হাদীস নং ১৩০৪
মুআল্লা ইবনে আসাদ রহ…….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু বকর রা.-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কয় খণ্ড কাপড়ে তোমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কাফন দিয়েছেলেন ? আয়িশা রা. বললেন, তিন খণ্ড সাদা সাহুলী কাপড়ে, এগুলোতে (সেলাই কৃত) জামা ও পাগড়ি ছিল না। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, কোন দিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন ? আয়িশা রা. বলেন, সোমবার। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আজ কি বার ? তিনি (আয়িশা রা. বললেন, আজ সোমবার। তিনি (আবু বকর রা. বললেন, আমি আশা করি এখন থেকে আগত রাতের মধ্যে (আমার মৃত্যু হবে) এরপর অসুস্থ কালীন আপন পরিধেয় কাপড়ের প্রতি লক্ষ্য করে তাঁতে জাফরানী রং এর চিহ্ন দেখতে পেয়ে বললেন, আমার এ কাপড়টি ধুয়ে তার সাথে আরো দু’খণ্ড কাপড় বৃদ্ধি করে আমার কাফন দিবে। আমি (আয়িশা) বললাম, এটা (পরিধেয় কাপড়টি) পুরাতন। তিনি বললেন, মৃত ব্যক্তির চেয়ে জীবিতদের নতুন কাপড়ের প্রয়োজন অধিক। আর কাফন হল বিগলিত শবদেহের জন্য। তিনি মঙ্গলবার রাতের সন্ধ্যায় ইন্তিকাল করেন, প্রভাতের পূর্বেই তাকে দাফন করা হয়।
হাদীস নং ১৩০৫
সাঈদ ইবনে আবু মারয়াম রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, আমার জননীর আকস্মিক মৃত্যু ঘটে, আমার বিশ্বাস তিনি (মৃত্যুর পূর্বে) কথা বলতে সক্ষম হলে কিছু সাদাকা করে যেতেন। এখন আমি তাঁর পক্ষ হতে সাদকা করলে তিনি এর সওয়াব পাবেন কি ? তিনি (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন : হ্যাঁ (অবশ্যই পাবে)।
হাদীস নং ১৩০৬
ইসমাঈল ও মুহাম্মদ ইবনে হারব রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোগশয্যায় (স্ত্রীগণের নিকট অবস্থানের) পালার সময় কাল জানতে চাইতেন। আমার অবস্থান আজ কোথায় হবে ? আগামি কাল কোথায় হবে ? আয়িশা রা. এর পালা বিলম্বিত হচ্ছে বলে ধারণা করেই এ প্রশ্ন করতেন। (আয়িশা রা. বলেন) যে দিন আমার পালা আসল, সেদিন আল্লাহ তাকে আমার কণ্ঠদেশ ও বক্ষের মাঝে (হেলান দেওয়া অবস্থায়) রূহ কবয করলেন এবং ঘরে তাকে দাফন করা হয়।
হাদীস নং ১৩০৭
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ…….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তিম রোগশয্যায় বলেন, ইয়াহুদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর লা’নত হোক। কারণ, তারা নিজেদের নবীগণের কবরকে সিজদার স্থানে পরিণত করেছে। (রাবী উরওয়া বলেন) এরূপ আশংকা না থাকলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরকে (ঘরের বেষ্টনীতে না রেখে) খোলা রাখা হত। কিন্তু তিনি (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আশংকা করেন বা আশংকা করা হয় যে, পরবর্তীতে একে মসজিদে পরিণত করা হবে । রাবী হিলাল রহ. বলেন, উরওয়া আমাকে (আবু আমর) কুনিয়াতে ভূষিত করেন আর তখন পর্যন্ত আমি কোন সন্তানের পিতা হইনি।
হাদীস নং ১৩০৮
মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল রহ………..সুফিয়ান তাম্মার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর রাওযা উটের কুঁচের ন্যায় (উচু) দেখেছেন।
হাদীস নং ১৩০৯
ফারওয়া রহ…………উরওয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ওয়ালীদ ইবনে আবদুল মালিক এর শাসনামলে যখন (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রওযার) বেষ্টনী দেওয়াল ধসে পড়ে, তখন তাঁরা সংস্কার করতে আরম্ভ করলে একটি পা প্রকাশ পায়, তা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কদম মুবারক বলে ধারণা করার কারণে লোকেরা খুব ঘাবড়ে যায়। সনাক্ত করার মত কাউকে তারা পায় নি। অবশেষে উরওয়া রহ. তাদের বললেন, আল্লাহর কসম ! এ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা-এর কদম মুবারক নয় বরং এতো উমর রা.-এর পা। (ইমাম বুখারী রা. বলেন) হিশাম রহ. তার পিতা সূত্রে……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে তিনি আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা.-কে অসিয়্যত করেছিলেন, আমাকে তাদের (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর দু’ সাহাবী) পাশে দাফন করবে না। বরং আমাকে আমার সঙ্গিনী (অন্যান্য উম্মুল মু’মিনীন)-দের সাথে জান্নাতুল বাকীতে দাফন করবে। (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর পাশে সমাহিত হওয়ার কারণে আমি যেন বিশেষ প্রসংশিত না হই)।
হাদীস নং ১৩১০
কুতাইবা রহ………..আমর ইবনে মায়মুন আওদী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমর রা. কে দেখেছি, তিনি আপন পুত্র আবদুল্লাহ রা.-কে ডেকে বললেন, তুমি উম্মুল মুমিনীন আয়িশা রা.-এর নিকট গিয়ে বল, উমর ইবনে খাত্তাব রা. আপনাকে সালাম জানিয়েছেন এরপর আমাকে আপন সাথীদ্বয় (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বকর রা.)-এর পাশে দাফন করতে তিনি রাযী আছেন কি না ? আয়িশা রা. বললেন, আমি পূর্ব থেকেই নিজের জন্য এর আশা পোষণ করতাম, কিন্তু আজ উমর রা.-কে নিজের উপর প্রাধান্য দিচ্ছি। আবদুল্লাহ রা. ফিরে এলে উমর রা. তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি বার্তা নিয়ে এলে ? তিনি বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন ! তিনি আপনার জন্য অনুমতি প্রদান করেছেন। উমর রা. বললেন, সেখানে শয্যা লাভ করাই আমার কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মৃত্যুর পর আমার শবদেহ বহন করে (আয়িশা রা. এর নিকট উপস্থিত করে) তাকে সালাম জানিয়ে বলবে, উমর ইবনে খাত্তাব (পুনরায়) আপনার অনুমতি প্রার্থনা করেছেন। তিনি অনুমতি দিলে, সেখানে আমাকে দাফন করবে। অন্যথায় আমাকে মুসলমানদের সাধারণ কবরস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। তারপর উর রা. বলেন, এ কয়েকজন ব্যক্তি যাদের সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু পর্যন্ত সন্তুষ্ট ছিলেন, তাদের অপেক্ষা অন্য কাউকে আমি এ খিলাফতের (দায়িত্বপালনে) অধিক যোগ্য বলে মনে করি না। তাই আমার পর তাঁরা (তাদের মধ্য থেকে) যাকে খলীফা মনোনীত করবেন তিনি খলীফা হবেন। তোমরা সকলেই তাঁর আদেশ মেনে চলবে, তাঁর আনুগত্য করবে। এ বলে তিনি উসমান, আলী, তালহা , যুবাইর, আবদুর রহমান ইবনে আওফ ও সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা.-এর নাম উল্লেখ করলেন। এ সময়ে এক আনসারী যুবক উমর রা. এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন ! আল্লাহ প্রদত্ত সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আপনি ইসলামের ছায়াতলে দীর্ঘদিন অতিবাহিত করার সৌভাগ্য লাভ করেছেন যা আপনিও জানেন। এরপর আপনাকে খলীফা নিযুক্ত করা হয় এবং আপনি ন্যায়বিচার করেছেন। সর্বোপরি আপনি শাহাদাত লাভ করছেন। উমর রা. বললেন, হে ভাতিজা ! যদি তা আমার জন্য লাভ লোকসানের না হয়ে বরাবর হয়, তবে কতই না ভাল হবে। (তিনি বললেন) আমার পরবর্তী খলীফাকে ওয়াসিয়্যাত করে যাচ্ছি, তিনি যেন প্রথম দিকের মুহাজিরদের ব্যাপারে যত্নবান হন, তাদের হক আদায় করে চলেন, যেন তাদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেন। আমি তাকে আনসারদের সাথেও সদাচারের উপদেশ দেই, যারা ঈমান ও মদীনাকে আকড়ে ধরে রয়েছেন, যেন তাদের মধ্যকার সৎকর্মশীলদের কাজের স্বীকৃতি প্রদান করা হয় এবং তাদের মধ্যকার (লঘু) অপরাধীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। সর্বশেষে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দায়িত্বভুক্ত (সর্বস্তরের মু’মিনদের সম্পর্কে) সতর্ক করে দিচ্ছি যেন মুমিনদের সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা হয়, তাদের রক্ষার জন্য যুদ্ধ করা হয় এবং সাধ্যাতীত কোন দায়িত্ব তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া না হয়।