হাদীস নং ১২৭৯
উসমান রহ…………আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা বাকীউল গারফাদ (কবরস্থানে) এক জানাযানায় উপস্থিত ছিলাম ছিলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে আগমন করলেন। তিনি উপবেশন করলে আমরাও তাঁর চারদিকে বসে পড়লাম। তাঁর হাতে একটি ছুড়ি ছিল। তিনি নীচের দিকে তাকিয়ে তাঁর ছুড়িটি দ্বারা মাটি খুদতে লাগলেন। এরপর বললেন : তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, অথবা বললেন : এমন কোন সৃষ্ট প্রাণী নেই, যার জন্য জান্নাত ও জাহান্নমে জায়গা নির্ধারিত করে দেওয়া হয়নি আর এ কথা লিখে দেওয়া হয়নি যে, সে দুর্ভাগা হবে কিংবা ভাগ্যবান। তখন এক ব্যক্তি আরয করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তাহলে কি আমরা আমাদের ভাগ্যলিপির উপর ভরসা করে আমল করা ছেড়ে দিব না ? কেননা, আমাদের মধ্যে যারা ভাগ্যবান তারা অচিরেই ভাগ্যবানদের আমলের দিকে ধাবিত হবে। আর যারা দুর্ভাগা তারা অচিরেই দুর্ভাগাদের আমলের দিকে ধাবিত হবে। তিনি বললেন :যারা ভাগ্যবান, তাদের জন্য সৌভাগ্যেরও আমল সহজ করে দেওয়া হয় আর ভাগ্যাহতদের জন্য দুর্ভাগ্যের আমল সহজ করে দেওয়া হবে। এরপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন: “কাজেই যে দান করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে………।(সূরা লাইল : ৫-১০)।
হাদীস নং ১২৮০
মুসাদ্দাদ রহ……….সাবিত ইবনে যাহহাক রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের (অনুসারী হওয়ার) ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা হলফ করে সে যেমন বলল, তেমনই হবে আর যে ব্যক্তি কোন ধারলো লোহা দিয়ে আত্মহত্যা করে তাকে তা দিয়েই জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে। হাজ্জাজ ইবনে মিনহাল রহ. বলেন, জারীর ইবনে হাযিম রহ. আমাদের হাদীস শুনিয়েছেন, আর তা আমরা ভুলে যাই নি এবং আমরা এ আশংকাও করিনি যে, জুনদাব রহ. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামে মিথ্যা বলেছেন। তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তির (দেহে) যখন ছিল, সে আত্মহত্যা করল। তখন আল্লাহ পাক বললেন, আমার বান্দা তার প্রাণ নিয়ে আমার সাথে তাড়াহুড়া করল। আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।
হাদীস নং ১২৮১
আবুল ইয়ামান রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) নিজেকে ফাঁস লাগাতে থাকবে আর যে ব্যক্তি বর্শার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) বর্শা বিঁধতে থাকবে।
হাদীস নং ১২৮২
ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………..উমর ইবনে খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (মুনাফিক সর্দার) আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল মারা গেলে তার জানাযার সালাতের জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আহবান করা হল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে) দাঁড়ালে আমি দ্রুত তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি ইবনে উবাই-র জানাযার সালাত আদায় করতে যাচ্ছেন ? অথচ সে অমুক অমুক দিন (আপনার শানে এবং ঈমানদারদের সম্পর্কে) এই এই কথা বলেছে। এ বলে আমি তার উক্তিগুলো গুনেগুনে পুনরাবৃত্তি করলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, উমর, সরে যাও। আমি বারবার আপত্তি করলে তিনি বললেন, আমাকে (তার সালাত আদায় করার ব্যাপারে) ইখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। কাজেই আমি তা গ্রহণ করলাম। আমি যদি জানতাম যে, সত্তর বারের অধিক মাগফিরাত কামনা করলে তাকে মাফ করা হবে তাহলে আমি অবশ্যই তার চাইতে অধিক বার মাফ চাইতাম । উমর রা. বলেন, এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযার সালাত আদায় করেন এবং ফিরে আসেন। এর কিছুক্ষণ পরেই সূরা বারাআতের এ দুটি আয়াত নাযিল হল: “ তাদের কেউ মারা গেলে আপনি কখনো তার জানাযার সালাত আদায় করবেন না। এমতাবস্থায় যে তারা ফাসিক। (আয়াত : ৮৪) রাবী বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে আমার ঐ দিনের দুঃসাহসিক আচরণ করায় আমি বিস্মিত হয়েছি। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই সমধিক অবগত।
হাদীস নং ১২৮৩
আদম রহ………..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক সাহাবী একটি জানাযার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাঁরা তার প্রশংসা করলেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : ওয়াজিব হয়ে গেল। একটু পরে তাঁরা অপর একটি জানাযা অতিক্রম করলেন। তখন তাঁরা তার নিন্দাসূচক মন্তব্য করলেন। (এবারও) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : ওয়াজিব হয়ে গেল। তখন উমর ইবনে খাত্তাব রা. আরয করলেন, (ইয়া রাসূলাল্লাহ) কি ওয়াজিব হয়ে গেল ? তিনি বললেন : এ (প্রথম ) ব্যক্তি সম্পর্কে তোমরা উত্তম মন্তব্য করলে, তাই তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল। আর এ (দ্বিতীয়) ব্যক্তি সম্পর্কে তোমরা নিন্দাসূচক মন্তব্য করায় তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেল। তোমরা তো পৃথিবীর বুকে আল্লাহর সাক্ষী।
হাদীস নং ১২৮৪
আফফান ইবনে মুসলিম রহ……..আবুল আসওয়াদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মদীনায় আসলাম, তখন সেখানে একটি রোগ (মহামারী আকারে) ছড়িয়ে পড়েছিল। আমি উমর ইবনে খাত্তাব রা.-এর কাছে বসা ছিলাম। এ সময় তাদের পাশ দিয়ে একটি জানাযা অতিক্রম করল। তখন জানাযার লোকটি সম্পর্কে প্রশংসাসূচক মন্তব্য করা হল। উমর রা. বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেল। এরপর অপর একটি (জানাযা) অতিক্রম করল, তখন সে লোকটি সম্পর্কেও প্রশংসাসূচক মন্তব্য করা হল। (এবারও) তিনি বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেল। এরপর তৃতীয় একটি (জানাযা) অতিক্রম করলে, লোকটি সম্বন্ধে নিন্দাসূচক মন্তব্য করা হল। তিনি বলেন, ওয়াজিব হয়ে গেল। আবুল আসওয়াদ রা. বলেন, আমি বললাম, হে আমীরুল মু’মিনীন ! কি ওয়াজিব হয়ে গেল ? তিনি বললেন, আমি তেমনই বলেছি, যেমন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, যে কোন মুসলমান সম্পর্কে চার ব্যক্তি ভাল হওয়ার সাক্ষ্য দিবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। উমর রা. বলেন ) তখন আমরা বলেছিলাম, তিন জন হলে ? তিনি বললেন, তিনজন হলেও। আমরা বললাম, দু’জন হলে ? তিনি বললেন, দু’জন হলেও। তারপর আমরা একজন সম্পর্কে আর তাকে জিজ্ঞাসা করিনি।