হাদিস ৫৭২
মুসাদ্দাদ (র.)……আবূ মিনহাল (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে আবূ বারযা আসলামী (রা.)-এর নিকট গেলাম। আমার পিতা তাঁকে জিজ্ঞাস করলেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) ফরয সালাতসমূহ কোন সময় আদায় করতেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্(সা.) – যুহরের সালাত যাকে তোমরা প্রথম সালাত বলে থাক, সূর্য ঢলে পড়লে আদায় করতেন। আর আসরের সালাত এমন সময় আদায় করতেন যে, আমাদের কেউ সূর্য সজীব থাকতেই মদীনার শেষ প্রান্তে নিজ পরিজনের কাছে ফিরে আসতে পারত। মাগরিব সম্পর্কে তিনি কি বলেছিলেন, তা আমি ভুলে গেছি। তারপর আবূ বারযা (রা.) বলেন, ইশার সালত একটু বিলম্বে আদায় করাকে তিনি পসন্দ করতেন। আর ইশার আগে ঘুমানো এবং পরে কথাবার্তা বাল তিনি অপসন্দ করতেন। আর এমন মুগূর্তে তিনি ফজরের সালাত শেষ করতেন যে, আমাদের যে কেউ তার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিকে চিনতে পারত। এ সালাতে তিনি ষাট থেকে একশ’ আয়াত তিলাওয়াত করতেন।
হাদিস ৫৭৩
আব্দুল্লাহ্ইব্ন সাব্বাহ্(র.)……কুর্রা ইব্ন খালিদ (র.) থকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা হাসান (বসরী (র.)) – এর অপেক্ষায় ছিলাম। তিনি এত বিলম্বে আসলেন যে, নিয়মিত সালাত শেষে চলে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসল। এরপর তিনি এসে বললেন, আমাদের এ প্রতিবেশীগণ আমাদের ডেকেছিলেন। তারপর তিনি বললেন, আনাস ইব্ন মালিক (রা.) বর্ণনা করেছেন, এক রাতে আমরা রাসূলুল্লাহ্(সা.)-এর অপেক্ষায় ছিলাম। এমন কি প্রায় অর্ধেক রাত হয়ে গেল, তখন এসে তিনি আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। এরপর আমাদের সম্বোধন করে তিনি বললেনঃ জেনে রাখ! লোকেরা সালাত আদায় করে ঘুমিয়ে পড়েছে, তবে তোমরা যতক্ষন সালাতের অপেক্ষায় ছিলে ততক্ষন সালাতেই রত ছিলে। হাসন (বসরী (র.)) বলেন, মানুষ যতক্ষন কল্যাণের অপেক্ষায় থাকে, ততক্ষন তারা কল্যাণেই নিরত থাকে। কুর্রা (র.) বলেন, এ উক্তি আনাস (রা.) কর্তৃক বর্ণিত রাসূলুল্লাহ্(সা.) এর হাদিসেরই অংশ।
হাদিস ৫৭৪
আবুল ইয়ামান (র.)……আব্দুল্লাহ্ইব্ন উমর (রা.) থকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্(সা.) একবার তাঁর শেষ জীবনে ইশার সালাত আদায় করে সালাম ফিরাবার পর বললেনঃ আজকের এ রাত সম্পর্কে তোমাদের অভিমত কি? আজ থেকে নিয়ে একশ’ বছরের মাথায় আজ যারা ভূ-পৃষ্ঠে আছে তাদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। কিন্তু সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ্(সা.)-এর ‘একশ’ বছরের’ এ উক্তি সম্পর্কে নানাবিধ জল্পনা-কল্পনা করতে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে রাসূলুল্লাহ্(সা.) বলেছেনঃ আজকে যারা জীবিত আছে তাদের কেউ ভূ-পৃষ্ঠে থাকবে না। এর দ্বারা তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে, এ শতাব্দী ঐ যুগের পরিসমাপ্তি ঘটাবে।
হাদিস ৫৭৫
মাহমূদ (র.)…….আবদুর-রাহমান ইব্ন আবূ বকর (রা.) থেকে বর্ণিত যে, আসহাবে সুফ্ফা ছিলেন খুবই দরিদ্র । (একদা) নবী (সা.) বললেনঃ যার কাছে দু’জনের আহার আছে সে যেন (তাঁদের থেকে) তৃতীয় জনকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। আর যার কাছে চারজনের আহারের সংস্থান আছে, সে যেন পঞ্চম বা ষষ্ঠজন সঙ্গে নিয়ে যায়। আবূ বকর (রা.) তিনজন সাথে নিয়ে আসেন এবং রাসূলুল্লাহ্(সা.) দশজন নিয়ে আসেন। আবদুর রাহমান (রা.) বলেন, আমাদের ঘরে এবং আবূ বাকরের ঘরে আমি, আমার পিতা ও মাতা (এই নিত জন সদস্য) ছিলাম। রাবী বলেন, আমি জানি না, তিনি আমার স্ত্রী এবং খাদিম একথা বলেছিলেন কি না? আবূ বাকর (রা.) রাসূলুল্লাহ্(সা.)-এর ঘরেই রাতের আহার করেন এবং ইশার সালাত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। ইশার সালাতের পর তিনি আবার (রাসূলুল্লাহ্(সা.) এর ঘরে) ফিরে আসেন এবং রাসূলুল্লাহ্(সা.) – এর রাতের আহার শেষ করা পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন। আল্লাহর ইচ্ছায় কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর বাড়ী ফিরলে তাঁর স্ত্রী তাঁকে বললেন, মেহমানদের কাছে আসতে কিসে আপনাকে ব্যস্ত রেখেছিল? কিংবা তিনি বলেছিলেন, (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) মেহমান থেকে। আবূ বকর (রা.) বললেন, এখনও তাদের খাবার দাওনি? তিনি বললেন, আপনি না আসা পর্যন্ত তারা খেতে অস্বীকার করেন। তাদের সামনে হাযির করা হয়েছিল, তবে তারা খেতে সম্মত হননি। তিনি (রাগান্বিত হয়ে) বললেন, ওরে বোকা এবং ভর্ৎসনা করলেন। আর (মেহমানদের) বললেন, খেয়ে নিন। আপনারা অস্বস্তিতে ছিলেন। এরপর তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি এ কখনই খাব না। আবদুর রাহমান (র.) বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা লুক্মা উঠিয়ে নিতেই নীচ থেকে তা অধিক পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছিল। তিনি বলেন, সকলেই পেট ভরে খেলেন। অথচ আগের চাইতে অধিক খাবার রয়ে গেল। আবূ বকর (রা.) খাবারের দিকে তাকিয়ে দেখেতে পেলেন তা আগের সমপরিমাণ কিংবা তার চাইতেও বেশী। তিনি তাঁর স্ত্রীকে বললেন, হে বনূ ফিরাসের বোন। এ কি? তিনি বললেন, আমার চোখের প্রশান্তির কসম! এতো এখন আগের চাইতে তিনগুন বেশী! আবূ বকর (রা.)-ও তা থেকে আহার করলেন এবং বললেন, আমার সে শপথ শয়তানের পক্ষ থেকেই হয়েছিল। এরপর তিনি আরও লুক্মা মুখে দিলেন এবং অবশিষ্ট খাবার নবী (সা.)-এর দরবারে নিয়ে গেলেন। ভোর পর্যন্ত সে খাদ্য রাসূলুল্লাহ্(সা.)-এর সেখানেই ছিল। এদিকে আমাদের ও অন্য একটি গোএের মাঝে সে সন্ধি ছিল তার সময়সীমা পূর্ন হয়ে যায়। (এবং তারা মদীনায় আসে) আমরা তাদের বারজনের নেতৃত্বে ভাগ করে দেই। তাদের প্রত্যকের সংগেই কিছু কিছু লোক ছিল। তবে প্রত্যকের সঙ্গে কতজন ছিল তা আল্লাহই জানেন। তারা সকলেই সেই খাদ্য থেকে আহার করেন। (রাবী বলেন) কিংবা আবদুর রাহমান (রা.) যে ভাবে বর্ণনা করেছেন।
আযান অধ্যায় (৫৭৬-৮৩১)
হাদিস ৫৭৬
ইমরান ইর্বন মাইসারা (র.)……আনাস (রা.) থকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (সালাতে সমবেত হওয়ার জন্য) সাহাবা-ই কিরাম (রা.) আগুন জ্বালানো অথবা নাকূস বাজানোর কথা আলোচনা করেন। আবার এগুলোকে (যথাক্রমে) ইয়াহূদী ও নাসারাদের প্রথা বলে উল্লেখ করা হয়। তারপর বেলাল (রা.)- কে আযানের বাক্য দু’বার করে ও ইকামতের বাক্য বেজোড় করে বলার নির্দেশ দেওয়া হয়।