হাদীস নং ১১৬৩
ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান রহ……….আসমা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়িশা রা.-এর কাছে গেলাম, তখন তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন, আর লোকেরাও সালাতে দাঁড়ানো ছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, লোকদের অবস্থা কি? তখন তিনি তাঁর মাথা দ্বারা আকাশের দিকে ইশারা করলেন। আমি বললাম, ইহা কি নিদর্শন ? তিনি আবার তাঁর মাথার ইশারায় বললেন, হ্যাঁ।
হাদীস নং ১১৬৪
ইসমাঈল রহ……… নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অসুস্থ অবস্থায় তাঁর ঘরে বসে সালাত আদায় করছিলেন । একদল সাহাবী তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে লাগলেন। তিনি তাদের প্রতি ইশারা করলেন, বসে যাও। সালাত শেষ করে তিনি বললেন, ইমাম নির্ধারণ করা হয়েছে তাকে অনুসরণ করার জন্য। কাজেই তিনি রুকু করলে তোমরা রুকু করবে; আর তিনি মাথা তুললে তোমরাও মাথা তুলবে।
জানাযা অধ্যায় (১১৬৫-১৩১২)
হাদীস নং ১১৬৫
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………..আবু যার (গিফারী) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : একজন আগন্তুক (হযরত জিবরীল আ. আমার রবের কাছ থেকে এসে আমাকে খবর দিলেন অথবা তিনি বলেছিলেন, আমাকে সুসংবাদ দিলেন, আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক না করা অবস্থায় মারা যাবে, সে জান্নাতে দাখিল হবে। আমি বললাম, যদিও সে যিনা করে থাকে এবং যদিও সে চুরি করে থাকে ? তিনি বললেন, যদিও সে যিনা করে থাকে এবং যদিও সে চুরি করে থাকে।
হাদীস নং ১১৬৬
উমর ইবনে হাফস রহ………আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে আল্লাহর সংগে শিরক রা অবস্থায় মারা যায়, সে জান্নামে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, যে আল্লাহর সংগে কোন কিছুর শিরক না করা অবস্থায় মারা যায়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
হাদীস নং ১১৬৭
আবুল ওয়ালীদ রহ………বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি বিষয়ে আমাদের আদেশ করেছেন এবং সাতটি বিষয়ে আমাদের নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদের আদেশ করেছেন – ১. জানাযার অনুগমন করতে, ২. অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ-খববর নিতে, ৩. দাওয়াত দাতার দাওয়াত কবুল করতে, ৪. মাজলুমকে সাহায্য করতে, ৫. কসম থেকে দায়মুক্ত করতে, ৬. সালামের জওয়াব দিতে এবং ৭. হাঁচিদাতাকে (ইয়ারহামুকাল্লাহ বলে) খুশী করতে। আর তিনি নিষেধ করেছেন – ১. রূপার পাত্র, ২. সোনার আংটি, ৩. রেশম, ৪. দীবাজ, ৫. কাসসী (কেস রেশম), ৬. ইসতিবরাক (তসর জাতীয় রেশম) ব্যবহার করতে।
হাদীস নং ১১৬৮
মুহাম্মদ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের হক পাঁচটি : ১. সালামের জওয়াব দেওয়া, ২. অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ-খবর নেওয়া, ৩. জানাযার অনুগমন করা, ৪. দাওয়াত কবুল করা এবং ৫. হাঁচিদাতাকে খুশী করা। আবদুর রাজ্জাক রহ. আমর ইবনে আবু সালামা রহ এর অনুসরণ করেছেন। আবদুর রাজ্জাক রহ. বলেন, আমাকে মামার রহ. -এরূপ অবহিত করেছেন এবং এ হাদীস সালামা রহ. উকাইল রহ. থেকে রিওয়ায়েত করেছেন।
হাদীস নং ১১৬৯
বিশর ইবনে মুহাম্মদ রহ…………আবু সালামা রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়িশা রা. আমাকে বলেছেন, (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের পর খবর পেয়ে) আবু বকর রা. ‘সুনহ’-এ অবস্থিত তাঁর বাড়ী থেকে ঘোড়ায় চড়ে চলে এলেন এবং নেমে মসজিদে প্রবেশ করলেন। সেখানে লোকদের সাথে কোন কথা না বলে আয়িশা রা. -এর ঘরে প্রবেশ করে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিকে অগ্রসর হলেন। তখন তিনি একখানি ‘হিবারহ’ ইয়ামানী চাদর দ্বারা আবৃত ছিলেন। আবু বকর রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মুখমণ্ডল উম্মুক্ত করে তাঁর উপর ঝুঁকে পড়লেন এবং চুমু খেলেন, তারপর কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন, ইয়া নাবী আল্লাহ ! আমার পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আল্লাহ আপনার জন্য দুই মৃত্যু একত্রিত করবেন না। তবে যে মৃত্যু আপনার জন্য নির্ধারিত ছিল তা তো আপনি কবুল করেছেন। আবু সালামা রা. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. আমাকে খবর দিয়েছেন যে, (তারপর) আবু বকর রা. বেরিয়ে এলেন। তখন উমর রা. লোকদের সাথে কথা বলছিলেন। আবু বকর রা. তাকে বললেন, বসে পড়ুন। তিনি তা মানলেন না। আবু বকর রা. তাকে বললেন, বসে পড়ুন, তিনি তা মানলেন না। তখন আবু বকর রা. কালিমায়ে শাহাদাতের দ্বারা (বক্তব্য) আরম্ভ করলেন। লোকেরা উমর রা.-কে ছেড়ে তাঁর দিকে আকৃষ্ট হন। আবু বকর রা. বললেন……..আম্মা বাদু, তোমাদের মধ্যে যারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইবাদত করতে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যই ইন্তিকাল করেছেন। আর যারা মহান আল্লাহর ইবাদত করতে, নিশ্চয় আল্লাহ চিরঞ্জীব, অমর। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন “মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র……….শাকিরীন পর্যন্ত। (৩ : ১১৪) আল্লাহর কসম, মনে হচ্ছিল যেন আবু বকর রা.-এর তিলাওয়াত করার পূর্ব পর্যন্ত লোকদের জানাই ছিল না যে, আল্লাহ পাক এ আয়াত নাযিল করেছেন। এখনই যেন লোকেরা আয়াত খানা তার কাছ থেকে পেলেন। প্রতিটি মানুষকেই তখন ঐ আয়াত তিলাওয়াত করতে শোনা গেল।