হাদীস নং ১১৫৯
মুআয ইবনে ফাযালা রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যখন সালাতের জন্য আযান দেওয়া হয়, তখন শয়তান পিঠ ফিরিয়ে পালায় যাতে আযান শুনতে না পায় আর তার পশ্চাদ-বায়ু সশব্দে নির্গত হতে থাকে। আযান শেষ হয়ে গেলে সে এগিয়ে আসে। আবার সালাতের জন্য ইকামত দেওয়া হলে সে পিঠ ফিরিয়ে পালায়। ইকামত শেষ হয়ে গেলে আবার ফিরে আসে। এমন কি সে সালাত রত ব্যক্তির মনে ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করে এবং বলতে থাকে, অমুক অমুক বিষয় স্মরণ কর, যা তার স্মরণে ছিল না। এভাবে সে ব্যক্তি কত রাকাআত সালাত আদায় করেছে তা স্মরণ করতে পারে না । তাই, তোমাদের কেউ তিন রাকাআত বা চার রাকাআত সালাত আদায় করেছে, তা মনে রাখতে না পারলে বসা অবস্থায় দুটি সিজদা করবে।\
হাদীস নং ১১৬০
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ালে শয়তান এসে তাকে সন্দেহে ফেলে, এমনকি সে বুঝতে পারে না যে, সে কত রাকাআত সালাত আদায় করেছে। তোমাদের কারো এ অবস্থা হলে সে যেন বসা অবস্থায় দুটি সিজদা করে।
হাদীস নং ১১৬১
ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান রহ………কুরাইব রহ. থেকে বর্ণিত, ইবনে আব্বাস রা. মিসওয়ার ইবনে মাখরামা এবং আবদুর রহমান ইবনে আযহার রা. তাকে আয়িশা রা.-এর কাছে পাঠালেন এবং বলে দিলেন, তাকে আমাদের সকলের তরফ থেকে সালাম পৌঁছিয়ে আসরের পরের দু’রাকাআত সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে। তাকে একথাও বলবে যে, আমরা খবর পেয়েছি যে, আপনি সে দু’রাকাআত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। ইবনে আব্বাস রা. সংবাদ আরও বললেন যে, আমি উমর ইবনে খাত্তাব রা.-এর সাথে এ সালাতের কারণে লোকদের মারধোর করতাম। কুরাইব রহ. বলেন, আমি আয়িশা রা.-এর কাছে গিয়ে তাকে তাদের পয়গাম পৌঁছিয়ে দিলাম। তিনি বললেন, উম্মে সালামা রা.-কে জিজ্ঞাসা কর। (কুরাইব রহ. বলেন) আমি সেখান থেকে বের হয়ে তাদের কাছে গেলাম এবং তাদেরকে আয়িশা রা. -এর কথা জানালাম। তখন তাঁরা আমাকে আয়িশা রা.-এর কাছে যে বিষয় নিয়ে পাঠিয়েছিলেন, তা নিয়ে পুনরায় উম্মে সালামা রা.-এর কাছে পাঠালেন। উম্মে সালামা রা. বললেন, আমিও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তা নিষেধ করতে শুনেছি। অথচ তারপর তাকে তা আদায় করতেও দেখেছি। একদিন তিনি আসরের সালাতের পর আমার ঘরে তাশরীফ আনলেন। তখন আমার কাছে বনূ হারাম গোত্রের আনসারী কয়েকজন মহিলা উপস্থিত ছিলেন। আমি বাদীকে এ বলে তার কাছে পাঠালাম যে, তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাকে বলবে, উম্মে সালামা রা. আপনার কাছে জানতে চেয়েছেন, আপনাকে (আসরের পর সালাতের) দু’রাকাআত নিষেধ করতে শুনেছি ; অথচ দেখছি, আপনি তা আদায় করছেন ? যদি তিনি হাত দিয়ে ইশারা করেন, তাহলে পিছনে সরে থাকবে, বাদী তা-ই করল। তিনি ইশারা করলেন, সে পিছনে সরে থাকল। সালাত শেষ করে তিনি বললেন, হে আবু উমায়্যার কন্যা ! আসরের পরের দু’রাকাআত সালাত সম্পর্কে তুমি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছ । আবদুল কায়স গোত্রের কিছু লোক আমার কাছে এসেছিল। তাদের কারণে যুহরের পরের দু’রাকাআত আদায় করা থেকে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। এ দু’রাকাআত সে দু’রাকাআত।
হাদীস নং ১১৬২
কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………..সাহল ইবনে সাদ সাঈদী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সংবাদ পৌঁছে যে, বনূ আমর ইবনে আওফ -এ কিছু ঘটেছে। তাদের মধ্যে আপোস করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি কয়েকজন সাহাবীসহ বেরিয়ে গেলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েন। ইতিমধ্যে সালাতের সময় হয়ে গেল। বিলাল রা. আবু বকর রা.-এর কাছে এসে বললেন, হে আবু বকর ! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এদিকে সালাতের সময় হয়ে গিয়েছে, আপনি কি সালাতে লোকদের ইমামতি করতে প্রস্তুত আছেন ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, যদি তুমি চাও। তখন বিলাল রা. ইকামত বললেন এবং আবু বকর রা. সামনে এগিয়ে গিয়ে লোকদের জন্য তাকবীর বললেন। এদিকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশরীফ আনলেন এবং কাতারের ভিতর দিয়ে হেটে (প্রথম) কাতারে এসে দাঁড়িয়ে গেলেন। মুসল্লীগণ তখন হাততালি দিতে লাগলেন। আবু বকর রা. -এর অভ্যাস ছিল যে, সালাতে এদিক সেদিক তাকাতেন না। মুসল্লীগণ যখন অধিক পরিমাণে হাততালি দিতে লাগলেন, তখন তিনি সেদিকে তাকালেন এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখতে পেলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইশারা করে সালাত আদায় করতে থাকার নির্দেশ দিলেন। আবু বকর রা. দু’হাত তুলে আল্লাহর হামদ বর্ণনা করলেন এবং পিছনের দিকে সরে গিয়ে কাতারে দাঁড়ালেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে এগিয়ে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষ করে মুসল্লীগণের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, হে লোক সকল ! তোমাদের কি হয়েছে, সালাতে কোন ব্যাপার ঘটলে তোমরা হাততালি দিতে থাক কেন ? হাততালি তে মেয়েদের জন্য। কারো সালাতের মধ্যে কোন সমস্যা দেখা দিলে সে যেন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলে। কারণ, কেউ অন্যকে ‘সুবহানাল্লাহ’ বলতে শুনলে অবশ্যই সেদিকে লক্ষ্য করবে। তারপর তিনি বললেন, হে আবু বকর ! তোমাকে আমি ইশারা করা সত্ত্বেও কিসে তোমাকে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে বাধা দিল ? আবু বকর রা. বললেন, কুহাফার ছেলের জন্য এ সমীচীন নয় যে, সে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে।