হাদীস নং ১২২২
আমর ইবনে আলী রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (বীর-ই-মাউনার ঘটনায়) ক্বারী (সাহাবীগণের) শাহাদতের পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ফজরের সালাতে) একমাস যাবত কুনুত-ই-নাযিলা পড়েছিলেন। (রাবী বলেন) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমি আর কখনো এর চাইতে অধিক শোকাভিভূক্ত হতে দেখিনি।
হাদীস নং ১২২৩
বিশর ইবনে হাকাম রহ……..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু তালহা রা.-এর এক পুত্র অসুস্থ হয়ে পড়ল। রাবী বলেন সে মারা গেল। তখন আবু হালহা রা. বাড়ীর বাইরে ছিলেন। তাঁর স্ত্রী যখন দেখলেন যে, ছেলেটি মারা গেছে, তখন তিনি কিছু প্রস্তুতি নিলেন। এবং ছেলেটিকে ঘরের এক কোণে রেখে দিলেন। আবু তালহা রা. বাড়ীতে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ছেলের অবস্থা কেমন ? স্ত্রী জওয়াব দিলেন, তার আত্মা শান্ত হয়েছে এবং আশা করি সে এখন আরাম পাচ্ছে। আবু তালহা রা. ভাবলেন, তাঁর স্ত্রী সত্য বলেছেন। রাবী বলেন, তিনি রাত যাপন করলেন এবং ভোরে গোসল করলেন। তিনি বাইরে যেতে উদ্যত হলে স্ত্রী তাকে জানালেন, ছেলেটি মারা গেছে। এরপর তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সংগে (ফজরের) সালাত আদায় করলেন। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাদের রাতের ঘটনা জানালেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন : আশা করা যায়, আল্লাহ পাক তোমাদের এ রাতে বরকত দিবেন। সুফিয়ান রা. বলেন, এক ব্যক্তি বর্ণনা করেছেন, আমি (আবু তালহা রা. দম্পতির নয়জন সন্তান দেখেছি, তাঁরা সবাই কুরআন সম্পর্কে দক্ষ ছিলেন।
হাদীস নং ১২২৪
মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ……..আনাস রা. সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন বিপদের প্রথম অবস্থায়ই প্রকৃত সবর।
হাদীস নং ১২২৫
হাসান ইবনে আবদুল আযীয রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে আবু সায়ফ কর্মকারের কাছে গেলাম। তিনি ছিলেন (নবী-তনয়) ইবরাহীম রা.-এর দুধ সম্পর্কীয় পিতা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তুলে নিয়ে চুমু খেলেন এবং তাকে নাকে-মুখে লাগালেন। এরপর (আর একদিন) আমরা তার (আবু সায়ফ-এর) বাড়িতে গেলাম। তখন ইবরাহীম মুমূর্ষ অবস্থায়। এতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উভয় চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে লাগল। তখন আবদুর রহমান ইবনে আওফ রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আর আপনিও ? (কাঁদছেন ?) তখন তিনি বললেন : অশ্রু প্রবাহিত হয় আর হৃদয় হয় ব্যথিত। তবে আমরা মুখে তা-ই বলি যা আমাদের রব পছন্দ করেন। আর হে ইবরাহীম ! তোমার বিচ্ছেদে আমরা অবশ্যই শোকাভিভূত । মূসা রহ………আনাস রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেন।
হাদীস নং ১২২৬
আসবাগ রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস এবং আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-কে সাথে নিয়ে তাকে দেখতে আসলেন। তিনি তাঁর ঘরে প্রবেশ করে তাকে পরিজন-বেষ্টিত দেখতে পেলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, তার কি মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা বললেন, না । ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেদে ফেললেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কান্না দেখে উপস্থিত লোকেরা কাঁদতে লাগলেন। তখন তিনি ইরশাদ করলেন : শুনে রাখ ! নিঃসন্দেহে আল্লাহ পাক চোখের পানি ও অন্তরের শোক-ব্যথার কারণে আযাব দিবেন না। তিনি আযাব দিবেন এর কারণে (এ বলে) জিহবার দিকে ইশারা করলেন। অথবা এর কারণেই তিনি রহম করে থাকেন। আর নিশ্চয় মৃত ব্যক্তির জন্য তার পরিজনের বিলাপের কারণে তাকে আযাব দেওয়া হয় । উমর রা. এ (ধরণের কান্নার) কারণে লাঠি দ্বারা প্রহার করতেন, কংকর নিক্ষেপ করতেন বা মাটি ছুড়ে মারতেন।
হাদীস নং ১২২৭
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে হাওশাব রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (মুতার যুদ্ধক্ষেত্র থেকে) যায়েদ ইবনে হারিসা, জাফর এবং আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা.-এর শাহাদাত লাভের খবর পৌঁছলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে পড়লেন; তাঁর মধ্যে শোকের চিহ্ন প্রকাশ পেল। আমি (আয়িশা রা. দরওয়াযার ফাঁক দিয়ে ঝুঁকে তা দেখছিলাম। তখন এক ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে সম্বোধন করেন, (ইয়া রাসূলাল্লাহ! জাফর রা.-এর (পরিবারের) মহিলাগণের কান্নাকাটির কথা উল্লেখ করলেন। তিনি তাদের নিষেধ করার জন্য তাকে আদেশ করলেন। সেই ব্যক্তি চলে গেলেন। পরে এসে বললেন, আমি তাদের নিষেধ করেছি। তিনি উল্লেখ করলেন যে, তারা তাকে মানেনি। তিনি তাদের নিষেধ করার জন্য দ্বিতীয়বার তাকে নির্দেশ দিলেন। তিনি চলে গেলেন এবং আবার এসে বললেন, আল্লাহর কসম ! অবশ্যই তাঁরা আমাকে (বা বলেছেন আমাদেরকে) হার মানিয়েছে। আয়িশা রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তাদের মুখে মাটি ছুড়ে মারো। (আয়িশা রা. বলেন) আমি বললাম, আল্লাহ তোমার নাক ধুলি মিশ্রিত করুন। আল্লাহ কসম ! তোমাকে যে কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা করতে পারছো না আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বিরক্ত করতেও কসুর করনি।