হাদীস নং ১২৬৭
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে হাওশাব রহ………ইবনে আব্বাস রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ পাক মক্কাকে হারাম (সম্মানিত বা নিষিদ্ধ এলাকা) সাব্যস্ত করেছেন। আমার পূর্বে তা, কারো জন্য হালাল (বৈধ ও উন্মক্ত এলাকা) ছিল না এবং আমার পরেও কারো জন্য তা হালাল হবে না। আমার জন্য একটি দিনের (মক্কা বিজয়ের দিন) কিছু সময় হালাল করা হয়েছিল। কাজেই তার ঘাস উৎপাটন করা যাবে না, তার গাছ কাটা যাবে না, শিকারকে তাড়িয়ে দেওয়া যাবে না। সেখানে পড়ে থাকা (হারানো) বস্তু উঠিয়ে নেওয়া যাবে না, তবে হারানো প্রাপ্তির ঘোষণা প্রদানকারীর জন্য (অনুমতি থাকবে)। তখন আব্বাস রা. বললেন, তবে ইযখির ঘাস, আমাদের স্বর্ণকারদের জন্য এবং আমাদের কবরগুলির জন্য প্রয়োজন। তখন তিনি বললেন : ইযখির ব্যতীত। আবু হুরায়রা রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, আমাদের কবর ও বাড়ী ঘরের জন্য। আর আবান ইবনে সালিহ রহ. সাফিয়্যা বিনত শায়বা রা. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি অনুরূপ বলতে শুনেছি আর মুজাহিদ রহ. ইবনে আব্বাস রা. সূত্রে বলেন, তাদের কর্মকার ও ঘর-বাড়ীর জন্য।
হাদীস নং ১২৬৮
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উবাই (মুনাফিক সরদাকে) কবর দেওয়ার পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার (কবরের) কাছে আসলেন এবং তিনি তাকে বের করার নির্দেশ দিলে তাকে বের করা হল। তখন তিনি তাকে তাঁর (নিজের) দু’ হাটুর উপরে রাখলেন, নিজের (মুখের) লালা (তার উপরে ফুকে) দিলেন এবং নিজের জামা তাকে পরিয়ে দিলেন। আল্লাহ সমধিক অবগত। সে আব্বাস রা. -কে একটি জামা পরতে দিয়েছিল। আর সুফিয়ান রহ. বলেন, আবু হুরায়রা রা. বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পরিধানে তখন দুটি জামা ছিল। আবদুল্লাহ (ইবনে উবাই)-এর পুত্র (আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ রহ.) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনার (পবিত্র) দেহের সাথে জড়িয়ে থাকা জামাটি আমার পিতাকে পরিয়ে দিন। সুফিয়ান রহ. বলেন, তারা মনে করেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জামা আবদুল্লাহ (ইবনে উবাই)-কে পরিয়ে দিয়েছিলেন, তার কৃত (ইহসানের) বিনিময় স্বরূপ।
হাদীস নং ১২৬৯
মুসাদ্দাদ রহ………জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন উহুদ যুদ্ধের সময় উপস্থিত হল, তখন রাতের বেলা আমার পিতা আমাকে ডেকে বললেন, আমার এমনই মনে হয় যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণের মধ্যে যারা প্রথমে শহীদ হবেন, আমি তাদের মধ্যে একজন হব। আর আমি আমার (মৃত্যুর) পরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত তোমার চাইতে অধিকতর প্রিয় কাউকে রেখে যাচ্ছি না। আমার জিম্মায় করয রয়েছে। তুমি তা পরিশোধ করবে। তোমার বোনদের ব্যাপারে সদুপদেশ গ্রহণ করবে। (জাবির রা. বলেন) পরদিন সকাল হলে (আমরা দেখলাম যে,) তিনিই প্রথম শহীদ । তাঁর কবরে আর একজন সাহাবীকে তাঁর সাথে দাফন করা হয়েছিল। কিন্তু পরে অন্য একজনের সাথে (একই) কবরে তাকে রাখা আমার মনে ভাল লাগল না। তাই ছয় মাস পর আমি তাকে (কবর থেকে) বের করলাম এবং দেখলাম যে, তাঁর কানে সামান্য চিহ্ন ব্যতীত তিনি সেই দিনের মতই (অক্ষত ও অবিকৃত) রয়েছেন, যে দিন তাকে (কবরে) রেখেছিলাম।
হাদীস নং ১২৭০
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার পিতার সাথে আরেকজন শহীদকে দাফন করা হলে আমার মন তাঁতে তুষ্ট হতে পারল না। অবশেষে আমি তাকে (কবর থেকে) বের করলাম এবং একটি পৃথক কবরে তাকে দাফন করলাম।
হাদীস নং ১২৭১
আবদান রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের শহীদগণের দু’ দু’জনকে একত্র করে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তাদের মধ্যে কুরআন সম্পর্কে কে অধিক জ্ঞাত ? দু’জনের কোন একজনের দিকে ইশারা করা হলে প্রথমে তাকে লাহদ কবরে রাখতেন। তারপর ইরশাদ করেন : কিয়ামতের দিন আমি তাদের জন্য সাক্ষী হব। তিনি রক্তমাখা অবস্থায়ই তাদের দাফন করার আদেশ করলেন এবং তাদের গোসলও দেননি।
হাদীস নং ১২৭২
আবদান রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, উমর রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সংগে একটি দলের অন্তর্ভূক্ত হয়ে ইবনে সাইয়াদ-এর (বাড়ীর) দিকে গেলেন। তাঁরা তাকে (ইবনে সাইয়াদকে) বনূ মাগালা দূর্গের পাশে অন্যান্য বালকদের সাথে খেলাধূলারত পেলেন। তখন ইবনে সাইয়াদ বালিগ হওয়ার নিকটবর্তী হয়েছিল। সে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আগমন অনুভব করার আগেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত ধরে ফেললেন। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে, আমি আল্লাহর রাসূল ? ইবনে সাইয়াদ তাঁর দিকে দৃষ্টি করে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি উম্মীদের রাসূল। এরপর সে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল, আপনি কি সাক্ষ্য দিবেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল ? তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন : আমি আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছি। তারপর তিনি তাকে (ইবনে সাইয়াদকে) জিজ্ঞাসা করলেন ? তুমি কি দেখে থাক ? ইবনে সাইয়াদ বলল, আমার কাছে সত্যবাদী ও মিথ্যাবাদী আগমন করে থাকে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেলেন : ব্যাপারটি তোমার কাছে বিভ্রান্তিকর করা হয়েছে। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন : আমি একটি বিষয়ে তোমার থেকে (আমার মনের মধ্যে) গোপন রেখেছি। (বলতো সেটি কি ?) ইবনে সাইয়াদ বলল, তা হচ্ছে ‘আদ-দুখখু’। তখন তিনি ইরশাদ করলেন : তুমি লাঞ্চিত হও ! তুমি কখনো তোমার (জন্য নির্ধারিত) সীমা অতিক্রম করতে পারবে না। তখন উমর রা. বললেন : যদি সে সেই (অর্থাৎ মাসীহ দাজ্জাল) হয়ে থাকে, তাহলে তাকে কাবু করার ক্ষমতা তোমাকে দেওয়া হবে না। আর যদি সে সেই (দাজ্জাল) না হয়, তাহলে তাকে হত্যা করার মধ্যে তোমার তোমার কোন কল্যাণ নেই। রাবী সালিম রহ. বলেন, আমি ইবনে উমর রা. -কে বলতে শুনেছি, এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং উবাই ইবনে কা’ব রা. ঐ খেজুর বাগানের দিকে গমন করলেন। যেখানে ইবনে সাইয়াদ ছিল। ইবনে সাইয়াদ তাকে দেখে ফেলার আগেই ইবনে সাইয়াদের কিছু কথা তিনি শুনে নিতে চাচ্ছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে একটি চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে দেখলেন। যার ভিতর থেকে তার গুনগুন আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। ইবনে সাইয়াদের মা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেল যে, তিনি খেজুর (গাছের) কান্ডের আড়ালে আত্মগোপন করে চলছেন। সে তখন ইবনে সাইয়াদকে ডেকে বলল, ও সাফ ! (এটি ইবনে সাইয়াদের ডাক) নাম। এই যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ইবনে সাইয়াদ লাফিয়ে উঠল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন : সে (ইবনে সাইয়াদের মা) তাকে (যথাস্থায়) থাকতে দিলে (ব্যাপারটি) স্পষ্ট হয়ে যেত। শুআইব রহ. তাঁর হাদীসে فرفضه বলেন. এবং সন্দেহের সাথে বলেন, رمرمة অথবা زمزمة এবং উকাইল রহ. বলেছেন, رمرمة আর মামার বলেছেন رمزة ।