হাদীস নং ১২৭৩
সুলাইমান ইবনে হারব রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ইয়াহুদী বালক, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমত করত, সে একবার অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখার জন্য আসলেন। তিনি তার মাথার কাছে বসে তাকে বললেন : তুমি ইসলাম গ্রহণ কর, সে তখন তার পিতার দিকে তাকাল, সে তার কাছেই ছিল, পিতা তাকে বলল, আবুল কাসিম (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কুনিয়াত) এর কথা মেনে নাও, তখন সে ইসলাম গ্রহণ করল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় ইরশাদ করলেন। যাবতীয় প্রশংসা সে আল্লাহর, যিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিলেন।
হাদীস নং ১২৭৪
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এবং আমার মা (লুবাবাহ বিনতে হারিস) মুসতায আফীন (দুর্বল, অসহায়) এর অন্তর্ভূক্ত ছিলাম। আমি ছিলাম নাবালিগ শিশুদের মধ্যে আর আমার মা ছিলেন মহিলাদের মধ্যে।
হাদীস নং ১২৭৫
আবুল ইয়ামান রহ……..শুআইব রহ. থেকে বর্ণিত যে, ইবনে শিহাব রহ. বলেছেন , নবজাত শিশু মারা গেলে তাদের প্রত্যেকের জানাযার সালাত আদায় করা হবে। যদিও সে কোন ভ্রষ্টা মায়ের সন্তানও হয়। এ কারণে যে, সে সন্তানটি ইসলামী ফিতরাত (তাওহীদ) এর উপর জন্মলাভ করেছে। তার পিতামাতা ইসলামের দাবীদার হোক বা বিশেষভাবে তার পিতা। যদিও তার মা ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের অনুসারী হয়। নবজাত শিশু স্বরবে কেদে থাকলে তার জানাযার সালাত আদায় করা হবে। আর যে শিশু না কাঁদবে, তার জানাযার সালাত আদায় করা হবে না। কেননা, সে অপূর্ণাংগ সন্তান। কারণ, আবু হুরায়রা রা. হাদীস বর্ণনা করতেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : প্রতিটি নবজাতকই জন্মলাভ করে ফিতরাতের উপর। এরপর তার মা-বাবা তাকে ইয়াহুদী বা খ্রীষ্টান বা অগ্নিপূজারী রূপে গড়ে তোলে। যেমন, চতুষ্পদ পশু নিখুত বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাদের মধ্যে কোন কানকাটা দেখতে পাও ? (বরং মানুষেরাই তার নাক কান কেটে দিয়ে বা ছিদ্র করে তাকে বিকৃত করে থাকে। অনুরূপ ইসলামের ফিতরাতে ভূমিষ্ট সন্তানকে মা-বাবা তাদের শিক্ষা-দীক্ষা ও জীবন ধারায় প্রবাহিত করে ভ্রান্ত ধর্মী বানিয়ে ফেলে) পরে আবু হুরায়রা রা. তিলাওয়াত করলেন فطرة الله التي فطر الناس عليها الآية আল্লাহর দেওয়া ফিতরাতের অনুসরণ কর যে ফিতরাতের উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন……..। (সূরা রূম : ৩০)।
হাদীস নং ১২৭৬
আবদান রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : প্রত্যেক নবজাতকই ফিতরাতের উপর জন্মলাভ করে। এরপর তার পিতামাতা তাকে ইয়াহুদী, নাসারা বা মাজূসী রূপে গড়ে তোলে। যেমন, চতুষ্পদ পশু একটি পূর্ণাংগ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে কোন (জন্মগত) কানকাটা দেখতে পাও ? এরপর আবু হুরায়রা রা. তিলাওয়াত করেলন : فطرة الله التي فطر الناس عليها لا تبديل لخلق الله ذلك الدين القيم আল্লাহর দেওয়া ফিতরাতের অনুসরণ কর, সে ফিতরাতের উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, এটাই সরল সুদৃঢ় দীন। (সূরা রূম : ৩০)।
হাদীস নং ১২৭৭
ইসহাক রহ……সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু তালিব এর মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে আসলেন। তিনি সেখানে আবু জাহল ইবনে হিশাম ও আবদুল্লাহ ইবনে আবু উমায়্যা ইবনে মুগীরাকে উপস্থিত দেখতে পেলেন। (রাবী বলেন) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু তালিবকে লক্ষ্য করে বললেন : চাচাজান ! ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালিমা পাঠ করুন, তাহলে এর অসীলায় আমি আল্লাহর সমীপে আপনার জন্য সাক্ষ্য দিতে পারব। আবু জাহল ও আবু আবদুল্লাহ ইবনে আবু উমায়্যা বলে উঠল, ওহে আবু তালিব ! তুমি কি আবদুল মুত্তালিবের ধর্ম থেকে বিমুখ হবে ? এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে কালিমা পেশ করতে থাকেন, আর তারা দু’জনও তাদের উক্তি পুনরাবৃত্তি করতে থাকে। অবশেষে আবু তালিব তাদের সামনে শেষ কথাটি বলল, তা এই যে, সে আবদুল মুত্তালিবের ধর্মের উপর অবিচল রয়েছে, সে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলতে অস্বীকার করল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আল্লাহর কসম! তবুও আমি আপনার জন্য মাগফিরাত কামনা করতে থাকব, যতক্ষণ না আমাকে তা থেকে নিষেধ করা হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ নাযিল করেন : ما كان للنبي الآية নবীর জন্য সংগত নয়…….(সূরা তাওবা : ১১৩)।
হাদীস নং ১২৭৮
ইয়াহইয়া রহ……..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এমন দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যে কবর দুটির বাসিন্দাদের আযাব দেওয়া হচ্ছিল। তখন তিনি বললেন : এদের বিরত থাকা) দুরূহ ছিল। তাদের একজন পেশাবের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করত না আর অপরজন চুগলখুরী করে বেড়াত। এরপর তিনি খেজুরের একটি তাজা ডাল নিয়ে তা দু’ভাগ করলেন। তারপর প্রতিটি কবরে একটি করে পুঁতে দিলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি কি কেন এরূপ করলেন ? তিনি বললেন : ডাল দুটি না শুকান পর্যন্ত আশা করি তাদের আযাব হালকা করা হবে।