ্ ! তবে তো সে (মিথ্যা) কসম করে আমার সম্পদ আত্মসাত করে ফেলবে। আশআস (রাঃ) বলেন, তখন আল্লাহ তা’আলা আয়াত নাযিল করেনঃ যারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা এবং নিজের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করে….. (৩:৭৭)

হাদীস নং ২৪৯১

আবূ নু’আই (রঃ) ……. ইবন আবূ মূলায়কা (রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবন আব্বাস (রাঃ) আমাকে লিখে জানিয়েছেন, নাবী (সাঃ) . ফায়াসালা দিয়েছেন যে, বিবাদীকে কসম করতে হবে।

হাদীস নং ২৪৯২

উসমান ইবন আবূ শায়বা (রঃ) ….. আবদুল্লাহ (ইবন মাস’উদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে এমন (মিথ্যা) কসম করে, যা দ্বারা মাল প্রাপ্ত হয়। সে (কিয়ামতের দিন) আল্লাহর সংগে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট, তারপর আল্লাহ্ তা’আলা উক্ত বর্ণনার সমর্থনে আয়াত নাযিল করেনঃ যারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করে……… তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক (আযাব)। (৩:৭৭) এরপর আশআস ইবন কায়স (রাঃ) আমাদের কাছে বেরিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, আবূ আবদুর রাহমান (রঃ) তোমাদের কি হাদীস শুনিয়েছেন আমরা তার বর্ণিত হাদীসটি তাকে শোনালাম। তিনি বললেন, তিনি (ইবন মাসউদ) ঠিকই বলেছেন। আমার ব্যাপারেই আয়াতটি নাযিল হয়েছে। কিছু একটা নিয়ে আমার সাথে এক (ইয়াহূদী) ব্যক্তির বিবাদ ছিল। আমরা উভয়ে নাবী (সাঃ) . এর নিকট আমাদের বিবাদ উত্থাপন করলাম। তখন আমি বললাম, তবে তো সে মিথ্যা কসম করতে কোন দ্বিধা করবে না। তখন নাবী (সাঃ) . বললেন, কেউ যদি এমন কসম করে, যার দ্বারা মাল প্রাপ্ত হয় এবং সে যদি উক্ত ব্যাপারে মিথ্যাবাদী হয়, তা হলে (কিয়ামতের দিন) সে আল্লাহর সংগে সাক্ষাৎ করবে এমন অবস্থায়, আল্লাহ তার উপরে অসন্তুষ্ট। এরপর আল্লাহ তা’আলা এ বর্ণনার সমর্থনে আয়াত আয়াত নাযিল করেন। একথা বলে তিনি এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন।

হাদীস নং ২৪৯৩

মুহাম্মদ ইবন বাশশার (রঃ) ……. ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হিলাল ইবন ইমাইয়া নাবী (সাঃ) . এর কাছে তার স্ত্রী বিরুদ্ধে শারীক ইবন সাহমা এর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ করলে নাবী (সাঃ) . বললেন, হয় তুমি প্রমাণ (সাক্ষী) পেশ করবে, নয় তোমার পিঠে (বেত্রাঘাতের) দন্ড আপতিত হবে। সে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) ্ আমাদের কেউ কি আপন স্ত্রী উপর অপর কোন পুুরুষকে দেখে প্রমাণ সংগ্রহের জন্য ছুটে যাবে? কিন্তু নাবী (সাঃ) . একই কথা (বার বার) বলতে থাকলেন, হয় প্রমাণ পেশ করবে, নয় তোমার পিঠে বেত্রাঘাতের দন্ড আপতিত হবে। তারপর তিনি লি’আন সংক্রান্ত হাদীস বর্ণনা করলেন।

হাদীস নং ২৪৯৪

আলী ইবন আবদুল্লাহ (রঃ) ……. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, তিন শ্রেণীর ব্যক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা কথা বলবেন না এবং (করুণার দৃষ্টিতে) তাদের প্রতি তাকাবেন না এবং তাদের পাপ মোচন করবেন না আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। প্রথম শ্রেণীর ব্যক্তি সে, যার কাছে অতিরিক্ত পানি রয়েছে রাস্তার পাশে, আর সে পানি থেকে মুসাফিরকে বঞ্চিত রাখে। আর এক শ্রেণীর ব্যক্তি সে, যে কারো আনুগত্যের বায়আত করে এবং একমাত্র দুনিয়ার গরযেই সে তার করে। ফলে চাহিদা মাফিক তাকে দিলে সে অনুগত থাকে, আর না দিলে অনুগত থাকে না। আর এক শ্রেণীর ব্যক্তি সে যে আসরের পর কারো সাথে পণ্য নিয়ে দামদর করে এবং আল্লাহর নামে মিথ্যা হলফ করে বলে যে, সে ক্রয় করতে এত মূল্য দিয়েছে আর তা শুনে ক্রেতা কিনে নেয়।

হাদীস নং ২৪৯৫

মূসা ইবন ইসমাঈল (রঃ) ……. ইবন মাস’উদ (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাঃ) . থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সম্পদ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে (মিথ্যা) কসম করবে (কিয়ামতের দিন) সে আল্লাহর সংগে সাক্ষাৎ করাবে এমন অবস্থায় যে আল্লাহ তার প্রতি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট থাকবেন।

হাদীস নং ২৪৯৬

ইসহাক ইবন নাসর (রঃ) …….. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদল লোককে নাবী (সাঃ) . হলফ করতে বললেন। তখন (কে কার আগে হলফ করবে এ নিয়ে) তাড়াহুড়া শুরু করে দিল। তখন তিনি কে (আগে) হলফ করবে, তা নির্ধারনের জন্য তাদের নামে লটারী করার নির্দেশ দিলেন।

হাদীস নং ২৪৯৭

ইসহাক (রঃ) ……… আবদুল্লাহ ইবন আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক লোক তার মালপত্র বাজারে এনে এবং হলফ করে বলল যে, এগুলো (খরিদ বাবদ) সে এত দিয়েছে, অথচ সে তত দেয়নি। তখন আয়াত নাযিল হলোঃ যারা নগণ্য মূল্যের বিনিময়ে আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা এবং নিজের শপথ বিক্রি করে……..। ইবন আবূ আওফা (রাঃ) বলেন, (দাম চড়ানোর মতলবে) যে ধোকা দেয়, সে মূলতঃ সুদখোর ও খিয়ানতকারী।

হাদীস নং ২৪৯৮

বিশর ইবন খালিদ (রঃ) …….. আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাঃ) নাবী (সাঃ) . থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি . বলেছেন, যে ব্যক্তি কারো অথবা তার ভাইয়ের অর্থ আত্মসাতের মতলবে মিথ্যা হলফ করবে, সে (কিয়ামতে) মহান আল্লাহর দেখা পাবে এমন অবস্থায় যে, তিনি তার উপর অত্যন্ত অসন্তুষ্ট। অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা উক্ত হাদীসের সমর্থনে কুরআনে এই আয়াত নাযিল করলেন ঃ পর্যন্ত। যারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা এবং নিজেদের শপথ তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করে, আখিরাথে তাদের কোন অংশ নেই (৩ঃ৭৭)। আর আল্লাহ্ কিয়ামতের দিন তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদের প্রতি (করুণার দৃষ্টিতে) তাকাবেন না এবং তাদেরকে (পাপ থেকে) বিশুদ্ধও করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। পরে আশআস (রাঃ) আমার সংগে দেখা করে জিজ্ঞাসা করলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) আজ তোমাদের কি হাদীস শুনিয়েছেন? আমি বললাম, এই এই (হাদীস শুনিয়েছেন) তিনি বললেন, আমার ব্যাপারেই আয়াতটি নাযিল হয়েছে।

হাদীস নং ২৪৯৯

ইসমাঈল ইবন আবদুল্লাহ (রঃ) ……. তালহা ইবন উবাদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক লোক রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) এর নিকট এসে তাকে ইসলাম (এক করণীয়) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে লাগল। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বললেন, দিনে রাতে পাচ ওয়াক্ত সালাত। সে বলল, আমার উপর আরও কিছু ওয়াজিব আছে? তিনি বললেন, না, নেই। তবে নফল হিসাবে পড়তে পার। তারপর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বললেন, আর রমাযন মাসের সিয়াম। সে জিজ্ঞাসা করল, আমর উপর এ ছাড়া আরও কি ওয়াজিব আছে? তিনি বললেন, না, নেই। তবে নফল হিসাবে (সিয়াম) পালন করতে পার। তারপর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) তাকে যাকাতের কথাও বললেন; সে জানোতে চাইল, আমার উপর এ ছাড়া আরও কিছু ওয়াজিব আছে? তিনি বললেন, না, নেই; তবে নফল হিসাবে (সাদকা) করতে পার। তারপর লোকটি এই বলে প্রস্থান করল, আল্লাহর কসম ! এতে আমি কোন কম বেশি করব না। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বললেন সত্য বলে থাকলে সে সফল হয়ে গেল।

হাদীস নং ২৫০০

মূসা ইবন ইসমাঈল (রঃ) …….. আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী (সাঃ) . বলেছেন, কারও হলফ করতে হলে সে যেন আল্লাহর নামেই হলফ করে, নতুবা চুপ করে থাকে।

হাদীস নং ২৫০১

আবদুল্লাহ ইবন মাসলাম (রঃ) …….. উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা আমার কাছে মামলা মোকদ্দমা নিয়ে আস। আর তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়ত প্রতিপক্ষের তুলনায় প্রমাণ (সাক্ষী) পেশ করার ব্যাপারে অধিক বাকপটু। তবে যেনে রেখ, বাকপটুতার কারণে যার অনুকূলে আমি তার ভাইয়ের প্রাপ্য হক ফায়সালা করে দেই, তার জন্য আসলে আমি জাহান্নামের অংশ নির্ধারন করে দেই। কাজেই, সে যেন তা গ্রহন না করে।

হাদীস নং ২৫০২

ইবরাহীম ইবন হামযা (রঃ) ……. আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ সুফিয়ান (রাঃ) আমাকে খবর দিয়েছেন যে, (রোম সম্রাট) হেরাক্লিয়াস তাকে বলেছিলেন, তোমাকে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি (নাবী (সাঃ) সাঃ) তোমাদের কি কি আদেশ করেন? তুমি বললে যে, তিনি তোমাদেরকে সালাতের, সত্যবাদিতার, পবিত্রতার, ওয়াদা পূরণের ও আমানত আদায়ের আদেশ দেন। হিরাক্লিয়াস বললেন, এটাই (অবশ্যই) নাবী (সাঃ) গণের সিফাত (গুণাবলী)

হাদীস নং ২৫০৩

কুতায়বা ইবন সাঈদ (রঃ) ……….. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি বলতে গেলে মিথ্যা বলে, আমানত রাখলে (তাতে) খিয়ানত কর, আর ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে।

হাদীস নং ২৫০৪

ইবরাহীম ইবন মূসা (রঃ) …… জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) . এর ওয়াতের পর আবূ বকর (রাঃ) এর কাছে (রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) ্ সাঃ) কর্তৃক নিয়োগকৃত বাহরাইনের শাসক) আলা ইবন হাযরামীর পক্ষ থেকে মালপত্র এসে পৌছল। তখন আবূ বরক (রাঃ) ঘোষণা করলেন, নাবী (সাঃ) . এর যিম্মায় কারো কোন ঋন (পাওনা) থাকলে কিংবা তার পক্ষ থেকে কোন ওয়াদা থাকলে সে যেন আমাদের কাছে এসে তা নিয়ে যায়। জাবির (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) আমাকে এরূপ, এরূপ এবং এরূপ দান করার ওয়াদা করেছিলেন। জাবির (রাঃ) তার দু’হাত তিনবার ছড়িয়ে দেখালেন। জাবির (রাঃ) বলেন, তখন তিনি (আবূ বকর) (রাঃ) আমার দু’হাতে গুণে গুণে পাচ শ দিলেন, আবার পাচ শ দিলেন, আবার পাচ’শ দিলেন।

হাদীস নং ২৫০৫

মুহাম্মদ ইবন আব্দুর রাহীম (রঃ) ……. সাঈদ ইবন জুবায়র (রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হীরাতের জনৈক ইয়াহূদী আমাকে প্রশ্ন করল, দুই মুদ্দতের কোনটি মূসা (আঃ) পূর্ণ করেছিলেন? আমি বললাম, আরবের কোন জ্ঞানীর কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা না করে আমি বলতে পারব না। পরে ইবন আব্বাসের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, মূসা (আঃ) দীর্ঘতর ও উত্তর সীমাই পূর্ণ করেছিলেন। আল্লাহর রাসূল . যা বলেন, তা করেন।

হাদীস নং ২৫০৬

ইয়াহইয়া ইবন বুকায়র (রঃ)………. আবদুল্লাহ্ ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে মুসলিম সমাজ ! কি করে তোমরা আহলে কিতাবদের নিকট জিজ্ঞাসা কর? অথচ আল্লাহ্ তার নাবী (সাঃ) র উপর যে, কিতাব অবর্তীণ করেছেন, তা আল্লাহ সম্পর্কিত নবতর তথ্য সম্বলিত, যা তোমরা তিলাওয়াত করছ এবং যার মধ্যে মিথ্যার কোন সংমিশ্রন নেই। তদুপরি আল্লাহ তোমাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে, আহলে কিতাবরা আল্লাহ যা লিখে দিয়েছিলেন, তা পরিবর্তন করে ফেলেছেন এবং নিজ হাতে সেই কিতাবের বিকৃতি সাধন করে তা দিয়ে তুচ্ছ মূল্যের উদ্দেশ্যে প্রচার করেছে যে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকেই অবতীর্ণ। তোমাদেরকে প্রদত্ত মহাজ্ঞান কি তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করার ব্যাপারে তোমাদের বাধা দিয়ে রাখতে পারে না ? আল্লাহর শপথ ! তাদের একজনকেও আমি কখনো তোমাদের উপর যা নাযিল হয়েছে সে বিষয়ে তোমাদের জিজ্ঞাসা করতে দেখিনি।

হাদীস নং ২৫০৭

উমর ইবন হাফস ইবন গিয়াস (রঃ) …….. নু’মান ইবন বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) . বলেছেন, আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখার ব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শন করা এবং তা লংঘনকারী ব্যক্তির উপমা হল সেই যাত্রীদল, যারা কুর’আর মাধ্যমে এক নৌযানে নিজেদের স্থান নির্ধারণ করে নিল। ফলে কারো স্থান হল এর নীচতলায় আর কারও হল উপরতলায়। যারা নীচতলায় ছিল তারা পানিনিয়ে উপর তালা লোকদের কাছ দিয়ে আসত। এতে তারা বিরক্তি প্রকাশ করল। তখন এক লোক কুড়াল নিয়ে নৌযানের নীচের অংশে ফুটো করতে লেগে গেল। এ দেখে উপর তলার লোকজন তাকে এসে জিজ্ঞাসা করল তোমার হয়েছে কি? সে বলল, আমাদের কারণে তোমরা কষ্ট পেয়েছ। অথচ আমারও পানি প্রয়োজন আছে। এ মুহুর্তে তারা যদি এর দু’হাত চেপে ধরে তাহলে তাকে যেমন রক্ষা করা হল তেমনি নিজেদেরও রক্ষা হল। আর যদি তাকে ছেড়ে দেয় তবে তাকে ধ্বংস করা হল এবং নিজেদেরও ধ্বংস করা হল।

হাদীস নং ২৫০৮

আবুল ইয়ামন (রঃ) …… উম্মুল আলা (রাঃ) নাুী একজন আনসারী মহিলা যিনি নাবী (সাঃ) . এর (হাতে) বায়আত হয়েছিলেন, তিনি বলেন, মুহাজিরদের বাসস্থান দানের জন্য আনসারগণ যখন কুর’আ নিক্ষেপ করলেন, তখন তাদের ভাগে উসমান উব্ন মাযউনের জন্য বাসস্থান দান নির্ধারিত হল। উম্মুল আলা (রাঃ) বলেন, সেই থেকে উসমান ইবন মাযউন (রাঃ) আমাদের এখানে বসবাস করতে থাকেন। এরপর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা তার সেবা শুশ্র“ষা করলাম। পরে তিনি যখন মারা গেলেন এবং আমরা তাকে কাফন পরালাম, তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) আমাদের এখানে আসলেন। আমি (উসমান ইবন মাযউনকে লক্ষ্য করে) বললাম, হে আবূ সায়িব ! তোমার প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। তোমার সম্পর্কে আমার সাক্ষ্য এই যে, আল্লাহ তোমাকে অবশ্য মর্যাদা দান করেছেন। নাবী (সাঃ) . তাকে বললেন, তোমাকে কে জানোাল যে, আল্লাহ তাকে মর্যাদা দান করেছেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) ্ ! আমার পিতা মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আমি জানিনা। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম। উসমানের কাছে তো মৃত্যু এসে গেছে, আমি তো তার জন্য কল্যাণের আশা করি। আল্লাহর কসম ! আমি আল্লাহর রাসূল হওয়া সত্ত্বেও জানিনা তার সাথে কি আচরণ করা হবে। তিনি (উম্মুল আলা) বলেন, আল্লাহর কসম, একথার পরে কখনো আমি কাউকে পূত পবিত্র বর্ণনা করি না। সে কথা আমাকে চিন্তায় ফেলে দিল। তিনি বলেন, পরে আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, উসমান (ইবন মাযউন রাঃ) এর জন্য একটা প্রস্রবণ প্রবহিত হচ্ছে। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) এর কাছে এসে তাকে সে খবর জানোালাম। তিনি বলেন, সেটা হচ্ছে তার নেক আমল।

হাদীস নং ২৫০৯

মুহাম্মদ মুকাতিল (রঃ) …….. আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) সফরের ইরাদা করলে তার স্ত্রীদের মাঝে কুর’আ নিক্ষেপ করতেন, যার নাম বের হত। তাকে সাথে নিয়েই তিনি সফরে বের হতেন। তিনি স্ত্রীদের প্রত্যেকের জন্যই দিন রাত বন্টন করতেন। তবে সাওদা বিনত যাম’আ (রাঃ) তার ভাগের দিনরাত নাবী (সাঃ) . এর স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) কে দান করে দিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) এর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তা করেছিলেন।

হাদীস নং ২৫১০

ইসমাঈল (রঃ) ……… আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, আযান ও প্রথম কাতারের মর্যাদা মানুষ যদি জানোত আর (প্রতিযোগিতার কারণে) কুর’আ নিক্ষেপ ছাড়া সে সুযোগ তারা না পেত, তাহলে কুর’আ নিক্ষেপ করত, তেমনি আগেভাগে জামা’আতে শরীক হওয়ার মর্যাদা যদি তারা জানোত তাহলে তারা সেদিকে ছুটে যেত। অনুরূপভাবে ঈশা ও ফজরের জামা’আতে শরীক হওয়ার মর্যাদা যদি তারা জানোত তা হলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা তাতে হাযির হত।

 

Exit mobile version