হাদীস নং ১২০৭
ইসমাঈল রহ……….যায়নাব বিনতে আবু সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী উম্মে হাবীবা রা.-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে স্ত্রীলোক আল্লাহ এবং কিয়ামতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে তার পক্ষে কোন মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালন করা হালাল নয়। তবে স্বামীর জন্য চার মাস দশ দিন (হালাল)। তারপর যায়নাব বিনতে জাহাশ রা.-এর ভাইয়ের মৃত্যু হলে আমি তাঁর কাছে গেলাম। তখন তিনি কিছু সুগন্ধি আনিয়ে তা ব্যবহার করলেন। এরপর বললেন, সুগন্ধি ব্যবহারে আমার কোন প্রয়োজন নেই, তবে যেহেতু আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং কিয়ামতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে এমন কোন স্ত্রীলোকের পক্ষে কোন মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালন করা জায়েয নয়। তবে স্বামীর জন্য চার মাস দশ দিন (পালন করবে)।
হাদীস নং ১২০৮
আদম রহ……….আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যিনি কবরের পাশে কাঁদছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং সবর কর। মহিলাটি বললেন, আমার কাছ থেকে চলে যান। আপনার উপর তো আমার মত মসিবত আসেনি। তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে চিনতে পারেন নি। পরে তাকে বলা হল, তিনি তো নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তখন তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুয়ারে হাজির হলেন, তাঁর কাছে কোন পাহারাদার পেলেন না। তিনি আরয করলেন, আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। তিনি বললেন : সবর তো বিপদের প্রথম অবস্থাতেই।
হাদীস নং ১২০৯
আবদান ও মুহাম্মদ রহ………..উসামা ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কন্যা (যায়নাব) তাঁর খিদমতে লোক পাঠালেন যে, আমার এক পুত্র মুমুর্ষ অবস্থায় রয়েছে, তাই আপনি আমাদের এখানে আসুন। তিনি বলে পাঠালেন, (তাকে) সালাম দিবে এবং বলবে : আল্লাহরই অধিকারে যা কিছু তিনি নিয়ে যান আর তাঁরই অধিকারে যা কিছু তিনি দান করেন। তাঁর কাছে সবকিছুরই একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। কাজেই সে যেন সবর করে এবং সাওয়াবের আশায় থাকে। তখন তিনি তাঁর কাছে কসম দিয়ে পাঠালেন, তিনি যেন অবশ্যই আসেন। তখন তিনি দাঁড়ালেন এবং তাঁর সাথে ছিলেন সাদ ইবনে উবাদা, মুআয ইবনে জাবাল, উবাই ইবনে কাব, যায়েদ ইবনে সাবিত রা. এবং আরও কয়েকজন। তখন শিশুটিকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে তুলে দেওয়া হল । তখন তার জান ছটফট করছিল। রাবী বলেন, আমার ধারনা যে, তিনি এ বলেছিলেন, যেন তার শ্বাস মশকের মত (আওয়াজ হচ্ছিল)। আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দু’ চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছিল। সাদ রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! একি ? তিনি বললেন : এ হচ্ছে রহমত, যা আল্লাহ পাক তাঁর বান্দার অন্তরে আমানত রেখেছেন। আর আল্লাহ পাক তো তাঁর দয়ালু বান্দাদের প্রতিই দয়া করেন।
হাদীস নং ১২১০
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এক কন্যা (উম্মে কুলসুম রা.) এর জানাযায় উপস্থিত হলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের পাশে বসেছিলেন। আনাস রা. বলেন, তখন আমি তাঁর চোখ থেকে পানি ঝরতে দেখলাম। রাবী বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে, যে আজ রাতে স্ত্রী সহবাস করেনি ? আবু তালহা রা. বললেন, আমি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তাহলে তুমি (কবরে) অবতরণ কর। রাবী বলেন, তখন তিনি তাঁর কবরে অবতরণ করলেন।
হাদীস নং ১২১১
আবদান রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে উবাইদুল্লাহ ইবনে আবু মুলাইকা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কায় উসমান রা.-এর এক কন্যার ওফাত হল। আমরা সেখানে (জানাযায়) শরীক হওয়ার জন্য গেলাম। ইবনে উমর রা. এবং ইবনে আব্বাস রা.ও সেখানে হাজির হলেন। আমি তাদের দু’ জনের মাঝে বসা ছিলাম, অথবা তিনি বলেছেন, আমি তাদের একজনের পাশে গিয়ে বসলাম, পরে অন্যজন এসে আমার পাশে বসলেন। (কান্নার আওয়ায শুনে) ইবনে উমর রা. আমর ইবনে উসমানকে বললেন, তুমি কেন কাঁদতে নিষেধ করছ না ? কেননা, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মৃত ব্যক্তিকে তার পরিজনদের কান্নার কারণে আযাব দেওয়া হয়। তখন ইবনে আব্বাস রা. বললেন, উমর রা.ও এ রকম কিছু বলতেন। এরপর ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করলেন, উমর রা.-এর সাথে মক্কা থেকে ফিরছিলাম। আমরা বায়দা (নামক স্থানে) পৌঁছলে উমর রা. বাবলা গাছের ছায়ায় একটি কাফেলা দেখতে পেয়ে আমাকে বললেন, গিয়ে দেখো তো এ কাফেলা কারা ? ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আমি গিয়ে দেখলাম সেখানে সুহাইব রা. রয়েছেন। আমি তাকে তা জানালাম। তিনি বললেন, আমার কাছে ডেকে নিয়ে আস। আমি সুহাইব রা. -এর নিকটে আবার গেলাম এবং বললাম, চলুন আমীরুল মুমিনীনের সংগে সাক্ষাত করুন । এরপর যখন উমর রা. (ঘাতকের আঘাতে) আহত হলেন, তখন সুহাইব রা. তাঁর কাছে এসে এ বলে কাঁদতে লাগলেন, হায় আমার ভাই ! হায় আমার বন্ধু ! এতে উমর রা. তাকে বললেন, তুমি আমার জন্য কাঁদছো ? অথচ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মৃত ব্যক্তির জন্য তার আপন জনের কোন কোন কান্নার কারণে অবশ্যই তাকে আযাব দেওয়া হয় । ইবনে আব্বাস রা. বলেন, উমর রা. -এর ওফাতের পর আয়িশা রা. -এর কাছে আমি উমর রা. -এর এ উক্তি উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, আল্লাহ উমর রা.-কে রহম করুন। আল্লাহর কসম ! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথা বলেননি যে, আল্লাহ ঈমানদার (মৃত) ব্যক্তিকে, তার জন্য তার পরিজনের কান্নার কারণে আযাব দেবেন। তবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহ তা’আলা কাফিরদের আযাব বাড়িয়ে দেন, তার জন্য তার পরিজনের কান্নার কারণে। এরপর আয়িশা রা. বললেন, আল্লাহর কুরআনই তোমাদের জন্য যথেষ্ট (ইরশাদ হয়েছে) : ‘বোঝা বহনকারী কোন ব্যক্তি অপরের বোঝা বহন করবে না। তখন ইবনে আব্বাস রা. বললেন, আল্লাহই (বান্দাকে) হাসান এবং কাঁদান। রাবী ইবনে আবু মুলাইকা রহ. বলেন, আল্লাহর কসম ! (একথা শুনে) ইবনে উমর রা. কোন মন্তব্য করলেন না।